অনুভবে তুমি পর্ব ৩৬

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৬
লিজা মনি

আহান ইয়ানাকে খুজতে গেলে চোখ আটকে যায় আয়নার সামনে বসে থাকা রমনীর দিকে। ইয়ানা এখন ও দেখেনি আহান এসেছে। আহান ইয়ানাকে দেখে থমকে গেছে।
এই রুপ আহানের ভিতর এক ঝংকার তুলছে।সে ধীরে ধীরে ইয়ানার দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
ইয়ানা কারোর উপস্থিতি বুঝতে পেরে দরজার দিকে তাকায় দেখে আহান অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা আহানের দৃষ্টি দেখে ভড়কে যায়।

ইয়ানা — কি হলো এইভাবে কচ্ছপের মতো আসছেন কেনো? ফ্রেশ হয়ে নিন।
ইয়ানা আহানের কোনো হেলদুল না দেখে কপাল কুচকে বলে,,,,
” আপনাকে রেডি হতে বলেছি আর এইদিকে আপনি কচ্ছপকে কপি করছেন।
ইয়ানার কথার মাঝে আহান একদম কাছাকাছি এসে দাড়ায়।
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই
আহান ইয়ানার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে হিসহিসিয়ে বলে,,,,
“এখন যদি আমি কন্ট্রোললেস হয়ে যায় তাহলে তুমি কি করবে ইয়ানা। এত ধ্বংসাত্বক রুপ দেখিয়ে চলে গেলে যে আমি চাতক পাখির ন্যায় ছটফট করব। কি করব এখন আমি?
ইয়ানা শুকনো ঢুক গিলে বলে,, কি করবেন আপনি?
আহান মুচকি হাসি দিয়ে ইয়ানার গালে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” ইচ্ছে তো করছে অনেক কিছুই করতে। কিন্তু…
ইয়ানা ভয়ার্ত নেত্র মেলে বলে,,,
” কিন্তু কি?
আহান ইয়ানার দিকে আর ও ঝুকে পরে।
ইয়ানার পিঠ দিয়ে ঠেকেছে দেয়ালে আর আহান ইয়ানার দিকে ঝুকে আছে। তাদের শরীরের উষ্নতা একে অপরের থেকে অনুধাবন করতে পারছে।
হঠাৎ টেবিল থেকে কাচের গ্লাসটা পড় যায় ইয়ানার হাত লেগে। কিছু একটা পরে গেলে আহানের হুশ আসে। তাড়াতাড়ি করে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায়। ইয়ানা এখন নাক মুখ খিচে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বন্ধকরা নেত্রে ফু দেয়। এরপর কপালে চুমু খেয়ে বলে,,,,

“” আজকের শাস্তিটা না হয় অন্যদিকের জন্য তোলা থাক। আর এইভাবে সাজবে না। নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। একদম পেত্নির মত লাগছে তোমাকে। যেকোনো সময় ভয় পেয়ে যেতে পারি।
এই বলে আহান ওয়াশরুমে চলে যায়। আর এইদিকে ইয়ানা তব্দা লেগে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলে গেলো ওকে পেত্নির মত লাগছে। এতক্ষন ধরে সাজার পর ওনি আমাকে বলছে পেত্নির মত লাগছে বাহহহ।
কিছু সময়ের ব্যবধানে আহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। গায়ে ব্লু কালারের ট্রাউজার আর গায়ে ব্ল্যাক টি- শার্ট জড়ানো। আহান টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ইয়ানার দিকে তাকায় দেখে ইয়ানা থমথমে মুখ নিয়ে বিছানায় বসে আছে। আহান বিরবির করে বলে৷,,,, এর আবার কি হলো? এরপর আবার ইয়ানার উদ্দেশ্যে বলে,,,

” এইভাবে থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছো কেনো? কিছুক্ষণ আগেই তো বাপের বাড়ি যাবে বলে আত্নহারা হয়ে ছিলে এখন আবার কি হলো?
ইয়ানা ভাবলেশহীনভাবে বলে,,,,
” জামাই লাগবে আমার ”
আহান ভ্রু গুলো কিঞ্চিৎ কুচকে বলে,,,
” এখন কি জামাই ছাড়া আছো নাকি? ”
ইয়ানা — জামাই কোথায় পেলেন আপনি? কোথায়? আমি তো দেখতে পাচ্ছি না। আমার জন্য একটা জামাই খুজুন মি, চৌধুরি।
ইয়ানার কথা শুনে আহান রক্তচক্ষুর ন্যায় তাকিয়ে বলে,,,

