অরুণিকা পর্ব ১৩
সামিয়া বিনতে হামিদ
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে, হ্যাপি বার্থডে, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।”
সবাই সম্মিলিত ভাবে তূর্যকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো। অরুণিকা তূর্যের কাছে এসে বলল,
“রকস্টার আজ তোমার জন্মদিন?”
তূর্য হেসে বলল, “হ্যাঁ, টুইংকেল।”
তাহমিদ একটা বক্স টেবিলের উপর রেখে বলল,
“তোর বার্থডে কেক।”
তূর্য কেকটা দেখে বলল, “তুই বানিয়েছিস?”
“হ্যাঁ।”
তূর্য ছবি উঠিয়ে নিয়ে বলল,
“দেখতে অসাধারণ লাগছে। এবার খেতে কেমন লাগে সেটাই দেখার বিষয়।”
সবাই একসাথেই তূর্যকে কেক খাওয়ালো। তাহমিদ কেকের জন্য ভালোই প্রশংসা পেলো। খাওয়া-দাওয়ার পর সেই উপহারটি দেওয়ার সময় এলো, যেটির জন্য আজ এতো আয়োজন করা হয়েছে।
আরাফ অরুণিকাকে কোলে নিয়ে বলল,
“উপহারটা তুমিই দাও।”
তূর্য যদিও বুঝতে পেরেছে তবুও সে উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল। এবার আহনাফ অরুণিকার হাতে গিটারটি দিলো। অরুণিকা সেটা নিয়েই বলল,
“এতো বড় গিফট! এখানে কি আছে?”
আরাফ বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুমি আগে তোমার রকস্টারকে দাও। সে-ই খুলে দেখুক কি আছে এতে!”
অরুণিকা সেই বক্সটি আঁকড়ে ধরে বলল,
“অনেক ভারী।”
তূর্য নিয়ে বলল,
“হয়েছে, হয়েছে। টুইংকেল স্পর্শ করে দিয়েছে এতেই হবে। নয়তো আমি পাওয়ার আগেই হাত থেকে ফেলে আমার শখের উপহার ভেঙে ফেলবে।”
শতাব্দী গালে হাত দিয়ে বলল,
“গায়ক সাহেব, তুমি বুঝে ফেলেছ নাকি!”
তূর্য কলার নাচিয়ে বলল,
“উপহার দাতা কারা?”
শতাব্দী পাঁচজনের দিকে ইশারা করে বলল, “এরা।”
“এরা কারা?”
“তোমার বন্ধু।”
“তো, আমি বুঝি আমার বন্ধুদের চিনবো না?”
তূর্য বক্স খুলে গিটারটা বের করে পাঁচ জনের উদ্দেশ্যে বলল,
“আমার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপহার হলো, আমি তোদের মতো বন্ধু পেয়েছি। আর আমার একটা টুইংকেলও আছে।”
অরুণিকা গিটারটি নিয়ে বলল,
“এটা দিয়ে কি করে?”
তূর্য অরুণিকাকে কোলে বসিয়ে বলল,
“এটা গান গাওয়ার সময় ব্যবহার করে। এমনিতেও করা যায়। এটাতে শব্দ তুললে গান শুনতে আরো ভালো লাগে।”
অরুণিকা ফ্যালফ্যাল করে তূর্যের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইমন বলল,
“তোর কঠিন কথাগুলো ও বুঝবে না। তুই বরং শুনিয়েই বুঝিয়ে দে।”
এরপর সবাই তূর্যকে ঘিরে বসলো। অরুণিকা তূর্যের কোলে বসেছে। তূর্য গিটারে সুর তুলে অরুণিকার দিকে তাকালো। অরুণিকা গিটারের শব্দ শুনে হেসে তূর্যের দিকে তাকালো।
“আমি তোমাকেই বলে দেবো,
কি যে একা দীর্ঘ রাত
আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে।
আমি তোমাকেই বলে দেবো,
সেই ভুলে ভরা গল্প
কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়।
ছুঁয়ে কান্নার রঙ,
ছুঁয়ে জোছনার ছায়া
ছুঁয়ে কান্নার রঙ
ছুঁয়ে জোছনার ছায়া।”
অরুণিকা তূর্যকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি ওই গানটা গাও। যেটা আমাকে শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়েছিলে। ওই গানটা।”
তূর্য মুচকি হেসে গিটারে সুর তুললো।
“তুমি নরম ফুলের গান,
তুমি গরম ভাতের ভাপ,
তুমি অভিমানের চুপ,
তুমি কান্না জমা মোম।
আমি তোমার ছায়ায় ছায়ায় থাকি মা
আমি তোমার চোখের তারায় বাঁচি মা,
আমি তোমার মায়ায় মায়ায় থাকি মা
আমি তোমায় হাওয়ায় আবার ডাকি মা,
আমি তোমায় ভালোবাসায় মুড়ে, রাখি মা।”
শতাব্দী কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,
“গায়ক সাহেব, তোমার কন্ঠে জাদু আছে। আমি তো তোমার প্রেমেই পড়ে যাচ্ছি।”
তূর্য শব্দ করে হাসলো। শতাব্দী বলল,
“হাসছো কেন?”
