অন্তঃদহন পর্ব ২৯

অন্তঃদহন পর্ব ২৯
DRM Shohag

সন্ধ্যা আকাশের দৃষ্টি দেখে ঢোক গিলল। ধীরে ধীরে বেশ কসরত করে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ায়। আকাশের দিকে তাকালে দেখল আকাশ তার দিকে এগিয়ে আসছে। সন্ধ্যা দ্রুত জায়গাটি প্রস্থান করার জন্য দু’পা বাড়ালে আকাশ সন্ধ্যার ডান বাহু টেনে, বা হাতে সন্ধ্যার গাল চেপে ধরে। রাগান্বিত স্বরে বলে,
– কিছুক্ষণ আগে বলেছি, তেজ কমাতে। উল্টে আরও বাড়াচ্ছ? ভদ্র মেয়ে হয়ে যাও সন্ধ্যামালতী। আমাকেও ভদ্র হয়ে থাকতে দাও। তোমার তেজ আমি রোজ রোজ হজম করব না। বুঝতে পেরেছ?

সন্ধ্যা দু’হাতে আকাশের হাত খামচে ধরেছে। রে’গে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আকাশ বিরক্ত হলো।
আসমানী নওয়ান দোতলায় এসেছিলেন সন্ধ্যা, শিমুকে দেখতে। মেয়ে দু’টো ঘুমিয়েছে কি-না, এজন্য। আকাশের ঘর থেকে এতো শব্দ, সাথে আকাশের রাগী স্বর শুনতে পেয়ে আকাশের ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। দুই ছেলেমেয়েকে ভিজে জুবুথুবু দেখে অবাক হয়ে বলে,
– কি করছ তোমরা?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়ের কণ্ঠে আকাশ সামনে তাকায়। কিছুটা বেখেয়ালি হয়, সন্ধ্যা শ’ক্তি খাঁটিয়ে আকাশকে দু’হাতে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসমানী নওয়ানের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
সন্ধ্যার ধাক্কা খেয়ে আকাশ দু’পা পিছিয়েছে। চোখমুখ শ’ক্ত করে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। রা’গে শরীর রি রি করছে। আর তো সহ্য করা যাচ্ছে না। কয়েকপা এদিক-ওদিক হেঁটে হাতের কাছে এলটি ফুলদানি পেয়ে রা’গে সন্ধ্যার দিকে ছুড়ে মা’রে। ফুলদানিটি সন্ধ্যার পাশ ঘেঁষে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। আসমানী নওয়ান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। সন্ধ্যাকে নিজের দিকে একটু টেনে নেয়। আকাশের দিকে চেয়ে রে’গে বলে,

– আকাশ কি করতাছ তুমি?
আকাশ রা’গে চিৎকার করে বলে,
– এমন বে’য়া’দ’ব মেয়েকে কেউ বউ মানবে? হুদাই এর জন্য বিয়ে না করে যৌবন শেষ করতে যাচ্ছিলাম। বে’য়া’দ’ব মেয়ে কোথাকার!
আসমানী নওয়ান রে’গে বলে,
– আকাশ কি কইতাছ ভাইবা কও!
আকাশ চোখ বুজল।

আসমানী নওয়ান কথাটা রে’গে বললেও হাতশ চোখে আকাশের দিকে চেয়ে রইল। এসব কথা সন্ধ্যার মনে কেমন প্রভাব পড়বে, ছেলেটা একবার-ও ভাবছে না। আকাশের এই হুটহাট রা’গকেই তিনি ভ’য় পান।
সন্ধ্যার মাথা নিচু। আকাশের কাজ আর কথা হজম করতে তার ক’ষ্ট হলো। সন্ধ্যার মনে আছে, ১১ মাস আগে এই বাড়ি থেকে সে সৌম্য’র সাথে যাওয়ার আগের দিন আকাশ এভাবেই তার দিকে একটি ফুলদানি ছুড়ে ফেলেছিল। কারণ তাকে ডিভোর্স দিতে পারেনি এইজন্য। কথাটা ভেবে সন্ধ্যার চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়ায়। সন্ধ্যা ঢোক গিলল। নিজেকে সামলালো। রা’গ হলো আকাশের উপর। সবসময় আকাশের সিদ্ধান্ত-ই কেন শেষ সিদ্ধান্ত হবে? সে কি মানুষ নয়? নিজেকে শ’ক্ত করে সন্ধ্যা। এরপর আসমানী নওয়ানের হাত থেকে ফোন নিয়ে রা’গে কাঁপতে কাঁপতে টাইপ করে,

– তোমার ছেলেকে বলে দাও খালাম্মা, আমি তাকে স্বামী মানার জন্য বসে নেই। সৌম্য ভাইয়াকে বলে ডিভোর্স দিয়ে দিব। আর তোমার ছেলেকে এটাও বলে দাও, আমাকে অবলা নারী ভেবে যেন আমার সাথে জোরজবরদস্তি করতে না আসে।
এরপর সন্ধ্যা আসমানী নওয়ানকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে তার ঘরের দিকে যায়। বা হাতে গালে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে নেয়।
আকাশ কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ের প্রতিটি পদক্ষেপ বে’য়া’দ’বির ইঙ্গিত!
এদিকে আসমানী নওয়ান লেখাগুলো পড়ে ঢোক গিলল। আকাশ এগুলো পড়লে আরও রে’গে যাবে। ফোন লুকানোর আগেই আকাশ খপ করে কেড়ে নেয় তার ফোন। লেখাগুলো পড়ে রা’গে সর্বশক্তি দিয়ে ফোন আঁচড়ে ফেলে। চিৎকার করে বলে,

