অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৬

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৬
ইয়াসমিন খন্দকার

আরহাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে আসা হলো এনগেজমেন্টের স্থানে। আরহা দেখতে এমনিতেই অনেক সুন্দরী। আজ যেন তার রূপ আরো বেশি সুন্দর হয়ে উঠেছে। আরহা সিঁড়ি দিয়ে নামতেই মাশরাফি অবাক চোখে তাকিয়ে রইল আরহার দিকে। আরহার দিক থেকে সে চোখ ফেরাতেই পারছিল না৷ আরহা মাশরাফির দৃষ্টি খেয়াল করে লজ্জায় মিইয়ে গেল। পাশ থেকে রিয়াশা বলে উঠলো,”এখনই এত লজ্জা পেলে হবে না মাই ডিয়ার ভাবিইই! এখনো তো বিয়েই হলো না, আসল লজ্জার মুহুর্ত তো এখনো বাকি।”
আরহা রাগী চোখে তাকাতেই রিয়াশা হেসে ওঠে। অন্যদিকে মাশরাফির বন্ধু আবির তার কাধে টোকা দিয়ে বলে,”কি ব্যাপার? তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে প্রেমে ডুবে হাবুডুবু খাচ্ছিস।”

“সত্যিই হাবুডুবু খাচ্ছি রে!”
“নিজেকে সামলা দোস্ত। এত জলদি যদি প্রেমে হাবুডুবু খাস তাহলে বিয়ের পর তোর বউ তোকে আঙুলের ইশারায় নাচাবে।”
“আমি ওর ইশারায় নাচতেও রাজি।”
আবির বুঝলো তার বন্ধুকে এসব বুঝিয়ে লাভ নেই। তাই সে আর কিছু বলল না। আরহাকে নিচে নিয়ে আসা হলো।
বাড়ির বড়রাও সবাই উপস্থিত। আরহাম খান রাজীব হাসানের সাথে কোলাকুলি করলেন। আরুশি, সায়রাও ও মিসেস রুমির সাথে আলাপ বিনিময় করছিলেন। আকাশ আমিনাকে সামলাচ্ছিল। আমিনা জাঈদকে কোথাও না দেখে আকাশকে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা, জাঈদ কোথায়? সবাইকে তো দেখছি কিন্তু ওনার কোন দেখা নেই।”
আকাশ বলে ওঠে,”আরে, আজ তো আরহার এনগেজমেন্ট। বড় ভাই হিসেবে জাঈদ ভাইয়ার কত দায়িত্ব। সেসবেই ব্যস্ত আছে। তুমি এতো চিন্তা করো না আপু।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কি জানি ভাইয়ু! আব্বুকে হারানোর পর থেকে আমার কেন জানি এই চিন্তার রোগটা বেড়েছে। প্রতি মুহুর্তেই মনে শুধু এই ভয় জেগে ওঠে যে, আবার না কাউকে হারিয়ে ফেলি।”
আকাশ নিজের বোনকে সাহস জুগিয়ে বলে,”তুমি চিন্তা করো না আপু। আমাদের সাথে আর খারাপ কিছু হবে না৷ এখন যা হবে শুধু ভালোই হবে।”
আকাশের কথায় কিছুটা নিশ্চিত হবার চেষ্টা করলেও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারে না আমিনা।
আফিফা খানও হুইল চেয়ারে অবস্থানরত নির্ঝর খানকে নিয়ে উপস্থিত হন। দুজনেই নিজের নাতনীর জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনের সাক্ষী হতে পাওয়ার আনন্দে ভীষণ খুশি।

এরমধ্যে আরহাম খান বলে ওঠেন,”সবাই যখন এসেই গেছি আমরা তাহলে শুভ কাজে আর দেরি করে লাভ নেই। মাশরাফি বাবা তুমি আরহার সাথে এনগেজমেন্ট রিং টা পড়িয়ে দাও। আর আরহা, তুমিও রিং নিয়ে তৈরি থাকো।”
মাশরাফি মাথা নাড়ায়। অতঃপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় আরহার দিকে। দুজনেই আবেগপ্রবণ চোখে একে অপরের দিকে তাকায়। রাজীব হাসান বলে ওঠেন,”জলদি আংটিটা পড়িয়ে দাও ”
মাশরাফি আরহার হাত আলতো করে স্পর্শ করে। দুজনের শরীরেই অদ্ভুত শিহরণ অনুভূত হয় এতে করে। মাশরাফি আরহার অনামিকা আঙুলে আংটিটা পড়াতে যাবে এমন সময় আচমকা জাঈদ বলে ওঠে,”থেমে যা মাশরাফি। খবরদার আমার বোনকে আংটি পড়াবি না।”

মাশরাফি সহ উপস্থিত সবাই অবাক চোখে তাকায় জাঈদের দিকে। জাঈদ ক্ষিপ্তগতিতে এগিয়ে এসে মাশরাফির কলার চেপে ধরে বলে,”আমি কিছুতেই একটা খু*নিকে আমার বোনের স্বামী হতে দেব না।”
জাঈদের কথা শুনে সবাই চমকে ওঠে। আরহাম খান বলে ওঠেন,”এসবের মানে কি জাঈদ? কি বলছ তুমি এসব?”
“আমি একদম ঠিক বলছি আব্বু। এই মাশরাফি একটা খু*নি।”
আরহা বলে ওঠে,”ব্রো..তুমি ওনাকে ছেড়ে দাও প্লিজ।”
আমিনাও অস্থির কন্ঠে বলে,”এসব তুমি কি করছ জাঈদ? এসবের মানে কি?”
“তোমরা কেউ কিছু জানো না, তাই হয়তো ভাবছ আমি ঠিক করছি না। সত্যটা জানার পর তোমরাও সব বুঝতে পারবে।”

আরুশি বলে ওঠেন,”মানে? কি সত্যর কথা বলছ তুমি?”
জাঈদ দরজায় তাকিয়ে কারো দিকে ইশারা করে। একজন মধ্যবয়সী যুবক প্রবেশ করে সহসা। বয়স তার ৩০ এর কোঠায়। সে আসতেই জাঈদ বলে ওঠে,”এবার আপনি সমস্ত ঘটনা সবার সামনে খুলে বলুন। প্রয়োজনে আপনার ড্রোনে রেকর্ড হওয়া দৃশ্যটাও সবাইকে দেখান।”
হাসান নামের সেই যুবক এগিয়ে এসে বলে,”আমার নাম হাসান। আসলে সেদিন আপনাদের বাড়ির সদস্য মিস্টার আমান খান মারা গিয়েছিলেন কাকতালীয়ভাবে সেদিন আমি এই এলাকা দিয়ে নিজের ড্রোন ওড়াচ্ছিলাম আর সেই ড্রোনে এমন কিছু দৃশ্য ধরা পড়ে যা অনাকাঙ্ক্ষিত। আসলে ওনার মৃত্যুর মুহুর্তটা আমার ড্রোনে ধরা পড়ে আর..আপনারা নিজেই চাইলে দেখে নিতে পারেন।”

বলেই হাসান পাশে থাকা একটি ডেস্কের উপর নিজের কম্পিউটার রেখে পেনড্রাইভ ঢুকিয়ে একটা ভিডিও প্লে করে৷ যেখানে ড্রোনের মাধ্যমে তোলা ফুটেজ দেখা যাচ্ছে। আমান খান বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে আসছেন। ফুটেজের দৃশ্য একটু এগিয়ে যেতেই দেখা যায়, মাশরাফি ঠিক সেই সময় একদম ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল। তার ছাদের কিনারাতেও ফুলের টব ছিল। ঠিক এর পরের দৃশ্যে দেখা যায়, আমান খানের মাথার উপর একটা ফুলের টব পড়ে যায়। পুরো দৃশ্য দেখে সবাই আতকে ওঠে। তবে আরহার কোন দৃশ্য এই ফুটেজে ছিল না।।
বাড়ির সবাই বাকরুদ্ধ। জাঈদ বলে ওঠে,”দেখলে তো তোমরা সবাই? চাচ্চুর মৃত্যুর সময় মাশরাফি ছাদে ছিল। আর ওর সামনে টবও ছিল। আবার চাচ্চুরও মৃত্যুর কারণ মাথায় টব পড়া। এসব দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মাশরাফিই চাচ্চুকে মে*রে ফেলেছে।”

আরহা বলে ওঠে,”নাহ, এটা সত্য নয়!”
আমিনা, আকাশ দুজনেই এবার ক্ষিপ্তভাবে এগিয়ে আসে। আকাশ তো মাশরাফির দিকে মারমুখী হয়ে বলে,”বলুন কেন মেরে ফেললেন আমার আব্বুকে? আমার আব্বু আপনার কি ক্ষতি করেছিল?”
আমিনাও বলে ওঠে,”এই ফুটেজে স্পষ্ট যে আমার আব্বুর মৃত্যুর পেছনে মাশরাফি ভাইয়াই দায়ী। তবুও তুমি এটা অস্বীকার করবে আরহা? ভালোবাসায় এতই অন্ধ হয়ে গেছ তুমি যে নিজের চাচ্চুর খুনির হয়েও কথা বলবে।”
আরহা সিদ্ধান্ত নেয় এবার সবাইকে সব সত্যটা জানাবে। তাই সে বলে ওঠে,”তোমরা ভুল করছ..মাশরাফি ভাইয়া কিছু করেন নি..সেদিন..”

আরহা আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় মাশরাফি ইশারা করে তাকে চুপ হতে বলে। যার দরুণ আরহা থেমে যায়। রাজীব হাসান এগিয়ে এসে মাশরাফিকে বলেন,”মাশরাফি, তুমি আমাকে সব সত্য খুলে বলো। কি হয়েছিল সেদিন? সত্যিই কি তোমার কারণেই আমান খান মারা গেছেন?”
মাশরাফি মাথা নাড়ায়। রাজীব হাসান ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেন তার গালে। আরহা অবাক চোখে তাকায়। মাশরাফি বলে ওঠে,”আমি ইচ্ছা করে কিছু করি নি। সেদিন আমার হাত লেগে…”
আকাশ মারমুখী হয়ে মাশরাফির কলার চেপে ধরে বলে,”আপনি ইচ্ছা করে আমার আব্বুকে মেরেছেন। আপনাকে আমি জেলে দেব।”

রিয়াশা এগিয়ে এসে আকাশকে দূরে ঠেলে বলে,”আমার ভাইয়া বললো না এটা একটা দূর্ঘটনা। তাহলে কেন তুমি তাকে দোষারোপ করছ?”
আমিনা বলে ওঠে,”যদি দূর্ঘটনাই হবে তাহলে কেন তোমার ভাইয়া এতদিন আমাদের থেকে সব লুকিয়ে গেল? কেন সত্যটা কাউকে জানালো না।”
জাঈদ বলল,”আমি থানায় গিয়ে মামলা করবো ওর নামে৷ তাহলেই সব সত্য বের হয়ে আসবে।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৫

আরহা আর চুপ থাকতে না পেরে সিদ্ধান্ত নেয় মাশরাফির আপত্তি সত্ত্বেও সব সত্য বলবে। সে বিনা দোষে মাশরাফিকে শাস্তি পেতে দেখতে পারবে না। এমন সময় মাশরাফি হঠাৎ এগিয়ে এসে আরহার কানে কানে বলল,”তোমাকে আমার কসম রইল, তুমি কাউকে সত্যটা বলবে না। তোমার জন্য আমি সব দোষ নিজের মাথা পেতে নিতে পারব কিন্তু অন্যের চোখে তোমায় অপরাধী হতে দেখতে পারন না।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৭