“আমার প্রেম করতে আপত্তি নেই, তবে বিয়ে আমি করছি না।”
“বিয়ে করবে না কেন?”
“রকস্টারদের বিয়ে করলে মানায় না।”
“দেখা যাবে, তুমিই সবার আগে বিয়ে করে বউ ঘরে তুলেছ।”
“আমার তো মনে হয় বিয়েটা সবার আগে ইভানেরই হবে।”
“কিভাবে বুঝলে?”
“দিব্যদৃষ্টি লাভ করেছি।”
“এতো ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছো কেন? কিছু আছে নাকি?”
ইভান ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“এখনো কলেজ পাশ করি নি। কি আবোলতাবোল বলছিস তুই?”
ইভানের কথায় তূর্য আর শতাব্দী চুপ হয়ে গেলো।
আজ স্কুল ছুটি তাই সবাই বাসায় আছে। আর আজই অরুণিকা তার পুতুলের বিয়ে দেবে। শতাব্দী হচ্ছে পুতুলের বড় বোন, ইভান পুতুলের বড় ভাই। ইমনকে বানিয়েছে ঘটক। আরাফ হচ্ছে পুতুলের মা, আর তূর্য বাবা। তাহমিদ আর আহনাফ এসেছে পুতুলের বিয়েতে নাচ-গান করতে। ডুমুর আর বাঁধন পুতুলের শ্বশুড়-শাশুড়ি।
সবাইকে এক একটা পরিচয় দেওয়ার পর শতাব্দী অরুণিকাকে জিজ্ঞেস করলো,
“ছোট সখী, তাহলে তুমি কি হবে?”
অরুণিকা হেসে বলল,
“আমি সবাইকে সাজিয়ে দেবো। রান্না দেখবো। তাহমিদের মতো রান্না করে সবাইকে খাওয়াবো।”
আরাফ হাত তালি দিয়ে বলল, “বাহ, বেশ, বেশ।”
তূর্য বলল, “খেতে পারবো তো?”
অরুণিকা বলল, “হুম অনেক মজা হবে।”
তাহমিদ বলল, “কি কি রাঁধছো?”
“এখন বলবো না। যখন খাবে, তখন বলবো। এখন আগে সাজিয়ে দেবো।”
অরুণিকা একটা উড়না শতাব্দীর মাথায় পরিয়ে দিয়ে কাঁচা হাতে তাকে সাজিয়ে দিলো। অরুণিকা সাজিয়ে দেওয়ার পর বলল,
“দেখো, কতো সুন্দর লাগছে।”
শতাব্দীকে দেখে তূর্য বলল,
“আমার মেয়ের এ কি হাল হলো।”
আহনাফ তূর্যকে গুঁতো দিয়ে বলল,
“বাহ, অরু। তুমি তো খুব সুন্দর করে সাজিয়েছো।”
অরুণিকা মিষ্টি হাসি দিলো। শতাব্দী মুখ ছোট করে বসে রইলো। অরুণিকা ইভানের সামনে এসে বলল,
“তোমাকে সাজতে হবে না। ভাইরা বোনের বিয়েতে সাজে না।”
ইভান হাঁ করে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে রইলো। শতাব্দী হেসে বলল,
“ভাইরা বোনের বিয়েতে শুধু কাজ দেখে।”
এরপর পাশে থাকা একটা বাটি ইভানের মাথার উপর দিয়ে শতাব্দী বলল,
“মনে করো এখানে ফুল আছে। আর তুমি ফুল নিয়ে ঘর সাজাচ্ছো।”
ইভান বাটিটা সরিয়ে চোখ ছোট করে শতাব্দীর দিকে তাকালো। এবার ইমনের নাকের নিচে কাজল দিয়ে গোঁফ এঁকে অরুণিকা বলল,
“তুমি হচ্ছো ঘটক। তুমি বিয়ে দেবে।”
ইমন বলল, “ঘটক না, কাজি।”
শতাব্দী ইমনের কাছে এসে বলল,
“ভাবলাম ঘটক সাহেবকে বলবো, একটা ছেলে দেখতে। এখন যেহেতু কাজি হয়ে গেছেন, তাহলে একেবারে বোনের বিয়ের পাশাপাশি আমার বিয়েটাও করিয়ে দিন, কাজি সাহেব।”
ইমন কাজল দিয়ে আঁকা গোঁফের উপর হাত বুলিয়ে বলল,
“তোমার যা চেহারা, কয়েকশ বছরেও সু পাত্র জুটবে কিনা সন্দেহ।”
তূর্য রাগী কন্ঠে বললো,
“এই কাজি, তুই আমার মেয়েকে এভাবে অপমান করতে পারিস না। আমি তোর গোঁফগুলো একেবারে!”
“একেবারে কি? এই গোঁফ সহজে কাটা যাবে না। অরুণিকা এই গোঁফ লাগিয়েছে।”
“আমি তো কাটবো না। একেবারে পুরো মুখে গোঁফ লাগিয়ে দেবো।”
অরুণিকা তূর্যকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি হচ্ছো পুতুলের বাবা। তুমি কম কথা বলবে। চুপ থাকবে। নয়তো বরের বাবা রাগ করবে।”
অরুণিকার কথা শুনে সবাই অবাক। আরাফ জিজ্ঞেস করলো,
“তোমাকে এসব কে বলেছে?”
“আলেয়া খালা বলেছে। সিনথিয়া আপুর বিয়ের সময় আংকেল চুপ করে বসে ছিলো। এমনিতেই কতো বকবক করে। আলেয়া খালা বলেছে, মেয়ের বাবা-মার চুপ থাকতে হয়।”
ইমন হেসে বলল,
“অরুণিকা হবে ভবিষ্যৎ পরিবার কল্যান মন্ত্রী।”
এবার অরুণিকা আরাফকে সাজিয়ে দিলো। তূর্য আরাফের হাত ধরে বলল,
“আমার বউকে দারুণ লাগছে। চলো ঘরে যাই।”
আরাফ হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“যা তো। সর।”
এবার তাহমিদ আর আহনাফকেও সাজিয়ে দিলো। আহনাফকে সাজানোর সময় অরুণিকা তার ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে দিচ্ছিল। আহনাফ বলল,
“অরু, আর লাগিয়ে দিও না। কি করছো? একেবারে খাইয়ে দেবে নাকি?”
অরুণিকা হাত ঝেড়ে বলল,
“এখন শেষ।”
আহনাফ বিরক্তির সুরে বলল,
“মেয়েরা এমন আস্তরণ লাগিয়ে কিভাবে চলাফেরা করে। আমার তো মনে হচ্ছে মুখে ভারী কিছু লাগিয়েছি।”
শতাব্দী মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“মেয়েরা সব পারে, বুঝলে?”
“এতো বুঝতে হবে না। এই অরু, তাড়াতাড়ি বিয়ে শেষ করো।”
অরুণিকা বলল,
“তোমরা নাচ-গান করো।”
আহনাফ বলল,।”আমি নাচবো?”
“তোমাকে নাচ-গান করার জন্যই তো বিয়েতে এনেছি।”
এবার অরুণিকার চাপাচাপিতে তাহমিদ আর আহনাফ কোমড় দুলিয়ে নাচতে লাগলো। তাদের দেখাদেখি ইমন আর তূর্যও যোগ দিলো। শুধু আরাফ আর ইভান বসে বসে তাদের দেখছে। অরুণিকার পুতুলের বিয়ে খেলা শেষ করে শতাব্দী বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বের হলো। শতাব্দীকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য তাহমিদও বেরিয়ে এলো। শতাব্দী মুচকি হেসে বললো,
“আজকের খেলায় অনেক মজা পেয়েছি।”
“হুম।”
শতাব্দী বিদায় দিয়ে চলে যেতে নিবে তখনই তাহমিদ পকেট থেকে একটা ছোট বক্স বের করে বলল,
“এটা তোমার জন্য।”
শতাব্দী বক্সটি নিয়ে বলল, “আমার জন্য?”
