অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৪
ইয়াসমিন খন্দকার
আদৃতা বৃষ্টিকে আসতে দেখে হতবাক হয়ে যায়। সাথে ভয়ে একপ্রকার তদস্থ হয়ে যায়। এদিকে নিঝুম নিজের মেয়েকে সহি সালামত ফিরে আসতে দেখে ভীষণ খুশি হন। তিনি দৌড়ে গিয়ে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলেন,”তুমি ঠিক আছ তো? কোথায় চলে গিয়েছিলে আমাদের কাউকে কিছু না বলে।”
বৃষ্টিও নিজের মার বুকে মাথা দিয়ে বলে,”এতদিন পর তোমাদের সবাইকে আমি ফিরে পেয়েছি মা,এখন আর তোমাদের ছেড়ে কোথায় যাব?”
আদৃতা বুঝতে পারে এখানে থাকলে সে বিপদে পড়বে। তাই চুপ করে পালানোর চেষ্টা করে। এমন সময় সায়ন তার পথ আটকে বলে,”পালানোর চেষ্টা করে কোন লাভ নেই আদৃতা৷ পুলিশ পুরো বাড়িটাকে ঘিরে আছে। তোমার আজ আর পালানোর কোন পথ নেই।”
আবরাজ খান অবাক স্বরে বলেন,”এসব কি বলছ তুমি সায়ন? পুলিশ কেন এসেছে?”
বৃষ্টি বলে ওঠে,”আমি তোমাকে সব বলছি বাবা। গতকাল রাতে আদৃতা আপু আমাকে গ্রামে আম্মা-আব্বার সাথে দেখা করানোর কথা বলে একটা নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে মাঝরাস্তায় একা চলে আসে। তারপর কিছু গুণ্ডাকে দিয়ে আমাকে ধ**ণ আর মে*রে ফেলানোর চেষ্টা করে..ভাগ্যিস সায়ন বাবু সঠিক সময় চলে এসেছিল নাহলে..”
বলেই কেঁদে ওঠে বৃষ্টি। সায়ন বলে,”আমি কিছু জরুরি কাজে গতকাল রাতে শর্টকার্ট নিয়ে ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম৷ তাই বৃষ্টিকে ঐ অবস্থায় দেখে ওকে রক্ষা করি। ভাগ্য ভালো যে, আমার সাথে আমার আরো কয়েকজন বন্ধুও ছিল। যদি আমরা সময়মত না পৌঁছাতে পারতাম তাহলে..”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আদৃতার গলা শুকিয়ে আসে। ছবি বেগম বলে ওঠেন,”আমি সবাইকে আগেই বলেছিলাম এই মেয়েটা ডেঞ্জারাস, একে বাড়িতে রেখো না। দেখো, মিলল তো আমার কথা? শেষপর্যন্ত কিনা আমার বৃষ্টি দিদিভাইকে মে*রে ফেলতে চাইল এই মেয়ে! একে এক্ষুনি পুলিশে দেও তোমরা। এর দিকে তাকাতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।”
আদৃতা উপায়ন্তর না দেখে নিঝুমের কাছে গিয়ে বলে,”মম, তুমি তো আমায় নিজের মেয়ের মতোই মানুষ করেছ তাইনা? মায়েরা তো নিজেদের মেয়ের সব অন্যায় ক্ষমা করে দেয়। আমি মানছি আমি ভুল করেছি কিন্তু..”
আদৃতা নিজের কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই নিঝুম তার গালে ঠাস করে থা*প্পড় বসিয়ে দেয়৷ আদৃতা হতবাক হয়ে যায়। নিঝুম বলেন,”তুমি যদি আমার নিজের মেয়েও হতে তাহলেও এত বড় অন্যায় করার পর আমি তোমায় ক্ষমা করতাম না। তোমার উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতাম। আর এখনো তাই করব। কেন করলে তুমি এমন আদৃতা? তোমার কেন এত রাগ বৃষ্টির প্রতি? আমরা তো সব সত্যটা জানার পরও তোমাকে নিজেদের মেয়ের মতোই এই বাড়িতে রেখেছিলাম। তুমি তোমার আসল মা-বাবার কাছে ফিরতে চাও নি জন্য আমরাও জোর করিনি। তোমার সব চাহিদা তো আমরা পূরণ করেছি। তাও তুমি এত নিচে নামলে।”
নির্ঝর বলে ওঠে,”তোকে আমি ছোটবেলা থেকে নিজের বোন ভেবেছি আজো তাই ভাবি। কিন্তু তুই যা করেছিস এরপর আর তোকে আপন ভাবা সম্ভব নয়। শেষপর্যন্ত তুই আমার বোনকে মার্ডার করতে চাইলি!”
আদৃতা আবরাজ খানের দিকে তাকায়। আবরাজ কিছু বলছিল না৷ আদৃতা জানে, আবরাজ তাকে অনেক বেশি ভালোবাসে৷ তাই একবার শেষচেষ্টা করতে আবরাজের কাছে গিয়ে বলে,”ড্যাড, তুমি অন্তত কিছু বলো।”
আবরাজ খান বলে ওঠেন,”পুলিশ কোথায় নির্ঝর? ওদের ভেতরে আসতে বলো। এই খু**নি মেয়েটাকে গ্রেফতার করতে বলো। আর নিশ্চিত করতে বলো যেন এর উপযুক্ত শাস্তি হয়।”
“ড্যাড, তুমিও!”
