অন্তঃদহন পর্ব ৩৬ (২)

অন্তঃদহন পর্ব ৩৬ (২)
DRM Shohag

– ডিস্টার্ব কর না বউ। রে’গে যাচ্ছি আমি।
কথাটা বলে আকাশ সন্ধ্যার গলা থেকে মুখ তুলে সন্ধ্যার মুখের উপর মুখ নিয়ে যায়। সন্ধ্যার দু’চোখের পাতায় দু’টো করে চুমু আঁকে। এরপর সন্ধ্যার পিঠের নিচে হাত দিয়ে সন্ধ্যাকে তার উপর উঠিয়ে নেয়। ডান হাত সন্ধ্যার ঘাড়ের পিছনে, চুলের ভাঁজে রেখে আবার-ও নিজের বাসনা পূরণে ব্যস্ত হয়।

সৌম্য আর ইরার ঘুম আসছিল না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে বাগানের দিকে আসছিল। ইরা, সৌম্য দু’জনেই টুকটাক কথা বলছে। সময় যত পেরোয়, সৌম্য’র গলা আরও কাছ থেকে পায়, সন্ধ্যা আকাশকে ঠেলে সরিয়ে উঠতে চাইলো, কিন্তু আকাশের শ’ক্তির সাথে পারছে না। একসময় বেশ কসরত করে সন্ধ্যা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাঁপায়। আকাশ বিরক্ত হয়। সন্ধ্যাকে আবার-ও টেনে নিতে চাইলে সন্ধ্যা হাত দিয়ে আকাশকে আটকাতে গিয়ে আকাশের ডান গালে থা’প্প’ড়ের মতো হয়ে যায়। আকাশ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। সন্ধ্যা নিজেও বুঝতে পারেনি এমনটা হবে। মেয়েটা অসহায় চোখে তাকায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আকাশের প্রচন্ড রা’গ হলো। চোয়াল শ’ক্ত করে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। আকাশের দৃষ্টিতে সন্ধ্যা ভ’য় পায় একটু।
আকাশ সন্ধ্যার কোমর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে শ’ক্ত হাতে সন্ধ্যাকে ঠেলে তার উপর থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর এক সেকেন্ড-ও সময় ন’ষ্ট না করে উঠে দাঁড়ায়। চোখেমুখে প্রচন্ড রা’গ। ইচ্ছে তো করছে সন্ধ্যার দু’গালে দু’টো থা’প্প’ড় লাগাতে। ডান হাত মুঠো পাকিয়ে চোখ বুজে নেয়।
সন্ধ্যা শাড়ির আঁচল ঠিক করে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। খারাপ লাগছে মেয়েটার। এভাবে থা’প্প’ড় মা’রা উচিৎ হয়নি। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে থা’প্প’ড় মা’রেনি। কাছে ফোন নেই। থাকলে আকাশকে বলত, সে ইচ্ছে করে মারেনি। সন্ধ্যা বুঝেছে, আকাশ রে’গে গিয়েছে। একটু আগে তারদিকে ভীষণ রে’গে তাকিয়েছিল৷ কি করবে বুঝতে পারছেনা মেয়েটা।

আকাশকে একদম স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্ধ্যা ঢোক গিলল। অনেক দোনামোনা করে সন্ধ্যা ডান হাত এগিয়ে নিয়ে আকাশের হাত ধরলে আকাশ সাথে সাথে সন্ধ্যার হাত ঝাড়া মে’রে সরিয়ে দেয়। চোখের পলকে এগিয়ে এসে সন্ধ্যার গাল চেপে ধরে। রাগান্বিত স্বরে বলে,
– বউ না তুমি আমার? কাছে আসতে পারব না আমি? ইচ্ছে না থাকলে ভালোভাবে বলা যায় না? থা’প্প’ড় দিলে কেন?
সন্ধ্যা ঢোক গিলে। ভীত চোখে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশের কণ্ঠ বেশ জোরে ছিল, যার ফলে সৌম্য আর ইরা দ্রুতপায়ে এদিকে এগিয়ে আসে। আকাশ আর সন্ধ্যাকে এভাবে দেখে দু’জনেই অবাক হয়। সৌম্য তার ফোনের ফ্লাশ আকাশ আর সন্ধ্যার দিকে তাক করে অবাক হয়ে বলে,

