অনুভবে তুমি পর্ব ৫৮
লিজা মনি
দেড় বছর পর,,,,🌼
সময় কাউকে কষ্টের সাথে পরিচয় করায় আবার কাউকে সুখের সাথে। আহান আর ইয়ানার সম্পর্ক এখন এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে যেখানে দুই জন দুইজনকে দেখতে পাচ্ছে কিন্তু তবুও অপরিচিতর মত। আহান নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে আর ইয়ানা আহানকে মানাতে গিয়ে বার বার নিরাশ হয়ে ফিরে আসছে। আহান প্রায় সময় এখন আর বাড়িতে আসে না। বাড়িতে আসলে ও ইয়ানার দিকে ফিরে ও তাকায় না। ইয়াজের সাথে দুষ্টামি হাসাহাসি করে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
ইয়ানা শত বার আহানের সাথে মাফ চেয়েছে এমনকি হাজার বার কথা বলার চেষ্টা ও করেছে। কিন্ত আহান বরাবর এইসব উপক্ষা করে ইয়াজকে নিয়ে মেতে থাকত। একসময় ইয়ানা ও আহানকে আর বিরক্ত করে না। থাকুক না উনি উনার মত। আমার সাথে যদি এই দেড় বছর কথা না বলে থাকতে পারে আমি কেনো থাকতে পারব না। প্রতিদিন ওনাকে দেখতে তো পারি তাহলে ওই হবে। কিন্তু দোষ তো আমার এইভাবে হাল ছেড়ে দিলে তো আর আমাদের সম্পর্ক আগের মত হবে না। আহান আর ইয়াজের খুনশুটি মুহূর্তে শুধু তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। কতদিন ধরে এই হাসিটা আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দেয় না। আচ্ছা ওনার কি একটু ও কষ্ট হচ্ছে না। ইয়ানা শুধু নিবিড়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে। তাদের সম্পর্কের অধপতন শুধু চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আহান এই দেড় বছরে এক দিন ও দিনের বেলা বাড়িতে আসে নি। সব সময় রাত বারোটা বা একটায় আসতো আবার সকালে জগিং শেষে আটটার আগেই অফিসে চলে যেত। সবাই জিজ্ঞাসা করলে শুধু একটাই কথা উনার অফিসে এখন প্রচুর চাপ তাই কাউকে সময় দিতে পারছে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এখন রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি আহান আসার সময় হয়ে গিয়েছে। কাল রুহান আর আহিয়ার আংটি বদলের দিন। রুহানের বাবা মা আহিয়াকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ফেলে। দেড় বছরের ভিতরে আহান সেই দিন ইয়ানার সাথে সেচ্ছায় কথা বলে।
আহান — তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?
ইয়ানা আহানের কথা শুনে সেদিন সবচেয়ে খুশি হয়েছেলো ভেবেছিলো আহান আবার আগের মত ইয়ানার সাথে কথা বলবে।
ইয়ানা — হ. হ্যা বলোন না।
আহান — আমি আহিয়া আর রুহানের বিয়ে দিতে চায়।যেহেতু আহিয়া রুহানকে ভালোবাসে সেখানে আমি বাধা দেওয়ার কেউ না। আর আমার বোন যেহেতু একটা ভালো ছেলেকে পছন্দ করেছে সেখানে না করার কোনো মানে হয় না। তবে এখন শুধু তাদের আংটি পরিয়ে রাখব সঠিক বয়স হলে তাদের বিয়ে হবে।
আহানের কথা শুনে ইয়ানা অবিশ্বাস্য নজরে তাকায়। ও তো ভেবেছিলো আহান এই সম্পর্ক মেনে নিবে না।
ইয়ানা — ঠিক আছে।
