অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৬

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৬
লিজা মনি

প্রাইভেট জেট দিয়ে কানাডায় এসে পৌঁছায় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। সুমু রায়ানের সাথে রায়ানের বাড়িতে উঠেছে। বাড়িটা যেমন সুন্দর তেমন সুন্দর চারপাশের পরিবেশ। তার অনেক পছন্দ হয়েছে বাড়িটা। বাড়িতে একজন ষাট বছরের হবে এমন একজন কাজের মহিলা আছে। আর বাহিরে কয়েকজন ব্যক্তিকে দেখেছিলো। হয়ত অন্য কোনো কাজে আছে এখানে। একজন মানুষ থেকেছে তার এতজন ব্যক্তির কি প্রয়োজন ছিলো? রায়ান সুমুকে রুমে দিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে সাথে সাথে বেরিয়ে যায়। সুমু বিছানার মধ্যে গিয়ে গোল হয়ে বসে। চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে আর মুগ্ধ হচ্ছে। দেয়ালে ঝুলানো তার কিছু ছবি।

সুমু অবাক হয় প্রচুর ছবিগুলো দেখে। সে বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে পা রেখে দাঁড়ায়। ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে তব্দা লেগে যায়। কখনো কফিশপে কফিতে চুমুক দেওয়া ছবি, কখনো রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিরক্তি নিয়ে চুল ঠিক করা ছবি, কখনো রেগে কোমরে হাত দিয়ে কোথাও তাকিয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে দুর থেকে আড়ালে তুলা হয়েছে। সুমু নিশ্বাস ছাড়ে রায়ানের পাগলামো দেখে। রায়ান কি আমাকে সত্যি ভালোবাসে? যারা এত এত অন্যায় করতে পারে তারা কি সত্যি কোনো মেয়েকে ভালোবাসতে পারে? এইটা কি সাময়িক ভালোবাসা নাকি চিরস্থায়ী? সুমু ভাবুক হয়ে পুনরায় বিছানায় বসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এইটাই তার এক মাত্র ঠিকানা। তার স্বামীর বাড়ি! মাকে রেখে দেশ ছেড়ে বিদেশ এসে থাকতে হচ্ছে। আচ্ছা রায়ান কোনোদিন আমাকে ঠকাবে না তো? আমি ইয়ানার মত এত শক্ত আর কঠোর নয়। সে যেভাবে অগ্নি চৌধুরিকে হ্যান্ডেল করছে শান্তভাবে। যেভাবে সঠিক রাস্তায় ফিরিয়ে আনার জন্য সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করছে সেটা হয়ত আমি কোনোদিন পারব না। তর কাছে অনেক কিছু শিখার আছে ইয়ানা। যেভাবে তুই এমন একটা পরিস্থিতিতে এতটা শান্ত হয়ে বসে আছিস সেটা কয়জনে পারে? কয়জনে ধৈর্য ধরে নিজের স্বামীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ত্যাগ করে। আমি নিজেও কোনোদিন পারতাম না। সুমু পানির গ্লাস নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়। এরপর পানি খাওয়ার জন্য গ্লাস হাতে নিতেই কেউ একজন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। সুমু ভয়ে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে। গ্লাসের পানি সবটা পড়ে রায়ানের উপর। সুমুকে চেঁচাতে দেখে রায়ান থতমত খেয়ে যায়।
সুমুর ঠোঁট আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে মৃদু আওয়াজে বলে,,

” চেঁচাচ্ছো কেনো এইভাবে?
রায়ানের কন্ঠ আর স্পর্শ পেয়ে সুমু পিটপিট করে চোখ খোলে। রায়ানকে চোখের সামনে দেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। রায়ান নিজের আঙ্গুল নামিয়ে আনে।
— ওহহ আপনি? এইভাবে হুট করে চলে আসাতে ভয় পেয়ে গিয়েছালাম?
পর মুহূর্তে রায়ানের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। আশ্চর্য কন্ঠে বলে,,,
” ভিজেছেন কিভাবে?
রায়ান — বউ আদর করে পানি ঢেলে দিয়েছে।
রায়ানের কথায় সুমু চুপসে যায়। মনে পড়ে তার হাতে পানির গ্লাস ছিলো। যেটা রায়ানের উপর গিয়ে পড়ে। সুমু অপরাধসূচক মাথা নিচু করে বলে,