– কি হয়েছে?
সৌম্য’র উপস্থিতি আকাশের রা’গে যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করল।। বোন থা’প্প’ড় মে’রে দূরে সরায়। ভাই এসে তাদের মধ্যে বা হাত ঢোকায়। আকাশ সন্ধ্যার গাল আগের চেয়েও শ’ক্ত করে চেপে ধরে। সন্ধ্যা গালে ব্য’থা পায়।
আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,
– কথা বলছ না কেন? বলো? কি প্রবলেম তোমার?
সন্ধ্যা ভ’য়ে কেঁপে ওঠে। আকাশ রে’গে তাকিয়ে আছে সন্ধ্যার দিকে।
সৌম্য এগিয়ে এসে বলে,

– আকাশ ভাইয়া বোনুকে ছাড়ুন। ও ব্য’থা পাচ্ছে।
আকাশ চোখ বুজল। রা’গে মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর পারছে না এদের নিয়ে৷ রা’গ সাথে চরম বিরক্ত হয়ে সন্ধ্যার গাল ছেড়ে সন্ধ্যার কাঁধ ধরে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে সৌম্য’র বুকে ঠেসে ধরে। সৌম্য, সন্ধ্যা, ইরা তিনজনেই অবাক হয় আকাশের কান্ডে। বিস্ময় চোখে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁতে চেপে বলে,
– ফিডার খাস তো তুই। থাক, ভাইয়ের কোলে উঠে বসে থাক। আমার আশেপাশে আসলে মার একটাও মাটিতে পরবে না।
কথাগুলো বলে আকাশ সন্ধ্যার কাঁধ ছেড়ে দেয়। এরপর সৌম্য’র দিকে ভস্ম করে দেয়া চোখে চেয়ে বলে,

– তোমার প্রাণের বোনুকে কোলে নাও। কোলে নিয়ে ফিডার খাওয়াও বসে বসে।
কথাগুলো বলে আকাশ সন্ধ্যার দিকে একবার কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বড় বড় পা ফেলে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। রা’গে শরীর রি রি করছে। মে’জা’জ আজ চরম লেভেলের খারাপ হয়েছে। যাস্ট নিতে পারছেনা এদের।
এদিকে সৌম্য, ইরা, সন্ধ্যা হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে আকাশের প্রস্থানের দিকে।
সৌম্য নিজেকে সামলে সন্ধ্যাকে তার সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,

– কি হয়েছে বোনু? তোকে বকল কেন আকাশ ভাইয়া? আর এভাবেই বা বলল কেন?
সন্ধ্যা তার ভাইয়ের দিকে চেয়ে ঢোক গিলল। কি বলবে সে? আকাশ তার কাছে আসতে চেয়েছিল বলে, সে থা’প্প’ড় মেরেছে? এটা কিভাবে বলবে? পাশ থেকে ইরা বলে,
– কি হয়েছে সন্ধ্যা?
সন্ধ্যা সৌম্য আর ইরার দিকে তাকায়, যারা তার দিকে প্রশ্নাত্মক চোখে চেয়ে আছে। সন্ধ্যা সৌম্য’র হাত থেকে ফোন নিয়ে টাইপ করে,

– কিছু না ভাইয়া। উনি আমার উপর রা’গ করেছেন। আমি যাচ্ছি।
এরপর সৌম্য’র হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে সন্ধ্যা দৌড় দেয় আকাশ যেদিকে গিয়েছে সেদিকে। সৌম্য, ইরা দৌড়ানো সন্ধ্যার দিকে তাকালো। এরপর একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দু’জনেই হাসল। সৌম্য স্বাভাবিক হয়ে বলে,
– আকাশ ভাইয়ার ব্যবহার টা মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে। এরকম ব্যবহার করার মানে হয়?
ইরা জবাবে বলে,
– সন্ধ্যা তো বলল, আকাশ ভাইয়া রে’গে গিয়েছে। বাদ দে। ওদের মধ্যের ব্যাপার।
একটু থেমে মৃদু হেসে বলে,

– সন্ধ্যা অনেক পাল্টে গিয়েছে। আকাশ ভাইয়াকে বুঝতে শিখেছে, ভালো লাগছে দেখে।
সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ইরার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে মৃদুস্বরে বলে,
– বোনুকে অনেক ভালো থাকতে দেখার তৃষ্ণা আমার বহুদিনের। মা মা’রা যাওয়ার পর থেকে ও হাতে গোনা কয়দিন যে হেসেছে, স্মৃতির পাতা হাতড়ালে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।
ইরার মুখ মলিন হয়। বলে,
– তুই কতদিন হেসেছিস সৌম্য?
সৌম্য একটু হেসে উত্তর দেয়,
– তুই আর বোনু যেদিন যেদিন হাসতি।
একটু থেমে বলে,

