অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২০
সাদিয়া শওকত বাবলি
তবে মুখে স্বীকার করল না। বরং বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল,
“তো কি হয়েছে? ওখানে যে কয়জন মানুষ আছে তারা একজনও কি বিয়ে ছাড়া, বাসর ছাড়া থাকতে পারবে? কারো আগে হবে আর কারো পরে। জিজ্ঞেস করে দেখো কেউ হয়তোবা ইতোমধ্যে কাজ সেড়েও ফেলেছে।”
ত্রয়ী চমকাল, ভরকাল। কান দুটো ঝা ঝা করে উঠল যেন। লজ্জায়, অস্বস্তিতে মাথাটা নুইয়ে এলো। ধপ করে কলটা কেটে দিল সে। এ কাকে সে লজ্জা দিতে চেয়েছিল? শীর্ষকে! অথচ ত্রয়ী ভুলেই গিয়েছিল শীর্ষ লজ্জা পায় না বরং লজ্জা দেয়। ইসসস, সে যদি আগেই কলটা কেটে দিতো তাহলে হয়তো এতটাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। ত্রয়ী আর কারো দিকে চোখ তুলে তাকানোর মতো সাহস পেল না। চুপচাপ মাথা নিচু করেই বসে রইল।
রাত বেড়েছে। ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে রাত বারোটা। তবে এত রাতেও আজ বাড়ির হইচই কমেনি। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। একটু আগেই কেবল ত্রয়ীর গায়ে হলুদ শেষ হয়েছে। হলুদের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মেয়েটা নিজ কক্ষে চলে গেলেও এখনো অনেকেই রয়ে গেছে স্টেজের কাছে। কেউ কেউ ছবি তুলছে, কেউ কেউ এখনো বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ত্রয়ী কক্ষে এসেই শরীরে জড়ানো শাড়িটা খুলে ফ্রেশ হয়ে নিল। সেই সন্ধ্যা থেকে এই শাড়ি, গহনা পড়ে থাকতে থাকতে মেয়েটা যেন হাঁপিয়ে উঠেছে। যাক সব খুলে এখন একটু শান্তি লাগছে। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো মেয়েটা। এরপর এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। আজ এ কক্ষে সে একা থাকবে না। তৃপ্তি এবং দুজন একটি মেয়ে থাকবে। বিয়ে বাড়িতে কানায় কানায় অতিথিদের দ্বারা পূর্ণ। ঘুমানোর জায়গার সংকট। তাই তার কক্ষে তিন চারজনের ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও তারা কেউ এখনো কক্ষে আসেনি। তবে আসবে। ত্রয়ী বিছানার এক পাশে ঘেঁষে শুয়ে পড়ল। হাতে নিল নিজের মোবাইলটি। পাওয়ার বাটন টিপে অন করতেই চোখে পড়ল শীর্ষের মেসেজ। এই লোক কি মেসেজ করেছে তাকে? ত্রয়ী ভ্রু কুঁচকে মেসেজের মধ্যে প্রবেশ করল। লেখা পেল,
“কাল সকালে রওনা করলে তোদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকাল। তারপরে আবার তোকে নিয়ে ফিরে আসতে আসতে রাত শেষ। আমি বাসর কখন করব? আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলি বেশ ভালো, ঢাকার কোথাও গিয়ে লুকাতি। যাতে সকালে গিয়ে দুপুরের মধ্যে তোকে নিয়ে আসতে পারতাম। অত দূরে গিয়ে লুকানোর কি দরকার ছিল?”
মেসেজটা পড়ে হাসলো ত্রয়ী। এই লোকই কিনা একদিন তাকে দেখতে পারতো না। উঠতে বসতে ধমক দিতো। সবসময় দূর দূর করতো। আর এখন কাছের আসার কত বাহানা, তাড়াতাড়ি কাছে আসার জন্য কতটা অধৈর্যপনা। ত্রয়ী খুব বেশি ভাবল না। এক প্রকার মজার ছলেই লিখলো,
“প্লেনে নিবেন আমাকে। প্লেনে নিলে কম সময় লাগবে।”
এরপরে আর অপেক্ষা করল না শীর্ষের উত্তরের। এই মুহূর্তে তার ঘুম পাচ্ছে ভীষণ। কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে। ত্রয়ী মোবাইলটা বালিশের পাশে রেখেই চোখ বন্ধ করল। অল্প সময়ের মধ্যেই পাড়ি জমাল ঘুমের রাজ্যে।
রাত্রির আঁধার কাটিয়ে সময়টা এখন প্রায় ভোরের দিকে। ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে রাত সাড়ে তিনটা কিংবা চারটা। রাত্রির এই ক্ষণেই শীর্ষরা রওনা দিয়ে দিয়েছে ত্রয়ীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। এখন রওনা দিলেও গিয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সেই দুপুর। ত্রয়ীর পাঠানো মেসেজটা শীর্ষ দেখেছিল তখনই। ত্রয়ী অবশ্য খারাপ কিছু বলেনি। প্লেনে গেলে বা আসলে সত্যিই অনেক কম সময় লাগে। আর আজকালকার অনেকেই নিজের বিয়ের বরযাত্রী ধারণ কিংবা বউ তুলে আনার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। চাইলে শীর্ষও এমনটা করতে পারতো। সে গরীব কিংবা অর্থ সংকট রয়েছে তেমন তো নয়।
তবে বিয়ের ক্ষেত্রে এই হেলিকপ্টার টপ্টর ভাড়া করা একটু বেশিই লোক দেখানো এবং অর্থের অপচয় মনে হয় শীর্ষের নিকট। তারপর আবার সেই হেলিকপ্টার নিয়ে কোথায় রাখবে, জায়গা ঠিক করতে হবে। শুধু শুধু ত্রয়ীর বাড়ির লোকদের উপর একটি বাড়তি ঝামেলা দেওয়া। এমনিই মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে তাদের কাজের শেষ নেই। তাই এই মাঝ রাতে নিজেদের গাড়ি করেই বরযাত্রী নিয়ে বেরিয়েছে শীর্ষরা। যদিও ফেরার জন্য শীর্ষের আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তাও শুধু শীর্ষ, ত্রয়ী এবং গুটি কয়েক মানুষকে নিয়ে।
দুপুরের সময়। সূর্যটা তার তেজ নিয়ে মাথার উপরে চলে এসেছে। লাল, নীল, হলুদ এবং সবুজ রঙা ঝাড়বাতি দ্বারা সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে ত্রয়ীদের বাড়িটা। যদিও এখন দুপুর বেলা এই আলো গুলো জ্বলছে না। ত্রয়ীদের বাড়ির অভিমুখে হলুদ, গোলাপি এবং লাল বড়ো বড়ো কাপড় দিয়ে সুবিশাল একটি গেট করা হয়েছে। বিশাল এক প্যান্ডেল করা হয়েছে বরযাত্রীদের বসানোর জন্য। আর বাড়ির পিছনের দিকে বড়ো বড়ো পাতিলে রান্নাবান্নার আয়োজন করা হয়েছে।
ত্রয়ীকেও এই কিছুক্ষণ আগে পার্লারের মেয়েরা সাজানো শেষ করেছে। শীর্ষদের আসতে আসতে দেরি হবে বিধায় রবি, নয়ন এবং আলভীকে দিয়ে বিয়ের সকল সাজসজ্জার জিনিসপত্র আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিল। মেয়েটার ফর্সা শরীরে আজ জড়ানো হয়েছে একটি লাল টকটকে বেনারসী শাড়ি। ওষ্ঠে লাল লিপস্টিক, দুই হাত ভর্তি শাড়ির সাথে মিলিয়ে লাল চুড়ি, চোখে মুখে ভারী মেকআপের প্রলেপ। মেয়েটিকে সুন্দরই লাগছে এই সাজে। এমনিই ফরসা মানুষ। তার উপরে যেন এই লাল রং-টা চকচক করছে। ত্রয়ীকে এই মুহূর্তে সাজিয়ে গুছিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে তার নিজ কক্ষে। আশেপাশের মানুষ এবং আত্মীয় স্বজনরা কক্ষে আসছে আর মেয়েটার রূপের প্রশংসা করে যাচ্ছে। তবে এই রূপের প্রশংসা শুনতে শুনতে হঠাৎ-ই তার কানে এসে বারি খেল একটি বাক্য। পাশের বাড়িরই এক মধ্যবয়স্ক মহিলা হুট করেই মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলেন,
“বউয়ের আগের পক্ষের মেয়ের আবার এত ধুমধাম করে বিয়ে। সোহরাবের আদিখ্যেতা দেখলে ম’রে যাই।”
পাশ থেকেই আবার অন্য একজন উঠে বলল,
“টাকা বেশি হয়েছে। কোথায় ফেলবে ভেবে পাচ্ছিল না। তাই এখানে ফেলে দিচ্ছে।”
কথাগুলো কম বেশি ত্রয়ীর সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদেরই গায়ে লেগেছে। তবে সবচেয়ে বেশি লাগল বুঝি ত্রয়ীর হৃদয়ে। মেয়েটার বুকটা ভাড় হয়ে উঠল। এই বিয়ে বিয়ে করে সে বেশ আনন্দেই ছিল। এসব দুঃখভরা কথাগুলো মনে করেনি। তবে তার মনে রাখা উচিত ছিল এইসব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে সে এতিম। তার কেউ নেই। এই বাড়ির লোকগুলো তার জন্য যা করছে কোনোটাই তার প্রাপ্য নয়। তবুও লজ্জাহীন নারীর মতো দুই হাত পেতে সে এ বাড়ি থেকে সবকিছু নিয়ে যাচ্ছে। ত্রয়ীর হৃদয়ে এতক্ষণ একটি সুখ সুখ অনুভূতি বিরাজ করলেও এখন আঁধার নেমেছে। আর কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার। ইচ্ছে হচ্ছে এই বিয়ে টিয়ে ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে।
ঐ মহিলা দুজনের কথায় তৃপ্তি ফুঁসে উঠল। কণ্ঠ বাড়িয়ে কিছু বলবে তার পূর্বেই বাইরে হইচই পড়ে গেল,
“বর এসেছে, বর এসেছে।”
সবাই মুহূর্তেই ভুলে গেল ঐ মহিলা দুজনের কথা। কক্ষে ত্রয়ীকে একা রেখেই বেরিয়ে এলো বাইরে। ঐ মহিলারাও বেরিয়ে এলো সবার সাথে। যেতে যেতে আবার একজন আরেকজনকে বলল,
“শুনেছি শহরের কোন বড়ো লোক ঘরের ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে এই মেয়ের। চলুন দেখে আসি ছেলে কেমন।”
ত্রয়ীর হৃদয় এখনো ভার। তবে সে ভাবলো, এই দুই চারজনের জন্য কেন সে তার জীবনের এত বড়ো একটি দিন নষ্ট করবে? নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাওয়ার দিনেও মন খারাপ করে থাকবে? এই দিনটা মানুষের জীবনে বারবার আসে না। সুতরাং দুই চারজন কুচুটে মহিলার জন্য তার এই দিনটি নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। ত্রয়ী বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। কেন যেন সবার সাথে তারও ইচ্ছে হলো বর দেখার। শীর্ষকে বর বেশে কেমন লাগছে দেখার তীব্র বাসনা জাগল তার হৃদয়ে। তার তো আর অন্যদের মতো বাইরে গিয়ে বর দেখা সম্ভব নয়। তাই এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল জানালার নিকটে। উঁকি ঝুঁকি মা’র’ল বাইরে। কিন্তু হতাশ হতে হলো তাকে। এখান থেকে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
ঝামেলাহীনভাবেই গেটের সব কাজ মিটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল শীর্ষরা। সোহরাব হোসেন এবং তামিম আগে থেকেই সবাইকে গেট ধরা এবং টাকা তোলা নিয়ে সাবধান করে দিয়েছে। শীর্ষরা এতটা পথ জার্নি করে আসার পর গেটে ঝামেলা করতে বারণ করে দিয়েছে। তাই গেট যারা ধরেছিল তারা টাকার সংখ্যাটা কমিয়েই বলেছে বরযাত্রীদের নিকট। তারাও আর ঝামেলা করেনি। তাদের নিকট যত টাকা চাওয়া হয়েছে বিনা বাঁধায় দিয়ে দিয়েছে। গেটের সব কাজ মিটে যাওয়ার পরপরই শীর্ষদের নিয়ে বসাল প্যান্ডেলে। দুই তিনজন ছেলেমেয়ে হাতে ঠান্ডা শরবতে পরিপূর্ণ গ্লাস নিয়ে ছুটে এলো। একে সবার হাতে তুলে দিল লাগল গ্লাস গুলো। সবাইকে দিতে দিতে একটি মেয়ে শরবতের গ্লাস নিয়ে রিমার নিকটে যেতেই রিমা উঠে দাঁড়াল। উসখুস করে বলল,
“ভাবী মানে ত্রয়ী কোথায়? আমাকে একটু ওর কাছে নিয়ে যেতে পারবে? ওর সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল।”
মেয়েটি হালকা হাসলো। হাতের ট্রেটা পাশেই একটি টেবিলের উপরে রেখে বলল,
“আচ্ছা, আপনি আসুন আমার সাথে।”
স্বল্প সময়ের মধ্যেই মেয়েটি রিমাকে নিয়ে এলো ত্রয়ীর কক্ষের অভিমুখে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“ঐ তো ত্রয়ী আপু। আপনি গিয়ে তার সাথে কথা বলুন আমি আবার প্যান্ডেলে যাই। সবাইকে শরবত দিতে হবে।”
মেয়েটি চলে চলে। কক্ষে ত্রয়ী একাই ছিল। বাকিরা সবাই বরযাত্রী দেখতে বেরিয়ে গেছে। রিমা ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়াল ত্রয়ীর নিকটে। নরম কণ্ঠে শুধাল,
“কেমন আছো, ত্রয়ী?”
