অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪০
লিজা মনি
বিয়ে বাড়ির খুশির আমেজ। চৌধুরি বাড়িতে সাজসজ্জা থাকলেও কোনো হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। রায়ান, ইউভি, অগ্নি এই ত্রয়ী এসব আনুষ্ঠানিকতা পছন্দ করে না। তাদের মতে,
“বিয়ের সময় কবুল বললেই যথেষ্ট।”
কিন্তু সুমুদের বাড়িতে এখন উৎসবের আমেজ। হল্লা পার্টির সবাই সুমুর পাশে। ইয়ানাকে মন খারাপ হয়ে বসে থাকতে দেখে অগ্নি কপাল ভাঁজ করে প্রশ্ন করে,,,,,,,,
” এইভাবে বসে আছো কেনো?
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায়। এরপর মন খারাপ করে বলে,,,,,,,,,
” হল্লা পার্টি সবাই সুমুর কাছে। আর এইদিকে আমি একা।
অগ্নি ঠান্ডা গলায় বলে,,,
“”আমি যেখানে সেখানেই তো থাকবে তুমি।”
ইয়ানা চুপ করে থাকে। এরপর একটু থেমে বলে,,,,,,
“আব্বু — আম্মুকে একবার দেখেছিলাম শুধু। ওইদিন আম্মু ( শিখা চৌধুরি) নিয়ে গিয়েছিলো। যাস্ট দশ মিনিট ছিলাম। বিয়ে শেষ হলে আমি আব্বু — আম্মুকে দেখতে চাই।
অগ্নি কিছুক্ষন চুপ থেকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“” শুধু দেখতে চাও?
ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে বলে,,,,,,
“” হ্যা।
অগ্নির কন্ঠস্বর গম্ভীর হয় ,,,,,,
“” বিয়ে শেষ হক দেখতে পাবে।
ইয়ানার ইচ্ছে হচ্ছে অগ্নিকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু ধরা যাবে না দ্বিগুন রিআ্যকশন শুরু করবে। বলবে সিডিউস করতে এসেছি। যায় হোক রাজি হয়েছে এই অনেক। কয়েকদিন থেকে ও আসব।
অগ্নি হাতে ব্রেসলেট লাগিয়ে কিছু প্রসাধনী ব্যবহার করে।
ইয়ানা বিছানায় গিয়ে শান্ত হয়ে বসে। কিছু প্রশ্ন ইদানিং মাথায় উকি দিচ্ছে। অগ্নি বের হয়ে যেতে নিবে এমন সময় ইয়ানার অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে সে থমকে যায়। সে থামে। ঘাড় ঘুরিয়ে ইয়ানার দিকে তাকায়।
“” আতিকের সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক মি, চৌধুরি?
অগ্নি ছোট ছোট চোখে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানার বুক ধুকধুক করছে। আল্লাহ বলে দিক কোনো সম্পর্ক নেই। অন্তত মনটা একটা শান্তি হবে। ভিতরের ব্যাথাটা একটু হলেও কমে আসবে । কিন্তু ইয়ানা আজও ব্যার্থ। সত্য তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে অগ্নি চৌধুরি, উনি ঠিক কতটা খারাপ। অগ্নির উত্তর শুনে ইয়ানা টলমল চোখে তাকায়।
“” ভাই ”
ইয়ানা বিছানার চাঁদর খামছে ধরে। সেই আতিক রহমান যার জন্য মিরার জীবন ধ্বংসের পথে গিয়েছিলো। হাজার হাজার মেয়ের চোখের পানির কারন।আর খারাপ কথা না ওই বা বললাম। কারন ওদের খারাপের লিস্টের কোনো সীমা নেই। কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে তবুও লিখা শেষ হবে না। আর সেই ব্যাক্তিটা উনার ভাই?
ইয়ানা ভাঙ্গা গলায় বলে,,,,,,,,
“” ভাই! আতিকের মত জঘন্য ব্যাক্তি আপনার ভাই হয়? কেমন ভাই?
অগ্নি স্থির গলায় বলে,,,,,,,
” ভাই হওয়ার জন্য কোনো বর্ননার প্রয়োজন নেই। ভাই তাই আমার ভাই।
ইয়ানা — এমন জঘন্য নর্দমার কীট আপনার ভাই হয়?
অগ্নি — আমাকে তোমার ভালো পুরুষ মনে হয়। এমন ভাবলে আবার ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন। আরেকটা প্রশ্ন মাথায় আসছে বার বার। বিছানা থেকে উঠে কান্না মিশ্রিত কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করে ,,,,,,,,
“” নারী ব্যাবসা, শিশু পাচার এইসব করেন আপনি?
অগ্নি — নাহহ।
ইয়ানা — আতিক তারা তো করে তাহলে আপনি কেনো করছেন না?
অগ্নি বাঁকা উত্তর দিয়ে বলে,,,,,
” তোমার যখন এত ইচ্ছে পরের বার থেকে তাহলে করব।
ইয়ানা — নাহহ প্লিজ সহ্য করতে পারব না আমি। যতটুকু ধৈর্য অবশিষ্ট আছে সেটাও ভেঙ্গে যাবে। যদি আতিক আপনার ভাই হয় তাহলে আতিকের ছেলের নৃশ্ংস মৃত্যুতে মৌন কেনো ছিলেন?
অগ্নি বাঁকা হেসে বলে,,,,,,,,
” মৌন কেনো থাকতে যাব। পুলিশ ফোঁর্স লাগিয়েছি। সব করেছি বাট পুলিশ ধরতে পারে নি খুন কে করেছে।
ইয়ানা — আ.. আপনি তবুও নিশ্চুপ ছিলেন? কে মেরেছে ওকে? আপনাকে কেনো আমার সন্দেহ হয়?