– তোমার বোনের মেয়েকে বলে দিও মা, ওকে আমি ভুলেও অবলা নারী ভাবি না। চরম লেভেলের বে’য়া’দ’ব নারী ভাবি ওকে আমি। আর ও আমাকে স্বামী মানবে, ওর চৌদ্দ গুষ্টি-ও আমায় স্বামী মানবে।
আমায় ডিভোর্স দিবে? আর একদিন এসব বললে ওকে আমি মে’রে হসপিটাল ভর্তি করাবো বলে দিলাম। আগেই সাবধান হতে বলো মা তোমার জান্নাতকে। যদিও ওটা জান্নাত হবে না। আস্ত এক জা’হা’ন্না’ম। জীবনটা জ্বালিয়ে দিচ্ছে পুরো।
কথাগুলো বলে বড় বড় পা ফেলে ওয়াশরুমে চলে যায় আকাশ। শব্দ করে দরজা আটকায়। আসমানী নওয়ান হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে। তার ফোনের অস্তিত্ব নেই। এর জন্য তার আফসোস নেই। তার ছেলেমেয়েদের মধ্যে তো পুরো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাচ্ছে। এখন কি হবে?
কিছুকক্ষণ আগে আসমানী নওয়ানের পাশে এসে শিমু দাঁড়িয়েছে। সে নিজেও সন্ধ্যার লেখাটি পড়েছে, সাথে আকাশের কথা শুনলো। তার মাথা ঘুরছে। কি হচ্ছে এসব? আসমানী নওয়ান, শিমু দু’জনেই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আকাশ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। পরনে শুধু প্যান্ট। গায়ে কিছু জড়ালো না। উদাম গায়ে-ই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। রা’গ এখনো কমেনি, পদক্ষেপেই তা প্রকাশ পাচ্ছে। বড় বড় পা ফেলে সন্ধ্যার ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সন্ধ্যার সাহস টা আজ দেখবে সে। তাকে ডিভোর্স দিতে চায়? এই মেয়ের সাহস ছোটাবে আজ।
আসমানী নওয়ান আকাশের পিছু পিছু যায়, আর ডাকে,
– আকাশ দাঁড়াও। আকাশ?
আকাশ তো শুনলোই না। বরং সন্ধ্যার ঘরে গিয়ে ধারাম করে দরজা আটকে দেয়। আসমানী নওয়ান চোখ বড় বড় করে তাকায়। দরজায় চাপড় মে’রে বলে,
– আকাশ কিছু কইরো না। জান্নাতরে আমি বোঝামু। আকাশ দরজা খোলো।
শিমু নিজেও বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে বন্ধ দরজার দিকে।

সন্ধ্যা কয়েক মগ পানি ঢেলে গোসল করেছে। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। সন্ধ্যা চুল মুছলো না ঠিক করে। ভালো লাগছে না। এটুকু সময়েই চোখের বাঁধ মানেনি। এখনো টুপটুপ অশ্রু গড়াচ্ছে। সন্ধ্যা বিরক্ত হয়। কি হয়েছে এই চোখ দু’টোর আজ। মুখে দু’বার পানি দেয়। নিজেকে সামলে নিতে চায়। এরপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে উল্টো ঘুরে ওয়াশরুমের দরজা আটকাতে নেয়, তখন-ই আকাশ ঝড়ের বেগে পিছন থেকে সন্ধ্যাকে জাপ্টে ধরে। সন্ধ্যা ঝাঁকুনি খায়। না দেখেও বুঝল এটা আকাশ। দু’হাতে আকাশকে ঠেলে সরাতে চায়। উল্টো ঘুরতে চায়। একটা-ও পারলো না। আকাশ শ’ক্ত করে তার দু’হাত ধরে রেখেছে।

আকাশ রে’গে আসলেও, সন্ধ্যাকে এভাবে পেয়ে রা’গটা হয়তো নিভতে বসেছে। সন্ধ্যার ভেজা চুলের গন্ধ আকাশের নাকে এসে লাগে। আকাশ একটুখানি চুলের ঘ্রাণ টেনে নিল। এরপর মৃদু রাগী কণ্ঠে বলে,
– কোথায় পেয়েছ এতো সাহস? আমাকে ডিভোর্স দিতে চাও? যে হাতে এসব ফা’ল’তু ওয়ার্ড লিখেছ, সেই হাত একদম ভেঙে ফেলব সন্ধ্যামালতী।
সন্ধ্যা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে মোচড়ামুচড়ি করে। আকাশ আরেকটু শ’ক্ত করে ধরল সন্ধ্যাকে। ঘাড়ে পড়ে থাকা ভেজাচুলগুলো বাম গাল দিয়ে সরিয়ে দেয়। সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। আকাশকে সরাতে চায়, কিন্তু পারে না। আকাশ মুখ নামিয়ে সন্ধ্যার কাঁধে দু’টো চুমু আঁকে। এরপর মৃদুস্বরে বলে,
– ডিভোর্স দেয়ার কথা ভুলেও মনে আনবে না সন্ধ্যামালতী।
কথাটা বলে সন্ধ্যার কাঁধে ছোট ছোট চুমু আঁকে। সন্ধ্যা ঢোক গিলল। সে কাঁপছে। আকাশ চোখ বুজে সন্ধ্যার ঘাড়ে নাক ঘষে বিড়বিড় করে,

– রা’গিয়ে দিয়েছ তুমি। রা’গ কমছে না সন্ধ্যামালতী। তোমাকে থা’প্প’ড় মা’র’তে ইচ্ছে করছে। সেটাও পারছি না।
কাঁধের উপর গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ায় সন্ধ্যা থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। শত চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছে না আকাশের বন্ধন থেকে। আকাশের উদাম উত্তপ্ত শরীরে সন্ধ্যার পিঠ ঠেকিয়ে আছে। এমন অদ্ভুদ অনুভূতিতে সন্ধ্যার নিঃশ্বাস ভারী হয়।
সন্ধ্যার ভেজা চুলে আকাশের উদাম বুক ভিজে একাকার। আকাশ এখনো চোখ বুজে রেখেছে। সন্ধ্যার কাঁধে ঠোঁট চেপে অস্পষ্ট স্বরে বিড়বিড় করে বলে,
– স্যরি!

কথাটা বলে-ই আকাশ সন্ধ্যার ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে দেয়। সন্ধ্যার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আকাশকে ধাক্কা দিতে চাইল। মোচড়ামুচড়ি করল, কিন্তু আকাশের শ’ক্তির সাথে পারলো না। দাঁতে দাঁত চেপে শ’ক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। চোখজোড়া বুজে নিয়েছে। সময় পেরিয়ে গেলেও আকাশের কোনো হেলদোল না দেখে সন্ধ্যা আবার-ও মোচড়ামুচড়ি করে। ব্য’থায় চোখের কোণে জলকণা জমেছে। সন্ধ্যার সেদিকে খেয়াল নেই। আকাশের হঠাৎ এমন ছোঁয়া সময়ের সাথে সাথে মেয়েটিকে নেতিয়ে ফেলে। ভেতরটা হাসফাস করে।
আকাশ প্রায় পাঁচ মিনিটের মাথায় সন্ধ্যার কাঁধে বসানো দাঁত সরিয়ে নেয়। ডান হাত উঠিয়ে নিচের ঠোঁটে লেগে থাকা তরল র’ক্তের ছিটেফোঁটা বুড়ো আঙুলের সাহায্যে মুছে নেয়। ঘরে অন্ধকার হওয়ায় সন্ধ্যার কাঁধের ক্ষ’তটুকু অস্পষ্ট ঠেকল আকাশের কাছে। সন্ধ্যার ডান হাত ছেড়ে দেয়ার পর-ও সন্ধ্যাকে শ’ক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আকাশ একটু হাসলো। মৃদুস্বরে বলে,

