অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২২
ইয়াসমিন খন্দকার
আরিশা চুপচাপ নিজের ঘরে বসেছিল৷ ইদানীং তার সবকিছুই কেমন জানি বিরক্ত লাগে। কোন কিছুতেই তার মন বসে না। আরিশা চুপচাপ বসেই ছিল এমন সময় হঠাৎ করে জাঈদ তার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। আরিশা অবাক হয়ে জাঈদের দিকে তাকিয়ে বলে,”এসব কি করছেন আপনি? দরজাটা বন্ধ করলেন কেন?”
“তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।”
“আপনার যাই জরুরি কথা থাক না কেন,আপনি আগে দরজাটা খুলুন। নাহলে আমি আপনার সাথে থাকতে নিরাপত্তাবোধ করব না।”
জাঈদ কিছুটা ঝিমিয়ে আসা স্বরে বলে,”এতোটাই খারাপ ভাবো আমাকে? যে আমার কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে হয় না?”
“না, হয়না। অতীতে আপনি আমার সাথে যা যা করেছেন তাতে বদ্ধ ঘরে তো দূরের কথা লোকভর্তি ঘরেও আপনার সাথে আমি নিরাপদ বোধ করি না।”
জাঈদ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে আরিশাকে বলে,”তুমি আমাকে যা খুশি তা ভাবতে পারো…তবে আজ আমি তোমাকে কিছু জরুরি কথা বলতে চাই।”
“হ্যাঁ, বলুন।”
” আমি চাই, তুমি সন্ধ্যাকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে সমস্ত সত্যটা বলে দাও।”
জাঈদের কথা শুনে আরিশা জারপনরাই অবাক হয়। জাঈদ আরিশাকে বলে,”বুঝলে তো আমি কি বললাম?”
আরিশার মাথায় হঠাৎ কিছু ভাবনা আসতেই সে বলে,”কেন? হঠাৎ আপনি সন্ধ্যা আপুর কাছে সবকিছু প্রকাশ করতে বলছেন কেন? ওহ, বুঝতে পারছি। আপনার নজর এখনো আমার আপ্পির ওপর থেকে যায়নি তাইনা? আপনি সন্ধ্যা আপুকে বিয়ে করতে চান না,কারণ আপনি এখনো স্বপ্ন দেখেন নির্জর ভাইয়া আর আপ্পির সংসার ধ্বংস করে আপনি আপ্পিকে নিজের করে নেবেন। যদি আপনি এমনটাই ভেবে থাকেন তাহলে একটা কথা স্পষ্ট করে জেনে রাখুন, আমি কিছুতেই এমনটা হতে দেব না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রয়োজনে আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে সন্ধ্যা আপুর সাথে আপনার বিয়ের পথটা প্রশস্ত করে দেব। যাতে করে আপনি আর আমার আপ্পির জীবনে কোন সমস্যা তৈরি করতে না পারেন।”
জাঈদ এবার খানিক রেগে বলে,”তোমার কি এটাই মনে হয় যে সবটা আমি তোমার আপ্পির জন্য করছি?”