অগ্নির সোজাসাপ্টা উত্তর,,,,,,,
” আমি মেরেছি তাই সন্দেহ হয় তোমার।
ইয়ানা আৎকে উঠে। গলা শুকিয়ে আসে তার।ভাঙ্গা গলায় আওড়াও,,,,,,
“” এমন নৃশ্বংস খুন আপনি করেছেন? এমন জঘন্য অবস্থা করেছেন যে কারোর রুহ দেখলে কেঁপে উঠবে। এমন জঘন্যভাবে কেনো মেরেছেন?
অগ্নি — তুমি চেয়েছিলে তাই।
ইয়ানার হুঁশ ফিরে। মনে পড়ে যায় সেদিনকার কথা। মিরার ঘটনা শুনার পর সে সব অগ্নিকে বলেছিলো। তখন অগ্নি জানিয়েছিলো ধরে নাও তোমার কথা মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে। এরপর তারা বাংলাদেশে আসে। পরের দিন ওই জনির নৃশ্বংস খুন। ও যতজনের মৃত্যু চেয়েছিলো সবার হয়েছে। তার মানে সবাইকে উনি মেরেছেন?
ইয়ানা চুল ধরে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে। কেমন বিকৃত মস্তিষ্কের লোকের সাথে সে থাকছে। ঠোঁট চেপে ইয়ানা কান্না আটকিয়ে বলে,,,,,,,
” এমন নৃশ্বংস ভাবে কেনো মারেন?
অগ্নি — রক্ত আর লোকের আর্ত চিৎকারে পৈশাচিক আনন্দ পায়।
অগ্নির স্বীকারউক্তিতে ইয়ানার গলা বন্ধ হয়ে আসে। ইয়ানা ঘৃনিত চোখে তাকিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে,,,,,,
“” জানোয়ার।
ইয়ানার চিৎকার দেখে অগ্নি বাঁকা হেসে বলে ,,,,,,
” হেই সুইটহার্ট জানি সেটা আমি।
ইয়ানা রাগে কাঁপতে কাঁপতে কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,,,
” সেই ফুঁচওয়ালাকে আপনি ওই মেরেছিলেন তাই না? এমন বিকৃত মস্তিষ্কের খুন আর কেউ করে না আপনি ছাড়া।
অগ্নি গম্ভীর হেসে বলে,,,,,,,
” মেরেছি।
ইয়ানা — কেনো? উনি তো খারাপ ছিলো না তাহলে?
অগ্নি — তোমার দিকে তাকিয়েছিলো।
ইয়ানা — যাস্ট তাকিয়েছিলো বলে জানে মেরে ফেলবেন। অন্য শাস্তি ও দিতে পারতেন জানোয়ার হয়ে নেকড়ের মত খুবলে খাওয়ার কি দরকার ছিলো? যাস্ট তাকাতেই খুন?
অগ্নি বাঁকে হেসে ইয়ানার কাছে এসে দাড়ায়। এরপর ইয়ানার চিবুক ধরে শক্ত করে উপরে তুলে। ইয়ানার চোখে চোখ রেখে বলে,,,,,,,,,,
” তোমার প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর আমি যেভাবে দেয় তা নিয়ে তোমার গর্ব করা উচিত ইয়ানা। অগ্নি চৌধুরি একের অধিক কারোর প্রশ্নের উত্তর দেয় না।
এরপর ইয়ানার প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলে,,,,
“তোমার কিছু হলে পরবর্তীতে হয়ত আমি থাকব। কিন্তু যতদিন তুমি অক্ষত আছো ততক্ষন কেউ তাকিয়ে থাকা তো দুরের কথা, কারোর নিশ্বাস পড়লেও আমি তার ফুসফুস থামিয়ে দিব। বাঁচলে শুধু আমার জন্য বাঁচবে আর নাহলে নিশ্বাস নেওয়ার তোমার ও দরকার নেই। আমি নিতে দিব না।
ইয়ানা চুপ হয়ে যায়। তার শরীর কাঁপছে প্রচন্ড রকম ভাবে। তবে সেটা রাগে নাকি ভয়ে বুঝা যাচ্ছে না।
অগ্নি কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই ইয়ানা সতর্ক করে বলে,,,,,,,,
” এই মুহূর্তে আপনার একটা কথাও শুনতে চাই না মি, চৌধুরি। কোথায় যাচ্ছিলেন চলে যান।
অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,,,,,,,
” হ্যা সেটাই বলে যাচ্ছিলাম কোথায় যাচ্ছি আমি।
ইয়ানা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,,,,,,
” সূর্য আজ কোন দিক দিয়ে উঠেছে। আমাকে বলে আপনি বাহিরে যাবেন। শুনতে চাই না কিছু চলে যান।
আমি তিক্ত কথা দিয়ে হার্ট করার আগে আপনি বেরিয়ে যান প্লিজ মি, চৌধুরি। আমি এখন নিজের মধ্যে নেই।
ইয়ানার গলা কাঁপছে। অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,
” না বললে পস্তাবে তুমি?
ইয়ানা — না।
অগ্নি — এজ ইউর উইশ।
এরপর অগ্নি সোজা হয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। ইয়ানা করুন চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। ফোনের শব্দে বিছানার দিকে তাকায়। মোবাইলের স্ক্রিনে ঝলঝল করছে হল্লা পার্টি গ্রুপ। ইয়ানা চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে কলে জয়েন হয়।
ফোনের স্ক্রিনে ভাসছে সুমুর গায়ে হলুদের সাজ। হালকা হলুদ রঙের শাড়িতে যেন সূর্যাস্তের কোমল ছায়া ফুটে উঠেছে তার গায়ে। গলায়-হাতে হালকা গহনা, চোখেমুখে হালকা মেকআপ। মাথায় শাড়ির আঁচল টেনে দেওয়া স্নিগ্ধ, শান্ত আর অপার্থিব।
ইয়ানা মুচকি হেসে বলে উঠল,
“”অনেক সুন্দর লাগছে তোকে সুমু। রায়ান ভাইয়া দেখলে পাগল হয়ে যেত।””
সুমু লজ্জায় মুখ নিচু করে নেয়। এতোক্ষণ থেকেই সবাই মিলে খুনসুটি করছে।আর এখন ইয়ানাও যোগ দিয়েছে।
আকাশ—তুই থাকলে আরো পরিপূর্ণ হতো আজকের দিনটা। তোকে খুব মিস করছি।
ইয়ানার মন খারাপ হয় তবে প্রকাশ করে না। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,,,,,,
” সমস্যা নেই কাল তো আসছি। উনার অনেক কিছুর প্রয়োজন পড়ে। সামান্য নিচে গেলেই ডাকাডাকি শুরু করে। সামনে সব থাকে অথচ খুঁজে পায় না।
আরু — ওয়াও ইয়ানা ভাইয়ার এত প্রসংশা। বাহহ বাহহ ভাইয়া তাহলে অনেক ডোজ দেয়। যায় হোক কাল আসিস ভাইয়ার দোহায় দিয়ে আটকে যাস না।
ইয়ানা জোর পূর্বক হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” হ্যা।
অগ্নি চৌধুরি কি সেটা তরা জানিস না। ইয়ানা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে মনে মনে ভাবে,,,, ভালো আছি। তবে প্রতিমুহূর্তে মানসিক যন্ত্রনা ভোগ করছি। এক খুনী, গ্যাংস্টারের সাথে বাস করছি। এই নামের ভারটাই যেন তার বুকে পাথরের মত চেপে থাকে। সে কি সত্যিই ভালো আছে? বাইরে থেকে হয়তো?কিন্তু ভিতরে? প্রতিটি মুহূর্ত যেন মানসিক অত্যাচারের জ্বলন্ত ছুরি।
অনেক্ষন কথা বলে ইয়ানা ফোন কেটে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। চোখ যায় গলার কাছের ক্ষত জায়গায়। যেখানে একটা সুন্দর তিল ছিলো কিন্তু আজ এখানে গভীর ক্ষত। সামান্য গার্ড নজর দিয়েছিলো বলে সেই তিল মাংস সহ তুলে নিজের নামের অক্ষর খোদায় করেছিলো। তবুও অদ্ভুতভাবে, সেই পাগলামির কথা মনে করে ইয়ানার ঠোঁটে মৃদু হাসি খেলে যায়।
ঢাকার উপকণ্ঠে অগ্নির ব্যক্তিগত এয়ারস্ট্রিপ। আকাশে ঝিরঝিরে কুয়াশা।একটি Gulfstream G700 জেট প্রস্তুত।অগ্নি চৌধুরি, কালো স্যুট, ঠান্ডা চোখে কেবিনে প্রবেশ করেন। সাথে থাকে তার ডানহাত আরিফ এবং চারজন বিশেষ বডিগার্ড। সেখানে গিয়ে একটি মাত্র বাক্য উচ্চারন করে গম্ভীরভাবে,,,,,,
” উঠাও ”
বিমান একটানা উড়তে শুরু করে আটলান্টিক পেরিয়ে কানাডার টরন্টোর দিকে।মাঝপথে একবার ফুয়েলিং হয় আইসল্যান্ডে। তার চোখে জ্বলছে অন্য আগুন। ইয়ানার মুখটা ভেসে উঠতেই চোখ বন্ধ করে নেয়। মেয়েটা কি কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাবে? একদম না। এই মেয়ে বুক ভাসাবে না কখনো।মেয়েটা এখন ওকে ঘৃনা করে কিন্তু এক সময় তাকে প্রচুর ভালোবাসত। এখন ও হয়ত বা বাসে। কিন্তু তা ঘৃনার নিচে চাপা পড়ে গিয়েছে। সে বার বার তার কাছে যায়। কিন্তু ইয়ানা কখনো সেচ্ছায় আসে না। আগের মত সেই কোমলতা থাকে না চোখে। অগ্নি চোখ বন্ধ করে নেয়। নিজের কাজের দিকে ফোকাস করে।
কানাডার অন্টারিওর বাইরে এক গোপন র্যাঞ্চে নামেন অগ্নি। বাইরের সাদা বরফে জেটের কালো শরীর এক অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি। এক আলিশান গোল্ডেন অফ মাফিয়া রাজ্য। বিশ্ব মাফিয়া চক্রের শীর্ষ ছয়জন অপেক্ষা করছে। সেখানে আলো কম, শব্দহীন।
অগ্নি প্রবেশ করার সাথে সাথেই একটা নিঃশব্দ ধাক্কা খায় বাতাস। অগ্নির চোখে – মুখে রক্ত। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
একজন ইতালিয়ান মাফিয়া মুখে হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” The King arrives , Let the silence speak”
এখানে অনেকে বসে আছে।স্যাটেলাইট ব্লাইন্ড জোনে যেখানে কোনো প্রযুক্তিই প্রবেশ করতে পারে না।এটা কোনো সাধারণ মিটিং রুম নয়। এটি একটি বিশাল আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বার, পুরোপুরি সাউন্ডপ্রুফ, অ্যান্টি-ড্রোন সুরক্ষায় মোড়া। ভিতরে ঢোকার জন্য প্রয়োজন বিশেষ ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের রেটিনা স্ক্যান এবং কোড।তিনটি না মিললে কেউ প্রবেশ করতে পারে না।
অগ্নি এগিয়ে গিয়ে বসে তার সে সিংহাসনে। সেই সিংহাসন যার শক্তিতে সে সবাইকে পায়ের তঅলায় পিষে ফেলার ক্ষমতা আছে। বৃত্তাকার টেবিল যার মাঝখানে অগ্নির সিংহাসন সদৃশ চেয়ার।কালো চামড়ায় মোড়ানো, উঁচু ব্যাকরেস্ট আর তার পেছনে খোদাই করা অগ্নিশিখা চিহ্ন।
অন্যান্য মাফিয়ারা বসে অর্ধ-বৃত্তে, যার প্রতিটি চেয়ার সোনার কাজ করা স্টিল দিয়ে তৈরি। চেয়ার যত দূরে সদস্যের গুরুত্ব তত কম।
চেম্বারের শেষ প্রান্তে দুজন নিরব রক্ষী দাঁড়িয়ে থাকে তাদের অস্ত্র সর্বদা প্রস্তুত।
অগ্নি গম্ভীর হয়ে বসে। সবার মধ্যে পিনপিন নিরবতা।অগ্নি চৌধুরি সে নামটা শুনলেই বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। হাঁটেন ধীরে, কথা বলেন কম।কিন্তু যেটুকু বলেন সেটাই আইন। তাঁর চোখে শীতল আগুন যেটা দেখলে কাঁপে পুরো মাফিয়া রাজ্য।
লোকজন বলে, “অগ্নি চৌধুরি কাউকে গুলি করে না, তার নীরবতা যথেষ্ট।”
স্মার্ট স্যুট, রোলেক্স ঘড়ি, বুলেটপ্রুফ ব্ল্যাক SUV তাঁর চলন যেন নিঃশব্দ এক যুদ্ধ।
তাঁর হাত ধরলে রক্ষা। আর তার বিপক্ষে গেলেই নিঃশ্বাস বন্ধ। কানাডা থেকে নিউ ইয়র্ক, নিউ ইয়র্ক থেকে ব্যাংকক তার অস্ত্রচক্র চলে নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে। অথচ কারও কাছে প্রমাণ থাকে না।
সকল নিরবতা ভেঙ্গে অগ্নি উচ্চ আওয়াজে বলে,,,,,,,
” অস্ত্রগুলো রাখো এখানে।
দুজন নিরব রক্ষী নিয়ে আসে । এরপর পর পর চৌদ্দটা বক্স খোলা হয়। যেখানে মিলিয়ন টাকার সম্পদ। কেউ কেউ লোভী চোখে তাকিয়ে আছে। অগ্নি শান্ত চোখে তাকায় সেদিকে। এখানে মিলিয়ন মিলয়ন টাকার সম্পদ। এখানে লেগে আছে হাজার মানুষের রক্ত।
অগ্নি ইতালি ফিরত মাফিয়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,
“তোমরা চাই অস্ত্র। এইগুলো শুধু অস্ত্র নয়।এইটা পাওয়ার , ভয় (Fear), আর সাফল্য (Success)। আমি সেটা দিতে পারি। কিন্তু বুঝো, এই ব্যবসা শুধু টাকার জন্য হয় না। এটা হয় বিশ্বাসের জন্য। বিশ্বাসঘাতকতা করলে দুই মিনিটে গলা আলাদা হয়ে যাবে।
ইতালিয়ান মাফিয়া,,,,,শীতল হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“আমরা জানি তোমার কদর কতটা। আমাদের ক্লায়েন্টদের জন্য সবচেয়ে Advanced অস্ত্র দরকার। দাম নিয়ে একটু নমনীয়তা চাইছি।কারণ আমরা বড় অর্ডার দিতে যাচ্ছি।”
অগ্নি মেঝেতে পা ঝাঁকিয়ে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে বলে,,,,,
“দাম নিয়ে আলাপ করব, কিন্তু মনে রেখো বিশ্বাস আর লয়্যালটি ছাড়া কিছুই বিক্রি করব না। একবার কারো বিশ্বাসভঙ্গ হলে সে আর আমার তালিকায় থাকবে না। আর না থাকা মানে কি বুঝাতে চাইছি সেটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো।
ইতালিয়ান মাফিয়া সরল মুখে বলে,,,,,,
“আমরা ঝুঁকি নিতে রাজি আছি । তবে চাই তোমাদের সব নতুন মডেল দেখতে। আমাদের বাজার চাই শুধু পুরানো নয় সবচেয়ে আধুনিক অস্ত্র।”
অগ্নি গম্ভীর্যতা বজায় রেখে রুক্ষ ভাবে বলে,,,,,,
“আমার কাছে সব সময়ই কাটিং-এজ অস্ত্র থাকে। কিন্তু তা আনার জন্য তোমাদের শুধু টাকা নয়, রক্তের বন্ধনও প্রয়োজন। বুঝেছো তো এই বাজারে বেঁচে থাকতে হলে শুধু কৌশল নয় Sacrifice দরকার।”
ইতালিয়ান মাফিয়া,,,,,,,
“আমরা সব খরচ সহ্য করতে প্রস্তুত। তোমাদের সেরা লোকজন পাঠাও। দরকার হলে গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করব।”
অগ্নি রহস্যময় হাসী দিয়ে বলে,,,,,,
“আমার দলের লোকেরা ঝুঁকি নিয়েই বেঁচে থাকে। তারা তোমাদের কাজ সম্পন্ন করবে। তবে ভুল করলে শাস্তি নিশ্চিত। এই খেলায় ভুলের কোনো জায়গা নেই।”
তাদের কথোপকথনে সবাই নিশ্চুপ। কারন এটাই নিয়ম। যাদের মধ্যে ডিল হবে তারা কথা বলবে শুধু।
অস্ত্রগুলোকে কিছুটা দাম করে ছাড়া হয়। কিন্তু এতে একজন হিংসায় জ্বলে উঠে। কারন এইগুলো সেইম মডেল তারা চরম দামে নিয়েছে। 800 মিলিয়নে ক্রয় করেছিলো আর আজ সেগুলো ছয়শত মিলিয়নে বিক্রয় হচ্ছে। লোকটা দিক বিবেচনা না করে অসুন্তুষ্ট প্রকাশ করে বলে,,,,,,,
” এইটা ঠিক নয় বস। আমাদের এর চেয়ে চরা দামে নিয়েছি। আপনি স্বজনপ্রিতী করছেন আমাদের সাথে।