– মা, তুই আর বোনু আমার প্রাণ। মা তো সেই কবেই রেখে গেল। তোরা কখনো আমায় ছেড়ে যাস না। হয়ত এখন আমার অনেক আত্মীয় আছে। কিন্তু তুই আর বোনু ছাড়া আমার বেঁচে থাকা খুব মুশকিল হয়ে যাবে ইরাবতী।
ইরার চোখের কোণে পানি। গত পাঁচদিন আগে সৌম্য তার বাবার কবর দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল তাকে। ইরা ভীষণ কেঁদেছিল সেদিন। এরপর আর কাঁদেনি। কিন্তু থেকে থেকে দমবন্ধ লাগে। সে বাবাকে ছাড়া কয়টাদিন থাকতেই তার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর সন্ধ্যা, সৌম্য ছোট থেকে বাবা, মা কাউকেই পাশে পায়নি৷ কত কষ্ট করেছে এরা দুইভাইবোন। ইরা তো নিজেই সাক্ষী এসবের। ইরা ভাঙা গলায় বলে,

– আমি তোকে কখনো ছেড়ে যাব না সৌম্য।
সৌম্য বেশ অনেকক্ষণ চুপ থাকলো। বাগানের এক কোণায় দাঁড়িয়েছে। দৃষ্টি আকাশের পানে৷ ধরা গলায় বলে,
– আমার আর বোনুর ভাগ্য টা অতটা ভালো নয় ইরাবতী। দুঃখ আমাদের পিছু ছাড়ে না। সুখ দেখলে ভীষণ ভ’য় লাগে। মনে হয়, এই বুঝি দুঃখ হাজির হলো!
ইরা সৌম্য’র বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে রইল। বন্ধ চোখ বেয়ে টুপ করে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। মনে মনে খুব করে আল্লাহকে বলল,
– আল্লাহ আমার সৌম্যকে আর দুঃখ দিওনা।

সন্ধ্যা পিছু পিছু দৌড়ে আসছে, আকাশ বুঝতে পেরেও দাঁড়ালো না। উল্টে পায়ের গতি বাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। আকাশকে পায়ের গতি বাড়াতে দেখে সন্ধ্যার অসহায় লাগলো। সে তো ডাকতেও পারছে না। দ্রুতপায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে মেয়েটা। সিঁড়ির মাথায় উঠে দেখল আকাশ তার রুমে ঢুকছে। সন্ধ্যা আবার-ও দৌড় দিল। এক দৌড়ে আকাশের ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
আকাশ দরজা লাগাতে নিলে, সামনে সন্ধ্যাকে দেখে থেমে গেল। এলোমেলো সন্ধ্যাকে একপলক দেখে সন্ধ্যার মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। অসহায় চোখে তাকালো। আকাশের এতো রা’গ কেন মেয়েটা ভেবে পায় না।

এগিয়ে গিয়ে বেশ কয়েকবার দরজায় ধাক্কা দেয়। কিন্তু আকাশ দরজা খুলল না। সন্ধ্যা তো ডাকতে পারবে না। ভীষণ অসহায় লাগছে তার। আরও অনেকক্ষণ দরজা ধাক্কালো, কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া নেই। সন্ধ্যার চোখের কোণে পানি জমলো। সে ইচ্ছে করে আকাশকে মা’রেনি, এটুকু বলতে পারলেও শান্তি পেত। আকাশ তাকে ভুল বুঝে কত রা’গ দেখালো। সন্ধ্যা আবার-ও দরজা ধাক্কায়। খুব করে ডাকতে চাইলো আকাশকে। কিন্তু গলায় আওয়াজ তো বের হয়না। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার।
সৌম্য, ইরা সন্ধ্যাকে আকাশের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজা ধাক্কাতে দেখে অবাক হয়। সৌম্য এগিয়ে এসে ডাকে,
– বোনু?
ভাইয়ের ডাকে সন্ধ্যা কান্না গিলে নিল। মাথা নিচু করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। সৌম্য মৃদুস্বরে বলে,

