অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৮
লিজা মনি
বর্তমানে ইয়ানা কানাডায় সেই ডুপ্লেক্স বাড়িতে ড্রয়িংরুমের ভিবানে বসে আছে। এই মুহূর্তে সে রাগে ফুসফুস করছে। আর তার সামনে অগ্নি কাউচের উপর পা তোলে নির্বিকারভাবে মোবাইল টিপছে। ইয়ানা অগ্নির এই খাপছাড়া ভঙ্গিমা দেখে আর ও রেগে যায়। অগ্নির দিকে বালিশ ছুড়ে দেই। ইয়ানা ঢিল ছোড়ার সাথে সাথেই অগ্নি ধরে ফেলে। ইয়ানা এইবার আরেকটা বালিশ ছুড়ে দিয়ে বলে,,,,,,,
” শয়তান লোক, অসভ্য লোক, হৃদয়হীন লোক, কেনো এমন করলেন?
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকায়। কিন্তু ইয়ানার এই রাগী চেহারা দেখে এই মুহূর্ত রাগ নয় হাসি পাচ্ছে। তার বউকে রাগলে অনেক কিউট লাগে। কিন্তু সে হাসি সে প্রকাশ না করে গম্ভীর গলায় বলে,,,,,
” ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছি? ”
ইয়ানা — তাই বলে হঠাৎ করে এইভাবে নিয়ে চলে আসবেন? সব আপনার ইচ্ছে আমার ইচ্ছের দাম নেই?
অগ্নি ইয়ানার কথা না শুনে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে নেই। অগ্নির এমন কান্ডে ইয়ানা অবাক হয়ে তাকায়।
অভির মৃত্যুতে পুরো শহর নিস্তব্দ হয়ে আছে। সবাই মৃত্যুর তদন্ত করছে। কিন্তু এইদিকে আরিফ, রায়ান, ইউভি তারা তো জানে অভিকে কে মেরেছে? তাহলে সেখানে তাদের তো চিন্তার কোনো কারন নেই। কাল আনন্দ করতে পারে নি তাই আজ মিষ্টি নিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছিলো। সাজিদ চৌধুরি ছিলেন নির্বাচন অফিসে। যেহেতু বিরোধী দলে এত বড় একটা ঘটনা ঘটেছে সেখানে থাকাটাই শ্রেয়। পুরো বাড়ি ফাকা।শিখা চৌধুরি গিয়েছেন চৌধুরি ইন্ড্রাস্টিজে গুরুত্বপূর্ন মিটিং এ । কিছুক্ষন পর অগ্নি চৌধুরি ভিলায় প্রবেশ করে। সবাইকে এইভাবে নাচানাচি করতে দেখে ইয়ানাকে খুজতে থাকে। যদি সে ভুলে ও দেখে ইয়ানা নাচছে তাহলে থাপরাইয়ে অজ্ঞান করবে বিয়াদপটাকে। কিন্তু অগ্নির চিন্তা ভুল প্রমান হয় যখন দেখে ইয়ানা দাদুমনি আর আহিয়ার সাথে ডিভাবে বসে আছে। অগ্নি ইয়ানার কাছে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” রুমে চলো ”
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায়। সবার সামনে এইভাবে রুমে যাওয়ার কথা বলছে কত বড় অসভ্য এই লোক। ইয়ানা হালকা ইতস্থতা করে বলে,,,,,,
” কিছুক্ষন থাকি দেখছেন না ভাইয়ারা কিভাবে আনন্দ করছে।
অগ্নি পিছনে ফিরে সবার দিকে তাকায়। এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে সবার দিকে ইশারা দিয়ে বলে,,,,,,,
” এই বাদরদের নাচ দেখার জন্য বসে আছো? মনে হয় না এইসব দেখার প্রয়োজন আছে।
অগ্নির মুখে নিজেদের বাদর সম্মোধনে অরিদ, রায়ান, ইউভি আর আরিফ ভেবেচেকা খেয়ে যায়। রায়ান কিছুটা কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,
” এই তুই বাদর কাদের বললি? এখন ও যদি নাচি তাহলে ন্যাশনাল টিমে সিলেকশন হয়ে যাব। আসছে আমাদের বাদর বলতে। আগে নিজে নেচে দেখা।
অগ্নি প্যান্টে হাত গুজে রায়ানের দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
” আমি কেমন নাচ পারি সেটা তুই ভালো করেই জানিস। আমি নিজে নয় অন্যকে নাচাতে ভালোবাসি। নাচাব তোকে? দেখবি কিভাবে নাচায়?