আরিশা উপহাস করে বলে,”তাছাড়া আর কি হবে? আপনি শুরু থেকে যা যা করেছেন সবটা তো আপ্পির জন্যই। আপ্পিকে নিজের করে পাওয়ার জন্যই আপনি আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিয়েছেন। আমাকে আমার পুরো পরিবার থেকে বিছিন্ন করেছেন।”
“ওটা তোমার পরিবার? হাসালে আমায়, ওরা কেউ তোমাকে নিজের পরিবার ভাবে? যদি ভাবত তাহলে এতদিনে একবার হলেও তোমার খোঁজ নিতে আসত। বাকি সবার কথা তো বাদই দিলাম, তোমার আপ্পি যার জন্য তুমি এতকিছু ত্যাগ করলে সে কি করেছে তোমার জন্য? বিয়ের পর শুধু একবার এসেছিল খোঁজ নিতে তারপর থেকে আর কোন খোঁজ নেই তার। তুমি আসলে যাদের আপন ভাবো তারা তোমায় বিন্দুমাত্র মূল্য দেয় না আরিশা। কথাগুলো শুনতে কঠিন মনে হলেও এগুলো সত্য।”
আরিশা রেগে বলে,”আপনাকে এত কিছু ভাবতে হবে না মিস্টার জাঈদ শেখ। আপনি নিজের কাজে মন দিন। এভাবে আপনি আপ্পির বিরুদ্ধে আমার মন বিষিয়ে দিতে পারবেন না। এখন যান তো এখান থেকে, আপনার উপস্থিতি আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।”
জাঈদ আরিশার মুখ থেকে এরকম কথা শুনে কেন জানি ভীষণ ব্যথিত বোধ করল। কই আগেও তো আরিশা অনেক কথা শুনিয়েছে তাকে, এরকম কষ্ট আগে কখনো অনুভব করেনি। তাহলে আজ হঠাৎ এত কষ্টের কারণ কি?
জাঈদকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরিশা আবারো রেগে বলল,”কি হলো? এখনো সঙ্গের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনি যান না এখান থেকে। আপনার সাথে একঘরে শ্বাস নিতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।”
জাঈদ আর কোন কথা না বলে চুপচাপ আরিশার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। জাঈদ বেরিয়ে যেতেই আরিশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”হে আল্লাহ,এই লোকটাকে তুমি আমার জীবন থেকে সরিয়ে দাও না। এনার উপস্থিতি আমায় কষ্ট দেয়..আমার শ্বাস নিতেও কষ্ট হয় এনার উপস্থিতিতে।”
সন্ধ্যা তার মা বাবার সাথে সায়ন আর আদৃতার ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলছে। সন্ধ্যার বাবা সাজিদ চৌধুরী সন্ধ্যাকে বলে,”তুমি কি নিশ্চিত যে সায়ন সত্যিই আদৃতাকে পছন্দ করে?”
সন্ধ্যা বলে,”আমি নিশ্চিত। ভাইয়ার সাথে নিজে আমি কথা বলেছি। আকারে ইঙ্গিতেই ও সবটা বুঝিয়ে দিয়েছে৷ তাছাড়া লন্ডনে থাকার সময়েও আমি খেয়াল করেছি ভাইয়া আদৃতার অনেক বেশিই খেয়াল রাখত, ওর কেয়ার করত৷ এসব কিছু থেকেই তো সব স্পষ্ট হয়ে যায়।”
সন্ধ্যার মা ইভা চৌধুরীও বলে ওঠেন,”সন্ধ্যা একদম ঠিক বলেছে। আমিও খেয়াল করেছি ব্যাপারটা।”
সাজিদ চৌধুরী কিছুটা চিন্তিত স্বরে বলেন,”তবুও আমাদের মনে হয় একবার ব্যাপারটা নিয়ে সায়নের সাথে সরাসরি কথা বলা উচিৎ। ওর বিনা অনুমতিতে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।”
সন্ধ্যা বলে ওঠে,”আহ, ড্যাড তুমি বুঝছ না কেন? ভাইয়াকে একটু সারপ্রাইজড করতে হবে না? আমি তোমাকে শতভাগ গ্যারান্টি দিচ্ছি যে ভাইয়া আদৃতাকেই পছন্দ করে।”
