অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৪

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৪
লিজা মনি

ইয়ান বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। শহরের কোলাহল তখনও পুরোপুরি জেগে ওঠেনি।চারদিকে একটা নরম নীরবতা। সকালের হালকা ঠান্ডা বাতাস মুখে ছুঁয়ে যাচ্ছে, যেন তার চুলে আঙ্গুল বুলিয়ে দিচ্ছে। আকাশটা নীল-সাদা মেঘে মাখামাখি, মাঝে মাঝে এক চিলতে রোদ এসে চোখে লাগে, তবুও ঝাঁঝ নেই।
চারপাশের গাছপালা ধোয়া-ধোয়া আলোয় ঝকমক করছে। পাখিরা টুকটাক ডাকছে দূরে, যেন দিনটাকে স্বাগত জানাচ্ছে। বাতাসে এক ধরনের শান্ত সুবাস, হয়তো কাঁচা মাটির, কিংবা ভেজা পাতার গন্ধ। ইয়ানা সকালের মিষ্টি আবহাওয়া অনুভব করে নিচে নেমে আসে।

অগ্নি নিজের কাজে বাহিরে গেছে। সাজিদ চৌধুরির নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ আছে। ইয়ানা, দাদুমনি, আর শিখা চৌধুরি ড্রয়িংরুমে বসে আছে। আজ তাদের বাড়িতে এক বিশেষ মানুষ আসবে। ইয়ানা শুধু ভাবছে কে আসছে এমন যে সবাই এত আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। ইয়ানা শিখা চৌধুরিকে জিজ্ঞাসা করলে উনি উত্তর দিয়েছিলো,,,,,
” তর স্বামীর জীবন ও। নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসে ওকে। আসলেই দেখতে পাবি এখন না হয় আগ্রহ নিয়ে বসে থাক।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইয়ানার মনে কৌতূহলের বাসা বাঁধে। কে সে? যাকে অগ্নি চৌধুরি এত ভালোবাসে।
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রায় অনেক্ষন পর একটা বাচ্চা মেয়ে এসে শিখা চৌধুরি আর দাদুমনিকে জড়িয়ে ধরে। বয়স আনুমানিক ষোল বছর হবে। দেখতে একদম অরিদের মত দেখা যায়। ও কি তাহলে তাদের বোন? কিন্তু আমার জানা মতে তো ওনারা শুধু দুই ভাই।
মেয়েটি শিখা চৌধুরির সাথে কথা বলে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর চঞ্চল হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,,
” বড় আম্মু উনি কি আমার বউমনি ”
শিখা চৌধুরি মেয়েটির দিকে হাসি দিয়ে বলে,,,,,

“” হ্যা। ”
মেয়েটি ইয়ানার হাত ধরে বলে,,,,,
” কি সুন্দর তুমি বউমনি। আমি আহিয়া চৌধুরি। তোমার ছোট ননদিনী মানে চৌধুরি ভিলার সবার ছোট সদস্য। তোমার সম্পর্কে কিছু বলতে হবে না জানি আমি সব। দাদাভাই সব বলেছে।
ইয়ানা অবাক হয়ে তাকায় আহিয়ার দিকে। অগ্নির ছোট বোন আছে কই সে তো জানত না। সে যাই হোক দেখতে যেমন মিষ্টি তেমন প্রানবন্ত।
ইয়ানা আর আহিয়ার কথার মাঝে অরিদ নিচে নেমে আসে। আহিয়া অরিদকে দেখে এক দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,,

” ছোট ভাইয়া কেমন আছো ”
অরিদ নিজে ও আগলে নিয়ে বলে,,,,,
” এত দিন তো ভালোই ছিলাম তুই আসাতে আবার খারাপ হয়ে গেলাম । এখন সব কিছুর ভাগ বসাতে শুরু করবি।
অরিদের কথা শেষ হতেই আহিয়া অরিদের বুকে ঘুসি মেরে বলে,,,,,,,
” কুত্তা দের বছর পরে এসেছি তার পর ও একটু মায়া নেই। আর আসব না তোমার কাছে।
অরিদ আহিয়ার মাথায় হাত রেখে বলে,,,,,
” জানে মেরে ফেলব। বড় হচ্ছিস এখন থেকে নিজের বাড়িতে থাকবি এইসব নানোর বাড়ি যাওয়া বন্ধ।
অরিদের কথা শুনে আহিয়া মুখ বাকিয়ে বলে,,,,,,
” আসছে দাদাভাইকে কপি করতে ” জানে মেরে ফেলব ”