অগ্নির ঠান্ডা হুমকিতে রায়ান কাঁদো কাঁদো ফেইসে বলে,,,,
” আমাদের মতন এমন নাদান বাচ্চাদের উপর এমন অত্যাচার আপনি কেনো করছেন অগ্নি চৌধুরি?
রায়ানের কথায় অরিদ তাল মিলিয়ে বলে,,,,
” হ্যা ভাইয়া তুমি আমাদের উপর এমন অত্যাচার করতে পারো না।
অগ্নি এদের ড্রামা দেখে একটা বিরক্তির শ্বাস ফেলে বলে,,,
” আরিফ কয়েকটা বিষাক্ত পোকা এনে এদের গায়ে ঢেলে দে। তাহলে নাচতে নাচতে এইসব মেয়েদের অভিনয় বন্ধ হয়ে যাবে।
অগ্নির এই ঠান্ডা হুমকি ছিলো ওদের চুপ হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। অগ্নি চৌধুরিকে আর কেউ না চিনলে ও এরা খুব ভালো করে চিনে। অরিদ হয়ত শুধু জানে অগ্নি একটা গ্যাং এর সাথে জড়িত। কিন্তু রায়ান, ইউভি আর আরিফ জানে টর্চার সেলে ঘটা প্রত্যেকটা দৃশ্য। বলা যায় না যদি সত্যি তাদের উপর বিষাক্ত পোকা ছেড়ে দেই।
এদের কাহিনী দেখে আহিয়া হাসতে হাসতে উপরে চলে যায়। কারন ওর বন্ধুরা ফোন দিয়েছে ওদেরকে ট্রিট দেওয়ার জন্য।
অগ্নি ইয়ানাকে এক জায়গায় বসে থাকতে দেখে কিছুটা রেগে যায়। রাগটা তখন মাথায় চেপে বসে যখন মনে পড়ে ইয়ানা তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। কিন্তু অগ্নি রাগ করতে গিয়ে ও রাগ করে না যখন এই মেয়ের সরল মুখখানা দেখতে পায়। এক অদৃশ্য শক্তি তাকে আটকে দেই বার বার । এই মেয়ের সামান্য আবেদনময়ী স্পর্শে তার রাগ বিলীন হয়ে যায়। অগ্নি চৌধুরির যে এত ধৈর্য সেটা এই মেয়ে না থাকলে তো বুঝতাম ওই না।
অগ্নি ইয়ানাকে কিছুটা ধমক দিয়ে বলে,,,,,,,
” কথা কানে যাচ্ছে না তোমার বিয়াদপ মেয়ে। নাকি রুমে যেতে ইচ্ছে করে না কোনটা?
অগ্নির ধমক যেনো ইয়ানা কানেই তুলেনি।
এর মধ্যেই শিখা চৌধুরি,ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে বলে,,,,,,
“” আহহ অগ্নি রাগ নিয়ন্ত্রন করতে শিখো। মেয়েটাকে এইভাবে ধমকাচ্ছ কেনো?
অগ্নি ইয়ানার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলে,,,,,,
” এই মেয়ে ভালো ব্যবহারের মানুষ আম্মু? সব কথার মধ্যে ত্যারামি করে। মাত্রতো ধমক দিয়েছি শুক্রিয়া করো আর কিছু করি নি।”
শিখা চৌধুরি — এই মেয়ে কেমন শব্দ? স্ত্রী হয় ও তোমার।
ইয়ানা যেনো হাতে চাঁদ পেয়েছে শিখা চৌধুরি তার পক্ষে কথা বলছে। এই সুযোগ অগ্নিকে কিছুটা বকা খাওয়ানোর।
ইয়ানা নাক টানার অভিনয় করে বলে,,,,,
” ওনি আমাকে কখনো সম্মান দেই না আম্মু। উঠতে বসতে এক হাজার ধমক দেই। উনি তো…..