– সন্ধ্যামালতী? ভালো লেগেছে?
সন্ধ্যা হঠাৎ পিছু ফিরে আকাশকে ধাক্কা দেয়। আকাশ একটু পেছায়। বিরক্ত হলো সে। মেয়েটির এই দু’হাত কাটবে না-কি বাঁধবে সেটাই ভাবছে। দু’দিনে খামচে আর ধাক্কায় তার যা তা অবস্থা করেছে। গোসল করতে গেলেই গায়ে জ্বলুনি ধরে যায়। একা একা দাঁড়িয়ে থাকলেও মনে হয়, এই বুঝি তার সন্ধ্যামালতী তাকে ধাক্কা দিল!
আকাশ হঠাৎ ডান হাত বাড়িয়ে সন্ধ্যার গলায় জড়ানো ওড়না টান মেরে নিয়ে নেয়। সন্ধ্যা হতভম্ব হয়ে যায়। ল’জ্জা পায় ভীষণ। যদিও ঘরের লাইট নেভানো। তবুও একটু-আধটু আলোয় দেখতে পায়, দু’জন দু’জনকে। সন্ধ্যা নিভে যায়। কি করবে ভেবে পায় না। আকাশ সন্ধ্যার পাতলা ওড়নাটি হাতে পেঁচায় আর এগোয় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা ঢোক গিলে পেছায়। আকাশ সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বাঁকা হেসে বলে,

– বলেছিলাম তেজ দেখিও না। শুনলে না। উল্টে বললে ডিভোর্স দিবে। এই সাহস ছুটানোর একমাত্র উপায় তোমার ভার্জিনিটি ন’ষ্ট করা।
সন্ধ্যা ভীত হয়। ঢোক গিলে। অন্ধকারে ভ’য় পায় সে। তখন রা’গে ঘরের লাইট নেভানোটা খেয়ালে না আসলেও এখন ভ’য় পাচ্ছে। মৃদু আলোয় আকাশের এরকম কথা সাথে হাসি সন্ধ্যার গায়ে কাঁপুনি ধরায়। সে নিজেকে শ’ক্ত করতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। ভেতর থেকে তাকে যেন কিছু ভেঙে দিচ্ছে। তার স্মৃতির পাতায় জমায়িত একটি কালো অধ্যায় তার দ্বারে কড়া নাড়ছে। সন্ধ্যার শরীর মৃদু কাঁপছে। আকাশ এগিয়ে আসছে। সন্ধ্যা কাঁপা শরীর নিয়ে পেছায়। এক পর্যায়ে তার পায়ের গতি কমে আসে। কাঁপুনি বাড়ে।

সন্ধ্যার পায়ের গতি কমিয়ে যাওয়ায় আকাশ সন্ধ্যার নাগাল পায় খুব সহজেই। ডান হাতে ওড়না পেঁচানো।
বা হাতে সন্ধ্যার কোমর জড়িয়ে সন্ধ্যাকে নিজের সাথে চেপে ধরে।
সন্ধ্যার চোখেমুখে ভ’য় হানা দেয়। আকাশ লক্ষ্য করল সন্ধ্যার অতিরিক্ত কাঁপুনি। সন্ধ্যার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়৷ ঝাপসা আলোয় সন্ধ্যার ভীতি মুখখানি অবলোকন করে। কিছু বলতে চায়, তার আগেই সন্ধ্যা চোখ বুজে পুরো শরীর ছেড়ে দেয়।
আকাশ দ্রুত সন্ধ্যাকে দু’হাতে আগলে নেয়। বিস্ময় চোখে তাকায়। এটা কি হলো? ডান হাতে পেঁচানো ওড়না ছুঁড়ে ফেলে সন্ধ্যার গালে হাত দিয়ে ডাকে,
– সন্ধ্যামালতী?
একটু পর আবার-ও থেমে থেমে বলে,

– কিছু করব না, তাকাও।
সন্ধ্যার জ্ঞান নেই। আকাশ ঢোক গিলল। চোখেমুখে ভ’য় হানা দেয়। কাঁপা কণ্ঠে বলে,
– স্যরি! চোখ খোলো সন্ধ্যামালতী।
সন্ধ্যার কোনো রেসপন্স না পেয়ে আকাশ সন্ধ্যাকে নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। বা হাতে সন্ধ্যাকে নিজের সাথে শ’ক্ত করে ধরে। ট্যাপ ছেড়ে পানি নিয়ে সন্ধ্যার মুখে ছিটিয়ে দেয়। সন্ধ্যার গালে আলতো হাতে চাপড় মেরে ডাকে,
– সন্ধ্যামালতী?
নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকা সন্ধ্যাকে দেখে আকাশ ঢোক গিলল। ভীষণ অপরাধবোধে ভুগল। সে সবসময় উল্টাপাল্টা কাজ করে। সন্ধ্যাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ভীত কণ্ঠে বলে,
– স্যরি সন্ধ্যামালতী! চোখ খোলো প্লিজ!

ইরাকে কেবিনে দেয়া হয়েছে। ডক্টর ইরাকে দেখে বলেছে, সে এখন ভালো আছে। তবে শরীর অত্যধিক দুর্বল হওয়ায় জ্ঞান হারিয়েছে। একটি স্যালাইন দিয়েছে ইরাকে। আগামীকাল অথবা পরশুদিন ইরাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে। সৌম্য সবার আগে আসমানী নওয়ানের নাম্বারে কল করে। কিন্তু ফোন বন্ধ দেখায়। অনেকবার কল দিয়েছে। প্রতিবার একই উত্তর। আকাশের নাম্বারেও ফোন দিয়েছে, কিন্তু কেউ ফোন ধরে না। সৌম্য কেবিন থেকে বেরিয়ে ইরার মায়ের নাম্বারে কল করতে চায়, সামনে চোখ পড়লে থেমে যায়। অবাক হয় আসমানী নওয়ান, আকাশ আর শিমুকে দেখে। আকাশ ভাইয়া তো একটু আগেই হসপিটাল থেকে গেল, আজ বাড়িতে থাকবে বলে। তাহলে এখন হসপিটালে কেন? আর আসমানী নওয়ান, শিমু এরাই বা হসপিটালে কেন এসেছে? এসে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কেন? ফেনেও পাচ্ছে না। এতো এতো প্রশ্ন নিয়ে সৌম্য এগিয়ে গিয়ে বলে,

– আপনারা কখন এসেছেন? আর কেন এসেছেন?
আকাশ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আসমানী নওয়ান ঢোক গিলল। তারা সন্ধ্যাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। কিন্তু সৌম্যকে কি বলবে? ছেলেটা বোনের অবস্থা শুনলে আবার কি-না কি করে! শিমু-ও চুপ করে আছে। সৌম্য সবাইকে চুপ দেখে বিরক্ত হয়। সন্ধ্যাকে না দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
– আমার বোনু কোথায়?
তখন-ই পিছন থেকে নিয়াজ আকাশকে বলে,
– আকাশ সন্ধ্যার ব্যাপারে কিছু কথা আছে। এদিকে এসো।
কথাটা শুনতেই সৌম্য দ্রুত পিছু ফিরে। আকাশ নিয়াজের দিকে এগিয়ে আসে, পাশাপাশি সৌম্য এগিয়ে এসে অবাক হয়ে বলে,