– কি হয়েছে বোনু?
সন্ধ্যা মাথা তোলে না। ইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কি হয়েছে সন্ধ্যা? বলো আমাদের?
সৌম্য আকাশের বন্ধ দরজার দিকে তাকালো একবার। বিরক্ত হলো। তার বোন যদি অপরাধ করেও থাকে, তাতে এমন করার কি আছে? অ’স’হ্য’ক’র লোক একটা। অতঃপর সন্ধ্যার দিকে চেয়ে কিছুটা আওয়াজ করে বলে,
– আকাশ ভাইয়া তোকে বাইরে রেখে দরজা আটকে দিয়েছে বোনু? তুই আমার সাথে চল। আর জীবনেও আকাশ ভাইয়ার আশেপাশে আসবি না। আয়।
সৌম্য কথাটা বলার সাথে সাথে আকাশ দরজা খুলে দাঁড়ায়। সৌম্য’র দিকে খেয়ে ফেলা চোখে তাকায়। সৌম্য ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। কথাটা জোরে বলেছে আকাশকে শোনানোর জন্যই। কান টেনেছে, মাথা বেরিয়েছে। তার বোনটা ক’ষ্ট পাচ্ছে, আর এই লোক ঘরের দরজা আটকে আরামে বসে আছে। ইরা মিটিমিটি হাসলো। সন্ধ্যা অবাক হয়ে তাকায় আকাশের দিকে।
আকাশ ঘরের ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে সৌম্য’র কলার ধরে দাঁতে দাঁত বলে,

– আমার বউয়ের কানে কু’মন্ত্রণা দিচ্ছ? তোমার সাহস তো কম না!
সৌম্য ভ্রু কুঁচকে বলে,
– বোনুকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন, তো কি করব?
আকাশ দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– সব দোষ তোমার। আমার বউকে কিছু শেখাতে পারোনি। এখন এসেছে আরেক কু’মন্ত্রণা দিতে?
ভুলেও আমার বউকে উল্টাপাল্টা বলে ভুলাতে আসবেনা।
কথাটা বলে আকাশ সৌম্যকে কিছুটা ধাক্কা দেয়। সৌম্য এক পা পিছিয়ে যায়। বিরক্ত হয় আকাশের কাজে ও কথায়।
আকাশ এক সেকেন্ড-ও সময় নষ্ট না করে সন্ধ্যার হাত ধরে টেনে ঘরের ভেতর গিয়ে সৌম্য’র মুখের উপর ঠাস করে দরজা আটকে দেয়।
সৌম্য হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বন্ধ ঘরের দরজার দিকে চেয়ে রইল। ইরা সৌম্য’র হাত ধরে টেনে তাদের ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,
– তুই ইচ্ছে করে আকাশ ভাইয়াকে রা’গা’স।
সৌম্য একটু হাসলো। কিছু বলল না।

আকাশ তার ঘরে এসে সন্ধ্যার হাত ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যার দিকে একবার তাকালো-ও না। বড় বড় পা ফেলে বিছানায় গিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে।
সন্ধ্যা আকাশের দিকে চেয়ে রইল। আকাশের পরনে শুধু একটি সাদা প্যান্ট। ঘরে এসে হয়ত পাঞ্জাবি খুলেছে। ফর্সা পিঠ লাইটের আলোয় জ্বলজ্বল করছে। সন্ধ্যা আকাশকে আগে এভাবে দেখলেও খেয়াল করেনি। তবে আজ খেয়াল করছে। আকাশের গায়ের রঙ আর তার গায়ের রঙের মাঝে অনেক তফাৎ। কথাটি ভাবলেই সন্ধ্যার মন খারাপ হয়। গ্রামে থাকতে সবসময় শুনেছে, ছেলেরা নিজেদের চেয়ে আরেকটু সুন্দর মেয়ে বিয়ে করতে চায়। আরেকটু ফর্সা মেয়ে বিয়ে করতে চায়। তার সৎ মা-ও তাকে গায়ের রঙ নিয়ে অনেক কথা শোনাতো। ছেলেরা শ্যামা হলে, ফর্সা মেয়ে চায়। সেখানে আকাশ নিজেই কত ফর্সা, আর সে চাপা রঙের। আকাশের কি এটা নিয়ে মন খারাপ হয়? আবার ভাবে, আকাশ যে তাকে ভালোবাসে। কিন্তু আকাশ তাকে ভালোবাসলেও তার গায়ের রঙ নিয়ে আকাশের মন খারাপ হয় না তো? এটা কি সম্ভব নয়?