ইয়ানা আর কিছু বলার আগেই অগ্নি অনেক জোড়ে ইয়ানার বাহু চেপে ধরে নিজের সাথে করে নিয়ে যেতে থাকে। অগ্নিকে এইভাবে নিয়ে যেতে দেখে শিখা চৌধুরি প্রশ্ন করে,,,,,,,
” এখন ওকে বাহিরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? ”
অগ্নি নিশ্চুপ। এক প্রকার রেগে ইয়ানাকে গাড়িতে নিয়ে ছুড়ে মারে নিজে ড্রাইবিং সিটে বসে গাড়ি স্ট্রাট দেয়। এরপরএক হাতে কাউকে টেক্সট পাঠাই।
ইয়ানা হালকা ব্যাথা পেলেও অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” ঘুরতে নিয়ে যাবেন সেটা বললেই হত। এতক্ষন শুধু শুধু আপনাকে রাগালাম।ইচ্ছে করেই একটু রাগিয়েছি। আপনার এই রাগান্বিত ফেইসটা দেখলে ভালো লাগে।
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি একটা বাকা হাসি দেই। যেখানে ওর রাগকে শত্রুরা ভয়ে কাঁপতে থাকে সেখানে এই মেয়ের তার রাগ ভালো লাগে।
অগ্নি নিজের গম্ভীর্য নিয়েই বলে,,,,,,,
“” সহ্য শক্তি থাকা ভালো। আমি ও চাই আমার রাগকে তুমি নিয়ন্ত্রন করো। আমার রাগ যাতে তোমার হাসির কারন হয় কান্নার নয়”
ইয়ানা কিছুটা মন খারাপ করে বলে,,,,
” আপনি আমাকে টেনে হিচরে কেনো নিয়ে এসেছেন? কখনো সিনেমা দেখেন নি কিভাবে হিরো নায়কাকে নিয়ে আসে? আনরুমান্টিক লোক কোলে করে নিয়ে আসলে কি হত। ”
ইয়ানা কথাটা বলেই মুখে হাত দিয়ে দেই। ভাবনা করতে করতে ভুলে মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে। অগ্নি ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তাকায়। এরপর হেচকা টানে নিজের উড়ুর উপর বসিয়ে দেই। আকস্মিক এমন হওয়াতে ইয়ানা কিছুটা ভড়কে গিয়ে বলে,,,,,,
” আরে কি করছেন কি? ছাড়ুন আমাকে। ”
অগ্নি ইয়ানার কাধে মুখ ঠেকিয়ে বলে,,,,,
” তুমি তো চাইছিলে আমার কোলে উঠতে। এখন চুপচাপ বসে থাকো একদম নাড়াচাড়া করবে না।
অগ্নির গরম নিশ্বাস ইয়ানার কাধে আছড়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে পুরো শরীর বরফের মত জমে গেছে। ইয়ানার কথা গলায় আটকে আসছে। এরপর ও মিহি সুরে বলে,,,,,
” আমি তো তখনকার কথা বলেছি এখন নয়। ”
অগ্নি — ওইখানে আমার আম্মু ছিলো সুইটহার্ট।
ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে অগ্নির এই সামান্য কথায়। অগ্নির কথা শুনে তার প্রচুর হাসি পাচ্ছে। নিজের অধম্য হাসিটাকে আটকে রেখে বলে,,,,,,
” আপনার লজ্জা আছে মি, চৌধুরি? ”
অগ্নি — ওহুম ছিটেফুটে ও নেই। কিন্তু সেটা শুধু তোমার সামনে পুরো পৃথিবীর সামনে নয়।মায়ের সামনে বউকে কোলে করে নেওয়ার মত বেশরম আমি নয়। আমার দেওয়া স্পর্শ সেটা শুধু তুমি দেখবে সুইটহার্ট অন্য কেউ নয়। তবে যদি তুমি আমার সামনে থাকো আমি এমনিতে ও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। সেখানে তুমি আমাকে নির্লজ্জের ট্যাগ দিতেই পারো।কিন্ত একবার যদি এই ট্যাগ বসাও তাহলে ভেবে নিও। কারন এই পরবর্তী পদক্ষেপ আমি নিবো।
অগ্নির ফিসফিস করে কথা বলা ইয়ানার সর্বাঙ্গ কাঁপিয়ে তুলছে। এই সময় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পানি না খেলে এখন সে মরে যাবে। ইয়ানা অস্ফুর্ত ভাবে বলে,,,,
” পানি খাব পিপাসা পেয়েছে।”
