আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৮

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৮
অরাত্রিকা রহমান

এমন সময় হঠাৎ রায়ানের ফোন টা বেজে উঠে। মাহির কল দিয়েছে। সাধারণত মাহিরের কল দেখলে সে বিরক্ত হয়। কারণ, কল ধরামাত্রই ও শুরু করে ঠাট্টা-মশকরা, নিত্যদিনের অকারণ বকবক। রায়ানও মজা করে গালি দেয়, খেপায়, কিন্তু গভীরভাবে ওদের সম্পর্কটা ছিল একেবারে দুষ্টু-মিষ্টি।
কিন্তু আজ পরিস্থিতি অন্য। রায়ানের মনে যেন এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল। মনে মনে সে বেশ খুশিই হলো যেন এই যাত্রায় পার হয়ে যাওয়ার ওযুহাত সে পেয়েই গেছে।
রায়ান নিজের মনগড়া কাহিনী তৈরি বাদ দিয়ে সাথে সাথে খাবার টেবিল থেকে ফোন টা হাতে নেয়। ফোনটা হাতে নিয়ে অযথা এক রকম ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে-

“ওহ সিট! আমি তো ভুলেই গেছিলাম আজ আমার মাহিরের সাথে সাইটে যাওয়ার কথা ছিল আম্মু। আই এম অলরেডি লেট। আই হেভ টু গো । বাই বাই।”
এক নিঃশ্বাসে রায়ান নিজের কথা গুলো বলে একবার মিরায়ার দিকে তাকায়। মিরায়া ঠিক রায়ানের চোখেই তাকিয়ে আছে বিস্মিত হয়ে, যেন সে চোখ দুটোতে কিছু খুঁজছে। রায়ান মিরায়ার তেমন ঘোরাল দৃষ্টি নিতে না পেরে চোখটা একটু সরিয়ে নিয়ে কানে ফোন ধরে মিরায়ার গা ঘেঁষে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল সিঁড়ি বেয়ে উপরে ।
মিরায়া আর রামিলা চৌধুরী যেন কিছু বুঝে উঠার আগেই পরিবেশটা শান্ত হয়ে গেল। দুজনই হতবাক হয়ে রায়ানের উপরে উঠে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে থাকে।
রায়ান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হ্যালো দোস্ত? আমি আসছি একটু ওয়েট কর।”
মাহির ফোনের অপর পাশ থেকে রায়ানের অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনে রায়ানের উদ্দেশ্যে বলে-
“কোথায় ওয়েট করব? তুই তো কিছু বলিস নি ভাই। আমি তো বাসায় আমার রুমে।”
ফোনটা হাতে নিয়ে রায়ান দ্রুত গতিতে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করল, তখনো তার বুকের ভেতর কেমন একটা অস্থিরতা।

ফোনটা কানে নিয়েই রায়ান হঠাৎ উচ্ছসিত হয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল—
“দোস্ত তুই শুধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড না রে আমার ভাই । ভাই ও না আমার জান কলিজা- উম্মাহহ।”
মাহির রায়ানের কথায় চোখ ছোট করে একবার কান থেকে ফোনটা সরিয়ে চোখের সামনে এনে দেখে নিল সে রায়ানের সাথেই কথা বলছে কি না। পর মুহূর্তেই আবার ফোন কানে ধরে বলে –
“দেখ দোস্ত আমি স্রেইট, আমার মেয়ে মানুষ ভালো লাগে। আমি তোকে শুধুই বন্ধু ভাবি আমার নিজের ভাইয়ের মতো । তুই যেমন ভাবছিল আমি ওই রকম না আসলে। এই কারণেই তোর ভাবিকে সহ্য হয় না আগে বলতি একটা ভালো ছেলেই খুঁজে দিতাম ঐ ধরনের।”
রায়ান ফোনটা কানে নিয়ে হেসে বলে উঠল—

