অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩৬
ইয়াসমিন খন্দকার
আফিফা আরিশার রুমে এসে আরিশাকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে ওঠে। অতঃপর আরিশার রুম থেকে বাইরে এসে পুরো বাড়িজুড়ে আরিশাকে খুঁজতে থাকে। তবুও আরিশার দেখা না পেয়ে তাকে ফোন করে। কিন্তু আরিশার ফোনও সুইচ স্টপ বলছে। আফিফা এবার উপায়ন্তর না দেখে নির্ঝরের কাছে গিয়ে বলল,”আচ্ছা, তুমি আরিশাকে কোথায় দেখেছ? অনেকক্ষণ থেকে ওর কোন খোঁজ নেই, সারা বাড়িতে খুঁজেও ওকে পেলাম না।”
“আশেপাশেই কোথাও আছে হয়তো৷ তুমি ওকে ফোন করে দেখ।”
“আমি কল করেছিলাম কিন্তু ওর ফোন বন্ধ বলছে।”
এবার নির্ঝরও একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে। ছবি বেগম হঠাৎ এসে বলেন,”কি হয়েছে? তোমাদের এমন লাগছে কেন?”
আফিফা বলে,”আরিশাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না, দাদি। ওর জন্য ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।”
“কি বলছ দিদিভাই, আরিশাকে তো তখন দেখলাম বৃষ্টি দিদিভাইয়ের সাথে নাচগান করতে। এরমধ্যে হঠাৎ করে আবার কোথায় চলে গেল?”
আফিফা বলে,”ওর কোন বিপদ হয় নি তো? আমার ভীষণ ভয় লাগছে নির্ঝর। আরিশা তো আমাকে না বলে কোথাও যায় না। এমনিই ওর শত্রুর শেষ নেই। ঐ জাঈদ শেখ তো হাত ধুয়ে পড়ে আছে আমার বোনটার পেছনে।”
নির্ঝর আফিফার কাধে সান্ত্বনার হাত দিয়ে বলে,”তুমি এতোটা চিন্তা করো না, আফিফা৷ আমি দেখছি কি করা যায়। তুমি একটু শান্ত হও।”
বলেই নির্ঝর বেরিয়ে যেতে নেয় এমন সময় ছবি বেগম বলে ওঠেন,”তুমি কি করবে দাদুভাই? তুমি তো লন্ডনে মানুষ, সিলেটের কিছুই চেনো না। আমি বরং দেখছি আমার চেনাজানা কাউকে ফোন করে। কেউ যদি সাহায্য করতে পারে।”
“আচ্ছা।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জাঈদের ঘুম ভাঙতেই তার চোখে সূর্যের আলো এসে পড়ে। সে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে সকাল হয়ে গেছে। জাঈদ উঠেই বলে,”আমি তো সন্ধ্যার দিকে আরিশাকে প্রপোজ করার জন্য আয়োজন করছিলাম। এরমধ্যেই হঠাৎ করে সকাল হয়ে গেল কিভাবে? আরিশা তো বলেছিল ও আসবে…ও কি এসে আমায় না পেয়েই ফিরে গেলো..ওহ শিট।”
জাঈদ মনে করার চেষ্টা করে তার সাথে কি হয়েছিল৷ কিন্তু কিছুতেই ভেবে উঠতে পারে না। এরইমধ্যে জাঈদ হোস্টেল থেকে বাইরে চলে আসে। অতঃপর আরিশার ফোনে একটা কল করে। কিন্তু ফোন বন্ধ পায়। জাঈদ ভাবে,”নিশ্চয়ই আরিশা এখানে এসে আমাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছে। হায় আল্লাহ! এত বড় ভুল আমি কিভাবে করলাম? কত বড় একটা সুযোগ ছিল আরিশার সাথে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেবার৷ যাইহোক, এখন আমাকে শহরে ফিরতে হবে। সেখানে গিয়ে আরিশার কাছে ক্ষমা চেয়ে আবারো ওর মন জয় করার চেষ্টা করতে হবে।”
এহেন ভাবনা থেকেই জাঈদ শহরের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
নিজের বাসার সামনে এসেই জাঈদ দেখতে পায় বাড়ির সামনে অনেক জটলা এবং একটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে৷ জাঈদ বিড়বিড় করে বলে,”কি আবার হলো? বাড়ির সামনে এত জটলা কেন?”
