অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব ২৫
ইয়াসমিন খন্দকার
নিঝুম চুপচাপ বসে ছিল ইমরানের কফিশপের মধ্যে। একটু পর ইমরান এসে তাকে বলে,”চল, তোর থাকার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেছে।”
নিঝুম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আচ্ছা, তুই যা। আমি আসছি।”
বলেই নিঝুম পা বাড়াতে যাবে এমন সময় তা সামনে এসে দাঁড়ায় আবরাজ। হঠাৎ করে আবরাজকে এই সময় নিজের সামনে দেখে নিঝুম অবাক হয়ে যায়। ইমরানও আবরাজকে এখানে আশা করে নি। আবরাজ এসেই নিঝুমের হাত শক্ত করে ধরে বলে,”এখানে আর কোন ড্রামা চাই না। চুপচাপ আমার সাথে বাসায় ফিরে চলো। সেখানে বসে সব কথা হবে।”
নিঝুম নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,”ছাড়ুন আমায়! আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।”
আবরাজ নিঝুমের হাত আরো শক্ত করে ধরে বলে,”আমি বলছি তো আমি চাই না কোন সিনক্রিয়েট করতে। আশা করি, তুমি আমার কথাটা বুঝবে।”
এরইমধ্যে ইমরান এগিয়ে এসে বলে,”এই থামুন আপনি! আপনি এভাবে নিঝুমের উপর জোর করতে পারেন না। ও একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট উইম্যান।”
আবরাজ ইমরানকে চোখ রাঙিয়ে বলে,”আমি তোমাকে আগেও বলেছি আমাদের দুজনের মাঝে এসো না। এটা আমাদের পারসোনাল ব্যাপার।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“পারসোনাল? আপনি নিঝুমের সাথে প্রতারণা করবেন, ওর উপর জোরজবরদস্তি করবেন, ওকে এসল্ট করবেন আর বলবেন এটা পারসোনাল ব্যাপার? শুনে রাখুন, এটা বাংলাদেশ নয় এটা ইউকে। এখানকার আইন অনেক স্ট্রিক্ট, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আপনাকে জেলের ভাত খাওয়ানো আমার কাছে দুই মিনিট এর ব্যাপার।”
আবরাজ নিঝুমকে ছেড়ে দিয়ে ইমরানের কলার চেপে ধরে বলে,”কি বললে তুমি? আমাকে জেলের ভাত খাওয়ানোর ভয় দেখাচ্ছ? প্রয়োজনে তোমায় আমি শেষ করে দেব। আমায় এমন ভয় দেখানোর স্পর্ধা করবে না। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই।”
নিঝুম আবরাজ ও ইমরান এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলে,”আপনারা এসব ঝামেলা করা বন্ধ করুন। ইমরান, তুই শান্ত হ। আমি ওনার সাথে বুঝে নিতে পারব।”
আবরাজ বলে উঠল,”শুনলে তো নিঝুম কি বলল? আশা করি, তুমি বুঝতে পেরেছ আমাদের সম্পর্ক টা অন্য ধরনের।”
নিঝুম এবার আবরাজকে বলল,”তবে এটাও মনে রাখবেন, আমি আপনার সাথে ফিরে যাব না। এই ব্যাপারে জোর করবেন না।”
ইমরান বলে,”তুই এই লোকটার জালে ফাঁসিস না। এই লোকটা তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছে। তুই এসবের জবাব চাইবি না? তার পর কোন মুখে এনার সাথে কথা বলিস। তোর তো উচিৎ এনার নামে কেইস করা।”
আবরাজ এবার ইমরানকে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ইমরান হতবাক। নিঝুম আবরাজকে বলে,”ওকে ছেড়ে দিন আপনি।”
“ওর সাহস কিভাবে হয় তোমাকে এমন উস্কানি দেবার?”
