অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২২

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২২
সাদিয়া শওকত বাবলি

তখনই পিছন থেকে ভেসে এলো শীর্ষের ঘুম জড়ানো কণ্ঠস্বর,
“আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে চু’মু খেয়ে এখন পালিয়ে যাচ্ছিস?”
ত্রয়ী অপ্রস্তুত হলো। সামান্য একটা চু’মু খেয়েও এভাবে ধরা পড়ে গেল? আর লোকটাও হলো একটা বদ। চু’মু’টা যখন খেল তখন তো ঘুমের ভান ধরে ঘাপটি মে’রে রইল। আর এখন একদম চোখ খুলে তাকে লজ্জা দিতে ছুটে এসেছে। ত্রয়ী ভিতরে ভিতরে লজ্জা পেলেও তা প্রকাশ করল না। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“পালিয়ে যেতে যাব কেন? ওয়াশ রুমে যাচ্ছিলাম। এখন কি ওয়াশ রুমেও যেতে পারব না?”
শীর্ষ হাত বাড়িয়ে ধরল ত্রয়ীর এক হাত। হ্যাঁচকা টানে ফেলল বুকের উপর। হকচকিয়ে উঠল মেয়েটা। ব্যস্ত হয়ে উঠে যেতে চাইল শীর্ষের বুকের উপর থেকে। কিন্তু পারল না। তার পূর্বেই শীর্ষ তার শক্তপোক্ত হাতটা দ্বারা চেপে ধরল স্ত্রীর কোমড়। হাঁসফাঁস করে উঠল ত্রয়ী। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল,

“কি করছেন কি? ছাড়ুন আমাকে।”
“ছাড়বো না। কি করবি তুই?”
ত্রয়ী তবুও চেষ্টা করল নিজেকে শীর্ষের বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার। কিন্তু তা কি আর সম্ভব হয়? শীর্ষের অত বড়ো দেহের সম্মুখে তার ঐ টুকু একটা দেহ। ত্রয়ী বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“নতুন বউ দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে সবাই কি ভাববে?”
শীর্ষ মুখ গুজলো ত্রয়ীর ঘাড়ে। আলতোভাবে সেখানে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
“ভাববে রাতে স্বামী বেশি আদর করেছে। তাই এখনো ঘুমাচ্ছে।”
কান দুটো গরম হয়ে উঠল ত্রয়ীর। লাজে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ল তার সম্পূর্ণ মুখশ্রী জুড়ে। লোকটার লাজ লজ্জা বলতে কিছু নেই। সর্বক্ষণ শুধু নির্লজ্জ কথাবার্তা। ত্রয়ী নাক মুখ কোঁচকাল। কণ্ঠটা হালকা ভারী করে বলল,
“নির্লজ্জ লোক একটা।”
“নির্লজ্জ হয়েছি বলেই তোকে বাগে আনতে পেরেছি। নয়তো তুই যে পরিমাণ মাথামোটা, ব’দ’লী তাতে এত সহজে বাগে আনা সম্ভব ছিল না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।”
“করছি আরও করব। তুই পারলে ঠ্যাকা।”
ত্রয়ী রেগেমেগে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। কি বলবে সে এই নির্লজ্জ লোকের মুখের উপরে? আর এর মুখকেও বা ঠ্যাকাবে কিভাবে? এর মুখ তো নয় যেন বো’মা। যখন তখন বি’স্ফো’রি’ত হয়। আর সেই সাথে আশেপাশের মানুষদের মধ্যে লজ্জা ছড়িয়ে দেয়। ত্রয়ী ভাবনার মধ্যেই শীর্ষ আবার মুখ খুললো। হতাশ কণ্ঠে বলল,
“জানিস বালির বস্তা জীবনে ভাগ্য করে একটা শ্বশুর বাড়ি পেয়েছি। যেখানে যেতে আসতেই দুইদিন। এরপর বউয়ের সাথে সময় কাটাবো কখন?”
এই টুকু বলে থামল সে। দম ফেলে ফের বলল,
“নতুন নতুন বিয়ে করেছি। কোথায় এখন একটু বউকে ভালোবাসবো, তার কাছাকাছি থাকব, তার পিছনে ঘুরঘুর করব তা না শ্বশুর বাড়ি দৌড়াতে দৌড়াতেই জীবন শেষ।”
ত্রয়ী ভ্রু কোঁচকাল। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,