এমন ভাবনা থেকে একটু এগিয়ে যেতেই জাঈদ দেখতে পেল ভেতরে তার বাবা-মার সাথে আফিফা তর্ক করছ৷ তার সাথে নির্ঝর, সায়ন ও পুলিশও এসেছে। জাঈদ তাদের কথোপকথন শুনতে থাকে। আফিফা জাঈদের মা-বাবার দিকে আঙুল তুলে বলে,”ভালোয় ভালোয় বলুন, আপনাদের ছেলে আমার বোনকে নিয়ে কোথায় গেছে। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”
জামিলা শেখ বলেন,”এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো। তোমার বোন কোথায় গেছে সেটা আমার ছেলে কিভাবে জানবে হুম? দেখো, ঐ মেয়েই কোথায় যেন পালিয়ে গেছে। তুমি শুধুশুধু আমার নির্দোষ ছেলেকে দোষারোপযোগ্য করছ কেন?”
“ও আচ্ছা, আপনার ছেলে নির্দোষ? এটা দেখুন, আরিশার কল রেকর্ড। সর্বশেষ আপনার ছেলে জাঈদের সাথেই ওর কথা হয়েছিল কাল সন্ধ্যার দিকে। আর তারপর থেকেই ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি নিশ্চিত আপনার ছেলেই আমার বোনের সাথে কিছু একটা করেছে।”
“এসব ভুলভাল বকা বন্ধ করো। আমার ছেলে তোমার বোনকে কল করেছিল মানে এই না যে, ঐ তোমার বোনের সাথে কিছু করেছে।”
“বেশ,তাহলে ডাকুন আপনার গুণধর ছেলেকে। ও নিজে এসেই বলুক, ও কিছু করেছে নাকি করে নি।”
আফিফার কথা শুনে জাঈদ এগিয়ে গিয়ে বলে,”কি হয়েছে আরিশার?”
আফিফা রেগেমেগে এগিয়ে এসে জাঈদের কলার ধরে বলে,”জানোয়ার, বল কি করেছিস আমার ছেলের সাথে।”
জামিলা শেখ রেগে নিজের স্বামী জাহাঙ্গীর শেখের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”তুমি চুপ করে দাঁড়িয়ে কি দেখছ? তোমার সামনে তোমার ছেলের সাথে এরা এমন ব্যবহার করার সাহস পায় কি করে? তুমি না এই এলাকার কাউন্সিলর, সামনে এমপি হতে চলেছ। তোমার কি কোন ক্ষমতা নেই এদের আটকানোর?”
জাহাঙ্গীর শেখ কিছুটা চিন্তায় ছিলেন। কারণ সামনেই নির্বাচন। এই সময় তিনি কোন কেলেঙ্কারিতে জড়াতে চাইছিলেন না। এমন সময় হঠাৎ যদি তার ছেলের এসব কেস সামনে আসে তাহলে তিনি বিপদে পড়তে পারেন। সেজন্য জাহাঙ্গীর শেখ এগিয়ে এসে পুলিশ অফিসারকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,”দেখুন ইন্সপেক্টর,আপনারা কোন প্রমাণ ছাড়া আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসতে পারেন না, আর এখানে তো পুরোপুরি আমার ছেলেকে হেনস্তা করা হচ্ছে।”
কয়েকজন মহিলা পুলিশ এগিয়ে গিয়ে আফিফাকে জাঈদের থেকে আলাদা করে। জাঈদ বলে ওঠে,”আমি সত্যি জানি না আরিশা কোথায়। হ্যাঁ, কাল রাতে আমি ওকে পাহাড়ি চা-বাগানের ঐদিকে দেখা করতে ডেকেছিলাম কিন্তু..”