হঠাৎ আকাশকে তার উপর এভাবে রা’গ’তে দেখে মেয়েটির মাথায় উদ্ভট সব চিন্তা আসে। এসব ভেবে সন্ধ্যার আরও মন খারাপ হয়।
আকাশ উল্টো হয়ে শুয়ে থাকলেও, তার সামনে থেকে একটু ডানদিকে সরে একটা আয়না আছে। যেখানে সন্ধ্যাকে দেখা যাচ্ছে। আকাশ মাথা নিচু করে রাখা দাঁড়ানো সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে। সন্ধ্যাকে একটুও নড়তে না দেখে গম্ভীর স্বরে বলে,

– দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও তোমার ভাইয়ের কাছে। তোমার প্রাণের ভাই তোমাকে ডাকছে, যাও। এখানে কি?
সন্ধ্যার মাথা এখনো নিচু। হঠাৎ আকাশের কথায় কেঁপে ওঠে। একটু নড়েচড়ে দাঁড়াতেই আকাশ ধমকে বলে,
– এই ঘর থেকে এক পা বের হও শুধু। তোমার দু’পা কেটে এক পা তোমার ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিব, আরেকপা তোমার হাতে ধরিয়ে দিব। যতসব বে’য়া’দ’ব বউ-শা’লা এসে জুটেছে আমার কপালে।
সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায় পিঠ ফিরিয়ে রাখা আকাশের দিকে।
আকাশ চুপ হয়ে গেল। আয়নায় সৃষ্ট সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে। যদিও এখন রা’গ পড়ে গিয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যার কাছে যায় না। ওই সময়ে থা’প্প’ড়, ব্যাপারটা এখন-ও আকাশের ঠিক হজম হচ্ছে না।

সন্ধ্যা আবার-ও মাথা নিচু করে নেয়। সে এই ঘর থেকে বেরোলে আকাশ আরও রে’গে যাবে। কিন্তু সে এই ঘর বের না হলে কোথায় থাকবে? এই ঘরে? কথাটা ভেবে সন্ধ্যা ঢোক গিলল। আকাশের সাথে অনেকটা স্বাভাবিক হলেও আকাশের সাথে কখনো থাকা হয়নি। সন্ধ্যা নিজেকে বোঝালো সে আকাশের সাথেই থাকবে। এমনিতেই আকাশ রে’গে গিয়েছে তার কাজে। এখন এখানে থাকতে না চাইলে আরও রে’গে যাবে। তাছাড়া আকাশের বলা তখনকার
– ‘বউ না তুমি আমার? কাছে আসতে পারব না আমি?’
এই কথাটি সন্ধ্যার মনে একটু নাড়া দিয়েছে। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে থা’প্প’ড় দেয়নি, এটা কিভাবে বলবে সে? আকাশের দিকে তাকালে দেখল আকাশ এখনো নড়চড়বিহীন শুয়ে আছে। সন্ধ্যা ধীরপায়ে এগিয়ে আসে আকাশের দিকে।

আকাশ সন্ধ্যাকে এগিয়ে আসতে দেখে চোখ বুজে নেয়। তার মাথায় যে কি চলে!
সন্ধ্যা আকাশের পাশে দাঁড়িয়ে একটু ঝুঁকে আকাশকে দেখার চেষ্টা করে। আকাশের চোখ বন্ধ দেখে ভাবলো আকাশ ঘুমিয়ে পড়েছে। মেয়েটার মন খারাপ হলো। সে তো আকাশকে বলতেই পারলো না, যে, সে ইচ্ছে করে থা’প্প’ড় মা’রেনি।
আকাশ বিছানার এক সাইডে শুয়েছে। অপর পাশে আকাশের ফোন দেখে ভাবল, সে ফোনে লিখে রেখে দিবে যে, সে ইচ্ছে করে আকাশকে থা’প্প’ড় মা’রেনি। ভাবনা অনুযায়ী সন্ধ্যা বিছানার অপর পাশে যায়। আকাশের ফোন তুলে নিয়ে ফোনের আলো অন কররার সাথে সাথে একটি ভিডিও অন হয়। ঠিক ভিডিও নয়। মনে হচ্ছে কেউ লাইভ করছে। সন্ধ্যার ভ্রু কুঁচকে যায়।

ফেসবুকের নিউজফিড দেখে লাস্ট ফোন রাখা হয়েছিল বোধয়। এজন্য সন্ধ্যা ফোনের আলো অন করতেই ভিডিও অন হয়। সাউন্ড একদম কমানো, তাই শোনা যাচ্ছেনা। সন্ধ্যা সাউন্ড বাড়ালো না।
ভিডিওতে দু’টো লা’শ শোয়ানো। দু’টো লা’শের উপর সাদা কাপড় টানা। সন্ধ্যা একটু ভ’য় পেয়ে ফোনের ব্যাক বাটনে চাপ দিতে গিয়েও দিল না। দু’জন লোকের হাস্যজ্জ্বল ছবি দেখানো হয়। সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। এই লোক দু’টোকে তো সে কখনো ভুলতে পারেনা। মুহূর্তেই মেয়েটির চোখ ভ’রে উঠল। শরীর কাঁপছে মৃদু।
এরপর ভিডিওতে লা’শ গুলোর উপর থেকে কাপড় সরিয়ে দেয়। সন্ধ্যার মাথা ঘুরে ওঠে। ডান হাতে মুখ চেপে ধরে। এই মানুষদু’টোর কোনো অস্তিত্ব-ই নেই। দু’জনেরই চোখ দু’টো একদম উপড়ে ফেলেছে। মাথা, মুখ পুরো থেতলে দিয়েছে। পুরো শরীরের কোথাও কোনো অস্বস্তি নেই। দু’হাত, দু’পা একদম আলাদা করে কাঁটা। যে হাত-পা গুলো একেকটা চারটে খন্ড করেছে। পুরো শরীর ছুরি দিয়ে শুধু কেঁচেছে মনে হলো।

সন্ধ্যার আর সহ্য হলো না। এতো এতো র’ক্ত সাথে এমন বীভৎস অবস্থা দেখে তার ভেতর উল্টে আসছে। হাত থেকে ফোন পড়ে যায়। এক পা বাড়ানোর আগেই গড়গড় করে বমি করে দেয়।
আকাশ এতোক্ষণ ভ্রু কুঁচকে সন্ধ্যাকেই দেখছিল, সে বুঝতে পারছিল না, সন্ধ্যা তার ফোনে কি দেখছে। হঠাৎ সন্ধ্যার হাত থেকে ফোন পড়া সাথে সন্ধ্যাকে এভাবে বমি করতে দেখে আকাশ হতভম্ব হয়ে যায়। এক সেকেন্ড-ও সময় ন’ষ্ট না করে দ্রুত বেড থেকে নেমে সন্ধ্যার দুর্বল, কম্পনরত শরীর আগলে নেয়। বা হাতে সন্ধ্যার কোমর শ’ক্ত করে ধরে ডান হাতে সন্ধ্যার গালে হাত দিয়ে ভীত কণ্ঠে বলে,

– কি হয়েছে সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা ঝাপসা চোখে আকাশকে দেখে। শরীর টা ভীষণ দুর্বল লাগছে। আকাশ ডান হাতে সন্ধ্যার মুখে লেগে থাকা বমি মুছে দিল। ভ’য়ে তার বুকটা কাঁপছে। কি হয়েছে তার সন্ধ্যামালতীর? একটু আগেই তো ভালো ছিল। ডান হাত বাড়িয়ে সন্ধ্যার গলা, গাল চেক করল। জ্বর নেই তো, তবে এভাবে বমি করল কেন? বুঝতে পারেনা আকাশ। সন্ধ্যার দিকে চেয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলে,
– স্যরি বউ! তোমার কিচ্ছু হবে না।

এরপর সন্ধ্যাকে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমে যায়। সন্ধ্যাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে দাঁড় করায়। বা হাতে সন্ধ্যাকে তার সাথে জড়িয়ে নিয়ে ঝর্ণার নিচে গিয়ে দাঁড়ায়। ডান হাত চালিয়ে দ্রুত ঝর্ণা ছেড়ে দেয়।
সন্ধ্যা এতোক্ষণ বুঝতে পারেনি, আকাশ কি করতে চাইছে। উপর থেকে ঝপঝপ করে পানি পড়তে দেখে সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এতো রাতে কেউ গোসল করে? সন্ধ্যা তার দুর্বল হাতে আকাশকে ঠেলে সরাতে চাইলো, আকাশ দু’হাতে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– শান্ত থাকো সন্ধ্যামালতী। মাথায় পানি দিলে তোমার ভালো লাগবে।
সন্ধ্যা শান্ত হলো। যদিও এতো রাতে শরীরে পানি পরায় হালকা ঠাণ্ডা লাগছে। কিন্তু এতোক্ষণ মাথা কেমন যেন ঝিম ধরে ছিল, এখন মাথায় পানি পেয়ে ভালো লাগছে। তার মুখ ঠেকেছে আকাশের উম্মুক্ত বুকে। চোখ বুজে রেখেছে। আকাশ ভিজতে ভিজতে একবার অসহায় কণ্ঠে আওড়ায়,

– স্যরি বউ! আর বকবো না তোমায়।
সন্ধ্যার ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি ফুটে ওঠে।
কিছুক্ষণ পর আকাশ ঝর্ণা বন্ধ করে দেয়। সন্ধ্যার মাথায় একটা চুমু খায়। এরপর জিজ্ঞেস করে,
– এখন কেমন লাগছে সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা আকাশের থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। আকাশ কিছু বলল না। কিছুক্ষণ আগে সন্ধ্যা একদম নেতিয়ে ছিল, কিন্তু এখন কিছুটা স্বাভাবিক লাগছে। আকাশ তবু, আবার-ও জিজ্ঞেস করে,
– খারাপ লাগছে সন্ধ্যামালতী?