অগ্নি শীতল চোখে সেদিকে তাকায়। মুহূর্তেই ক্রোধে ফেটে পড়ে। সামান্য হুংকার ছেড়ে বলে,,,,,,,,,
“” সাইলেন্ট! নাহলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে।
কিন্তু লোকটা থামে না। ড্যামিয়েন রিকার্ডো, ইতালির বিখ্যাত অস্ত্র পাচারকারী। চোখে দাম্ভিকতা আর কণ্ঠে বিদ্রুপ নিয়ে বলে,,,,,,,,
“”Mr. Chowdhury আপনার একচেটিয়া শাসন অনেকদিন টিকবে না। আপনার পন্থা অনেক পিছিয়ে গেছে। অস্ত্রচক্র এখন আধুনিক চায়। ভয় আর পক্ষপাতিত্ব নয়।
চেম্বারে গা কাঁপানো নীরবতা। কেউ নড়ছে না। নিঃশ্বাসও থেমে গেছে। অগ্নি চোখ তোলেন না। ঠোঁটে কেবল একপাশে টানা একটা হালকা হাসি ফুটে ওঠে।
সে ধীরে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। বাম হাতে থাকা ওয়াইন গ্লাসটিকে টেবিলে রাখে শব্দ করে। তারপর সামনে এগিয়ে আসেন। ড্যামিয়েন ভয় পায় না, কিন্তু দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। আর ঠিক তখনই, অগ্নির চোখ ইঙ্গিত করে।
দুই রক্ষী ধীরে আসে। চারপাশে নিঃশব্দতা। তারপর অদৃশ্য একটি দরজা খুলে যায়। ড্যামিয়েন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় সেই রক্তরঙা ছায়ার ঘরে। রিকার্ডোর ভাই আলবার্ট শুধু তাকিয়ে দেখছে তার ভাইকে বিনা অন্যায়ে কিভাবে হেঁচরে নিয়ে যাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে তাকিয়ে থাকে। তবে বেশিক্ষন তাকাতে পারে নি। একটি শব্দও হয়নি। একটি গুলিও নয়। শুধু সেই সিলের ঘূর্ণন কিছুটা দ্রুত হয়ে যায়। কোনো শব্দ ভেসে আসে না। গরম রক্তের গন্ধ ভেসে আসে চারপাশে।
প্রত্যেকটা লোকের আত্না কেঁপে উঠে। আলবার্ট চোখ শক্ত করে হাত চেয়ারে হাত চেপে ধরে। দুই ভাই মিলে এই অস্ত্রের ব্যবসাকে বিশ্ব সেরাদের মধ্যে করেছিলো। আর আজ সেই ভাইটা নেই। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে নৃশঃস ভাবে। তাও আবার অন্যায়বিহীন। সামান্য প্রতিবাদ করাতে এত বড় শাস্তি। সে জানে অগ্নি চৌধুরির মারার স্টাইল। মৃত্যুর চাইতেও কঠিন নরক যন্ত্রনা দিয়ে তিলে তিলে মারেন। তার ইশারা পেয়ে নিশ্চয় তাকেও এইভাবে মেরেছে। আগুনে জ্বলে উঠে তার পুরো অস্তিত্ব। আদরের ছোট ভাইটাকে এই অগ্নি চৌধুরি মেরেছে। ছাড়ব না আমি তকে অগ্নি চৌধুরি। আজ আমার হাতে ক্ষমতা নেই কিন্তু ছলনার আশ্রয় নিয়ে হলেও তকে ধ্বংস করব আমি আলবার্ট। আমি আমার মৃত ভাইয়ের আত্নাকে সাক্ষী রেখে প্রতিজ্ঞা করলাম। এই সিংহাসন, এই দাপট, এই ক্ষমতা সব ছিনিয়ে নিব আমি। ভিতরে ক্রোধ আর ধ্বংসলীলা নিয়ে আলবার্ট শক্ত হয়ে বসে থাকে। যতক্ষন পর্যন্ত এই সভা চলেছে ঠিক ততক্ষন ধ্বংসের ফাঁদ এঁকেছে।
পুরো দিন পেরিয়ে গিয়ে রাত এখন একটা বাজে। রাত দশটা পর্যন্ত ইয়ানা ড্রয়িং রুমে বসে অরিদ আর আহিয়ার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। তখন রেশব নামে তাদের আত্নীয় আসে। তার সাথে হ্যালো বলে ইয়ানা উপরে চলে আসে। রায়ান ভাইয়া আর ইউভি ভাইয়া তারা ও নেই। আরিফ ভাইয়াকেও দেখিনি সারাদিন।
উনার মোবাইল বার বার অফ দেখাচ্ছে কেনো? ইয়ানার চিন্তা হলেও মাথা ঘামায় না। শয়তানকে আবার কে মারতে আসবে। সে নিজেই বলবে আমার সঙ্গীকে মেরে আমি কি করব। ইয়ানা এইসব ভেবে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। কিন্ত হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে অগ্নিকে পাশে না পেয়ে চিন্তার ভাঁজ মাথায় হানা দেয়।
ইয়ানার কিছুতেই মন টিকছে না। ওইদিন রাতের সপ্নটা মনে করে অধৈর্য হয়ে পড়ে । ইয়ানা বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে পা রেখে দাঁড়ায়। এরপর এক পাশ থেকে উড়নাটা নিয়ে গলায় পেচিয়ে রাখে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে পুনরায় অগ্নির মোবাইলে ফোন দেয়। কিন্তু বার বার ওই বন্ধ দেখাচ্ছে। ইউভি তাদের নাম্বারে ফোন দিতে গিয়েও থমকে যায়। এত রাতে ফোন দেওয়াটা শোভা দেখায় না। তারা নিশ্চয় ঘুমাচ্ছে এখন। তারা যদি বাসায় এসে থাকে তাহলে উনি গেলো কোথায়? ইয়ানার মস্তিষ্ক বলছে তুই কেনো চিন্তা করছিস? তুই তো এখন আর ভালোবাসিস না যাস্ট ঘৃনা করিস। কিন্তু মন বলছে, ভালোবাসা কি সত্যি ভুলে যাওয়া যায়। ঘৃনা করলেই কি ভালোবাসা কমে যায়। শখের পুরুষকে কি এত সহজে আলাদা করা যায়?