অরিদ আহিয়াকে কিছু করতে যাবে তার আগেই আহিয়া ভোঁ দৌড়।
ইয়ানা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। দুইটা এইভাবে লেগে থাকে সারাদিন। কিন্তু তারা তাদের বোনকে নিজের সমস্ত কিছু দিয়ে ভালোবাসে সেটা ইয়ানার বুঝতে বাকি নেই।
অরিদ ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” বউমনি দাদাভাই কোথায়? ”
ইয়ানা — জানি না ভাইয়া। আমাকে যাওয়ার সময় বলে যাই নি।
অরিদ — ঠিক আছে আমি তোমাকে একটা ফাইল দিচ্ছি সেগুলো দাদাভাই আসলে দিয়ে দিও। আমার আজ আসতে আসতে রাত হবে অনেক আব্বুর সাথে থাকতে হবে।
ইয়ানা — ওকে দিয়ে যাও আমি দিয়ে দিব।

অরিদ ইয়ানাকে ফাইলগুলো দিয়ে শিখা চৌধুরি আর দাদুমনির থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
ইয়ানা ফাইলগুলো হাতে নিয়ে শিখা চৌধুরির পাসে বসে। যিনি মাত্র টিভি অন করে বসেছে খবর শুনার জন্য।
ইয়ানা — আম্মু আহিয়া তাহলে স্যার তাদের আপন বোন?
শিখা চৌধুরি — স্যার কাকে বলছিস? নিজের হাজবেন্ডকে কেউ স্যার বলে?ওরা এক রক্ত এক বংশ শুধু বাবা মা আলাদা।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,
” মানে?

শিখা — তুমি এই বাড়ির বউ সম্পূর্ন রাইট আছে তোমার এই বাড়ি সম্পর্কে জানার। আহিয়া হচ্ছে অগ্নির ছোট কাকাই আর কাকিয়ার মেয়ে। তাদের চাচাতো বোন। কিন্ত আমি আহিয়াকে জন্ম না দিলেও নিজের হাতে মানুষ করেছি। মনে করো ও আমার ও মেয়ে।
ইয়ানা — ওহহ আচ্ছা তাহলে উনারা কোথায়? আমার বিয়ের পর একদিন ও তাদের দেখতে পেলাম না।
শিখা চৌধুরি টিভির চ্যানেল পালটিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেরে বলে,,,,,,

“” আহিয়ার আব্বুর মাজিদ চৌধুরি আর মা হেনা চৌধুরি। আমি যখন এই বাড়ির বউ হয়ে আসি তখন মাজিদ ছোট ছিলো। নিজের সন্তানের মত করে ওকে বড় করেছি। নিজের হাতে মেয়ে দেখে বিয়ে ও দিয়েছি। এক বছরের মাথায় তাদের ঘর আলো করে আহিয়ার জন্ম হয়। হেনা খুব ভালো একটা মেয়ে ছিলো। ওরা বিয়ের পর কখনো ঘুরতে যাই নি। আহিয়ার যখন চার বছর তাখন আমি কানাডা পাঠয়েছিলাম ঘুরে আসার জন্য। তখন অগ্নি ও নিজের পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। এর ওইখানে এক এক্সিডেন্টে তাদের দুর্ঘটনা ঘটে। ভাগ্যক্রমে আহিয়া ওইদিন বেঁচে যায়। হয়ত আল্লাহর রহমত ছিলো। এরপর থেকে আমিই ওকে মানুষ করেছি। সে ও হয়ে উঠেছে অগ্নির জীবন আর অরিদের প্রান। এই যে দেখছিস ঝগড়া করছে কিন্তু বোনের একটা আঘাত সহ্য করতে পারে না। আহিয়ার মামা এসে তাকে নিয়ে গিয়েছিলো। ওরা ইটালি থাকে। অগ্নি তারা দিতে চাই নি কিন্ত ওনাদের অনুরুধে দিয়েছে। সেখানে আহিয়া দেড় বছর ছিলো। আর তুই বিয়ের পরে তো চলে গেলি বলার সময় হয়ে উঠে নি।
ইয়ানার চোখে পানি চলে আসে। এইটুকু একটা মেয়ের মামা – বাবা নেই। তবুও কত প্রানসচ্ছল।
দাদুমনি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

