অনুরাগে তুই পর্ব ৫৭
সাদিয়া শওকত বাবলি
“এগুলো দিয়ে তুমি কি করবে যদি না একটা মেয়ের বংশ মর্যাদাই থাকে। বাবা ছোট বেলায় ম’রা গেছে, মা ওকে ফেলে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেছে। চাচারাও খোঁজ খবর নেয় না। এক প্রকার চাল চুলোহীন মেয়ে ও। আর আমাদের সমাজে একটা মূল্য আছে, বংশ মর্যাদা অছে। কত বড়ো বড়ো মানুষের সাথে আমাদের ওঠা বসা। ওকে ঘরের বউ করে আনার পর যদি একজন এসে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার ছেলের বউয়ের বাড়ি কোথায়, বাবা কি করে, বংশ মর্যাদা কি? তখন তুমি কি উত্তর দিবে?”
ফাহমিদা বেগম থেমে গেলেন। হাতের গয়নার বাক্সগুলো রাখলেন বিছানার উপরে। এভাবে তো তিনি কখনো ভেবে দেখেননি। মায়ের এমন থমকানো ভাব দেখে রিমা বুঝলো ঔষধে কাজ হয়েছে। তার মাকে আর একটু ত্রয়ীর বিরুদ্ধে বি’ষি’য়ে তুলতে পারলেই এ বিয়ে ভাঙা যাবে। মনে মনে শ’য়’তা’নি হাসি হাসলো রিমা। চোখে মুখে চিন্তিত ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তাছাড়া মেয়েটা অ’প’য়া, অ’ল’ক্ষ্মী। নিজের আপন মানুষদের তো আগেই খেয়েছে, এখন এসেছে আমাদের বাড়িতে। ও আসার পর থেকে বাড়িতে একটার পর একটা অঘটন লেগেই আছে। ভাইয়া দুই দুই বার এক্সিডেন্ট করল। পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র ছেলে তোমার। আমি আর রিমা তো এক প্রকার অতিথি। আজ বিয়ে দিলে কাল শ্বশুর বাড়িতে চলে যাব। তুমি মা হয়ে এমন একটা অপয়া মেয়েকে সারাজীবনের জন্য তোমার ছেলের গলায় বেঁধে দিতে চাইছো? তার জীবনটা নষ্ট করে দিতে চাইছো, মা?”
ফাহমিদা বেগমের হৃদয় কাঁপলো। বংশ মর্যাদার কথা তিনি আগে চিন্তা না করলেও অ’প’য়া, অ’ল’ক্ষ্মী’র বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন। কোনো মা-ই তার সন্তানদের খারাপ চান না। ফাহমিদা বেগমও শীর্ষের খারাপ চান না। তার উপর তিনি পুরোনো দিনের মানুষ। কুসংস্কারে একটু বেশিই বিশ্বাসী। ফাহমিদা বেগম চিন্তিত হলেন। ত্রয়ীকে শীর্ষের সাথে বিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক হবে? বিয়ের পর যদি ছেলেটার কোনো বিপদ হয়। আবার তিনি এও ভাবলেন ত্রয়ী শীর্ষের পছন্দ। ত্রয়ীকে কি তার ছেলের থেকে আলাদা করা ঠিক হবে? ফাহমিদা বেগম কিছুটা ইতস্তত করেই বললেন,
“কিন্তু ত্রয়ীকে শীর্ষের পছন্দ।”
“পছন্দ না ছাই। তুমি চেনো ঐ ত্রয়ীকে? ওকে যতটা ভোলাভালা আর সহজ-সরল মনে হয় ও ততটাও সহজ-সরল নয়। ভাইয়া ওকে পছন্দ করেনি। আমার তো মনে হয় ও ভাইয়াকে ফাঁ’সি’য়ে’ছে। গতকাল গভীর রাতে পানি খেতে বেরিয়েছিলাম আমি। তখন দেখি ও ভাইয়ার কক্ষের দরজা ধাক্কাচ্ছে। তবে ভাইয়া দরজা খোলেনি।”
ফাহমিদা বেগম অবাক হলেন। অবাক সুরেই শুধালেন,
“গভীর রাতে ও শীর্ষের ঘরের দরজা ধাক্কা দিচ্ছিল?”
