অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২০

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২০
ইয়াসমিন খন্দকার

আরিশাকে সাথে নিয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করে সন্ধ্যা। নিজের হাতে সন্ধ্যাকে সে খাবার খাইয়ে দেয়। আরিশা সন্ধ্যার এমন অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা আরিশার দিকে তার বানানো চিকেন কাটলেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এটা খেয়ে দেখো। খুব সুন্দর লাগবে খেতে। আমার হাতের চিকেন কাটলেট না আমার বাড়ির সবার খুব প্রিয়।”
আরিশা খেয়ে বলে,”সত্যি ভীষণ ভালো খেতে।”
সন্ধ্যা আরিশার হাসি মুখ খেয়াল করে বলে,”তোমাকে হাসতে দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। জানো,তোমার জীবনের কাহিনি শুনে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। তোমার মতো এত মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে যে বা যারা অন্যায় করেছে তাদের যেন আল্লাহ অনেক বড় শাস্তি দেন। এই কামনা করি।”

সন্ধ্যার মুখে এমন কথা শুনে আরিশা মনে মনে ভাবে,”আমি কি সন্ধ্যা আপুর কাছ থেকে সব কথা লুকিয়ে কোন অন্যায় করেছি? সন্ধ্যা আপু কত ভালো! আর ঐ জাঈদ! ওর সাথে বিয়ে হলে তো সন্ধ্যা আপুর জীবনটা পুরো নষ্ট হয়ে যাবে। নাহ,আমি এমনটা হতে দিতে পারি না। আমাকে সন্ধ্যা আপুকে সমস্ত সত্যটা বলতে হবে।”
এমন ভাবনা থেকেই আরিশা বলে ওঠে,”আপু, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।”
“হ্যাঁ, বলো।”
“আসলে…”
এমন সময় হঠাৎ করে জামিলা শেখ এর করা হট্টগোল শুনে সন্ধ্যা সেদিকে ছুটে যায়। জামিলা শেখ বলেন,”সন্ধ্যা, দেখো কারা এসেছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সন্ধ্যা তাকিয়ে দেখে তার মা-বাবা দুজনেই এসেছে। তাদের দেখে তো সে অবাক কন্ঠে বলে ওঠে,”তোমরা! কিন্তু তোমরা যে বলেছিলে ২/৩ দিন পর আসবে।”
সন্ধ্যার বাবা সাজিদ চৌধুরী বলে ওঠে,”সারপ্রাইজ! কেমন লাগল আমাদের এই সারপ্রাইজ? তোমাকে এভাবে অবাক করে দেয়ার জন্যই তো আমরা জানাই নি কিছু।”
জামিলা শেখ খুশি হয়ে বলেন,”আপনারা এসে খুব ভালো কাজ করেছেন দুলাভাই। আমি সন্ধ্যার সাথে আজ আপনাদের নিয়েই কথা বলছিলাম। শুনলাম, আপনারা নাকি সায়নের জন্য মেয়ে খুঁজছেন। তা সায়ন কোথায়?”
সাজিদ চৌধুরীর স্ত্রী তথা সন্ধ্যার মা ইভা চৌধুরী বলে ওঠেন,”আরে আর বলিস না! সায়নকে তো চিনিস। ও অনেকদিন পর দেশে ফিরল তো তাই সবার আগে নিজের দাদা-দাদীর সাথে দেখা করতেই গেছে। ওদের সাথে দেখা করেই এখানে আসবে৷ আমরা ভাবলাম আগে সন্ধ্যার সাথে দেখা করি, তারপর নাহয় সবাই মিলে একসাথে যাব।”
সন্ধ্যা তার মার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তোমাদেরও ভাইয়ার সাথে যাওয়া উচিত ছিল। আমি তো প্রথম দিন এসেই দাদা-দাদির সাথে দেখা করে এসেছি। ওনাদের বয়স হয়েছে, তাই আমাদের কাছে ওনাদেরই ফাস্ট প্রায়োরিটি থাকা দরকার।”

ইভা চৌধুরী কিছু বলতে গিয়ে থেমে গিয়ে সন্ধ্যার দিকে নজর দিয়ে বলেন,”এই মেয়েটাকে তো ঠিক চিনলাম না।”
জামিলা শেখ ব্যাপারটা সামাল দিতে বলেন,”ও আমাদের বাড়ির আশ্রিতা। বিপদে পড়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে।”
“ও, তা তোর স্বামী, জাঈদ ওরা কোথায়?”
“আসলে আপা তুমি তো জানোই, আমার স্বামী এবার এমপি হওয়ার দৌড়ে নাম দিয়েছে। সেইজন্য ওকে সারাদিন এখন মিছিল মিটিং করে বের হতে হচ্ছে। বাড়িতে সেরকম থাকেও না। ছেলেটাও হয়েছে একদম বাবার মতোন।”
“ওহ।”
তারা কথাই বলছিল এরকম সময় আবারো কলিং বেল বেজে ওঠে। জামিলা শেখ আরিশার দিকে খেয়াল করে বলেন,”এই মেয়ে, এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন? শুনতে পাচ্ছ না কলিং বেল বাজছে। যাও, গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে এসো।”