” ছেলে হারাইছি। ছেলের অংশ তো আছে এই অনেক। আল্লাহ যা করে বান্দার মঙ্গলের জন্য ওই করে। এই নিয়ে আর কোনো আফসোস নেই।
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই টিভির স্ক্রিনে এমন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে ভয়ে আৎকে উঠে। এত জঘন্য ভাবে খোদাই করে এক নগ্ন বিকৃত লাশ। যার কোনো অস্তিত্ব বুঝা যাচ্ছে না। ইয়ানার মাথা ঘুরতে থাকে। তার রক্তে ফোবিয়া আছে। এইসব কাটাছিড়া দেখলে ওর গা গুলিয়ে আসে।
ইয়ানা নিজের চোখ স্ক্রিন থেকে নিয়ে বলে,,,,,

” ছিহহ কি জঘন্য খুন।কোন নরপশু এই কাজ করেছে আম্মু? আল্লাহ যাতে ওকে কঠিন শাস্তি দেই।”
শিখা চৌধুরি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে টিভির দিকেই তাকিয়ে বলে,,,,,,
“” এমন দোয়া করতে নেই মা। আকাশে থুথু দিলে সে থুথু নিজের উপর এসে পড়ে। জানি না কে করেছে? কিন্তু ও নাকি চট্টগ্রামের সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি আতিক রহমানের ছেলে জনি। লাশের তো কোনো অস্তিত্ব নেই কিন্ত ওর বাবা এসে বলছে তার ছেলেকে মেরে নাকি কেউ হুমকি দিয়েছে। কার এত বড় কলিজা হলে ওদের বিরুদ্ধে লাগার ক্ষমতা রাখে।

ইয়ানা অবাকের চরম পর্যায়। মৃত্যু তাও আবার সেই নর্দমার। যার ঘটনা সে মিরার কাছে শুনেছে। আচমকা মনে পড়ে যায় অগ্নির সেই কথা,,, ধরে নাও তোমার দোয়া মঞ্জুর হয়েছে। কিন্ত কিভাবে আমার করা পার্থনা এইভাবে মিলে যেতে পারে। কে করেছে এমন কাজ? ভয়ে আর আতঙ্কে ইয়ানার শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়।
ইয়ানা এখান থেকে উঠে গিয়ে সোজা রুমে চলে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজেকে নিজে আয়নায় দেখে কিন্তু মনে হচ্ছে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের পরিবর্তে সেই লাশ ভেসে উঠছে। মুহূর্তের মধ্যে অস্থির হয়ে যায় সে। বিছানার উপর বসে মিরাকে ফোন দেয়। কয়েকবার রিংটন হওয়ার পর ফোন রিসিভ হতেই ইয়ানা আতঙ্ক নিয়ে বলে,,,,,,,

” হ..হ্যালো মিরা?
মিরা — হ্যা ইয়ানা আমি। কিন্তু তুমি এইভাবে ভয় পেয়ে আছো কেনো?
ইয়ানা — জ.. জনি..
মিরা — কি হয়েছে জনির?
ইয়ানা — মিরা ওকে কেউ খুন করেছে।
মিরা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বলে,,
” কিহহহ! কিসব বলছো তুমি ইয়ানা? জনির খুন! এইটা কিভাবে সম্ভব।
ইয়ানা — জানি না মিরা আমি ড্রয়িংরুমে বসে ছিলাম তখন ওই আম্মু মানে আমার শাশড়ি মা টিভি অন করে। তখন এই নিউজ দেখতে পাই। খুব নিশ্বংস ভাবে মেরেছে ওকে। তুমি বাংলাদেশের নিউজ দেখো।
মিরা খানিকটা ভয় আর সাহস নিয়ে বলে,,,,,,

” কার এত সাহস হয়েছে যে ওই নরখাদককে মেরেছে। যা হয়েছে ভালো হয়েছে। সম্মান জানাই আমি সে ব্যক্তিটাকে যে এই মহৎ কাজটা করেছে। আমি আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুক্রিয়া।
ইয়ানা — মেরে ফেলেছে একদম ঠিক করেছে। কিন্ত মারার স্টাইলটা অনেক ভয়ানক। কি বিকৃত মস্তিষ্কের হলে এইভাবে খুন করে। ও তো দেখছি জনির চেয়ে বড় নরখাদক। হয়ত নিজের স্বার্থে মেরেছে।
মিরা — সে যাই হোক। যার জন্য ওই মারুক আমার কাজ তো হয়েছে। আমি প্রতি মিনিটি জনির মৃত্যু কামনা করেছি তাও আবার নিশ্বংস ভাবে। যে এই খুন করেছে অজান্তে তাকে আমি ধন্যবাদ জানায়। সে যত খারাপ হোক না কেনো? শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়। আমি নিউজটা দেখে নিজের ভিতরে রাখা আগুনটা নিভিয়ে আসি ইয়ানা। পরে কথা হবে।
ইয়ানা কথা শেষ করে মন শান্ত করার জন্য ওযু করে কোরআন তিলাওয়াত শুরু করতে বসে পড়ে। পৃথিবীর সবকিছুর শান্তি আছে এই পবিত্র গ্রন্থে। অতিরিক্ত ভয় থেকে বের হওয়ার এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর হয় না। প্রায় অনেক্ষন পর ইয়ানা পড়া শেষ করে উঠে বসে। এখন মনটা একটু হালকা লাগছে।

বিকেলের দিকে ইয়ানা আর আহিয়া হাটতে বের হয়। শিখা চৌধুরি গার্ড দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু আহিয়ার অভিযোগ সে কোথাও মন খুলে হাটতে পারে না। সাথে করে ইয়া বড় বড় কয়েকটা দানব পাঠিয়ে দেয়। শিখা চৌধুরি তাই আজ আর জোড় করে নি যেহেতু সাথে ইয়ানা আছে।
অনেক্ষন হাটার পর আহিয়া নাক মুখ কুচকে বলে,,,,,
” এইভাবে শুকনো মুখে হাঁটা যায় নাকি?”
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” রেস্টুরেন্টে যাবে?”

আহিয়া — আরে ছাড়ো তো রেস্টুরেন্ট। চলো ফুটপাতে গিয়ে ফুচকা খেয়ে আসি।
ইয়ানা আহিয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকায়। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেওয়া মেয়ে ফুটপাতের ফুচকা খাবে বিষয়টা সত্যি আশ্চর্যজনক। তবে বুঝতে পারে চৌধুরি ভিলার প্রত্যেকটা ছেলে – মেয়ে খুব আদর্শ বান। আদর্শবান হবে না কেনো? তারা তো শিখা চৌধুরির মত একজন ব্যক্তিত্যসম্পন্ন ব্যক্তির শিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছে।
ইয়ানা — তুমি ফুটপাতের ফুচকা খাবে আহিয়া?
আহিয়া — হ্যা। তুমি যানো আমার খুব ভালো লাগে কিন্তু কেউ খেতে দেয় না। কিন্ত আজ কোনো গার্ড নেই যে বড় আম্মুর কাছে বিচার দিবে। আজ আমি আর তুমি স্বাধীন বউ মনি।
ইয়ানার মুখে ও হাসির ঝিলিক ফুটে উঠে। সে ও অনেক দিন ধরে এই খুশিতে মেতে উঠে না। মিস করে হল্লা পার্টির সাথে কাটানো সেই ফুচকা খাওয়া মুহূর্তটাকে। ইয়ানা আহিয়ার কথায় সম্মতি জানিয়ে ফ্রেন্ড সার্কেল গ্রুপে মেসেজ সেন্ড করে বলে দেয় মোড়ের কাছে যে ফুচকার গাড়ি নিয়ে বসে সেখানে আসতে। ইয়ানার বন্ধু তারা আসবে শুনে আহিয়া ও খুব খুশি হয়। এক হিসেবে সে ও সবার সাথে পরিচিত হতে পারবে।

পুরো দেশ তোলপাড় লেগে গেছে জনির এত ভয়ংকর মৃত্যুতে। কে করতে পারে এমন অবস্থা। অগ্নি বর্তমানে আতিক রহমানের ড্রয়িংরুমে বসে আছে। মুখ একদম গম্ভীর আর শান্ত ভঙ্গিমায় বসে আছে। । আতিক রহমান একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে আর ও হিংস্র হয়ে উঠে। কানায় কানায় লোক লাগানো হয় কে করেছে এমন কাজ। পুলিশ ফোর্স লাগানো হয় সেই আগত্য ব্যক্তিকে খুজার জন্য।
আতিক রহমান গর্জন করে বলে,,,,,,

” যে সো* বাচ্চা এই কাজ করেছে তার কলিজা ছিড়ে আমি খাব। আতিক শেখের ছেলেকে মারার ফল ওর চৌদ্দঘোস্টি খবর পাবে শুধু একবার জানতে পারি কে সে? ওর বংশ আমি নির্বংশ করে ছাড়ব।
অগ্নি কপালে আঙ্গুল ঘেসে যাচ্ছে। অগ্নির নিরব ভঙ্গিমা দেখে আতিক তেঁতে উঠে বলে,,,,
” পুরো রাজ্যের মালিক হয়ে তর লাভ কি অগ্নি? আমার ছেলের খুনিকে এখন ও ধরতে পারছিস না। এইভাবে নিরব হয়ে কিভাবে বসে আছিস। আমি তো ভেবেছিলাম পুরো দেশে আগুন লাগিয়ে দিবি।
অগ্নি ভিতরে এক তাচ্ছিল্য হাসি দেই। এরপর আতিকের দিকে তাকিয়ে বলে , ,,,,,,
” আরে ভাই শান্ত হও তো। আমি জনিকে বার বার হুশিয়ারি করেছিলাম কোনো গ্যাং এর সাথে যাতে না লাগে। তবুও তোমার ছেলে শুনলো না আর ও উলটো আমাকে কথা শুনিয়েছে। দেখো কার সাথে লেগে আজ ওর এই দশা।
এরপর অগ্নি একটু রহস্যময় কন্ঠে বলে,,,,,,

” নাহলে তোমার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হয়ত তোমার ছেলেকে মেরেছে। তোমাকে আতঙ্কে ফেলানোর জন্য। আমাদেরকে দুর্বল করার জন্য।
আতিক — মানে? কার এত বড় বুকের পাঠা।
অগ্নি — আরে ভাই হাইপার হইও না। আমি তো যাস্ট আমার কল্পনাটা বললাম। কিন্ত খবরদার ভেঙ্গে পড়া যাবে না। যে এই কাজ করেছে সে খুব চালাক আর সাহসী। তোমাকে শেষ করতে ও দুই মিনিট সময় নিবে না। কিন্ত ভাই কোনো চিন্তা নেই আমি আছি তোমার পাশে ঠিক ছায়ার মত।
অগ্নি আতিকের দিকে শান্ত ভাবে তাকায়। সে আতিকের চোখে ক্ষোভের সাথে সাথে কিছুটা ভয় ও দেখতে পাই। অগ্নি ঠোঁটের কোণে এক বিকৃত হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

অগ্নি — আমি এখন আসছি ভাই। জনির বিষয়টা বের করতে হবে।
অগ্নি চোখে সানগ্লাস পড়ে আতিকের ঘর থেকে বের হয়ে আসে। গাড়িতে বসে একবার আতিকের বাড়ির দিকে তাকিয়ে মোবাইল হাতে নেই।

অগ্নি চলে যেতেই রানবীর আতিকের কাছে যাই। সে এতক্ষন পুলিশের সাথে ছিলো। রানবীরকে দেখে আতিক বলে,,,,
” কিছু খবর পেয়েছিস? কে করেছে এরকম? ”
রানবীর — ভাই জনির লাশটাকেই খুজে পাচ্ছি না। লাশ ছাড়া পুলিশ কিছু তদন্ত ও করতে পারছে না। কোথাও কোনো প্রমান নেই যেনো কিছুই হই নি।
আতিক বসা থেকে উঠে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,
” শুধু একবার জানি শালার অস্তিত্বকে চিলের মত খুবরে খাব আমি।
আতিক আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোনে মেসেজ ভেসে উঠে।

“” তুই জানিস না এই যে তর ছেলের রক্ত ঝরেছে। এই রক্তের এক এক ফোটার মধ্যে কত ইতিহাস লুকিয়ে আছে। কত নিস্ব প্রানের গল্প। এটাই এখন আমার এক মাত্র লক্ষ্য তদের একে একে শেষ করা। সময় শেষ তদের। শুরু হবে এক রক্তের খেলা। এক অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া মানব আমি। তদের রক্ত দিয়ে গোসল করতে করতে আমি আলোর দিশা মিলাব। সময় গননা করতে থাক। বলা যায় না পর বর্তী টার্গেট কে হয়।
মেসেজটি দেখে আতিক মোবাইল সজোরে আছাড় মারে। রানবীর আতিকের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” ভাই কে হতে পারে ও? অগ্নির মত এত বড় অস্ত্র আমাদের সাথে আছে এরপর ও এমন হুমকি কার এত বড় সাহস।
আতিক — জানি না। জানি না আমি। শুধু এইটুকু জানি ওর কলিজা ভুনা করে আমি খেতে চাই। আজ ওই চট্টগ্রামে আবার ফিরে যাব।