“হুম।”
“কি আছে এখানে?”
“বাসায় গিয়ে দেখো।”
শতাব্দী মুচকি হাসি ফেরত দিয়ে বাসায় চলে এলো। বাসায় এসে সে তাড়াতাড়ি বক্সটা খুলে দেখলো এক জোড়া নুপূর। সে নুপূরগুলো হাতে নিয়ে দেখলো বক্সে ছোট একটা চিরকুটও ভাঁজ করা আছে। সে তাড়াতাড়ি সেটি খুলে পড়তে লাগলো।
তাহমিদ লিখেছে,
“অরুণিকার কাছে শুনেছি তোমার নাকি নুপূর পরতে খুব ভালো লাগে। ওর জন্য কিনতে গিয়েছিলাম। ভাবলাম, তোমার জন্যও নিয়ে ফেলি।”
শতাব্দী মুচকি হেসে নুপূরগুলো হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করলো। একটা মিষ্টি অনুভূতি এখন তার ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে। এই অনুভূতির কোনো নাম নেই। শুধু সে এতোটুকু জানে, আজ তার ভীষণ ভালো লাগছে।
ঋতুর পরিবর্তনে সবাই অসুস্থ। প্রথম দিন থেকেই ইমন আর তূর্যের জ্বর। তারা টানা দুইদিন স্কুলে যায় নি, আর তূর্য তার থিয়েটারেও যাচ্ছে না। গতকাল থেকে আহনাফের জ্বর জ্বর লাগছে। প্রচন্ড মাথা ব্যথার জন্য সে বিছানা ছাড়তে পারছে না। তবুও সে অসুস্থ শরীর নিয়ে দোকানে গিয়েছিল। দোকানের মালিক ভালো লোক। তিনি আহনাফকে কিছুদিন ছুটি দিয়ে দেন। এদিকে আজ সকাল থেকেই অরুণিকা অসুস্থ। সে একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। তার নুইয়ে পড়া দেখেই সবাই বুঝে গেছে, এই ভাইরাস জ্বর এবার তাকেও ধরেছে। সবারই ওষুধ চলছে। আপতত আরাফ আর ইভান সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। তাহমিদেরও শরীর তেমন ভালো যাচ্ছে না। এর মধ্যে পুরো রাত বসে বসে নাস্তা বানিয়ে, সে সকালে স্কুলের পর তার দোকান খুলতে গেছে। এতোদিন ইমন তার সাথে ছিল। এখন ইমনের শরীর ভালো নেই, তাই সে একাই এসেছে। আজ রোদটাও খুব অসহনীয় লাগছে। তাহমিদের মাথাটাও ভারী হয়ে আছে। ক্রেতাকে ডাকার মতো তার কোনো শক্তিই নেই। সে শুধু একটা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই শতাব্দী তার বান্ধবী স্রেয়ার সাথে নৃত্যের ক্লাসে যাচ্ছিল। তাহমিদকে দেখেই সে দাঁড়িয়ে গেল।
স্রেয়া শতাব্দীকে বলল,
“তাড়াতাড়ি চল। দাঁড়িয়ে গেলি কেন?”
শতাব্দী অন্যমনস্ক হয়ে বলল, “মিষ্টি মশাই।”
স্রেয়া ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কি বললি? বুঝি নি তোর কথা।”
শতাব্দী তাহমিদের সামনে এসে দেখলো তার একটা মিষ্টিও আজ বিক্রি হয় নি। তাহমিদও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শতাব্দী তাহমিদের পাশে এসে বলল,
“মিষ্টিমশাই। কি করছো এখানে?”
শতাব্দীর কন্ঠ শুনে তাহমিদের ঘোর কাটলো। সে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমুচ্ছিলো।
তাহমিদ শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি!”
