অন্তঃদহন পর্ব ৩৭
DRM Shohag
ফজরের আজানে সন্ধ্যার ঘুম ভেঙে যায়। আকাশ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। সন্ধ্যা আকাশকে ঠেলেঠুলে নিজেকে সরিয়ে নেয়। এরপর বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে যায়। ওজু করে এসে সময় ন’ষ্ট না করে নামাজ পরে নেয়। এরপর আকাশের কাছে এসে আকাশকে দু’হাতে ঝাঁকায় ওঠার জন্য।
আকাশ উল্টো হয়ে শুয়ে ঘুমে বিভোর। বারবার এখাবে ধাক্কা খাওয়ায় সে বিরক্ত হয়। কিন্তু ওঠেনা।
সন্ধ্যা হতাশ হয়। সে তো ডাকতেও পারছে না। কি করবে? সে আরেকটু ঝুঁকে আকাশকে ঠেলতে যায়, তখনই আকাশ উল্টো দিকে ফিরতে নেয়, আকাশের হাতের ধাক্কা খেয়ে সন্ধ্যা ঠাস করে মেঝেতে বসে পড়ে। বেচারি হতভম্ব হয়ে যায়। কোমরে ব্য’থা পেয়ে মুখে হালকা ব্য’থার ছাপ ফুটে ওঠে।
আকাশ ঘুমঘুম চোখজোড়া হালকা মেলে সন্ধ্যাকে তার মুখ সোজা দেখে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,
– জেগে থেকে জ্বালাও, আবার ঘুমের মাঝে স্বপ্নে এসেও জ্বালাচ্ছো! বউ মানেই জ্বালা! ঘুমিয়েও শান্তি দেয় না।
কথাগুলো বলতে বলতে আকাশ চোখ বুজে নেয়। সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সে তো নামাজ পড়ার জন্য ডাকছিল, জ্বালালো কখন? শুধু শুধু তাকে দোষ দেয় এই লোকটা। সন্ধ্যা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। বা পাশে বেডসাইড টেবিলের উপর জগভর্তি পানি চোখে পড়ল সন্ধ্যার। আকাশ বলল, সে নাকি আকাশকে জ্বালায়। ভালো হয়েছে। এবার সে সত্যি সত্য জ্বালাবে। শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে জগভর্তি পানি নিয়ে খুব সাবধানে আকাশের মাথার উপর ঢেলে দেয়।
মাথার উপর ঠান্ডা পানি পড়ায় আকাশ ধড়ফড় করে উঠে বসে। দু’হাতে মুখ মুছতে মুছতে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– এই কোন বে’য়া’দ’ব রে?
আকাশ মুখ মুছে সামনে তাকালে সন্ধ্যাকে দেখে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। সন্ধ্যার ডান হাতের জগ। বা হাত কোমরে রেখে আকাশের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে।
আকাশ চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। মনে পড়ল, গতকাল সন্ধ্যা তার সাথে ছিল। কিন্তু সে একটু আগে ঘুমের ঘোরে সন্ধ্যাকে স্বপ্ন ভেবেছিল। তাই বলে সকাল সকাল এভাবে পানি ঢেলে ডাকে কেউ? কোথায়, একটা চুমু খাবে, মাথায় হাত বুলাবে আরও কতভাবে ঘুম ভাঙানো যায়, সব রেখে মাথায় পানি ঢাললো তার বউটা?
আকাশ ডান হাতে মাথার চুল ঝেড়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,
– পানি ঢাললে কেন বউ?
সন্ধ্যা জগ টেবিলের উপর রেখে বিছানার উপর থেকে আকাশের ফোন নিয়ে তাতে কিছু লিখে আকাশের দিকে তাক করে ধরে। আকাশ চোখ বুলালো,
– আপনার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছি আর আপনাকে জ্বালিয়েছি।
লেখাটি পড়ে আকাশ একটু কেশে উঠলো। সে মনে হয় বলে ফেলেছে, বউ তাকে জ্বালায়। আর তাই বউটা এভাবে প্রমাণ দিল। কি সাংঘাতিক বউ। আরে এই জ্বালা তো সেই জ্বালা নয়, এটা তার বউকে কিভাবে বোঝাবে। আকাশ সন্ধ্যার মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত দৃষ্টি বুলালো।
সন্ধ্যার মাথায় কাপড় নেই। সাইডে সিথি করে চুলগুলো খোপা করা। কি সুন্দর তার বউ? কিন্তু কেমন চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। দেখতে ভালোই লাগছে। আকাশ গলা ঝেড়ে বলে,
– তুমি রে’গে আছো কেন বউ?
সন্ধ্যা ইশারায় দেখাল,
– আমি আপনাকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকতে এসেছিলাম। আর আপনি আমাকে ফেলে দিয়েছেন।
আকাশ বুঝল সন্ধ্যার ইশারা। কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারে না। প্রথমদিন সে-ও বউকে ফেলে দিল, বউ-ও তার মাথায় পানি ঢেলে দিল। তাদের কপাল টা একদমই ফাটা। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যার কোমরে গুঁজে রাখা শাড়ির আঁচলের দিকে নজর পড়ে। আঁচল গুঁজে রাখার কারণে সন্ধ্যার কোমর অনেকটা উম্মুক্ত হয়ে আছে।
আকাশ ডান হাত বাড়িয়ে সন্ধ্যার হাত ধরে টেনে তার সামনে এনে দাঁড় করায় সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যা কিছু বোঝার আগেই আকাশ তার ডান হাতে সন্ধ্যার শাড়ি পেট থেকে একটু আলগা করে, সন্ধ্যার উম্মুক্ত পেটে মুখ গুঁজে দেয়।
সন্ধ্যা কারেন্ট শক খাওয়ার মতো ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। আকাশ বুঝতে পেরে একটু হাসলো। দু’হাতে সন্ধ্যার কোমর শ’ক্ত করে ধরে রেখেছে। চোখ বন্ধ করে সন্ধ্যার পেটে নাক ঘষে মৃদুস্বরে বলে,
– মাথা মুছে দাও বউ।
সন্ধ্যা জমে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশের দাঁড়ির খোঁচায় সন্ধ্যা থেকে থেকে কেঁপে ওঠে। আকাশ সন্ধ্যার পেটে একটু পর পর চুমু খায়।
সন্ধ্যাকে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আকাশ আবার-ও একটা চুমু খেয়ে নরম গলায় বলে,
– তোমার আঁচল দিয়ে মাথা মুছে দাও। আমার সোনা বউ তুমি। দাও বউ।
সন্ধ্যার শরীর শিরশির করে। সে অনুভব করে,