“মানে?”
“মানে কাল বিয়ে করে বউ নিয়ে এলাম। আজকের দিনটা কাটিয়ে আবার আগামীকাল শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে। এত জার্নি করে আবার বউয়ের সাথে সময় কাটাই কখন বল তো।”
ত্রয়ী খুব বেশি চিন্তা করল না। ফট করে বলল,
“আবার প্লেনে যাবেন। নয়তো লঞ্চের কেবিনে। একদম নিরিবিলি পাঁচ তারকা হোটেলের মতো পরিবেশ সেখানে। মনেই হবে না আপনি ভ্রমণ করছেন। মনে হবে যেন আপনি আপনার বাড়িতেই আছেন অথবা কোথাও ঘুরতে গিয়ে নিজ কক্ষে বসে আছেন।”

কথাগুলো বলে ত্রয়ী নিজেই লজ্জা পেল। ইসসস, না ভেবে সে কি বলে ফেললো? এখন তো শীর্ষ আরও লজ্জায় ফেলবে তাকে। কিন্তু ত্রয়ীর ভাবনাকে মিথ্যা করে দিয়ে শীর্ষ আর লজ্জা দিল না তাকে। বরং হইহই করে বলল,
“এটা তো তুই ঠিক বলেছিস বালির বস্তা। কে বলেছে তুই গ’র্দ’ভ। তোর মাথায়ও একটু আধটু বুদ্ধি আছে।”
এই টুকু বলে থামল শীর্ষ। কণ্ঠে সুর তুলে গান‌ ধরল,
“বরিশালের লঞ্চে উইঠা লইমু কেবিন রুম।
বন্ধুরে মোর বুকে লইমা দিমু একটা ঘুম।
হায়, হায়, দিমু একটা ঘুম।”

সময়টা এখনো সকালেই থমকে আছে। তবে সূর্যটা তার তেজ ছড়িয়ে দিয়েছে চারদিকে। শহুরে জনজীবন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের দৈনন্দিন কর্মে। কায়সার তার আস্তানায় বসে বন্ধু বান্ধব, দলের সদস্যদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে এবং ক্রাম খেলছে। এমন সময় আরফা এলো ভিতরে। দাঁড়াল ক্রাম বোর্ডের পাশেই। হঠাৎ কক্ষে নতুন কারো আগমনে কায়সার চোখ তুলে তাকাল। আরফাকে দেখে ভিতরে ভিতরে অবাক হলো বটে। তবে তা প্রকাশ করল না। স্বাভাবিকভাবেই ক্রাম বোর্ডের গুটিতে টোকা দিতে দিতে বলল,
“কি আরফা, কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”

এরপর আরফা আর কিছু বলল না। তবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উসখুস করছে। হয়তো কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। কায়সার বুঝলো বিষয়টা। আরফার দিকে তাকিয়ে শুধাল,
“কিছু বলবে আলফা?”
আরফা তৎক্ষণাৎ কিছু বলল না। আরও একটু সময় নিল সে। এরপর ইতস্তত করে বলল,
“ত্রয়ী ফিরে এসেছে কায়সার ভাই।”
ক্রাম বোর্ডের গুটিতে রাখা কায়সারের হাতটা থমকে গেল কিয়ৎক্ষণের জন্য। বুকের ভিতরে থাকা ছোট্ট হৃৎপিণ্ডনা লাফিয়ে উঠে জানান দিলো এখনো তার হৃদয়ে ত্রয়ীর উপস্থিতর কথা। তবে বাহ্যিকভাবে ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে তুললো সে। আবারও ক্রাম বোর্ডের গুটিতে টোকা দিতে দিতে বলল,