“হ্যাঁ, নাচ শিখতে যাচ্ছি, দেখলাম তুমি এখানে।”
তাহমিদ কাঁপা কন্ঠে বললো,
“মিষ্টি বিক্রি করতে এসেছি।”
তাহমিদের শুকনো মুখটা দেখে শতাব্দীর কষ্ট হলো। সে তাহমিদের কপালে হাত রেখে বলল,
“এমা, অনেক জ্বর এসেছে।”
তাহমিদ হালকা হেসে বলল,
“আরেহ না। প্রচন্ড রোদ তাই শরীর গরম হয়ে গেছে।”
“হয়েছে। এই রোদে তোমার সুন্দর চেহারাটা পুড়িয়ে ফেলতে হবে না। বাসায় যাও। দেখো তোমার পুরো মুখ লাল হয়ে গেছো। মনে হচ্ছে কেউ তোমার পুরো মুখে শুধু চড় দিয়ে গেছে।”
তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে শতাব্দীর দিকে তাকালো। শতাব্দী বলল,
“মা, যখন পুচকিকে মারে, তখন এভাবেই গাল লাল হয়ে যায়। তবে আমি কখনো মার খাই নি।”
তাহমিদ হাসলো। শতাব্দী বলল,
“মিষ্টিগুলো আমি খেয়ে ফেলি?”
তাহমিদ আহত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। শতাব্দী তাহমিদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আরেহ মিষ্টিমশাই, কিনে নেবো তো। এমনিতে দিতে বলছি না।”
এবার তাহমিদ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
“ক’টা লাগবে?”
“সব দাও।
“সব?”
“হ্যাঁ। সব। তুমি তো জানোই, আমার মিষ্টি অনেক প্রিয়।”
“তোমার তো সবই প্রিয়।”
শতাব্দী হালকা হেসে বলল,
“মিষ্টিমশাই যা বানায়, তাই আমার প্রিয়। সবই না।”
কথাটি শুনে তাহমিদ এক নজর শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টিগুলো প্যাকেটে ঢুকাতে লাগলো।
এদিকে শতাব্দী সব মিষ্টি কিনে নিয়ে চলে গেলো। আর তাহমিদ বাসায় এসে ধপাস করে মেঝেতে শুয়ে পড়লো। শরীরের ভার ছেড়ে দেওয়ায় সে মেঝেতে পড়ে হালকা ব্যথাও পেয়েছে। এদিকে বাসায় আরাফ আর ইভান নেই। ইমন আর তূর্য ঘুম। আহনাফের প্রচন্ড জ্বর। সেও আধোঘুমে আছে।
তাহমিদ অনেক কষ্টে মাথা তুললো। এই মুহূর্তে তার শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। কিভাবে বাসা অবধি এসেছে সে নিজেও জানে না।
এদিকে অরুণিকা বসে বসে খেলছিল। সে তাহমিদকে কাঁপতে দেখে তার কাছে এসে বসে বলল,
“তাহমিদ, তোমার কি হয়েছে?”
তাহমিদ কাঁপা কন্ঠে বললো,
“ওপাশ থেকে একটা বালিশ এনে দাও তো।”
অরুণিকা বালিশ এনে তাহমিদের মাথার নিচে দিয়ে বলল,
“আমি তোমার মাথায় হাত দেবো?”
“না, তুমি আমার জন্য একটা কাঁথা এনে দাও।”
অরুণিকা আশেপাশে কাঁথা খুঁজতে লাগলো। বাসায় মাত্র দুটি কাঁথা ছিল। একটা এখন ইমন আর তূর্য ভাগাভাগি করে নিয়েছে। আরেকটা আহনাফের দখলে। অরুণিকা বিছানায় উঠে আহনাফকে কয়েকবার ডাকলো। আহনাফ হুম, হুম শব্দ করে আবার ঘুমিয়ে গেলো। অরুণিকা এবার টেনেটুনে কাঁথাটা আহনাফের কাছ থেকে নিয়ে তাহমিদের উপর চড়িয়ে দিলো। তাহমিদ একপাশে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর আহনাফ ঠান্ডায় কাঁপতে লাগলো। সে বিড়বিড় করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। অরুণিকা আবার আহনাফের কাছে গিয়ে বলল,
“তুমি কি বলছো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
অরুণিকা একদম আহনাফের মুখের কাছে কান লাগিয়ে দিলো। এবারও সে কিছু বুঝলো না। তাই সে আবার আহনাফকে ডাকলো।
“এই আহনাফ, উঠো। কি বলছো?”
আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে চোখ খুলে অরুণিকাকে দেখে বিরক্তির সুরে বলল,
“কি সমস্যা তোমার? যাও এখান থেকে।”
“তুমি কি বলছো?”
