অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭৬
নুসাইবা ইভানা
নয়নার ফোনে টেক্সট আসলো, “জানু, আজ রাত কী সিন বানা দো।”
নয়না রাগী ইমোজি দিয়ে বলে, “অর্ধেক রাত বাইরে যারা কাটায়, তাদের আবার বউ লাগে?”
“বউ তো সব সময় লাগে, জানু। ওয়েট, তোমাকে ভিডিও কল করি।”
“একদম না।”
“বাটার মাশরুম, প্লিজ রিসিভ করো। খুব জরুরি,
জানু।”
নয়না ফোন রিসিভ করলো।
জিয়ান হেসে বলে, “ডার্লিং, এত রাতে বারান্দায় কী করো!”
“এসব বলার জন্য কল করেছেন?”
“একদম না, জান। এই দেখো, তোমার বোন।” নীলাঞ্জনার দিকে ক্যামেরা ঘুরিয়ে বলল।
“এত রাতে তোমার সাথে ওর কী?”
“নাহিদের বাসা থেকে এগারোটায় বের হয়েছি। এরপর তোমার বোন কান্নাকাটি করে এখানে ডেকে আনলো।”
“আহারে, আমার জনদরদী। এত রাতে ডাকলেই যেতে হবে!”
“তোমার বোনের নাকি মরা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তো, কী করবো?”
“আধা ঘণ্টার মধ্যে বাসায় উপস্থিত না হলে, জনসেবা বের করবো।”
জিয়ান দ্রুত ফোন পকেটে রেখে বলে, “আপু, সরি, এই রাতে নো চান্স। বউ রেগে গেছে। আগে জীবনের চেয়ে প্রিয় বউ, তারপর সব। আপনি আমার ড্রাইভারের সাথে বাসায় চলে যান। টাটা।”
জিয়ান বাইক নিয়ে চলে গেলো। নীলাঞ্জনা সেভাবেই বসে আছে। এই পৃথিবীতে তার চেয়ে নিঃস্ব মানুষ আর নেই। এত মানুষের ভিড়েও কেউ তার দুঃখ স্পর্শ করা তো দূর, কিঞ্চিৎ অনুভব করার মতো কেউ নেই। জিয়ানের সাথে তার বিয়ে হলে একটা সুন্দর জীবন পেতো, অথচ নিজেই নিজের জীবন নষ্ট করেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সায়না অনিকেতের দিকে তাকিয়ে বলে, “মাথায় কী কমনসেন্সের অভাব! শ্বশুরবাড়িতে কেউ ভ্যান গাড়ি নিয়ে আসে?”
“যে পুরুষের বউ রেগে থাকে, তার কোনো সেন্স থাকে না। কমনসেন্স তো অনেক দূরের কথা।”
অনিকেত আশেপাশে তাকিয়ে হঠাৎ সায়নার গালে চুমু দিয়ে সরে আসলো।
“এটা কী হলো?”
“কোথায় কী হলো?”
“তোমার ঠোঁট দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে।”
“এত সুন্দর বউ সামনে থাকলে ঠোঁট তো বেপরোয়া হবেই।”
সায়না কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে, “আমি সুন্দর?”
অনিকেত এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলে, “শুধু সুন্দর না, ভয়ংকর রকমের সুন্দর।”
সায়না অনিকেতের শার্টের কলার ধরে নিজের দিকে টেনে বলে, “আমি ভয়ংকর?”
“এভাবে কাছে টানছো কেন, হু! আমি কিন্তু সেই ভদ্র নেই।”
“তুমি অভদ্র?”
অনিকেত সায়নার কোমরে হাত দিয়ে বলে, “তোমাকে দেখলে হয়ে যাই।”
সায়না অনিকেতের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রেখে বলে, “এখন থেকে শুধু অভদ্র না, আমার কাছে বেপরোয়াও হতে হবে।”
অনিকেত সায়নার ঠোঁটে ডুবে গেলো।
সায়না অনিকেতকে সরিয়ে দিয়ে বলে, “বহুত হয়েছে, এবার ডিনার করতে চলুন।”
“তোমাকে দিয়ে ডিনার শুরু করার অপশন নেই?”
“আমাকে দিয়েই তো শুরু করলেন, ডাক্তার সাহেব। তাড়াতাড়ি চলুন, আম্মু অপেক্ষা করছে।”
জিয়ান বাসায় ঢুকে নিজের রুম থেকে সোজা বারান্দায় চলে গেলো। ধীর পায়ে নয়নার পাশে বসে নয়নাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “সরি, জান। এই কথা দিচ্ছি, আর কোনোদিন দেরি করবো না।”
নয়না জিয়ানের বুকে কামড় দিয়ে বলে, “আপনার সাহস কী করে হয় এত রাতে এক্সের সাথে দেখা করতে যাওয়ার?”
“কী বলছো এসব, জান? আমি তো আমার সুইট বউয়ের বড় বোনকে হেল্প করতে গিয়েছিলাম।”
নয়না জিয়ানের পায়ের ওপর বসে জিয়ানের গলা চেপে ধরে বলে, “আর কখনো এমন দুঃসাহস করলে, একদম মেরে ফেলবো।”
“আর কখনো হবে না। এই যে, নাম্বার ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দিলাম। তবে তোমার উচিত ওর সাথে কথা বলা। এই অবস্থায় বোন হিসেবে তুমি সাহায্য করতে পারো।”
নয়না জিয়ানের বুকে মাথা রেখে বলে, “সিলেট থেকে ফিরে এসেই করবো।”
নয়না জিয়ানের কপালে চুমু দিয়ে বলে, “সেখানে গেলে কিন্তু ডাবল আদর করবো। কোনো বাহানা চলবে না, বেব।”
নয়না চিমটি কেটে বলে, “সব সময় উল্টোপাল্টা চিন্তা।”
“উঁহু, সব সময় ভালোবাসার চিন্তা।” বলেই নয়নাকে কোলে তুলে নিলো।
“এই দেখো, আজকের আকাশটা কত সুন্দর।”
জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, “তোমার চেয়ে কম। পৃথিবীর কোনো সৌন্দর্য আমাকে বিমোহিত করতে পারে না। তোমার কাছে সব ফিকে মনে হয়।”
“একটু বেশি বেশি হচ্ছে না?”