ত্রয়ী চোখ তুলে তাকাল রিমার দিকে। মিনমিনে কণ্ঠে জবাব দিল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
এই টুকু বলে থামল রিমা। দম নিয়ে ফের বলল,
“বয়সে আমি বড়ো হলেও সম্পর্কে এখন তুমি আমার বড়ো। আমার বড়ো ভাইয়ের বউ। কিন্তু তোমাকে নাম ধরে ডাকার আমার পুরোনো অভ্যাস। ওটা ছাড়তে পারলাম না। তাই নাম ধরেই ডেকে ফেললাম।”
“সমস্যা নেই। তুমি আমাকে নাম ধরেই ডেকো।”
রিমা এবার বসলো ত্রয়ীর পাশে। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না সে। কেমন ইতস্তত লাগছে। ত্রয়ী হয়তো তার অবস্থা দেখে বুঝে নিল কিছু। নরম স্বরেই শুধাল,
“কিছু বলতে চাও?”
রিমা মাথা নুইয়ে নিল। ছোট করে জবাব দিল,
“হুম।”
“তুমি যা বলার নির্দ্বিধায় বলে ফেলো আপু। কোনো সমস্যা নেই।”
রিমা একটু সময় নিল। এরপর হাত বাড়িয়ে ধরল ত্রয়ীর হাত দুটো। অপরাধীর কণ্ঠে বলল,
“আমাকে মাফ করে দাও ত্রয়ী। আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। এমনকি তোমার বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পিছনেও আমিই দায়ী ছিলাম। আমিই মাকে প্ররোচিত করে তোমার বিরুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি আমার ব্যবহারে জন্য অনুতপ্ত। দয়া করে তুমি আমাকে মাফ করে দিও, ত্রয়ী।”
ত্রয়ী হাসলো। অভয় দিয়ে বলল,
“এখন তো সবকিছু মিটেই গেছে। আমি সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। যদি মাফ না করতাম তাহলে কি আর আবার বিয়ে করে ও বাড়িতে যেতে রাজি হতাম?”
রিমা যেন এবার একটু স্বস্তি পেল। যাক মেয়েটা তাকে মাফ করেছে। সাহেদককে তো নিজের কৃতকর্মের জন্য হারিয়েছে। এখন ত্রয়ীও যদি মাফ না করতো। তবে যে অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েই সে ম’রে যেতো।
সময় গড়ালো কিছুটা। ঘড়ির কাঁটাও থেমে নেই। সেও গড়িয়ে চলেছে। আগেই যেহেতু শীর্ষ এবং ত্রয়ীর একবার বিয়ে হওয়া ছিল তাই এবারে আর সময় লাগেনি খুব বেশি। ঝামেলাহীনভাবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে সবটা মিটে গেছে। এখন সবাইকে খেতে বসানো হয়েছে। শীর্ষ এবং ত্রয়ী বসেছে পাশাপাশি। একটি বড়ো প্লেট রাখা রাখা হয়েছে দুজনের অভিমুখে। এই এক প্লেট থেকেই নাকি দুজন খাবে। ত্রয়ী হাঁসফাঁস করছে। কেমন অস্বস্তি লাগছে তার। এতগুলো মানুষের মধ্যে বসে বউ সেজে খাওয়া যায় নাকি? তাও এক প্লেটে? আলেয়া বেগমকে কতবার বলল তাকে ঘরেই খাবার দিতে তা না। এটা নাকি তাদের পারিবারিক নিয়ম। যতসব বিব্রতকর নিয়ম।
খাবার সামনে রেখে ত্রয়ীকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ভ্রু কোঁচকাল শীর্ষ। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে শুধাল,
অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৯
“খাচ্ছিস না কেন?”
ত্রয়ী এলোমেলো দৃষ্টি ফেলল। কোনো জবাব না দিয়ে হাত ধুয়ে হাত দিল খাবারের থালায়। মাথা নিচু করে কোনো রকমে একটি লোকমা তুলে মুখে দিল। শীর্ষ প্রায় সাথে সাথেই ঝুঁকে গেল ত্রয়ীর দিকে। ফিসফিসিয়ে বলল,
“তোর ঐ ছোট ছোট দাঁত দিয়ে মাংসের হাড্ডি চিবুতে পারবি তো, নাকি চিবিয়ে দেব? তুই আমার অর্ধাঙ্গিনী বলে কথা। এই টুকু সাহায্য তো তোকে আমি করতেই পারি।”