অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৯
ইয়াসমিন খন্দকার
আরুশি আরহামকে সাথে নিয়ে একসাথে দাঁড়িয়ে কিছু সময় কথা বলে। তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ কিছু কথাবার্তা হয়। আরহাম বলে,”বেশ, আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি আছি। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”
“শর্ত? কিসের শর্ত?”
“আমি তোমায় সাহায্য করব কিন্তু তার বিনিময়ে তোমাকেও আমার একটা সাহায্য করতে হবে।”
“বলুন আমায় কি করতে হবে।”
“সেটা সময় হলেই বলব। যখন সাহায্য লাগবে। এখন আপাতত সেটা না বলি। তবে মনে রেখো,যখন আমি সেই সাহায্য চাইব তখন তুমি না করতে পারবে না।”
“বেশ, ঠিকাছে।”
অতঃপর আরহাম আরুশির দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,”ডিল?”
“ডিল।”
অতঃপর দুজনেই একে অপরের হাত ধরে। একটু পরই আরুশি মারিয়ার সাথে একটা কফিশপে দেখা করে বলে,”তুই কোন চিন্তা করিস না। সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এবার রাজীব ভাই আমার পিছু ছাড়তে বাধ্য।”
মারিয়া কিছুটা আশ্বাস পায়। এরমধ্যে হঠাৎ করে রাজীব সেই কফিশপে চলে আসে। সে এসেই আরুশিকে দেখে তার দিকে এগিয়ে আসে। আরুশির ঠিক মুখোমুখি একটি চেয়ারে বসে পড়ে। এমন সময় আরুশি উঠতে নিলে রাজীব বলে,”প্লিজ, আরু। উঠিও না। তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
“কিন্তু আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই। আচ্ছা আপনি কি ছোট বাচ্চা নাকি? কিছু বোঝেন না। তখন তো আমি আপনাকে স্পষ্ট করে দিলাম যে আপনার প্রতি আমার কোন অনুভূতি নেই,আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি৷ তাহলে আমার পিছু নিচ্ছেন কেন? আপনার কি কোন আত্মসম্মান নেই?”
“আরু..বিভেব ইউর সেলফ। আমি তোমার সিনিয়র এটা ভুলে যেও না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“সিনিয়র তো সিনিয়রের মতোই থাকুন। আমার ব্যক্তিগত জীবনে এত ইন্টারফেয়ারেন্স করবেন না। আমি এখানে আমার ফ্রেন্ডের সাথে একান্তে সময় কাটাচ্ছিলাম আর আপনি এখানে চলে এসেছেন আমায় বিরক্ত করতে। আপনি বোঝেন না, মেয়েদের না মানে না। তবুও কেন পিছনে পড়ে আছেন।”
“কারণ আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছ৷ তোমার সাথে কারো কোন রিলেশন নেই৷ আমি শুধু এটাই বুঝতে পারছি না তুমি আমায় মিথ্যা বলে আমার সাথে অভিনয় কেন করছ।”
“আমি মিথ্যা বলছি না, আমি সত্যি একজনের সাথে সম্পর্কে আছি।”
“তাহলে কোথায় তোমার সেই প্রেমিক? তাকে আমার সামনে আসতে বলো।”
আরুশি চুপ হয়ে যায়। রাজীব বাকা হেসে বলে,”এখন কেন কিছু বলছ না? তার মানে তোমার লাইফে কেউ নেই৷”
“আছে।”
“তাহলে কোথায় সে?”
“আমি এখানে…”
হঠাৎ একটি পুরুষ কন্ঠস্বর শুনে রাজীব হতবাক হয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। পিছনে ফিরে তাকিয়ে আরহামকে দেখে যেন তার হতবাক হওয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সে বলে ওঠে,”আরহাম, তুমি? এটা কিভাবে সম্ভব?”
আরুশি বলে,”এটাই সত্যি। আমি আর আরহাম আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।”
“তোমরা নিশ্চয়ই আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছ। তোমরা তো একে অপরকে সহ্যই করতে পারো না। তোমাদের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক। তোমরা কিভাবে রিলেশনে থাকতে পারো?”
আরহাম আরুশির পাশে এসে দাঁড়িয়ে তার কাধে হাত রেখে আরুশিকে একদম কাছে টেনে নিয়ে বলে,”এটাই সত্যি। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। কিন্তু আমাদের এই ভালোবাসা আমরা লুকিয়ে রেখেছিলাম। তাই সবার সামনে এমন শত্রু শত্রু ভাব নিয়ে থাকতাম৷ কিন্তু আসলে আমাদের মধ্যে অনেক সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে৷ হয়তো আজও ব্যাপারটা সামনে আনতাম না কিন্তু আপনি এমনভাবে আরুশির পেছনে পড়ে গেছেন যে..আনতে বাধ্য হলাম।”
রাজীব বলে,”আমার তোমাদের কোন কথাই বিশ্বাস হয় না। আরু, আমি এত সহজে তোমার পিছু ছাড়ছি না। আগে আমাকে নিশ্চিত হতে হবে যে তুমি সত্যিই আরহামের সাথে সম্পর্কে আছ তারপর আমি তোমার পিছু ছাড়ব।”
বলেই রাজীব বেরিয়ে যায়। রাজীব বেরিয়ে যেতেই আরহাম বিরক্ত স্বরে বলে,”এই ছেলেটা এমন কেন? এত কিছুর পরও ওর বিশ্বাস হলো না।”
আরুশি মারিয়ার দিকে তাকিয়ে তার অসহায় মুখ দেখে বলল,”তুই চিন্তা করিস না মারিয়া। আমি ঠিকই ওনাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করবো যে আমি আর মিস্টার আরহাম রিলেশনে আছি।”
“এভাবে মুখের কথায় কিছু হবে না আরু। তুই যদি সত্যি রাজীব ভাইয়ের সামনে প্রমাণ করতে চাস যে তুই আরহাম ভাইয়ের সাথে রিলেশনে আছিস তাহলে তোকে অন্য কিছু কি করতে হবে।”
“কি করতে হবে?”