“মোটেই না, অনেক কম হচ্ছে।”
“কচু।”
জিয়ান নয়নার ঠোঁটে আলতো কামড় দিয়ে বলে, “হু, কচুই।”
নয়না জিয়ানের বাহুতে শুয়ে জিয়ানের উন্মুক্ত বক্ষে কিছু আঁকিবুঁকি করছে।
জিয়ান নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, “আমার বুকে এমন করে কী দেখো?”
“জানি না, তবে আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা এটাই। আমাকে মাতাল করে দেয় তোমার বক্ষ।”
“হায়… এভাবে বললে তো তোমাকে একদম টুপ করে খেয়ে ফেলবো।”
নয়না নিম্ন স্বরে বলে, “আরো তিন দিন উপোস করতে হবে, মিস্টার প্লেন ড্রাইভার।”
জিয়ান নয়নাকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে, “অপেক্ষার ফল একটু বেশিই সুমিষ্ট হয়।”
নয়না জিয়ানের বুকে আলতো চুমু দিয়ে বলে, “অপেক্ষা করো তবে।”
জিয়ান নয়নার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলে, “চলো, ঘুমিয়ে পড়ি। নয়তো ভুলচুক হয়ে যাবে।”
জাহিন হাসপাতাল থেকে বের হয়ে অন্তরের বাসায় আসলো। অন্তরের বাবা-মাকে বলল, একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে অন্তরের। খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। এদিকে ডাক্তার বলে দিয়েছে, মাথায় আঘাত লাগার ফলে রোগী কোমায় চলে গেছে। বেঁচে থাকবে নাকি মারা যাবে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।
জাহিন নয়নার স্কুল ড্রেস পরা একটা ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, “সবার কাছে আমি ভিলেন হিসেবে ঘৃণিত এক পুরুষ। অথচ আমি শুধু ভালোবেসেছিলাম। পুরুষকে ভিলেন বানানোর কারিগর একজন নারী। আমার জীবনের পাতায় আমি লিখে রাখবো তোমার নাম। আমি ভিলেন, ঘৃণিত মানুষ। সেই ঘৃণার অনলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে তুমি।”
নাজিম চৌধুরী মিতা বেগমকে বলল, “তোমার ছোট ছেলের কোনো খোঁজ আছে? আমি চাই মেহনুর এখানে থাকুক। মেয়েটা খুব ভালো বিজনেস বোঝে। ওর মতো লাফাঙ্গা ছেলে যদিও এমন মেয়ে ডিজার্ভ করে না। তাকে বলো বাসায় আসতে। তোমার আস্কারা পেয়ে ওমন ঘরছাড়া হয়েছে। তিন মাস ধরে কোনো টাকা-পয়সা নিচ্ছে না। কী খাচ্ছে, কোথায় আছে, তাও জানি না। এমন কেন হলো ছেলেটা? মিতা, তুমি পারবে ওকে ঘরে ফেরাতে।”
মিতা বেগম নাজিম চৌধুরীর রাগের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা দেখলেন। অথচ জাহিন মানতেই রাজি নয় যে তার বাবা তাকে ভালোবাসে!
মিতা বেগম বলল, “জানি না। আমার সাথে সপ্তাহ খানেক আগে কথা হয়েছে। ও নিজে কল না করলে ওর তো কোনো খোঁজ পাওয়া সম্ভব না। এবার দেখি, বুঝিয়ে বলে বা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে মেহনুরকে বিয়ে করতে রাজি করাতে পারি কি না।”
“আমার চিন্তা হয়, মিতা। আজকাল পত্রিকায় যা সব দেখি, এরপরও কীভাবে নিজেকে ঠিক রাখি, বলো? কোনো খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়লে ওর জীবনটা শেষ। কোনো এমন হলো ছেলেটা? কী ভুল করেছি আমি ওকে শাসন করতে?”
“এত চিন্তা করো না। আমাদের ছেলে তো এমন কোনো অন্যায় কখনো করতে পারে না। আর বছর খানেক এমন টইটই করবে। এরপর বিয়ে করবে, তারপর নিজেও যখন বাবা হবে, ঠিক হয়ে যাবে।”
“হলেই ভালো।”
অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭৫
জাহিন পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে বারান্দার ইজি চেয়ারে, হাতে একটা দিয়াশলাই। বারবার আগুন জ্বালাচ্ছে, নেভাচ্ছে। একটু পর বাঁ হাতে মাথা চেপে ধরে বলে, “দ্য গেম স্টার্ট নাউ। ডিয়ার সুনয়না, এবার তুমি দেখবে ভিলেন চরিত্র কেমন। ভিলেনরা যেমন উন্মাদের মতো ভালোবাসতে পারে, ঠিক তার চেয়ে দ্বিগুণ ভাবে ঘৃণাও করতে পারে। ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ, ডার্লিং।”
plz aktu protidin aktaa kore porbo deyar chesta korben ato opekkhai to ager porbeer kahini majhe majhe vule jai ,,,,onkdin dhorei to charsen aibar aktu protidin deyar chesta korun