ইভা চৌধুরীও নিজের মেয়েকে সমর্থন করে বলেন,”সন্ধ্যা একদম ঠিক বলছে। তুমি আর আপত্তি করো না। তুমি মিস্টার আবরাজ খানের সাথে কথা বলে সমস্ত কিছু ঠিক করে নাও। সবকিছু ঠিক থাকলে আমরা গিয়ে ওনাদের বাড়িতে দেখা করতে যাই। সায়ন জানবে আমরা এমনি দাওয়াত খেতে যাচ্ছি। পরে ওখানে গিয়েই বিয়ের কথা তুলে নাহয় সায়নকে একেবারে সারপ্রাইজড করে দেয়া যাবে।”
মেয়ে ও স্ত্রীর প্ররোচনায় সাজিদ চৌধুরী আর দ্বিমত করতে পারেন না। সম্মতি জানিয়ে বলেন,”বেশ, তোমরা যা ভালো মনে করো তাই হবে। আমি তাহলে এভাবেই সবটা ম্যানেজ করি।”
আদৃতা আজ ভীষণ খুশি। একটু আগেই তার বাবা আবরাজ খান এসে তাকে বলে গেছেন যে, সায়নরা সপরিবারে আগামীকাল এবাড়িতে আসবে। আদৃতার খুশি যেন আর ধরে না। নিজের ফোন থেকে সায়নের ইন্সট্রাগ্রাম একাউন্টে ঢুকে আদৃতার তার কিছু সুন্দর ছবি দেখে বলে,”আর মাত্র কিছু দিনের অপেক্ষা। তারপর আমি নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে একদম নিজের করে পাবো। নিজেকে ভীষণ লাকি মনে হচ্ছে।”
অন্যদিকে,
সায়ন সকাল থেকে আরিশাকে দেখার জন্য ছটফট করছে৷ কিন্তু সকাল থেকে সে আরিশাকে দেখে নি। ব্যাপারটা তাকে বেশ অস্থির করে তুলছে। শেষ অব্দি আরিশাকে খোঁজার জন্য তার রুমের দিকে যেতে থাকে সায়ন। এমন সময় হঠাৎ জাঈদ তাকে দেখতে পেয়ে সায়নের পথ আটকে দিয়ে বলে,”এদিকে কোথায় যাচ্ছ?”
সায়ন আমতাআমতা করে বলে,”এমনি আরকি ভাইয়া..তোমাদের বাড়িটা ঘুরে দেখছি।”
“এদিকে দেখার মতো কিছু নেই। আমার সাথে চলো। আমি তোমাকে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখাচ্ছি।”
সায়ন আর কিছু বলতে পারে না জাঈদের কথার উপর। অগত্যা তাকে জাঈদের সাথে যেতে হয়।
সায়ন জাঈদের সাথে যাবার পরপরই সন্ধ্যা এসে আরিশার রুমে প্রবেশ করে। আরিশা তখন সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছিল৷ সন্ধ্যাকে দেখেই সে বলে ওঠে,”আপু, আপনি।”
সন্ধ্যা সহাস্যে আরিশার পাশে এসে বসে বলে,”তোমাকে ভীষণই খুশির একটা সংবাদ জানাতে আমার আজ এখানে আসা। জানো, আগামীকাল আমরা সবাই মিলে আমার ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।”
আরিশা সায়নের কথা ভাবে। লোকটার তাহলে অন্য কোথাও বিয়ে হবে। এটা তো তার জন্য ভালোই। তাহলে লোকটা শুধু শুধু তাকে এভাবে বিরক্ত করল! আরিশা হালকা হেসে বলে,”বাহ,ভালোই তো।”
“হুম, আর জানো এই মেয়েকে আমার ভাইয়াও পছন্দ করে। মেয়েটা আমার ফ্রেন্ডও।”
“ওহ আচ্ছা।”
“দাঁড়াও,তোমাকে মেয়েটার ছবি দেখাচ্ছি।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২১
বলেই সন্ধ্যা আদৃতার ছবি বের করে আরিশাকে দেখায়। আরিশা তো আদৃতার ছবি দেখেই হতবাক হয়ে যায়। সন্ধ্যা বলে ওঠে,”দেখলে তো? ভীষণ সুন্দরী না ও? আমার ভাইয়ার পাশে ভীষণ মানাবে বলো?”
আরিশা কিছু বলার মতো খুঁজে পায় না। কি বলবে এখন সে? যে আদৃতাকে সে চেনে। সে তার চাচাতো বোন। পরক্ষণেই আরিশা ভাবলো, কিসের চাচাতো বোন? ওদের সাথে তো তার রক্তের সম্পর্ক নেই। তাই সে বলল,”হুম ভালোই মানাবে।”