আকাশের বলা কথাগুলোয় ভীষণ আবেগ মেশানো। ঢোক গিলল মেয়েটা। আকাশের কথা উপেক্ষা করল না। আকাশের ফোন রেখে দেয় বেডের উপর। এরপর গুঁজে রাখা শাড়ির আঁচল টেনে আকাশের মাথা মুছতে থাকে। হাত কাঁপছে মেয়েটার। আকাশের খোঁচাখুঁচির জন্য তার অবস্থা শোচনীয়। আকাশ মিটিমিটি হেসে সন্ধ্যার পেটে তার খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ঘষে।
সন্ধ্যা বহু কসরত করে আকাশের মাথা মুছে দিয়ে পিছন দিকে সরে যেতে নেয়। কিন্তু আকাশ ছাড়লো না। সে এই দুনিয়ায় আছে কি-না সন্দেহ! ঘোর লেগে গিয়েছে। চোখ বুজে রেখেই ডান হাতে সন্ধ্যার কোমরে গুঁজে রাখা শাড়ি টেনে কয়েক প্যাঁচ খুলে দেয়। সন্ধ্যা বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে তাকায়। নড়াচড়া করে দু’হাতে আকাশকে ঠেললে আকাশ ঢোক গিলল। সন্ধ্যার পেটে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে সন্ধ্যাকে ছেড়ে দেয়।
সন্ধ্যা দু’পা পিছিয়ে যায়। আকাশ মাথা উঁচু করে সন্ধ্যার দিকে তাকালো। সন্ধ্যা ল’জ্জা পেয়ে দ্রুত শাড়ি টেনে তার পেট ঢেকে নেয়। মাথা নিচু করে দাঁড়ায়।
আকাশ সন্ধ্যার অবস্থা বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসে। বেড থেকে পা নামিয়ে বসে বলে,
– চিন্তা নেই। ধীরে ধীরে এগোবো। আজ শাড়ি ছাড়া তোমাকে দেখাও।
সন্ধ্যা মাথা উঁচু করে চোখ পাকিয়ে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ হেসে বলে,
– তুমি রা’গ দেখাতে গিয়ে ল’জ্জা দেখিয়ে ফেলছ। কিন্তু একটু কম কম লাগছে। আরেকটু ল’জ্জা পাও, তাহলে পার্ফেক্ট লাগবে।
আকাশের কথায় সন্ধ্যা আবার-ও ল’জ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
আকাশ উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে এসে সন্ধ্যার সামনে দাঁড়ায়। বা হাতে সন্ধ্যার গাল ধরে সন্ধ্যার মুখ উঁচু করে। সন্ধ্যা চোখ বুজে নেয়। আকাশ মৃদুস্বরে বলে,
– তোমার শরীরে কাপড় আছে চারটা। রাখব তিনটা। ডিসিশন ফাইনাল।
কথাটা বলে সন্ধ্যা কিছু বোঝার আগেই ডান হাতে সন্ধ্যার পুরো শাড়ি টেনে খুলে দেয়। সন্ধ্যা দ্রুত চোখ মেলে তাকায়। একদম মুখের সামনে আকাশকে দেখে, যার দৃষ্টি তার চোখের দিকে। সন্ধ্যা ঢোক গিলল।
আকাশ সন্ধ্যাকে ঠেলে দূরে সরাতে নিলে সন্ধ্যা আকাশের দিকে চেপে দাঁড়ায়। আকাশ মিটিমিটি হেসে নিজে সরতে নিলে সন্ধ্যা আকাশের গায়ে কিছু না পেয়ে দু’হাতে আকাশের প্যান্ট টেনে ধরে। আকাশ সরে গেলেই তাকে শাড়ি ছাড়া দেখে ফেলবে, এজন্য সে নিজেও সরছে না, আকাশকেও সরতে দিচ্ছেনা।
আকাশ সন্ধ্যার চোখের দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হেসে বলে,
– বউ আমার ল’জ্জাবতী। কিন্তু আমার এসব নেই। তুমি চাইলে আমার প্যান্ট খুলে ফেলতে পারো। আমি মাইন্ড করব না বউ।
কথাটা শুনতেই সন্ধ্যা দ্রুত আকাশের প্যান্ট ছেড়ে দেয়। ল’জ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। আকাশ একটু হেসে সরে গেলে সন্ধ্যা নিজেও আকাশের দিকে এগিয়ে যায়। আকাশ তাকে এভাবে উদাম হয়ে দেখলে সে ল’জ্জায় ম’রেই যাবে।
আকাশ সন্ধ্যার কান্ড দেখে কিছুটা শব্দ করে হাসলো। দু’হাতে শ’ক্ত করে সন্ধ্যাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। সন্ধ্যা শান্ত থাকলো। আকাশ জড়িয়ে ধরায় তার ল’জ্জা না লাগলেও আকাশের দৃষ্টি তাকে বেশি ল’জ্জায় ফেলে।
আকাশ মাথা নিচু করে সন্ধ্যার গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে মিটিমিটি হেসে বলে,
– দিনে মুড হয় না। রাতে মুড ভালো থাকে। রাতে একেবারেই দেখব।
কথাটা বলে সন্ধ্যার গালে আরেকটা চুমু খেয়ে সন্ধ্যাকে ছেড়ে দ্রুত উল্টো ঘুরে ওয়াশরুমের দিকে যায়। সন্ধ্যা মেঝে থেকে শাড়ি তুলে কোনোরকমে নিজেকে ঢেকে নেয়।
হঠাৎ আকাশ থেমে গিয়ে পিছু ফিরে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। সন্ধ্যা আকাশের দিকেই চেয়েছিল। দু’জনের চোখাচোখি হলে সন্ধ্যা ঢোক গিলে। দৃষ্টি সরালো না। আকাশ গাল চুলকায় আর হেসে বলে,
– মারাত্মক কিউট সুগন্ধিযুক্ত নরম বালিশ। আজ থেকে এটাই লাগবে আমার।
কথাটা বলে আকাশ সন্ধ্যার পেট ইশারা করে। সন্ধ্যা বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে তাকায়। আকাশ মিটিমিটি হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আকাশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল সন্ধ্যা শাড়ি পরে ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ দেখল ঘরে জায়নামাজ বিছানো। সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,
– নামাজ পড়েছ?
সন্ধ্যা উপর-নীচ মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। আকাশ আর কিছু বলল না। একটা সাদা টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে নামাজে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা চেয়ে দেখল আকাশের নামাজ। সন্ধ্যার মনে হলো, আকাশ ভীষণ সুন্দর করে নামাজ আদায় করে। আকাশের পুরো নামাজ সন্ধ্যা মন দিয়ে দেখল। ঠোঁটের কোণের মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।
আকাশ সালাম ফিরে উঠে দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম সন্ধ্যার দিকে তাকায়। সন্ধ্যাকে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
– হাসছ কেন বউ?
