অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৮

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৮
নুসাইবা ইভানা

নয়না জিয়ানের বাহুতে আবদ্ধ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে জিয়ানকে।
জিয়ান বলল,”এভাবে জড়িয়ে ধরলে কুচকুচ হোতাহে বৌ। বুঝো না কেন!”
নয়না আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার ভয় করছে আপনি আমাকে কেন নিয়ে এসেছেন এখানে?”
“দেখো ভেজা শরীর তার উপর তোমার এতো গভীর আলিঙ্গন আমি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ কতক্ষণ সামলাবো নিজেকে? বায়োলজি পড়েছো বোঝো তো অল্প হলেও ।”
“কোলে তুলে নিন আমাকে। আমি আপনাকে ছাড়লে ঢেউয়ের সাথে হারিয়ে যাবো গভীর সমুদ্রে।”
” তুমি চাইছোটা কি ডিয়ার ওয়াইফি?এই অর্ধরাতে আমাকে বেসামাল করে দিচ্ছো এরপর সামলাতে পারবে তো৷”
নয়না জিয়ানের শার্ট আরো ভালো ভাবে আঁকড়ে ধরলো,ভেজা শার্ট ভেদ করে নয়নার নখ বসে গেলো পিঠে৷
“জিয়ান নয়নার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,এই সমুদ্রে বাসর সেরে ফেলি এটাই চাইছো তুমি।আমাকে বেসামাল করলে সামলাতে হিমশিম খাবে এই ওয়ার্নিং দিচ্ছি।”

নয়না কিছুটা দূরে সরার চেষ্টা করতেই জোড়ে একটা ঢেউ আসলো। ফলস্বরূপ নয়না জিয়ানের আরো কাছে চলে আসলো। জিয়ান নয়নাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো৷
নয়না নিজেই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, এ কেমন অদ্ভুত এক নেশালো অনুভূতি। নয়না কেন চাইছে জিয়ান তার ওষ্ঠজোড়া নিজের ওষ্ঠ দিয়ে দখল করে নিক। কেন তার হৃদয়ে এই সমুদ্রের মত উত্তাল ঢেউ বইছে! এসব অনুভূতির সাথে নয়না প্রথম পরিচয় হচ্ছে।
জিয়ান ধীরে ধীরে নয়নার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো নিজের ঠোঁট দিয়ে। নয়না খামচে ধরলো জিয়ানের পিঠ। সে নিজেও কেমন বেসামাল হয়ে পরছে। হার্টবিট দ্রুত উঠানামা করছে। নয়না চোখ বন্ধ করতেই। মনে পড়লো জিয়ানের রুমে ওই মেয়েটাকে দেখেছিলো। মূহুর্তে মধ্যে জিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো৷
জিয়ান নয়নাকে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,”একটু কিসমিস খাচ্ছিলাম তাও ঠিকমত খেতে দিলা না! এতো নিষ্ঠুরতা কেন করো বৌ?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ছাড়ুন আমাকে আমি মরে যাবো তাও আপনার সাথে থাকবো না৷ চরিত্রহীন আপনি৷”
“শুধু তোমান জন্য।”
‘লম্পট”
” তুমি চাইলে তাও হতে রাজি আগেই কাজি ডেকে করে নিয়েছি শাদী।”
“অসভ্য”
“এতো সুন্দরী বৌয়ের কাছে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে অসভ্য হতেও রাজি।”
“লজ্জা নেই আপনার!”
“আমার লজ্জা থাকলে চলবে বৌ? লজ্জা তো তোমার কাছে কবুল বলে বেচে দিয়েছি।”
নয়না ছোটার জন্য চেষ্টা করছে।
“তুমি বৃথা চেষ্টা করছো রাঙাবৌ। থুরি ভেজা বৌ। তোমার মত পুটিমাছের সাধ্য নেই আমার থেকে মুক্ত হওয়ার৷”
“ভালোয় ভালোয় ছেড়ে দিন নয়ত আমি চিৎকার করে মানুষ জড়ো করবো এই বলে দিলাম।”
“নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চিৎকার করো বৌ। এই রাত দেড়টার সময় সমুদ্রে ভুতপ্রেতেরাও সাড়া পাবা বলে তো মনে হয় না।”

জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিলো কোমড় সমান পানি থেকে হাঁটু সমান পানিতে এসে নয়নাকে দাঁড় করিয়ে দিলো,নিজের শরীর থেকে শার্ট খুলে নয়নাকে পরিয়ে দিয়ে আবার কোলে তুলে নিলো৷
“আমার পা আছে আমি হেঁটে যেতো সক্ষম নামিয়ে দিন আমাকে।”
“এতো কষ্ট করে জিম করে বডি বানিয়েছি তা কাজে লাগবো কবে! এইটুকু লাল টুকটুকে বৌকে যদি সারাক্ষণ কোলে তুলে না রাখতে পারি?”
“উঠে আসতেই একজন নিরাপত্তা রক্ষী বলে,এতো রাতে এখানে কি? মেয়েবাজি করছেন তাও খোলা আকাশের নিচে? ডরভয় নেই?”
” মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। সি ইজ মাই ওয়াইফ। আপনি আপনার ডিউটি পালন করুন। আপনার কাজ আমাদের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের ডিস্টার্ব করা নয়।”
“মিস্টার আপনার মত কত দেখেছি! কি প্রমান আছে এটা আপনার ওয়াইফ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কচি…”
‘জিয়ান লোকটার মুখ বারবার এক ঘুষি বসিয়ে দিলো। তোর সাহস কি করে হয় আমার বৌয়ের ব্যাপারে বাজে ওয়ার্ড ইউজ করার!”

মূহুর্তেই লোকটা নিজের ওয়াকিটকি দিয়ে আরো পুলিশ জড়ো করতে চাইলো। জিয়ান ওয়াকিটকি নিয়ে ছুড়ে সমুদ্রে ফেলো দিলে। দ্রুত নিজের বাইকে এসে বসলো৷ বাইকটা ভাড়া নিয়েছিলো এখানে এসে এখন এটা কাজে আসলো৷ সুনয়নাকে বললো,শক্ত করে ধরে বসো এখন আমরা পালাবো৷তাই বাইকের স্পিড উর্ধ্বগতিতে থাকবে৷”
“নয়না জিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷ মূহুর্তেই তারা গায়েব হয়ে গেলো চোখের সামনে থেকে৷
জিয়ান হোটেলে এসে নয়নাকে বলল,”যাও ড্রেস চেঞ্জ করে আসো তোমার ঠান্ডা লাগবে।”
“আরেহহহ বাহহহ ড্রেস চেঞ্জ করবো! আমরা তো হানিমুনে এসেছি লাগেজ ভর্তি করে ড্রেস নিয়ে এসেছি। তো মিস্টার প্লেন ড্রাইভার হুকুম করুন কোন ড্রেসটা পরবো?”
“কি যে বলো জানেমান! হানিমুনে যাবো সুইজারল্যান্ড এখানে তো ডেমো দেখাতে নিয়ে এসেছি বেবিডল পিকচার আভি বাকি হে মেরিজান।জিয়ান এক চোখ টিপে বলে,তবে তুমি ফুল মুভি এখনি দেখতে চাইলে আমার কোন আপত্তি নেই।”

নয়না কয়েক কদম দূরে সরে বলে,”আমি আম্মুর কাছে যাবো৷”
“ছিহহহ বেবি বিয়ের পরে এসব বলতে নেই৷ চোখের সামনে নিজের হ্যান্ডসাম হ্যাসবেন্ড থাকতে শ্বাশুড়ি আম্মার কি প্রয়োজন!”
“আমার শীত করছে দিয়ে আসুন বাসায়। লোকসমাজে আমার বদনাম হবে তো রাত বিরাতে পরপুরুষের সাথে থাকলে।
“জিয়ান নয়নার দিকে এগিয়ে যেয়ে বলে,ওলে আমার বেবিতাহহ নিজের কবুল বলা বরের সাথে থাকলে বদনাম না সুনাম হবে। লোকসমাজ বলবে,বাহহহ মেয়েটার কি ভাগ্য এমন বৌ পাগল স্বামী পেয়েছে।”
“সত্যি শীত করছে আপনি জানেনা তো আমার ভিষণ জ্বর উঠেছিলো।”
“জিয়ান নিজের লাগেজ থেকে টিশার্ট আর থ্রি কোয়ার্ট প্যান্ট বের করে বলে,পরে নাও বৌ এই রাতে এরচেয়ে বেশি কিছু সম্ভব না।”