—“এই যে হলো আবল-তাবল বকা! আচ্ছা থাক আজ আর কিছু বলব না তোকে। ভাই, এতদিনে কাজের মতো একটা কাজ করলি। একদম সময়মতো একটা কল দিলি, জানিস? উফ্ কি টাইমিং!”
ওপাশ থেকে মাহির হেসে উঠল,
—“বাব বাহ্! আমি? যার টাইমিং এত খারাপ তার দ্বারাও পারফেক্ট টাইমিং সম্ভব হলো?”
রায়ান হেসে বলল—
—“ভাই, তুই আমার লাইফ সেভার। আরও পাঁচ মিনিট দেরি করলে আমার কপাল থেকে সুখ, শান্তি, বউ সব একসাথে একটা সাইনের মাধ্যমে বিদায় নিত। তোর এক ফোনে আমি বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেলাম।”
রায়ান সুখ, শান্তি বলার পরে বউ শব্দ টা কেন জানি আনমনে বলল যাতে সেটা শ্রবণ যোগ্য না হয়।
মাহির মজা করে বলল—
—“এতো খুশি শোনাচ্ছিস কেন? কারণ টা তো বলবি? লাইফ সেভার হলাম কিছু না জেনেই ।”
রায়ান- “অনেক জটিল কারণ দেখা হলে সব তোকে বলব।”
মাহির- “ওকে, দেখা হচ্ছে পরে তাহলে। আচ্ছা যেটা বলতে কল দিয়েছিলাম একটা বাইক রেস হবে খুব শীঘ্রই। আমি তো আছিই। তবে দেশে তোর কখনো বাইক রেস করা হয়নি। তুই অংশ নিতে চাইলে আমাকে বলিস কেমন?”
রায়ান- “বাইক রাইডিং আমার ইমোশন । ‘না’ বলার মানেই হয় না । তবে এখনকার পরিস্থিতি সামলে পরে জানাচ্ছি তোকে। বাই।”

মাহির- “ওকে ব্রো, বাই।”
কথা শেষে ফোনটা রেখ, তখন তার বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক শব্দ হচ্ছিল। টেবিলের ওপর রাখা ডিভোর্স পেপারটা সে শক্ত করে ধরে আছে। চোখে ভাসছে সেই বৃষ্টিভেজা মেয়েটি—যে আসলে তার স্ত্রী।
নিজের মনে সে ফিসফিস করে বলল—
—“না, আমি মিরাকে, আমার হৃদপাখিকে ছেড়ে দিতে পারব না। দশ বছর আগে হয়তো এই বিয়ে আমার কাছে অন্যায় ছিল। কিন্তু এখন… এখন এটা আমার ভাগ্য।”
রায়ান নিঃশব্দে টেবিলের ওপর হাত রেখে ভাবতে লাগল—
“আমি যার প্রেমে পড়েছি প্রথম দেখায়, যার ভেজা চোখ, ভেজা ঠোঁট আমাকে পাগল করে দিয়েছিল… সেই মেয়েটি আমার স্ত্রী। আমি তাকে ছেড়ে দেব? অসম্ভব! মৃত্যু পর্যন্তও নয়। তার শরীরের প্রতিটি বাঁক, তার মায়াবী হাসি, তার নিষ্পাপ চোখ আমাকে অস্থির করে তুলেছে। কি অসহ্যকর মোহ তার প্রতি! আমি তাকে চাই… শুধু আমার জন্য। সে আমার হয়ে গেছে।”
রায়ানের বুকের ভেতরে এখন হাজারো ঝড়।

এদিকে নিচতলার লিভিং রুমে বসে আছে মিরায়া আর রামিলা চৌধুরী। দুজনেই স্তব্ধ হয়ে আছে । রায়ানের হঠাৎ আচরণে অবাক তারা। ডিভোর্সের পেপার চাইছিল, আবার এক মুহূর্তে ছিনিয়ে নিয়ে গেল!
রামিলা চৌধুরী কিছু বলার মতো না শব্দ খুঁজে পেলেন না আর না সুযোগ পেলেন।
আর মিরায়া—সে তো এখনো জানেই না আসলে কী ঘটছে। সে জানে না তার বাল্যবিবাহের গল্প, জানে না রায়ান তারই স্বামী।
এতদিনে প্রথমবার, নিজের চোখে আমেরিকা ফেরত রায়ানকে দেখল। সে যখন সিঁড়ি বেয়ে নামছিল, মুহূর্তে পুরো বাড়িটার পরিবেশ যেন পাল্টে গিয়েছিল।
মিরায়ার দৃষ্টি আটকে গিয়েছিল একেবারে উপরের দিক থেকেই। রায়ানের উচ্চতা যেন ভয় ধরানো আবার মুগ্ধতাও জাগানো। চারপাশে দাঁড়ানো মানুষদের থেকে মাথা উঁচু করে থাকা এই ছেলেটা যেন অন্য এক জগৎ থেকে নেমে এসেছে।