সন্ধ্যা মাথা নিচু করে নেয়। আকাশ বেডের শুকনো পাশে বসে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,
– এখানো এসো।
সন্ধ্যা ছোট ছোট পায়ে আকাশের পাশে এসে দাঁড়ালে আকাশ সন্ধ্যাকে টেনে তার সামনে বসায়। সন্ধ্যা আকাশের চোখের দিকে তাকায়। আকাশ দু’হাতে সন্ধ্যার গাল ধরে মৃদু হেসে বলে,
– তোমার রেখে যাওয়া চিঠি দু’টোর কথা মনে আছে সন্ধ্যামালতী?
আকাশের কথা শুনে সন্ধ্যা ভারী অবাক হয়। সে সবসময় ভাবতো, আকাশ তার চিঠি দু’টো পেয়েছিল না-কি ময়লার ঝুড়িতে তার অবস্থান হয়েছিল? আজ আকাশের মুখে শুনে বুঝল, আকাশ তার চিঠি পেয়েছিল। ধীরে ধীরে সন্ধ্যার চোখ ঝাপসা হতে শুরু করে। আকাশ দেখল সন্ধ্যার ঝাপসা চোখজোড়া। জিজ্ঞেস করে,
– তোমার চিঠির প্রতিটি অক্ষরে অনেক ভালোবাসা মিশে ছিল। তবে তুমি আমাকে কেন ভুলে গিয়েছিলে সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা মলিন মুখে তাকালো আকাশের দিকে। ডান হাত উঠিয়ে ইশারায় বোঝালো,
– আমি আপনাকে ভুলে যাইনি।
আকাশ সন্ধ্যার ইশারা বুঝতে পেরে মৃদু হাসলো। অতঃপর হাসি মিলিয়ে বলে,
– তবে এতো মাস আমার আড়ালে ছিলে কেন? তোমার যে একটা ভীষণ খারাপ স্বামী ছিল, তাকে ভালোবেসে না হোক, শা’স্তি দেয়ার জন্য হলেও তো একবার আমার সামনে আসতে পারতে, তাইনা??
সন্ধ্যার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে আকাশের হাত ছুঁয়ে যায়। আকাশ দু’হাতে সন্ধ্যার ভেজা গাল মুছে দেয়। মৃদুস্বরে বলে,
– দেখা হওয়ার পর তুমি আমাকে চাইছিলেনা। তাই অনেক রা’গ হতো। আমি তোমার আমার মাঝে দূরত্বরের শা’স্তি কখনো মানবো না। তবে আমার কাছে থেকে বাকি সব শা’স্তি আমি মাথা পেতে নিব। তুমি আমাকে কি শা’স্তি দিতে চাও সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা অবাক হয়ে আকাশের দিকে চেয়ে রইল। আবার-ও চোখের কোণ ঘেষে পানি গড়িয়ে পড়ে। ইশারায় বোঝায়,
– আমি আপনাকে শা’স্তি দিতে চাই না।
আকাশ মৃদু হেসে বলে,
– দিতে হবে।
কথাটা বলে সন্ধ্যাকে টেনে তার কোলে বসিয়ে নেয়। এরপর সন্ধ্যার ডান গালে ঠোঁট চেপে বিড়বিড় করে,
– তোমাকে এই গা’লে থা’প্প’ড় মে’রেছিলাম। স্যরি বউ!
কথাটা বলে সন্ধ্যার ডান গালে একটার পর একটা চুমু খায় আকাশ।
আকাশের কথাটা শুনে সন্ধ্যার চোখের কোণে পানি জমলো। ইশ! সেই রাতে সে কত কেঁদেছিল। কিন্তু আজ কান্নার সাথে সাথে ঠোঁটের কোণে হাসি-ও লেপ্টে আছে।
প্রায় পাঁচমিনিট-ও পর-ও আকাশকে না থামতে দেখে সন্ধ্যা অবাক হয়। আকাশকে ঠেলে ডান হাতে আকাশের ঠোঁট চেপে ধরে। আকাশ সন্ধ্যার চোখের দিকে তাকায়। সন্ধ্যার হাতে শব্দ করে চুমু খায়। সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। আকাশ সন্ধ্যার হাত তার ঠোঁট থেকে সরিয়ে সরিয়ে আবার-ও সন্ধ্যার গালে ঠোঁট চেপে বলে,
– আর কখনো মা’র’বো না বউ। প্রমিস!
সন্ধ্যা একটু হাসলো। সন্ধ্যার হাসি আকাশের দৃষ্টিগোচর হতেই আকাশ সন্ধ্যার মুখ ফিরিয়ে সন্ধ্যার ঠোঁটজোড়ায় টুপ করে দু’টো চুমু খায়।
সন্ধ্যা চোখ নামিয়ে রেখেছে। আকাশ মিটিমিটি হেসে বলে,
– তোমাকে হাসিয়েছি, তাই দু’টো বোনাস নিয়েছি।
সন্ধ্যা ভ্রু কুঁচকে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ সন্ধ্যাক নিয়ে শুয়ে পড়ল। সন্ধ্যার মাথা তার বুকে চেপে মৃদুস্বরে বলে,
– কিপ্টে বউ শোনো, তোমার গালে পুরো ১৫০ টা চুমু খেয়েছি। শা’স্তি হিসেবে তুমি নাহয় ১৫০ টা থা’প্প’ড় দিও।
এটুকু বলে আকাশ থামে। এরপর সন্ধ্যার থুতনি ধরে সন্ধ্যার মুখ উঁচু করে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আর তারপর ১৫০ টা চুমু না খাও, শুধু ৫০ টা চুমু ফিরিয়ে দিও কেমন? তুমি না আমার সোনা বউ?
সন্ধ্যার ভীষণ হাসি পায় আকাশের কথা সাথে মুখের এক্সপ্রেশন দেখে। কিন্তু নিজেকে দমিয়ে ইশারায় বোঝায়,
– একটা-ও চুমু হবে না।
এরপর ডান হাতের দু’আঙুল উঁচু করে রেখে বা হাত দিয়ে ইশারায় গোল গোল দু’টো শূণ্য দেখিয়ে বোঝায়,
– সে ২০০ টা থা’প্প’ড় মা’র’বে।
এরপর ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল আকাশের ডান গালে একবার ঠেকায়,আরেকবার আকাশের বাম গালে ঠেকিয়ে বোঝায়,
– বাম গালে ১০০ টা থা’প্প’ড়, ডান গালে ১০০ টা থা’প্প’ড়।
এটুকু বুঝিয়ে সাথে সাথে আকাশের বুকেই মুখ লুকিয়ে হাসে সন্ধ্যা। আকাশের মুখ দেখার মতো হয়েছে। আকাশ ভোতামুখে এতোক্ষণ সন্ধ্যার করা ইশারা দেখছিল। সন্ধ্যা ফিসফিস করে হাসছে বুঝতে পেরে আকাশ চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। বিড়বিড় করে,
– এটা সোনা বউ নয়, পা’জি বউ কোথাকার!
সন্ধ্যা মাথা উঁচু করে তাকালে আকাশ টুপ করে সন্ধ্যার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বলে,
– ঘুমাও সোনা বউ।
আকাশ ডান কাত হয়ে শুয়েছে। সন্ধ্যা ডান হাতে আকাশের গলা জড়িয়ে ধরে আকাশের ডান হাতের উপর ঘুমিয়ে আছে। সন্ধ্যার মুখ আকাশের বুকে ঠেকেছে।
সন্ধ্যা ঘুমালেও আকাশ ঘুমায়নি। সন্ধ্যা ঘুমানোর পর আকাশ নিজেই গিয়ে এক মগ কফি বানিয়ে এনেছিল। কফি খেয়ে কাজে ব্যস্ত হয়েছে।
আকাশ সন্ধ্যার পিছনে ল্যাপটপ রেখে বা হাতে অনবরত ল্যাপটপে আঙুল চালায়। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত সে। সম্পূর্ণ মনোযোগ ল্যাপটপে থাকলেও একটু পর পর সন্ধ্যার গালে চুমু খায়।
আসমানী নওয়ান অনেকক্ষণ আগে দরজা ঠেলে আকাশের ঘরে বেডের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আকাশের কান্ড দেখছেন তখন থেকে। সন্ধ্যা যে আকাশের সাথে ছিল, এটা তো আজ আকাশের ঘরে না আসলে জানতেই পারতো না। তার চোখ জুড়িয়ে যায় আকাশ আর সন্ধ্যাকে এভাবে একসাথে দেখলে।
আকাশের দৃষ্টি ল্যাপটপে, আঙুল ল্যাপটপে। ওভাবেই আবার-ও সন্ধ্যার গালে ঠোঁট ছোঁয়ালে, আসমানী নওয়ান বলে ওঠে,
– তুমি কাজ করতাছ না-কি আমার মেয়েরে চুমু খাওয়ার প্রতিযোগিতা করতাছ?
মায়ের কথায় আকাশ থতমত খেয়ে সামনে তাকায়। আসমানী নওয়ানকে দেখে আকাশ সন্ধ্যার গালে আরও দু’টো চুমু খেয়ে বলে,
– তুমি যা ইচ্ছা ভাবো মা। বউ যেহেতু আমার, তাই শুধু চুমুর কেন, আরও অনেককিছুর প্রতিযোগিতা করতে পারি।
আসমানী নওয়ান ছেলের কথায় হাসলেন। অতঃপর বলেন,
– তুমি ওরে জোর কইরা তোমার কাছে রাখোনি তো আকাশ?
আকাশ বা হাতে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে মৃদুহেসে বলে,
– এটা আমার লক্ষী বউ, বুঝলে মা? ও আমার সব আবদার রাখে।
আসমানী নওয়ান ছেলের কথায় হাসলেন। আকাশ-ও মায়ের দিকে চেয়ে হাসল।
ঘড়ির কাটা তখন সকাল ১০ টার ঘরে। আসমানী নওয়ান পরনে একটি সাদা শাড়ি জড়িয়েছেন। শাড়িটি তিনি কুচি করে পরেছেন। মাথায় হিজাব বাঁধা। গাড়ির চাবি নিয়ে তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
ইরা রেডি হয়ে ডাইনিং-রুমে দাঁড়িয়ে আছে। আসমানী নওয়ান কিছুকক্ষণ আগে তাকে জিজ্ঞেস করেছেন, সে গাড়ি চালাতে পারে কি-না। সে হ্যাঁসূচক সম্মতি দিলে আসমানী নওয়ান জানায়, তার সাথে একজায়গায় যেতে হবে। ইরা তার ফুপিকে বলে রেডি হয়ে বেরিয়ে আসে।
আসমানী নওয়ান এগিয়ে এসে ইরার হাতে গাড়ির চাবি দেয়। এরপর দু’জন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ইরা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আসমানী নওয়ানকে জিজ্ঞেস করে,
– কোথায় যাবো ফুপি?
আসমানী নওয়ান উত্তরে বলেন,
– পুলিশ স্টেশন।
ইরা অবাক হয় তার ফুপির কথায়। কিন্তু কোনো প্রশ্ন করল না। আসমানী নওয়ানকে ভীষণ আপসেট লাগছে, ইরা চিন্তিত হয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
প্রায় ৩০ মিনিটের মাথায় পুলিশ স্টেশনের সামনে ইরা গাড়ি থামায়। আসমানী নওয়ান গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যায়, পিছু পিছু ইরা যায়।
আসমানী নওয়ান স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখাচোখি হয় সেলের ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাইফুদ্দীন নওয়ানের সঙ্গে। আসমানী নওয়ান শ’ক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। দৃষ্টি তার স্বামীর পানে।
সাইফুদ্দীন নওয়ান বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার স্ত্রীর পানে। তিনি হয়তো এখানে আসমানী নওয়ানকে আশা করেনি। ঢোক গিলে বিড়বিড় করে,
– আসমানী?
ইরা সেলের ওপাশে সাইফুদ্দীন নওয়ানকে দেখে অবাক হলো। এই লোকটাকে সে তার বাবার সাথে প্রায়-ই দেখত। ইনি আকাশের বাবা, সেটা জেনেছে কয়েকদিন আগে। ইনি অপরাধী তাও জানে। কিন্তু এনাকে পুলিশ কাস্টোডিতে দেখে ইরার চোখেমুখে বিস্ময় ভর করে।
আসমানী নওয়ান পথ ঘুরিয়ে স্টেশন অফিস কক্ষে যায়। পুলিশ অফিসার ভদ্রমহিলাকে বসতে বললে আসমানী নওয়ান বসেন না। দাঁড়িয়ে থেকেই এক জায়গায় সাইন করে দেয়। এরপর অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসতে নিলে পুলিশ অফিসার বলেন,
– ম্যাম আকাশ স্যারকে একবার…….
আসমানী নওয়ান শুদ্ধ ভাষায় শ’ক্ত কণ্ঠে বলেন,
– আকাশকে আমি জন্ম দিয়েছি। কোনো কাজ করার আগে সে আমার পারমিশন নিবে। আমি না।
পুলিশ অফিসার অনুতপ্ত স্বরে বলেন,
– স্যরি ম্যাম!
ইরা আগের চেয়েও বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আসমানী নওয়ানের দিকে। সে তো তার ফুপিকে চিনতেই পারছে না। আসমানী নওয়ান আর এখানে দাঁড়ালেন না। দ্রুতপায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইরা তার ফুপির পিছু পিছু বেরিয়ে আসে। তার মাথা ভনভন করে ঘুরছে। বেচারি কিছুই বুঝতে পারছে না।
আসমানী নওয়ান সেলের সামনে এসে দাঁড়ালে একজন সেলের গেইট খুলে সাইফুদ্দীন নওয়ানকে বেরিয়ে আসতে বললে ভদ্রলোক যেন শুনতে পায় না। তার বিস্ময়কর দৃষ্টি আসমানী নওয়ানের পানে।
আসমানী নওয়ান বলেন,
– দ্রুত আসুন। আমার বাড়িতে কাজ আছে।
সাইফুদ্দীন নওয়ান ঢোক গিলল। আসমানী তাকে তুমি করে বলত, আর সে সবসময় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলত। আসমানীর এই দু’টো অভ্যাস তার বরাবরই পছন্দের তালিকায় ছিল। এই দু’টো অভ্যাস আসমানী নওয়ান তার জন্য করেছিল।
অথচ আজ আসমানীর মাঝে কোনোটাই খুঁজে না পেয়ে সাইফুদ্দীন নওয়ানের বুক ভার হয়ে আসলো। ঢোক গিলে তিনি সেলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন।
আসমানী নওয়ান ইরার হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে যায়। পিছু পিছু সাইফুদ্দীন নওয়ান।
বাড়ি পৌঁছেছে ইরা’রা।
আসমানী নওয়ান আগে আগে হাঁটছেন। পিছু পিছু সাইফুদ্দীন নওয়ান। দুর্বল কণ্ঠে কয়েকবার ডেকেছেন আসমানী বলে। আসমানী নওয়ান স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়নি। আর না তো পিছু ফিরে তাকিয়েছে। সাইফুদ্দীন নওয়ানের পা চলছে না। তার মনে হচ্ছে সে জে’লের চেয়েও বড় জা’হা’ন্না’মে যাচ্ছে। স্ত্রীর এমন ব্যবহারেই সে নেতিয়ে পড়ছে। ভেতরে গেলে তার ছেলের ঘৃনা আবার-ও কি করে দেখবে সে?
আজ শনিবার হওয়ায় সৌম্য’র অফিস বন্ধ। সে জানে আসমানী নওয়ান ইরাকে নিয়ে কোথায় যেন গিয়েছে। সৌম্য তার অফিসের পাশাপাশি সময় পেলে টুকটাক ফ্রিল্যান্সিং করে। বাড়ি ফাঁকা দেখে সৌম্য ল্যাপটপ নিয়ে ডায়নিং-এ বসে কাজ করছিল।
আকাশ রেডি হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছিল, অফিসের উদ্দেশ্য রওয়ানা হওয়ার জন্য। আশেপাশে তাকালে সৌম্য’কে ডায়নিং-এ দেখে আকাশ এগিয়ে গিয়ে বলে,
– বউ ঘর থেকে বের করে দিয়েছে?
আকাশের কথা শুনে সৌম্য মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকায়। উত্তর দেয়,
– সবাইকে নিজের বউয়ের মতো ভাবা বন্ধ করুন।
আকাশ আফসোসের সুরে বলে,
– এতো তাড়াতাড়ি নিজের বোনের দু’র্না’ম করা শুরু করে দিলে?
সৌম্য কথাটা বলে নিজেই একটু থতমত খায়। সন্ধ্যা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ডায়নিং টেবিলের ওপাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সৌম্য সন্ধ্যাকে দেখে দ্রুত দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
– বোনু আমি তোকে কিছু বলিনি। আকাশ ভাইয়া আমার পিছনে লাগে।
আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কিন্তু আমি তো তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
সৌম্য আকাশের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকায়।
সন্ধ্যা একবার আকাশের দিকে তাকায়, আরেকবার সৌম্য’র দিকে। সে মাত্র রান্নাঘর থেকে এসে দাঁড়িয়েছে। এদের কথা কিছু শোনেইনি। কিন্তু বুঝল, এরা আবার ঝগড়া করার পথে।
হঠাৎ-ই ইরা দৌড়ে এসে সৌম্য’র পাশে দাঁড়ায়। উত্তেজনায় সে আকাশকেও খেয়াল করেনি। হাঁপানো কণ্ঠে বলে,
– সৌম্য জানিস, আকাশ ভাইয়ার বাবা পুলিশ কাস্টোডিতো ছিল। ফুপি উনাকে ওখান থেকে বের করতে থানায় গিয়েছিল।
ইরার কথায় সৌম্য, সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কি বললে?
ইরা আকাশের কথা শুনে আকাশের দিকে তাকায়। সে কিছু বলার আগে পিছন থেকে আসমানী নওয়ান আকাশের উদ্দেশ্যে বলে,
– তুমি আমারে না জানাইয়া তোমার বাবারে পুলিশে দিয়েছিলা ক্যান আকাশ?
মায়ের কণ্ঠে আকাশ পিছু ফিরে তাকায়। কিছু বলার আগেই আসমানী নওয়ানের থেকে একটু দূরে তার বাবাকে দেখে আকাশ অবাক হয়। তার মানে তার মা সত্যি-ই তার বাবাকে সেখান থেকে বের করে এনেছে? আকাশ বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
– মা তুমি কি ভুলে গিয়েছ, বাবা ঠিক কি কি করেছে?
আসমানী নওয়ান উত্তর দেন,
– না।
– তাহলে বাবাকে কেন ছাড়িয়ে আনলে?
– আমি যা বুঝি, তুমি তা বোঝোনা।
আকাশ চোখ বুজল। প্রচন্ড রা’গ লাগছে তার। সৌম্য, ইরা, সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সবকিছু তাদের মাথার উপর দিয়ে না গেলেও আকাশ আর আসমানী নওয়ানের কথোপকথনে তারা একটু কনফিউজড।
আকাশ হঠাৎ-ই চিৎকার করে বলে,
– আমি কোনটা বুঝিনা মা? তোমার স্বামী আমার বউকে রে’প করতে লোক পাঠিয়েছিল, সেটা বুঝিনা আমি? তোমার স্বামী আমার বউকে আ’গু’নে পু’ড়ি’য়ে মা’র’তে চেয়েছিল, সেটা বুঝিনা আমি? তোমার স্বামী আমার বউ আর তার ভাইকে মা’র’তে গিয়ে ছয় ছয়টা নিরিহ মানুষকে অ’মা’নুষের মতো পু’ড়িয়ে মে’রে’ছে, সেটা বুঝিনা আমি? না-কি এগুলো বুঝি বলেই আমাকে অবুঝ বলছ তুমি?