ইয়ানার উত্তর পেয়ে আহান আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায় নি। ইয়ানা আর ও কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু পারে নি। এরপর রুহানের বাড়ি থেকে আহিয়াকে দেখে আংটি পরানোর দিন ঠিক করে যায়।আর কাল আহিয়া আর রুহানের ইঙ্গেজমেন্ট।
ইয়ানা জানালার কাউচের কাছে বসে বসে এইসব ভাবতে থাকে। কিন্তু বারোটা বেজে গেছে এখন ও আহান আসছে না দেখে ইয়ানার কপালে ভাজ পড়ে যায়। উনি কি তাহলে আজ ও বাড়িতে আসবে না। গত দুই দিন ধরে বাড়িতে আসে না। প্রতিদিন বারোটার দিকে ইয়াজ বাবার দেখা পায়। তাই ছেলেটা সবসময় এই টাইমে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এই সময় ঘুমটা ভেঙ্গে যাওয়া যেনো অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে। ইয়াজের কান্না শুনে ইয়ানা বিছানার কাছে যায়। ইয়াজ এখন কোনো বস্তুর সাহায্যে দাড়াতে পারে। ঘুম ভেঙ্গে কাছে কাউকে দেখতে না পেয়ে কান্না করে দেয়। ইয়ানা ইয়াজকে কোলে নিতেই ছেলেটা ডেকে উঠে,,,
” পা,,প প্পা। পা,, প, প্পা
ইয়ানা কপালে চুমু খেয়ে বলে,,,
” আজ ও মনে হয় তোমার বাবা আসবে না সোনা। ”
কিন্তু ইয়ানার কথাকে ভুল প্রমানিত করে আহান দরজা ঠেলে রুমে ডুকে। দরজা খুলার শব্দ পেয়ে ইয়ানা তাকিয়ে দেখে আহান এসেছে।আহান আগের থেকে একটু শুকিয়ে গেছে। চুলগুলো এলোমেলো কেমন খাপছাড়া লাগছে। আহানকে দেখেই ইয়াজ ইয়ানার কোল থেকে আহানের কাছে যাওয়ার জন্য লাফিয়ে উঠে। অনেকে বলে মেয়ে নাকি বাবা পাগল হয়। কিন্ত এই ছেলে এত বাবা পাগল কেনো?
আহান ইয়াজের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
” এইতো আসছি সোনা আগে ফ্রেশ হয়ে আসি। ”
আহান ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ইয়ানা শুধু আহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু সময়ের ব্যবধানে আহান ফ্রেশ হয়ে এসে ইয়াজ আর ইয়ানার সামনে দাঁড়ায়। বাবাকে দেখেই ইয়াজ পা,,প্পা বলে আহানের কোলে লাফিয়ে উঠে। ইয়ানা বাবা ছেলের কাহিনী দেখে মুচকি একটা হাসি দেয়।কিন্তু আহান এক পলক ও ইয়ানার দিকে তাকায় নি। আবার হয়ত তাকিয়েছে ইয়ানা দেখতে পায় নি। আহান ইয়াজকে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
ইয়ানার চোখে বারির স্রোতধারা কিন্তু ঠোঁটের কোনে লেগে আছে মুচকি হাসি।
ইয়ানা — আপনার শাস্তি যে আমাকে ক্ষয় করে দিচ্ছে। আপনি সামনে আছেন অথচ তবুও কত দুরে। আপনাকে দেখতে পাচ্ছি, অনুভব করতে পারছি কিন্তু স্পর্শ করতে পারছি না। আগের মত করে খুনশুটিতে মেতে উঠতে পারছি না। এইটা আপনি আমাকে কেমন শাস্তি দিচ্ছেন অগ্নি চৌধুরি। আমার অপরাধটা কি বেশি ছিলো?আমি যে এই শাস্তির ভাড় সহ্য করতে পারছি না। প্রতি রাতে বালিশ আমার চোখের জল স্পর্শ করেছে কিন্তু আপনার মন কে কি আমার এই চোখের জল স্পর্শ করতে পারে নি।
ইয়ানা দুই হাটুর মধ্যে মুখ বুজে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।ইয়ানা চোখের পানি মুছে নিচে আহানের জন্য খাবার আনতে চলে যায়।
কিছুক্ষন পর রুমে ডুকে দেখে আহান বিছানায় শুইয়ে আছে আর ইয়াজ আহানের পেটের উপর বসে আহানের মুখে চুমু খাচ্ছে আর অস্পষ্ট ভাষায় পাপা বলছে। আহান ও ইয়াজের শরীরে সুড়সুড়ি দিলে ছেলেটা খিলখিল করে হেসে উঠে।