“ওর শ্বাশুড়ি, ননদ নিশ্চয়ই ওকে মেনে নিয়েছে। আশা রাখছি এবারে ওর একটা সুন্দর, সুখী সংসার হবে।”
“হুম।”
এই টুকু বলে থামল আরফা। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে ফের বলল,
“ওর সাথে দেখা করতে যাবেন না?”
“না।”
“কেন?”
কায়সার এবার সোজা হয়ে দাঁড়াল। শীতল কণ্ঠে বলল,
“ও আমার কে হয় যে ওর সাথে দেখা করতে যাব।”
আরফা অবাক হলো। এই লোকটাই না একদিন কত পাগলামী করল ত্রয়ীকে ভালোবাসে বলে, তাকে পাওয়ার জন্য। আর আজ বলছে সে কে হয়? আরফা পলক ঝাপটাল। অবাক কণ্ঠেই শুধাল,

“আপনি না ত্রয়ীকে ভালোবাসতেন?”
“ভালো…”
কথাটা বলতে গিয়ে কেমন আটকে এলো কায়সারের। তবুও নিজেকে সংযত করল সে। ওষ্ঠে হাসি রেখেই বলল,
“ভালোবাসতাম। এখন আর বাসি না। তোমাকে সেদিন বললাম না। এখন আর আমার তাকে তেমন মনে পড়ে না। সেখানে তার সাথে দেখা করতে কেন যাব?”
কথাটা শুনে আরফা যেন একটু স্বস্তি পেল। ভিতরটা হালকা হয়ে গেল মুহুর্তেই। নয়তো সেদিন কায়সার ত্রয়ীকে ভালোবাসে না, মনে পড়ে না বলার পরেও কেমন একটা সংশয় ছিল তার হৃদয়ে। ভেবেছিল ত্রয়ী সামনে নেই বলে কায়সার অমন কথা বলেছে। ত্রয়ী সামনে এলেই সে সব ভুলে যাবে। আবার পাগলের মতো ছুটবে মেয়েটার পিছু পিছু। কিন্তু এখন কায়সারের কথা শুনে শান্তি লাগছে। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো ত্রয়ী। ইতস্তত গলায় ফের শুধাল,

“একটা প্রশ্ন করি কায়সার ভাই?”
“করো।”
“আপনি আর নতুন করে কাউকে ভালোবাসবেন না?”
কায়সার হাসলো। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“কেন বাসব না? অবশ্যই বাসবো।”
“কবে বাসবেন?”
“তা তো জানি না। ভালোবাসা হলো হৃদয়ঘটিত ব্যাপার। এখানে আমার কোনো হাত নেই। আবার যেদিন আমার হৃদয় কাউকে দেখে কেঁপে উঠবে, তাকে ভালোবাসতে চাইবে সেদিন আমিও তাকে ভালোসবো।”
কথাগুলো বলে কায়সার ঝুঁকে গেল ক্রাম বোর্ডের দিয়ে। গুটিতে টোকা দিতে দিতে গুনগুনিয়ে উঠল,
প্রেম তুমি আসবে এভাবে
আবার হারিয়ে যাবে ভাবিনি
আজো আছে সে পথ শুধু নেই তুমি
আরফা বিষাদ লিপ্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল কায়সারের দিকে। খুব করে তার বলতে ইচ্ছা হলো,
“আপনার হৃদয় কি আমাকে দেখে কাঁপে না কায়সার ভাই? আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না?”
মনে মনে কথাগুলো বললেও মুখে কিছু বলতে পারল না আরফা। লজ্জা, ভয়, সংকোচ মিলে চেপে রেখেছে তার কণ্ঠনালীকে। আর এ লজ্জা, সংকোচকে পাশে ঠেলেও কিছু বলেও কি খুব লাভ হবে? হয়তো হবে না। তাকে দেখে যদি কায়সারের হৃদয় কাঁপতো অথবা তাকে ভালোবাসতো তাহলে নিশ্চয়ই বলে দিতো। যেমনটা ত্রয়ীর ক্ষেত্রে বলেছিল। আরফা ধরে নিল কায়সার তাকে ভালোবাসে না। হৃদয় ভারী হয়ে উঠল তার। আঁখিদ্বয় ভরে উঠল অশ্রুকনায়। আরফা আর ওখানে দাঁড়াতে পারল না। যত্রতত্র পা ফেলে বেরিয়ে এলো কায়সারের আস্তানা থেকে।

গতকাল শীর্ষ এবং ত্রয়ীদের সাথে তৃপ্তিও প্লেনে এসেছে এ বাড়িতে। বোনের শ্বশুরবাড়ি দূরে হওয়ায় সবচেয়ে লাভবান বোধ হয় তৃপ্তিই হয়েছে। তার লাভের লিস্টে প্রথম অবস্থানে আছে এই প্লেনে আসার ব্যাপারটা। সোহরাব হোসেনের মোটামোটি অর্থ সম্পদ রয়েছে। যতটুকু আছে তা দিয়ে তাদের খেয়ে পড়ে থেকেও যায়। তবে এর মানে এই নয় যে তিনি খুব ধনী। বরিশালের ঐ মফস্বলে ছোট খাটো একটা বাড়ি, কয়েক কাঠা জমি, ব্যাংকে কিছু অর্থ আর ঐ গাড়িটা রয়েছে। তাও ব্যবসার কাজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে যেতে হয় বলে কিনেছিলেন। সবচেয়ে বড়ো কথা এগুলো কিছুই তার একার নয়। এর থেকে আবার সুমন হোসেনও ভাগ পাবেন।

এতকিছুর পরেও লোকটি ত্রয়ীর বিয়ের জন্য খরচ করতে বা ধুমধামের সাথে শ্বশুর বাড়ি পাঠাতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করেননি। নিজের মেয়ে না হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাবার দায়িত্ব পালন করেছেন। সে যাই হোক, সোহরাব হোসেন কখনো ঐ বাড়তি খরচ করে প্লেনে আনতো না। তাও বোনের শ্বশুরবাড়ি দূরে হওয়া উপলক্ষ্যে তার আকাশপথে ভ্রমণের শখ পূরণ হলো। অবশ্য এতে শীর্ষেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সে ভীষণ ভালো। নয়তো শালিকেও তার সাথে প্লেনে আনতো না। খরচ বাঁচানোর জন্য অন্যদের সাথে গাড়িতে পাঠিয়ে দিতো। তৃপ্তি আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে একা একাই এই দুপুর বেলা হাঁটতে লাগলো সুইমিং পুলের পাশ ঘেঁষে। শহুরে এই কৃত্রিমতার মধ্যে এই সুইমিং পুলের দিকটা ভালো লাগছে তার। তাদের বাড়িতে সুইমিং পুল নেই। তবে একটা পুকুর আছে। সে পুকুরের চারপাশে বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ পুতেছে তৃপ্তি। সে গাছগুলোতে যখন ফুল ধরে তখন পুকুরটা অনন্য সৌন্দর্য ধারণ করে।

এমন সময় খান বাড়ির গেট থেকে রবি এবং আলভী প্রবেশ করল ভিতরে। শীর্ষরা কাল আগেভাগে চলে এলেও তারা এসেছিল গাড়িতে। যার কারণে ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে মধ্যরাত হয়ে গিয়েছিল। তারপর আর তারা এ বাড়িতে আসেনি। যার যার বাড়ি নেমেই ঘুম দিয়েছিল। ঘুম ভাঙতে ভাঙতে এই দুপুর। গেট থেকে প্রবেশ করতেই রবির চোখ গেল সুইমিং পুলের দিকে। তৃপ্তিকে দেখে থেমে গেল সে। আলভী ভ্রু কোঁচকাল। রবির দিকে দৃষ্টি দিয়ে শুধাল,
“কি যে থেমে গেলি কেন? ভিতরে যাবি না?”
“তুই যা। আমি আসছি।”
আলভী দ্বিরুক্তি করল না। চলে গেল ভিতরে। আর রবি পা চালিয়ে এসে দাঁড়াল সুইমিং পুলের পাশে। ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,
‌ “কি গো বেয়াইন সাহেবা, কেমন আছেন?”
কাছাকাছি পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে তাকাল তৃপ্তি। রবিকে দেখতে পেয়েই চোখ মুখ কুঁচকে এলো তার। এই লোকই তো তাকে গতকাল মঞ্জলিকার সাথে তুলনা করে কেটে পড়েছিল। তৃপ্তি কটমট করল। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

“আপনি না কালকে আমাকে মঞ্জলিকা বলেছিলেন। কেন বলেছিলেন?”
রবি হাসলো। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“মঞ্জলিকা তো বলিনি। বলেছি মঞ্জলিকার যমজ বোন।”
“ঐ তো, কেন বলেছিলেন ঐ কথা?”
“কারণ তোমাকে মঞ্জোলিকার মতো লাগছিল তাই।”
তৃপ্তি চোখ মুখ শক্ত করল। কণ্ঠে কাঠিন্য এটে কিছু বলবে এর পূর্বেই একটি বাক্য থামিয়ে দিল তাকে। রবি ওষ্ঠে হাসি নিয়েই বলল,
“তবে এখন তোমাকে ভালো লাগছে। মেকআপ ছাড়া তোমার বাস্তবিক চেহারাটাই সুন্দর।”
মুহুর্তেই তৃপ্তির ভিতর থেকে রাগ, অভিমানেরা ছুটে পালাল। রবির এই টুকু প্রশংসাতেই তার হৃদয় শীতল হয়ে উঠল। লাজুক স্বরে সে বলল,

“তবুও বোনের বিয়ে ছিল তাই সবার সাথে একটু সাজতে হয়েছে।”
“তা তোমার বোনের তো হয়ে গেছে এখন তুমি বিয়ে করবে কবে?”
“বাবা মা যেদিন দিবে সেদিন।”
“কেন নিজের পছন্দ নেই?”
তৃপ্তি এক পলক তাকাল রবির দিকে। ইতস্তত করে বলল,
“এখনো তেমন না।”
“ওহ।”
রবি ঠোঁট গোল করে বলল কথাটা। এরপর একটু সময় নিয়ে শুধাল,
“আচ্ছা তোমার কেমন ছেলে পছন্দ?”
“কেন?”
“এমনি বলো।”

“সেভাবে কখনো ভেবে দেখিনি।”
রবি যেন আশাহত হলো। এই মেয়েটিকে তার ভালো লেগেছিল। ঝগড়া করতে করতে কখন যে সে এই মেয়েটির মায়ায় পড়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। রবি একটু সময় নিল। এরপর প্রশ্ন করেই বসলো,
“আমাকে তোমার কেমন লাগে, তৃপ্তি?”
তৃপ্তি খুব একটা ভাবলো না। প্রায় সাথে সাথেই বলল,
“ভালো।”
“কেমন ভালো?”
“এ আবার কেমন প্রশ্ন? ভালো লাগার কোনো প্রকারভেদ হয় নাকি?”
“হয় তো। এই যেমন ধরো প্রেমিক হিসেবে ভালো লাগা, ভাই হিসেবে ভালো লাগা, দুলাভাই হিসেবে ভালো লাগা বন্ধু হিসেবে ভালো লাগা।”

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২১

রবির কথা শুনে তৃপ্তি এবার চিন্তায় পড়ে গেল। এভাবে তো সে কখনো চিন্তা করে দেখেনি। তৃপ্তি মাথা চুলকাল। অবুঝের ন্যায় বলল,
“এভাবে তো কখনো ভেবে দেখিনি।”
“তাহলে ভাবো।”

অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here