আকাশের চিৎকার করে বলা কথাগুলো পুরো বাড়ির দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
আসমানী নওয়ান ঝাপসা চোখে ছেলের পানে চেয়ে রইল।
সন্ধ্যার চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। তার দৃষ্টি সাইফুদ্দীন নওয়ানের পানে। যার দৃষ্টি আকাশের পানে। লোকটির চোখ দেখে সন্ধ্যার অবাক লাগে। মনে হয়, খারাপ মানুষদের চোখে কি এতো মায়া থাকে? সে তো জানে- থাকে না। তবে আকাশের বাবা এতো মায়া মায়া চোখে একবার আকাশের দিকে তাকায়, আরেকবার তার দিকে তাকায় কেন?
সৌম্য ঢোক গিলে। এসব মনে পড়লে তার নিজেকে ভীষণ এলোমেলো লাগে। ইরার চোখের কোণে পানি জমেছে।
আকাশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার-ও বলে,
– আমি যাস্ট নিতে পারি না মা, আমার বাবার নির্দেশে আমার সন্ধ্যামালতীর জীবন ধ্বং’স হতে যাচ্ছিল। কোন সুস্থ ছেলে এসব মানতে পারবে বলো তো? তোমার স্বামী আমার বাবাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে। যে আমি দিনে ১০০ বার বাবা বাবা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলতাম, সেই আমি এখন বাবা শব্দটা ভুলতে বসেছি। আমি আমি………
আকাশের কণ্ঠ রোধ হয়ে আসে। চোখ দু’টো লাল হয়ে গিয়েছে। সকলে বিস্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আকাশ ঢোক গিলল। নিজেকে সামলে তার বাবার দিকে চেয়ে ভাঙা গলায় বলে,
– এখন আমাকে কেউ মায়ের পাশে থাকতে বলে ব্যবসার কাজে বিদেশ যায় না। এখন আমাকে মাকে রেখে নিজেকেই সবজায়গায় ছুটে বেড়াতে হয়। বাবা আর বলেনা,, ‘আমি সব ঠিক করে দিব। চিন্তা নেই।’
শুনেছিলাম, পেয়ে হারানোর ক’ষ্ট না-কি অনেক বেশি। কথাটা চরম সত্য, এটা প্রমাণ পেয়েছি বাবাকে হারিয়ে। আমি ছোট থেকে বাবার স্নেহে বড় হয়েছি। বাবার আদরে বড় হয়েছি। এমনকি ১ বছর আগেও বাবা সুযোগ পেলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে, অথচ আজ সে নেই। কোথাও নেই সে।
এটুকু বলে আকাশ থামে। চোখের কোণে পানি জমেছে। গলা বেঁধে আসছে। আকাশ এগিয়ে গিয়ে তার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে ভাঙা গলায় বলে,
– তুমি জানো? আমার বাবা আমাকে সবসময় সৎ থাকতে বলেছে। ভালো মানুষ হতে বলেছে। আমার সব এলোমেলো কাজগুলো নিয়ে দিনশেষে তার কাছে গেলে সে বলত, ‘আমি সব ঠিক করে দিব।’
এটুকু বলে আকাশ দু’পা পিছিয়ে গিয়ে আবার-ও চিৎকার করে বলে,
– সে সব ঠিক করার কথা বলে, আমার সব এলোমেলো করে দিয়েছে। আমার প্রিয় মানুষদের কে’ড়ে নিয়েছে। ভাগ্যের জোরে সন্ধ্যামালতীকে পেয়ে গিয়েছি। কিন্তু আমার বাবা?
আকাশ আবার-ও সাইফুদ্দীন নওয়ানের সামনে গিয়ে ভদ্রলোকের পাঞ্জাবির কলার ধরে ভাঙা গলায় বলে,
– বলো আমার বাবা কোথায়? সে ভালো মানুষ ছিল। কোথায় হারিয়ে গিয়েছে সে? বলো?
সাইফুদ্দীন নওয়ানের চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। ছেলের অসহায়ত্ব তার ভেতরটা ছিঁড়ে ফেলছে। তার পাপ তাকে বেছে বেছে সবচেয়ে ভ’য়া’ন’ক শা’স্তিটাই দিয়েছে।
আকাশ তার বাবার পাঞ্জাবির কলার ছেড়ে দেয়। করুণ কণ্ঠে বলে,
– বিশ্বাস কর বাবা, তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে আমার ভীষণ ক’ষ্ট হয়। তুমি আমাকে এতোটা ক’ষ্ট না দিলেও পারতে।
এটুকু বলতে গিয়ে আকাশের ডান চোখ থেকে একফোঁটা নোনাজল চোখ ফেটে বেরিয়ে আসে। আকাশ ঢোক গিলে আবার-ও বলে,
– তুমি তো আমাকে ভালোবাসো, মাকে ভালোবাসো। যারা ভালোবাসতে পারে, তারা অন্যদের ভালোবাসার মানুষদের কিভাবে মে’রে ফেলে? আমি বিশ্বাস-ই করতে পারিনা, আমার বাবা এরকম কিছু করতে পারে। কিন্তু আমার বিশ্বাসে কি আসে যায়? তুমি মানুষটা খু’নি, একটা নয়, দু’টো নয়, পুরো ছয়জন নির্দোষ, নিরপরাধ মানুষের খু’নি, এই সত্য কখনো বদলাবে না।
কথাগুলো বলে চোখ বুজে নেয় আকাশ। ক’ষ্ট হচ্ছে তার। সন্ধ্যা, সৌম্য, ইরা সকলে অবাক হয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। সন্ধ্যার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। আকাশ এতো ক’ষ্ট পোষে কেন? তার যে আকাশের ক’ষ্টে ভীষণ ক’ষ্ট হয়।
একটু পর আকাশ চোখ মেলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমি আর এই বাড়িতে থাকতে পারবো না। আমাকে ক্ষ’মা কর মা।
আসমানী নওয়ানের চোখমুখ লাল। শাড়ির আঁচলে একটু পর পর চোখ মুছে ভদ্রমহিলা। আকাশের কথায় নিজেকে সামলে ভারী সাথে দৃঢ় গলায় বলেন,
– একটা কথা জেনে রাখ আব্বা,
শত্রুদের কখনো মে’রে ফেলতে নেই। তাদের দুর্বল জায়গা খুঁজে বের করে, সেখানে খুব নিখুঁতভাবে আ’ঘাত হানতে হয়। তবেই তাদের শা’স্তি দিয়ে তুমি তৃপ্তি পাবে। মৃ’ত্যু দিলে তো তারা মুক্তি পেয়ে যায়।
সাইফুদ্দীন নওয়ান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী-সন্তান, আসমানী আর আকাশের এতোটা ভৎসনা পাবে যে, সে নিজে আ’ত্ম’হ’ত্যা করতে চাইবে। এটা আমার প্রতিজ্ঞা।
কথাগুলো বলে তিনি থামলেন।
আসমানী নওয়ানের শ’ক্ত কথাগুলো শুনে সকলে বিস্মিত নয়নে তাকায়। সাইফুদ্দীন নওয়ান স্তব্ধ চোখে স্ত্রীর পানে চেয়ে রইল। তার যে এখনি আর বাঁচতে ইচ্ছে করেনা।
আসমানী নওয়ান এখানে আর দাঁড়ালেন না। একবার-ও স্বামীর পানে তাকালেন না। বড় বড় পা ফেলে তার ঘরের দিকে যায়। সন্ধ্যার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাথাটা একটু ঘুরলে সন্ধ্যার বাহু ধরে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা দ্রুত আসমানী নওয়ানকে ধরতে নিলে তিনি মৃদুস্বরে বলেন,
– আমি ঠিক আছি মা।
এরপর তার ঘরে চলে যায়। চোখের কোণ ঘেষে কয়েক ফোঁটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়েছে।
সন্ধ্যা বেশ কিছুকক্ষণ সাইফুদ্দীন নওয়ানের দিকে চেয়ে রইল। দু’হাতে চোখজোড়া মুছে নেয়। এরপর এগিয়ে এসে আকাশের সামনে দাঁড়ায়। আকাশ তার ভেজা চোখজোড়া নিয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকালো না। সন্ধ্যার সামনে থেকে সরে যেতে নিলে সন্ধ্যা ডান হাতে আকাশের পাঞ্জাবির কলার টেনে তার দিকে আনে। আকাশ বেখেয়ালে থাকায় সন্ধ্যার উপর পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয়। অবাক হয়ে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা বা হাতে ইশারায় বোঝায়,
– আমার কথা শুনুন।
আকাশ নিরবে চেয়ে রইল সন্ধ্যার পানে। সন্ধ্যা আকাশের হাত ধরে ডায়নিং এর মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর আকাশের হাত ছেড়ে আকাশের থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। দু’হাত নাড়িয়ে খুব সুন্দর করে ইশারায় বোঝাতে শুরু করে,
– কখনো ভালোবাসা সর্বশ্রেষ্ঠ সুমিষ্ট মধু। যার স্বাদ অমৃতকেও হার মানায়। আবার কখনো ভালোবাসা সবচেয়ে ভ’য়ং’কর বি’ষ। যা আমাদের জীবন্ত লা’শ বানিয়ে দিতে সক্ষম।
কেউ ভালোবাসা নামক বি’ষে প্রভাবিত হয় নিজের পাপের কারণে। যেমন আপনার বাবা তার কৃতকর্মের শা’স্তি হিসেবে ভালোবাসা নামক বি’ষ পান করে আসছে গত একবছর যাবৎ।
আবার কেউ ভালোবাসা নামক ভ’য়ং’কর বি’ষে প্রভাবিত হয় কপালের দোষে। যেমন,, সৌম্য ভাইয়া, ইরা আপু, খালাম্মা, আপনি……..আর আমি।
এরপর সন্ধ্যা শান্ত হয়ে দাঁড়ায়। একটু পর আকাশের দিকে চেয়ে আবার-ও বোঝায়,
– কেউ অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করে দিতে হয়। আমার মনে হয়, পাপকারী যদি অনুতপ্ত হয়, তবে সেই অনুতপ্তকারীকে ক্ষমা না করাটা-ও একটা অপরাধ।
এরপর সন্ধ্যা আকাশের বাবাকে ইশারা করে বোঝায়,
– আপনার বাবার দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন, উনি অনুতপ্ত। উনি বেঁচে থেকেও প্রতিনিয়ত অ’গ্নি’শিখায় জ্বলছে। আপনি আর আপনার মা উনাকে ক্ষমা করুন। আমি আর আমার সৌম্য ভাইয়ার উনার উপর কোনো অভিযোগ নেই।
সন্ধ্যা শান্ত হয়ে দাঁড়ায়। এরপর এগিয়ে গিয়ে আকাশের পকেট থেকে ফোন বের করে এতোক্ষণ যা যা বোঝালো, সব আকাশের ফোনে টাইপ করে আকাশের হাতে আকাশের ফোন ধরিয়ে দেয়। আকাশ তাকালো না ফোনের দিকে। তার দৃষ্টি তো সন্ধ্যার দিকে। সে সন্ধ্যার নিখুঁতভাবে করা প্রতিটি ইঙ্গিতের মানে বুঝেছে। শুধু সে নয়, প্রত্যেক্যে সন্ধ্যার নিরব ভাষা বুঝেছে।
সাইফুদ্দীন নওয়ান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সন্ধ্যার পানে। একদিন যে মেয়ের শুধু খারাপ চেয়ে এসেছিল, সেই মেয়েটি-ই আজ তার পক্ষে কথা বলছে, এর চেয়ে বড় ল’জ্জার আর কিছু হয় না বোধয়। ভদ্রলোক ছলছল দৃষ্টিতে সন্ধ্যার পানে চেয়ে রইল।
আসমানী নওয়ান ঘরে যেতে গিয়েও সন্ধ্যাকে ওভাবে ইশারা করতে দেখে তার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সন্ধ্যার ভাষা গুলো বুঝে ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে শুধু চেয়ে রইল সন্ধ্যার দিকে। তার মনে হলো, সে এইমাত্র তার ছোট বোন জ্যোৎস্নার প্রতিচ্ছবি দেখলেন সন্ধ্যার মাঝে। তাদের সব ভাইবোনের মধ্যে একটু-আধটু রা’গ, জেদ বরাবরই ছিল। তার মধ্যে বড় ভাইয়ের যেমন জেদ ছিল সবচেয়ে বেশি, তেমনি তাদের ছোট বোন জ্যোৎস্না ছিল মাটির মানুষ।
আসমানী নওয়ানের মনে আছে, জ্যোৎস্না ছোটবেলায় যখন খেলতে গিয়ে কারো মা’র খেয়ে এসে কাঁদতো। আসমানী তখন ভীষণ রে’গে যেত। জ্যোৎস্নাকে টেনে সেখানে নিয়ে গিয়ে সেই মেয়েকে দেখিয়ে দিতে বলত। জ্যোৎস্না মেয়েটিকে দেখিয়ে দিলে আসমানী মেয়েটির দিকে যেতে নিলে জ্যোৎস্না আসমানীর হাত টেনে বলত,
– বড়-আপা ওকে কিছু বলো না। ওর দিকে তাকিয়ে দেখ, ও আমাকে মে’রে অনুতপ্ত। আর কেউ অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করা উচিৎ। অনুতপ্তকারীকে ক্ষমা না করতে পারাটা-ও তো একটা অপরাধ।
ছোট বোনের বলা কথাটা আসমানী নওয়ানের কানে বাজছে, আর সন্ধ্যার ইশারা করার দৃশ্য চোখে ভাসছে।
ইরা সৌম্য’র হাত ধরে অবাক হয়ে বলে,
– সন্ধ্যা অনেক অদ্ভুদ!