ইয়ানা ইয়াজের কাছে এসে বলে,,,
” আপনি মায়ের কাছে চলে আসুন। আপনার বাবা এখন খাবার খাবে। আপনি ও কিছু খান নি চলুন খেয়ে নিবেন”
ইয়ানা ইয়াজকে কোলে নিয়ে মুখে খিচুড়ে দেয়। দুই এক চামচ খাওয়ার পর আর মুখে নিচ্ছে না দেখে ইয়ানা ও আর জোড় করে নি।
আহানকে খাবার না খেয়ে শুয়ে পড়তে দেখে জিজ্ঞাসে করে,,,
” খাবার খেয়ে এসেছেন? ”
আহানের প্রত্যেক সময়কার মত ছোট্ট উত্তর,,
” হুম ”
ইয়ানা — ওহহ।
চৌধুরি বাড়িতে রান্নার আমেজ চলছে। কেউ দেখলে মনে করবে আজ ওই বিয়ে। কিন্তু বিয়ের চেয়ে কম কিছু হচ্ছে না। সাজিদ চৌধুরি কোনো কিছুর খামতি রাখছে না। সাথে আহান, ইউভি আর রায়ান তো আছেই। হল্লা পর্টি আর রুয়ানা সকাল নয়টার দিকে চলে আসে চৌধুরি ভিলায়। সুমুর কোলে রয়েছে ফুটফুটে একটি মেয়ে বাচ্চা। যার ডাকনাম হচ্ছে রাহা। সুমুর এক এক্সিডেন্টের কারনে সমস্যা হয়েছিলো তাই তাড়াতাড়ি করে সিজার করাতে হয়। কন্যা সন্তানের বাবা হয়ে রায়ান সবার সামনে মেয়ের কানে মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিলো,,
” মামুনি আপনাকে অনেক বড় হতে হবে। অগ্নি চৌধুরিকে আপনার শশুর বানাতে হবে তো”
রায়ানের কথা শুনে সবাই হেসে উঠেছিলো।
রুহান আর আহিয়ার আংটি বদল কে কোথায় যাবে এই নিয়ে দু টানায় পড়ে যায়। তাই অনুষ্ঠান এক সাথে হচ্ছে।
সুমু রেগে রায়ানকে খুজতে থাকে। এখানে এসেছে পর থেকে রায়ানের দেখা নেই একদম লাপাত্তা। এইদিকে সবাই নাচানাচি করছে মেয়ে নিয়ে সে একটু মজা ও করতে পারছে না। কেনো উনার কি একটু ধারনা নেই আমি যে ওনাকে খুজব। সুমু রায়ানের দেখা না পেয়ে রুহানের কাছে চলে যায়।
সুমু — তর অনুষ্ঠানে এসেছি তাইতো। মির জাফর তুই মজা করছিস আর আমি বাচ্চা নিয়ে পাইচারি করছি। তুই রাহাকে কোলে নিয়ে বসে থাক আমি ওর বাপ কে খুজে নিয়ে আসি।
রুহান রাহাকে কোলে নিয়ে বলে,,
” ভুলে যাস না তুই কাটাছিড়া রুগি তাই নাচানাচি কম কর। ”
রুহানের কথা শুনে সুমু ওর দিকে রেগে তকায়।
সুমু —- আমার এইটা নিয়ে মজা নেস তাই তো ডাইনোসার।
রায়ান — বইন আজকে আমার একটা শুভ দিন এমনে গালি দিয়ে অপবিত্র করাইস না। তবে ভালোভাবে বলছি নাচানাচি কম কর সুন্দর করে সোফায় গিয়ে বসে থাক নাহলে রায়ান ভাইয়াকে দিয়ে মাইর খাওয়াব।
সুমু — আরে আমি নাচব না। নাচলে মনে করিস আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে সোজা মেরে মাটি চাপা দিয়ে দিবে।
রুহান অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” ওইদিকে দেখ ”
সুমু রইহানের কথা অনুযায়ী তাকিয়ে দেখে আরু আর রেশব কথা বলছে।
সুমু — মানিয়েছে কিন্তু।
রুহান — হ্যা। ঝগড়া করতে করতে প্রেম🤣।
সুমু — এখন আর ঝগড়া হয় না। রেশব ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করেছলাম তাদের দুই মাসের সম্পর্ক কেমন কাটছে। বলেছে ভালো আর আরুর যেই প্রসংশা আল্লাহ গো।
রুহান — যাক সবার ভালোবাসাই পূর্নতা পাক।
আয়াত —- শুধু আমাকে ছাড়া।
সুমু — তুই কার সাথে প্রেম করেছিস?
আয়াত — এই সর প্রেম করে কে? একদম বিয়ে করে বাসর রাতে জামাইর মুখ দেখব। কিন্তু জামাই ওই খুজে পাচ্ছি না। তরা দেখ আমাদের এই গল্পে সবার পার্টনার আছে শুধু আমার নাই। এ তোমার কেমন বিচার আল্লাহ।
আয়াতের নাটক দেখে সুমু আর রুহান হাসা শুরু করে। ধীরে ধীরে সবাই জড়ো হতে থাকে। ইয়ানা ইয়াজকে রেডি করিয়ে নিচে নেমে আসে। ইয়ানার শরীরে আকাশি রঙ্গের একটা পাথরের কারুকাজ করা শাড়ি।
নিচে নেমে ইয়ানা আহানের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা তাকানোর সাথে সাথে নিজের চোখ নামিয়ে নেয়। ইয়ানা ইয়াজকে নিয়ে চলে যায় তাদের বাদর টিমের কাছে।
ইয়ানা ইয়াজকে সোফার উপর বসিয়ে দিয়ে রাহাকে কোলে তুলে নেয়। একদম রায়ান ভাইয়ার বাবা মানে আঙ্কেলের ফটুকপি। রাহাকে কোলে নিতে দেখে ইয়াজ ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না শুরু করে দেয়।
ইয়ানা রাহাকে সুমুর কোলে দিয়ে ইয়াজকে কোলে তুলে নেয়।
ইয়ানা — আপনি এত হিংসুটে কেনো হয়েছেন বাবা। ও তো আপনার বোন হয়। বোনের সাথে কেউ হিংসে করে হুম। তাদের আদর করতে হয় কিন্তু আপনি তো কান্না শুরু করে দেন।
প্রায় দুই ঘন্টা তাদের মধ্যে খাওয়া দাওয়া আড্ডা চলে। এক পার্যায়ে রুহান আর আহিয়ার আংটি বদলের পালা শেষ হয়।
ইয়ানা — আকাশ ইয়াজকে আহানের কাছে দিয়ে আয় তো। কোন সময় বাবার কাছে যাবে বলে ছটফট করছে। কিন্ত ওইখানে তাদের ব্যবসার কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে ওনার কাছে আমি যেতে পারব না।
আকাশ ইয়াজকে নিয়ে আহানের কাছে চলে যায়। ইয়াজ আহানকে দেখে কোলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে।
আহানের কোলে বাচ্চা দেখে লোকগুলো জিজ্ঞাসা করে,,,
” এই বাচ্চা আপনার কে হয় মি, চৌধুরি? ”
আহান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
” ও হচ্ছে আমার পৃথিবী। আমার ছেলে ও। ”
আহানের কথা শুনে লোকগুলো বিস্ময় নিয়ে বলে,,,
” ওহহ মাই গড কনগ্রাচুলেশনস মি, চৌধুরি। আপনি তো বাচ্চার বাবা হয়ে গেলেন কিন্তু আপনার ওয়াইফকে তো দেখতে পেলাম না। ”
ইয়ানার কথা শুনেই আহান চুপসে যায়। মুখে হাসির রেখে বজায় রেখে বলে,,,
” সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে তাই এদিকে আসে নি। ”
আহানের কথা শুনে লোকগুলো বলে,,,
” ওহহ আচ্ছা তাই বলোন। আপনার ছেলে কিন্তু মাশ আল্লাহ অনেক সুন্দর। আশা আছে বাবার মতই হবে।
একজন লোক — তবে শুনেছি আপনার ওয়াইফ অনেক সুন্দরী।
আহানের রাগ হলে ও দাতে দাত চেপে সহ্য করে নেয়। নির্ঘাত লোকগুলো ভদ্র দেখে নয়ত মুখ ভেঙ্গে দিত।
আহান ছোট করে উত্তর দেয়,,,
” হুম। আমার চোখে তো বিশ্ব সুন্দরী যার সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য আমার মুখের কোনো ভাষা নেই। একদম নিখুত আর আবেদনময়ী। এখন বাকিদের কথা তো আমি বলতে পারব না। ”
সমস্ত কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর রাত হয়ে যায়। সবাই চৌধুরি ভিলায় থেকে যায়। শুধু রুহানকে থাকতে দেওয়া হয় নি। বেচারা থাকতে চেয়েছিলো কিন্ত জোড় করে ওর বাবা মায়ের সাথে নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
ইয়ানা রুমে ডুকে দেখে আহান মাথায় চেপে ধরে ভিবানে বসে আছে। ইয়াজ ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক আগে।
ইয়ানা আহানের কাছে গিয়ে সাহস সঞ্চয় করে বলে,,,,
” আপনার কি মাথা ব্যাথা করছে? আমি কি টিপে দিব তাহলে একটু আরাম পাবেন।
আহান নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” নাহ লাগবে না ”
আহানের কথা শুনে ইয়ানা কিছু একটা ভেবে কিচেন রুমে চলে যায়। এরপর চিনি ছাড়া লেবুর শরবত করে নিয়ে আসে।
ইয়ানা —- এইটা খেয়ে নিন ভালো লাগবে।
আহান — লাগবে না এমনি কমে যাবে।
ইয়ানা — আগে যখন আপনার মাথা ব্যাথা করত তখন তো এইটা বানিয়ে দিতাম। তখন তো খেতেন তাহলে এখন লাগবে না কেনো?
আহান কিছু না বলে বিছানায় এক পাশে শুই পড়ে।
ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
” এড়িয়ে যাচ্ছেন? ”
আহান — ওহুম ।
ইয়ানা — কয়দিন এইভাবে এড়িয়ে যাবেন? দুই বছর, পাঁচ বছর, দশ বছর বা সারা জীবন? এইভাবে তিলে তিলে না মেরে একবারে তো মেরে ফেলতে পারেন। তিলে তিলে শেষ হওয়াটা যে খুব কষ্টদায়ক।
আহান — এইসব শুনতে ভালো লাগছে না ঘুমিয়ে পড়ো।
ইয়ানার চোখের বাধ ভেঙ্গে গড়িয়ে পরতে থাকে অশ্রুধারা। এই চোখের পানি এখন ওর নিত্য দিনের সঙ্গি।
” ক্ষমা করে দিন না আমাকে। আর কত কষ্ট দিবেন। কষ্টের সাগরে ভাসতে ভাসতে যখন সত্যি তলিয়ে যাব তখন খুজতে যাবেন না যেনো।
আহান — ভুল কোথায় করেছো? পাপিষ্ঠ হাত থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিলে সে মুক্ত দিয়েছে। কিন্তু শুধু একটা কথা রাখতে পারে নি। মৃত্যু চেয়েছিলে কিন্তু সে মরে যেতে পারে নি।
আহানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইয়ানা আহানের বক্ষে ঝাপিয়ে পড়ে। বুক চিরে কান্না আসছে।
ইয়ানা — আল্লাহর দোহায় লাগে এই কথা আর মুখ দিয়ে ও উচ্চারন করবেন না। আমি এই কথার ভাড় আর বহন করতে পারছি না। প্লিজ ক্ষমা করে দিন না। আমি যে এই এই কথার ভাড়ে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছি। শেষ হয়ে যাচ্ছি ভিতর থেকে।
আহান ইয়ানার স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। এই স্পর্শ যে তার কাছে সবচেয়ে শান্তির স্থান।কতদিন ধরে তার বুকটায় ইয়ানা নামক মেয়েটা মাথা রাখে না। ইয়ানার প্রত্যেকটা কথা মনে পড়তেই আহান ইয়ানাকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,,,
” কি শুরু করেছো বাচ্চাদের মত পাগলামি। ছাড়ো আর যাও নিজের যায়গায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ”
ইয়ানা আহানের টি- শার্ট আর ও শক্ত করে চেপে ধরে বলে,,,
” যাব না আমি আজ এই বুক থেকে। আজ যদি আপনি আমাকে এখান থেকে সরিয়ে নিতে চান তাহলে হয়ত আমার মৃত দেহ দেখতে পাবেন। ”
ইয়ানার কথা শুনে আহানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। রাগে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়।
আহান — চুপ করে যাও ইয়ানা। আজেবাজে কথা বলা বন্ধ করো। আর আমার কাছ থেকে সরে বসো তোমাকে স্পর্শ করব না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
ইয়ানা — জাহান্নামে যাক আপনার সেই প্রতিশ্রুতি। একটু ধমক দেন না যেভাবে আগে দিতেন। একটু দিন!
” থাপ্পর মেরে অজ্ঞান করব বিয়াদপ মেয়ে মরার কথা মুখে আনলে ” জানেন এই ধমকটা আমি খুব মিস করি। আপনার থাপ্পর ও খায় না কতদিন ধরে।
আহান চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বস টানছে। এতদিন পর ইয়ানাকে এত কাছে পেয়ে আহানের তৃষ্নার্ত হৃদয় হাহাকার করে উঠে। এই মেয়েটার কাছে আহানকে শেষ করার সব অস্ত্র আছে। নিজের ভাবনার মাঝে ঠোঁটে কারোর স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকায়। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায় ইয়ানার কাছ থেকে কিন্ত ইয়ানা আহানকে আর শক্ত করে ধরে। আহান আর চেষ্টা চালাই না। ইচ্ছে করলে এক ঝটকায় ইয়ানার থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারে কিন্তু কেনো জানি ইচ্ছে করছে না। সব রাগ অভিমানের সমাপ্তি এখানেই শেষ করতে চাচ্ছে। কম তো আর কান্না করায় নি ইয়ানাকে। আর কত কষ্ট পেতে দেখবে। আহান নিজে কি ঠিক আছে? যাকে এক নজর দেখার জন্য চাতক পাখির ন্যায় ছটফট করত। তার কন্ঠস্বর না শুনলে তৃষ্নার্ত কাকের ন্যায় হয়ে যেত। সে কিভাবে এত মাস তার সাথে কথা না বলে, তাকে স্পর্শ না করে থেকেছে। প্রতিনিয়ত নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করে থেকেছে। তাই তো অনেক সময় বাড়িতে ফিরত না। এই মেয়ের উপস্থিতি হৃদয়ে তোলপাড় শুরু করে।
আহান ইয়ানাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। আহানের স্পর্শ পেয়ে ইয়ানা ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না শুরু করে দেয়।
ইয়ানার কান্না দেখে আহান ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে মাথা নাড়িয়ে না করে যাতে কান্না না করে। আহানের এই আলিঙ্গনের ইয়ানা আর ও কান্না শুরু করে দেয়।
ইয়ানা — প্রমিস করছি আর কখনো আপনাকে বাজে কথা বলব না। আর কখনো বলব না আপনার ছোয়া আমার খারাপ লাগে। একটা গাছের শিকড়ে জল না পৌছালে যেমন গাছটা ধীরে ধীরে যেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে ঠিক তেমনি আপনার শাষন, ধমক আর ভালোবাসা না পেলে আমি নিস্তেজ হয়ে পড়ি। প্লিজ ক্ষমা করে দিন। কাছে টেনে নিন না ঠিক আগের মত।
অনুভবে তুমি পর্ব ৫৭
আহান ইয়ানার সম্মতিতে ইয়নাকে কাছে টেনে নিলো। আবার ও ভালোবাসার সাগরে ডুব দিলো ইয়ানাকে নিয়ে । সকল বিষাদ কথাবার্তা আর অতীতকে পিছনে ফেলে এই রাতকে ভালোবাসার রাত বলে সাক্ষী করল। সমস্ত মান অভিমান, রাগ, আকাঙ্খা, প্রত্যাশা শুধু ভালোবাসার মানুষের সামনেই করা যায়। থাকুক না এই গভীর রজনী তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে।