অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭১
ইয়াসমিন খন্দকার
আরহাকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন আরুশি। আরহা নিজের মায়ের হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়লো। আরুশি নিজের মেয়েকে আগলে নিয়ে বলল,”একদম কেদো না। কাদের জন্য কাঁদছ তুমি? যারা তোমার এই কান্নার কোন মূল্যায়ন করে নি।”
তারা আরো এগোতে যাবে এমন সময় আফিফা খান, জাঈদ, সায়রা সবাই এগিয়ে আসেন। জাঈদ তাদের পথ আটকে বলে,”মাম্মা, আরহা কোথায় যাচ্ছ তোমরা? তোমরা কোথাও যাবে না। পাপা রাগের মাথায় কি বলেছে সেজন্য এভাবে বাড়ি ছেড়ে যাবে তোমরা?”
আফিফা খানও বলেন,”এভাবে আমাদের সংসারটাকে একা ফেলে যেও না তোমরা। আরু, তুই অন্তত আমার কথাটা শোন৷ সারাজীবন ধরে অনেক আপন মানুষকে হারিয়েছি আমি৷ এখন আর নতুন করে কাউকে হারানোর সাহস নেই।”
সায়রাও বলেন,”আমি জানি, আরহা ইচ্ছা করে ওর চাচ্চুকে মারেনি। এটা একটা দূর্ঘটনা ছিল৷ আমার ছেলে মেয়েরা তো অবুঝ, ওরা বুঝতে চাইছে না। আমি নাহয় ওদের বুঝিয়ে বলবো কিন্তু তোমরা এভাবে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেও না প্লিজ।”
আরুশি সবার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”তোমরা আমাদের আটকিও না। আমাদের যেতেই হবে। আরহাম ওর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে তো।”
আফিফা খান বলেন,”এর আগেও তুই জাঈদকে নিয়ে এভাবে অভিমান করে চলে গেছিলি। আবারো সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করিস না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তো কি করব খালা? নিজের মেয়েকে দূরে চলে যেতে দেব একা একা/”
“আমরা সবাই নাহয় আরহামকে বোঝাবো। ওর মাথা এখন গরম আছে কিন্তু..”
“ওনার মাথা সবসময় গরমই থাকে। এ আর নতুন কি? ওনার মেজাজ দেখার কোন সখ আমার নেই। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। আমার মেয়ের অপমান আমি সইবো না।”
সায়রা আরহার হাত ধরে বলেন,”আরহা, তুই তোর মাম্মাকে বোঝা।”
“তুমি যে আকাশ ভাইয়া আর আমিনা আপুর মতো আমাকে খু*নি ভাবছ না, এটাই আমার কাছে অনেক চাচি। তুমি যাও, আমিনা আপুকে আগলে রাখো। এই অবস্থায় ওর তোমাকে দরকার।”
“আমিনা তোর সাথে এত খারাপ ব্যবহার করল। তবুও তুই ওর কথা ভাবছিস,”
জাঈদ বলে,”তোমরা যদি এই বাড়ি থেকে চলে যাও তাহলে আমিও থাকবো না এখানে। আমিও চলে যাব তোমাদের সাথে।”
আরহা বলে ওঠে,”না ব্রো। তুমি কি বলছ এসব? আমিনা আপু এখন প্রেগন্যান্ট। তোমাদের সন্তান আসতে চলেছে এই দুনিয়াতে। আর তুমি তাকে এই অবস্থায় একা ফেলে চলে যাবে৷ সেটা কি করে হয়?”
আরুশিও বলেন,”আরহা ঠিক বলছে জাঈদ। তুমি চিন্তা করো না, আমরা সামলে নেব সবকিছু। তুমি আমিনার পাশে থাকো। ও এখন রেগে আছে আর এটাই স্বাভাবিক। যেকোন মেয়ে তার বাবাকে নিয়ে অনেক আবেগপ্রবণ থাকে। কাউকে নিজের বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী ভাবলে তার সাথে এমন ব্যবহার করাই স্বাভাবিক। তাই ওর প্রতি কোন রাগ রেখো না।”
আফিফা খান বলেন,”তাহলে তুই আমাদের কথা শুনবি না, তাই তো আরু। চলে যাবি নিজের মতো।”
“হ্যাঁ, খালা।”
” বেশ, আমি তোদের আর আটকাবো না৷ যা, সবাই চলে যা।”
বলেই তিনি অভিমান করে স্থান ত্যাগ করেন।সায়রাও চলে যান তাদের বিদায় দিয়ে। জাঈদ কিছুতেই যেতে চাচ্ছিল না৷ আরুশি খান তাকে ধমকে ফেরত পাঠান। অতঃপর আরহার হাত ধরে বলেন,”শক্ত হও আরহা। এখন সামনে আমাদের অনেক কঠিন পথচলা বাকি। তবে চিন্তা করো না, তোমার মাম্মা সব পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থাকবে।”
নির্ঝর খান আরহামকে তখন থেকে বুঝিয়ে চলেছেন।
“এভাবে ভুল করো না আরহাম। যাও নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে ফিরিয়ে আনো। আমাদের সংসারটা এভাবে ভেঙে যেতে দিও না।”
এমন সময় জাঈদও এসে বলে,”মাম্মা আর সিস চলে যাচ্ছে পাপা। তুমি তবুও ওদের আটকাবে না?”