আহনাফ ধমক দিয়ে বলল,
“আরেহ যাও বলছি। যাও।”
অরুণিকা এক ধমকে চুপ হয়ে গেলো। আহনাফ কিছুক্ষণ পর হালকা চোখ খুলে দেখলো, অরুণিকা ঠোঁট ফুলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আহনাফ হালকা হাসলো। অরুণিকাকে টেনে বুকের উপর বসিয়ে বলল,
“অরু, আমার শরীর ভালো না। একটা কাজ করবে?”
অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল, “কি কাজ?”
“একবার আমার বাম পায়ে হাঁটবে, আরেকবার ডানপায়ে। এরপর দুই হাতে। তারপর মাথার চুলগুলো একটু পর পর টেনে দেবে। তারপর মাথায় আর কপালের দুই দিকে একটা মাসাজ করে দেবে। মনে থাকবে তো? আর আমি ঘুমাচ্ছি, আমাকে কিছুক্ষণ পর পর ডাকবে না। ঠিক আছে?”
অরুণিকা আহনাফের কথা মতো তার হাত পায়ে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলো। আর কিছুক্ষণ পর পর তার চুল টেনে দেওয়ার পাশাপাশি মাথাটাও টিপে দিতে লাগলো। কয়েকবার এমন করার পর, অরুণিকার বেশ মজাই লাগছিল। আহনাফের পা দুটি তার কাছে রেল লাইনের লোহার পাতের মতো মনে হচ্ছে। সে দেয়াল ধরে ধরে সেই পায়ের উপর হাঁটছে আর লাফাচ্ছে। এদিকে অরুণিকাকে কাজ দিয়ে আহনাফ আরাম করে ঘুমাচ্ছে।
প্রায় আধাঘন্টা পর অরুণিকা ক্লান্ত হয়ে আহনাফের পায়ের উপরই ঘুমিয়ে পড়লো। আরাফ আর ইভান বাসায় এসে দেখলো সবাই ঘুমাচ্ছে।
তারা দু’জনই সবার জ্বর মাপলো। ইমন আর তূর্যের আপতত ১০০ ডিগ্রি। আহনাফের ১০২। আর তাহমিদের ১০৩ হয়েছে। তবে অরুণিকার জ্বর নেই। আরাফ আর ইভান তাড়াতাড়ি তাহমিদকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ইভান ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে আহনাফ আর তাহমিদকে খাইয়ে দিলো। বাকী রাত আরাফ আর ইভান দু’জনই তাদের মাথায় জলপট্টি দিয়ে গেলো। সকালে সুরাইয়া আলেয়া খালাকে দিয়ে তাদের ব্যবহারের জন্য পানি আনালেন, আর ঘরটাও পরিষ্কার করিয়ে দিলেন। সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবারটা সুরাইয়া রেঁধে দিয়ে গেলেন।
সন্ধ্যায় শতাব্দী বাসায় এলো। বাসায় এসে দেখলো আহনাফ আর তাহমিদ ঘুমাচ্ছে। বাকীরা বসে আছে। ইমন শতাব্দীকে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি হঠাৎ?”
“হুম, তোমার শরীর ভালো?”
“হুম, এখন ভালো আছি। কিন্তু ভাই একটু অসুস্থ।”
“গায়ক সাহেব কোথায়?”
“ওর শরীর ভালোই আছে। রাতের খাবার কিনতে গেছে।”
“আরেহ, এখন বাইরে বেরুতে গেলো কেন? আরো কিছুদিন বিশ্রাম করতে পারতো?”
আরাফ বলল,
“ওর বাসায় ভালো লাগছিল না, তাই। ওকে তো বললাম আমিই গিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু আমাকে যেতে দেয় নি।”
“ওহ, মিষ্টিমশাই কি ঘুমোচ্ছে?”