ইয়ানা নিরুপায় হয়ে বিছানায় বসে। উনি তো এর আগেও কতবার বাড়ি ফিরে নি। তখন তো অনায়াসে কাটিয়েছি। তাহলে আজ কেনো চিন্তা হচ্ছে? শুধুই কি সপ্নের জন্য। ইয়ানা বিছানা থেকে উঠে কিছুক্ষন পায়চারী করে। মন বসছে না কিছুতেই। এইভাবে ছটফট করে রাত পার করে। শেষ রাতে দোলনায় ঘুমিয়ে যায় নিজের অজান্তেই। সূর্যের আলো, আর পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে শব্দ ভেসে আসে কানে। ইয়ানা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। মাথাটা ব্যাথা করছে। আকস্মিক মনে পড়ে রাতের ঘটনা।অগ্নি বাড়িতে আসে নি আজ। কাল সকাল নয়টার সময় বেরিয়েছে আর কোনো খোঁজ নেই। ইয়ানা ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে। শেষ রাতে ঘুমানোর জন্য অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। এখন নয়টার কাছাকাছি। ইয়ানা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। ইউভি আর রায়ানকে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠে। তারা সবাই বসে কফি খাচ্ছে। ইয়ানা সবাইকে সালাম জানায়। সাজিদ চৌধুরি মন্ত্রীত্ব নিয়ে বাহিরে গিয়েছেন। আহিয়া স্কুলে চলে গিয়েছে। অরিদ জিমে গিয়েছে। নিচে শুধু শিখা চৌধুরি, ইউভি, রায়ান আর রেশব বসা।
ইয়ানা ইউভি তাদের উদ্দ্যশ্যে বলে,,,,,,,
“” ভাইয়া উনি কোথায় আছেন?
ইউভি ভেবেছে ইয়ানা সব জানে। তাই কফি খাওয়া অবস্থায় হাসিমুখে উত্তর দেয়,,,,,,,
“” মাফিয়া প্যালেস থেকে মেবি বাড়িতে চলে গিয়েছে। কথা হয় নি তোমার সাথে আর?
ইয়ানা চট করে তাকায় ইউভির দিকে। অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। উনার মাফিয়া প্যালেস তো কানাডায়? ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,,
” মানেহহ! উনি এখন কানাডায়?
ইউভি, রায়ান ইয়ানার অবাক হওয়া চেহারার দিকে তাকায়। কিছু একটা ভেবে রায়ান গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,,,,,
” কেনো তুমি জানতে না অগ্নি যে কানাডায় গিয়েছে?
ইয়ানার গলা কাঁপছে। বুক ভেঙ্গে আসছে। কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে,,,,,,,,
” না ভাইয়া আমি জানি না। আমাকে বলে যায় নি।
তারা কিছুটা অবাক হয়। অগ্নি বলে যায় নি তাও আবার ইয়ানাকে?
রায়ান — আমরা ও জানতাম না। আমদের যাওয়ার সময় ট্যাক্স পাঠিয়ে গিয়েছে। এরপর থেকে আর কন্ট্রাক্ট করতে পারি নি। এইটা সবসময় ওই। অগ্নি মাফিয়া প্যালেসে ডুকলে সব নেটওয়ার্ক অফ করে যায়।
ইয়ানা আর দাঁড়ায় না। দ্রুত সেখানে থেকে প্রস্থান করে। যে কোনো সময় কান্না করে দিতে পারে । শিখা চৌধুরি কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু বলার সুযোগ হয়ে উঠে নি। তার আগেই ইয়ানা চলে যায়। উনিও সকালে জেনেছে রায়ান তাদের থেকে।
ইয়ানা রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে নেয়। চোখ থেকে অশ্রুধারা ঝরতে থাকে। সামান্য বলে গেলে কি এমন হত? কত দিন থাকবে উনি? কিন্তু আমার কেনো চিন্তা হচ্ছে। আমি তো ঘৃনা করি তাই না? শুধুই কি সেই রাতের সপ্নটার জন্য এত চিন্তা? ভালো হয়েছে উনি নেই। সবার সাথে আড্ডা দিতে পারব, মজা করতে পারব। উনি থাকলে উনার রাগী চোখ দেখেই আমি ভয়ে জড়োসরো হয়ে বসে থাকতে হত। ইয়ানা চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করে তোলে। আমাকে এড়িয়ে চলে তাই না মি, চৌধুরি? আমাকে না জানিয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশ চলে গেলেন। অথচ আমাকে বলেও গেলেন না। আপনাকে এড়িয়ে চললে খুব গায়ে লাগে আর আমার লাগে না? এইবার আমি বুঝাব এড়িয়ে চলা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? আসাদ হোসেনের মেয়ে ইয়ানাকে চিনেন কিন্তু অগ্নি চৌধুরির বউ মিসেস ইয়ানাকে চিনেন না?