জাঈদ মনে করার চেষ্টা করে গতকাল রাতের কথা।
এমন সময় হঠাৎ করে এমপি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর শেখের প্রতিদ্বন্দী আলমগীর খন্দকার চলে আসেন সেই স্থানে। নিজের বিশ্বস্ত কিছু অনুচরের মাধ্যমে তিনি খবর পেয়েই মূলত এসেছেন। এই নির্বাচনে জাহাঙ্গীর শেখই তার প্রধান প্রতিদ্বন্দী৷ তাই তাকে কোনভাবে কোন কেলেঙ্কারিতে ফাঁসাতে পারলেই কেল্লাফতে। এহেন ভাবনা থেকেই আলমগীর খন্দকার এসেই বলে ওঠেন,”কি ব্যাপার, এভাবে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের ছেলের ক্রাইম আপনি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন শেখ সাহেব?”
আলমগীর খন্দকার সাথে করে কিছু জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিকও নিয়ে এসেছেন। যা দেখে জাহাঙ্গীর শেখ শুকনো ঢোক গিললেন। তিনি বেশ বুঝতে পারছেন যে বেশ বড়োসড়ো একটা ঝটকা খেতে চলেছেন আজ।
আলমগীর খন্দকারের মুখে বাঁকা হাসি। তিনি এগিয়ে গিয়ে আফিফাকে জিজ্ঞেস করেন,”তুমি একদম চিন্তা করো না, মা। আমি তোমার পাশে আছি। তুমি অন ক্যামেরায় বলো এই জাহাঙ্গীর শেখ ও তার পরিবার তোমার সাথে কি কি অন্যায় করেছে। গোটা সিলেটবাসী জানুক,তাদের ভবিষ্যত এমপি পদপ্রার্থীর আসল চেহারা কি।”
আফিফা এবার ক্যামেরার সামনে একে একে সমস্ত ঘটনা খুলে বলতে লাগল। জাহাঙ্গীর শেখের বিপি হাই হতে লাগল। তিনি বুঝে গেলেন এসব কিছু প্রকাশিত হবার পর তার এমপি নির্বাচিত হবার বিন্দুমাত্র আশা আর রইল না। আফিফা নিজের কথা শেষ করে হাতজোড় করে সবার সামনে বললো,”আমার বোনুটা বড্ড অসহায়। দয়া করে ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।”
আলমগীর খন্দকার যদিওবা রাজনৈতিক স্বার্থেই এসব কিছু করছেন আর তাই নিজের জনপ্রিয়তা আরো বাড়ানোর জন্যই আফিফার মাথায় হাত দিয়ে বললেন,”তুমি চিন্তা করো না। তোমার বোনকে ঠিকই উদ্ধার করা হবে এবং তার সাথে হওয়া প্রতিটা অন্যায়ের ন্যায়বিচারও সে পাবে।”
এদিকে জামিলা শেখ হার মারার পাত্র নন। তিনি বলেন,”এই মেয়ে সবকিছু মিথ্যা বলছে। আমাদের পরিবারের বদনাম করার জন্যই এসব ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। ঐ আরিশার সাথে যা হয়েছে তাতে আমাদের কোন হাত নেই।”
এমন সময় হঠাৎ করে মাথায় ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় এগিয়ে এসে কেউ বলে উঠল,”তাই বুঝি?”
কন্ঠটা শোনামাত্রই সবাই অবাক হয়ে সেদিকে তাকালো। আফিফা খুশি হয়ে বলল,”বোনু!”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩৫
জামিলা শেখের গলা যেন শুকিয়ে গেল। তিনি বললেন,”এটা কি করে হতে পারে? এত উপর থেকে পড়েও এই মেয়ে বেঁচে গেল কিভাবে?”
আরিশা এগিয়ে এসে বলল,”কার হাত আছে আর কার হাত নেই, এবার সবটা আমি বলছি।”