সন্ধ্যা আকাশের দিকে তাকায়। মাথা নাড়িয়ে বোঝায়, – তার খারাপ লাগছে না।
আকাশ কিছু বলল না। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়। কাভার্ড থেকে একটি শাড়ি নেয়, শাড়ির ভাঁজে প্রয়োজনীয় সব রেখে ওয়াশরুমে এসে সন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে দেয়।
সন্ধ্যা আকাশের হাতে একটি সাদা রঙের শাড়ি দেখে অবাক হলো। শাড়িটা নতুন লাগলো তার কাছে।
সন্ধ্যা ভাবছিল, সে এই ঘর থেকে তার ঘরে ভেজা গায়ে কিভাবে যাবে।
সন্ধ্যাকে চুপ দেখে আকাশ তাড়া দিয়ে বলে,
– দ্রুত চেঞ্জ করে এসো। নয়তো ঠান্ডা লাগবে।
সন্ধ্যা আকাশের হাত থেকে শাড়ি নেয়।

আকাশ সন্ধ্যাকে শাড়ি দিয়ে এসে মেঝে থেকে তার ফোন কুড়িয়ে নেয়। একটি ভিডিও অন হয়েও অফ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আগে লাইভটি শেষ করেছে। আকাশ স্কিপ করে করে ভিডিওটি দেখল। মুখাবয়বে কোনো অভিব্যক্ত নেই। তবে বুঝল সন্ধ্যার এসব দেখেই এই অবস্থা হয়েছে।
ফোনটি বেডের উপর রেখে মেঝেতে ছিটিয়ে থাকা বমিগুলো পরিষ্কার করল আকাশ।
সন্ধ্যা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে। আকাশ তার সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যার দিকে তাকালো। সন্ধ্যা খুব গুছিয়ে শাড়িটি পরেছে। লম্বা ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দেয়া। সন্ধ্যা আকাশকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে মাথা নিচু করে নেয়।
আকাশ এগিয়ে এসে মৃদুস্বরে বলে,

– বসো সন্ধ্যামালতী। আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।
এরপর আকাশ ওয়াশরুমে চলে যায়। সন্ধ্যা এগিয়ে গিয়ে বিছানার উপর বসে। আকাশ পাঁচ মিনিটের আগেই শাওয়ার নিয়ে বেরোয়। এগিয়ে এসে সন্ধ্যার ভেজা চুলগুলো তাওয়াল দিয়ে মুছতে লাগলো। সন্ধ্যা অবাক হলো হঠাৎ আকাশের থেকে এরকম যত্ন পেয়ে। তবে শান্ত থাকলো। আকাশ ভালোভাবে চুলের পানি মুছে দিল। এরপর বেডের উপর এক পা তুলে সন্ধ্যার সামনে বসে। তার ফোন নিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে দিলে সন্ধ্যা আকাশের ফোন নিয়ে টাইপ করে,
– ওই লোকগুলোকে এভাবে কে মে’রে’ছে? আপনি জানেন?
আকাশ লেখাটি পড়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
– আমার জানার কথা সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা দু’দিকে মাথা নাড়ালো। আসলে সামনে যে থাকে, আমরা আমাদের কৌতূহল মেটাতে তাকেই প্রশ্ন করে থাকি। সন্ধ্যার ব্যাপারটি তেমনই হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা আবার-ও টাইপ করতে নেয়,

– জানেন ওরা আমাকে……..
এটুকু লিখতেই আকাশ সন্ধ্যার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়। বা হাত মুষ্টিবদ্ধ করা। চোখমুখ শ’ক্ত। সন্ধ্যা আকাশের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। আকাশ সন্ধ্যাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ বুজল। কয়েকবার শ্বাস টেনে নিজেকে সামলায়। এরপর সন্ধ্যাকে টেনে তার দিকে একটু এগিয়ে আনে। ডান হাত সন্ধ্যার গালে রেখে মৃদুস্বরে বলে,