বিকেল প্রায় চারটার দিকে। ইয়ানা তারা সবাই সুমুদের বাড়িতে। ইয়ানা এসেই আগে নিজের বাবা – মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষন কান্না করে। একটা রাত গিয়ে কাটাতে পারলো না এখন ও। শিখা চৌধুরি অগ্নির কথা জিজ্ঞাসা করলে ইয়ানা আমতা আমতা করে উত্তর দেয়,,,,,
” ওই আম্মু উনি ব্যবসার কাজে বাহিরে যেতে হয়েছে কাল।
আসাদ হোসেন কপাল কুচকে জিজ্ঞাসা করে,,,,,,
” এত দ্রুত?
ইয়ানা — প্রাইভেট জেট দিয়ে গিয়েছে।
আসাদ হোসেন হাসি দিয়ে বলে,,,,
” ওহহ আচ্ছা ”
ইয়ানা মলিন হাসে। জানা নেই অগ্নির সম্পর্কে কতদিন লুকিয়ে রাখা যাবে। বাবা উনার ব্যাপারে জানলে শুরু হবে আরেক ঝামেলা।সহ্য করতে পারবে না।বাবা নিয়ে চলে আসতে চাইবে কিন্তু উনি? উনি কি আসতে দিবে? অগ্নির একটা কথা মনে পড়ে যায়।
“তোমাকে কেউ আমার থেকে আলাদা করতে চাইলে সে আর দুনিয়ার আলো দেখার সুযোগ পাবে না। সে যত কাছের লোক হোক না কেনো? ”
ইয়ানা এইসব মনে করে ভয়ে ঢোক গিলে। কয়দিন এই চাঁদর দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে? পাঁচ বছর? দশ বছর। কিন্তু এরপর! এরপর কি হবে?
ইয়ানা বাবা মায়ের সাথে সাক্ষাত করে চলে যায় হল্লা পার্টির কাছে। ইয়ানাকে পেয়ে সবাই এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ে। মিরা ও এসেছে। কয়েকদিনে তাদের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব ঘরে উঠেছে। ইয়ানা রুয়ানাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। অবনি জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,
” কেমন আছো আপু?
ইয়ানা — এইতো ছোট বোন ভাবী ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
ভাবী ডাকে অবনী কিছুটা লজ্জা পায়। অবনীকে লজ্জা পেতে দেখে ইয়ানা ঠাট্টা করে বলে,,,,,
” এই যে মিসেস আকাশ লজ্জা পেলে চলবে না। এই বাদরটাকে সোজা করা তোমার কাজ।
অবনি মুচকি হাসি দেয়
সুমু– ভাইয়া আসে নি ইয়ানা?
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” দেশে নেই। ব্যবসায়ীক কাজে কানাডায় গিয়েছেন।
আকাশ অবাক হয়ে বলে,,,,,,
” রায়ান ভাইয়া তো উনার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর আজ এমন মুহূর্তে উনি নেই।
ইয়ানা নিশ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,
” মনে হয় বেশি প্রয়োজনীয়।
আকাশ — হুম।
কিছুক্ষনের মধ্যে কাজী চলে আসে। সুমুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকা হয়। ইয়ানা সুমুকে হাত স্পর্শ করতে যায়। কিন্তু সে অবাক হয়ে হা করে তাকায় সুমুর দিকে। ইয়ানা নিজের হাসিকে আটকাতে না পেরে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। ইয়ানার হাসিতে সবাই ভড়কে যায়। সুমু ও কিছুটা কপাল কুচকে তাকায়।
রুহান ইয়ানার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,,,,,,
” এই বলদি পাগলের মত এইভাবে হাসছিস কেনো?
ইয়ানা নিজের হাসিকে কোনো মতে থামিয়ে বলে,,,,,,
” ভাই সুমুকে দেখ। মৃগী রোগীর মত ওর শরীর কাঁপছে। মনে হচ্ছে শীত কালে ঠান্ডা পানি দিয়ে পুকুর থেকে গোসল করে এসেছে।
ইয়ানার কথা শুনে সবাই সুমুর দিকে তাকায়। সুমু অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,,,,,,
” নার্ভাস ভাই প্রচুর। কাঁপবো না তো নাচবো। জীবনের প্রথমবার বিয়ে করছি।
আরু — সাধারনত মানুষ কতবার বিয়ে করে?
অবনি — বাদ দাও এইসব। সুমু আপু চিন্তা করো না যাস্ট গিয়ে বসবে আর সব অনুসরন করবে। আহামরি কোনো পরিস্থিতিতে যাবে না। আর তাছাড়া এখানে বাহিরের কেউ তো নেই সব আত্নীয় – স্বজন। তোমার পরিচিত।
অবনির কথায় সুমু কিছুর আশ্বাস পায়। আকাশ অবনির দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলে,,,,,,,,
” তুই কিভাবে জানিস এতকিছু?
অবনি– বিয়ে হয়েছে আমার। অবিবাহিত নাকি আমি। সব মিয়ম – কানুন আমার জানা।
আকাশ নিজের শার্ট ঠিক করতে করতে বলে,,,,,,
“” রুয়ানা কান বন্ধ কর।
রুয়ানা আচমকা তাকিয়ে বলে,,,,,,,,
” কেনো আমি কান বন্ধ করব কেনো?
আকাশ — চকলেট দিব এক বক্স প্রমিস।
চকলেটের কথা শুনে রুয়ানা সাথে সাথে কান চেপে ধরে। সবাই উৎসুক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কি বলবে সেটা শুনার জন্য।
আকাশ বিছানা থেকে উঠে সবার দিকে তাকায়। সবাইকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আকাশ ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,,
” এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? হিসু করতে যাব।
আকাশের এমন কথায় সবার কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। তারা ভেবেছিলো কোনো কথা বলবে। রুইকে যেভাবে কান বন্ধ করিয়েছে ভেবেছে কি না কি বলবে। তাই তারা সবাই উৎসুক জনতার মত তাকিয়ে ছিলো। আরু একটা বালিশ ছুঁড়ে দিয়ে বলে,,,,,,
“” বিয়াইত্তা এক বেডির জামাই দুর হ চোখে সামনে থাকে।
আকাশ চোখ টিপা মেরে নিচে চলে যায়। এরপর সুমুকে নিয়ে যাওয়া হয়। বিয়েটা ঘরোয়াভাবে করা হচ্ছে তাই বাহিরের কেউ নেই। সুমু একটা সিম্পল শাড়ি পড়েছে জামদানি। মুখে হালকা মেকআপ আর হালকা জুয়েলারি। মাথায় দু – পাট্টা দেওয়া। ফলে ঠোঁটগুলো শুধু দেখা যাচ্ছে। রায়ান তাকায় সেদিকে। সুমুর এই নতুন সাজ দেখে অদ্ভুত শিহরন বয়ে যায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে । রায়ানের দষ্টি অনেকের নজরেই পড়েছে । সবাই মুখ টিপে হাসছে। ইউভি তো তার লিটল গার্লকে দেখছিলো আড়চোখে। পিন্ক কালারের গাউন পড়েছে। একদন ছোট পরী লাগছে তার কাছে। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে সামনে পিন্ক কালারের ছোট ক্লিপ বসানো। গলায় একটা উড়না পেচানো। মুখে কোনো এক্সট্রা সাজ নেই। চোখে কাজল, আর ঠোঁটে গোলাপি লিপ্সটিক। ইউভি নিজের অবাধ্য চোখ নামিয়ে নেয়। সবার সামনে দেখার সময় এখন ও তার আসে নি। যেদিন দেখবে সেদিন মন ভরে সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে দেখবে।
সুমুকে রায়ানের পাশে বসানো হয়। সুমুর শরীর অসম্ভব রকম কাঁপছে। ইয়ানার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। ইয়ানা আশ্বাস দেয় সে এখানেই আছে। কোথাও যাচ্ছে না।
রায়ানকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইউভি গলা কেঁশে হালকা আওয়াজে বলে,,,,,,,,
” চোখ একটু নামা ভাই। বাসর রাতে কি দেখবি। এখন ওই সব দেখে ফেলছিস। কিছু তো বাকি রাখ।
ইয়ানা আর সুমু পাশে থাকায় ইউভির কথা ঠিক তাদের কানে ডুকেছে। সুমু লজ্জায় আর ও কাঁপছে।
সুমুর বেগতিক অবস্থা দেখে ইয়ানা কানে ফিসফিস করে বলে,,,,,,,,
” ভাই এইভাবে কাঁপিস না। সবাই মৃগী রোগী বানিয়ে দিবে। কাঁপাকাঁপি রুমে গিয়ে করিস যত খুশি তত।
ইয়ানার কথার মধ্যে সাজিদ চৌধুরি আর সুমুর মামা কাজি নিয়ে আসে। কাজী বসানো হয় তাদের সামনে।
কাজি সাহেব বর আর বউয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে খাতার দিকে তাকায়। এরপর বিয়ের সব নিয়মনীতি মেনে সুমুকে কবুল বলতে বলে। সুমুর কর্নপাত হতেই সে কেঁপে উঠে। তার বিয়ে হচ্ছে একজন পুরুষের সাথে। কেমন হবেন উনি? ভালোবাসবেন তো আমায়? সুমুর গলা কাঁপছে। কান্না আসছে তার প্রচুর। কিভাবে বাঁধবে এই অজানা পথের দড়ি। মা পরিবার সবাইকে রেখে বিদেশ থাকতে হবে। ভাবতেই ভিতর হাহাকার করে উঠে।
সুমুকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে বার বার বলা হয় কবুল বলার জন্য। একসময় সুমু বুক ভরা নিশ্বাস নিয়ে তিন কবুল বলে দেয়।
সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে। এরপর কাজি রায়ানের উদ্দ্যেশ্যে কিছু নিয়ম পাঠ করে কবুল বলার জন্য বলবে তার আগেই রায়ান তিন কবুল বলে ফেলে।
রায়ান এত দ্রুত বলে সে নিজেই হতভম্ভ। প্রথমে সবাই অবাক হলে ও এখন সবাই হাসছে। কাজী সাহেব হেসে বলেন,,,,,,
” জামাই বাবা অনেক ফার্স্ট।
ইউভি কাজির উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,,,
” সবকিছুতেই ফার্স্ট।
এরপর রায়ানের কানে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,,
” চাচা বানানোর কাজে ও ফার্স্ট যাতে হতে দেখি। আফটার অল তুই সবকিছুতেই ফার্স্ট বয় শুধু অগ্নিকে বাদে।
রায়ান — কাল ওই শুনতে পাবি খুশির খবর।
ইউভি চট করে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
“” কিসের?
রায়ান ভাব নিয়ে বলে,,,,,,
” কেনো তর চাচার হওয়ার সংবাদ।
ইউভি অসহায় হয়ে বলে,,,,,,,
” এতগুলো কথা এক সাথে বলিস না। এইগুলো আগে হজম করতে দে।
রায়ান কিছু বলতে যাবে তখন তার সামনে একটা খাতা রাখা হয়ে সাইন করার জন্য। এইটা সেই খাতা যা তাদেরকে সারাজীবন এক করে রাখবে। এই সাইনের শক্তি অনেক।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৯
রায়ান সাইন করে দেয়। এরপর সুমুকে দেওয়া হলে কিছু সময়ের ব্যবধানে সে ও সাইন করে। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে। আজ থেকে তারা স্বামী – স্ত্রী। তিন কবুলে বাধা পড়েছে সে এই লোকটার সাথে। সে এমন এক কাগজে সাইন করেছে যা সমাজে সম্পর্কের বৈধতার এক দলিল। যেটা দিয়ে তারা একে অপরের পাশে থাকতে পারবে সারাজীবন।