সৌম্য সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে। সৌম্য অনুতপ্তকারীকে ক্ষমা করতে জানে। কিন্তু তার মা আর সন্ধ্যা যেন মানুষকে ক্ষমা করার অজুহাত খোঁজে। তার মনে আছে,, তার বাবা আরেকটি বিয়ে করে আনার পর তার মা তার বাবাকে কিচ্ছু বলেনি। শুধু একা বসে কাঁদতো। সে কখনো তার মাকে কারো সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে শোনেনি। তার মা সাতদিন সতীনের সংসার করেছিল, অথচ তার মা তার সৎ মাকে নিয়ে সৎ মায়ের আড়ালেও একটা কটু কথা বলেনি।
কথাগুলো ভেবে সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার বোনের বৈশিষ্ট্য একদম তার মায়ের মতো। সে সন্ধ্যাকে কয়েকমাস যতই শিখিয়ে পড়িয়ে দিল, নরম মাটি, মানুষ পাড়ায় বেশি। এর মেয়াদ যে সন্ধ্যার মাঝে খুব অল্প সময়ের জন্য ছিল, এটা সৌম্য আজকে বুঝল। মানুষ ট্রেনিং নিলে, তা দু’দিন পর ঠিক-ই ভুলে যায়। আর সময়ের সাথে সাথে তার ভেতরে গাঁথা বৈশিষ্ট্য আবার-ও উপচে বেরিয়ে আসে। যা সন্ধ্যার মাঝে সৌম্য স্পষ্ট দেখল।
সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– বোনুকে আল্লাহ্ মায়ের ফটোকপি বানিয়ে পাঠিয়েছে। ওর চোহারা, গায়ের রঙ, হাঁটা, চালচলন, এমনি ওর মাঝে বিদ্যমান প্রতিটি বৈশিষ্ট্য হুবহু মায়ের মতো।
ইরা সৌম্য’র কথাগুলো শুনল। কিছু বলল না। তার দৃষ্টি সন্ধ্যার পানে।
.
.
আকাশ এক ধ্যানে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে। সন্ধ্যার দৃষ্টি আকাশের দিকে। সকালে বলা আকাশের কথাগুলোর মাঝে একটি কথা মনে পড়ল ভীষণ।
‘তুমি আমাকে কেন ভুলে গিয়েছিল সন্ধ্যামালতী?
কথাটা ভেবে সন্ধ্যা ঢোক গিলল। এগিয়ে এসে আকাশের হাত থেকে ফোন নিতে চাইলে আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– আমি তোমার ইশারায় দেখানো প্রতিটি নিরব শব্দ পড়তে পারি সন্ধ্যামালতী।
আকাশের কথাটা শুনে সন্ধ্যা বিস্মিত হয়। তাকে এভাবে কেউ কখনো বলেনি। মেয়েটি ছলছল দৃষ্টিতে তাকায় আকাশের দিকে। ডান হাতে ঝাপসা চোখজোড়া ডলে ইশারায় বোঝায়,
– যেদিন থেকে জেনেছি আপনি আমার স্বামী। সেদিন থেকেই আপনি আমার মনমানুষ হয়ে গিয়েছেন। বিশ্বাস করুন, এতোগুলো মাস জুড়ে আমি শুধু আপনাকেই ভেবেছি। এক সেকেন্ড এর জন্য-ও ভুলিনি আপনাকে।
আপনার-আমার দূরত্ব আমাকে বুঝিয়েছিল, আমি ভালাবাসা নামক বি’ষ পান করেছি। যে বি’ষে মৃত্যু হয়না, প্রতিনিয়ত শুধু ম’র’ণ’য’ন্ত্র’ণা হয়।
প্রতি রাতে বিছানায় ঘুমোতে গিয়ে মনে হতো, আমি আ’গু’নের চি’তা’য় জ্ব’ল’ছি,,ভীষণ য’ন্ত্র’ণা হত। মনে হত, এই বুঝি মৃত্যু দরজায় কড়া নাড়ছে। অপেক্ষা করতাম। কিন্তু মৃত্যুর ফেরেশতা আর আসতো না।
সন্ধ্যা চুপ হয়ে দাঁড়ায়। দলা পাকিয়ে কান্না পাচ্ছে তার। চোখে জল টলমল করছে।
আকাশ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় সন্ধ্যার পানে। বুকের বা পাশে চিনচিন ব্য’থা করছে।
সন্ধ্যা ঝাপসা চোখে আকাশের দিকে চেয়ে আবার-ও ইশারা করে,
– মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখতাম, আপনি আমায় ডিভোর্স নয়, ভালোবেসে আমার মাথা আপনার বুকে ঠাই দিবেন। কখনো ভাবিনি এই দুঃস্বপ্ন সত্যি হবে। আমি সারাজীবন আপনার বুকে মাথা রাখতে চাই। আপনি কখনো আমায় সরিয়ে দিবেন না, প্লিজ!
এরপর সন্ধ্যা থামে। আরেকটু আকাশের দিকে এগিয়ে এসে দাঁড়ায়।
আশেপাশে প্রত্যেকের বিস্ময় দৃষ্টি, নিজের ল’জ্জা, সংকোচ উপেক্ষা করে সন্ধ্যা হঠাৎ-ই তার কপাল আকাশের বুকের বা পাশে ঠেকিয়ে দেয়। বা হাত উঠিয়ে আকাশের বুকের ডানপাশে আলতো করে রাখে। ডান হাতে আকাশের পেটের কাছে পাঞ্জাবি মুঠো করে ধরে।
অন্তঃদহন পর্ব ৩৬ (২)
মেয়েটার এতোক্ষণের জমানো অশ্রু চোখের কোণ ঘেঁষে টুপটুপ করে গড়িয়ে পড়ে।
আকাশ স্তব্ধ হয়ে যায়। লালিত চোখজোড়ায় জলকণা বালির ন্যায় চিকচিক করছে। তার সন্ধ্যামালতীর দুঃখমিশ্রিত অনুভূতি একদিকে যেমন তার হৃদয় ঠান্ডা করে দিয়েছে, অন্যদিকে তেমন প্রতিনিয়ত তার বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্য’থা ক্রমশ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