তারপর চোখ গেল শরীরের গঠনে।
ঢিলা শার্টের ভেতর থেকেও বোঝা যাচ্ছিল ফিটনেসের ছাপ—প্রশস্ত কাঁধ, সোজা বুক, আর হাতের মাংসপেশি। হাঁটার সময় শার্ট হালকা নড়ে গিয়ে তার সিক্সপ্যাকের আভাস যেন চোখে লাগল।
আজ সকালে প্রথমবারের মতো রায়ানকে চোখের সামনে দেখেছে মিরায়া। আমেরিকা ফেরত এই যুবক, উচ্চতায় লম্বা, শরীরের গঠন মুগ্ধ করার মতো—একেবারে যেন সিনেমার নায়ক।
মিরার বুকের ভেতরে হঠাৎ অদ্ভুত কাঁপুনি। সে নিজেকে সামলাতে পারছিল না। মিরার বুকের ভেতর হঠাৎ কেমন অস্থিরতা তৈরি হলো রায়ানের কথা ভাবতেই। সে নিজেকে সামলাতে না পেরে মনে মনে ফিসফিস করে বলল—
“আল্লাহ? ছেলেরা কি শুধু লম্বা-চওড়া হলেই হয় না, না কি কারও মুখও এমন আকর্ষণীয় হতে পারে? এমনও হতে পারে? ছেলে মানুষও কি এত সুন্দর হয়? এত পরিপূর্ণ? শুধু উচ্চতা আর শরীরের গঠনই নয়, তার চোয়ালের ধার, চোখের গভীরতা, হাঁটার ভঙ্গি—সবকিছুতেই এক অন্যরকম আকর্ষণ। মানুষটা যেন জন্মেছে তাক লাগানোর জন্য। ছেলেমানুষ কেউ কি এত সুন্দর হতে হয়?”

তার চোখ আটকে রয়েছিল রায়ানের চোয়ালের ধারালো লাইন, যেটা হাসার সময় আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। গলায় সুস্পষ্ট অ্যাডামস এ্যাপেল এর উপস্থিতি যেন নজর কেড়ে নিতে যথেষ্ট। আবার তার হাঁটার ভঙ্গি, যেন আত্মবিশ্বাসে মোড়ানো—প্রতিটি পদক্ষেপ বলে দিচ্ছে, “আমি ভিড়ের সাধারণ মানুষ নই।”
সে দৃশ্য মনে পরতেই মিরায়ার মনে হচ্ছিল, সে যেন নিজের অজান্তেই কোনো অদ্ভুত মোহে জড়িয়ে যাচ্ছে। শরীর গরম হয়ে উঠছে, বুক ধুকপুক করছে। তার ভেতর জন্ম নিচ্ছে প্রথম এক অজানা অনুভূতি।
মিরায়ার হৃদয়ে তখন অজান্তেই বেজে উঠছিল অন্যরকম ছন্দে।
সে নিজের অজান্তেই রায়ানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, অথচ জানেই না—যে মানুষকে সে প্রথম দেখাতেই তার নজর করেছে, সেই মানুষ তার স্বামী!

অন্যদিকে রায়ানও নিজের ভেতর নতুন অনুভূতির আবিষ্কার নিয়ে পাগল হয়ে উঠছে। এতদিন যাকে শুধু কাগজে-কলমে স্ত্রী ভেবেছিল, যাকে কখনো দেখেনি—আজ হঠাৎ জানতে পারল তার প্রথম দেখাতেই মনে গেঁথে যাওয়া অপরুপা- সেই বৃষ্টিভেজা মেয়েটিই আসলে তার বউ!
মুহূর্তে রায়ানের ভেতর আনন্দ, উত্তেজনা আর নেশা মিলে এমন কাণ্ড ঘটল যে সে নিজেই নিজের ওপর হাসতে লাগল।
সে নিজের মনে বলল—