“আমি ওর কথায় নাচব এতটাও বোকা আমি না। আমার নিজস্ব মতামত বলে তো কিছু একটা আছে। এখন বলুন, আপনি কি বলবেন।”
আবরাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”তুমি যদি বাংলাদেশে ফিরে যেতেই চাও তাহলে তোমার সব পাসপোর্ট, ভিসা সব কিছুর ব্যবস্থা আমি করে দেব। তুমি চলো আমার সাথে।”
নিঝুম বলে,”যদি আপনি আমাকে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন তাহলে ঠিক আছে। আমি যাব আপনার সাথে। তবে আপনাকে কথা দিতে হবে যে আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমায় বাংলাদেশে যাবার ব্যবস্থা করে দেবেন।”
আবরাজ নিঝুমের কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে বলে,”আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমার সিলেটে ফেরার ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু যতদিন তুমি এই লন্ডনে আছ তত গুলো দিন তোমার দায়িত্ব আমার। তাই, তুমি আমার সাথে চলো।”
ইমরান নিঝুম এর উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুই এনার কথা শুনিস না নিঝুম। এই লোক আবারো নিজের সাথে তোকে নিয়ে গিয়ে তোর উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। তুই আমার কথা শোন, আমি তোর এখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি৷ তোর যত দিন ইচ্ছা তুই থাক। তারপর আমি দেখছি কিভাবে এই লোক তোর পাসপোর্ট, ভিসা নিজের জিম্মায় রাখে। আমি সব এনে দেব তোকে।”
আবরাজ আবারো ইমরানের উপর চড়াও হতে গেলেই নিঝুম আবরাজকে আটকে বলে,”আমি তো বলছি আমি আপনার সাথে যাব। আপনার আর কোন ঝামেলা করার দরকার নেই। চারিদিকে অনেক মানুষ দেখছে। এসব ঠিক হচ্ছে না। আর ইমরান তোকেও আমি বলছি, তুই যে আমার জন্য এত ভেবেছিস সেজন্য তোকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু দয়া করে, তুই আর আমার জন্য জিনিসগুলো কঠিন করে তুলিস না। আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছি। আমি এখন মিস্টার আবরাজ এর সাথেই যাব। তুই প্লিজ আর কোন বাধা দেয়ার চেষ্টা করিস না। আমি পরে তোর সাথে যোগাযোগ করব।”
বলেই সে আবরাজকে বলে,”চলুন তাহলে।”
“হুম, এসো।”
আবরাজের সাথে তার এপার্টমেন্টে ফেরে নিঝুম। আবরাজ বাসায় এসেই নিঝুমকে বলে,”তোমাকে কিছু বলার আছে।”
“হ্যাঁ, বলুন।”
“সরি, সরি ফর এভ্রিথিং।”
নিঝুম গম্ভীর স্বরে বলে,”সরি বললেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়?”
“জানি, আমি যা করেছি তার জন্য হয়তো সরি যথেষ্ট নয় কিন্তু..আমি মন থেকে ক্ষমা চাইছি।”
“সব কিছুর ক্ষমা হয়না মিস্টার আবরাজ। যাইহোক, আমি চেষ্টা করবো আপনাকে যতটা পারি ক্ষমা করার। আপনি এখন বলুন, আমি কবে সিলেট যাচ্ছি?”
“আচ্ছা, আমাদের সম্পর্ককে কি একটা সুযোগ দেয়া যায় না?”
“আপনি কিন্তু আমায় সিলেটে ফেরানোর কথা বলেই এখানে নিয়ে এসেছেন। আশা করি, আপনি নিজের কথা রাখবেন।”
“এতটা নিষ্ঠুর হয়ো না। সম্পর্ক্টা কে একটা সুযোগ দাও না।”
নিঝুম বলে,”না। আমার পক্ষে তা সম্ভব না।”
আবরাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”বেশ, আমি আর তোমায় জোর করবো না। তুমি যা চাও তাই হবে। তোমার লন্ডন থেকে সিলেট ফিরে যাবার ফ্লাইটের ব্যবস্থা আমি করছি। তুমি যদি চাও, তাহলে তাই হোক।”
এমন সময় এলিনা আর ম্যাক্স সেখানে চলে আসে। এসেই ম্যাক্স বলে,”এখন তোমাদের কোথাও যাওয়া হবে না।”
নিঝুম তাদের দিকে তাকায়। অবাক স্বরে বলে,”মানে?”
এলিনা এগিয়ে এসে বলে,”আপাতত, তোমাদের কিছু দিন আমাদের সাথে যেতে হবে। আগামী পরশু মানে রবিবার আমার আর ম্যাক্সের বিয়ে। আশা করি, তোমরা দুজন আমাদের বিয়েতে থাকবে।”
এলিনার কথা শুনে নিঝুম বলে,”তোমাদের নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা কিন্তু আমি..?”
“প্লিজ, নিঝুম। তোমাকে আমি নিজের বোনের মতোই দেখি। আমি জানি, তুমি কিছু কারণে আমাদের উপর রেগে আছ। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ঠকাতে চাই নি। আর..যাইহোক, তোমার কাছে অনুরোধ, দুটো দিনেরই তো ব্যাপার। জানো, আমার না কোন ভাই-বোন নেই। তাই আমি চাই, তুমি আমার আপন জন হয়ে আমার পাশে থাকো। থাকবে না তুমি? আমার এই অনুরোধ টা রেখো প্লিজ। একজন বোন হিসেবে আমাকে বিবেচনা করে দেখো।”
এলিনার এমন অনুরোধ আর ফেলতে পারে না নিঝুম। তাই সে সম্মতি দিয়ে বলে,”বেশ, তুমি যখন এত করে বলছ তখন আমি আর না করব না। তবে তোমার বিয়ের পরই আমি লন্ডন থেকে সিলেটে ফিরব।”
‘ধন্যবাদ তোমাকে নিঝুম।’
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব ২৪
বলেই এলিনা নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে।
এদিকে ম্যাক্স তখন আবরাজকে বলছিল,”এই দুই দিনই কিন্তু তোমার কাছে সুযোগ। এর মধ্যে তুমি নিঝুমকে মানানোর চেষ্টা করো। যেন ও তোমায় ছেড়ে না যায়। নিজের সত্যিকারের অনুভূতিটা ওকে বোঝাও।”
“চেষ্টা করব। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে।”