অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৩
লিজা মনি
রাতের আঁধারে মাটির নিচে জনমানবহীন এক পরিত্যক্ত ঘর । বাইরের দরজা লোহার, জং ধরা, মাঝে মাঝে কুকুরের ঘেউঘেউ শব্দে চুপসে যায় চারপাশ। ভবনের চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো। যেন কেউ ঢুকলেও বের হওয়ার পথ না পায়। ভিতরে ঢুকলেই প্রথমেই ধাক্কা খায় গন্ধে ঘামে, ধূমপানে আর রক্তমিশ্রিত আতংকের এক অদ্ভুত গন্ধ।
ভিতরে ডুকলেই দেখতে পাওয়া যায় কঠোর নিরাপত্তা অস্ত্রধারী দেহরক্ষীরা ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে।চোখে কালো সানগ্লাস, মুখে নির্দয়তা।
প্রবেশ পথের পরে সংকীর্ণ এক করিডোর।দেয়ালে তালিকা কে কবে এসেছে, কবে কোথায় পাঠানো হবে। কিছু নামের পাশে লাল কালি দিয়ে কাটা দাগ হয়তো পালাতে চেয়েছিল।
ক্যামেরা লাগানো প্রতিটি দেয়ালে। প্রতি ঘরে ক্যামেরা। প্রতিটি জিনিস নজরদারির মধ্যে। মোবাইল তো দূরের কথা বাইরের আলোও দেখা যায় না।
এক পাশের ঘরটি সাজানো চমৎকারভাবে সুগন্ধি, আরামদায়ক সোফা, বড় আকারের আয়না, কিন্তু এর ভিতরে রয়েছে হিংস্র চাহনি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রক্ষিতা হিসেবে রয়েছে কয়েকজন মেয়ে। যাদের
মাথায় শাড়ি, ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক, মুখে হাসি আর চোখে বরফ শীতলতা। তার সামনে সবাই মাথা নিচু করে। কেউ কিছু বললে। চুপচাপ তুলে নেয় তার দেহরক্ষীরা ফিরে আসে না আর।
একটা ধাপ পার হলেই দেখা মেলে মৃত্যুর মৃত্যুর সিঁড়ি। কাঠের ভাঙা ঢাকনার নিচে নামার সময় বাতাস যেন ধীরে ধীরে ভারী হয়ে ওঠে। দেয়াল বেয়ে পড়ে পানির ফোঁটা পচা, কাদাযুক্ত মাটি আর স্যাঁতসেঁতে পাথরের গন্ধে মনে হয় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সিঁড়ির ঠিক মাথায় লাল আলো জ্বলে-নেভে। মনে হচ্ছে রক্ত ঢেলে কেউ আঁকা করেছে চিহ্ন।
ধীরে ধীরে নিচে নামলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।কারণ হঠাৎ করে শোনা যায় গোঙ্গানোর আওয়াজ। আবার থেমে যায়। তারপর ফিসফিস করে কেউ কিছু বলছে। একেকটা শব্দ যেন গলা চিরে বের হচ্ছে।
কক্ষের প্রতিটি জায়গায় রয়েছে একটা মোটা লোহার দরজা। তালা লাগানো তিনটি তালায়। দরজার ওপাশ থেকে মাঝে মাঝে কেউ চিৎকার করে,,,,,,
“দয়া করে! পানি… একটু পানি…”
কেউ শোনে না। গেট খোলে দিনে মাত্র দুইবার একবার “তালিকা” নেওয়ার সময়। আরেকবার কাউকে “উধাও” করতে।
গেটের ভেতরে ঢুকলেই শব্দগুলো একত্র হয়ে মাথায় ঘুরপাক খায় লোকের আহাজারি।
ভেতরের মনে হচ্ছে ক্ষুদ্র জাহান্নাম। ঘরগুলো যেন কবর
ঘরগুলো একেকটা ছোট্ট কফিনের মতো। দেয়ালগুলো ভিজে, পলেস্তারা খসে পড়া। কোথাও কেউ দেওয়ালে খোদাই করেছে।
অনেক ঘরের মেঝেতে শুকনো রক্তের দাগ। কারো শরীর থেকে ফেলা, কেউ মার খেয়ে, কেউ নিজেই নিজেকে ক্ষত করেছে পালানোর জন্য।
প্রতিটি ঘরে ছোট্ট একটা আলো যেটা মাঝে মাঝে জ্বলে কখনো হঠাৎ নিভে যায়। আর তখন শুরু হয় আসল আতঙ্ক। অন্ধকারে কিছু শোনা যায় দরজায় আঁচড়, ভেতরে পায়ের টুপটাপ, গলা চেপে রাখা কান্না।
আরেকটা কক্ষ। যেখানে এক কোণে ১৫-২০ জন ব্যাক্তি কেউ নগ্ন, কেউ আধা কাপড়ে। তারা দেয়ালে মুখ করে বসে থাকে। না হাসে, না চায় কিছু।
আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলেই মেইন টর্চার সেল দেখতে পাওয়া যায়।
সেল থেকে আরও নিচে আছে একটি ঘর যেখানে কাউকে নিয়ে গেলে সে আর আগের মতো ফিরে আসে না।
ঘরের ভেতরে দেয়ালে চেইন বাঁধা, মেঝেতে দাগ, এক কোণে পেটানোর বেল্ট, ইলেকট্রিক শক দেওয়ার যন্ত্র। বড় বড় চুল্লি। সাওফিউরিক এসিডের আস্তানা।
যাদের ‘শিখাতে হয় বাধ্যতা’, তাদের এখানে আনা হয়।
এই রুমে এক মাত্র মাফিয়া লিডারের যাওয়ার ক্ষমতা আছে। সে প্রবেশ করার পর প্রতিবার সেই দরজা বন্ধ হওয়ার পর কয়েক মিনিট পরে গলা ফাটানো চিৎকার শোনা যায়।
তারপর অনেক সময় পর ফিরে নিঃশব্দ রাগ মিশ্রিত উন্মাদ পাথর চোখে।
তার চোখে মায়া নেই, মুখে হালকা হাসি।যেন মানুষ নয় একটা হায়েনা।
অবসানের সম্ভাবনা নেই। এই জায়গায় সময় থেমে গেছে। ঘড়ি নেই, জানালা নেই, আলো-অন্ধকারের পার্থক্য নেই।
শুধু আছেব ক্ষুধার চিৎকার, জল চাওয়ার মিনতি নিখোঁজদের জন্য নীরব প্রার্থনা, আর মৃত্যু কামনার দৃষ্টি।
এই টর্চারখানার ভিতরে প্রবেশ করে আতিক আর রনবীর । সাথে আর ও কয়েকজন ব্যাক্তি। রাতারাতি অস্ত্র বাহির করা হয়। সকালের সূর্যদয়ের আগেই সেগুলো ঠিক জায়গায় পাঠাতে হবে। অস্ত্রগুলো সরানো হয়ে গেলে আতিক চারপাশে তাকায় ভালোভাবে। এরপর কয়েকজন লোককে ইশারা দিতেই তারা একটা গোপন রুমে প্রবেশ করে। যেখানে সাত জন মেয়ে বাধা অবস্থায় সেন্সল্যাস হয়ে পড়ে আছে। মনে হচ্ছে ড্রাগস পুশ করা হিয়েছে শরীরে। এখন তারা নিজেদের মধ্যে নেই। লোকগুলো মেয়েগুলোকে নিয়ে বক্সে পেকেট করে। এরপর বের হয়ে আসে সেই টর্চার খানা থেকে। আতিক আর রানবীর একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে মেইন দরজার দিকে তাকায়। যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা,,
“” অগ্নি চৌধুরির দ্বিতীয় টর্চার সেল “”
চৌধুরি বাড়িতে খুশির আমেজ। চৌধুরি বাড়ির বড় ছেলে বাড়িতে ফিরেছে। এইটা যেন সবার এক অবিশ্বাস্য অধ্যায়। তারা কেউ কল্পনা ও করে নি অগ্নি পুনরায় বাড়িতে ফিরবে। অগ্নি , ইয়ানা, রায়ান, ইউভি তারা সবাই এসেছে। শিখা চৌধুরি আজ অফিসে যায় নি। সাজিদ চৌধুরি রাজনিতীর কাজে বাহিরে আছেন সময়মত ফিরে আসবেন। বাড়িতে ছোট্ট একটা ফ্যামিলি পার্টি রাখা হয়েছে। হল্লা পার্টি তারা উৎসুক হয়ে চৌধুরি ভিলায় প্রবেশ করেন। কাল রাতে অগ্নি ফোন করে সবাইকে আসতে বলেছে।
পার্টির থিম সাদা-সোনালী বা নেভি-ব্লু-সিলভার। পুরো ঘর জুড়ে রয়েছে একই রঙের সামঞ্জস্যপূর্ণ ডেকোর। দেয়ালে হালকা ধাঁচের রেশমি পর্দা আর ঝুলন্ত ক্যান্ডেল স্টাইলের ক্রিস্টাল চ্যান্ডেলিয়ার ঝলমল করছে।
ডাইনিং টাচ এ রয়েছে বাফে-স্টাইলের খাবারের টেবিলে সিলভার ও গোল্ডেন পাত্রে সাজানো ডেজার্ট, কাবাব, পাস্তা, স্টেক এবং ঐতিহ্যবাহী মজাদার খাবার। কাস্টম মেনু কার্ডও রাখা সোনালি অক্ষরে ছাপানো। এক পাশে রয়েছে বিলাসবহুল ওয়াইন বা মকটেল কর্নার। যেখানে রয়েছে ঝলমলে গ্লাসে সাজানো পানীয়।
ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক বাজছে। ভায়োলিন বা পিয়ানোর সুরে। এক কোণে হয়তো একজন লাইভ ভায়োলিনিস্ট পরিবেশনায় ব্যস্ত। পুরো পরিবেশটিই অত্যন্ত নরম ও শান্ত।
হল্লা পার্টি তারা এগিয়ে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে। এমন নজর কারা ডেকোরেটে তারা মন্ত্রমুগ্ধ। মনে হচ্ছে কোনো রুপকথার রাজ্যে চলে এসেছে।
বাড়ির সাজসজ্জা দেখে রুহান আরুকে খোঁচা মেরে বলে,,,,,
” দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক বড় অনুষ্ঠানে এসেছি। ভাইয়া যে বলল ছোটোখাটো পার্টি।
আরু আনমনে বলে,,,,,,
“” কি জানি? আমি ও কিছু বুঝতে পারছি না। আর ইয়ানা কোথায়?
সুমু — হয়ত এখন ও রেডি হয় নি।
তাদের কথা বলার মাঝে শিখা চৌধুরি তাদের দিকে এগিয়ে আসে হাসি – মুখে। শিখা চৌধুরিকে দেখতে পেয়ে হল্লা – পার্টি সবাই সলাম দেয়।
আরু — কেমন আছেন আন্টি?
শিখা চৌধুরি বিনয়ের সাথে বলে,,,,,
” এই তো বাচ্চারা ভালো। তোমাদের কি অবস্থা?