“হ্যা, তাহলে আর বলছি কি। এমন করে করেই ও ভাইয়াকে ফাঁ’সি’য়ে’ছে। এর জন্যই ভাইয়া ওকে বিয়ে করতে চাইছে।”
ফাহমিদা বেগম গভীর চিন্তায় নিবদ্ধ হলেন। ত্রয়ীকে সে কখনো খারাপ দেখেনি। মেয়েটাকে যথেষ্ট নম্র, ভদ্র এবং মিষ্টিভাষী হিসেবেই চিনেন তিনি। সেই মেয়ে যে শীর্ষকে ফাঁসাবে তেমন মনে হয় না। আবার রিমাকেও তো কোনো অবিশ্বাসের কারণ নেই। স্বভাবতই মানুষ বাইরের লোকজনের থেকে নিজের সন্তানদের অধিক বিশ্বাস করে।
দুপুর গড়িয়ে বিকালের দিকে। ত্রয়ী পা ঝুলিয়ে বসে রয়েছে নিজ কক্ষের বিছানার উপরে। সেই সকালে অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে শীর্ষকে অনেকবার কল করেছে সে। কিন্তু লোকটা একটা কলও ধরেনি, আবার কেটেও দেয়নি। আজ দুপুরে বাড়িতে খেতেও আসেনি। হয়তো রাগে এসব করছে। ত্রয়ী ভেবে পায় না ঐ টুকু বিষয় নিয়ে এত রাগ আসে কোথা থেকে? তারপর বিষয়টি নিয়ে সে মাফ চেয়েছে। বলেছে, অমন কাজ আর করবে না। আর রাগ করেছে ভালো কথা। খাবারের সাথে কিসের রাগ? ত্রয়ী ঠোঁট উলটালো। শীর্ষের জন্য চিন্তা হলো তার। লোকটা রাগে দুপুরে বাড়িতে তো খেতে এলো না, বাহিরে বা অন্য কোথাও খেয়েছে কিনা কে জানে। ত্রয়ী তার হাতে ধরে রাখা মোবাইলটা ঘেঁটে আবারও কল লাগালো শীর্ষের নাম্বারে। নাহ, এবারেও কলটা ধরলো না সে।
ত্রয়ী আরও কিছুক্ষণ থম মে’রে বসে রইল। শীর্ষের রাগ ভাঙানোটা জরুরি। লোকটা তার সাথে কথা না বললে, তার দিকে না তাকালে কেমন যেন ভালো লাগে না তার। বুকটা খালি খালি লাগে। কান্না পায় ভীষণ। এমন নানান বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে করতে হঠাৎ মেয়েটির মস্তিষ্কে ভীষণ আদুরে একটি বুদ্ধি খেলে গেল। শীর্ষ এবং ত্রয়ী একে অপরকে ভালোবাসে এবং এই সত্যটা তারা উভয়েই বেশ ভালোভাবে জানে। তবে তাদের দুজনের মধ্যে এখনো অব্দি সরাসরি মনের কথা প্রকাশ বা ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা হয়নি। শীর্ষ আদৌও প্রকাশ করবে কিনা কে জানে! তবে এই রাগ-অভিমানের টানাপোড়েনে ত্রয়ী যদি নিজের মনের কথাটা শীর্ষের অভিমুখে প্রকাশ করে তবে বিষয়টা কেমন হয়? অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষরাই তাদের প্রিয় রমনীর নিকট আগে নিজের ভালোবাসার কথা, নিজের মনের কথা প্রকাশ করে। ত্রয়ীর ক্ষেত্রে না হয় একটু ব্যতিক্রম কিছু ঘটুক। সেই আগে ভালোবাসার কথা জানাক। এতে শীর্ষেরও রাগ ভাঙবে আর তাদের সম্পর্কটাও একটু মজবুত হবে। ত্রয়ী তার মোবাইলের কিবোর্ডে হাত চালিয়ে লিখলো,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি।”
তবে মেসেজটা লিখলেও সে পাঠালো না। আবার কেটে দিলো। এভাবে মেসেজ করে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা খুব সাধারণ একটি বিষয়। জীবনে প্রথম কাউকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে যাচ্ছে ত্রয়ী, তাও তার সবচেয়ে প্রিয় পুরুষ, স্বামী, স্বপ্নের পুরুষকে। একটু অনুপম কিছু না করলে হয় না। ত্রয়ী বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে এসে বসলো পড়ার টেবিলে। একটা কাগজ নিয়ে তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লিখতে শুরু করল,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি।”