– আমার বোনুকে নিয়ে আপনি কি বলবেন?
নিয়াজ সৌম্য’কে সন্ধ্যার ভাই হিসেবে আগে থেকেই চেনে। মৃদুস্বরে বলে,
– আমার কেবিনে এসো।
কথাটা বলে নিয়াজ তার রুমের দিকে যায়। পিছু পিছু আকাশ, সৌম্য-ও যায়। সৌম্য’র ভ্রু কুঁচকে যায়। সে কিছু বুঝতে পারছে না। তাছাড়া তার বোনু কোথায়? ঘাড় বাঁকিয়ে আকাশের উদ্দেশ্যে বলে,
– আমার বোনু কোথায়?
আকাশ চুপ। সৌম্য রে’গে বলে,
– প্রবলেম কি আপনার? আমার বোনু কোথায় বলছেন না কেন?
আকাশ রে’গে তাকায় সৌম্য’র দিকে। এমনিতেই মনের অবস্থা করুণ। তার মধ্যে আরেকটা জুটেছে। রে’গে বলে,
– নিজের বোনকে নিজে খুঁজে নাও।
সৌম্য কটমট দৃষ্টিতে তাকায়। এদের বাড়ি তার বোনুকে রাখাই ভুল হয়েছে। আজকেই শেষ। এখন থেকে তার বোনুকে তার কাছেই রাখবে। এরপর গটগট পায়ে নিয়াজের রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে যায়। আকাশ-ও গিয়ে চেয়ার টেনে বসে।

নিয়াজ আকাশ আর সৌম্য’র দিকে তাকালো। এরপর গলা ঝেড়ে বলে,
– সন্ধ্যার প্যানিক অ্যাটাক হয়েছিল, এজন্য সে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।
নিয়াজের কথা শুনে আকাশ চিন্তিত হলো। সৌম্য অবাক হয়ে বলে,
– মানে? আমার বোনু কোথায়?
নিয়াজ অবাক হলো না। সৌম্য যেহেতু এখানে ছিল। সৌম্য জানে না সন্ধ্যার কথা, এটা নিয়াজ জানে। তাই মৃদুস্বরে বলে,
– কিছুক্ষণ আগে আকাশ সন্ধ্যাকে সেন্সলেস অবস্থায় হসপিটাল নিয়ে এসেছে।
সৌম্য কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। কি হলো তার বোনুর?
নিয়াজ,, সৌম্য, আকাশকে দেখে অবাক হলো। সন্ধ্যার এই ব্যাপার তো নরমাল। তার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, আজ থেকে ১১ মাস আগে সে সন্ধ্যাকে কেমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়েছিল। মেয়েটি যে এখনো এতোটা সুস্থ এতেই নিয়াজ অবাক হয়। সৌম্য’র উদ্দেশ্য বলে,

– সন্ধ্যাকে কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছিলে?
সৌম্য ঢোক গিলে উত্তর করে,
– না।
নিয়াজ মৃদুস্বরে বলে,
– ওর অন্যরকম বিহেভ লক্ষ্য করনি কখনো?
সৌম্য চুপ থাকলো। সে বুঝতে পেরেছে নিয়াজ কেন এসব বলছে। নিয়াজ-ই তো তার বোনুকে বাঁচিয়েছিল। লোকটির ঝণ সত্যি-ই সে কখনো শোধ করতে পারবে না। নিয়াজের কথায় সৌম্য ভাবুক হলো। সন্ধ্যা অন্ধকার ভ’য় পায়। তার মনে আছে, সে এই শহরে আসার পর মাঝে মাঝে সে সন্ধ্যার ঘরে গিয়ে দেখত, সন্ধ্যা ঘুমিয়ে গিয়েছে। সে ঘরের লাইট অফ করে ঘর থেকে বেরোতে নিলে সন্ধ্যা ধড়ফড় করে উঠে বসত। সৌম্য দ্রুত তার বোনুর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলে, সন্ধ্যা হাঁপাতে হাঁপাতে ইশারায় লাইট জ্বালাতে বলত। সৌম্য ঘরের লাইট জ্বালালে সন্ধ্যা শান্ত হয়ে যেত। সৌম্য অবাক হত, সন্ধ্যার এরকম ব্যবহারে। কারণ সে যখন ঢাকায় পড়তে এসেছিল, তখন থেকে সন্ধ্যা তাদের গ্রামের বাড়িতে অন্ধকার ঘরে একাই থাকতো। কিন্তু এখন পারেনা।
সৌম্য এরপর থেকে সন্ধ্যার ঘরের লাইট কখনো আর নেভাতো না। সন্ধ্যা সবসময় ঘরের লাইট জ্বালিয়ে ঘুমায়। তারপর থেকে সন্ধ্যা স্বাভাবিক-ই ছিল। আজ হয়ত কারণটি ধরতে পারল সৌম্য।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিয়াজের উদ্দেশ্য বলে,

– ও অন্ধকার ভ’য় পায়। লাইট নিভিয়ে ঘুমাতে পারেনা।
নিয়াজ উত্তর করে,
– একটি সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাও। ঠিক হয়ে যাবে। আরও আগেই দেখানো উচিৎ ছিল।
সৌম্য ছোট করে বলে,
– জ্বি।
কথাটা বলে সৌম্য দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।
নিয়াজ আকাশের দিকে তাকায়। আকাশের মাথা নিচু।
সন্ধ্যাকে মূলত নিয়াজ দেখেনি। দেখেছে তার ফ্রেন্ড। ১১ মাস আগে যে মেয়েটি সন্ধ্যাকে দেখেছিল আজ-ও সেই দেখেছে। তাকে কিছু বলেছে। কিন্তু নিয়াজ আকাশকে বলতে একটু বিব্রতবোধ করছে। অবাক হয়, ছেলেটি তার বউকে এতো ভালোবাসে অথচ মেয়ের মেন্টাল কন্ডিশনের কথা একবার-ও ভাবেনি? এমন তো নয়, আকাশ জানেনা। এসব ভাবনা রাখে। অস্বস্তি দূরে ঠেলে মৃদুস্বরে বলে,

– আকাশ আমার মনে হয়, আপাতত তোমার স্ত্রীর থেকে দূরত্ব মেইনটেইন করা উচিৎ।
কথাটা শুনে আকাশ চোখ বুজল। চোখদু’টো অসম্ভব লাল। সৌম্য’র কানে কথাটা যেতেই দরজার কাছে এসে তার পা থেমে যায়। রা’গে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার। ডান হাত মুঠো করে। নিয়াজের সামনে সিনক্রিয়েট করতে চাইলো না। নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল।
বাইরে এসে সৌম্য একটি চেয়ারে বসে। আসমানী নওয়ান এখানেই আছে। টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সন্ধ্যার কাছে শিমুকে পাঠিয়েছে। সৌম্য’কে দেখে আসমানী নওয়ান জিজ্ঞেস করে,
– নিয়াজ কি কইল আব্বা?
সৌম্য যেমন তার বোনের ক’ষ্টে কথা বলতে পারছে না, তেমনি রা’গে শরীর কাঁপছে তার। সে নিজেও জানেনা, আকাশকে সে কি করবে। তবুও ছোট করে বলে,
– তেমন কিছু না।
আসমানী নওয়ান আর কিছু বলল না। ছেলেটাকে কেমন যেন লাগছে।

সন্ধ্যার জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। মলিন মুখে মেঝের দিকে চেয়ে আছে মেয়েটা। পাশে শিমু বসা। শিমুর সন্ধ্যার জন্য খারাপ লাগছে, কেন যে অজ্ঞান হয়েছে তা তো জানেনা।
কিন্তু তার আকাশের জন্য বেশি খারাপ লাগছে। আকাশ ভাইয়া সন্ধ্যার জন্য কত ক’ষ্ট পেয়েছে। সেসব তারা নিজ চোখে দেখেছে। আজকেও সারাটা পথ সন্ধ্যাকে নিয়ে কেমন ছটফট করছিল। অথচ সন্ধ্যা আজ কিভাবে লিখল, সে আকাশ ভাইয়াকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।
এক পর্যায়ে শিমু বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– ভাবি তুমি আকাশ ভাইয়াকে একটু-ও বুঝবে না? কেন এতো কষ্ট দিচ্ছ তাকে? কেন মেনে নিচ্ছ না? কেন ডিভোর্স দিতে চাইছ?

সন্ধ্যা শিমুর কথা শুনে অবাক হলো। মলিন মুখটা আরও মলিন হলো। সে আকাশকে ক’ষ্ট দিচ্ছে? সে ডিভোর্স দেয়ার কথা একবার বলেছে বলে শিমু তার প্রতি বিরক্ত। অথচ আকাশ ডিভোর্স পেপারে সাইন অব্দি করেছিল। সেটা নরমাল? সে আকাশকে মানছে না বলে যেন সে কত বড় দোষী! আর আকাশ তাকে ডিভোর্স দিতে না পারায় তাকে আ’ঘা’ত করতে যাচ্ছিল। এটাও কিছু না?
সন্ধ্যার চোখজোড়া ঝাপসা হয়। নিজেকে সামলে নেয় সন্ধ্যা। মলিন মুখখানায় প্রাণহীন এক হাসি ফোটায়। শিমুর হাত থেকে শিমুর ফোন নিয়ে কিছু টাইপ করে শিমুর সামনে ধরে।
– আমার বউ হওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই। আমার মা তোমাদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল, আর তোমরা আমার সহজ-সরল মা-কে গুটি বানিয়ে বড়লোক বাড়িতে ঢুকে পড়লে? আমার স্ট্যাটাস সম্পর্কে কোনো আইডিয়া আছে তোমাদের? যতসব রা’বি’শের দল!

হ্যাঁ হ্যাঁ ডিভোর্স দিতে চাই। এতো জেরা করছ কেন আমাকে? আমি তো প্রথমদিন-ই বলে দিয়েছি, আমি ওই বে’য়া’দ’ব মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।
মেসেজটি পড়ে শিমু অবাক হয়ে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা আবার-ও নির্জীব হেসে টাইপ করে,
– তোমার ভাইয়া আমাকে তার স্ট্যাটাস দেখিয়েছিল শিমু। আজ কেন তোমার ভাই আমাকে মানতে চায়? আমি তার খালাতো বোন বলে? আমার সৌম্য ভাইয়া চাকরি করে বলে? এই দু’টোর যেকোনো একটির জন্য-ই তো তিনি আমাকে চায়। স্ট্যাটাস দেখে আমাকে চায়। শোনো শিমু, যারা স্ট্যাটাস দেখে তোমাকে চাইবে, তারা তোমার পা ধরে চাইলে-ও তাদের তুমি চাইবে না।

আমি জানি, তোমার ভাইয়ের দোষ নেই। কিন্তু তোমার ভাই যেদিন আমাকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিল, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম, সেদিন-ই আমি অর্ধ-ধ’র্ষি’ত হলাম। এর দায় তোমার ভাই এড়াতে পারবে? না-কি আমি দু’দিনে ভুলতে পারবো, বল তো?
দেখ শিমু, আমি অল্পতেই কেঁদে ফেলা মেয়ে। এদিক থেকে অনেক বোকা আমি, কিন্তু আত্মসম্মানহীন নই। আমার সৌম্য ভাইয়া আমায় কখনোই আত্মসম্মাহীন হতে শেখায়নি। কিন্তু আমি ১১ মাস আগে তোমার ভাইয়ের এসব কথা শুনেও, আমি তাকে চেয়েছি। আবেগে পড়ে ছোট্ট পাগলামি-ও করেছি। কিন্তু আজ আমি হেসেখেলে তাকে চাইতে পারছি না। আমার সম্মানে লাগছে।
তোমার ভাইয়া যখন ইচ্ছে ডিভোর্স দিতে চাইলো, আর যখন ইচ্ছে হলো ভালোবাসলো। আমিও পুতুলের মতো সব মেনে নিলাম। আমি মেয়ে বলে এতোটা ভ্যালুলেস হতে চাই না শিমু।
শিমু অবাক হয়। লেখাগুলো পড়ে অর্ধধ’র্ষিত কথাটি শিমুর মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। এরকম কিছু তো সে জানেনা। অতঃপর বিস্ময় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

– অর্ধধ’র্ষিত মানে?
সন্ধ্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অবাক হলো না, শিমু এসব জানেনা। জানার কথাও না। সন্ধ্যা এড়িয়ে গিয়ে মাথা নেড়ে বোঝায় কিছু না। শিমু সন্ধ্যার দিকে তাকালে দেখল সন্ধ্যার চোখে পানি ভর্তি। মলিন মুখে বলে,
– তুমি আকাশ ভাইয়াকে চাইছ না, আবার আকাশ ভাইয়ার জন্যই কাঁদছ ভাবী?
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। দৃষ্টি নিচু করে নেয়। চোখ থেকে টুপটুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। সে অস্বীকার করল না, আকাশের জন্যই তার অশ্রু ঝড়ে। আকাশ তার জীবনের প্রথম পুরুষ। যাকে সে হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। আকাশের জীবনে অন্যকেউ এসেছে ভেবে, তাকে ডিভোর্স দিতে চায় ভেবে, কত চোখের পানি ফেলেছে।
আকাশের সাথে দেখা হওয়ার পর যখন আকাশের জোরজবরদস্তি দেখেছে, তখন সন্ধ্যার খারাপ লেগেছে। রাগ হয়েছে। এখনো হয়। তাকে আকাশ পুতুল কেন ভাবে? ১১ মাস আগে যেমন নিজের ইচ্ছে তার উপর চাপিয়ে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিল, আজও তেমনি নিজের ইচ্ছেয় তাকে জোরজবরদস্তি করে নিজের কাছে আটকে রাখতে চায়। তার দু’টো কথা শুনতে চায়নি একটাবার। সন্ধ্যার দম আটকে আসে।

ভীষণ আফসোস হয়,, যে মানুষটা তার ইচ্ছের একআনাও মূল্য দাম দেয় না, সে কেন সেই মানুষটাকেই ভালোবেসে আটকে গেল!
কথাগুলো ভেবে সন্ধ্যার চোখ থেকে টুপ করে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়ায়। ঝাপসা চোখে ফোনে টাইপ করে,
– যাদের আত্মসম্মান থাকে,, তারা ক’ষ্ট সহ্য করতে জানে বোন। কিন্তু ক’ষ্ট কমানোর ঔষধ চাইতে জানেনা।
লেখাটি লিখে সন্ধ্যা শিমুর ফোন শিমুর হাতে দেয়। ধীরে ধীরে বেড থেকে নামে। ওয়াশরুমে যাবে। ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। কারো সামনে কাঁদতে চায় না আর।
শিমু সন্ধ্যাকে হেল্প করতে চাইলে সন্ধ্যা বোঝায়, লাগবে না। দুর্বল শরীর টা টেনে নিয়ে যায়। শিমু দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ভাবলো সন্ধ্যার লেখাগুলো আসমানী নওয়ানকে দেখাবে। খালাম্মা সব ভালো সামলাতে পারে।

সন্ধ্যা ওয়াশরুমে এসে ডান হাত দেয়ালে ঠেকিয়ে দাঁড়িয়েছে। বা হাতে মুখ চেপে নিঃশব্দে পানি ফেলে। তার দমবন্ধ লাগছে। আকাশের কাছে আসা, ওই অন্ধকার এসব তার পুরনো ক্ষ’ত জাগিয়ে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলায়। সামনে আয়না। সন্ধ্যা তাকায়। কাঁধে নতুন জখম হওয়া স্থানটি চোখে লাগছে। সন্ধ্যা নির্জীব চোখে সেদিকে চেয়ে রইল। বা হাতে জায়গাটায় আলতো করে হাত রাখলে কেঁপে ওঠে। তার পাশেই ছোট একটি আবছা দাগ, যেটা মেশার পথে। তবে পুরোপুরি মেশেনি। নখের আচড় হয়ত! সন্ধ্যা ঢোক গিলে। গলায় নজর দেয়। কিছু কিছু দাগ আবছা হয়ে এখনো তার শরীরে বিরাজ করছে। সন্ধ্যা মাথা নিচু করে তার দু’হাতের দিকে তাকালো। দু’হাতের কব্জির উপর বেশ অনেকগুলো দাগ।
সন্ধ্যা কাঁপা হাতে তার পরনের জামার বাম পাশে একটুখানি উঁচু করল। এখানে একটি গভীর ক্ষ’ত ছিল। যে দাগ এখনো স্পষ্ট।

সন্ধ্যার দমবন্ধ লাগলো। চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। আজ অনেকদিন পর পুরনো ক্ষ’ত আকাশ খুচিয়ে দিল। সন্ধ্যার ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে। টিকতে না পেরে এক পর্যায়ে দু’হাতে মাথার চুলগুলো টেনে ধরে। ফুঁপিয়ে কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ে। মাথার সব চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। তার জীবনটা কেন এমন হলো? সে কখনো ইচ্ছে করে কোনো অপরিচিত ছেলের সামনে মাথার কাপড় ফেলত না। অথচ একটা নোংরা হাত তাকে কত বা’জেভাবে ছুঁয়েছে, যেসব ক্ষ’ত আজ-ও তাকে বহন করে বেড়াতে হয়।
অনেকক্ষণ থেকে শিমুর ডাক শুনতে পাচ্ছে সন্ধ্যা। সেদিকে খেয়াল নেই তার। হঠাৎ ভাইয়ের ডাক কানে আসে। সন্ধ্যা ঢোক গিলে। দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। মাথাটা কেমন ঘুরে উঠল। পড়ে যেতে নিলে দেয়াল ধরে নিজেকে সামলায়। চোখমুখের অবস্থা খারাপ। ট্যাপ ছেড়ে চোখেমুখে পানি দেয়। যেটুকু পারলো নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দেয়।
সৌম্য সন্ধ্যার বিধ্বস্ত মুখের দিকে তাকায়। ঢোক গিলল ছেলেটা। মৃদুস্বরে বলে,

– তুই ঠিক আছিস বোনু?
সৌম্যকে দেখে সন্ধ্যার মনে আগের চেয়ে অনেকটা শান্তি পায়। জোরপূর্বক মুখে একটুখানি হাসি ফোটায়। প্রচন্ড মাথা ব্য’থা আর চোখ ব্য’থা করছে। থেকে থেকে সামনে কেমন অন্ধকার দেখছে। ডান হাতে দেয়াল ধরে বা পা ওয়াশরুমের বাইরে রাখে। মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। ডান পা বাড়াতে চায়, সাথে বা হাতে সৌম্য’কে ধরতে চায়, তখন-ই চোখমুখ সব অন্ধকার দেয়, হেলে পড়ে যেতে নিলে সৌম্য দ্রুত তার বোনুকে দু’হাতে আগলে নেয়। ভীত কণ্ঠে ডেকে ওঠে,
– বোনু?
সন্ধ্যা বোধয় জ্ঞান হারিয়েছে আবার-ও। সৌম্য’র চোখজোড়া ঝাপসা হয়। সন্ধ্যাকে জড়িয়ে নিয়ে ভাঙা গলায় বলে,
– আমি আর তোকে কাঁদতে নিষেধ করবা বোনু। আর তোকে শ’ক্ত হতে বলব না। তুই সুস্থ হয়ে যা বোনু।

আকাশ নিয়াজের রুম থেকে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। আসমানী নওয়ান তাকালো আকাশের দিকে। তিনি নিয়াজের ফ্রেন্ড এর থেকে শুনেছে সন্ধ্যার ব্যাপারে। সে জানতো, সন্ধ্যা স্বাভাবিক থাকতে পারবে না। এজন্যই সে বারবার দরজা ধাক্কিয়ে আকাশকে ডাকছিল। হসপিটালে সন্ধ্যাকে আনার সময় সন্ধ্যার ঘাড়ের ক্ষ’ত টুকু তার চোখ এড়ায়নি। ভদ্রমহিলা ল’জ্জা পায়নি, বরং প্রচন্ড পরিমাণে আকাশের উপর রে’গে আছেন।
আসমানী নওয়ান এগিয়ে গিয়ে আকাশের সামনে দাঁড়ায়। রে’গে বলে,
– তুমি কি মানুষ হইবা না আকাশ? জান্নাত একদিন ডিভোর্সের কথা কইলো, তাতেই তোমার এতো লাগলো। আর তুমি যে ডিভোর্স পেপারে সাইন করছিলা, ভুইলা গেছ সেসব?
আকাশ ঢোক গিলল। মাথা নিচু তার। আসামনী নওয়ান একই সুরে বলে,

