অন্তঃদহন পর্ব ১০

অন্তঃদহন পর্ব ১০
DRM Shohag

আকাশের ধমকে সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। দ্রুত দু’হাতে চোখ মুছে আকাশের হাত থেকে নুপুরটি নিতে গেলে আকাশ হাত সরিয়ে নেয়। সন্ধ্যা প্রশ্নাত্মক চোখে তাকায়। আকাশ পকেটে নুপুরটি রাখতে রাখতে বলে,
– ডিসিশন চেঞ্জ করেছি। নুপুরটি তুমি আর পাচ্ছ না।
সন্ধ্যা অবাক হয়ে তাকায়। আকাশ গম্ভীর গলায় বলে,
– ছিঁচকাদুনে মেয়েদের ইচ্ছা পূরণ করিনা আমি।
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। আকাশ উঠে দাঁড়িয়ে যেতে নিলে সন্ধ্যা দ্রুত আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে ডান হাত পেতে ইশারায় নুপুরটি দিতে বলে। আকাশ মৃদুস্বরে বলে,

– বললাম তো হবে না।
কথাটা বলে সন্ধ্যার পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে সন্ধ্যা আবার-ও আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে যায়।
আকাশ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। গম্ভীর গলায় বলে,
– সালাম দিতে বলেছিলাম ভুলে গিয়েছ?
সন্ধ্যা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। গতকাল আকাশের দেখিয়ে দেয়া অনুযায়ী ইশারায় সালাম দিল। এরপর ডান হাত পেতে মাথা নাড়িয়ে বোঝায়, তাকে নুপুরটি দিতে। আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– আগে হাসো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সন্ধ্যা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বিরক্ত লাগছে তার। কি শুরু করেছে এই লোক। আকাশ একটু পিছিয়ে গিয়ে সন্ধ্যাকে ভালোভাবে অবলোকন করল। সন্ধ্যার পরনে কালো শাড়ি। আকাশ মনে মনে হেসে বলে,
– আজ ভেতরে বাইরে সব কালো। গুড ডিশিসন। তবে গতকাল সাদা-কালো’র ড্রেস কম্বিনেশন ভালো ছিল!
সন্ধ্যা ভীষণ ল’জ্জা পায়। মাথা নিচু করে নেয়। লোকটি ভীষণ অ’স’ভ্য টাইপ। সন্ধ্যার ইচ্ছে করল গালের মধ্যে দু’টো থা’প্প’ড় বসিয়ে লোকটার অ’স’ভ্য’তামি ছুটাতে। আকাশ সন্ধ্যার অবস্থা দেখে ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসে।
সন্ধ্যা হঠাৎ আকাশের দিকে এগিয়ে গিয়ে আকাশের পকেটে বা হাত ঢুকিয়ে নুপুর পেয়ে যায়, সাথে সাথে নুপুরটি নিয়ে দৌড় দেয়। আকাশ সন্ধ্যার কাহিনী বোঝার আগেই সন্ধ্যা দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়েছে। আকাশ হতভম্ব হয়ে বিড়বিড় করে,

– কি বিচ্ছু!
ওয়াশরুমের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে জোর দিয়ে বলে,
– আবার না হেসে পালালে? বে’য়া’দ’ব মেয়ে।
সন্ধ্যা আকাশের কথাগুলো শুনতে পেয়ে ঢোক গিলল। হাতের নুপুর সামনে ধরে তাকিয়ে রইল। ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি ফুটল। মন বলে, – এমনিতে লোকটা ভালো না, আবার একটু একটু ভালো-ও আছে। সে ধন্যবাদ দিত তাকে নুপুর ঠিক করে এনে দেয়ার জন্য। কিন্তু লোকটা ভীষণ অ’স’ভ্য টাইপ। তাছাড়া নুপুরটা তো এই লোকটা-ই ছিঁড়ে দিয়েছিল। জীবনেও ধন্যবাদ দিবে না সে লোকটাকে।
সন্ধ্যা দরজায় কান পাতলে বাইরে থেকে আকাশের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে বাইরে ডান পা রাখতে নিলে হঠাৎ জোরেসোরে এক ধাক্কা খেয়ে বাথরুমের মেঝেতে পড়ে যায়। আকাশ নিজেকে সামলে নিতে পারায় সে পরেনি। কিন্তু সন্ধ্যা চিৎপটাং হয়ে পড়েছে সাথে তার হাতের নুপুর ছিটকে যায়। সন্ধ্যা কোমরে ব্য’থা পেয়ে চোখমুখ কুঁচকে নেয়। আকাশ হতভম্ব হয়ে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে। সে মূলত সন্ধ্যাকে টেনে ঘরের ভেতর নিয়ে যেতে চেয়েছিল, উল্টে সে-ও ওয়াশরুমে চলে এসেছে।
আকাশ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