ত্রয়ী বেশ অনেকটা সময় নিয়ে কাগজে একশত বার লিখলো উক্ত কথাটি। এখন এটা গিয়ে শীর্ষের ঘরে রেখে আসবে। তারপর রাতে যখন শীর্ষ ঘরে ফিরবে, এটা দেখে নিশ্চয়ই তার ঘরে আসবে। তখন সে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে ভালোবাসার কথা জানাবে তাকে।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ত্রয়ী কাগজটা নিয়ে ছুটে গেল শীর্ষের কক্ষের অভিমুখে। দরজাটা চাপানো। ত্রয়ী আশেপাশে চোখ বুলিয়ে পর্যবেক্ষণ করে নিল আশপাশটা। কাউকে না দেখে আলতোভাবে দরজা খুলে নিঃশব্দে ঢুকলো শীর্ষের কক্ষের ভিতরে।
ত্রয়ী হাজার সাবধানতা অবলম্বন করলেও সে ঠিক ধরা পড়ে গেল রিমার নিকট। অবশ্য ধরা পড়বেই বা না কেন? ত্রয়ী যেমন কারো হাতে ধরা না পড়ার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করেছে তেমনি রিমাও গতকাল রাত থেকে তার উপরে নজর রেখেছে। সেই হিসেবেই দেখে ফেলেছে ত্রয়ীকে। মেয়েটা কক্ষে ঢুকে তার লেখা কাগজটা টেবিলের উপরে রাখবে ঠিক তখনই রিমা এসে খপ করে ধরে ফেললো তার হাতটা। ত্রয়ী আঁতকে উঠল। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল যেন। তড়িৎ গতিতে সে তাকালো পাশ ফিরে। রিমাকে এই মুহূর্তে এখানে দেখে গলা শুকিয়ে এলো তার। দ্রুত হাতের কাগজটি লুকিয়ে ফেলতে চাইলো। এই কাগজ কোনোভাবে রিমার হাতে পড়লে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তবে ত্রয়ী কাগজটা লুকানোর পূর্বেই রিমা ছো মে’রে কাগজটা নিয়ে গেল। কপাল কুঁচকে বলল,
“ভাইয়ার অনুপস্থিতিতে তুই ভাইয়ার কক্ষে কি করছিস? আর এই কাগজে কি আছে?”
ত্রয়ী কাগজটা পুনরায় নিজের হাতে নিতে চাইল। কিন্তু তার আগেই রিমা খুললো সেটা। কাগজের লেখা গুলো পড়তেই চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল তার। মুহুর্তেই চোখে মুখের রং বদলে গেল। ফুঁসে উঠে বলল,
“এই করে করেই তুই আমার ভাইকে ফাঁসিয়েছিস তাই না? আজ হচ্ছে তোর।”
ত্রয়ী ভীত হলো। যে ভয়টা পেয়েছিল তাই ঘটলো। এখন কি করবে সে? কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দিবে? ত্রয়ী আমতা আমতা শুরু করল। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল,
“আপনি ভুল করছেন। আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন নয়।”
রিমা শুনলো না ত্রয়ীর কোনো কথা। মেয়েটার হাত টেনে নিয়ে এসে দাঁড়াল বসার কক্ষে। এই মুহূর্তে বাড়িতে শীর্ষ বা আব্দুর রহমান খান নেই, তবে বাকিরা রয়েছে। রিমা গলা উঁচিয়ে ডাকলো,
“মা, মা, কোথায় তুমি দেখে যাও তোমার রূপে গুণে সুনিপুণা মেয়ে কি করেছে।”
রিমার হাঁক ডাকে ফাহমিদা বেগম, নুড়ি এবং পন্না ছুটে এলো। বসার কক্ষে পা রাখতেই পন্না অবাক স্বরে শুধাল,
“কি হয়েছে আপু? এভাবে ডাকছো কেন? আর ত্রয়ী আপুকেও বা এভাবে ধরে রেখেছো কেন?”