– আসলে জান্নাতের জন্য তুমি নও।
আকাশ মায়ের দিকে তাকায়।
আসমানী নওয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আকাশের সাথে সন্ধ্যার বিয়ে দেয়াটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল মনে হলো। সে সন্ধ্যাকে তার কাছে রাখতে গিয়ে মেয়েটার জীবনে যেটুকু সুখ ছিল, সেটুকু-ও কেড়ে নিয়েছেন। আকাশের সাথে বিয়ে না দিলে আকাশের বাবা-ও সন্ধ্যা, সৌম্য’র সাথে এতো কাহিনী করত না। হয়ত এতোগুলো মানুষ মরতো না।
আসমানী নওয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে মলিন গলায় বলেন,

– জোর কইরা কিছু হয়না, এইডা আমি দেরিতে হইলেও বুঝছি। আমি আর জান্নাতরে ক’ষ্ট দিতে পারমু না। জান্নাত তোমারে না চাইলে, ওরে তোমার ভুইলা যাইতে হইব আকাশ।
কথাটা শুনে আকাশ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। বুকের বা পাশে চিনচিন ব্য’থা হলো। করুণ কণ্ঠে ডাকে,
– মা???
আসমানী নওয়ান সাড়া দিলেন না। ঝাপসা চোখ নিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে। শিমু আসমানী নওয়ানের পাশেই বসা। সৌম্য সন্ধ্যার কেবিনে গেলে সে বেরিয়ে এসেছিল।

সন্ধ্যা অতিরিক্ত দুর্বল সাথে মানসিক স্ট্রেসে জ্ঞান হারিয়েছে। ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে সন্ধ্যাকে।
সৌম্য সন্ধ্যার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। চোখমুখ শ’ক্ত। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এসে দু’হাতে আকাশের কলার ধরে রাগান্বিত স্বরে বলে,
– এই আপনি কি মানুষ? আমার বোনুকে মে’রে ফেলবেন আপনি? আপনার বাবা সফল হয়নি, এখন আপনি সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে মাঠে নেমেছেন? জ’বাই করে ফেলব আমি আপনাকে মিস্টার আকাশ।
আকাশ রে’গে সৌম্য’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– নিজের সীমা অতিক্রম করনা। আমি ডায়লগ নয়, কাজ করে দেখাই। তুমি সন্ধ্যামালতীর ভাই না হলে, আজ আমি নিজেই তোমাকে জ’বা’ই করতাম।
সৌম্য ঢোক গিলল। রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে আবার-ও তেড়ে আসতে নিলে আসমানী নওয়ান আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়ে ধমকে বলে,

– সৌম্য আকাশ তোমার বড় ভাই।
সৌম্য থেমে যায়। আকাশের দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
– বড় ভাই মাই ফুট। বড় ভাই বলে, সে আমার বোনুকে মে’রে ফেলবে। আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখব?
আকাশ রে’গে কিছু বলতে গেলে আসমানী নওয়ান আকাশের হাত ধরে বলে,
– আকাশ একটা কথা-ও কইবা না।
মায়ের কথায় আকাশ দমলো। চোখ বুজে রা’গ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।
আসমানী নওয়ান সৌম্যকে বোঝানোর স্বরে বলে,
– আমি তো তোমারে সব কইছি আব্বা। আবার ভুল বুঝতাছ কেন?
সৌম্য বিদ্রূপ হেসে বলে,

– ওহ রিয়েলি? শুধুমাত্র আ’গুনে পু’ড়ি’য়ে মা’রলেই কি সেটাকে মা’রা বলে? আপনার ছেলের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে সে আমার বোনটাকে শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে দেয়নি। জোরজবরদস্তি শুরু করেছে। দয়া করে এটা বলবেন না, আপনার ছেলে ভালোবাসে বলে এরকম করছে। ভালোবাসলে অপর পাশের মানুষটা কি চায়, সবার আগে এটা শুনতে হয়। আপনার ছেলে ভুল করেও কি শুনতে চেয়েছিল, আমার বোন কি চায়? ১১ মাস আগে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিল জোর করে। আজ আবার-ও জোর করে আমার বোনকে চাইছে। আমার বোনু কোনো পুতুল না। আর না তো আমার বোনু ফেলনা। ওর ভাই এখনো বেঁচে আছে।
আসমানী নওয়ান বলার মতো কিছু পায়না। সৌম্য ভুল কিছু তো বলেনি। আকাশ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌম্য’র দিকে। সৌম্য আকাশের দিকে চেয়ে শ’ক্ত গলায় বলে,

– এসবকে ভালোবাসা নয়, কা’পু’রু’ষ’তা বলে। আমি আমার বোনুকে কখনো কোনো কা’পু’রু’ষের হাতে তুলে দিব না।
আকাশ ঢোক গিলল। সৌম্য’র সব কথা তার বুকে তীরের মতো বিঁধল। কিন্তু সৌম্য’র লাস্ট কথায় রা’গে শরীর রি রি করতে লাগলো। দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে এপাশ-ওপাশ কয়েকবার হাঁটলো। এক পর্যায়ে বসার চেয়ারে একটা লাথি বসিয়ে ঝড়ের বেগে এগিয়ে এসে সৌম্য’র শার্টে কলার ধরে দাঁতে দাঁতে চেপে বলে,
– কা’পু’রু’ষ আমি না, তুই। যারা নিজের ভালোবাসা অন্যের হাতে তুলে দেয়, এই উদার নামে বে’য়া’দ’ব গুলো কা’পু’রু’ষ। ওদের জন্য আমার বোনের মতো ইরা’রা মৃত্যুর সাথে লড়াই করে।
আমি সেই বে’য়া’দ’ব উদার নই৷ আমি আমার ভালোবাসা ছিনিয়ে নিই। এটাই আমি৷ যদি তোদের ভাষায় এটাকে ভালোবাসা না বলে, আই ডোন্ট কেয়ার। আমার আর আমার সন্ধ্যামালতীর মাঝে ভুলেও আসবি না, কা’পু’রু’ষ কোথাকার।

আমার বোন না চাইলে তোর মতো কা’পু’রু’ষের হাতে আমার বোনকে তুলে দিবনা। তোর মাঝে ছিনিয়ে নেয়ার প্রবণতা নেই। হাজার হোক উদার মানুষ তোরা। তাই ইরা না চাইলে তুই ইরাকে পাবিনা, এটা কনফার্ম। কিন্তু আমি আমার সন্ধ্যামালতীকে অবশ্যই পাবো। মাঝে যে আসবে ওর ক’ব’র খুঁড়তে দু’মিনিট টাইম-ও নিব না৷ মাইন্ড ইট!
কথাগুলো বলে আকাশ সৌম্যকে ধাক্কা দেয়। এরপর ডান হাতের শার্টের হাতা একটানে কনুই পর্যন্ত উঠিয়ে গটগট পায়ে সন্ধ্যার কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়৷

কথায় আছে দুর্বল জায়গায় আ’ঘা’ত হানলে মানুষ চুপ হয়ে যায়৷ সৌম্য’র অবস্থা-ও তেমন। আকাশের কথাগুলো তো ফেলে দেয়ার নয়৷ সবচেয়ে বড় কথা, তাদের জন্যই তো ইরাবতীরা মৃত্যুর সাথে লড়াই করে৷ তার ইরাবতী করেছে। সৌম্য’র চোখের কোণে পানি। আসলেই সে মানুষ হিসেবেই ব্যর্থ। সে না পেরেছে তার বোনকে রক্ষা করতে, না পেরেছে ইরাবতীকে ভালো রাখতে, না পেরেছে নিজে ভালো থাকতে। সত্যি-ই কি সে কা’পু’রু’ষ?
আসমানী নওয়ান এগিয়ে এসে সৌম্য’র হাত ধরে বলে,
– আব্বা আকাশরে যতটা খারাপ ভাবতাছ, ও অতটা খারাপ নয়। তোমারে যেসব বলল, ওইগুলো মনে রাইখো না আব্বা। ওয় রা’গ কইরা এমন করে। একটু পরেই দেখবা তোমারে বুকে টাইনা নিব।
সৌম্য ঝাপসা চোখে আসমানী নওয়ানের দিকে তাকালো। এই মানুষটাকে পেয়ে তার মনে হয়, সে হারানো মা ফিরে পেয়েছে। আব্বা ডাকটায় কি যে শান্তি খুঁজে পায়! ভাঙা গলায় বলে,

– আরেকবার আব্বা ডাকবেন?
আসমানী নওয়ান এতো দুঃখের মাঝেও একটু হাসলো ছেলের বাচ্চামি আবদারে। সৌম্য’র গালে হাত দিয়ে ডাকে,
– ছোট আব্বা?
সৌম্য সাথে সাথে আসমানী নওয়ানকে জড়িয়ে ধরল। পাশ থেকে শিমু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই সৌম্য স্যারটা তাকে যা ধমক দিত, ভাবলেই এখনো কেঁপে ওঠে। তার এমন রূপ দেখে শিমুর মাথায় হাত।

আকাশ আজ ১১ মাস পর শার্ট পরে বাইরে বেরিয়েছে। তার সন্ধ্যামালতীর জন্য-ই পাঞ্জাবি পরার অভ্যেস করেছে। আজ তার সন্ধ্যামালতীর জন্যই এতোগুলো মাস পর শার্ট পরে বাইরে বেরিয়েছে। পুরনো কোচকানো শার্ট। আকাশের সেদিকে খেয়াল নেই। সে তো উদাম শরীরেই বেরোচ্ছিল। তার মা এই শার্ট এগিয়ে দিলে সে এলোমেলোভাবে বোতাম লাগিয়ে বেরিয়েছে। সন্ধ্যার চিন্তায় সে পা’গ’লপ্রায়। এসব কিছু মাথায় নেই।
আকাশ সন্ধ্যার কেবিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যার মলিন মুখে দৃষ্টি নিবদ্ধ। আকাশের চোখেমুখে অসহায়ত্ব। তার সন্ধ্যামালতী কে ছুঁয়েছে? ওদের ছাড়বে না সে। একটা একটা করে খুঁজে বের করে, ভ’য়ং’কর মৃ’ত্যু দিবে। একটা পোকাকেও ছাড়বে না। তার বাবাকেও না। কথাগুলো ভাবতেই রা’গে চোখমুখ লাল হয়ে যায় আকাশের। চোখ বুজে শ্বাস টেনে নিল।
একটু পর চোখ মেলে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। দৃষ্টি শিথীল হয়। সৌম্য’র বলা সব কথা ফেলে দেয়নি সে। হয়ত, সত্যিই তার সন্ধ্যামালতীর কথা শোনা উচিৎ ছিল। কিন্তু তার সন্ধ্যামালতী যে অন্যের হাত ধরেছিল, এসব সে কিভাবে মানবে?
এগিয়ে এসে সন্ধ্যার মাথার কাছে চেয়ার টেনে বসে। চোখের কোণে জলকণা জমতে শুরু করেছে। ডান হাত বাড়িয়ে সন্ধ্যার মাথায় আলতো হাত রাখে। বেশ কিছুক্ষণ সন্ধ্যার ফ্যাকাশে মুখটার দিকে চেয়ে থাকে। তার সন্ধ্যামালতী কবে স্বাভাবিক হবে? কবে সে তার সন্ধ্যামালতী সব ক’ষ্ট ধুয়ে মুছে সাফ করতে পারবে? এমন নিস্তেজ সন্ধ্যাকে দেখে তার বুকে ব্য’থা বাড়ছে। বিড়বিড় করে,

– তুমি শুধু আমার সন্ধ্যামালতী। আই প্রমিস, আর কখনো তোমার সাথে জোর করবনা।
এরপর আকাশ বা হাতে ঝাপসা চোখজোড়া ডলে নেয় একবার। একটুখানি ঝুঁকে সন্ধ্যার কপাল বরাবর তার কপাল রেখে চোখ বুজে বিড়বিড় করে,
– তোমাকে ভেবে আমার এই দু’চোখ বেয়ে কতটা অশ্রু ঝরেছে, তা কি তুমি জানো সন্ধ্যামালতী?
তোমাকে ভাবতে গিয়ে আমার হৃদয় কতশতবার চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ভেঙেছে, সেই আওয়াজ কি তোমার কানে কখনো পৌঁছেছে সন্ধ্যামালতী?
এটুকু বলে থামে আকাশ। ঢোক গিলে ভাঙা গলায় বলে,

অন্তঃদহন পর্ব ২৮

– আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করব। তুমি শুধু আমার হয়ে থেকো সন্ধ্যামালতী। তোমার অন্তরে শুধু আমাকে রেখ। আমি তোমার প্রেমের দহনে অনন্তকাল পু’ড়তে রাজি।
কথাগুলো বলতে গিয়ে আকাশের বন্ধ চোখের পাতা বেয়ে টুপ করে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে সন্ধ্যার চোখের পাতার উপর পড়ে।

অন্তঃদহন পর্ব ৩০