“হুম।”
শতাব্দী পা উঁচিয়ে তাহমিদের ঘুমন্ত মুখটা দেখার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তাহমিদ উল্টোদিকে ফিরে ঘুমাচ্ছিল, তাই আর দেখা সম্ভব হয় নি। এবার শতাব্দী বলল,
“কাল থেকে আমাদের পূজা শুরু। এখন তো স্কুলও ছুটি। সবখানেই তো ছুটি, কাজেও যেতে হবে না। শুনো, মা বলেছে তোমাদের দাওয়াত করতে। তাই সবাইকে দাওয়াত দিতে এসেছি। তোমারও এসো। খালাদের কতোবার বলি, ওরা আসে না। দূর থেকেই দেখে।”
আরাফ বলল,
“আমরাও দূর থেকেই দেখবো না হয়। সবাই তো এখন অসুস্থ।”
“আচ্ছা, সমস্যা নেই। আমি সব বুঝি। তোমাদের ধর্মে বারণ আছে। পূজোয় যাওয়া যায় না। থাক, তোমাদের ধর্মের নিয়মগুলোকে আমরাও সম্মান করি। মাও তো বুঝে। কিন্তু ওই যে সবাইকে বলার একটা রীতি আছে। থাক, না এলে আসবে না। তাও আমরা সবাইকে দাওয়াত দেই। বাসায় অতিথি এলে অনেক ভালো লাগে।”
শতাব্দী থেমে বলল,
“আরেকটা কথা, মিষ্টিমশাই সুস্থ হলে কিন্তু ভালোই হতো। মিষ্টান্নভোজন কিন্তু ভালোই চলতো।”
ইমন বলল,
“হুম, কাল এই বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছিল। থাক, সমস্যা নেই। এই মুহূর্তে ওর সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ।”
“আমি সৃষ্টিকর্তাকে বলবো, যাতে এই ঘর থেকে সব রোগ কেটে যায়।”
আরাফ বলল, “ইনশাআল্লাহ।”
“কি বললে এটা?”
“আল্লাহ যদি চায়, তবে অবশ্যই হবে।”
শতাব্দী মুচকি হেসে বললো,
“আসি তাহলে।”
ছ’জন অরুণিকাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। প্রায় পাঁচ ঘন্টা হতে চললো অরুণিকাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গা বিসর্জন। রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। বাঁধনকে বাসায় আটকে রাখা দায়। সে তার বন্ধুদের সাথে দেবী বিসর্জন দেখতে চলে গেছে। সাথে নিয়ে গেছে অরুণিকাকে। এখন বাঁধন ফিরে এসেছে, কিন্তু অরুণিকাকে হারিয়ে ফেলেছে। এদিকে আরাফ আর ইভানের ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। তারা দু’জনই বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না। ইমন আর তূর্য পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে। আহনাফ এখনো দুর্বল, আর তাহমিদের জ্বর ওঠানামা করছে।
অসুস্থতা, দুর্বলতা সব ভুলে এখন ছ’জনই দিশাহারা হয়ে গেছে। তারা পাগলের মতো ছুটোছুটি করছে তাদের অরুকে একনজর দেখার জন্য।
অনেকক্ষণ খোঁজার পর আরাফ ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। তূর্য একপাশে বসে বার-বার মনকে বোঝাচ্ছে, তার টুইংকেলকে সে এখনই ফিরে পাবে। এদিকে ইভান জ্বরের ঘোরেই বাঁধনকে দুটো চড় বসিয়ে দিয়েছে। বাঁধনের ফুঁপোনো দেখে সুরাইয়া ছেলেকে আর বকলেন। তিনিও আলেয়া খালাকে নিয়ে আশেপাশে খুঁজতে লাগলেন। আহনাফ আর তাহমিদ অনেক দূরে চলে গেছে। কিন্তু কোথাও অরুণিকাকে পায় নি। শতাব্দীদের পরিবার বাসায় ফেরার পর সব শুনে অনেক ভয় পেলো। কারণ বিসর্জনের সময় পদদলিত হয়ে অনেকেই আহত হয়। বাচ্চাদের ওইসময় দূরে রাখা হয়।
অরুণিকা যদি ভীড়ের মধ্যে পড়ে, তাহলে হয়তো কোনো অঘটন ঘটে যাবে।
আহনাফ এসব শুনে আবার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এবার সে একাই বেরিয়েছে। যেই দিক দিয়েই অরুণিকার যাওয়া সম্ভব, সেই দিক দিয়ে হেঁটে নদীর ঘাট পর্যন্ত গিয়েছে। নদীর ঘাটের কাছে এসেই আহনাফ সেখানেই বসে পড়লো। তার মাথাটা ভো ভো করছে। ইচ্ছে করছে বাঁধনকে বেধড়ক পেটাতে। তখনই পেছন থেকে দুটি হাত তার গলা জড়িয়ে ধরলো। সেকেন্ডের জন্য আহনাফ থমকে গেলো। পেছন ফিরে দেখলো, অরুণিকা কান্নাভেজা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ বসা থেকে উঠে অরুণিকাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অরুণিকা আহনাফের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি অনেক ভয় পেয়েছি, জানো? ওরা অনেক পঁচা।”
আহনাফ অরুণিকাকে ছেড়ে দিয়ে তার মুখের দিকে তাকালো। কাঁপা কন্ঠে বললো,
“কার কথা বলছো?”