রিমা পন্নার কথার কোনো জবাব দিলো না। ত্রয়ীর হাত ছেড়ে দিয়ে সে এগিয়ে এলো ফাহমিদা বেগমের দিকে। ত্রয়ীর লেখা কাগজটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“দেখো তোমার রূপে, গুনে সুনিপুণা মেয়ে কি করেছে। আমি আগেই বলেছিলাম শীর্ষ ভাই ওকে নিজে থেকে পছন্দ করেনি। উলটো ও শীর্ষ ভাইকে ফাঁ’সি’য়ে’ছে। এই দেখো এই কাগজটাই তার প্রমাণ।”
ফাহমিদা বেগম কপাল কুঁচকে কাগজটা হাতে নিলেন। কাগজের লেখাগুলোর দিকে নজর পড়তেই মুখাবয়বের পরিবর্তন ঘটলো তার। শক্ত কণ্ঠে তিনি শুধালেন,
“এটা কি ত্রয়ী?”
ত্রয়ীর ভীতিভাব বাড়লো। মাথা নুইয়ে নিল সে। আমতা আমতা করে বলল,
“আমি মানে….আমি….”
এই টুকু বলতেই ফাহমিদা বেগম থামিয়ে দিলেন তাকে। রুক্ষ কণ্ঠে বললেন,
“কি আমি মানে….আমি….? এই জন্য তোমাকে আমাদের বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছিলাম? আমাদের ভালো মানুষির এই প্রতিদান দিলে? আমাদের বাড়িতে থেকে, আমাদের খেয়ে, আমাদের পিছনেই ছু’রি মা’র’লে?”
ফাহমিদা বেগমের কথা শেষ হতে না হতেই রিমা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তাহলে ওর কাছ তুমি এ ছাড়া আর কি আশা করছো মা? ও যে থালায় খায় সেই থালায় ফুটো করা মানুষ।”
ত্রয়ীর হৃদয় ভারী হলো। কান্না পেল ভীষণ। এর জন্যই সে আগে কখনো শীর্ষের দিকে অন্য নজরে তাকায়নি। কখনো হৃদয়ে তার জন্য কোনো অনুভূতির আগমন ঘটলেও তা সে শক্তভাবে নিধন করেছে। আগেই সে ভেবেছিল কখনো এমন কিছু হলে এই পরিবার তাকে বি’শ্বা’স’ঘা’ত’ক, বে’ই’মা’ন হিসেবেই চিহ্নিত করবে। কিন্তু এখন যা হবার হয়ে গেছে। ত্রয়ীর পিছনে ফেরার আর কোনো পথ নেই। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মেয়েটার। ধরা গলায় বলল,
“আমি কাউকে ফা’সা’ই’নি। আর যে থালায় খেয়েছি সে থালায়ও ফুটো করিনি।”
“তাহলে কি করেছিস তুই? আমাদের বাড়িতে থেকে আমাদের দৃষ্টির আড়ালে তুই শীর্ষ ভাইয়াকে এসব লিখছিস। একজন পুরুষকে এসব লেখার মানে কি?”
“একজন পুরুষকে লিখেছি ঠিক। তবে সে পুরুষের নিকট এসব লেখার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে আমার। সে আমার জন্য কোনো পর পুরুষ নয়।”
“মানে?”
ফাহমিদা বেগমের প্রশ্নের অভিমুখে ত্রয়ী একটু থামলো। আজ যখন এ পর্যন্ত চলেই এসেছে তখন তাদের বিয়ের বিষয়টা গোপন রাখা বোধ হয় আর ঠিক হবে না। তাতে পরিস্থিতি জটিল হবে বই সহজ হবে না। শীর্ষ তাদের বিয়ের কথা পরিবারকে না বলুক কিন্তু এমন একটি পরিস্থিতিতে পড়ে বিয়ের বিষয়ে গোপন করে ত্রয়ী নিজের চরিত্রের উপর দাগ নিতে পারবে না। তাতে যদি শীর্ষ রাগ করে করুক। আর এভাবেও বা লুকিয়ে চুরিয়ে আর কতদিন চলবে? ত্রয়ী জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করল। এরপর কণ্ঠে জোর দিয়েই বলল,
“আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। শীর্ষ ভাই আমার স্বামী।”