– এসব নিয়ে আর ভাববে না বুঝেছ সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। আকাশ তার মুখটা একটু এগিয়ে নেয় সন্ধ্যার দিকে। কিন্তু মাঝে দূরত্ব থাকলো। নরম সুরে আবদার করে,
– আজ আমার সাথে থাকবে সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। চোখ নামিয়ে নেয়। আকাশ অসহায় কণ্ঠে বলে,
– প্রমিস! কিছু করব না। একদিন আমার পাশে থাকো বউ।
সন্ধ্যা আবার-ও চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকায়। বুক ধুকধুক করছে মেয়েটার। আকাশ সন্ধ্যাকে চুপ দেখে আবার-ও নরম সুরে বলে,

– প্লিজ সন্ধ্যামালতী! তুমি না আমার সোনা বউ? থাকবে না আমার কাছে?
আকাশের নতুন নাম সাথে এতো নরম সুরে বলায় সন্ধ্যার বুক ধুকধুক বাড়লো। চোখ নামিয় নেয়। এরপর ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়, – সে থাকবে।
আকাশ হাসলো। সন্ধ্যার পাশ থেকে উঠে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা আকাশের হাত টেনে ধরলে আকাশ সন্ধ্যার দিকে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,
– কিছু বলবে?
সন্ধ্যা হাত ফেতে ফোন চাইলো। আকাশ নিষেধ করতে গিয়েও করল না। সন্ধ্যাকে তার ফোন দিলে, সন্ধ্যা দ্রুত টাইপ করে,

– আমি আপনাকে তখন ইচ্ছে করে থা’প্প’ড় মা’রি’নি। ভুল করে হয়ে গিয়েছিল।
আকাশ লেখাটি পড়ে হাসলো। হঠাৎ-ই সন্ধ্যাকে জাপ্টে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ে। সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। একটু নড়াচড়া-ও করতে পারছেনা। আকাশ সন্ধ্যার গালে ঠোঁট চেপে ফিসফিসিয়ে বলে,
– শুধু জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। কিছু করব না। ঘুমাও বউ।
সন্ধ্যা চোখ বুজল। বা হাত তুলে আকাশের পিঠে রাখে। ওই লোকদু’টোর কথা মনে পড়ল। তার খারাপ লাগলেও আগের মতো ট্রোমা কাজ করেনা তার। ঔষধের ফল এসব।
কিন্তু লোক দু’টোকে এভাবে কে মারলো? আদোও কি কেউ মেরেছে? না-কি কোনো জন্তু ছিঁড়েছে? ভেবেই সন্ধ্যা কেঁপে উঠলো।
আকাশ সন্ধ্যার হঠাৎ কাঁপুনি বুঝতে পেরে মাথা তুলে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। বুঝলো বোধয় কিছু। ডান হাত সন্ধ্যার গালে রাখলে সন্ধ্যা চোখ মেলে তাকায়। দু’জনের চোখাচোখি হয়। আকাশ জিজ্ঞেস করে,

– ভ’য় পেয়েছ সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা চুপ থাকলো। আকাশ সন্ধ্যার কপালে একটা চুমু খেয়ে দু’হাতে সন্ধ্যাকে তার বুকে জড়িয়ে নেয়। কানের পিঠে আলতো চুমু খেয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– ভ’য় নেই। আমি আছি তো বউ!
সন্ধ্যা চোখ বুজে নেয়। শান্তি লাগছে ভীষণ।

অন্তঃদহন পর্ব ৩৬

শরীর ক্লান্ত থাকায় কিছুক্ষণের মাঝেই সন্ধ্যা ঘুমের দেয়ে পাড়ি জমায়। সন্ধ্যার ভারী নিঃশ্বাস আকাশের বুকে ধাক্কা খায়। আকাশ সন্ধ্যার মুখ একটুখানি উঁচু করে ধরল। দীর্ঘ সময় নিয়ে সন্ধ্যার ঘুমন্ত মুখপানে চেয়ে রইল আকাশ। এরপর একটু ঝুঁকে সন্ধ্যার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে নেয়। মৃদুস্বরে বলে,
– আমার বউ তুমি, আমার সন্ধ্যামালতী তুমি, আমার স্নিগ্ধপরী তুমি, আমার মায়াবতী তুমি, আমার সব তুমি। তোমায় ভালোবেসে যেমন নিষ্পাপ হতে পারি, তেমনি প্রয়োজনে হতে পারি ভ’য়ং’ক’র নি’ষ্ঠু’র।

অন্তঃদহন পর্ব ৩৭