“দু’টো আংকেল।”
আহনাফ ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“কি করেছে তোমার সাথে?”
তখনই সামনে একজন দম্পতি এসে দাঁড়ালো। তাদের দেখে আহনাফ দাঁড়িয়ে গেলো। অপরিচিত মহিলাটি বললেন,
“ও তোমার কে হয়?”
“আমার চাচাতো বোন। আপনাদের পরিচয়?”
“আমরা এখানে বিসর্জনের সময় এসেছিলাম। তারপর একপাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। তখন দেখলাম দু’জন মাঝবয়সী লোক ওকে নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু ও বারবার হাত ছোঁড়াছুড়ি করছিল, যেতে চাইছিল না। আমার সন্দেহ হলো, তাই আমি আমার স্বামীকে বললাম। তারপর ওকে নিজেদের কাছে রাখলাম। এতোক্ষণ আশেপাশে খুঁজছিলাম যদি কেউ নিতে আসে। আমাদের বাড়ি কাছেই। তাই ওকে বাসায় নিয়ে গেলাম। ও অনেক কান্নাকাটি করছিল। এখন থানায় যাওয়ার আগে আরেকবার এলাম এদিকটাই। তারপর ও তোমাকে দেখেই দৌঁড়ে এলো।”
আহনাফ অরুণিকাকে কোলে নিয়ে বলল,
“আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনারা আমাদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। ওর কিছু হলে, আমাদের কি হতো ভাবতেই পারছি না।”
সেই দম্পতি হাসিমুখে বিদায় নিলো। আহনাফ ফোন বের করে বাসায় জানালো অরুণিকাকে পাওয়া গেছে। তারপর অরুণিকাকে কোলে বসিয়ে কিছুক্ষণ নদীর ঘাটে বসলো। তার শরীর এখনো কাঁপছে। তার হাতের মুঠোয় অরুণিকার হাত। অরুণিকার চোখেমুখে এখনো ভীতি। কিন্তু ভীতির মাঝে থেকেও সে বুঝে গেছে, সে এই মুহূর্তে নিরাপদ স্থানেই আছে, তাই তো এতো শান্ত হয়ে বসে আছে। তার চোখে ভয় থাকলেও একটা আলাদা প্রশান্তির রেশ ফুটে উঠেছে। এই চাহনির ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এক বাক্যে বলা যায়, এক অবুঝ বালিকা বেলাশেষে ফিরে পেয়েছে তার শান্তির ঠিকানা।
আহনাফ অরুণিকার ছোট্ট হাতে তার ঠোঁট চোয়ালো, আর ফুঁপিয়ে উঠলো। অরুণিকা আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফের চোখ ছলছল করে উঠলো। বলল,
“অরু, খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, সেই ভয়ংকর মুহূর্তটা আবার ফিরে এসেছে। মনে হচ্ছিল সব মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে।”
অরুণিকা আহনাফের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“আমি আর তোমাদের না বলে বের হবো না। তোমাদের সব কথা শুনবো।”
আহনাফ মুচকি হেসে বলল,
“আরাফ, ইভান, ইমন, তাহমিদ আর তোমার রকস্টার তোমার জন্য বসে আছে। চলো বাসায়।”
অরুণিকা পর্ব ১২
আহনাফ অরুণিকার হাত ধরে তাদের গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে। সূর্যও অস্তগামী হচ্ছে। অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভায় আকাশটা লালচে হয়ে গেছে। অরুণিকা সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলো, আর আহনাফকে প্রশ্ন করতে লাগলো, আকাশ এতো বড় কেন? আকাশ লাল হয়ে গেছে কেন? আকাশ নীল হয় কেন? আকাশ কিভাবে ধরা যাবে? ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন। আহনাফ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, আবার অজানা প্রশ্নগুলোকে পাশ কাটিয়ে প্রসঙ্গ পালটে দিচ্ছি। এভাবেই তারা গল্প করতে করতে বাসায় চলে এলো।