” অন্য কেউ মস্তিষ্কে হানা দিলে মেরে ফেলে দিবো তোমায় ইয়ানা। আই রিপিট মেরে ফেলে দিবো। দুই বার ও ভাববো না কে তুমি? কে হও তুমি আমার? ”
ইয়ানা একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
” কি হই আমি আপনার? অন্যের জামাই নিজের বউয়ের কত প্রশংসা করে। কখনো করেছেন আপনি? রান্না করা খাবার খেয়ে উল্টো থ্রেড দিয়েছেন যাতে কারোর জন্য রান্না না করি সেখানে প্রসংশা পাওয়াতো বিলাসিতা। সাজলে বলে পেত্নির মত লাগে। কার জন্য সাজি আমি? এত কষ্ট করে সেজে শেষে প্রসংশা পাই পেত্নির মত লাগে।
অতিরিক্ত উত্তেজনার ফলে ইয়ানা কি বলছে সে নিজে বুঝতে পারছে না।
আহান শুধু ইয়ানার পাগলামো দেখছে। ওর রুপের প্রসংশা আলাদা ভাবে উপস্থাপন করতে হবে লাইক সিরিয়াসলি।যেখানে এই মেয়ের সামান্য উপস্থিতি আমার এই শক্তপোক্ত অস্তিত্বকে নাড়িয়ে তুলে সেখানে আবার নতুন করে প্রসংশা করতে হবে। কিন্তু এই মেয়েতো প্রসংশা পাওয়ার জন্য বসে আছে।
আহান ইয়ানার দুই বাহু ধরে নজের দিকে ফিরায়। ইয়ানা নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেই।
আহান — তাকাবে না আমার দিকে?
ইয়ানা নিশ্চুপ।
ইয়ানার অবস্থা দেখে আহানের এই মুহূর্তে প্রচুর হাসি পাচ্ছে। আহান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,

” থাপ্পর খেয়ে তাকাবে?”
থাপ্পরের কথা শুনে ইয়ানার টনল নড়ে। সুড়সুড় করে আহানের দিকে দৃষ্টি মেলে। কিন্তু চোখে তীব্র অভিমান।
আহান কিছুক্ষণ ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ইয়ানার অভিমান মিশ্রিত চোখের পাতায় আলতো করে চুমু খায়। এরপর ইয়ানার বন্ধ করা নেত্রের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” আমার মুখ থেকে বের হওয়া শব্দচায়ন নয় আমার অস্তিত্ব আর চরিত্রকে অনুভব করো সেখান তোমার হাজার ও প্রসংশা খুজে পাবে। তোমাকে দেওয়া আমার ধমক নয়। ধমকের ভিতরে লুকিয়ে থাকা তীব্রতা আর আবেগকে অনুধাবন করো তাহলে ধমকের মর্ম বুঝতে পারবে।
ইয়ানা শুধু আহানের কথার মার্মার্থ বুঝার চেষ্টা করছে।
ইয়ানার ভাবনার মাঝে নিজের গালে হালকা ছোয়া পেতে শিউরে উঠে। সামনের দিকে তাকালে আহান জিজ্ঞাসা করে,,,,

” কোন ভাবনায় ডুবে আছেন মেডাম? চলুন নাকি আজ যেতে চান না?হুম।
আহানের কন্ঠস্বর পেয়ে ইয়ানা নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে। সামনে তাকিয়ে দেখে আহান রেডি হয়ে পড়েছে। ইয়ানা বিছানা থেকে নেমে আহানের পিছন পিছন চলে যায়। আহানের পড়নে ছিলো লং কোর্ট। ইয়ানা আহানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,,
” ওনি কি গরম ব্যতিত সবসময় লং কোর্ট পড়ে। ”

দেখতে দেখতে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাদের গাড়ির কাছে চলে আসে।ইয়ানা এখন ও আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। কি করবে জামাই যদি এত সুন্দর হয় না তাকিয়ে উপায় আছে। আহান গাড়ির ভিতরে ডুকে যখন দেখে ইয়ানা এখন ও তার দিকে তাকিয়ে আছে আশেপাশের কোনো খেয়াল নেই। তখন ইয়ানার হাতে ধরে হেচকা টানে নিজের উড়ুর উপর বসিয়ে দেয়। হঠাৎ আক্রমনে ইয়ানা হতভম্ব হয়ে যায়।
ঠিক তখন আহান নিজের সাথে আরেকটু চেপে ধরে সিট বেল্ট লাগিয়ে নেই।
আহান গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখে বলে,,,

” এখন যতখুশি ইচ্ছে হয় দেখো। কেউ তোমার স্বামী নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে না।
ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। এতক্ষণ ধরে এই লোকের দিকে ভেবলার মত তাকিয়ে ছিলো।
এরপর নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে বলে,,,,
” ছাড়ুন আমি নিজের জায়গায় গিয়ে বসছি।”
আহান — নিজের জায়গায় ওই বসে আছো। চুপচাপ বসে থাকো সাপের মত মুচড়ামুচড়ি করবে না।
ইয়ানা আর কিছু বলে না। এখন হাজার কিছু বললে ও লাভ নেই।

দেখতে দেখতে গাড়ি এসে থামে ইয়ানাদের বাড়ির সামনে।ইয়ানা গাড়ি থেকে নেমে কিছু বলতে যাবে দেখে আহান চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইয়না তাড়াতাড়ি করে গাড়ির সামনে চলে আসে। ইয়ানার কান্ডে আহান হতভম্ব হয়ে পরে। মাত্র গাড়িটা স্ট্রাট দিয়েছিলো। যদি চলন্ত গাড়ি হত তাহলে এখন কি অবস্থা হত এই মেয়ের আইডিয়া আছে। আহান এইসব ভাবতেই আঁতকে উঠে। হঠাৎ করে রাগটা মাথায় চেপে বসে। গাড়ি থেকে নেমে সোজা ইয়ানার গালে এক থাপ্পর লাগায়। এরপর বুকের সাথে চেপে ধরে ধমকের সুরে বলে,,,,