অগ্নি ইয়ানাকে পানির বোতল এগিয়ে দেই। ইয়ানার পানি খাওয়ার কিছু মুহূর্ত পর ওই ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। অগ্নি একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে নিজের সাথে চেপে রাখে।
বর্তমানে ইয়ানা কানাডার ড্রয়িং রুমে বসে আছে।প্রথমে ভেবেছিলো সপ্ন তাই কয়েকবার নিজেকে নিজে চিমটি ও কেটেছে। কিন্তু পরে বুঝতে পারে সে সত্তিই বাংলাদেশ নয় কানাডা আছে। ইয়ানা গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন দেখতে পাই একটা প্রাইভেট রুম। কিন্তু এইটা যে কোনো বাড়ি না যানবাহন সেটা ইয়ানা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। কিছুক্ষন পরে বুঝতে পারে সে এরোপ্লেইনে আছে। ইয়ানা বার বার জিজ্ঞাসা করেছে কোথায় যাচ্ছি কিন্তু অগ্নি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেই নি। ইয়ানা ভেবেছিলো হয়ত দেশের ভিতরেই কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু যখন সময় অতিবাহিত হচ্ছে কিন্তু রাস্তা শেষ হচ্ছে না দেখে ইয়ানা বুঝতে পারে তারা দেশের বাহিরে যাচ্ছে। বিরক্তি হয়ে একের পর এক প্রশ্ন করেই গেছে কিন্তু অগ্নি ছিলো একদম নির্বাক। ইয়ানা ও একসময় শান্ত হয়ে যায়।
ড্রয়ি্ংরুমে বসে ও ইয়ানা সেই কখন থেকে জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে। এক সময় ইয়ানার বকবক থেকে বাঁচার জন্য অগ্নি কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে নেই।ইয়ানা আর ও রেগে যায় যখন অগ্নিকে কানে ইয়ারফোন লাগাতে দেখে। কেনো লাগিয়েছে যাতে তার কথা না শুনতে পারে। কত বড় বদ লোক হলে তার সাথে এমন করতে পারে। ইয়ানা ডিভান থেকে উঠে গিয়ে অগ্নির সামনে দাঁড়ায় এরপর এক টানে কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ফেলে। ইয়ানার এহেন কান্ডে অগ্নি কপাল কুচকে তাকায় এরপর হালকা ধমক দিয়ে বলে,,,,,,
“” সমস্যা কি তোমার? এমন পাগলামো করছো কেনো?
ইয়ানা — আপনি জানেন না কেনো করছি? কারোর সাথে দেখা নেই, কথা নেই হুট করে নিয়ে চলে আসলেন? পুরো রাস্তা এত করে জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু আপনি নিরবতা পালন করেছেন আর এখন ও করছেন। কেনো নিয়ে এসেছেন আমাকে এখানে?
ইয়ানার কথায় অগ্নি চটে যায়। যেখানে ও আছে সেখানেই তো ইয়ানা থাকবে। তাহলে এই মেয়ে এতো তেজ দেখাচ্ছে কেনো? অগ্নি ইয়ানাকে এক টানে ডিভানে ফেলে দিয়ে দুই হাত চেপে ধরে। এরপর দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,,,
” হাউ ফা* কিং ডিয়ার ইউ ইয়ানা। তুমি আমার, তোমার দেহ, তোমার অস্তিত্ব এভরিথিং আমার সেখানে তোমার অনুমতি নেওয়ার জন্য বলছো ? অনুমতি তো আমি নিব না বি*কজ আই এম ইউর হাজবেন্ড এন্ড ইউ আর মাই প্রোপার্টি।
অগ্নিকে এইভাবে রেগে যেতে দেখে ইয়ানা থমথমে খেয়ে যায়। কিন্তু নিজের ভয়কে আড়াল করে বিরক্তি চেহারা নিয়ে বলে,,,,,,,,
” হ্যা আমি আপনার সম্পত্তি সেটা আমি জানি। তাই বলে আম্মু আব্বু বা অন্য কেউ কাউকে না জানিয়ে চলে আসবেন? মায়া হয় না তাদের জন্য আপনার? কষ্ট অনুভব হয় না তাদের থেকে বছরের পর বছর এত দুরে থেকে? লাস্ট বার তো দেখা করার সুযোগ করে দিতেন। এত দিন পর দেশে গিয়েছিলাম কিন্তু নিজের বাড়িতে যেতে পারি নি। ভেবেছিলাম কাল যাব কিন্তু তা আর হতে দিলেন কোথায়? রাগ আমার করার কথা আর সেখানে আপনি করছেন?