” সরি! আমি বুঝতে পারি নি। কষ্ট করে চেইঞ্জ করে নিন। কিছু মনে করবেন না।
রায়ান কিছুক্ষন সুমুর দিকে তাকিয়ে গম্ভী বাঁকা হেসে বলে,
” কেনো কিছু মনে করব না? অবশ্যয় মনে করেছি।
সুমু রায়ানের স্বীকার উক্তিতে বলে,,
” সামান্য পানি ওইত পড়েছে। এইভাবে বলছন কেনো?
রায়ান — তুমি নিজে পানি ফেলে নিজেই অনেক কিছু মনে করছো। সেখানে আমার শরীরে পড়েছে আমি মনে করব না ?
সুমু ছোট ছোট চোখ করে রায়ানের দিকে তাকায়। রায়ান দুষ্টু হেসে এক ভ্রুঁ নাচিয়ে সুমুকে ইশারা করে।
সুমু কপালের ভাঁজ প্রখর করে আদেশ সুরে বলে,
” মজা না করে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
রায়ান — কেমন লাগলো নিজের স্বামীর বাড়ি?

রায়ানের হঠাৎ প্রশ্নে সুমু সিটিয়ে যায়। কেনো জানি অজানা কারনে লজ্জা লাগছে। এই বাড়িটা স্বামীর বাড়ি! ভাবতেই বউ বউ একটা ফিল আসছে। সে ও কারো বউ! সুমুকে এমন লজ্জা পেতে দেখে রায়ান বলে,,
” যাক বাবা, কি এমন বললাম যে তুমি নতুন বউয়ের মত লজ্জা পাচ্ছো। শুধু বাসরটা হয় নি দেখে নাহলে তোমার কোলে সরি তোমার পেটে এতদিনে আমার বাচ্চা থাকত।
সুমু চোখ বড় বড় করে ফেলে। রায়ানের দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। রায়ান বরাবর তার কাছে গম্ভীর আর রাগী একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু কখনো এমন নির্লজ্জ কথা তার সামনে বলে নি। সুমুর অস্বস্তিতে পুরো শরীর কাঁপা শুরু করে দেয়। কি বলছে এইসব উনি ? উনি কি সেই রায়ান যাকে সেদিন জুতা দিয়ে ঢিল ছুঁড়েছিলাম। এই লোক এমন নির্লজ্জ হলো কবে? সুমুকে হাঁশফাঁশ করতে দেখে রায়ান হেসে পুনরায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুমুর কঠোর কন্ঠ,

” ছিহহহ! কিসব নির্লজ্জ কথা বলা শুরু করেছেন আপনি? আর কিছু বলবেন না প্লিজ ।
— বলব না বাট করব?
সুমু থতমত খেয়ে বলে,
” কি করবেন?
রায়ান — অনেক কিছু। যা যা এতদিন অসামপ্ত ছিলো সেই সব। দেখো সুমু তোমাকে একটা কথা বলি, অগ্নির ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চাই। অথবা অগ্নির মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিতে চাই। এখন পরিচর্যা যদি না করি ফসল আসবে কোথা থেকে বলো। তবে চিন্তা কিরো না তুমি চিৎকার করলেও কেউ শুনবে না। এইটা সাউন্ড প্রুফ রুম।
রায়ানের প্রতিটা বাক্যে সুমুর বুক ধুক ধুক করে উঠছে। পানির পিপাসায় বিষম খেয়ে উঠে। এইসব কথা সহ্য করা যায় নাকি। সুমুকে বিষম খেতে দেখে রায়ান পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। সুমু পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে দাঁত চেপে বলে,

” আর যদি আর একটা বেহায়া কথা বের হয় তাহলে আপনাকে আমি গন পিটানি খাওয়াব।
রায়ান সুমুর কথায় হেসে বলে,,
” সরি বউ। এখানে সারাদিন চিৎকার করলেও কেউ আসবে না। সাউন্ড প্রুফ !
সুমু কাঁদো – কাঁদো ফেইস নিয়ে বলে,
” ভয় কেনো দেখাচ্ছেন এইভাবে?
সুমুকে ভড়কে যেতে দেখে রায়ান আর কোনো দুষ্টামি করে না। সামান্য কথায় যেভাবে কাঁপছে, আরেকটু লোড দিলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে ।