” গাড়ির সামনে কেনো গিয়েছিলে আহাম্মক। তোমার ধারনা আছে সঠিক সময় ব্রেক না করলে আজ কি অবস্থা হত।ধারনা থাকবে কিভাবে? মস্তিষ্কে তো সারাদিন ঘুরপাক খায় আমার সাথে ত্যারামি করবে কিভাবে বিয়াদপ।”
আহানের শক্ত হাতের থাপ্পর খেয়ে ইয়ানা একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু পুনরায় ধমকাধমকিতে নিজের চেতনা ফিরে পায়।
ইয়ানাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আহান পুনরায় বলে,,
” কথা বলছো না কেনো বিয়াদপ? কেনো গিয়েছিলে গাড়ির সামনে? তোমার কিছু হলে আমার কি হত তার কোনো আইডিয়া আছে?
ইয়ানা চোখের পানি মুছে বলে,,,,

” আমি তো শুধু আপনাকে আটকাতে চেয়েছিলাম। এই প্রথম আপনি আমার সাথে এসেছেন কিন্তু বাড়িতে না ডুকেই চলে যাচ্ছেন। আমি যাস্ট আটকানোর জন্য গিয়েছিলাম। “.
আহান কিছুটা শান্ত হয়ে বলে,,,,
” তাই বলে এইভাবে চলে আসবে। ইসস গালটা লাল হয়ে গেছে। বেশি ব্যাথা পেয়েছো?
ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে না বোধক সম্মতি দেয়।
ইয়ানা — এইসব আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। ভিতরে আসুন না। বাড়ির সামনে থেকে চলে যাওয়াটা দৃষ্টিকটূ দেখায়।
আহান — তোমার বাপের বাড়ি তুমি যাও আমি যাবো কেনো?

ইয়ানা — আমার বাবার বাড়ি আপনার কেউ হয় না। নাকি শশুর বাড়িতে খরচের ভয়ে যেতে চাচ্ছেন না। আপনার তো টাকা পয়সার অভাব নেই তাহলে কিপ্টামি করছেন কেনো? আরে বেশি টাকা খরচ হবে না হাজার খানেক মাত্র।
ইয়ানার কথা শুনে আহান ফুস করে একটা শ্বাস ছেরে গাড়ির কাছে চলে যায়। লাস্ট পর্যন্ত এই মেয়ে কিপ্টা বানিয়ে ছাড়লো। আর কি কি বানায় সেটা খোদা জানে।
আহানকে গাড়ির ভিতরে ডুকতে দেখে ইয়ানা বলে,,,
” কি হলো গাড়ির কাছে যাচ্ছেন কেনো ভিতরে আসুন। ”
আহান ইয়ানার কথা কানে না তুলে ইয়ানার দৃষ্টি সীমানার বাহাইরে চলে যায়। আচমকা ইয়ানার মনটা খারাপ হয়ে যায়। কেনো ওনি একটু ভিতরে গেলে কি হতো? হতে পারে ওনাদের মত আলিশান বাড়ি জিনিসপত্র নেই কিন্তু বসার জন্য তো জায়গা ছিলো।

ইয়ানা নানান কিছু ভেবে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। ইয়ানাকে এতদিন পরে সবাই পেয়ে খুব খুশি। আহান কেনো বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো না এই নিয়ে প্রশ্ন করলে ইয়ানা অযুহাত দিয়ে কোনোরকম এড়িয়ে যায়।
সুমু, রুয়ানা, আর বাবা মায়ের সাথে আড্ডা দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ইয়ানা নিজের রুমে চলে। এই সেই চিরচেনা রুম যেখানে তার শৈশবের স্মৃতি লেগে আছে। জড়িয়ে আছে হাজার ও কাহিনী। ইয়ানা বাহিরে তাকালে দেখতে পায় বাহিরে ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। বাহিরে তাকাতেই এক প্রত্যাশিত ইচ্ছে জেগে উঠে। অনেক দিন হলো খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজা হয় না।

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৫

বৃষ্টি দেখে ইয়ানার ঠোঁটের কোনে হাসি ফোঁটে উঠে। আজ কেউ নেই ওর রুমে ইচ্ছে মতো বৃষ্টিতে ভিজতে পারবে কেউ কিছু বলবে না। ইয়ানা খুশি মনে বারান্দার লাইট জালিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। খোলা আকাশের নিচে দড়াতেই ইয়ানার স্নিগ্ধ শরীরে বৃষ্টির ফোটা পড়তে থাকে। ইয়ানা নিজের পড়নের শাড়িটাকে কোমরে গুজে দিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে আকাশের পানে তাকায়। কিন্তু হঠাৎ কারোর ঠান্ডা স্পর্শে সাহসা কেঁপে উঠে। এই……

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৭