অগ্নি ইয়ানার হাত ছেড়ে উপর থেকে উঠে কাউচের উপর বসে পড়ে। এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
‘” তেজ আর রাগ কি কম দেখাচ্ছ নাকি? পুরো রস্তা তোমার টেপ রেকর্ড চলেছে বন্ধ করেছি আমি? না তো।
ইয়ানা অগ্নির কথায় ফুঁস করে উঠে। সাথে জমা হয় একরাশ জেদ। ইয়ানাকে থমথমে মুখে বসে দেখে অগ্নি বলে,,,,,,,
” যাও ফ্রেশ হয়ে নাও ভালো লাগবে। যদি ও বলতে ইচ্ছুক নয় তবুও বলছি বাড়িতে কথা বলে নিও সাথে তোমার বাদরবাহিনীর সাথে ও। তবে ছোট একটা মেসেজ সর্বদা মনে রেখো আমার থেকে অতিরিক্ত প্রায়োরিটি যাতে না পায় এমন হলে সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিতে ও আমার দুই সেকেন্ড সময় লাগবে না।
এই বলে অগ্নি টেবিলের উপর থেকে চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায়।
ইয়ানা অগ্নির ঠান্ডা হুমকিতে বেকুবের মত তাকিয়ে আছে। আসলে ওর কি রিয়াকশন করা উচিৎ সেটাই ভুলে গেছে। মাঝে মধ্যে ওনার কথা শুনলে উত্তর দিতে ভুলে যায়।
নিজের অফিসের কেবিনে বসে রায়ান ফোন ঘাটাঘাটি করছে। কিছুক্ষন আগে মাত্র সে গাড়ি থেকে নেমে সোজা অফিসে চলে এসেছে। অগ্নির উপর তারা বিরক্ত। হুট করে মেসেজ দিয়ে বলে কানাডায় ব্যাক করছি এয়ার্পোটে আয়। কি আর করার চৌধুরি ভিলা থেকে সোজা চলে আসতে হলো। কিন্তু তবুও কেনো এত হাহাকার লাগছে ভিতরে। মনে হচ্ছে মুল্যবান জিনিস রেখে এসেছি। কিন্তু বাংলাদেশ তো আমার মাতৃভূমি নয় তাহলে আমার কেনো এত খারাপ লাগছে। রায়ান এক গ্লাস পানি খেয়ে পুরো রুম কিছুক্ষন পায়চারী করে। মনে হচ্ছে পুরো অস্তিত্বে শূন্যতা ভর করেছে। রায়ানের অস্থির ভাবনার মাঝে চোখ যায় মোবাইলের স্ক্রিনে। যেখানে এক মায়াবিনীর হাস্যজ্জল ছবি চিকচিক করছে। টানাটানা চোখ, চিকন ঠোঁট, হলদে ফর্সামুখখানা যেনো বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। রায়ান মোবাইলের স্ক্রিনে চুমু খেতে গিয়েও আটকে যায়। এরপর বিমোহিত কন্ঠে বলে,,,,,,,
” এই চুমুটা না হয় কোনো একদিনের জন্য তুলে রাখি। আমার ঘুম হারাম করে দিয়ে এখন নিশ্চয় আপনি শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন মিস সুমু। কিন্তু আপনার ও ঘুম কেরে নিব আমি সেটার ও বেশি সময় নেই। খুব তারাতাড়ি আমি আপনাকে নিজের করব। শুধু কিছুটা সময় দিন আমাকে। আপনার সাথে এত দিন পরিচয় লুকিয়ে যে আগন্তুক হিসেবে কথা বলেছি সেটা ও একদিন প্রকাশ হবে। মাত্র একুশ দিন কিভাবে আপনার মায়ায় আমি জড়িয়ে গেলাম। আছে কি তার কোনো ব্যাখ্যা? ধীরে ধীরে আমি সেই ব্যাখ্যা পড়তে চাই। সবাইকে হারিয়েছি আমি আমার জীবনে। কিন্তু তোমাকে নিয়ে আমি আমার জীবন রঙ্গিন করতে চাই।
অগ্নি বসে আছে এক বিলাশবহুল হাউজের বারান্দায়। সামনে বাহারি রকমের ব্রেন্ডের আ্যলকোহল আর ও অনেক কিছু। চারদিকে অনেক গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। আতিক রহমান, রানবীর শেখ, রায়হান আর কিছু লোক চেয়ারে বসে আছে। অগ্নি ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে রানবীরের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,,,
” কেনো ডেকেছো আমায়? ”
রানবীর গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,,,,
“” তুই বলে বিয়ে করেছিস?”