ত্রয়ীর কণ্ঠ নিঃসৃত প্রতিটি ধ্বনি যেন বিস্ফোরণ ঘটালো বসার কক্ষে উপস্থিত সকলের মধ্যে। শীর্ষ আর ত্রয়ীর বিয়ে হয়ে গেছে? কবে, কখন? ফাহমিদা বেগমের কথাটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো। তার ছেলে তাকে না জানিয়ে এত বড়ো একটা কাজ করে ফেললো? অসম্ভব। ফাহমিদা বেগম একটু সময় নিলেন। নিজেকে ধাতস্থ করে বললেন,
“মিথ্যা কথা। আমাকে না জানিয়ে আমার ছেলে কখনোই এত বড়ো কাজ কারবে না।”
রিমাও সায় জানালো ফাহমিদা বেগমের কথায়। মায়ের দিকে একটু চেপে দাঁড়াল সে। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“দেখেছো মা, এই মেয়েটা কতটা ধূর্ত এবং খারাপ। এখন শীর্ষ ভাইয়ের সাথে ওর মিথ্যা বিয়ের নাটক সাজিয়ে আমাদের থেকে নিস্তার পেতে চাইছে। তুমিই বলো শীর্ষ ভাই তোমাদের কি বলেছে? সে তো এই বলেছে যে ত্রয়ীকে তার পছন্দ, বিয়ে করতে চায়। তার সাথে যদি ত্রয়ীর আগেই বিয়ে হয়ে যেতো তাহলে নিশ্চয়ই এই কথা বলতো না। সরাসরি এটা বলতো যে তার সাথে ত্রয়ীর বিয়ে হয়ে গেছে।”
ফাহমিদা বেগমের হৃদয়ে সন্দেহ জন্মালো। এই মুহূর্তে ত্রয়ীকেই তার মিথ্যাবাদী মনে হলো। তার ছেলে নিশ্চয়ই তাকে না জানিয়ে এত বড়ো একটি কান্ড ঘটাবে না। ফাহমিদা বেগম শক্ত কণ্ঠেই বললেন,
“তোমাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম। তুমি তার এই প্রতিদান দিলে? তোমার সাথে আমার ছেলের বিয়ে হলে সে নিশ্চয়ই আমাকে বলতো। এত বি’ষ তোমার মনে? অবশ্য আমাদেরই ভুল। গ্রাম্য, চাল চুলোহীন, অপরিচিত একটি মেয়েকে ভালো মানুষি করে আমাদের বাড়িতে ঠাঁই দেওয়া উচিত হয়নি।”
ত্রয়ীর খারাপ লাগলো ভীষণ। হৃদয়টা দুমড়ে মুচড়ে উঠল। এত অপমান সহ্য হলো না তার। তাই সবাইকে বিশ্বাস করাতে সে সেদিন অর্থাৎ তাদের বিয়ের রাতের সকল ঘটনা খুলে বলল। সবটা শুনে হতবাক হয়ে পড়লেন ফাহমিদা বেগম। গ্রামে গিয়ে এত কান্ড ঘটে গেল অথচ তার কিছুই তাদের কানে এলো না? ছেলের বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল তার। আর ছেলে কিনা গ্রামে গিয়ে মান সম্মান নিলামে তুলে একটা মেয়েকে বিয়ে করে তা আবার লুকিয়ে রেখেছে? রিমা যেন সবটা শুনে আরও সুযোগ পেয়ে গেল। তেতে উঠে সে বলল,
“এর মানে আমার ভাইকে তুই এভাবে ফাঁ’সি’য়ে’ছি’স। গ্রামে নিয়ে গিয়ে চাপে ফেলে বিয়ে করিয়েছিস? নয়তো আমার ভাই সারা জীবন শহরে থেকে তোর মতো গাইয়া, ক্ষ্যাত, চাল চুলোহীন মেয়েকে বিয়ে করবে কেন?”
এই টুকু বলে থামলো সে। পরপর আবার দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলল,
অনুরাগে তুই পর্ব ৫৬
“তোর গ্রাম, ছোটবেলা থেকে ওখানেই বড়ো হয়েছিস তুই। গ্রামের সকলকে নিশ্চয়ই তোর চেনা। তুই নির্ঘাত আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করে রেখেছিলি। রাতের আঁধারে ভাইয়াকে বাইরে বেরুতে দেখে তুইও তার পিছু পিছু বেরিয়েছিলি। গ্রামের লোকদের আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলি যাতে হঠাৎ এসে তোদের একসাথে ধরে। আর তারপর বিয়ে। কি বুদ্ধিরে তোর! অবশ্য গ্রাম্য মেয়েরা হয়েই এমন। কূটকৌশল এ পারদর্শী।”