“আচ্ছা।”
বলেই আরিশা দরজাটা খুলতে যায়। দরজাটা খোলামাত্রই আরিশার মুখোমুখি হয় অতীব সুদর্শন এক যুবক। ভীষণ লম্বা এবং সুঠামদেহী এই পুরুষটিকে একবার দেখলেই যেকোন মেয়ে ঘায়েল হয়ে যাবে৷ তার উপর গায়ে থাকা কালো শার্ট ও ডেনিম জিন্স প্যান্টের সাথে মানানসই সানগ্লাস পড়ায় তার সৌন্দর্য যেন আরো বহুগুণে বেড়ে গেছে৷ তবে আরিশা ছেলেটির দিকে সেভাবে না তাকিয়ে চোখ নামিয়ে দিল। কিন্তু ছেলেটি অপলক তাকিয়ে রইল আরিশার দিকে। তার দৃষ্টিতে ছিল এক ধরনের মুগ্ধতা।
সন্ধ্যা হঠাৎ করে এগিয়ে এসে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ভাইয়া, তুমি এসে গেছ।”
সন্ধ্যার কন্ঠ শুনে সায়নের ভাবনায় ছেদ পড়ে। সে হালকা হেসে বলে,”হ্যাঁ, এসে গেলাম। তুই তো আগে আগেই গেলি। আজ আমরাও এসে গেলাম তোকে সারপ্রাইজ দিতে।”
“তোমরা আসবে আমায় আগে বলবে না, আমি আজ সবার জন্য স্পেশাল ডিশ বানিয়েছিলাম জানো। কিন্তু সব তো শেষ হয়ে গেল।”

“কোন ব্যাপার না, আবার বানিয়ে দিস।”
কথাটা বলেই সায়ন আবার তাকালো আরিশা দিকে। আরিশা তখন কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। জামিলা চৌধুরীর এগিয়ে এসে গদোগদো হয়ে বললেন,”আরে আমায় সায়ন বাবু যে! কত্ত বড় হয়ে গেছ। আর বেশ সুদর্শনও হয়েছ দেখছি।”
“কেমন আছ খালা?”
“আমি আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”
” আমিও।”
সায়ন কথা বলতে বলতে বারবার আড়চোখে আরিশার দিকে তাকাচ্ছিল। ব্যাপারটা সন্ধ্যা খেয়াল করে। তবে কিছু বলে না।

জামিলা শেখ বলে ওঠেন,”গেস্টরুমটা পরিস্কার করাই আছে। তোমরা ওখানে গিয়ে বিশ্রাম নেবে চলো।”
ইভা চৌধুরী বলেন,”হ্যাঁ, রে। আমিও অনেক ক্লান্ত। রেস্ট নিতে হবে।”
বলেই তিনি তার স্বামীর সাথে গেস্টরুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। সন্ধ্যা ও সায়নও তাদের পিছন পিছন যায়। সায়ন নিজের কৌতুহল দমন করতে না পেরে সন্ধ্যাকে প্রশ্ন করে বসে,”আচ্ছা, ঐ মেয়েটা কে রে যে আমাকে দরজা খুলে দিল? ওকে তো আগে এই বাড়িতে দেখেছি বলে মন হয় না। ও কি এই বাড়ির কোন আত্মীয়?”
“তেমন কিছু না। আসলে মেয়েটার কথা কি বলব, মেয়েটার লাক ভীষণ খারাপ। জানিস, ওর না বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু ওর স্বামী এই বিয়েটা মেনে নেয় নি। ওকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তারপরই খালারা ওকে এই বাড়িতে আশ্রয় দেয়। মেয়েটার জন্য না আমার ভীষণ কষ্ট হয় জানিস। এত ভালো একটা মেয়ে অথচ ভাগ্যটা কত খারাপ!”
সায়ন আরিশার কথা ভেবে হালকা হেসে বলে,”হয়তো ওর জীবনে এমন কেউ আসবে যে ওর সব কষ্ট দূর করে দেবে।”

তখন রাত দশটা। ডিনার শেষে সায়ন নিজের জন্য বরাদ্দ রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছিল। হঠাত করেই পানির পিপাসা পাওয়ায় সে ড্রয়িং রুমে যায়৷ আরিশাও সেই সময় ড্রয়িংরুমে এসেছিল পানি খেতে৷ ফলে দুজনে মুখোমুখি হয়ে যায়। আরিশাকে দেখেই সায়ন থমকে যায়। এদিকে আরিশা সায়নকে খেয়াল করে খানিকটা অস্বস্তি বোধ করে। কারণ সে খেয়াল করেছে ছেলেটা কিভাবে যেন তার দিকে তাকাচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে পানি খেতে গিয়ে আরিশা বিষম খায়। অতঃপর চলে যেতে নেবে এমন সময় সায়ন বলে ওঠে,”শুনুন…”
আরিশা পিছন ফিরে তাকায়। সায়ন মাথা চুলকে বলে,”আপনার নামটা যেন কি?”
“আরিশা, কেন?”

“শুনুন, পানি খাওয়ার সময় আস্তে খাবেন। যাতে বিষম না লাগে। আর হ্যাঁ, আপনার নামটা অনেক সুন্দর।”
আরিশার কাছে সায়নের কথাগুলো অস্বস্তিকর ছিল। তাই সে আর না দাঁড়িয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়। সায়ন সেটা দেখে মৃদু হেসে বলে,”এভাবে আর কতদিন আমার থেকে পালিয়ে বেড়াবে? একদিন না একদিন আমার কাছে তোমায় ধরা দিতেই হবে।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১৯

এদিকে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একজোড়া চোখ এইসব কিছু পর্যবেক্ষণ করছিল। রাগে সে নিজের হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে বলে,”আরিশার দিকে কেউ নজর দিলে তার চোখ আমি তুলে ফেলবো। ওর দিকে নজর দেবার অধিকার কারো নেই। কারণ ও আমার…”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২১