– উঠে এসো।
সন্ধ্যা তাকালো না আকাশের দিকে। একা একা-ই ধীরে ধীরে উঠে বসে সে। আকাশ চোখ ছোট ছোট তাকায়। মেয়েটি তাকে রিজেক্ট করল? কি পরিমাণ বে’য়া’দ’ব ভাবা যায়? আকাশ রে’গে বলে,
– তোমার মাঝে তো দেখছি আদবের ছিটেফোঁটা-ও নেই। দ্রুত আদব-ওয়ালী হও, নয়তো পানিতে চুবিয়ে আদব শেখাবো বে’য়া’দ’ব মেয়ে।
সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ রে’গে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যা ঢোক গিলে ধীরে ধীরে দাঁড়ায়। এরপর আশেপাশে তার নুপুর খোঁজে। আকাশ বুঝতে পারলো সন্ধ্যা নুপুর খুঁজছে। গম্ভীর স্বরে বলে,

– নুপুর খুঁজে লাভ নেই। কমোডের মধ্যে গিয়ে এতোক্ষণে ওর জানাজা হয়ে গিয়েছে।
সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ ভ্রু কুঁচকে ইশারায় কমোড দেখায় সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যা দ্রুত এগিয়ে গিয়ে উপর থেকে খুঁজল। উল্টো ঘুরে আকাশের দিকে তাকালে আকাশ আবার-ও বলে,
– বিশ্বাস না হলে হাত ঢুকিয়ে চেক করতে পারো।
সন্ধ্যা রে’গে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। কত বড় বে’য়া’দ’ব! তার দিকে চোখ গরম করে তাকায়।
সন্ধ্যা টইটুম্বুর আঁখিদুটি নিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। হাত দিয়ে ইশারায় বোঝায়,

– আপনি ভীষণ খারাপ লোক।
আকাশ বুঝতে পেরে রে’গে বলে,
– আর তুমি বে’য়া’দ’ব।
সন্ধ্যার চোখ থেকে না চাইতে-ও দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আকাশ ঢোক গিলল।
সন্ধ্যা দ্রুত ডান হাতে চোখ মুছে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়। এতো খারাপ লাগছে তার! আগে দু’টো টুকরো হয়ে থাকলেও তা-ও তার ভাইয়ের দেয়া জিনিস টা তো ছিল, এখন তাও নেই। তার কপাল টা এতো খারাপ!
আকাশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখল সন্ধ্যা জানালার কাছে উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশের নিজেকে দু’টো থা’প্প’ড় দিতে ইচ্ছে করল। মেয়েটি তার ভাইয়ের দেয়া নুপুরের জন্য কত কাঁদছিল, এখন সেটা পুরোপুরি নেই। আকাশ কি বলবে বুঝতে পারে না। সে তো নুপুরটি ঠিক করে এনেছিল একে দিবে বলে। এরকম একটা এক্সিডেন্ট হবে বুঝতে পারেনি। কিছু বলতে গিয়ে-ও বলল না। ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কিছু একটা ভেবে উল্টো ঘুরে বলে,

– তোমার আরেকটি নুপুর আছে যে, ওটা আমাকে দাও, আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করব।
কথাটা শোনার সাথে সাথে সন্ধ্যা আকাশের দিকে তাকায়। এতো রা’গ লাগছে সন্ধ্যার। একটা নুপুর অস্তিত্বহীন করে দিয়ে আরেকটার দিকে নজর দিচ্ছে। সন্ধ্যা ধুপধাপ পা ফেলে আকাশের দিকে এগিয়ে আসে। আকাশ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। কিছু বোঝার আগেই সন্ধ্যা আকাশকে গায়ের জোরে ধাক্কা দিয়ে আকাশের মুখের উপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
আকাশ হতভম্ব হয়ে যায়। এটা কি হলো? চরম লেভেলের মে’জা’জ খারাপ হলো। রা’গে দরজায় একটি লাথি মে’রে চিৎকার করে বলে,

– বে’য়া’দ’ব মেয়ে, তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে ধাক্কা দেয়ার?
আকাশের চিৎকার আসমানী নওয়ান তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। সাথে শিমু আর তার মা-ও বেরিয়ে আসে। আসমানী নওয়ান এগিয়ে এসে বলে,
– আকাশ কি হইছে?
আকাশ তার মায়ের দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– ওর সাহস কি করে হয়, আমার মুখের উপর দরজা লাগানোর?
আসমানী নওয়ান অবাক হয়ে বলে,
– এইটা তো সন্ধ্যার ঘর। তুমি সন্ধ্যার ঘরের সামনে কি করতাছ?
আকাশ থতমত খেয়ে তাকায়। নিজেকে সামলে রে’গে বলে,

– যা ইচ্ছা করছি।
আসমানী নওয়ান রে’গে বলে,
– যা ইচ্ছা করতাছ মানে? যাও এইখান থেইকা। তুমি ওর আশেপাশে আসবা না। ওর ঘরের সামনে-ও আসবা না।
আকাশ দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– একশবার আসবো। ঘরের সামনে আসব, ঘরের ভেতরে যাব। ইচ্ছে হলে ওর বিছানায় ওর সাথে ঘুমাবো।
আকাশের কথা শুনে সকলে বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আকাশ কথাগুলো বলে গটগট পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে বলে,

– মেয়টাকে আদব শেখাও। নয়তো ওর কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।
আাকশের খালা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– তুমি কি সন্ধ্যাকে মানতে চাইছ বাবা?
আকাশ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– বা’লের এক মেনে নেয়া। এই বে’য়া’দ’ব মেয়েকে কে মানবে?
শিমু মাথা চুলকে বলে,
– ও খালামণি তোমার ছেলে বউ মানবে না, আবার একসাথে ঘুমাতে-ও চায়,, মনে হয় তুমি একটু বেশি-ই ডিজিটাল ছেলে জন্ম দিয়েছ।
আসামনী নওয়ান শিমুর কান টেনে বলে,
– এই ছেলে আমার মাথা পা’গ’লা করল, তুই আবার আমার পিছে লাগতাছস ক্যান?
শিমু কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
– ইশ! কান ছাড়ো, কান ছাড়ো খালামণি।

সৌম্য তার মামার সাথে কথা বলেছে। তাদের বাড়ির পাশে একটি ঘর বানিয়ে সৌম্য এখানে থাকবে জানিয়েছে। ভদ্রলোক অবাক হয়, কিন্তু খুশি-ও হয়৷ তিনি তাদের বাড়িতেই থাকতে বলেছে, কিন্তু সৌম্য তাতে স্বায় দেয়নি। সে আর সন্ধ্যা এখানে থাকলে একটা বাড়তি ঝামেলা হবে। সৌম্য’র এখন জমি কেনার মতো টাকা নেই। তাছাড়া সৌম্য তো এখানে সারাজীবন থাকবে না। আপাতত এই জায়গাটা-ই পার্ফেক্ট মনে হলো। সন্ধ্যাকে একা রেখে গেলে চিন্তামুক্ত থাকতে পারবে।
সৌম্য’র মামা সবকিছু ঠিক করে দিয়েছে। কয়েকজন মিস্ত্রি এনেছেন, তার আগে সব জিনিসপত্র সৌম্য’র সাথে গিয়ে কিনে এনেছেন।
সৌম্য’র পরনে লুঙ্গি, গায়ে সেন্ডো-গেঞ্জি। জিনিসপত্র এনে কাপড় বদলেছে। এগিয়ে গিয়ে আধবয়সী একজন লোককে জিজ্ঞেস করে,

– চাচা কিছু করা লাগলে বলুন।
ভদ্রলোক অবাক হয়ে বলে,
– তুমি কি করবা বাবা? তোমার কাজ-ই তো করছি।
সৌম্য মৃদুস্বরে বলে,,
– আপনারা যা করছেন, এটাই করব।
বয়স্ক লোকটি হাসলো। কতবাড়ির কাজ করে। এমন অফার পায়নি। তাই অবাক হয়েছে, সাথে একটু হাসলো। সৌম্য’র তার বাবার কথা মনে পড়ল। তার বয়স ছয় থেকে সাত বছর হবে, তখন তার মা বেঁচে ছিল। তাদের গ্রামে এমন বাড়ির কাজ হলে তার বাবা তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে সেই কাজের জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার পাশে বসিয়ে রাখতো। কথাগুলো ভেবে সৌম্য মৃদু হাসলো। অথচ আজ সে ওই বাড়ি না গেলেই তার বাবা খুশি। সে আর তার বোন গেলে-ই তার মুখ অন্ধকার হয়। সৌম্য খুব করে চায়, আল্লাহ যেন ওই বাড়িতে আর কখনো তাকে আর তার বোনকে না নেয়।
সৃজা সৌম্য’র পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,

– আপনাকে গ্রামের ছেলের লুকে ভালো লাগছে।
সৌম্য গম্ভীর গলায় বলে,
– আমি গ্রামের-ই ছেলে।
– কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছিল না, আপনার ড্রেসআপের জন্য।
সৌম্য ঘাড় ঘুরিয়ে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– প্রয়োজনীয় কিছু বলবেন?
সৃজা বিব্রতবোধ করে। আমতা আমতা করে বলে,
– আমি আপনার চেয়ে অনেক ছোট। আমাকে তুমি করে বলেন।
সৌম্য এবারে-ও বিরক্ত হয়ে বলে,
– আমি যাকে তাকে তুমি বলিনা।
সৃজা মন খারাপ করে বলে,
– তাহলে তুই বলুন।
সৌম্য রে’গে বলে,
– এটা আরও আগে বলিনা।

সৃজা ঢোক গিলল। সে তো ভালো করেই কথা বলছে। সৌম্য এমন রে’গে যাচ্ছে কেন? আমতা আমতা করে বলে,
– আমি পিঠা বানিয়েছি। আপনি একবার ভেতরে আসবেন?
সৌম্য ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
– যতগুলো বানিয়েছেন সবগুলো এখানে আনুন।
সৃজা একটু খুশি হলো। ভেতরে যেতে নিলে সৌম্য আবার-ও বলে,
– সবগুলো আনবেন। কারো জন্য একটা-ও রাখলে আনার প্রয়োজন নেই।
সৃজা বাঁকাচোখে তাকায় সৌম্য’র দিকে। কারো জন্য রাখবে না মানে? তার একটা ছোট ভাই আছে, বাবা, মা আছে। লোকটা কেমন যেন! সৌম্য উঠানে পাতা একটি চেয়ারে বসল। সৃজা এগিয়ে এসে বলে,
– আপনার বউ নেই জানি। কিন্তু লাভার আছে কি?
সৌম্য শক্ত চোখে তাকায় সৃজার দিকে। সৃজা মেকি হেসে বলে,
– এমনি শুনতে চাইছিলাম আর কি!
সৌম্য ছোট করে করে বলে,

– আছে।
সৃজা অবাক হয়, উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে,
– সত্যি ভাইয়া?
সৌম্য সৃজার ব্যবহারে অবাক হয়না। এরকম রিয়েকশন-ই বোধয় আশা করেছিল। মৃদুস্বরে বলে,
– হুম।
সৃজা হেসে বলে,
– নাম ইরাবতী তাই না?
সৌম্য তড়াক করে সৃজার দিকে তাকায়। সৃজা সৌম্য’র ভড়কানো দৃষ্টি দেখে ভালোই মজা পায়। উল্টো ঘুরে বাড়ির ভেতর দৌড়ে যেতে যেতে বলে,
– আপুটার কপাল পুড়েছে, আপনি অনেক খিটখিটে। আপুকে ভুলে গিয়ে তার কপাল বাঁচিয়ে দিন।
সৌম্য’র হাত নিশপিশ করল মেয়েটাকে সঠিক শিক্ষা দেয়ার জন্য।
সৃজা কিভাবে জেনেছে এতে অবাক হয়নি সৌম্য। কিন্তু বিরক্ত হলো। চেয়ারে হেলান দিয়ে ডান পা বা পায়ের উপর রেখে বা হাত বন্ধ চোখের উপর রাখে। এরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে,
– যা মনে রেখে আমরা ক’ষ্ট পাই, তার নাম মরিচীকা। আর আমার অধ্যায়ে ইরাবতী অর্থ মরীচিকা।

দুপুরের পর সন্ধ্যাকে নিয়ে আসমানী নওয়ান, শিমু আর শিমুর মা পার্লারে এসেছে সন্ধ্যার নাক ফুটো করার জন্য। সন্ধ্যার পরনে কালো শাড়ি, মাথায় হিজাব বাঁধা। ছোট থেকে এই অভ্যাস সৌম্য তাকে করিয়েছে। যখন অনেকটা ছোট ছিল, তখন সৌম্য নিজেই তাকে হিজাব পরিয়ে বাইরে বের করত। কথাগুলো ভেবে সন্ধ্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বা পায়ের নুপুরটি খোলেনি। ডান পা ফাঁকা। শিমু এটা দেখে সন্ধ্যাকে অনেকবার খুলতে বলেছিল, মানুষ তাকে দেখে জোকার বলবে বলেছিল, সন্ধ্যা খোলেনি। মানুষের কথা সে কেন ভাবতে যাবে? তার কথা কয়জন মানুষ ভাবে? সন্ধ্যার চোখেমুখে অসহায়ত্ব ঘিরে ধরে। কবে তার ভাইকে খুঁজে পাবে? সন্ধ্যা অপেক্ষার প্রহর গোনে।

শিমু সন্ধ্যাকে টেনে একটি চেয়ারে বসিয়ে দেয়। সন্ধ্যা আশেপাশে তাকালো। একটি মেয়ে নাক ফুটানোর মেশিন আনলে সন্ধ্যা একটু ভ’য় পায়। এখন কত বড় হয়েছে, না জানি কত-ই লাগবে। ভাবনার মাঝেই মেয়েটি মেশিন দ্বারা সন্ধ্যার নাকফুটো করে দেয়। সন্ধ্যার চোখজোড়া ভিজে যায় ব্য’থায়। তবে যতটা ভেবেছিল ততটা ব্য’থা পায়নি। শিমুর মা এগিয়ে এসে সন্ধ্যার থুতনিতে হাত রেখে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। সন্ধ্যার গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামা। অনেকটা ফর্সা-ই বলা যায়। নাকফুলের মাথায় ছোট্ট পাথর বসানো, যেটি জ্বলজ্বল করছে। ভদ্রমহিলা মৃদু হেসে বলে,
– মাশাআল্লাহ! আপা দেখ আমাদের জান্নাতকে কি সুন্দর লাগছে!

সন্ধ্যা শিমুর মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। জান্নাত নামটা নিয়ে সে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। এই ভদ্রমহিলা দু’জন তাকে এমনভাবে জান্নাত বলে ডাকে, যেন তার আসল নাম জান্নাত, আর সন্ধ্যা নাম নকল।
কাজ শেষে সন্ধ্যাকে নিয়ে সবাই পার্লার থেকে বেরিয়ে আসে। পাশে একটি দোকান থেকে শিমু কিছু কেনার জন্য যায়, এদিকে আসমানী নওয়ান আর তার বোন টুকটাক কথা বলায় ব্যস্ত। সন্ধ্যা আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছিল, হঠাৎ-ই তিনটে কু’কু’র সন্ধ্যার ডান পাশে ঘুরঘুর করে। সন্ধ্যা ঢোক গিলল। সাহস করে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। কিন্তু কু’কু’র গুলোকে তার দিকে আসতে দেখে সন্ধ্যা বাম দিকে পিছিয়ে যায়। এভাবে এগোতে এগোতে সন্ধ্যা অনেকটা দূরে চলে যায়। সাথে কু’কু’র গুলো-ও সন্ধ্যার দিকে এগোয়। একপর্যায়ে সন্ধ্যা ভ’য়ে দৌড় দেয়। পিছন পিছন কু’কু’র দৌড়ায়। সন্ধ্যার কান্না পাচ্ছে, এটা আবার কোথায় ফেঁসে গেল সে? মেয়েটির বাইরে বেরোনোর স্বভাব একেবারে নেই বললেই চলে। সেখানে হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে পড়ে সন্ধ্যার অবস্থা বেহাল। শাড়ি পরে দৌড়াতে গিয়ে বেচারি কয়বার যে পড়তে পড়তে বেঁচেছে। পায়ের জুতো কোথায় যে খুলে গিয়েছে তার হদিস নেই। হঠাৎ কারো সাথে জোরেসোরে এক ধাক্কা খেয়ে পড়তে নেয়, তার আগেই সন্ধ্যা দু’হাতে লোকটির শার্ট আঁকড়ে ধরে।

আকাশ রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল। তাকে কেউ ধরেছে বুঝতে পেরে দ্রুত মেয়েটির দিকে তাকালে সন্ধ্যার মুখ দেখতে পায় না, মাথা নিচু করে রাখায়। আকাশ রেগে সন্ধ্যাকে ধাক্কা দেয়। কোন ম্যানারলেস মেয়ে তাকে ধরেছে। মে’জা’জ খারাপ হয়ে যায় তার। সন্ধ্যাকে ধাক্কা দিয়ে হাত দিয়ে তার শার্ট ঝাড়ে, যেন তার শার্টে ময়লা লেগেছে।
এরপর সামনে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়ে-ও থেমে যায়। রাস্তায় সন্ধ্যাকে পড়ে থাকতে দেখে। আকাশের ধাক্কা খেয়ে বেচারির আর দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হয়নি। আকাশ অবাক হয়ে বলে,
– তুমি?
সন্ধ্যা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। আকাশ এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েও আবার হাত গুটিয়ে নেয়। গতকাল রাতে তাকে রিজেক্ট করেছে, আবার তাকে ধাক্কা দিয়ে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিয়েছিল, আকাশ কিচ্ছু ভুলে যায় না। অতঃপর গম্ভীর গলায় বলে,
– একাই ওঠো।
সন্ধ্যা আকাশের ব্যবহারে অবাক হয়। বেশ কসরত করে একা একা উঠে দাঁড়ায়। আকাশ সন্ধ্যার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দৃষ্টি বুলিয়ে বলে,

– কার বিয়ে খেতে যাচ্ছিলে? বিয়েতে-ও তো মানুষ এতো সাজে না।
আকাশের কথা শুনে সন্ধ্যার মুখ অটোমেটিক তার গালে চলে যায়। সে তো সাজেনি। এই লোকটা এসব আবোলতাবোল কি বলে? আকাশ আবার-ও বলে,
– এখানে কি করছ? বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বের হওনি তো!
সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। রা’গ হয়। অনুমান করে কত কথা বলে লোকটা। সন্ধ্যা আকাশের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে লিখতে শুরু করে। আকাশ কটমট দৃষ্টিতে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। এই মেয়েটি তাকে শুধু তেজ দেখায়! ফোনটা কিভাবে নিল দেখ! কবে যে তার এক চটকানি খাবে এ মেয়ে! বিড়বিড় করল, – বে’য়া’দ’ব মেয়ে!
সন্ধ্যা আকাশের দিকে তাক করে ধরে ফোন। যেখানে লেখা –

– আমি আপনার মায়েদের সাথে বাইরে এসেছিলাম। আমাকে কু’কু’র ধাওয়া করায় আমি হারিয়ে গিয়েছি। আমায় বাসায় পৌঁছে দিন প্লিজ! আর আপনার মাকে কল করে জানিয়ে দিন আমি আপনার সাথে। নয়তো উনি চিন্তা করবেন।
আকাশ লেখাটা পড়ে সন্ধ্যার হাত থেকে ফোন টান দিয়ে নিয়ে নেয়। এরপর তার মায়ের ফোনে কল করলে, তার মা ফোন রিসিভ করে। আসমানী নওয়ান এর কথা শোনার আগেই আকাশ বলে,
– তোমাদের আদরের বে’য়া’দ’ব মেয়ে সন্ধ্যা আমার সাথে। চিন্তা কর না মা।
সন্ধ্যা বিরক্ত হয়। তাকে সবসময় বে’য়া’দ’ব বলে। সে যথেষ্ট ভদ্র। আসমানী নওয়ান ছেলের কথায় একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এরপর রে’গে বলে,

– তুমি আমার জান্নাতরে কোথায় নিয়া গেছ?
আকাশ রে’গে যায়। একে সে এনেছে বাকি এই বে’য়া’দ’ব মেয়ে তার কাছে এসেছে? অতঃপর মে’জা’জ দেখিয়ে বলে,
– আমি তোমার জান্নাতকে জন্তুদের সুস্বাদু খাবার বানানোর জন্য সুন্দরবন রওনা হচ্ছি। তোমার জান্নাতের সাথে একেবারে জান্নাতে গিয়ে দেখা কর। এখন ঘুমাও।
বলেই খট করে কল কেটে দিল। সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
– কান ধর।
সন্ধ্যা আর কত অবাক হবে। আকাশ ধমকে বলে,
– কান ধর ইডিয়ট!
সন্ধ্যা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। হিজাবের উপর দিয়ে দু’হাতে দু’কান ধরল। আকাশ মনে মনে হাসে। তার সাথে বে’য়া’দ’বি করে কেউ ছাড় পায় না। এই মেয়ে-ও পাবে না। অতঃপর গম্ভীর গলায় বলে,
– উঠবস কর।

সন্ধ্যা বিস্ময় চোখে তাকায়। যদি-ও এই রাস্তা ফাঁকা। মাঝে মাঝে দু’একটা গাড়ি যাচ্ছে। তবুও এভাবে বাচ্চাদের মতো করে কান ধরে উঠবস করবে? আকাশ সন্ধ্যাকে চুপ দেখে বলে,
– আমি গেলাম তাহলে। তোমার যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যাও। হ্যাপি জার্নি!
কথাটা বলে আকাশ উল্টো ঘুরলে সন্ধ্যা দ্রুত আকাশের শার্ট টেনে ধরে। আকাশ তার শার্ট ধরে রাখা সন্ধ্যার হাতের দিকে তাকালে সন্ধ্যা আকাশের শার্ট ছেড়ে দেয়। আকাশ সন্ধ্যার দিকে তাকালে সন্ধ্যা বোঝালো সে উঠবস করবে। আকাশ মনে মনে হেসে উপর থেকে গম্ভীর গলায় বলে,

– তাড়াতাড়ি কর।
সন্ধ্যা ঢোক গিলে দু’হাতে দু’কান ধরে চোখ খিচিয়ে নেয়। সবসময় সে বেকায়দায় পড়ে, আর তারপর এসব উদ্ভট কাজ করতে হয় তাকে। সন্ধ্যা দ্রুত বসে পড়ল, আবার সাথে সাথে উঠল। আকাশ ফোনের ভিডিও অন করেছে।
সন্ধ্যা একবার উঠাবসা করে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– হয়নি। দশবার করতে হবে।
সন্ধ্যার কান্না পাচ্ছে। লোকটা এমন কেন? সন্ধ্যার দৃষ্টি দেখে আকাশের একটু মায়া হলো। অতঃপর বলে,
– আচ্ছা আর দু’বার বসো আর ওঠো।

সন্ধ্যা দাঁতে দাঁত চেপে আকাশের কথা অনুযায়ী আরও দু’বার কান ধরে ওঠাবসা করে। আকাশ ফোন এমনভাবে ধরেছিল, সন্ধ্যা বুঝতে পারেনি তার ভিডিও করছে লোকটি।
আকাশ তার কাজ শেষে ফোন পকেটে রাখে। এরপর সন্ধ্যার হাত ধরে রাস্তার ওপাশে যেতে যেতে একটু হাসলো। আচ্ছা জব্দ হয়েছে মেয়েটা।
সন্ধ্যার ইচ্ছে করল আকাশ যে হাতে তার হাত ধরেছে, এই হাত খামচে র’ক্তা’ক্ত করে দিতে। কিন্তু সে এখন অসহায়। উপায় থাকলে এরকম করে দৌড় দিত।
আকাশ তার গাড়ির দরজা খুলে সন্ধ্যাকে গাড়িতে উঠতে বলার আগে খেয়াল করল, – সন্ধ্যার পা খালি। অবাক হয়ে বলে,

– তোমার জুতো নেই?
সন্ধ্যার চোখেমুখে অসহায়ত্ব। আকাশ বুঝলো বোধয়। হতাশ কণ্ঠে বলে,
– নিজেকে কু’কু’রদের কাছে বিলিয়ে দিতে পারোনি বলে জুতো জোড়া দিয়ে দিয়েছ? ভালো, খারাপ না। গাড়িতে ওঠো।
সন্ধ্যা আকাশের অহেতুক কথা শুনে কি রিয়েকশন দিবে বোঝে না। গাড়িতে উঠে বসে। আকাশ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