আরু — এই তো আলহামদুলিল্লাহ। আমরা সবাই ভালো আছি।
শিখা চৌধুরি — সবাই উপভোগ করো। ইয়ানা তারা চলে আসবে। আর এইটা তোমাদের নিজের বাড়ির মত। নিজেদের মত করে আনন্দ ফুর্তি করবে।
আকাশ — জি আন্টি।
শিখা চৌধুরি চলে যেতেই সুমু বলে,,,,,
” মিসেস শিখা চৌধুরি অনেক বিনয়শীল মানুষ। আভিজাত্যের কোনো অহংকার নেই। চৌধুরি ইন্ড্রাস্টিজ উনি পুরোটা দেখাশুনা করেন । তার উপর আবার একজন মন্ত্রীর ওয়াইফ। একজন সফল বিজন্যাস উমেন হয়ে ও তিল পরিমান কোনো অহংকার নেই। সত্যি এমন মানুষ আজকাল দেখা যায় না।
আরু — হুম। অনেক ব্যাক্তিত্ববান একজন নারী। যার কোনো এক্সট্রা সমালোচনা নেই। দেখলে মনে হয় এখন ও পঁচিশ বছরের মেয়ে। বুঝায় যায় না ছেলে – মেয়ে আছে উনার।
সুমু হালকা হেসে বলে,,,,,,
” আর এইদিকে আমরা বিশ বছর না হয়ে ও রানু মন্ডলের মত হয়ে আছি।
তাদের কথার মাঝে হঠাৎ কেউ পিছন থেকে বলে উঠে,,,,
“” আমি এসে গেছি।
আওয়াজ শুনে তারা পিছনে তাকিয়ে দেখে হালকা মেন্টা গ্রিন রঙের একটি ম্যাক্সি গাউন পড়া একটা মেয়ে। যা একেবারে নরম সিল্কের মতো মসৃণ এবং শরীরের ওপর ফিট করে সুন্দর ভাঁজ সৃষ্টি করেছে ।
গলার কাছে ছিল একটি ছোট বেট শোল্ডার ডিজাইন যা তার কাঁধকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। গাউনের ওপরে সূক্ষ্ম লেইসের কাজ ছিল ছোট ছোট ফুলের প্যাটার্নের মতো। যা খুবই পরিমিত এবং চোখে একদম বেয়াড়া লাগছিল না।
তার চুল ছিল হালকা ওয়েভ করে সোজা নিচে পড়েছে। যা তার মুখের সৌন্দর্যকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। মেকআপ ছিল ন্যাচারাল।হালকা রোজি টোনের লিপস্টিক আর সামান্য চোখের ছাপ যা তাকে একদম প্রাকৃতিক আর কৌতূহলময় দেখাচ্ছিল।
হাতের কব্জিতে ছিল পাতলা সোনার ব্রেসলেট আর ছোট্ট একটা দুল, যা গাউনের সঙ্গে বেশ মানানসই ছিল। সে ছিল একরকম নির্জন পরিমিত।
মেয়েটে দৌড়ে এসে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে।
আরু মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,
“” ওরে আমার রুই মাছ কি সুন্দর লাগছেরে তকে। কারোর নজর না লাগুক।
রুয়ানা হাসি দিয়ে বলে তোমাদের ও খুব সুন্দর লাগছে। একদম ফিট ফাট। ভাগ্যিস কোনো বাহিরের ছেলে – মেয়ে নেই নাহলে তোমাদের তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলত।
সুমু — হ্যা হ্যা যেই না চেহেরা আবার আসবে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে। রানু মন্ডল হয়ে বসে আছি।
রুই মন খারাপ করে বলে,,,,,
” আরে আপু বলো না শীতের মধ্যে একটু সুন্দর হয়েছিলেম কিন্তু বেশি দিন গেলো না গরম চলে আসলো। শেষ আমার সব সৌন্দর্য শেষ।
রুয়ানার কথায় সবাই হেসে উঠে।
বিগত দুই ঘন্টা ধরে অগ্নি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কারোর সাথে কথে বলছে। মুখে রাগ স্পষ্ট।
ইয়ানা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি ঠিক করছে। রাতে অগ্নি ইয়ানাকে শাড়িটা হাতে দিয়ে বলেছিলো,,,
” কাল শাড়ি পড়বে ইয়ানা। মুখে কোনো সাজ দিবে না। ন্যাচারালভাবে দেখতে চাই তোমাকে।
ইয়ানা প্রথমে অবাক হলে ও মানা করে নি। শাড়িটা লাল রঙ্গের শিফন ও আর্গ্যাঞ্জা। দেখতে হালকা হলে ও চোখে পড়ার মত চিকচিক করছে স্বর্ন দিয়ে তৈরি সূক্ষ্ণ সোনালি কাজ। শাড়ির পাড়ে থাকছে মিনিমাল এমব্রয়ডারি যা হালকা ঝিকমিকি করছে।
ব্লাউজটা স্লিভলেস বা ক্যাপ স্লিভ, সিল্ক ফ্যাব্রিকের, হালকা গ্লিটার ফিনিশ। পিছনে রয়েছে ডিপ ব্যাক কাট বা টাই-আপ ডিজাইন। লম্বা চুলগুলো দিয়ে পিঠ ঢেকে গিয়েছে।
গলায় পাতলা ডায়মন্ড বা পোল্কি চোকার। খুব ভারী নয়
কানেও ছোট ঝুমকা বা ডায়মন্ড স্টাড। হাতে এক জোড়া সোনালি বালা। ঠোঁটে রোজি রেড লিপস্টিক গাঢ় নয় বরং ক্লাসি। যেটা একদম মিশে আছে বুঝা যায় না।
ইয়ানা নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলো। নিজেকে দেখে নিজেই তব্দা খায়। শাড়িটা এত সুন্দর যে বলার বাহিরে। এমন রুপ ইয়ানার জীবনের প্রথম। নিজেকে আজ সত্যি চৌধুরি বাড়ির বউ মনে হচ্ছে। হাতে থাকা চুরিগুলো যেনো মনে করিয়ে দিচ্ছে তুমি অগ্নি চৌধুরির বউ। তার শয্যা- সঙ্গী, তার দুঃখ – সুখের সাথী। ইয়ানা তাচ্ছিল্য হাসি দেয় নিজের ভাবনার কথা ভেবে। জীবনটা এমন না হলেও পারত। উনি কি ভালো হতে পারতেন না?