“নয়না ভেজা শরীর নিয়ে বেডের উপর বসে পরলো। আমি এভাবেই বসে থাকবো । আপনি আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন সবাই আমাকে নিয়ে টেনশন করবে। না দিয়ে আসলে আবার আমার জ্বর আসবে অসুস্থ হয়ে পরবো তখন কিন্তু বাবা আপনাকে ছাড়বে না৷”
“জিয়ান নয়নার হাত ধরে টান দিয়ে নয়নাকে নিজের বাহুতে নিয়ে এসে বলে,তা চেঞ্জ তুমি নিজেই করবে নাকি আমি করিয়ে দেবো সুইটহার্ট। আর হ্যা তোমার বাবার ভয় আমাকে দেখাতে এসোনা বেবি ইউ নো আমি কে সো ওসব বাচ্চাদের মত ভয় দেখাতে নেই স্বামীকে। যাও বেবিডল চেঞ্জ করে এসো নয়ত আমি নিজের হাতে চেঞ্জ করিয়ে দেবো।”

“নয়না জিয়ানের হাত থেকে টিশার্ট আর প্যান্ট নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো। মনে মনে বলে,এই লোকের কোন ভরসা নেই কখন কি করে বসবে৷
“বেশি দেরি করলে কিন্তু ওয়াশরুমে চলে আসবো৷ আমার যদি আসতে হয় তাহলে বাসর আমি ওয়াশরুমেই সারবো বেব। এই বলে দিলাম।”
“নয়না মনে মনে বলে,অসভ্য একটা লোক। সারাক্ষণ বাসর বাসর করবে! তোর জীবনে কি বাসর ছাড়া আর কোন কাজ নেই? কথায় কথায় বাসর সেরে ফেলবো! মনে হয় বাসর মামা বাড়ির মোয়া টপ করে খেয়ে ফেলবে!”
ফ্লাশব্যাক……
গায়ে হলুদ শেষ হতে এখনো অনেক দেরি। নয়না আজ হলুদ রঙের গারারা পরেছে সাথে সিম্পল ফুলের গহনা। কিন্তু গানের আওয়াজে মাথা ধরে যাচ্ছে। হলুদের পেন্ডাল থেকে বের হয়ে একটু হাঁটছিলো। এতো সাহস যদিও নয়নার নেই তবুও লাইটিং দেখতে দেখতে বেশ খানিকটা এগিয়ে আসে৷ আর কিছু দূর আসতেই নয়নার মুখের উপর কেউ কিছু চেপে ধরে। নয়নার যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে কোমড়ের উপর অব্দি পানিতে!

নীলাঞ্জনা লাবিবের মাথায় ফ্লাওয়ারবাস দিয়ে আঘাত করে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে৷ এলোমেলো ভাবে দৌড়াচ্ছে হঠাৎ জিয়ানকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলে,আমাকে বাঁচাও আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ৷
“জাহিনের মেজাজ এমনিতেই বিগড়ে আছে তার উপর আবার এই মসিবত।
” শা”লার কন্যারাশি হয়েও আছি মহা বিপদ! সব মেয়ে এসে আমার উপর ঢলে পরে!”
“অন্তর সামনে এসে নীলাঞ্জনার ফেস দেখে বলে, এনাকে আমি চিনি গাড়িতে তোল৷ মনে হচ্ছে ওনার হ্যাসবেন্ডের সাথে ঝামেলা হয়েছে আবার৷”
“জাহিন নীলাঞ্জনাকে চিনতে একটুও ভুল করেনি৷ নীলাঞ্জনার পিক জিয়ান সেন্ট করে বলেছিলো তোর হবু ভাবি। তুই এই মেয়ের বাসা চিনিস।”

” হ্যা চিনি তালুকদার ম্যানশন। গাড়ি ঘোরা।”
“বুঝলাম না এই মেয়ের জন্য তোর এতো দরদ উতলে পরছে কেন!”
“মানবতার খাতিরে৷ সে আমার বড় বোনের মত।”
জাহিন তালুকদার বাড়ির সামনে গাড়ি ব্রেক করে বলে,”কোলে তুলে বাড়ির ভেতরে দিয়ে আয়। আমি যেতে পারবো না।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৭

” তুই একটু হেল্প কর আমি দাঁড়াই তুই আমার কোলে তুলে দে।”
“জাহিন নীলাঞ্জনাকে কোলে করে এনে অন্তরের কোলে তুলে দিলো। তাড়াতাড়ি আপদ বিদায় করে আয় না জানি কেউ দেখে ফেললে কোন নতুন বিপদে পরি৷”
“কেউ না দেখলেও দারোয়ান ঠিকি দেখেছে জাহিনকে৷ সে যা ভাবার ভেবেও নিয়েছে মনে মনে৷”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৯