অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫২

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫২
লিজা মনি

বিপদ এই শব্দটা শুনলেই বুকের মাঝে এক অজানা কাঁপুনি জেগে ওঠে। জীবন তখন থমকে দাঁড়ায় এক কঠিন মোড়ে।যেখানে প্রতিটি নিঃশ্বাস হয়ে ওঠে ভারী। প্রতিটি মুহূর্তে ঝরে পড়ে অসহায়তা। কিন্তু সত্যি বলতে বিপদ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। এটা কোনো শাস্তি নয় বরং একটা পরখ। এমন এক নিঃশব্দ শিক্ষক যে মানুষের আত্মাকে ঝাঁকিয়ে তোলে। পরীক্ষা নেয় সাহসের, ধৈর্যের, এবং ভেতরে লুকিয়ে থাকা শক্তির।
মানুষ যখন সুখের রাজ্যে মগ্ন থাকে তখন সে ভুলে যায় যে পৃথিবীটা চিরস্থায়ী নয়। সেই সুখের অন্তরালে লুকিয়ে থাকে এক নিষ্পাপ নিঃশব্দ মৃত্যু। এক দিন বা এক সময় বিপদ এসে দরজায় কড়া নাড়ে। সেটা হতে পারে প্রিয়জনের মৃত্যু, হতে পারে আর্থিক ধস, হতে পারে হঠাৎ পাওয়া কোনো অপ্রত্যাশিত দুঃসংবাদ। জীবনের যে বাঁকটি ঠিকমতো আঁকা ছিল সেখানে হঠাৎ করেই টেনে দেওয়া হয় কালি। সেই কালি যে কতটা গভীর হতে পারে তা কেবল সে-ই জানে যে ভেতর থেকে ছিঁড়ে পড়ে।

বনানীর ব্যস্ত রোড এগারো থেকে একটু ভিতরে ডুকলেই দেখা মেলে একটা আধুনিক ছোয়ায় ঘেরা দুই তালাবিশিষ্ট বিল্ডিং। কিন্তু আজ সেটা পুরো পুরি আগুনে ঝলসে যায়। ফায়ার – সার্ভিস বহু আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলেন। কিন্তু বাড়িটা আর বাঁচাতে পারে নি। কারোর জানা নেই ভিতরে কে কে ছিলো। চারপাশে লোকজনের ভির । শিখা চৌধুরি, সাজিদ চৌধুরি, হল্লা – পার্টি একে একে সবাই মাত্র এসে পৌঁছায় । সবার চোখে পানি আর আর্তনাদ। ইয়ানাকে নিয়ে আহিয়া গাড়ির ভিতরে বসে আছে। ইয়ানার এখনও জ্ঞান ফেরে নি। সবাই ইয়ানার কাছে যায়। পুলিশ আসা পর্যন্ত সবাই অপেক্ষা করছে।
আহিয়া শিখা চৌধুরির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভেঙ্গে বলে,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আম্মু বউ মনি! ভিতরে আঙ্কেল- আন্টি আর রুই সবাই রয়েছে। সব শেষ আম্মু। সবাই নিঃশ্বেস হয়ে গেছে আম্মু!
শিখা চৌধুরি কিছু বলতে যাবে তার আগেই কারোর চিৎকারে পিছন ফিরে তাকায়। রায়ান ইউভির সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি করছে ভিতরে প্রবেশ করার জন্য। তার চিৎকারের প্রতিটার মানুষের হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করছে। বনানীর বাতাসগুলো যেন স্তব্দ হয়ে গিয়েছে।
— আমাকে ছাড় রায়ান। আমার লিটল গার্ল ভিতরে আছে। ওর শরীরে আগুন লাগলে ও কষ্ট পাবে। মেয়েটা ছোট। অল্পতেই আবেগী হয়ে পড়ে। এত বড় কষ্ট সে সহ্য করতে পারবে না।
রায়ান ইউভির বাহু টেনে চাপা কান্নায় বলে, ,
‘ শান্ত হ ভাই। নিজেকে সামলে নে। আগুনে সব ঝলসে গিয়েছে। ভিতরে কেউ আর অক্ষত নেই। আঙ্কেল- আন্টি, রুয়ানা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।
আচমকা ইউভি রায়ানের কলার চেপে ধরে। ভিতরে ক্রোধে ফেটে পড়ে। চোখ থেকে যেন আগুন বের হবে। রাগে – দুঃখে কেঁপে উঠে তার সর্বাঙ্গ। বন্ধুত্ব জীবনের প্রথম এতটা ধারালো দৃষ্টি নিয়ে ইউভি রায়ানের দিকে তাকিয়েছে। বাবা – মায়ের মৃত্যুর পর তারা একে অপরের ঢাল হয়ে বেঁচে আছে।

— মেরে ফেলে দিব তকে রায়ান। খবরদার আমার লিটল গার্লকে নিয়ে বাজে কিছু বলবি না। । আমি ওর জন্য অপেক্ষা করছি। ওকে আপন করে পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন ধৈর্য ধরে বসে আছি। আমাকে ছেড়ে, আমাদের পূর্নতা না পেয়ে ও আমাকে একা রেখে কোথাও যাবে না। সেই ছোট রুই আমার বউ হবে।আমার দুইটা হাত, আমার হৃদয়, আমার মস্তিষ্ক, আমার চওরা বক্ষ, আমার দুটি চোখ সর্বক্ষন অপেক্ষা কারছে তাকে কাছে পাওয়ার। আর তুই বলছিস সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে! হ্যা।
ভিরের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষ দেখছে একজন গোপন প্রেমিকের আর্তনাদ। হল্লা- পার্টি , শিখা চৌধুরি – সাজিদ চৌধুরি, আহিয়া, অরিদ, আরিফ সবাই স্তব্দ হয়ে যায়। ইউভি রুয়ানাকে ভালোবাসে?
রায়ান নিশ্বাস নিয়ে,,,

” শান্ত প্লিজ। অবুঝের মত আচরন কেনো করছিস ইউভি?
ইউভি — আমার ছোট ভালোবাসাটা এইখানে কষ্ট পাচ্ছে রায়ান প্লিজ যেতে দে আমায়। আমার শরীর আঘাতে ক্ষত – বিক্ষত করে ফেল আমি সামান্য আর্তনাদ পর্যন্ত করব না। কিন্তু আমি আমার লিটল গার্লের শরীরে সামান্য আচর সহ্য করব না। প্লিজ যেতে দে।
রায়ানের থেকে এক প্রকার ছাড়িয়ে নিয়ে ইউভি পাগলের মত সামনের দিকে এগিয়ে যায়। চোখে – মুখে একরাশ ঘোর। বুকের ভিতরে মনে হয় আগুনের বন্যা বয়ে চলছে। তার পা তাকে নিয়ন্ত্রন করছে না। সে নিজেই নিজের অনুভুতির কাছে হার মানছে।
আরেক পা এগিয়ে যাবে কারোর কান্নার শব্দে থেমে যায়। পা আটকে যায়।
— আমার আম্মু- আব্বু!
চারপাশে নিস্তব্দতা চিরে আসে এক করুন কান্নার শব্দ। সেই শব্দ হাওয়ায় নয় সরাসরি ইউভির ভিতরকে ভেদ করে চলে আসে। নিশ্বাস গলা পর্যন্ত উঠে আসে।মুখের মধ্যে আসার আলো জ্বলে উঠে।।যেন মরুভূমির বুকে সাগর নেমেছে। দীর্ঘ থেকে তূষিত হৃদয়ে উঠে আসে আসার ঝিলিক। ইউভি কাঁপা – কাঁপা শরীর নিয়ে ভয়ে ভয়ে পিছন ফিরে তাকায়।

রুয়ানা হাটু মাটির মধ্যে ঠেকিয়ে চিৎকার দিয়ে বসে পড়ে। রুয়ানার দিকে অবাক হয়ে সবাই তাকায়। তার মানে রুয়ানা ভিতরে ছিলো না! দেখে মনে হচ্ছে প্রাইভেট থেকে এসেছে। রুয়ানার কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো। যেটা এই মুহূর্তে অবহেলিত ভাবে মাটিতে পরে আছে। অবনি আর মিরা এসে রুয়ানাকে আগলে নেয়। ইউভি চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নেয়। কারোর দিকে না তাকিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে রুয়ানার সামনে দাঁড়ায়। এরপর মিরার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুইয়ের গালে- কপালে অজস্র চুমু খেয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে। এমন ভাবে ধরেছে যেন কোনো গুপ্তধন। সেটা হারিয়ে গিয়েছিলো কোনোভাবে। আজ পুনরায় ফিরে পেয়েছে। সবাই অবাক হয় নি বরং খুশি হয়। এতক্ষন দেখেছে রুয়নার জন্য করা ইউভির পাগলামো। রুয়ানাকে পেয়ে ইউভির এমন করাটাই স্বাভাবিক। অন্য সময় হলে হয়ত রুই লজ্জা পেত, গাল দুটি লাল হয় পড়ত। ইউভিকে অসভ্য অথবা নির্লজ্জের ট্যাগ দিত। কিন্তু আজ তার এইসবে কোনো খেয়াল নেই । মা – বাবার এমন নির্মম অবস্থা দেখে ইউভির বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। ইউভি দুই হাত দিয়ে রুয়ানাকে মমতার সাথে আগলে নেয়। এতক্ষন লোকজন দেখেছিলো এক পাগল প্রেমীকের আর্ত চিৎকার। আর এখন দেখছে এক সন্তানের বুক ফাটা আর্তনাদ।

— আমার আব্বু- আম্মু কষ্ট পাচ্ছে ভাইয়া। প্লিজ আমার আব্বু- আম্মুকে বের করে আনেন। আমার আব্বুর হার্টের সমস্যা এইসব ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না। আব্বু মাত্র সুস্থ হয়ে উঠেছে। আবার অসুস্থ হলে আব্বু খুব কষ্ট পাবে। প্লিজ কেউ আমার আব্বু- আম্মুকে বের করে আনো।
ইউভির ভাঙ্গা আওয়াজ,,
‘ তুমি সিউর আঙ্কেল – আন্টি ভিতরে আছে?
রুয়ানা ইউভির শার্ট খামচে ধরে বলে,,,
” আব্বু রুটিন অনুযায়ী এইসময় খবরের পেপার পড়ছে। আর আম্মু বিকেলের নাস্তা তৈরি করছে। কেউ সাহায্য করুন।

ইয়ানার জ্ঞান ফিরলে সে পিটপিট করে চোখ তোলে তাকায়। মাথায় ব্যাথা অনুভব হয়েই মাথা চেপে ধরে উঠে বসে। এক মুহূর্তের মধ্যে ভুলে যায় সব কিছু। পর মুহূর্তে ঘটনা মনে হতেই বেপোরোয়া হয়ে উঠে। সবার চোখ ভিজে যাওয়া বিষন্ন মুখটার দিকে এক পলক করে তাকায়। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে শরীরে ভালোভাবে উড়না জড়িয়ে নেয়। মাথা উড়না চেপে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায়। চোখের সামনে ভেসে উঠে ঝলসে যাওয়া বাড়িটা। চোখ ভিজে আসে। অশ্রুর স্রোত বয়ে যেতে থাকে। ইয়ানা একদম ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে যায়। রুয়ানা ইয়ানাকে দেখে ইউভির থেকে সরে এসে ইয়ানার বুকে হামলে পড়ে।

— আব্বু- আম্মুকে হারিয়ে ফেললাম আপু। আমাদের মাথার উপর থেকে ভালোবাসার হাত উঠে গেলো। মায়ের মমতা আর বাবার আদর্শ সব উঠে গেলো। আমরা এতিম হয়ে গেলাম আপু।
ইয়ানা নিরবে ফুঁপিয়ে উঠে। কাঁদতে চায় না মেয়েটা। অতিরিক্ত শোকে যেন পাথরের মত স্তব্দ হয়ে গিয়েছে।
ইয়ানা রুয়ানার মাথায় চুমু খেয়ে বলে,,
” আব্বু- আম্মুর লাশ বের করা হয়েছে রুই?
রুই দুই পাশে না বোধক মাথা নাড়ায়। ইয়ানার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। সবার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলে,,,

” আমার আব্বু- আম্মুর লাশ এখনও আগুনে পুড়া ঘরে কি করছে? এত ধোঁয়ার মধ্যে কেনো রেখেছেন এখনও? বের করা হয় নি কেনো?
মিরা নিম্ন আওয়াজে বলে,,,
” পুলিশের জন্য অপেক্ষা করছে।
ইয়ানা পুনরায় নিজ চোয়াল চেপে ধরে।
‘” জরুরি ভিত্তিতে পুলিশকে ঘটনা স্থলে দশ থেকে বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছাতে হয়। আর এইটাই প্রশাসনিক গাইডলাইন। তাহলে বাসার সাথে থানা থাকা সত্তেও পুলিশ আসতে এত কৃপনতা? জাহান্নামে যাক সব পুলিশ। আমি আমার বাবা- মাকে দেখতে চাই।
ইয়ানা সামনে এগিয়ে যায়। সবাই মানা করছে যাতে না যায়। কিন্তু ইয়ানার কানে সেসব কিছু ডুকছে না। পায়ে জুতা নেই। চুলগুলো অগুছালো হয়ে পড়ে আছে। অগুছালো চুলের উপর মাথায় উড়না দিয়ে রাখা। বাড়ির কাছা – কাছি আসতেই বুকটা মুচর দিয়ে উঠে। কত সব শৈশবের স্মৃতি ভেসে উঠে। এই ছোট জায়গায় আব্বুর সাথে কতবার ফুটবল খেলেছি। ইয়ানার বুক চিরে আবার ও কান্না করে উঠে। সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আর বিরবির করে বলতে থাকে,,

” কেনো চলে গেলে আব্বু? কেনো একা করে দিলে আম্মু? মাতৃহীন আর পিতৃহীন কি করে করে দিলে তোমরা? একবার ও ভাবো নি তোমরা চলে গেলে তোমাদের মেয়েদের কি হবে? তোমরা ছাড়া রক্তের বলতে তো আমাদের দুই বোনের কেউ নেই। কাউকে চিনি না। সব জানার পর ও একা রেখে কিভাবে চলে গেলে? এতটা স্বার্থপর কেনো হয়ে গেলে? আমি যে সহ্য করতে পারছি না। চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে পারছি না। আমি কাঁদলে ছোট্ট রুইটা মরে যাবে। সহ্য করতে পারবে না সব কিছু ।

ইয়ানা বির বির করতে করতে সবার নিষেধকে উপেক্ষা করে ঝলসে যাওয়া বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। পায়ে জুতা না থাকায় শক্ত বস্তুতে আঘাত লেগে রক্ত ক্ষরন হওয়া শুরু করে। নিজের আঘাত নিয়ে ও কোনো ভাবান্তর নেই। রুমে ডুকে বড় করে নিশ্বাস নেই। এইখানে লেগে আছে বাবা – মায়ের শরীরের ঘাণ, মায়ের মমতা আর বাবার ভালোবাসা। ইয়ানার বুক ফেটে আসে। ডিভানের দিকে তাকাতেই সেখানে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ে। পুরে যাওয়া একটা বডি শুইয়ে আছে। অর্ধেক সোফায় হেলান দেওয়া আর বাকি অর্ধেক মেঝেতে পা রাখে। কিন্তু এখন মাথাটা হেলে পড়ে আছে সোফার উপর। ইয়ানা ভয় পায় না। শান্ত চোখে তাকায় সেদিকে। পুরে যাওয়া হাতের আংটি দেখে হু হু করে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠে। এই আংটিটা আসাদ হোসেনের জন্মদিনে সে আর রুই টাকা জমিয়ে গিফট করেছিলো। পুরুষদের স্বর্ন পড়া হারাম জেনেও আসাদ হোসেন কোনোদিন এইটা খুলে নি। সেলিনা হোসেন, ইয়ানা আর রুই বার বার বলেছে খুলে ফেলার জন্য। কিন্তু আসাদ হোসেন নিজের সিদ্ধান্তে অটুট। যে জিনিস তার মেয়েরা একবার ভালোবেসে পড়িয়ে দিয়েছে সেটা দ্বিতীয়বার খুলার প্রশ্ন ওই আসে না। তিনি বলেছিলেন,,
“যেদিন আমার মৃত্যু হবে সেদিন এই আংটিটা যত্নে রেখে দিও।”

ইয়ানা নিজের চুল দুই হাতে খামছে ধরে। কিছুক্ষনের মধ্যে আব্বু বলে এক গগনবিধায়ী চিৎকার দিয়ে উঠে।
” তোমার আংটিটা তো যত্নে রাখব। কিন্তু তোমরা স্বর্থপরের মত আমাদের দুই বোনকে কেনো অযত্নে রেখে গেলে? এতটা পাষান কেনো হলে বলো?
ইয়ানা থামে। নিশ্বাস টানে বড় বড়। শরীর থেকে উড়না পড়ে যায়। বেবি পিন্ক কালারের জামাটায় কালো ছোপ ছোপ দাগ লেগে যায়। ইয়ানার আবারও চাপা আর্তনাদ —
— আব্বু তুমি না বলেছিলে রুইয়ের বিয়েতে তুমি পুরো ঢাকা শহর জানাতে চাও। তোমার তো আফসোস ছিলো আমার বিয়েতে অনুষ্ঠান করতে না পারায়। তাহলে রুইকে বিয়ে না দিয়ে, নিজের সপ্ন পুরন না করে কি করে চলে গেলে? আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে আব্বু? এতিম হয়ে কিভাবে বাঁচব? আমার বোনটাকে কিভাবে আগলে রাখব? বলো না আব্বু?

ইয়ানা ছুয়ে দিতে চায় তার বাবার দেহটাকে কিন্তু প্রচন্ড ভয়ে পিছিয়ে যায়। স্পর্শ করলে যদি বাবা ক্ষতস্থানে ব্যাথা পায়। যদি চামরা উঠে তার হাতে লেগে যায়!
ইয়ানা উঠে দাঁড়ায়। দরজা থেকে পুলিশের কন্ঠ ভেসে উঠে,,,
” আপনার এখানে আসা উচিত হয় নি মিসেস চৌধুরি। আগুনে অনেক জিনিস এখন ও ঝলঝল করছে। সেসব ধারা আপনি আঘাত প্রাপ্ত হতে পারতেন?
ইয়ানা কারোর কথা শুনে না। কে কি বলছে, কে কি না বলছে সেসবের কোনো ইয়াত্তা নেই। যেন তার কান স্তব্দ হয়ে গিয়েছে। পুলিশের পিছন পিছন রুয়ানা আসে। ডিভানের উপর অর্ধ পুড়ে যাওয়া লাশ দেখে ভয়ে চোখে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠে। ইউভি রুয়ানাকে বুকের মাঝে বাচ্চাদের মত আগলে নেয়। রুই কান্নায় ভাঙ্গা আওয়াজে বলে,,,

” ভাইয়া আমার আব্বু! আমার আব্বুর এমন কেনো হলো? এমন নির্মম কাহিনী সহ্য করতে পারছি না। আমার আব্বু- আম্মুকে ফিরিয়ে আনুন ভাইয়া।
ইউভির শান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
ভয়ে কেউ ভিতরে প্রবেশ করার সাহস করে নি এক মত্র ইয়ানা ছাড়া। রুয়ানা এসেছে কিন্তু এক বার তাকানোর পর আর দ্বিতীবার তাকাতে পারে নি।

ইয়ানার শরীরে উড়না নেই। যে মেয়ে জীবনে উড়না ছাড়া বের হয় না তার গায়ে আজ উড়না জড়ানো নেই। লম্বা চুলগুলো সব সামনে পড়ে আছে। ইয়ানা কিচেন রুমের সামনে গেলে আবার ও স্তব্দ হয়ে বসে পড়ে। মায়ের বিকৃত পুড়া লাশ। স্বর্নের দুইটা চিকন চুরি, কানের ধুল, হাতে স্বর্নের আংটি গুলো কালচে জায়গায় চিকচিক করছে। গলার চেইনটা পুড়া গলে যাওয়া মাংশের নিচে পড়ে যায়। তবুও সোনালি কালারটা চিক করে উঠে। ইয়ানার একটু ও ভয় করছে না এমন বিকৃত পুড়া চেহারা আর বডি দেখে। যেন অনুভুতি শূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশ সহ সবাই ইয়ানার কান্ডে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তাদের চাকরি সূত্রে এই প্রথম কোনো মেয়েকে দেখেছে ভয় না পেয়ে বাবা – মায়ের কাছে এগিয়ে যেতে। এমন পুড়ে যাওয়া লাশের দিকে তো ভালোভাবে পুলিশ ও তাকাতে পারে না। ভয়ে পর মুহূর্তে আৎকে উঠে। ইয়ানা সেলিনা হোসের কাছে পা ভাঁজ করে মেঝেতে বসে বলে,,,

” আম্মু তুমি ও আব্বুর মত স্বার্থপর হয়ে গেলে? বলা হয় মায়েরা যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে নিজে তীরের আঘাত সহ্য করে কিন্তু সন্তানের উপর আচ আসতে দেয় না।
কিন্তু তুমি তো স্বর্থপরের মত যুদ্ধের ময়দানে একা রেখে চলে গেলে। কে বাঁচাবে আমাদের? যদি যুদ্ধে আমরা ক্ষত – বিক্ষত হয়ে যায় তখন কান্না করলে ও কিন্তু আমাদের ফিরে পাবে না। তাই বলছি উঠে পড়ো। আর আমাদেরকে শাষন করো। উঠবে না তাই না? স্বার্থপর কেনো হচ্ছো আম্মু? তোমার মেয়ে তোমাকে ডাকছে। আব্বু না হয় আমাদের বুঝল না কিন্তু তুমি কেনো পালিয়ে যাচ্ছো? রুইকে বিয়ে দিতে হবে, তোমাদের ছাড়া আমি তাকে কিভাবে আগলে রাখব?

ইয়ানা ফুঁপিয়ে উঠে। ভিতরে রক্ত কণিকাগুলো টগবগিয়ে উঠছে। কষ্টে ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে।
আকস্মিক চারদিকে নিস্তব্দতা বিরাজ করে। ইয়ানার কান্নার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। চারদিকে এক ভারী বাতাস ভয়ে যায়। পিনপিন নিরবতার মধ্যে কেউ ইয়ানার কাঁধে হাত রাখে। ইয়ানা অশ্রু নয়নে সেদিকে তাকায়। চোখের সামনে সেই ঘৃনিত ব্যক্তিগত পুরুষটিকে দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারে নি। মেঝে থেকে উঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার বুকে। সে তো এতক্ষন এই বুকটার অভাবেই মন খুলে কাঁদতে পারছিলো না। জড়িয়ে ধরে চোখের পানি বিসর্জন দিতে পারছিলো না। ইয়ানা অগ্নির বুকে মুখ ঠেকিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে উচ্চস্বরে কঁদে উঠে।
অগ্নির শার্টে শক্ত করে চেপে চিৎকার দিয়ে উঠে,

” আমার আব্বু- আম্মুর সাথে এমন কেনো হলো মি, চৌধুরি? কেনো তারা এত নির্মম মৃত্যুর স্বীকার হলো?
অগ্নির মুখে গম্ভীরতা। সে কি ইয়ানার কান্নাতে রাগ করেছে? নাহহ সেটা বুঝার উপায় নেই। তবে কর্কশ আর ভারী আওয়াজ দিয়ে বলে,,
” কান্না থামাও ইয়ানা। কাঁদলে সব ফিরে আসবে না। আমার সাথে শত্রুতা করে যারা তোমার বাবা – মাকে আগুনে পুড়িয়েছে। যতটা নির্মম মৃত্যু দিয়েছে তার থেকে হাজার হজার গুন কষ্টে তারা মরবে। আজ তাদের আনন্দ মূহুর্ত কিন্তু কাল সূর্যটায় দেখতে পাবে না।

অগ্নির কঠিন কথায় ইয়ানা থমকে যায়। উনার সাথে শত্রুতা করে আজ তার বাবা – মায়ের বলি দিলো। কি অন্যায় করেছে আমার বাবা – মা। তাদের মেয়ে অগ্নি চৌধুরি বউ শুধুমাত্র সে জন্য? তাই বলে নরপশুগুলো আমার বাবা- মাকে বলির পাঠা বানাবে? আমাকে মেরে ফেলত। কারন উনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তো আমি। তাহলে আমার আব্বু – আম্মুকে কেনো মেরেছে ওরা?
অগ্নি — এখানে থাকাটা তোমার জন্য ঠিক নয়। চলো আমার সাথে। আর যাতে কাঁদতে না দেখি। এক ফোঁটা চোখের পানি পড়লে..
অগ্নির বাক্যটা ইয়ানা আর শেষ করতে দেয় নি।
ইয়ানার ভাঙ্গা কান্না মিশ্রিত স্বর….

” আপনাকে ছাড়া যাতে আর কারোর জন্য না কাঁদি তাই তো? বাবা – মাকে হারিয়ে কাঁদব না বলছেন ? যখন আমার মা দশ মাস গর্ভে রেখেছিলো তখন কোথায় ছিলেন আপনি? যখন আমার বাবা আমাকে আঙ্গুলে ধরে হাটতে শিখিয়েছে তখন কোথায় ছিলেন আপনি? যে ব্যক্তি দুজন আমাকে বড় করেছে, জন্ম দিয়েছে তাদের মৃত্যুতে চোখের পানি না আসলে আমি কেমন মেয়ে? কেমন সন্তান? আপনার মত পাথরে গড়ে উঠিনি আমি। আপনি আমার বর্তমান আর ভবিষ্যত। কিন্তু তারা আমার অতীত আর বর্তমান। ওদের এমন নির্মম অবস্থায় ব্যথিত না হলে আর কার জন্য ব্যাথিত হব অগ্নি চৌধুরি?

ইয়ানা অগ্নির বুকে মুখ গুঁজে চিৎকার দিয়ে উঠে। কিন্ত পর মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,
” আমার জীবনটা এমন কেনো ছন্নছাড়া হয়ে গেলো? একটা ধ্বাক্কা না সামলাতেই আরেকটা ধাক্কায় হুমড়ি খেয়ে পড়ি। এতটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি যে উঠে দাড়ানোর শক্তি পায় না। চারদিকে শুধু অন্ধকার। আমি কোথায়? আমার গন্তব্য কোথায়? বাবা – মা হীনা এতিম হয়ে গেলাম। কেনো জড়িয়েছিলেন আপনার সাথে আমাকে অগ্নি চৌধুরি। আপনার শত্রুরা আমার বাবা – মাকে বাঁচতে দিলো না। আমি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়লাম। আজ কেউ নেই আমার। মাথার উপর ভরসার হাত নেই। আপনার সাথে আমার শারিরীক মিলন হয়েছে ঠিক কিন্তু মানসিক মিলন হলো না। শারীরিক আলিঙ্গন হলো কিন্তু মানসিক আলিঙ্গনটাই হলো না। একটা সংসার হলো না। এতটা.. এতটা অসহায় আমি কিভাবে হয়ে পড়লাম। আমাদের কে…

আর বলতে পারে নি ইয়ানা পুনরায় জ্ঞান হারিয়ে অগ্নির বুকে ঢলে পড়ে। ইয়ানা শক্ত হাতে ইয়ানাকে নিজের সাথে চেপে ধরে। পাজা কোলে নিয়ে পুলিশদের ইশারা করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ইউভির দিকে তাকিয়ে বলে,,
” রুয়ানার দায়িত্ব এখন তর হাতে ইউভি। রুয়ানাকে নিয়ে চৌধুরি বাড়িতে ফিরে যা। খুব দ্রুত কানাডায় ব্যাক করব।
ইউভি মাথা নাড়ায়। রুয়ানা জ্ঞান হারিয়েছে অনেক আগেই। ইউভি ইচ্ছে করে সজ্ঞানে করে নি। জ্ঞান ফিরলে আবার কান্না- কাটি করবে। ইউভি রুয়ানাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। রুয়ানার মাথাটা নিজের উড়ুর উপর রাখে। কান্নায় লাল হয়ে যাওয়া বিষন্ন মুখটার দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। চুমু দিতে গিয়েও আটকে যায়।

বারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে কাঠের কাউন্টার, যার পেছনে দীর্ঘদেহী বারটেন্ডার নিঃশব্দে মদ ঢালে। তাদের চোখে কোনো রকম ভয় কাজ করে না। লাইটগুলোর নিচে আধো আলোয় চকচক করে পড়ে থাকা গ্লাসে প্রতিফলিত হয় অপরাধের গল্প। বারের দুইটা স্টিলের চেয়ারে দুইজন ব্যক্তি বসে আছে। মুখে পৈশাচিক আনন্দ। আজ তাদের জন্য এক উৎসবের দিন। সামনে অর্ধ নগ্ন নাচনেওয়ালীরা নাচ করছে। আর একটু পর পর এসে দুইজন ব্যক্তির সাথে অশ্লিল কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। কেউ কেউ নাচতে নাচতে চুম্বনে আলিঙ্গন করছে। দুইজন ব্যক্তি খুশিতে আত্নহারা হয়ে মদ্যপান করেই যাচ্ছে। আর নাচনাওয়ালীদের সাথে অশ্লিলতায় লিপ্ত হচ্ছে। অগ্নি চৌধুরিকে সামান্য ভাঙতে পেরেছে এর চেয়ে আনন্দের কিছুই নেই। ছদ্দবেশ সেজে দেখে এসেছে অগ্নি চৌধুরির বউয়ের করুন অবস্থা। নিজ চোখে দেখেছে আজ অগ্নি চৌধুরি বউয়ের আবেদনময়ী চেহারা আর সৌন্দর্য। শুধু এই কষ্ট টা নিজ চোখে দেখার জন্য কানাডা থেকে বাংলাদেশে এসেছে আলবার্ট।
আলবার্ট মদ গিলে সামনের ব্যক্তিটার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” অগ্নি চৌধুরির বউ এত সুন্দর আগে জানতাম না। উফফফ চোখ ঝলসে দিয়েছে। এত সুন্দরী আর মায়াবী মুখ আগে কখনো দেখিনি। এই জন্য অগ্নি চৌধুরি এত আসক্ত।
সামনের ব্যক্তি উচ্চস্বরে হেসে বলে,,
” আমার আর তোমার মন মিলে গেলো আলবার্ট। আমি তো পারি না গিয়ে জড়িয়ে ধরি। মাইয়া চোখে একদম আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কি স্লিম বডি আর চেহারা। উফফ পুরাই আগুন আলবার্ট। যদি বিয়ে করতে পারতাম তাহলে রানী করে রাখতাম। শালীর সাথে আগে কেন দেখা হলো না সেটাই ভেবে পায় না।
আলবার্ট — নিজেকে সামলেও রায়হান। এই মেয়ের সৌন্দের্যে ঘায়েল হয়ে পড়ছি ধীরে ধীরে। এমন হলে কিন্তু নিজেদের কজে সফল হব না। এখন পরের টার্গেট হলো অগ্নির বাপ আর মা। কিভাবে জানলা এইটা অগ্নির শশুর বাড়ি আর চৌধুরি ভিলা হচ্ছে অগ্নির বাবা – মায়ের? সচারচর এইটা কেউ জানে না।
রায়ন বিকৃত হাসি দিয়ে বলে,,