অগ্নি কথা শেষ করে বিরক্তি নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। এখন ও সে ইয়ানার দিকে তাকায় নি। রুমে ডুকতে ডুকতে ইয়ানার নাম ধরে ডাক দেয়। অগ্নির কন্ঠ পেয়ে ইয়ানার বুক ধ্রিম করে উঠে। সে আয়না থেকে চোখ সরিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়।
অগ্নি হাতের ব্রেসলেটটা ঠিক করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার চোখ আটকে যায়। থমকে যায় সে। মনে হচ্ছে সামনে কোনো লাল পরি দাঁড়িয়ে আছে। শ্বাস উঠা- নামা শুরু করে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে ইয়ানার দিকে। কথা বলার ক্ষমতাটা মনে হচ্ছে কেউ ছিনিয়ে নিতে চাইছে। অগ্নির এমন গভীর চাহনি দেখে ইয়ানা নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেই। লোকটার চোখে তাকালে সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। ঘৃনাটা যেনো দুরে সরে যেতে চায়।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। ধীর পায়ে সে এগিয়ে যায় ইয়ানার কাছে। নিজের কাছে অগ্নির পারফিউমের গন্ধ , উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিকে তাকায়। অগ্নির ঘোর লাগা দৃষ্টি দেখতে পেয়ে ভড়কে যায়। কিছুটা সরে গিয়ে বলে,,,,,,
“” খবরদার কাছে আসবেন না। আপনার মতলব ভালো ঠেকছে না।
অগ্নি সামান্য ঝুঁকে ইয়ানার কানে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,
” লাল রং আমার বরাবর ওই পছন্দ। কিন্তু তোমার শরীরের প্রতিটা ভাঁজে এত সুন্দর মানাবে আগে জানা ছিলো না। জানো তোমাকে কেমন লাগছে?
ইয়ানা কেঁপে উঠে। নিজের ঠোঁটকে ভিজিয়ে বলে,,,,,
” বলতে হবে না। নির্লজ্জ কথা ছাড়া আর কি বলবেন?
অগ্নি হালকা হেসে বলে,,,,,,
” বলব না চলো বুঝিয়ে দেয়। যাস্ট গিভ মি এ কিস সুইটহার্ট।
ইয়ানা চট করে অগ্নির দিকে তাকায়। নিজের জায়গা থেকে সরে গিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বলে,,,,,,
” খবরদার মি, চৌধুরি কাছে আসবেন না। কাছে আসলে আপনার নামে আমি নারী নির্যাতনের মামলা করব। ফাঁসিতে ঝুলাব আমি।
অগ্নি ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে বলে,,,,,
” অফিস্যারের নাম্বারটা আমার থেকে নিও। কষ্ট করে তোমাকে আর পুলিশ কেন্দ্রে যেতে হবে না।
ইয়ানা — এগিয়ে আসছেন কেনো এইভাবে? আমি কিন্তু আপনার নামে সত্যি মামলা করব। কাছে আসবেন না একদম।
অগ্নি হালকা হেসে বলে,,,,,
হটি – নটি তর এই ফিগারে কারেন্ট যেনো আছে।
ছুঁয়ে দিলে ঝঁটকা লাগেরে, আয়না আর ও কাছে।
তর দুই ঠোঁটে ঠোঁট রাখলে এই প্রানটা যেনো বাঁচে।
তর ইস্কির ইস্কি চাউনিতে ওয়াইনের ফ্লেবার আসে।
উম্মাহ! যাস্ট গিভ মি চুম্মাহ,,,,,,,,,,,,,,,
এই বলে অগ্নি ইয়ানাকে হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এসে সাথে সাথে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। ইয়ানা এখন ও তব্দা লেগে আছে। অগ্নি ইয়ানার শাড়ির অংশ ভেদ করে উন্মুক্ত কমড় আকড়ে ধরে। ইয়ানা বরফের ন্যায় জমে যায়। অগ্নির হাতের অবাধ্য বিচরন পেতেই নিজের ঙ্গানে ফিরে আসে। অগ্নির শক্তপোক্ত বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে থাকে। কিন্তু শেষে নিজের হাত দুটি বাঁধা পড়ে অগ্নির বলিষ্ঠ হাতের কাছে। ইয়ানার হাত দুটি নিজের এক হাত দিয়ে পিছনে চেপে ধরে। আর অন্যহাত ইয়ানার কমড়ের ভাঁজে। ঠোঁটে এখন ও আগের দেওয়া ক্ষত ওই ঝলঝল করছিলো তাই হালকা লিপস্টিক লাগাতে হয়েছে। গলার ক্ষতগুলো থাকলেও প্রসাধনীর কারনে নিচে পড়ে যায়। তাই বেশি একটা দৃশ্যমান হয় নি।
কিন্তু এখন যদি আবার উনি পাগলামি শুরু করে তাহলে আজ আর নিচে যেতে পারবে না। অগ্নি এখন ও ঠিক একইভাবে ইয়ানার ঠোঁটে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেটা নরম নয় বরাবরের মতই দৃঢ় আর কঠিন। যেটা ইয়ানার সহ্য করার ক্ষমতা হয়ে গিয়েছে। ইয়ানা নিজেকে বার বার ছাড়াতে চায়। করুন চাহনি নিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। কিন্তু অগ্নির দৃষ্টি ছিলো ইয়ানার ঠোঁটের কাছে। ইয়ানা হতাস হয়ে সহ্য করতে থাকে। কখন এই বাঁধন থেকে মুক্তি পাবে। কয়েক মিনিট পার হওয়ার পর ও অগ্নির থামার নাম নেই। বরং অবাধ্য উন্মাদনা আরও বেড়ে চলেছে। মনে হচ্ছে ইয়ানার এই ঠোঁট সে শুষে নিতে চাইছে । চুমুর বেগ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। প্রায় পনেরো মিনিট যায় এইভাবে। একসময় অগ্নি ইয়ানাকে ছেড়ে দেই। বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছে ইয়ানার কপালে একটা ভালোবসসার পরশ দিয়ে বিনা বাক্যে কার্বাডের কাছে যায়।