“আহা! কী লাকি আমি! মানুষজন লটারিতে কোটি টাকা জিতে খুশি হয়, আর আমি জিতেছি নিজের স্ত্রীকে! যে মেয়ে প্রথম দেখাতেই বুক কাঁপিয়ে দিল, সে আবার আমার বৈধ বউ! আইনকানুনও আমার পক্ষে আছে। বাহ! হে আল্লাহ! সব না চাইতেই দিয়েছ এবার বউটাকে পটিয়ে দিয়ো।”
সে আবার নিজেকে নিয়েই মজা করে কল্পনা করতে লাগল—
“এখন যদি কাউকে বলি যে আমি নিজের বউয়ের প্রেমে পড়েছি, তারা হাসবে। কিন্তু কী করব? মেয়েটা যখন হাসে তখন আমার মনে হয়, ওর হাসি দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়—ঢাকা শহরের সব লোডশেডিং চলে যাক। আর তার চোখের দিকে তাকালে মনে হয় আমি যেন হাইওয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি, গাড়ি আসছে, তবুও সরতে পারছি না—শুধু তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে করে। উফ্! তবে আমার বউ আমাকে ভাইয়া কেন বলল? না নিজের মেইল ইগোর কারণে এত বছর এই সুন্দরী বউ ছাড়া থেকেছি আর পসিবল না।”
নিজের রুমে নিজের ১৭ বছরের ছবি দেখে বলে উঠলো-

“খুব শখ ছিল না আমেরিকায় যাওয়ার? এত কিসের কুরকুরানি ছিল হ্যাঁ ? তোর জন্য আজকে আমি বউ ছাড়া । শালা বেশি বেশি বুঝে- আরে বাপ-মা যা করে ভালোর জন্যই করে এইটা মেনে নিলে কি এমন হতো?”
“ওই দিন ইগো দেখিয়ে আমেরিকায় না গেলে এতদিনে বউকে ধরা, ছোঁয়া, খাওয়া, বাচ্চা সব হয়ে যেতো। ধুর ছাই! বালের জীবন‌। But now, no ego only desperation for my wife is permanent. ইগো গেলে চলে বউ আসবে কুলে।”
সে একেবারে নেশাগ্রস্তের মতো ফিসফিস করে বলল—
“না, আমি তাকে ছেড়ে দেব না। মৃত্যু পর্যন্ত নয়। ও আমার আসক্তি হয়ে গেছে। শরীরের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি ছায়া, প্রতিটি দৃষ্টি—সবকিছু আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।”
তার বুকের ভেতর যেন ঝড় বয়ে গেল। অথচ বাইরের দুনিয়া কিছুই জানে না।
রায়ান ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে যায় বের হবে বলে। তার কম্পানির সাইটে কিছু কাজ আছে।

মিরায়া তার ভাবনার ঘোরটা একদম সিনেমার মতোই চলছিল, হঠাৎ মিঁয়াওঁ করে একটা শব্দে সব ভেঙে গেল।
নীচের দিক থেকে দৌড়ে এসে তার সামনে থেমে গেল তার মেয়ে—জুলিয়েট।
জুলিয়েট এসে মিরার পায়ের সামনে বসে পড়ল, লেজ নাড়তে নাড়তে মিউ মিউ করে তাকিয়ে রইল।
মিরা নিচু হয়ে আদর করে বিড়ালটাকে কোলে নিল। চোখ ভরে গেল একধরনের প্রশান্তিতে।
সে হাসতে হাসতে বলল—

—“আরে জুলিয়েট, তুই না এলে তো আমি একেবারে অন্য জগতে চলে যাচ্ছিলাম।”
বিড়ালটা মিউ মিউ করে যেন উত্তর দিল,
“আমি না থাকলে তো তুই একেবারে প্রেমের কুয়ায় ডুবে যেতি।”
মিরায়া হেসে উঠল। জুলিয়েটকে কোলে নিয়ে তার মনটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলো। রায়ানের প্রতি যে অদ্ভুত টান সে কয়েক মিনিট আগেই অনুভব করছিল, সেটা যেন সাময়িকভাবে ম্লান হয়ে গেল।
ঠিক তখনই রামেলা চৌধুরী কোমল কণ্ঠে ডাকলেন—
—“মিরা, অনেকক্ষণ হলো। এসে, নাস্তা করে নে।”
মিরা বিড়ালটাকে নামিয়ে দিয়ে রামেলার দিকে তাকাল।

—“জী, মামণি।”
সে উঠে দাঁড়াল। চোখে আর কোনো দ্বিধা নেই, যেন সবকিছু আবার আগের মতো স্বাভাবিক।
রামেলা চৌধুরী মৃদু হেসে বললেন—
—“তুমি তো এখন ঢাকায় একা থাকবে পড়াশোনার জন্য। নিজের খেয়াল রাখতে হবে কিন্তু।”
মিরা হেসে মাথা নাড়িয়ে নাস্তার টেবিলে এসে বসে নাস্তা খেতে থাকল। নাস্তা খেতে খেতে সে রামেলা চৌধুরীর সাথে হালকা কথাবার্তা শুরু করল—
কলেজ লাইফ, পড়াশোনার প্ল্যান, ঢাকায় থাকা-খাওয়া নিয়ে।
সবকিছুই যেন একেবারে স্বাভাবিক।
এমন সময় রায়ান কালো শার্ট কালো পেন্ট এর সাথে এন করে পড়ে হাসতো কালো কোর্ট টা নিয়ে নিচে নামতে নামতে বলে-

“আম্মু আমি একটু সাইটের দিকে যাব কিছু কাজ আছে আমার।”
নিজের মার দিকে তাকাতেই নাস্তা শেষ করে উঠা মিরায়ার দিকে নজর গেল। মিরায়া ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বলল-
“মামনি তবে আমিও যাই । তাড়াতাড়ি চলে আসবো ভর্তির কাজ শেষ করে। টাটা।”
রামিলা চৌধুরী মিরায়ার উদ্দেশ্যে বলে- “একটু দাড়া মা।”
এবং পরবর্তীতে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলেন-
“রায়ান যাওয়ার পথে মিরায়াকে একটু ওর ক্যাম্পাস নামিয়ে দিয়ে যাস একই রাস্তা তো । তাহলে আর কি টেনশন হতো না ।”
মায়ের কথায় রায়ান বেশ খুশিই হলো যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। সে তো এটাই চাইছিল তার বউ এর সাথে একটু একা সময়। তবে রায়ান মায়ের কথায় সম্মতি দেওয়ার আগেই মিরায়া রায়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা না সূচক নাড়িয়ে বলল-

“না না মামণি, রায়ান ভাইয়া তো কাজে যাচ্ছে। আমাকে পৌঁছে দিতে গেলে দেরি হয়ে যাবে । হি ইজ অলরেডি লেট।”
রায়ানের মুখটা তৎক্ষণাৎ বেজার হয়ে গেল মনে মনে বলল-
“আসলে বেডি মানুষ যে বেশি বুঝে আমার বউ তার জলজেন্ত প্রমাণ ।”
মনে কথা মনে রেখে রায়ান ব্যস্ত কন্ঠে বলল-
– “আম্মু আমার দেরি হচ্ছে কাকে কোথায় পৌঁছাতে হবে তাড়াতাড়ি ডিসাইড কর। আই কান্ট ওয়েট।”
” আই কান্ট ওয়েট টু শেয়ার মাই কার উইথ মাই লাভলি ওয়াইফ। বেইব প্লিজ ছে ইয়েস। প্লিজ প্লিজ।” (বিরতির করল)।

রামিলা চৌধুরী – “মিরা মা ঢাকার রাস্তায় তোকে একা ছাড়তে মন চাইছে না।”
রায়ান বিরবির করে সম্মতি দিল মনে মনে- “আমার ও মন চাইছে না আম্মু আমার বউকে একা ছাড়তে।”
রামিলা চৌধুরী- ” তুই যদি রায়ানের সাথে যাস তাহলে আমার একটু শান্তি লাগবে।”
রায়ান আবার একই ভাবে – “আমার ও শান্তি লাগবে এতে আম্মু।”
মিরায়া রামিলা চৌধুরীর কথায় আর অমত করলো না ।সে রাজি হলো রায়ানের সাথে যেতে। রায়ান ও আকাশ সমান খুশি আজ প্রথমবার নিজের স্ত্রীকে নিয়ে বের হবে। বউকে ভার্সিটিতে ভর্তি করতে নিয়ে যাচ্ছে কেমন যেন অভিভাবক অভিভাবক একটা অনুভুতি হচ্ছিল রায়ানের।

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৭ (২)

রায়ান আদর্শ স্বামীর ন্যায় তার বউয়ের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটাতে তার সাথে তার সঙ্গ দেবে। কথাটা ভেবেই রায়ান মনে মনে বেশ খুশি।
আর অন্যদিকে মিরায়া রায়ানের সাথে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তিত ছিল কারণ এমন অদ্ভুত মোহ তার কখনো কোনো কিছুর প্রতি হয়নি।
এর পর মিরায়া রায়ানের পিছনে পিছনে বার হয়ে যায় বাড়ি থেকে পার্কিং এর দিকে।

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here