” অগ্নির প্রেমিকা দেখিয়েছে। শালী পুরুটাই বলদ। আমার সাথে হাত মিলিয়ে বলছে অগ্নি আর তার বউকে আলাদা করতে। কিন্তু শালী এইটা জানে না আমি চাই অগ্নির ধ্বংস। আমিও হাত মিলাইলাম। তলে তলে অগ্নিরে ধ্বংসের কাজে মেতে উঠতে তোমার দেখা পেয়ে গেলাম। এরপর
দুইজন হাত মিলাইলাম। এখন শুরু হলো প্রথম খেলা। অগ্নি ক্ষেপা সিংহ হয়ে আছ আলবার্ট। আবার ও সতর্ক দিচ্ছি সাবধানে থেকো। বাংলাদেশে যে আছি সেটা যাতে কোনো মতে অগ্নি জানতে না পারে।
আলবার্ট বাকা হাসি দিয়ে হ্যা জানায়। রায়হান টলতে টলতে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষন পর আলবার্ট একটা মেয়ের সাথে চুম্বনে লিপ্ত হতে যাবে এমন সময় সামনে কালো হুডিতে কারোর অবয়ব দেখে আতকে উঠে। ভয়ে মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। নিজে দুই পা তুলে চেয়ারে উঠে বসে। ধীরে ধীরে অবয়বটি তার একদম কাছে এসে দাঁড়ায়। আলবার্ট চোখ কচলে আবারও দেখে নেয়। পরমুহূর্তে গলায় সূচের আঘাত পেয়ে চিৎকার দিকে গলা চেপে ধরে। হুডি পড়া লোকটির ব্রাউন চোখগুলো এক পলক দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে। নাচে – গানে মেতে উঠা বারটা কিছু মুহূর্তেই স্তব্দ হয়ে যায়। আশে – পাশে কেউ নেই। একদম নির্জন।

রাত একটা দশ মিনিট। ঘড়ির কাটা টিক টিক করছে। ইয়ানা নামাজের বিছানায় বসে হাটুতে মুখ গুঁজে কান্না করে যাচ্ছে। এমন সময় দরজা খুলার শব্দে সেদিকে তাকায়। কালো হুডি পড়া অগ্নিকে দেখে কপাল ভাঁজ প্রখর হয় । অগ্নি সোজা ইয়ানার কাছে আসে। এরপর ইয়ানার বাহু ধরে বলে,
” নামাজ পড়া শেষ?
ইয়ানা মাথা ব্যাথার জন্য কথা বলতে পারছে না। চোখ- মুখ অসম্ভব রকম ফুলে আছে। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। অতিরিক্ত কান্নায় গলার আওয়াজ ভেঙ্গে গিয়েছে।
ইয়ানা — হ্যা।
অগ্নি আর অপেক্ষা করে নি। হুট করে ইয়ানাকে কোলে তোলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বেরিয়ে যায় লিভিং রুম থেকে। ইয়ানা উচ্চস্বরে কিছু বলতে ও পারছে না গলা এমন হয়ে যাওয়ার কারনে। বার বার জিজ্ঞাসা করছে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? প্রতিটা প্রশ্নেই অগ্নি নিশ্চুপ।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫১

ইয়ানাকে অগ্নি গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়ে। ইয়ানা গাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ছটফট করে উঠে। গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে পড়তে নিবে এমন সময় অগ্নি ইয়ানাকে হেচকা টানে পুনরায় সিটে বসিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর একটা হ্যান্ডকাফ দিয়ে হাত বেঁধে দেয়। নিজে গম্ভীর হয়ে বসে গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রাখে।
ইয়ানা — পাগল হয়ে গিয়েছেন? রাত একটার সময় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? পাগলামি না করে বাড়িতে দিয়ে আসুন।
ইয়ানার কোনো কথায় অগ্নি উত্তর দেয় নি। যেন কথা কানেই প্রবেশ করে নি। গম্ভীর আর নিস্তব্দ হয়ে বসে আছে। দৃষ্টি হুডির আড়ালে বুঝা মুশকিল। গাড়ি শাঁ শাঁ করে গন্তব্যে এগিয়ে যেতে থাকে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৩