ইয়ানার মনে হচ্ছিলো দম আটকে আসছে। এই বুঝি আজরাইল চলে এসেছে জানটা নিয়ে যেতে। ইয়ানা বুকে হাত দিয়ে বড় বড় শ্বাস নেয়। ঠোঁট থেকে রক্ত বের হচ্ছে কি না দেখার জন্য হাত দেয় সেখানে । পুরো ঠোঁট ব্যাথা হয়ে গিয়েছে ।
ইয়ানার ভাবনার মাঝে অগ্নি ইয়ানার দুই বাহু ধরে বিছানার পাশে বসায়। ইয়ানা কিছুটা অবাক হয়। সামান্য রাগ দেখিয়ে বলে,,,,
” আবার কি করবেন আপনি? দেখুন আমি….
অগ্নি ইয়ানার পা দুটি তুলে বিছানার উপর রাখে। এরপর নিজে সামনে গিয়ে বসে। নিজের পায়ে অগ্নির হাতের স্পর্শ পেয়ে ইয়ানা স্তব্দ হয়ে যায়। অগ্নি তার পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
অগ্নির এমন কান্ডে ইয়ানা আশ্চর্য বনে যায়। ইয়ানা নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” মি, চৌধুরি এইভাবে পায়ে হাত দিয়েছেন কেনো? ছাড়ুন আমার পা। সুড়সুড়ি লাগছে প্রচন্ড।
অগ্নি হালকা হেসে বক্স থেকে একটা জোড়া ডায়মন্ড নুপুর বের করে। নুপুর দেখে ইয়ানা কিছুটা অবাক হয়।
অগ্নি ইয়ানার শাড়ি কিছুটা উপরে তুলে ধরে। একটা নুপুর কোমল স্পর্শে পরিয়ে দেয়। ইয়ানার ফর্সা পায়ে নুপুরটা ঝলমল করছিলো। নুপুরের প্রতিটি অংশে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন আকারের দশ শতাধিক দাগানো হীরা। প্রধান আকর্ষণ হল একদম মাঝখানে বড় একটি পিঙ্ক ডায়মন্ড বা রোজ গোল্ডের ফ্রেমে আবদ্ধ এক ঝকঝকে কুশন কাট হীরা।
ছোট ছোট হীরা ঝুলে আছে চেনের মত লাইন ধরে যা হাটার সময় ঝিকমিক করে আলোর আলো ধরে আঙুলে সোনা ফুটে ওঠার মতো সুন্দর প্রভাব তৈরি করবে।
নুপুরের এক এক প্রান্তে সোনার খিলানি-নকশায় খোদাই করা ফুল আর পাথর ঝুলছে, যা নূপুরটিকে আরও আলোকোজ্জ্বল এবং চোখ ধাঁধানো করে তোলে।
হীরার মাঝে মাঝে লাগানো আছে কিছু সাদা মোতী (Pearls)। যা নরম আলো দেয় এবং ভারসাম্য বজায় রাখে। কিছু জায়গায় ক্ষুদ্র রুবির ঝিলিক। যা রঙের খেলায় অতিরিক্ত দীপ্তি যোগ করে।সম্পূর্ণ নুপুরটি হাতে তৈরি যেখানে প্রতিটি হীরা ও মোতী একেবারে নিখুঁতভাবে সেট করা। কোন ঝামেলা বা অবাঞ্ছিত স্পেস নেই। প্রতিটি অংশে মনে হচ্ছে নিজেই আলো ছড়ায়।
একইভাবে অগ্নির অপর নুপুরটি ও পড়িয়ে দেয়। নুপুর পড়ানো শেষ হলে অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” এই কোটি কোটি টাকার জিনিস গুলো তোমার সৌন্দর্যের কাছে ফিকে লাগছে অনুভবের সেহজাদী।
ইয়ানা অগ্নির দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে,,,,
” কি প্রয়োজন এত কোটি কোটি টাকার প্রসাধনী আর জামাকাপড় পড়ে যদি সেটা হারাম টাকা হয়। টাকা তো রিক্সা ওয়ালা ও রোজগার করে কিন্তু মানুষ হয় কয়জন। পুরোটাই তো আপনার পাপের টাকায়।
অগ্নি ইয়ানার দিকে গভীর দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে বলে,,,,,
” আমাকে রাগিও না ইয়ানা। নিজের কন্ট্রোল করাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। পাপা হোক আর যায় হোক টাকা তো টাকাই হয় ।
ইয়ানা অন্যদিকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,,,,,
” কেনো জানি না আপনার এই জিনিসগুলো শরীরে জ্বলা করছে। আপনাকে কটূ কথা বলতে আমার ও খুব কষ্ট হয়। কিন্তু এরপর ও ঘৃনা চলে আসে। দোষ পাপে নয় সেই মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে যেখানে পাপকে নিজের মধ্যে ধারন করে। আর আপনার পুরো অস্তিত্ব ওই পাপের চাদরে ঢেকে আছে।
অগ্নি — তার জন্য আমার গর্ববোধ হয়। আর তুমি সেটা মানতে বাধ্য। আপোষে না পেলে ছিনিয়ে নেওয়া আমার স্বভাব ।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায়। কিভাবে একটা মানুষ এইভাবে স্বীকার উক্তি দেয়।
ইয়ানা — সত্যি করে বলোন তো এক বার ও কি অপরাধবোধ জেগে উঠে না। মন কি প্রশ্ন করে না কেনো আমি এরকম। আপনার প্রতিটা অনুভব যে রক্তঝরা সেটা কি আপনি জানেন?