“চুপ করো। আমি তোমার মতো খু*নির মুখে ড্যাড ডাক শুনতে চাই না। আমি শুধু নির্ঝর আর বৃষ্টির বাবা। তুমি কেউ না আমাদের, কেউ না।”
আদৃতা কাঁদতে থাকে। একটু পরই পুলিশ এসে টানতে টানতে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আদৃতা অনেক অনুনয় করেও কোন লাভ পায়না। অবশেষে সে নিজের পাপের জন্য উপযুক্ত শাস্তি পায়। আদৃতাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে আবরাজ খান ভেঙে পড়েন। তিনি সোফায় বসে পড়েন। নিঝুম তার পাশে এসে বসতেই তিনি বলেন,”দোষটা বোধহয় আমারই তাইনা নিঝুম? আমি অতিরিক্ত ভালোবাসা দিয়ে আদৃতার এই অধঃপতন ডেকে এনেছি। হতে পারে আমরা ওকে জন্ম দেইনি কিন্তু দীর্ঘ ২০ টা বছর তো ও আমাদেরই মেয়ে হিসেবে ছিল। আমরা বোধহয় ব্যর্থ নিঝুম।”
ছবি বেগম বলেন,”থাক, এসব নিয়ে আর কষ্ট পেতে হবে না তোমাদের। আল্লাহর লাখ লাখ শুকরিয়া যে বৃষ্টি দিদিভাই একদম ঠিক আছে। নাহ, আমি আর রিস্ক নিতে চাইনা৷ এবার তোমরা যত দ্রুত সম্ভব লন্ডনে ফিরে যাও। এখানে থাকলে না জানি আবার নতুন কোন বিপদ আসে।”
সায়ন বলে ওঠে,”আমাদের ফ্যামিলির সবাই আগামীকাল লন্ডনে ফিরে যাবে আঙ্কেল। আপনারা চাইলে আপনারাও আমাদের সাথে যেতে পারেন একই ফ্ল্যাটে।”
আবরাজ বলে ওঠেন,”বেশ, তাহলে কালই আমি, নিঝুম আর বৃষ্টি লন্ডনে ফিরে যাবো। নির্ঝর তুমি এদিকে সবাইকে সামলে নিও।”
নিঝুম খানও বলেন,”হ্যাঁ, বিশেষ করে আফিফার দিকে নজর রেখো। ওর এই অবস্থায় তোমাকে আরো বেশি দরকার। আমার নাতি-নাতনি যেই আসুক সুস্থভাবে যেন পৃথিবীতে আসে। আমরা আবার ওর ডেলিভারির সময় ছুটি ম্যানেজ করে সিলেটে ফেরার চেষ্টা করব।”
নির্ঝর বলে ওঠে,”তোমরা কোন চিন্তা করো না। আমি সবটা সামলে নেব।”
এদিকে বৃষ্টি কৃতজ্ঞতা ও মুগ্ধতার সাথে সায়নের দিকে তাকায়। মনে করতেই থাকে কিভাবে গতকাল রাতে এই ছেলেটা বীরত্ব দেখিয়ে তাকে বাঁচিয়েছে। একসময় সায়নও তাকায় বৃষ্টির দিকে। দুজনের চোখাচোখি হতেই লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেয় বৃষ্টি। এ যেন নতুন এক শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেই লন্ডন শহরে আবরাজ ও নিঝুমের সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছিল সেই লন্ডন শহরেই হয়তোবা তাদের মেয়ের জীবনেও নতুন মোড় আনতে চলেছে।
আরিশা বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘন্টাই পড়ার টেবিলে সময় কাটাচ্ছে। বইয়ে মুখ গুজে পড়ে আছে একদম। তার পরীক্ষার আর একদম বেশি সময় বাকি নেই। তাই বাইরের পৃথিবীর সাথে তার যোগাযোগ একদম বন্ধ। এভাবে পড়তে পড়তেই কখন যে পড়ার টেবিলে আরিশা ঘুমিয়ে পড়ে সেটা নিজেই বুঝে উঠতে পারে না। রাত্রি তখন ২ টা, হঠাৎ করে এক ছায়ামূর্তি বেলকনি টপকে আরিশার রুমে চলে আসে। আরিশার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে বলে,”মেয়েটা মুখেই যত বড়বড় কথা কিন্তু এখনো ঠিকভাবে নিজের খেয়াল রাখতে শিখলো না।”
বলেই সে এগিয়ে এসে আরিশাকে কোলে তুলে নিলো। অতঃপর আস্তে করে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। আরিশা ঘুমের ঘোরে কিছু টের পেলো না। আরিশার গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে তার কপালে একটা চুমু খেল। অতঃপর বলল,”কোন ব্যাপার না, তোমাকে সামলানোর জন্য আমি আছি তো। তুমি যতই আমাদের সম্পর্কটাকে অস্বীকার করো সেটা তো মিথ্যা হয়ে যাবে না। আমার আর তোমার দূরত্ব আর বেশিদিনের নয়। খুব শীঘ্রই আবার তোমার আর আমার পথ এক হয়ে যাবে। এবার তুমি নিজের ইচ্ছায় এবার আমায় কাছে টেনে নেবে।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৩
বলেই জাঈদ উঠে দাঁড়ায়। আরিশার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে বলে,”তোমার শেষ গন্তব্য আমিই। তুমি যতই আমার থেকে দূরে থাকো শেষ অব্দি তোমার জীবনে শুধু আমিই থাকবো। আমাকে তুমি দূরে ঠেলতে পারবে না আরিশা। অপেক্ষা করো, তোমার পরীক্ষাটা মিটে যাক। তারপরই তোমাকে আমি নিজের করার ব্যবস্থা করছি৷ ততদিন এই লুকোচুরি খেলা চলুক।”