“তোমার মাম্মাকে আমি যেতে বলিনি জাঈদ, সে নিজের ইচ্ছায় যাচ্ছে। আমি কেন তাকে আটকাতে যাব? আর আরহার ব্যাপারে যা বলার আমি বলে দিয়েছি। ওর স্থান আর এই বাড়িতে হবে না।”
জাঈদ আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় আকাশ এসে বলে,”জাঈদ ভাইয়া, আমি তোমায় অনেক সম্মান করি কিন্তু আজ একটা কথা না বলে পারছি না, তোমার চেয়ে বড় হিপোক্রেট আমি আমার জীবনে আর দুটো দেখিনি। যখন মাশরাফি ভাইয়াকে আব্বুর খুনে অভিযুক্ত করা হলো তখন তুমি তার উপর হামলে পড়লে। ঠিকভাবে তদন্ত না করে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলে। সেই সময় আব্বুর ন্যায়বিচার নিয়ে অনেক কথা বললে। আর আজ যখন তোমার নিজের বোনের সত্যটা প্রকাশ পেল তখন তুমি চাইছ আমরা সবাই তাকে ক্ষমা করে দেই!”
“আকাশ, মুখ সামলে কথা বলো। আমার সিস কেমন সেটা তুমি জানো না?”
“মাশরাফি ভাইয়াও তো অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তবুও তুমি শুধু নিজের ক্ষোভ মেটাতে তাকে পুলিশে তুলে দিয়েছিলে।”
জাঈদ এগিয়ে গিয়ে জাঈদের কলার চেপে ধরে। এমন সময় আমিনা এগিয়ে এসে আকাশকে জাঈদের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”একদম আমার ভাইয়ুর গায়ে হাত তোলার সাহস দেখাবে না। ও ভুল কি বলেছে?”
“আমিনা…!”
“আমাকে চোখ রাঙাচ্ছ কেন? সত্য কথা তেতো লাগছে তাই? তুমি কি এটা অস্বীকার করতে পারবে যে, মাশরাফি ভাইয়ার নামে থানায় মামলা করার তোমার মূল উদ্দ্যেশ্য আমার আব্বুর ন্যায়বিচার পাওয়া নয় তার প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ ছিল। তুমি চাও নি যে, মাশরাফি ভাইয়ার সাথে তোমার বোন আরহার বিয়ে হোক। তাই তুমি এসব আটকানোর জন্যই তার নামে মামলা করেছ, সবাইকে তার কাছে খারাপ করেছ।”
“আর একটা শব্দ উচ্চারণ করবে না। নাহলে আমি ভুলে যাব তুমি আমার বাচ্চার মা হতে চলেছ।”
“হ্যাঁ, এখন এটাই তো বাকি রেখেছ।”
“তোমার গর্ভে যদি আমার বাচ্চা না থাকত তাহলে আমি তোমাকে..”
“কি করতে? মারতে? তো মা*রো। কে মানা করেছে।”
“চুপ! একদম চুপ! তোমার জন্য আমার সিস এবং মাম্মা এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে৷ তবুও কি তোমার একটু অনুশোচনা হচ্ছে না?”
“আমার কেন অনুশোচনা হবে? আমি তো বড় আম্মুকে বেরিয়ে যেতে বলি নি। আর আরহাকেও বেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত বড় আব্বু দিয়েছে। আমরা তো বলিনি, আমরা শুধু বলেছি আরহা না বেরিয়ে গেলে আমরা চলে যাব। ভুল কি বলেছিলাম? নিজের আব্বুর খু*নির সাথে কি এক ছাদের নিচে থাকা সম্ভব? তুমি হলে পারতে?”
“একদম মুখ চালাবে না। তোমার জন্য আমার পরিবার শেষ হয়ে গেছে। আর এর ফল তোমায় ভোগ করতেই হবে।”
বলেই জাঈদ ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে স্থানত্যাগ করে।
আরহাকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল আরুশি। এমন সময় হঠাৎ করে তাদের সামনে একটি গাড়ি এসে থামে। আর সেই গাড়ি থেকে নেমে আসেন রাজীব হাসান। তাকে দেখেই আরুশি বলে ওঠেন,”রাজীব ভাই!”
রাজীব হাসান বলে ওঠেন,”আজ থেকে ২৫ বছর আগে আমি তোমায় একা ছাড়িনি আরুশি। যখন তুমি নিজের পরিবার ছেড়ে এসেছিলে তখন তোমাকে আমি সামলেছিলাম। তাহলে আজ কিভাবে একা ছেড়ে দেই? আমি তো তোমার ভাই হই। নিজের বোনের খেয়াল তো রাখতেই হবে।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭০
আরুশির চোখে জল চলে আসে। যখন তার পরিবার তার পাশে নেই তখন আবারো রাজীব এসে দাড়ালো তাঁর পাশে। একটু পরই গাড়ি থেকে নামে মাশরাফি। তাকে দেখে আরহা অবাক হয়। মাশরাফি এসে আরহার কাধে হাত দিয়ে বলে,”তুমি ভয় পেও না আরহা। আমরা সবাই তোমার পাশে আছি। নিজেকে একা ভাববে না।”
আরুশি বলে ওঠেন,”তোমায় দেখে ভালো লাগছে মাশরাফি। এখন একমাত্র তুমিই পারবে আমার মেয়েকে সামলাতে। তুমি ওকে নিজের করে নাও! ওকে সামলাও!”