অগ্নি শব্দ করে হাসে। আজকাল সে একটু বেশিই হাসছে।
অগ্নি– আমি নায়েক নয় জান যে তুমি ভালো কিছু আশা করবে। আমি সেই ভিলেন যে হাজার প্রতিকূলতার পরেও তোমাকে বক্ষের মধ্যে আগলে রেখে মহানায়েকের ভুমিকা পালন করে।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি ইয়ানার তাকানোকে উপক্ষা করে বাহির হতে হতে বলে,,,,,
‘ নিজেকে শালীনভাবে তৈরি করে নিচে আসো। শরীরের আকর্ষনীয় কোনো অংশ যাতে বা দেখা যায়। নিচে লোকজন আছে।
ইয়ানা একই ভঙ্গিতে অগ্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এইটাই অগ্নি চৌধুরির সবচেয়ে বড় বিশেষ্যত্ব। হাজারটা কাজের ভিতরে ও ইয়ানার উপর অতিরিক্ত পজেসিভ আর ইজ্জতের প্রটেক্ট।
ইয়ানা নুপুরগুলোর দিকে এক পালক তাকিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে। কোনো ক্ষত হয় নি শুধু হালকা হালকা রক্ত জঁমাট বেঁধেছে। ইয়ানা পুনরায় আগেরবারের মত হালকা লিপস্টিক দেয়।
এরপর শাড়িটা ভালোভাবে ঠিক করে নিচে নেমে আসে।
নিচে নেমে এত আলো লাইটিং দেখে চোখ কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম। নিচে হল্লা পার্টিকে দেখতে পেয়ে খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায়। ভুলে যায় নিজের অবস্থান। কোনো কিছু না ভেবে এক দৌড়ে তাদের কাছে যায়। তাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কতদিন পর এই প্রানপ্রিয় বন্ধুদের সাথে দেখা। ফোনে কথা বললে ও সামনে থেকে দেখার তৃপ্তি যেনো মিটছিলো ওই না। ইয়ানার চোখের কার্নিশে একদম পানি চলে আসে। নিজের প্রানপ্রিয় ছোট বোনটাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে হালকা কান্না করে দেয়। অবস্থা অন্যদিকে যাচ্ছে দেখে সুমু ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” খুব সুন্দর লাগছে তকে ইয়ানা। একদম লাল পরীর মত লাগছে। বাই দ্যা ওয়ে তর ঘাড়ের লাল দাগ একদম অগ্নি চৌধুরির বউয়ের শিলমহর লাগিয়ে দিয়েছে। উফফ যা লাগছে না।
এদের কথা শুনে ইয়ানা ভড়কে যায়। এদের হাসি দেখে লজ্জায় মরে যাওয়ার মত অবস্থা। এত ঢেকে রাখার পরও ঠিক খুঁজে বের করে ফেলেছে। বাজপাখির মত চোখ এক একটার। ঠিক জানা ছিল, দুনিয়ার কারোর নজরে না পরলেও এদের নজরে ঠিক পড়বে। ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে,,,,,,
“” আরে তরা যা ভাবছিস তেমন কিছু না। মশা কামড় দিয়েছিলো তাই এমন লাল লাল হয়ে আছে।
আরু ঠোঁট চেপে হেসে আকাশের কাঁধের উপর হাত রেখে বলে,,,,,
“” ওও আচ্ছা। মশা আমাদের ও কাম দেয় কিন্তু তর মত এমন অবস্থা হয় না। অবশ্য আমাদের যে মশা কামড় দেয় সেটা ছোট, তর মশার মত এত বড় নয়। ছোট মশা তাই দাঁত ও ছোট।
আরুর কথায় সবাই শব্দ করে হেসে উঠে।
রুহান — বাদ দে এইসব কথা। ভাইয়া কোথায় ইয়ানা?
ইয়ানা — উনি তো অনেক আগেই এসেছে। হয়ত ইউভি ভাইয়াদের সাথে কোনো আলোচনা করছে। এইসব পার্টি উনার পচ্ছন্দ না।
আকাশ — তাহলে দিয়েছে কেনো?
ইয়ানা — উনি দেই নি। অরিদ ভাইয়া, ইউভি ভাইয়া আর রায়ান ভাইয়া দিয়েছে। উনি কাজে বাহিরেই ছিলো তারা উনাকে জোর করে আটকে রেখেছে। বাট তুই আবনিকে নিয়ে আসলি না?