রায়ান আর ইউভি চৌধুরি ভিলার দিকে যাচ্ছিলো এমন সময় তাদের গাড়ির সামনে এক কুকুর চলে আসে।
রায়ান গাড়ি থেকে নেমে কুকুরকে সরাতে যাবে এমন সময় এক জোড়া জুতা এসে ওর কপালে বারি খাই। হঠাৎ আক্রমনে ভড়কে যায়। যখন বুঝতে পারে তখন কপালে হাত দিয়ে সামনের দিকে তাকায়। সামনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। রায়ান মেয়েটিকে দেখে ক্রোধে ফেটে পড়ে। সে কপাল থেকে হাত সরিয়ে মেয়েটিকে উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,,
” অসভ্য মেয়ে রাস্তায় কিভাবে চলাচল করতে হয় ম্যানার্স জানো না। দেখতে তো প্রাপ্ত বসয় মনে হয় তাহলে জুতা নিয়ে রাস্তায় ছুটাছুটি করছো কেনো?
মেয়েটির রাগ হলেও সে কিছু বলে না যেহেতু অপরাধটা তার। শুধু ছোট করে উত্তর দেই,,,,,,
” সরি আমি বুঝতে পারি নি।”
রায়ান ধমক দিয়ে বলে,,,,,,

” কিসের সরি?কাউকে খুন করে এসে বলবে সরি আমি বুঝতে পারি নি।
মেয়েটি এইবার একটু রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,
” আরে আজব লোক তো আপনি। পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করছেন। কোথাকার বিষয় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।
সুমু আর ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়ানা তারা সেখানে উপস্থিত।
ইয়ানা সামনে না তাকিয়েই বলে,,,,,,
” কিরে তকে পানি আনার জন্য পাঠিয়েছি তুই এখানে কি করছিস?
আহিয়া — রায়ান ভাইয়া তোমরা এখানে?
এরপর রায়ানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। এতক্ষনে ইউভি ও গাড়ি থেকে নেমে যায়।
ইউভি — কি রে কখন আসলি?

আহিয়া — এই তো ভাইয়া আজ এসেছি। দাদাভাই কোথায়?
রায়ান — আসছে কিছুক্ষনের মধ্যেই। বাড়িতেই যাচ্ছিলাম কিন্তু এক জংলির সাথে দেখে হয়ে গেছে।
রায়ানের কথা শুনে সুমু রেগে বলে,,,,,
” দেখুন আপনি কিন্তু এখন লিমিট ক্রস করছেন। সরি বলেছি এতে যদি না পুষায় তাহলে বলব বেশ করেছি জুতা দিয়ে ঢিল ছুড়ে।
হল্লা পার্টি সবাই সুমুর দিকে অবাক হয়ে তাকায়।
ইয়ানা — তুই রায়ান ভাইয়াকে জুতা দিয়ে ঢিল ছুড়েছিস সুমু?
সুমুও অবাক দৃষ্টিতে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানার রিয়াকশন দেখে বুঝা যাচ্ছে তারা পূর্ব পরিচিত। সুমু কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,,

“আরে নারে ভাই। কুকুরকে দিয়েছিলাম ভুলবশত উনার কপালে গিয়ে লাগে। এইটা একটা দুর্ঘটনা।
সুমুর কথা শুনে রায়ান কপাল ঘেসতে ঘেসতে বলে,,,,,
” হ্যা এই দুর্ঘটনার জন্য শুধু আমাকেই পেলে।”
রায়ান বিরবির করে বললে ও সুমু সেটা শুনে ফেলে। রায়ানের দিকে কপাল কুচকে দাঁতে দাঁত চেপে তাকায়।
ইয়ানা — সরি ভাইয়া হয়ত দেখতে পাই নি। আর রাগারাগি করবেন না আপনারা। ভাইয়া তাহলে বাড়িতে যান দেখা হবে। সুমু চল এখান থেকে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৩

রায়ান —- হ্যা তোমার বান্ধুবীকে বুঝাও। যদি আজ সত্যি কুকুরের উপর ঢিল পড়ত তাহলে তাহলে কুকুরের দৌড়ানিতে পুরো ঢাকা শহড় ওনার নাচ দেখত এতক্ষন। আহাম্মক মেয়ে গিয়েছে কুকুরকে ঢিল ছুড়তে।
সুমু– আপনি কিন্তু………
সুমুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইয়ানা এক প্রকার টেনে নিয়ে চলে যায়।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৫