অগ্নি নির্বিকার ঠিক আগের মতই। সে জানত এমন কিছুই হবে। অগ্নিকে চুপ থাকতে দেখে রায়হান অট্টহাসি দিয়ে বলে,,,,,
” সিরিয়াসলি অগ্নি তুই বিয়ে করেছিস? তা কাকে করলি? সে ও কোনো গ্যাংস্টার নাকি?
অগ্নি — না সাধারন ঘরের মেয়ে।
রায়হান — তুই সাধারন ঘরের মেয়েকে বিয়ে করেছিস? সে কি তর গলায় টাকার লোভে ঝুলেছে নাকি সৌন্দর্য দেখে কোনটা? জানে তর আসল পরিচয়? কে তুই?
অগ্নি অগ্নি রক্ত চক্ষু নয়নে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” নিজের লিমিটের মধ্যে থাক নাহলে জবান ছিড়ে ফেলব বাস্টার্ড”
রায়হান বুঝতে পারছে অগ্নি রেগে যাচ্ছে। আতিক আর রানবীর অগ্নিকে পর্যবেক্ষন করছে। কোনো মেয়ের সাথে সংসার করার মত ছেলে অগ্নি চৌধুরি নয়। অগ্নি কতটা হিংস্র সেটা তারা জানে। বর্বরতা ওর শিরায় শিরায়।
রায়হান — ওকে ওকে। বুঝেছি তুই তর বউকে ভালোবাসিস। খুব সুন্দরী নিশ্চয়। তাহলে আমাকে ও একটু দেখার সুযোগ করে দিস। দেখি আমি ও চান্স নিতে পারি কি না। সবসময় তো আমার জিনিসে তুই ভাগ বসিয়েছিস তাই তর প্রতি আমার আলাদা একটা হিংসা কাজ করে বুঝলি। তর বউকে দেখিয়ে একটু ভাগ দিয়ে দিস।
রায়হানের কথা শেষ করার সাথে সাথে টেবিলে রাখা ছুরিটা রায়হানের গলায় চেপে ধরে রেগে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,
” ইউ ফা* বিচ। বলেছিনা এমন কিছু বললে জবান ছিড়ে ফেলব। ওর দিকে চোখ তুলে তাকালে সেই চোখ তুলে আমি নর্দমায় ফেলব জানোয়ার।
রায়হানের গলায় ছুরি চেপে ধরায় সামান্য কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। অগ্নির চোখ দুইটা থেকে মনে হচ্ছে আগুন বের হবে।
আতিক রহমান আর রানবীর এতক্ষন অগ্নি আর রায়হানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। রানবীর ঠান্ডা কন্ঠে বলে,,,,,
” অগ্নি ছেড়ে দে আর মাথা ঠান্ডা কর। ওর বুদ্ধি সবসময় হাটুর নিচে থাকে তুই ও জানিস। ওর সাথে লাগতে যাস না।
অগ্নি রায়হানকে ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে। কিন্তু এখন ও রেগে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে। আতিক অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” বুঝতে পারলাম খুব ভালোবাসিস নিজের বউকে?
অগ্নি — নাহ।
আতিক — কি বলতে চাইছিস?