আকাশ — বলেছিলাম কিন্তু আসে নি। কাল ছোট একটা এক্সাম আছে কলেজে।
ইয়ানা — হুম।
তাদের কথোপোকথনের মাঝে আহিয়া নিচে নেমে আসে। পড়নে সাদার মধ্যে পিন্ক কালারের একটা জামা। এতটা গর্জিয়াস না তবে নজর কাড়ার মত। ইয়ানা আহিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” এই তো আমার আরেক বোন চলে এসেছে। ”
আহিয়া সবার সাথে হাসি খুশিভাবে আলাপ করে। এরপর রুয়ানাকে নিয়ে অন্যপাশে চলে যায়। বড়দের মধ্যে থেকে তাদের কোনো লাভ নেই।
রুয়ানাকে নিয়ে আহিয়া বাড়ির এক পাশে যেতেই কেউ পিছন থেকে বলে,,,,,
” হাই লিটল গার্ল।
আহিয়া আর রুয়ানা দুজন ওই পিছনে ফিরে তাকায়। পিছনে তাকিয়ে দেখে ইউভি প্যেন্টে হাট গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। রুয়ানা ইউভিকে সালাম জানিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,
” কেমন আছেন ভাইয়া?
ইউভি — এই তো লিটল গার্ল আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
রুয়ানা — আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।
আহিয়া একবার রুয়ানার দিকে তাকায় আরেকবার ইউভির দিকে। এরপর সামান্য হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” তুমি ভাইয়াকে চিনো রুই?
রুয়ানা সামান্য থমথমে খেয়ে যায়। আসলে ঠিকভাবে তো চিনে না। সে তো ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞাসা করেছে। দুই তিন বার দেখা হয়েছে মাত্র তা ও আবার রাস্তায়। সে তো তেমন চিনে না। শুধু জানে উনি আহান ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।
ইউভি রুয়ানার থমথমে মুখের দিকে তাকায়। রুই কিছুটা আমতা আমতা করে মিহি সুরে বলে,,,,,,
” তেমনভাবে চিনি না তবে আপুর কাছ থেকে অনেক শুনেছি।
আহিয়া– ওকে তোমরা পরে বসে আলাপ করিও। এখন আমার সাথে চলো রুই।
আহিয়া রুয়ানাকে হাতে ধরে নিয়ে অন্যদিকে চলে যায়। ইউভি গম্ভীর হয়ে এক দৃষ্টিতে রুয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। কিশোরি একটা মেয়ের উপস্থিতিতে শক্তপোক্ত হৃদয়টা ও কেঁপে উঠেছে। তুমি আমাকে না দেখলে ও তোমাকে আমি সবসময় দেখেছি লিটল গার্ল। তোমার প্রতি সেকেন্ডের পদ চারন, তোমার প্রতিটা মুহূর্ত আমার জানা। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক হয়ে ও আমার কেনো অবাধ্য অনুভুতি সৃষ্টি হয় লিটল গার্ল। আমাদের অনুভুতি কি এক করা যায় না। তোমার আর আমার বয়সের ফারাক কি এতটাই বেশি।
অগ্নি হল্লা পার্টি সবার সাথে কথা বলে ডিভানে গিয়ে বসে। অসহ্য লাগছে এইসব। এক তো এমন অসহ্য কর পরিস্থিতি চারপাশ তার উপর এই মেয়ের এমন সাজ। নিজেকে কন্ট্রোল করা যেনো কঠিন হয়ে পড়ছে। আজকাল নিজের অনুভুতি নিজের সাথেই বেইমানি করে। চুপ করে থাকতে বললে ও সেই একইভাবে লাফালাফি করে। অগ্নি বিরক্তি নিয়ে মোবাইল ঘাটতে থাকে। ইউভি অগ্নির এমন অস্থিরতা দেখে আনমনে হেসে বলে,,,,,,
“” আপনার বিরক্তির কারন কি ভাইয়া?
ইউভির সম্মোধন করা শুনে অগ্নি মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ইউভির দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” ভাইয়া কে তর?
ইউভি নিজেকে ঠিক করে বলে,,,,,,
“” তর শালি আমার হৃদয়হরনী। সম্পর্কে তো বড় ভাই হস তাই না?
ইউভির কথা শুনে অগ্নি গম্ভীর হেসে প্রশ্ন করে,,,,,,,,,,
” কথা বলেছিস?
ইউভি — সামান্য। রায়ান সুমাইয়ার মায়ের কাছে কবে যাবে?
অগ্নি — এখন ও জানায় নি।
ইউভি — কি কপাল তদের। আর আমি মন দিয়ে বসে আছি এক পিচ্চি মেয়ের উপর। জানি না কবে বড় হবে আর আমি বিয়ে করব। বেশি অপেক্ষা করতে পারব না প্রয়োজন হলে তর শশুরকে কালো জাদু করে রুইকে বিয়ে করব। এত ধৈর্য ক্ষমতা আমার মধ্যে নেই।
অনুষ্ঠান শুরু হয়। সবাই এক সাথে ডিভানে আর চেয়ারে বসে। সাজিদ চৌধুরি ভিলায় ফিরে আসে কিছুক্ষন আগে। হল্লা পার্টি তারা সবাই এক সাথে বসে আছে। অগ্নি এক পাশে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে মোবাইল ঘাটাঘাটি করছে। মনে হচ্ছে তার চারপাশে কিছুই হচ্ছে না। সে এখানে একা আর কেউ নেই। চারপাশে লাইটিং ঝকঝক করছে পরিবেশ। মৃদু গানের শব্দে মুখরিত পরিবেশ। সামনে দুইজন মেয়ে নাচ করছে। ইয়ানা সবার সাথে বসতে চায় কিন্ত অগ্নি নিজের সাথে বসিয়ে রেখেছে। ইয়ানা চলে যেতে চাইলে ইয়ানার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়। ইয়ানা চুপচাপ বসে থাকে। নিজে একটা নিরামিষ তাই বলে আমাকে ও নিরামিষ করে রাখবে। এমন একটা মোমেন্টে এমনভাবে বসে আছে মনে হচ্ছে কোনো নোংরা জায়গায় বসে আছে। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” মি, চৌধুরি।
অগ্নি নিশ্চুপ। অগ্নিকে এইভাবে নিশ্চুপ থাকতে দেখে কান থেকে ইয়ার ফোনটা হেচকা টানে খুলে নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আসে। অগ্নি ইয়ানার দিকে কিছুটা রাগ দেখিয়ে তাকায়। এরপর সামান্য ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” সমস্যা কি তোমার। এইটা নিয়ে এইভাবে টানা টানি করছো কেনো?