এসেছিল ব্যবসার কাজে, এখন এই মেয়েকে নিয়ে তার ঘোরা লাগছে। আকাশ বিরক্ত হলো।
প্রায় ২০ মিনিটের মতো গাড়ি ড্রাইভ করে একটি জুতোর শোরুমের সামনে গাড়ি থামায়। এরপর সন্ধ্যাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। সন্ধ্যা বুঝল আকাশ তাকে জুতো কিনে দেয়ার জন্য এখানে এনেছে।
সন্ধ্যা এলোমেলো পায়ে হাঁটে। একবার এদিক-ওদিক তাকিয়েছিল। এরপর মাথা নিচু করে হাঁটে। আকাশ শোরুমের একজায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো। সামনে বসার জায়গা। আকাশ সন্ধ্যাকে বসতে বলে জুতো খোঁজে। কালো কালার একজোড়া জুতোর দিকে আঙুল তাক করে বের করতে বলে। ১৮-১৯ বছরের একটি ছেলে আকাশের দেখানো জুতো বের করে হাঁটু মুড়ে বসে। দু’হাতে জুতো দু’দিকে ভাঁজ করে, এক হাতে জুতো রেখে অপর হাত সন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে বলে,

– আপু আপনার পা আগায় দেন।
সন্ধ্যা ইতঃস্তত করে। ডান পা ধীরে ধীরে এগিয়ে দেয়। আকাশ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। ব্যাপারটা তার পছন্দ হচ্ছে না। এই ছেলে সন্ধ্যাকে জুতো পরাবে কেন? অদ্ভুদ! সন্ধ্যা পা এগিয়ে দেয়ার আগেই আকাশ একটি বসার টুল দু’হাতে টেনে নিয়ে বসে। এরপর বা পা জুতো সহ উঁচু জায়গাটায় রেখে বা হাতে ছেলেটির গাল চেপে ধরে ধমকে বলে,
– বউ কার?
ছেলেটি অবাক হয়। সন্ধ্যা ডান পা উপরে রেখেছে। আকাশের কথায় অবাক হয় মেয়েটা। ছেলেটি কি বলবে বোঝে না। সে তো জানে না মেয়েটি কার বউ। যেহেতু এই লোকটির সাথে এসেছে, এনার-ই হবে। সে অনুযায়ী ছেলেটি বলে,
– স্যার আপনার।
কথাটি বলার সাথে সাথে আকাশ ছেলেটির বাম গালে থা’প্প’ড় মেরে দেয়। অতঃপর রে’গে বলে,

– বউ আমার। পায়ে হাত দিচ্ছিস তুই। হিসাব তো মিলল না। তাই একটা ডোজ দিলাম।
এরপর আকাশ ছেলেটির হাত থেকে জুতো নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এরপর জুতো জোড়া নিচের ফ্লোরে শব্দ করে রেখে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,
– সাইজ চেক কর।
সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আকাশের দিকে। ওদিকে ছেলেটি গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আট বছর এই পেশায় আছে, আজকের মতো অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি বেচারার। কেমন রিয়েকশন দেয়া উচিৎ বুঝতে পারছে না। অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আকাশ স্বাভাবিক, যেন কিছুই হয়নি।
হঠাৎ অরুণ আকাশের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের কাঁধে হাত রেখে বলে,

– বুঝলাম না, বউ মানিস না। কিন্তু সময় মতো গলা ফাটিয়ে ঠিক-ই বউ বউ করিস। কাহিনী কি রে?
আকাশ থতমত খেয়ে তাকায়। এরপর সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে গলা ঝেড়ে বলে,
– আইনত বউ তো! খেয়াল না রাখলে পুলিশের হেফাজতে থাকতে হবে।
অরুণ মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– ওমা! তোকে যে পুলিশ ধরবে ওর বাড়ি কোথায়? ও থাকে কোথায়?
আকাশ অরুণের দিকে চেয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– তোর চোকির তলে।

অন্তঃদহন পর্ব ৯

অরুণ চোখ বড় বড় করে বলে,
– আমার চোকি? সেটা কোথায়?
আকাশ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– হাতালেই খুঁজে পাবি।
অরুণ অসহায় মুখ করে তাকায়। মনে হচ্ছে তার প্রেস্টিজ আজ সব পাঞ্চার হয়ে গেছে। আকাশের কথা শুনে সন্ধ্যা মাথা নিচু করে হেসে ফেলে।

অন্তঃদহন পর্ব ১১