অগ্নি — আমাকে থাপ্পর মেরেছিলো তাই প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করেছি। এখন আমি ওকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারব। যাতে বুঝতে পারে অগ্নি চৌধুরির গায়ে হাত তুললে সেটার ফল কি হয়।
এতক্ষনে সবার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে। আতিক হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” বিয়ে করার কি দরকার ছিলো? তুই ওকে পালটা চার পাঁচটা থাপ্পর মেরে দিত।তর থাপ্পর খেয়ে হাসপাতাল ভর্তি থাকত কয়দিন। শুধু শুধু কেনো এইসবে জড়াতে গেলি।
অগ্নি — পর নারীকে থাপ্পর দিতে আমি চাই না। থাপ্পর দিলে আমার হাত ওদের গালে লাগাতে হবে। কিন্তু আমি কেনো বাহিরের মেয়ের শরীরে আমার স্পর্শ লাগাব। তাই একদম বিয়ে করে নিয়েছি। সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও ভাই। এইটা আমি দেখে নিব নে।
আতিক —তর খাপছাড়া মনোভাব কিন্তু ভালো ঠেকছে না। জনি মারা ফেলো আজ অনেকদিন হতে চলল এখন ও খুনিকে খুজে বের করতি পারলি না। এই তর ক্ষমতা? পুরো শহর ভয়ে কাঁপলে কি হবে যদি সামান্য খুনিকেই খুজে বের করতে না পারিস।
অগ্নি — তোমাদের ওত ক্ষমতার অভাব নাই তাহলে তোমরা বের করতে পারছো না কেনো? দেখো ভাই যে এই কাজ করেছে সে হয়ত অনেক চতুর। আমাকে সময় দাও বের করছি। এখন রাত গভীর হয়েছে আমি যাচ্ছি।
অগ্নি উঠে যেতে নিবে এমন সময় রায়হান বলে,,,,,
” বউয়ের কাছে যাচ্ছিস? বেড পার……
রায়হান কথা শেষ হবার আগেই অগ্নি বলে উঠে,,,,,,
” বাক্যটা শেষ করলে খোদার কসম রায়হান তর কলিজা ছিড়ে আনব। তর বাপ চাচারা ও কিছু করতে পারব না।
আতিক রায়হানকে ধমক দিয়ে বলে,,,,
” সমস্যা কি তর? এইভাবে ছেলেটার পিছনে লেগেছিস কেনো? তুই যা অগ্নি।
অগ্নি কোনোদিকে না তাকিয়ে চলে যায়। অগ্নি চলে যেতেই রায়হান বলে,,,,,,,
” চাচা তুমি আমাকে বকছো কিসের জন্য? তোমাদের সোনার ডিম পাড়া হাঁস বিয়ে করে বউয়ের প্রতি কত ডেম্পারেট হয়েছে সেটা দেখতে পাচ্ছ না।
আতিক — তর মনে হয় অগ্নি ডেম্পারেট হওয়ার মত ছেলে? হিংস্র চিল ও যাকে ধরে তাকে খুবলে খায়। আর সে নাকি কোনো মেয়েতে আসক্ত হবে। শুনলি না কি বলল প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করেছে।
রায়হান — বিড়াল বানিয়ে রেখেছে ও তোমাদের। যা বলছে সব অন্ধের মত বিশ্বাস করছো। দেখো এই বিশ্বাস যাতে কোনোদিন তোমাদের ধ্বংসের কারন না হয়।
এরপর রায়হান এক প্রকার রাগ নিয়ে এখান থেকে চলে যায়।
রাত বারোটার কাছাকাছি।
অগ্নি রুমে প্রবেশ করে হাতের ব্রেসলেটটা খুলে চারদিকে তাকায়। এরপর গায়ে জড়ানো কোর্টটা খুলে বিছানার উপর রেখে ইয়ানাকে খুজতে থাকে। পুরো রুম অন্ধকার ডিমলাইটের আবঁছা আলো। অগ্নি কিছু একটা ভেবে বেলকনিতে যায়। সেখানে এক নারী অবয়ব দেখে মুখে হাসি ফুটে। ইয়ানা বারান্দার রেলিং এ ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অগ্নি ইয়ানার একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। অগ্নির অস্তিত্ব অনুভব করতে পেরে ইয়ানা হালকা সরে দাঁড়ায়। ইয়ানাকে সরে যেতে অগ্নি কপাল কুচকে আসে। অগ্নি সেটাকে বেশি ঘাটাঘাটি না করে বলে,,,,,
