অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১১

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১১
লিজা মনি

ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আছে ইয়ানা আর মিরা। মিরা এইটা সেইটা বকবক করে চলছে। একদিনে মেয়েটা একদম মিশে গেছে। খুবই মিষ্টি একটা মেয়ে একদিনে কতটা আপন করে নিয়েছে। হল্লা পার্টির কথা মনে পড়তেই মনটা বিষিয়ে যায়। কতদিন হলো ওদের সাথে দেখা হয় না। ফোনে কথা বলা আর সামনাসামনি পথ চলা কি এক? নিশ্চয় ওরা ও এখন আমার কথা ভাবছে যেভাবে আমি ভাবি প্রতিটা মুহূর্তে। আমাকে ছাড়া নিশ্চয় তাদের ও খুব মন খারাপ।
ইয়ানাকে অন্যমনস্ক হতে দেখে মিরা বলে,,,,,

” কি হলো মন খারাপ? কিছু হয়েছে বলো আমায়? ”
ইয়ানা — আমার ফ্রেন্ডদের কথা মনে পড়ছে খুব। যেভাবে আমি আর তুমি বসে আছি সেভাবেই আমরা প্রতিদিন আড্ডা দিতাম। খুব মিস করি তাদের।
মিরা — কিছু করার নেই বেবি। সবই হচ্ছে নিয়তির এক দৃষ্টান্ত রুপ। নাহলে তুমি ওই বলো আমার কানাডা এসে থাকার কোনো মানে হয় বাবা মাকে ছেড়ে। আমার ও এখানে আসার একটা বড় কারন আছে?
ইয়ানা — কি মিরা?
মিরা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“” থাক না! জেনে কি হবে? হয় না সবার জীবনে ওইত একটা ভয়ংকর সত্যি থাকে যা তার জীবনকে নরক করে তুলে। বাট যারা মুভ অন করতে পারে তারা নিত্যান্তই সাহসী। এত বলে কি হবে ইয়ানা ? সব তো শেষ। কোনোরকম পালিয়ে বেঁচে তো আছি।
ইয়ানা মিরার দিকে তাকায়। সত্যি মেয়েটার ভিতরে অনেক কষ্ট জমা আছে। ও যতটা হাসিখুশি আর চঞ্চল ততটা হাসি খুশি আর চঞ্চল নয় ও।
ইয়ানা — ফ্রেন্ড হিসেবে নয় বোন হিসেবে জানতে চেয়েছি। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে বলার দরকার নেই জোড় করব না তোমায়।
মিরা ইয়ানার দিকে ছলছল চোখে তাকায়। গড়িয়ে পরেছে চোখ দিয়ে এক ফোটা নোনা জল। কিন্তু সে কাঁদতে চাই না। কাঁদা তার জন্য বারন। মিরা চোখের পানি মুছে বলতে থাকে,,,,,,,,
“”বোন হিসেবে যখন জানতে চেয়েছো বারন কিভাবে করি।
এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,,,,,,

“” আমি যখন ভার্সিটির এডমিশন এক্সাম দিয়েছিলাম তখন থেকে আমি এক বখাটের নজরে পরি। ওরা বখাটে হলে ও খুব শক্তিধর ছিলো। আমাদের চট্টগ্রামের সবচেয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ী আতিক রহমানের ছেলে জনি। খুব ওই খারাপ জানো? কিভাবে নেশাক্ত ভাবে তাকাত আমার দিকে। আমি ভার্সিটি আসার সময় সবসময় আতঙ্কে থাকতাম কোন সময় আমার ইজ্জতে হামলা করে ওই জানোয়ার। বাপ হচ্ছে এক কুকুর ছেলে হচ্ছে জানোয়ার। ওই ছেলে হাজার ও মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করে না। বাবা জনগনের সামনে বলে আমার ছেলে আর এমন করবে না আমি ওকে বুঝাব।

কুকুরটা বাড়ির ভিতর গিয়ে বুঝানোর পরিবর্তে বলতো রেপ করিস ভালো কথা আজ কালকার ছেলেরা এইটা করবে এই স্বাভাবিক কিন্তু মেয়ে দেখেশুনে করবি তো। গরিব ঘরের মেয়েদের করবি যাতে কেউ কিছু বলতে না পারে। কিন্তু তুই তো বড়লোক ঘরের মেয়েদের দিকে হাত বাড়াস । আতিক ছিলো বাবা নামক এক কলঙ্ক । ছেলে মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে খেলা করত আর বাবা সেটার বাহবা দিত। আমার বোন সমতুল্য বান্ধুবী ও এই জানোয়ারের ভুক্তভোগী হয় ইয়ানা। আমি আর নেহা একদিন কোচিং শেষে বাড়ি ফিরছিলাম তখন জনি আমাদের পথ আটকায়। আর আমাদের দিকে তাকিয়ে কি জঘন্য অঙ্গভঙ্গি দিচ্ছিলো তা বলাটা ও লজ্জাজনক। নেহার প্রচুর রাগ ছিলো সে কখনো অন্যায় সহ্য করতে পারত না। সে জানত তারা খারাপ তারপর ও রাগের বসে জনির গালে চর বসায়।
এই বলে মিরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। ইয়ানা মিরার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,,,,,

” এরপর কি হয়েছিলো মিরা?
মিরা চোখের পানি মুছে আবার ও বলতে শুরু করে,,,,,,
” ওইদিন তো আমরা বাড়িতে চলে এসেছিলাম। আমার ও প্রচন্ড জ্বর আসে ওইদিন। আমি এমনিতে ও আগের থেকে অসুস্থ ছিলাম কিন্তু ওইদিন আমার সিমাহীন জ্বর আসে। তাই পরের দিন ভার্সিটিতে যেতে পারি নি। নিহা আমাকে ছাড়া একাই গিয়েছে। কিন্তু ও আর বাড়ি ফিরে আসে নি ইয়ানা।
ইয়ানা — ক.. কেনো? ক.. কি হয়েছিলো মিরা?

মিরা — পুলিশ তদন্ত করে কোথায় যেতে পারে। আমি ও ছিলাম অসুস্থ ওর নিঁখোজের খবর শুনে আমি আর ও অসুস্থ হয়ে পড়ি। ও আমার ফ্রেন্ড কম বোন ছিলো। অনেকে বলছে নিহা কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। আঙ্কেল আন্টি ও বাজেভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নিহা ওদের একমাত্র মেয়ে ছিলো। এমন নয় নেহা গরিব নেহার আব্বু ছিলো একজন উচ্চ পদস্থ ব্যবসায়ী। বিদেশ জুড়ে ওনার যাতায়াত। পুলিশ প্রায় দু দিনের মাথায় এক মরা নদীর কাছে নেহার মৃতদেহ উদ্ধার করে। পুরো শরীর ছিলো বস্ত্রহীন। কি বাজেভাবে শরীরে আচরের দাগ। গলায় শ্বাসরোধ করে মেরেছে ওকে। কি জঘন্য অবস্থা ছিলো আমার বান্ধুবীটার ইয়ানা খুব জঘন্য। যখন আমি ওর এই বিধ্বস্ত চেহারা দেখি শুধু আল্লাহ বলে এক গগন বিধায়ী চিৎকার দিয়েছিলাম। পরে আমার আর কোনো হুস নেই।
পরে নিহাকে ময়না তদন্তে নেওয়া হয়। জানতে পারে চার জনের হাতে সে রেপ হয়েছে তা ও বাজেভাবে। ওর পেলভিসের হার ভেঙ্গে গিয়েছিলো তার উপর হাতের হার গুলো ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে। বক্ষগহ্বরের হাড় ছিলো ক্ষয় হওয়া একটার থেকে একটা আলাদা। ওর বাম হাতে পাঁচটা আঙ্গুল ছিলো না।

যখন আমি জানতে পারি ও ধর্ষনের স্বীকার হয়েছে তখন ওই সন্দেহ হয় এইটা জনির কাজ। সন্দেহ তখন বিশ্বাসে পরিনত হয় যখন ওর হাতের পাঁচটা আঙ্গুল কাটা ছিলো। কারন এই হাত দিয়ে ওকে থাপ্পর মেরেছিলো নিহা। ও খুব ফর্সা আর সুন্দরী ছিলো কিন্ত ওর লাশটায় হাজার ও ক্ষত পুরো শরীরটা কেমন কালসিটে হয়ে গিয়েছিলো। আমার বিশ্বাস ওই হয় নি এইটা যে নেহা ছিলো। শুধু ওর লাশটা একবার ওই দেখেছিলাম আর ক্ষমতা হয় নি আমার। সহ্য করতে পারছিলাম না মনে হচ্ছে কলিজায় কেউ ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। যখন ওকে জানাজার জন্য বাড়িতে আনা হয় তখন ওর সাদা কাপড় দিয়ে মুড়ানো লাশটার দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম,,,,,,,,,,,,,,,

” তুই আমাকে রেখে এইভাবে যেতে পারিস না নেহা। আমি তকে ছাড়া কিভাবে থাকব। আমার ফটোশুট কে করে দিবে? আমার সাথে কে প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাবে। তুই তো খুব স্ট্রং নেহা। সামান্য বিবেকহীন জানোয়ারের দাবানলে পড়ে তুই নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিস। উঠে প্রতিবাদ কর নেহা। তর নিরবতা তর বান্ধুবী সহ্য করতে পারছে না। মনে হচ্ছে তর সাথে নিজেকে এই সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে নেই। উঠ নেহা,, উঠ।
কিন্তু ও উঠে নি ইয়ানা একদম নিশ্চুপ ছিলো। তবে মনে হয়েছিলো নেহা আমাকে বলছে,,,,,, ওরা খুব খারাপ আয়াত তুই এখানে নিরাপদ না। ওরা আমাকে পশুর মত খুবলে খেয়েছে। তুই এই ভোক্তভোগীদে কাছে নিজেকে উৎ সর্গ করিস না। ওরা খুব খারাপ। আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।
আমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছিলাম।

আঙ্কেল এত বড় ধাক্কা নিতে না পেরে স্ট্রোক করে পরের দিন ওই মারা যান। আন্টি পর পর দুইজনের শোকে একদম পাথর হয়ে গেছে। আন্টি এখন নিজের ভাইয়ের বাসায় থাকে।
একদিন পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে বলে,,,,,,
” নেহা নাকি সেচ্ছায় ধর্ষন হয়েছে। নিজের শরীর বিক্রি করতে গিয়েছিলো এরপর এতটা আঘাত নিতে না পেরে মারা গিয়েছে। আর যাদের কাছে গিয়েছিলো তারা ও খুব খারাপ ছিলো। আর এই কারনেই নিহার এই হাল।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,,,,

” নেহা কি সত্যি এমন করেছিলো?
মিরা — না ইয়ানা নেহা এমন মেয়ে নয়। ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো না। সে ছেলেদের থেকে অনেক দুরে থাকত। ওই পুলিশগুলো জেনে গিয়েছিলো এইটা জনির কাজ তাই মামলা তদন্ত ধামাচাপা দিতে এসেছে। কারন নেহার মামলা লড়ার মত কেউ ছিলো না ওর একটা মামা সে ও দেশের বাহিরে থাকত। আমার আব্বু একজন অসুস্থ মানুষ মামলা লড়বে কে? আমি সেদিন পুলিশকে বলেছিলাম এইটা জনির কাজ। কিন্তু পুলিশ মনে হচ্ছিলো আমার কথা কানেই তুলে নি। কারন তারা ছিলো আতিকের কেনা দালাল। এরা পুলিশ নামক সন্ত্রাস।

যখন দেখছিলাম ওরা আমার কথা কানে তুলছিল না তখন আমি বুজে গেছি ওরা সব জেনে ও নিশ্চুপ। একটা পুলিশ এগিয়ে এসেছিলো আমাকে সাহায্য করার জন্য কিন্তু সে ও নিখোঁজ। যেদিন শুনছিলাম পুলিশটা মারা গিয়েছে ইলেক্টিক শকের মাধ্যমে।মেরেছে কিন্তু ওরাই কিন্তু নাম দিয়েছে দুর্ঘটনার। ওইদিন রাতে আমি বুঝতে পারি পরের টার্গেট আমি। তাই বাবা আমাকে দুরে সিলেট পাঠিয়ে দেয়। আসতে চাই নি কিন্তু একপ্রকার বাধ্য হয়ে আসতে হয়েছে । পনেরো দিনের ভিতর ভিসা রেডি করে মামার মেয়ে হিসেবে কানাডায় চলে আসি। আমার নাম কিন্তু মিরা নয় আমার নাম হচ্ছে আয়াত। আমি কানাডায় এসে সব কিছু চেইঞ্জ করে ফেলি। এই হচ্ছে আমার জীবনের একটা ভয়ংকর বাস্তবতা। যা আমাকে আজ ও তাড়া করে। বিষাক্ত লোকগুলো ঠিক উল্লাস করছে কিন্তু ভিতর থেকে আমার নেহা ন্যায্য বিচার পাই নি। শুধু নেহা নয় হাজার ও মেয়ে এমনভাবে শেষ হচ্ছে। জানি না এই বর্বরতা কতদিন থাকবে।আমি মহান রবের কাছে শুধু একটাই আরজি জানায় ওই আতিক আর ওর ছেলে জনির যাতে এমন ভাবে মৃত্যু হয় যেখানে পুরো দুনিয়া দেখলে যাতে কেঁপে উঠে।

ইয়ানা নিজের চোখের পানি মুছে বলে,,,,,,,
” বাস্তবতা টা খুব কঠিন ছিলো। সত্যি আমাদের দেশে ধর্ষনের কোনো বিচার নেই। চলে শুধু ক্ষমতার লড়াই। কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে যদি কেউ রুঁখে না দাঁড়ায় তাহলে বর্বরতা আর ও বৃদ্ধি পাবে। তুমি নেহাকে খুব ভালোবাসতে তাই না মিরা?
মিরা — হ্যা প্রচুর যাকে বলে সিমাহীন ভালোবাসা। আমাদের দেখলে কেউ বান্ধুবী নয় দুই বোন বলত। আর কে রুখেঁ দাড়াবে সবাই টাকার কাঙ্গাল। যেখানে প্রশাসন কিনে রেখেছে সেখানে কে যাবে এইসবে জড়াতে। জানো আমি অগ্নি চৌধুরিকে কেনো এত পছন্দ করি?

ইয়ানা — কেনো?
মিরা — কারন উনি ধর্ষনের মারাত্নক শাস্থি দেন। এই দিকটা আমার খুব ভালো লাগে তাই ওনাকে আমি সম্মান ও করি। মানুষ যত খারাপ হোক তাকে ভালোবাসার জন্য একটা সুন্দর দিক ওই যথেষ্ট। আমাদের বাংলাদেশে ও উনার মত এমন একজন মাফিয়ার প্রয়োজন ছিলো।
ইয়ানা — হুম। যারা খুন, পাপাচারে লিপ্ত তাদের আমি মন থেকে ঘৃনা করি সে যদি হাজার ও ভালো কাজ করে তবুও তারা ঘৃনার ওই পাত্র।
মিরা — চলো ক্লাস শুরু হবে যাবে রুমে যাই।
ইয়ানা — হুম চলো।

ইয়ানা আর মিরা ক্লাসের দিকে যায়। ক্লাস রুমে ডুকতে যাবে এমন সময় তাদের সামনে একটা ছেলে এসে দাঁড়ায়। ইয়ানা ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটার শরীর দবদবে সাদা তার মানে সে বিদেশী। ছেলেটা মিরার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ইয়ানার দিকে তাকায় এরপর গাল হেসে বলে,,,,,,
” কে এইটা? ও দেখি তোমার থেকে ও সুন্দর। ”
মিরা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,,
“” অসভ্যতমি করো না জিওন। ও মাত্র কাল ভার্সিটিতে জয়েন হয়েছে। রাস্তা ছাড়ো আমাদের।
জিওন — রাস্তা তো ছাড়ব কিন্তু তোমার সাথের মালটাকে হেব্বি লেগেছে। বাজেট কত হবে ওর? সমস্যা নেই যত চাইবে তত দিব।

ছেলেটার কথা শুনে ইয়ানা প্রচন্ড রেগে যায়। সাহস কি করে হয় এই ছেলের এইসব বলার। ও কি অন্য মেয়েদের মত ভেবেছে অসভ্য ছেলে। ইয়ানা ছেলেটার দিকে রাগান্বিত ধমকে বলে,,,,,,
” এই ছেলে মুখে লাগাম টান নায়ত জিব টেনে ছিড়ে ফেলব বিয়াদপ। মাল বলছিস কাকে তুই জানোয়ারের বাচ্চা। আমাদের দেখে কি তর রাস্তার মেয়ে মনে হয়। আরেকটা কথা বলবি জবান নিয়ে নিব।
ইয়ানার রেগে যাওয়া দেখে মিরা ইয়ানার হাত চেপে ধরে ইশারা করে আর কিছু যাতে না বলে।
ছেলেটা ইয়ানার দিকে বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” তেজ আছে শরীরের। হেব্বি পছন্দ হয়েছে একদিন নাহয় চা কফি খাওয়া যাক।
ইয়ানা রেগে দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,,,

” সপ্নে ও ভেবো না। তোমাকে তো….
ইয়ানা আর কিছু বলতে পারে না তার আগেই মিরা ইয়ানার হাত চেপে ধরে ক্লাস রুমে নিয়ে যায়। ইয়ানা রাগে ফুসফুস করতে করতে বলে,,,,,,
” নিয়ে এলে কেনো? ওর মাথা ফাটানো দরকার ছিলো কত বড় বিয়াদপ একটা ছেলে।
মিরা ইয়ানার কাধে হাত রেখে বলে,,,,,,
” ও একটা ছেলে ইয়ানা রাগ সংযত কর। তোমাকে একটু আগে আমার সম্পর্কে একটা কথা বলেছিলাম না। এরকম ঘটত না যদি নেহা ওইদিন ছেলেটাকে থাপ্পর না দিত। হয়ত বা ঘটত সেটা আমার সাথে তা ও অন্যভাবে।
তাই রাগ সংযত করে চল। একটা মেয়ে হচ্ছে সাদা কাপড়ের মত একটু দাগ লেগে ভেসে থাকে কিন্তু একটা ছেলে হচ্ছে রঙ্গিন কাপড়ের মত হাজার দাগ পড়লে ও কিছু হবে না। আর জিওন ও এখানকার ছেলে। মা কানাডার বাট বাবা বাঙ্গালি তাই আমাদের সাথে বাংলাতেই কথা বলেছে। বেশি একটা ভালো ছেলে না আমাকে টিচ করত আমি এড়িয়ে চলি সবসময়। তুমিও তাদের কথায় কান দিও না। রাস্তার ধুলো ভেবে ঝারা মেরে ফেলে দিবে।
ইয়ানা — হ্যা ঠিক বলেছো।

ভার্সিটি থেকে আসতে আজ বিকেল হয়ে যায়। ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ওর ঘুম ভাঙ্গে অগ্নির আগমনে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বাজে।
ইয়ানা — ওহহ নো আমি এখন ও ঘুমিয়ে ছিলাম।
অগ্নি শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলে,,,,,,
” এত ব্যস্ত হওয়ার কি আছে? তোমার সেই ট্রিপিকাল দজ্জাল শাশুড়ি বা ননদ নেই যারা এই নিয়ে তোমাকে কথা শুনাবে। আছে শুধু তোমার এক অবলা হাজবেন্ড যার দিকে তুমি নজর ও দেও না।
ইয়ানা ভেংচি কেটে বলে,,,,,
“” উহহ অবলা না ছাই। নাটক বন্ধ করে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
অগ্নি ঠাট্টা করে বলে,,,,,,,

” হ্যা হ্যা বউয়ের কাছে যাব তো ফ্রেশ না হলে চলে নাকি। আসছি সুইটহার্ট অপেক্ষা করো। আজ আমি আর তুমি এক অন্য রাজ্যে পদার্পন করব। তুমি…..
অগ্নি আর কিছু বলার আগেই ইয়ানা তার দিকে বালিশ ছুড়ে মেরে বলে,,,,,,,
” বেশরম পুরুষ ”
অগ্নি — তার জন্য আমি গর্বিত।
ইয়ানা আরেকটা বালিশ ছুড়ে মারতে যাবে ঠিক এমন সময় অগ্নি সতর্ক করে বলে,, ,,,,,,,,

“” খবরদার আরেকটা বালিশ ছুড়ে মারলে তোমাকে শাওয়ার নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিব। ”
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা চুপসে যায়। এই লোককে নিয়ে এক বিন্দু ও বিশ্বাস নেই।
অগ্নি ইয়ানার ভোঁতা মুখ দেখে মুচকি হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
কিছুক্ষনের ব্যবধানে অগ্নি একটা কালো টি- শার্ট আর ট্রাউজার পরে বের হয়। টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,

” কি হয়েছে এইভাবে বসে আছো কেনো?
ইয়ানা — জানেন আজ একটু খুব মর্মান্তিক ঘটনা শুনেছি।
অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,,,,,,,
” কি ঘটনা? ”
ইয়ানা — আচ্ছা মি. চৌধুরি আপনি চট্টগ্রামের আতিক রহমানের ছেলে জনিকে চিনেন?
অগ্নি ইয়ানার কথা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কপালের ভাজগুলো সোজা হয়ে পড়ে। ইয়ানার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে বলে,,,,,,,

” কে উনি? ”
ইয়ানা মন খারাপ করে বলে,,,,,,,,
” চিনেন না তাই না? আপনি চিনবেন কোথা থেকে ও তো একটা ইয়াবা ব্যবসায়ী।
অগ্নি আনমনে বলে,,,,,,
,”” শুধু ইয়াবা নয় নারী – শিশু পাচারকারী ও। গ্যাংস্টার মাফিয়াদের সাথে তার বাবার অনেক ভালো বন্ধুত্ব।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,,,,,,
” আপনি চিনেন ওনাকে? এতকিছু জানেন কিভাবে?
অগ্নি কাধ বাকিয়ে বলে,,,,,,,
” ব্যবসার জন্য একবার চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম তখন জেনেছি লোকজনের মুখ থেকে।
ইয়ানা — জানেন এই জনি নামক জানোয়ারটাকে আমার কেটে টুকরো টুকরো করতে ইচ্ছে করছে?
অগ্নি –; কেনো?

ইয়ানা অগ্নিকে নিজের কাছে এনা বসায় এরপর মিরার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলে। ইয়ানা এইসব বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। ইয়ানার চোখের পানি দেখে অগ্নি হাত দুইটা মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। রাগে ও দাত কিড়মিড় করতে থাকে। জনির জন্য তার বউয়ের চোখে পানি এইটা তো সে কখনো মেনে নিবে না। ইয়ানা কাঁদবে তার আঘাতে তার ভালোবাসায় অন্য কারোর জন্য নয়। তাহলে ওর বউ অন্য কারোর জন্য কেনো কাঁদছে। আজ জনি বেঁচে আছে দেখেই তো ইয়ানা কান্না করার সুযোগ পেয়েছে। জনির কি তাহলে শেষ সময় লিখে নিব। অগ্নি নিজের রাগটাকে সংযত করে শান্ত স্বরে ইয়ানার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,,,,,
” তুমি এই নিয়ে কষ্ট পেয়েছো?

ইয়ানা — হ্যা আমি যদি পারতাম ওই জনি ছেলেটাকে টুকরো টুকরো করে কাটতাম।
অগ্নি — চিন্তা করো না তোমার এই ইচ্ছে ও পুরোন হবে।
ধরে নাও নিয়তি তোমার ইচ্ছেটাকে মঞ্জুর করে নিয়েছে।
ইয়ানা — ইসস যদি সত্তি এমন হত।
অগ্নি —- হয়ে যাবে সুইটহার্ট চিন্তা করো না।
ইয়ানা — আপনি এতটা বিশ্বাসের সাথে কিভাবে বলছেন?
অগ্নি — আব. বিশ্বাস নয় এমনি বললাম।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,,
” ঠিক আছে তুমি থাক আমি একটু বারান্দা থেকে আসছি। ”
এরপর অগ্নি বারান্দায় চলে যায়। বারান্দার দরজা বন্ধ করে নিজের বারের ডিভাবে বসে পরে। এরপর ফোন বের করে রায়ানের নাম্বারে ফোন লাগায়। একবার ফোন দেওয়াতেই ফোন ধরে ফেলে,,,,,,,

রায়ান — হ্যা বল অগ্নি?
অগ্নি — পরশু বাংলাদেশ যাচ্ছি সব ঠিক করে রাখিস।
রায়ান শুয়া থেকে উঠে অবাক হয়ে বলে,,,,,,,
” মাথা ঠিক আছে তর তুই এখন বাংলাদেশে কেনো যেতে চাচ্ছিস ব্রো। না মানে কয়েকদিন তো হলো মাত্র এসেছিস? ইয়ানা কি কান্না কাটি করছে যাওয়ার জন্য?
অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,,,,,
” তর মনে হয় বউয়ের কান্না কাটি দেখে কপোকাত হয়ে থাকব। যাচ্ছি দরকারে। আর হ্যা ইউভি আর তুই গুছিয়ে নে।
রায়ান — ঠিক আছে।

এরপর অগ্নি ফোন কেটে দেয়। রায়ান ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” বিয়ে হওয়ার পর ও মানুষ হলি না। শালা সাইকো এখন ও সাইকো রয়ে গেলি। কি জানি কার ধ্বংসের কারনে বাংলাদেশে যাচ্ছে।
রায়ান বির বির করতে করতে ইউভি কে ফোন দিয়ে সব খুলে বলে।
অগ্নি গ্লাসে সামান্য ওয়ান ঢেলে এক নাম্বারে ডায়েল করে।
ওইপাশ থেকে —- জি স্যার বলোন।
অগ্নি গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১০

” জনি যাতে দুই দিনের ভিতরে দেশের বাহিরে যেতে না পারে। ওকে আমি দুই তিন দিনের ভিতরে অক্ষত অবস্থায় চাই। এন্ড ওর সমস্ত খবর আমাকে জানাবে যতক্ষন আমি বাংলাদেশে আসছি ওকে।
ওইপাশ থেকে লোকটি ঘাবরে গিয়ে বলে,,,,,,,,
“” জ.. জি স্যার। কোনো চাপ নিবেন না সব সামলে নিব।
অগ্নি ফোন কেটে দিয়ে একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বলে,,,,, এমনিতে অগ্নি চৌধুরি এইসব লোকদের মেরে সময় নষ্ট করে না। কিন্তু বউটা চেয়েছে জনির লাশটা যাতে টুকরো টুকরো হয়। আর আমি এক আদর্শ স্বামী হিসেবে শুধু সেই দায়িত্ব পালন করব।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১২