“ব্লাইন্ড ডেইট।”
“মানে?”
“তোরা তো মিথ্যা অভিনয় করছিসই তাহলে একটু মিথ্যা রোম্যান্সও কর। তারপর তোদের সেইসব রোম্যান্টিক মুহুর্তের ছবি রাজীব ভাইকে দেখা। তাহলে উনি আর অবিশ্বাস করতে পারবে না।”
“এসব তুই কি বলছিস মারিয়া। এটা অসম্ভব।”
মারিয়া আরুশির হাত শক্ত করে ধরে বলে,”প্লিজ আরু..তুই না করিস না..আমাদের বন্ধুত্বের দোহাই লাগে। রাজীব ভাইয়ের থেকে তোকে দূরে করার যে এছাড়া আর কোন উপায় নেই।”
“তুই বুঝতে পারছিস না মারিয়া, মিস্টার আরহামের সাথে ওনার ফুফাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। এখন যদি আমি ওনার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াই তো..এটা নিয়ে পরে অনেক সমস্যা হতে পারে।”
“কোন সমস্যা হবে না। ব্যাপারটা শুধু আমাদের মাঝেই থাকবে। তুই রাজি হয়ে যা প্লিজ। তুই যদি রাজি না হস, আর আমি যদি রাজীব ভাইকে না পাই তাহলে কিন্তু আমি নিজেকে শেষ করে দেব।”
“মারিয়া? কেন এমন পাগলামি করছিস তুই? আর তাছাড়া মিস্টার আরহামেরও তো এতে আপত্তি থাকতে পারে বোঝার চেষ্টা কর।”
আরহাম হঠাৎ বলে ওঠে,”আমার কোন আপত্তি নেই।”
মারিয়া হেসে বলে,”দেখলি তো, ভাইয়ার কোন আপত্তি নেই৷ এবার তুইও আর না করিস না প্লিজ।”
অগত্যা আরুশিকে রাজি হতেই হয়।
একটি লেকের ধারে একত্রে বসে আছে আরহাম ও আরুশি। মারিয়া দূরে দাঁড়িয়ে একটা ক্যামেরা দিয়ে তাদের কিছু ছবি তুলে দিচ্ছে। আরহাম ও আরুশি দুজনেই এসব ছবি তুলতে গিয়ে ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছিল৷
আরুশি একসময় বলে,”হয়েছে তোর? আর কত ছবি তুলবি?”
মারিয়া বলে,”ওয়েট, এই ছবিগুলোতে কিছু একটা মিসিং আছে। তোদের মধ্যে কোন কেমিস্ট্রিই বোঝা যাচ্ছে না। আরু একটা কাজ কর, তুই আরহাম ভাইয়ের কাধে মাথা রেখে একটা ছবি তোল।”
“কি?”
“প্লিজ।”
আরুশি আরহামের দিকে তাকায়। আরহাম সম্মতি দেয়। তখন আরুশি আরহামের কাধে মাথা রাখে। এতে করে দুজনেরই হৃদস্পন্দন যেন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ছবি তোলা হতেই আরুশি বলে ওঠে,”হয়েছে তোর..আমি আর পারব না।”
“হয়েছে কিন্তু..আমার মনে হয় তুই যদি এখন আরহাম ভাইয়ের কোলের উপর মাথা দিয়ে কয়েকটা ছবি তুলিস তাহলে রাজীব ভাই আর কিছুতেই বিশ্বাস না করে পারবে না।”
আরুশি সহসা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”না, যথেষ্ট হয়েছে। আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়।”
এমন সময় আরহাম আরুশির হাত টেনে ধরে বলে,”তোমার বান্ধবীর তোমার সাহায্যের দরকার। তাহলে এভাবে না করছ কেন?”
“এসব আপনি কি বলছেন?”
“তোমার মনে আছে আরুশি, আমি তোমায় শর্ত দিয়েছিলাম আমার একটা কথা তুমি রাখবে। নাও, সেই শর্তটা রাখো মারিয়া যা বলছে তাই করো…”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৮
আরহাম নিজেও বুঝতে পারছিল না সে কেন এমন বলছে কিন্তু আরুশির সঙ্গ তার ভীষণ ভালো লাগছে। আরহাম ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে পড়ছে৷ তার ইচ্ছা করছে আরুশিকে জড়িয়ে বুকে রাখতে। আরুশি ভীষণ ছটফট বোধ করে। আরহাম নিজেই আরুশিকে কাছে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মারিয়া সেই সমস্ত ছবি তোলে।দুজেনেই যে ঘোরে হারিয়ে যায়। এরপর হঠাৎই আরুশির হুশ ফিরলে সে আরহামকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। আরহাম অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে। এদিকে মারিয়া বলে,”কাজ ডান। এবার রাজীব ভাই বিশ্বাস করতে বাধ্য।”