ইয়ানা — আপনি এইভাবে বসিয়ে রেখেছেন কেনো? সবাই কি আনন্দ করছে।
অগ্নি — তুমি কি আমার থেকে এইসব কে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছো? শুধু একবার হ্যা বলো।
ইয়ানা চুপসে যায়। অগ্নির সব স্বভাব সম্পর্কে সে অবগত। যদি হ্যা বলে তাহলে মুহূর্তে পুরো পার্টি বন্ধ হয়ে যাবে। ইয়ানা শান্ত কন্ঠে বলে,,,,,,,
” এমনটা নয়। সবাই তো আনন্দ করছে তাহলে আমি করলে সমস্যা কোথায়? একটু যায় প্লিজ। ট্রাস্ট আমি সবার আগে আপনি এরপর সবকিছু।
অগ্নি — কি করবে তাদের কাছে গিয়ে?
ইয়ানা – নাচব।
অগ্নি — নাচো তাহলে?
ইয়ানা — এখানে বসে থাকলে নাচব কিভাবে?
অগ্নি — মনে মনে নাচবে।
অগ্নির এমন কথায় ইয়ানা তব্দা লেগে যায়। মনে মনে নাচা যায়। ইয়ানা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,,,,,
” মনে মনে নাচা যায় নাকি?
অগ্নি ইয়ানার দিকে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,,,
” তোমাকে সবার সামনে নাচতে দিব। এতটা ভালো মনে করো তুমি আমাকে। নাচার যদি এত ইচ্ছে হয় তাহলে রুমে চলো আমার সামনে সারাদিন নাচবে। তুমি নাচবে আর আমি বসে বসে দেখব। চলো তাহলে?
ইয়ানা আর কি বলবে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তাই কোনো বাক্য খরচ না করে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। আর অগ্নির চৌদ্দঘোষ্টি উদ্দার করতে থাকে। কি করে শিখা চৌধুরি এমন একটা ছেলে জন্ম দিলো। উনি তাদের নিজেদের ছেলে তো? মাঝে মাঝে এই নিয়ে ও সন্দে হ হয়।
আহিয়া অরিদের কানে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,,
” ভাইয়া রুহান ভাইয়া কি হ্যান্ডসাম আর সুন্দর তাই না?
অরিদ সামনে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বোনের দিকে তাকায়। এরপর আহিয়ার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভালোভাবে পরখ করে বলে,,,,,
“” সাইজ কত তর আহি। কালকের মেয়ে আজ একটা ছেলেকে হ্যান্ডসাম বলছিস।
অরিদের কথায় আহিয়া কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,,,
” ভাইয়া ছোট বলবি না আমাকে। যথেষ্ট বড় হয়েছি আমি।
অরিদ — তুই বড় হয়েছিস? কয়দিন আগেই তো তুই আমার কোলে হিসু করে দিতি।
আহিয়া — কাল নয় সেটা অনেক বছর আগে। তখন তো আর বলতে পারতাম না ভাইয়া আমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যা আমি হিসু করব।
অরিদ — বুঝেছি বড় হয়েছিস আম্মুকে জানাতে হবে।
আহিয়া — কি জানাবে তুমি বড় আম্মুকে?
অরিদ — তকে বিয়ে দিতে।
আহিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,,,,,
” এই ভাইয়া এমন কাজ করো না। বিয়ে করার মত এমন বয়স আমার হয় নি এখন ও। বিয়ে হয়ে গেলে তোমার সাথে ঝগড়া করবে কে বলো?
অরিদ — জামাইর চুল ছিড়বি একটা একটা করে। এইবার তো আম্মুকে বলতেই হবে তকে যাতে দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেয়।
আহিয়ার এইবার কান্না করার মত অবস্থা।
আহিয়া — প্লিজ ভাইয়া বলো না।
অরিদ আহিয়ার অবস্থা দেখে মাথায় ধরে বলে,,,,,
” তকে কান্না করার মত এমন কি বললাম? এখন কান্না করবি আর আম্মু এসে আমাকে বকবে।
আহিয়া — তুমি বললে কেনো বিয়ে দিতে? যাব না আমি কোথাও।
অরিদ অসহায় হবে বলে,,,,,,,
” কান্না অফ কর আমার বোন। প্লিজ অফ কর। নাহলে তর কান্না দেখে শিখা চৌধুরি আমার পিঠে লাঠি ভাঙবে।
ক্ষমা চাই তকে বিয়ে দেওয়ার কথা বলার জন্য। আর বলব না কোনোদিন।
আহিয়া অরিদের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩২
” সত্যি বলছো তো?
অরিদ মাথা নাড়ায়।
আহিয়া — ওকে যাও কান্না বন্ধ করে দিলাম। একটু পর আমার নাচের প্রোগ্রাম আছে।
আহিয়া অরিদের কাছ থেকে উঠে ইয়ানার কাছে যায়। এরপর………