ইয়ানা রাতের নিস্তব্দতা ভেদ করে সুইমিংপুলের এখানে বসে। চারদিকে আলোতে আলোকিত পুরো এড়িয়া। ঝলমল করছে বাড়ির চারদিকে। রাতের অন্ধকার বুঝা মুশকিল। ইয়ানা নীল চকচক পানিতে পা ভিজিয়ে বসে। ঠান্ডা পানির স্পর্শে যেন পুরো শরীরে বিদ্যুৎ চমকে যায়। সে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয়। সে যেন অনুভুতিহীন পাথরে পরিনত হওয়া এক রমনী। বার বার পা ভিজাচ্ছে আর ভিবিন্ন কিছু নিয়ে ভাবনায় মগ্ন। চোখে – মুখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। শক্ত হয়ে উঠেছে চোয়াল। শ্বাস নিচ্ছে ঘন ঘন অনাকাঙ্খিত কোনো এক কারনে। রাগ হচ্ছে, জেদ জন্মাচ্ছে ভিতরে। ইচ্ছে করছে সব ধ্বংস করে দিতে, পুড়িয়ে দিতে অট্টালিকা। পাপ, বিরোধ, সংঘর্ষ থামিয়ে দিতে যাস্ট একটা ছুঁরির স্পর্শে। কিন্তু নিরুপায় হয়ে আছে। নিয়তি, ভাগ্য, মস্তিষ্কের কাছে। আর সবচেয়ে বড় নিরুপায় অস্ত্র একজন মায়ের কাছে। এক মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তার সন্তানকে উনার কোলে ফিরিয়ে দিবে। ছন্নছাড়া জীবন থেকে একজন সাংসারীক করে তুলবে। অসামাজিকতা থেকে সামাজিক জীবন দিবে। কিন্তু… কিন্তু আমি নিজেইতো হাঁপিয়ে উঠছি বার বার। হারিয়ে ফেললাম আমার গন্তব্য! নিজের বাবা – মা, বিশ্বাস সব বলিদান দিলাম। কি করে আর সহ্য করব এত অনৈতিক জীবন কঠোরতা । যুদ্ধ তার সাথে করে সফল হওয়া যায় যার সম্পর্কে সব কিছু ধারনা আছে। কিন্তু আমি আপনাকে কতটুকু চিনি অগ্নি চৌধুরি? আমি এখনও আপনাকে ভালোভাবে চিনি না। আপনি দেখান এক এরপর মুখোশ খুলে বের হন আরেক ! ইয়ানা ভাবছে আর অস্থির হয়ে পড়ছে। হঠাৎ কারোর কর্কশ কন্ঠে সামান্য কেঁপে উঠে।

— এই রাতে সুইমিংপুলে কি করছো?
ইয়ানা নিজেকে সামলে নিয়ে পিছন তাকিয়ে বলে,
” কেনো এইবার ও কি না পেয়ে ভন্ডামি শুরু করেছিলেন?
অগ্নি দাঁত পিষে বলে,
” আমার চিন্তাকে তোমার ভন্ডামি মনে হয় ইডিয়েট। এত রাতে এইখানে কি করছো?
–আপনার অট্টালিকার বাতাস নিজের শরীরে লাগাচ্ছিলাম। কিন্তু কেনো জানি ভিষন জ্বালা করছে।
ইয়ানার কথায় অগ্নি বাঁকা হাসে। এরপর চারদিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে,,
” শরীরের সাথে বাতাসটা মানিয়ে নিচ্ছো না কেনো? মানিয়ে নিলে আজ জ্বালা করত না। রুমে আসো।
— হাওয়া লাগাতে দিন।
— প্রয়োজন নেই। রুমে আসো।
— এত বেপোরোয়া কেনো হচ্ছেন?
— কাজ আছে।
— নির্লজ্জ, অসভ্য লোক! উন্মাদ নেকড়ে!

ইয়ানার বিরবির করা প্রতিটা বাক্য কর্নপাত হতেই কপাল কুচকে ফেলে। এরপর ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,
” তোমার মন তো দেখছি আজ – কাল আমার থেকেও বেশি নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে। ডেকেছি ভিতরে যাওয়ার জন্য আর তুমি তো দেখছি ফরজ শাওয়ার নেওয়ার কাহিনী ভেবে নিয়েছো।
ইয়ানা — আমি আপনার মত নির্লজ্জ নয়। বিশ্বাস আছে নাকি আপনার উপর?
অগ্নি বাঁকা হেসে বলে,
” আমাকে অবিশ্বাস করে কি সুইমিংপুলে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করছো নাকি? আমি তোমাকে আগেই বলেছি জান, আমি আর তুমি যদি একসাথে থাকি সেখানে স্থান আমার কাছে ম্যাটার না। হোক সেটা সুইমিংপুল, আফ্রিকার গহীন জঙ্গল, সাত তবক জমিনের নিচে, সমুদ্রের তলদেশে! কি আসে যায় তাতে আমার। কিন্তু কথা হচ্ছে যেসব জায়গার নাম আমি বলেছি সেখানে যাওয়া সম্ভব না। নাহলে সব জায়গাতেই একবার একবার করে ট্রাই করতাম।
ইয়ানা — আপনার তো ক্ষমতার অভাব নেই। পারলে ক্ষমতা দেখিয়ে ট্রাই করতে পারেন।
অগ্নি — তোমার অনুভব দেখছি আমার থেকেও প্রখর। বললেই পারো সেসব জায়গায় আমার সাথে রোমান্স করতে চাও।
ইয়ানা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,

” সব কিছুতে নেগেটিভ চিন্তা – ভাবনা।
অগ্নি — আসি পজেটিভ হয়ে আসি বাট তোমার সান্নিধ্য পেলে নেগেটিভে রুপান্তর হয়ে যায়।
ইয়ানা কিছুক্ষন চুপ থেকে শান্ত কন্ঠে বলে,,
” আমাকে আপনার টর্চার সেলে নিয়ে যাবেন? যেখানে বাচ্চা আর মেয়েগুলোকে আটকে রাখা হয়।
ইয়ানার কথা বলার সাথে সাথে অগ্নি সোজা হয়ে দাঁড়ায়। দাঁত কটমট করে শ্বাস টেনে বলে,,
” প্রয়োজন নেই ওইখানে যাওয়ার।
ইয়ানা কাতর কন্ঠে বলে,,
” প্লিজ! একবার দেখতে চাই সেই নিষ্পাপ গুলোকে।
অগ্নি — আমি এইসবে সরাসরি যুক্ত নয় ইয়ানা। আর আমি কখনো সেই কক্ষে পা রাখি না।
ইয়ানা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,

” কি আজব কথা আপনার অগ্নি চৌধুরি। আপনার টর্চার সেলে সব হয় অথচ আপনি বলেন আপনি সেসবে সরাসরি যুক্ত নন। আপনি অনুমতি দেন অথচ আপনি বলছেন সরাসরি যুক্ত নন। আপনি টাকার অংশ নেন অথচ আপনি বলছেন সরাসরি যুক্ত নন। সরাসরি যুক্ত কোনটাকে বলে বলোন তো? যে খুন করে নাকি যে খুন করার আদেশ দেয়?
অগ্নির চেহারা কঠোর হয়। রুক্ষ হয়ে উঠে তার মেজাজ। তবুও নিজেকে শান্ত করে বলে,,
” কাজ এইটা আমার। রাজাকে সকল প্রজার কাজকে মেনে চলতে হয়।
ইয়ানা — আর রাজা ন্যায় পরায়ন হয়। ন্যায় বিচার করেন। যারা অতিরিক্ত পাপ করে তাদের শাস্তি দিয়ে থাকেন।
ইয়ানার কথায় ইয়ানা হুট করে গম্বীর হেসে উঠে। তবে সেটা মোটেও প্রানবন্ত হাসি নয়। এক ভয়ানক কর্কশ আর গম্ভীর। অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,

” আমি সেই রাজা নয় যে ন্যায় পরায়ন হব। আমি তো নিজেই অন্ধকারে ডেকে যাওয়া ব্যক্তি। সেখানে অন্যকে যদি বলি তোমরা এইসব করো না। তোমার কি মনে হয়, তারা মেনে নিবে? তারা হাসবে।
ইয়ানা– মানুষ ভাগ্যের চাপে খারাপ হয় কিন্তু আপনার মত জানোয়ার হয় না । একবার খুব ইচ্ছে করে আমার বুকটাকে কেটে আপনার সামনে নিয়ে আসতে। ভিতরের যেই জ্বালা সেটা এক নজর দেখাতে। প্লিজ সেসব পাপ ছেড়ে দিন। বাচ্চাদের বলি দেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করুন। মেয়েগুলোকে বাঁচান। অবৈধ ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসুন। গ্যাংস্টার হয়ে থাকুন কিন্তু সেসব বিশাল পাপ থেকে আড়াল হয়ে যান।
অগ্নি — পারব না।
ইয়ানা গলা শক্ত করে বলে ,
” আপনি পারবেন না, কিন্তু আমি তো পারব। আমি আপনাকে নিয়ে আসব।
অগ্নি কপাল ভাঁজ করে ইয়ানার সরল মুখটার দিকে তাকায়।

— কেনো এইসব ঘাটাঘাটি করছো?
— বউ হয়েছি তাই।
— বউ হয়েই থাকো। আগুনে ঝঁপ দিতে যেও না ইয়ানা।
— একটু দিতে চাই। যদি আমার ভালোবাসা সত্যি হয় তাহলে একদিন আপনি ফিরবেন সব কিছু থেকে। আর আমি আপনাকে ফিরাব।
— পারবে না। শুধু শুধু নিজের বিপদ কেনো ডেকে আনছো?
— অনেকটাই তো পেরেছি।
— ঠিক তত টুকু পেরেছো যা আমি পারতে দিয়েছি। অতিরিক্ত কিছু করো না ইয়ানা। আমার রাগের নিয়ন্ত্রন নেই। নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেললে তোমাকে আঘাত করতে ও আমি দুইবার ভাববো না। যুদ্ধ করা থেকে নিরত থাকো।
ইয়ানা– যুদ্ধ শত্রুপক্ষের সাথে করা হয়। নিজের সবচেয়ে কাছের ব্যক্তিটার সাথে যুদ্ধ কিভাবে করবো বলোন?
অগ্নি তীর্যক চোখে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর ধীর পায়ে এগিয়ে যায় তার কাছে। ইয়ানার সাথে ঘনিষ্ট হয়ে পুরো মুখে দৃষ্টি রেখে বলে,

” কি ঘুরছে তোমার মাথায়? কি করতে চাইছো তুমি?
— আপাযত আপনার টর্চার সেল দেখতে চাই।
অগ্নি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে শক্ত করে ইয়ানার বাহু চেপে ধরে। চোখ গুলো লাল হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। ইয়ানা নিজের বাহুর ব্যাথায় নিজেকে শক্ত করে রাখে। কিন্তু মুখে ব্যাথার কোনো রিয়্যাকশন নেই। তবে মনের ভিতরে প্রতিজ্ঞা করে লুকিয়ে হলেও আমি সেই নিষিদ্ধ জায়গায় পা রাখব। আপনাকে সামলাতে গেলে আগে আপনার সম্পর্কে সব জানতে হবে অগ্নি চৌধুরি। আর আমি সব উন্মুক্ত করব।

— এত জেদ কেনো তোমার? তোমাকে সবার আড়ালে রাখি বলে আজও অক্ষত হয়ে আছো। তোমার উপর যতটা বিপদ আসে প্রতটা বিপদের সম্মুখীন আমি হয়। শরীরে যতটা ক্ষত আছে সব থেকে বড় ক্ষত হচ্ছে তোমার ঘৃনা ভরা চাহনি ইয়ানা। যদি আমি আগের অগ্নি হতাম তাহলে সেই চাহনির কারনে তোমার ঠাঁই হত মাটির নিচে। মেরে ফেলে দিতাম একদম। আমার সামানে সামান্য গলা উচু করে কেউ কথা বলতে পারে না। তার বুক ছিন্ন – বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সেখানে তোমার প্রতিটা জেদ, প্রতিটা প্রশ্ন, তোমার প্রতিটা শব্দচায়ন, ঘৃনা আমি কোমলতা হিসেবে গ্রহন করি। একবার বাহিরে পা রাখো আমাকে ছাড়া দুই সেকেন্ড ও টিকবে না।
অগ্নির হাতের স্পর্শের গভিরতা এতটাই প্রখর ছিলো যে ব্যাথায় ইয়ানার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। ভাঙ্গা গলায় বলে,,

” সেজন্য ওইত বের হচ্ছি না। আপনার আশে- পাশেই থাকছি বার বার। এতটা বিরোধ আর যুদ্ধ কিন্তু আপনার কারনেই। আমার জীবনে আগে কিন্তু এইসব ছিলো না। ছিল না কোনো রকম জীবন- মৃত্যুর লড়াই।
ইয়ানা কথাটা বলে ধাক্কা দিয়ে অগ্নিকে সরাতে গিয়ে নিজেই টাল সামলাতে না পেরে পা পিছলে সুইমিং পুলের ভিতরে পরে যেতে নেয়। ইয়ানা প্রায় হেলে পরে সেদিকে। কিন্তু অগ্নি শক্ত করে হাত চেপে ধরে। অগ্নির মুখে বাঁকা হাসি। ইয়ানা ভয়ে বলে,,
‘ ছাড়বেন না প্লিজ। আমি পানিতে সাঁতার পারি না।
অগ্নি — পানি বেশি নয়। তোমার গলা বা তার উপরে হবে। সাঁতার না পারলেও সমস্যা নেই।
ইয়ানা মাথা দু দিকে নাড়িয়ে বলে,

” প্লিজ এমন শত্রুতা করবেন না। রাতে পানিতে ভিজলে আমার ঠান্ডা লেগে যাবে। আমাকে..
ইয়ানা আর বলতে পারে নি। অগ্নি হাত ছেড়ে দেয়। ইয়ানা গিয়ে সোজা পানিতে পড়ে। সামান্য পানি খেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কেঁশে উঠে। পানি খাওয়াতে চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। সব চুল মুখে এসে আছরে পড়ে। ইয়ানা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর অগ্নির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। অগ্নি হাটু ভেঙ্গে পুলের পাশে বসে বলে,
” এই মুহূর্তে তোমার মাথা ঠান্ডা করা প্রয়োজন ছিলো। যেসব পাগলামি করছিলে সেসব সমাপ্তির প্রয়োজন।
অগ্নি আরও বলতে যাবে তার আগেই ইয়ানা পা ধরে হেচকা টানে তাকে পুলের ভিতরে ফেলে দেয়। হঠাৎ এমন হওয়াতে অগ্নি নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। ইয়ানার সামান্য হেচকা টানে পিছলে পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে একদম ইয়ানার সামনে এসে দাঁড়ায়।
ইয়ানা অগ্নির দিকে পানি দিয়ে বলে,,

” প্রতিশোধ ! আপনার ও মাথা ঠান্ডার প্রয়োজন ছিলো। রেগে গিয়েছিলেন প্রচুর আমার কথা শুনে।
ইয়ানা একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে পানি থেকে উঠে যেতে নিবে কিন্তু অগ্নির বাহুতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। ইয়ানার টি- শার্ট ভেদ কোমর চেপে ধরে হেচকা টানে নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসে। ইয়ানা ভড়কে গিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি নেশালো চোখে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়ানা ছটফটিয়ে উঠে বলে,
” এইভাবে ধরে রেখেছেন কেনো? ছাড়ুন আমাকে। ঠান্ডা লাগছে মি, চৌধুরি।
— নেশা লেগে গিয়েছে জান। আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার আগে মাথায় রাখা উচিত ছিলো।
অগ্নির কথায় ইয়ানা ভয়ে শরীরে উড়নাটা ভালোভাবে জড়িয়ে নেয়। কিন্তু ভেজা উড়না সেরকম সফল হয় নি। অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে ইয়ানার শরীর থেকে উড়নাটা পানিতে ভাসিয়ে দেয়। ইয়ানা লজ্জায় কেঁপে উঠে। কি করে বাঁচবে এখন?
ইয়ানা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,

” গার্ডরা দেখবে। ছাড়ুন আমাকে।
অগ্নি ইয়ানার কানের কাছে নাক ঘেষতে ঘেষতে হিসহিসিয়ে বলে,
” এইটা আমার পার্সোনাল এড়িয়া। এখানে কোনো গার্ডদের নজর নেই। তাদের সাহস ও নেই এক পলক তাকানোর। জানে একবার তাকালে দ্বিতীয়বার পৃথিবীটাই দেখতে পাবে না।
ইয়ানা — ছাড়ুন।
অগ্নি — উফফ ডিস্ট্রাব কেনো করছো?
ইয়ানা মুচরামুচরি শুরু করে। নেকড়ে! ইয়ানার ছটফট করার কারনে অগ্নি ভাসমান উড়নাটা খুঁজে এনে ইয়ানার হাত বেঁধে দেয় শক্তভাবে। ইয়ানা অপলক আর অসহায় চোখে তাকায় পুরুষটার দিকে। অগ্নি ইয়ানার ঠোঁট দুইটা আকড়ে ধরে। একদম নরম আর স্বাভাবিক ভাবে। ধীরে ধীরে রুপ নেয় উন্মাদনার। দন্তের ঘর্ষনে ইয়ানা চোখ বন্ধ করে ফেলে। অগ্নি ধীরে ধীরে ইয়ানার গলায় নেমে আসে।অগ্নির পাগলামো প্রতিবারের মতই সে হাঁপিয়ে উঠে।

মিরা সকালের মিষ্টি বাতাসে গুন গুন করে গান বলছে। সে এখনও কানাডায় যায় নি। মুলত শিখা চৌধুরি যেতে দেয় নি। অরিদ শাওয়ার শেষ করে মিরাকে দেখে বিরক্তিতে কপাল কুচকে ফেলে। এই মেয়ের মনে এত ফুর্তি কোথা থেকে আসে আল্লাহ ভালো জানে। মিরা অগ্নিকে দেখে কিছুক্ষন তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দেয়। এরপর কানের মধ্যে মোবাইল নিয়ে মিথ্যে ফোনের নাটক করে রুমে আসতে আসতে বলে,
” আরে জাওয়াদ ভাইয়া কেমন আছেন?
জাওয়াদ নামটা অরিদের কানে প্রবেশ করতেই অরিদ সেদিকে তাকায়। মিরা খিলখিল করে হাসার অভিনয় করে বলে,,
” উফফ জাওয়াদ ভাই আপনাকে সাদা শার্টে কি সুন্দর লাগছিলো বলে বুঝাতে পারব না। যে কোনো মেয়েই ক্রাশ খেত।

— কি যে বলেন না ভাইয়া আমি আপনার থেকে বেশি সুন্দর না। আমার দেখা সবচেয়ে হ্যান্ডসাম পুরুষ আপনি।
মিরা বাঁকা চোখ এক পলক অরিদের দিকে তাকায়। অরিদকে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সামান্য হাসে।
এরপর ধপাস করে ডিভানে বসে বলে,
” জাওয়াদ ভাইয়া আপনি কি ব্যবহার করেন ? এত সুন্দর কেনো আপনি? পুরাই হট! আপনাকে দেখলে চকলেট চকলেট ফিল আসে। আমি…

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৫

মিরা কথা শেষ হওয়ার আগেই মিরা ছটফটিয়ে উঠে। তার হাতের মোবাইলটা এখন অরিদের হাতে। অরিদ মোবাইলের দিকে না তাকিয়ে সজোরে মেঝেতে ফেলে দেয়। মোবাইলটা ডিভানের সাথে ধাক্কা খেয়ে দেয়ালে ধাক্কা খায়। চোখের সামনে শখের মোবাইলটার এই দশা দেখে মিরা প্রায় কেঁদে দেওয়ার মত অবস্থা। অরিদের দিকে মিরা তাকায়। অরিদ চোখ – মুখ শক্ত করে মিরাকে কিছু বলতে না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মিরা কিছুই বুঝল না। আরে ক্ষ্যাপা বাঘ একবার তো মোবাইলের স্ক্রিনে তাকাতে পারতি। তাহলে অন্তত বুঝতি আমি নাটক করছিলাম। শালা বান্দর! আমার মোবাইলটা ভেঙ্গে দিয়ে গেলো। মিরা মোবাইলের প্রতিটি অংশ সংগ্রহ করে। মোবাইলটার এই দশা দেখে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।
— আমি যদি আপনার মোবাইলের বারোটা না বাজাচ্ছি তাহলে আমার নামও মিরা নয়।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৭