” সারাদিন ঘুমিয়ে এখন এই অন্ধকারে আকাশের দিকে তাকিয়ে কার কথা ভাবছো? রুমে চলো।
ইয়ানা ঠিক একইভাবে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” যাব না আমি। আপনি যান আমাকে টানছেন কেনো? ”
অগ্নি ইয়ানার গাল ফুলানো মুখ দেখে ঠোঁট চেপে হাসে। সেই হাসি আড়াল করে বলে,,,,,,,,
” ঠিক আছে তুমি যেও না। আমি তোমার ভালোর জন্য ওই বলছিলাম। এই বেলকনির সামনেই কিন্ত সুইমিংপুলের অবস্থান। শুনেছি সুইমিংপুলের সাইডে অনেক জিন রয়েছে।
এরপর অগ্নি নিজের তালাবদ্ধ রুমের দিকে আঙ্গুল তাক করে যেখানে বাহারি রকমের আ্যলকোহল আর বিদেশী অস্ত্র রয়েছে।
” এই যে এই রুমটা দেখছো এইটা কখনো খোলা হয় না। ধারনা করা হয় এখানে ও জীন রয়েছে। দেখো ভুত বলতে কিছু হয় না কিন্তু আমাদের ইসলামে তো জীনের উল্লেখ আছেই। তাই একা এখানে চুল ছেরে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো। তাই বলছিলাম রুমে যাও। গার্ডরা বলেছে এখানে নাকি অনেক কিছু দেখেছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা চারদিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢুক গিলে। ইয়ানার অবস্থা দেখে অগ্নি একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বারান্দার লাইট অফ করে দেই। ব্যাস ইয়ানার জান যায় যায় অবস্থা। এক চিৎকার দিয়ে অগ্নিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। অগ্নি যেনো এটার ওই অপেক্ষা করছিলো। ইয়ানা চোখ বন্ধ করে অগ্নির শার্ট ভালো করে খামচে ধরে।
অগ্নি ইয়ানাকে এত ভয় পেতে দেখে বলে,,,,,,,
” যত অভিমান, রাগ, জেদ যা খুশি করো না কেনো তোমার একমাত্র শান্তির শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে আমার এই বক্ষ। যেখানে তুমি ভয় পাবে, আর্তনাদ করবে কিন্তু বার বার এখানেই ফিরে আসবে। কারন এইটাই তোমার শান্তির জায়গা। তোমার শেষ ঠিকানা।
এরপর অগ্নি ডান হাতে ইয়ানাকে আগলে রেখে বাম হাতে সুইচ অন করে দেই। মুহূর্তেই পুরো বারান্দা আলোকিত হয়ে পড়ে।
ইয়ানা অগ্নির বক্ষ থেকে মাথা তুলে অগ্নির বাম হাতের দিকে তাকায়। যেখানে সুইচবোর্ড রাখা। যখন বুঝতে পারে অগ্নি তাকে ভয় দেখানোর জন্য এই কাজ করেছে ইয়ানা রেগে অগ্নির দিকে তাকায়। কোনো কিছু না বলে গিয়ে খাটে শুয়ে পড়ে। অগ্নি ও ইয়ানার পিছে পিছে চলে যায়। এরপর খাটে গিয়ে ইয়ানাকে নিজের দিকে ঘুরাতে চাইলে ইয়ানা অভিমানী সুরে বলে,,,,,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৭
” ছুবেন না আমাকে হৃদয়হীন লোক। আমার রাগ না ভাঙ্গিয়ে জীনের ভয় দেখাচ্ছেন।
অগ্নি ইয়ানাকে জোড় করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,,,,,,
“” তোমাকে স্পর্শ না করলে আমি আমার ডি এন এ কোথায় স্থাপন করব জান ”
অগ্নির লাগামছাড়া ফিসফিস কথা শুনে ইয়ানা স্তব্দ। পুরো কায়া কেঁপে উঠে। মনে হচ্ছে এই বুঝি শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবে।