আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৯

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৯
অরাত্রিকা রহমান

এরপর মিরায়া রায়ানের পিছনে পিছনে বার হয়ে যায় বাড়ি থেকে।
সকালটা ছিল একেবারে অন্যরকম। হালকা রোদ উঠেছে, কিন্তু রোদের মধ্যে যেন একরকম সোনালি কোমলতা ছড়িয়ে আছে। গাছের পাতাগুলো হালকা বাতাসে দুলছে, ভেজা মাটির গন্ধে ভরে গেছে চারপাশ। শহরের কোলাহল এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি—তাই চৌধুরী মেনশনের আঙিনাটা যেন আরও শান্ত, আরও সুন্দর লাগছিল।
রায়ান গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে পার্কিং লটে এগিয়ে গেল। গাড়িটা যেন সকালবেলার আলোয় ঝলমল করছে। সে ইঞ্জিন স্টার্ট দিল, গাড়ির হালকা শব্দ চারদিকের নীরবতা ভেঙে দিল।

ঠিক তখনই মিরায়াও বের হলো। হাতে ব্যাগ, মুখে সকালবেলার সতেজতা। তবে চোখে মুখে হালকা একরকম অস্থিরতা কাজ করছে—আজ তার ঢাবিতে ভর্তি হতে যাওয়ার দিন। সে চুপচাপ রায়ানের পেছন পেছন হাঁটলো, কিন্তু রায়ানকে ডাকলো না। গিয়ে মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।
রায়ান গাড়ি নিয়ে আস্তে আস্তে মেনশনের গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। গাড়িটা মিরায়ার একেবারে সামনে থামাল। ভেতরে বসা রায়ান এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো মিরায়ার দিকে, চোখে একরকম অদ্ভুত তৃপ্তি ঝিলিক খেল। তার শখের নারীর সাথে প্রথমবার বের হচ্ছে বলে কথা। তারপর গাড়ি থেকে নেমে এলো।
সে একেবারে হেঁটে গিয়ে গাড়ির সামনের সিটের দরজাটা নিজে হাতে খুলে দিল। একটু দুষ্টু ভঙ্গিতে বলল—
— “এই যে মিস ঢাবি, এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন, ম্যাডাম? এই সিটটা আপনার জন্যই রিজার্ভড।”
কিন্তু এর আগেই মিরায়া যেন দ্রুততা দেখিয়ে পিছনের সিটের দরজা খুলতে চেষ্টা করছিল। যেন কোনভাবেই রায়ানের পাশেই বসতে হবে এমনটা না হয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রায়ান ঠোঁটে চাপা এক চিলতে হাসি আনল। তার চোখে-মুখে ফুটে উঠলো অদ্ভুত মজা—যেন বুঝে ফেলেছে, মেয়েটা যতই নিজেকে দূরে রাখতে চাক, সে শেষমেষ তার কাছেই এসে ধরা পড়বে।
রায়ান গাড়ির দরজা খুলে এক চিলতে হাসি দিল,
— “ও হ্যালো! কী করছো? আমি দরজা খুলে দিয়েছি দেখছো না বুঝি। পিছনের সিটের দরজা কেন টানছো?”
মিরায়া একটু অপ্রস্তুত মুখে জবাব দিল, গলাটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে—
— “না মানে… আমি সামনে আপনার সাথে বসবো? আপনার সমস্যা হবে হয়তো তাই…। আপনার এত কষ্ট করার দরকার নেই।”
রায়ান চোখ কুঁচকে মজার ও সম্ভবত একটু গম্ভীরতার ভঙ্গিতে তাকাল।

— “ওহ! তাই নাকি? তুমি কি আমায় ড্রাইভার ভেবেছো নাকি? মানে তুমি পিছনের সিটে বসবে আর আমি হ্যান্ডসাম ড্রাইভারের মতো সামনে বসে তোমায় নামিয়ে দিব? বাহ্, বেশ আইডিয়া। এই মেয়ে, এত বেশি বুঝো কেন? আমি তোমাকে বলেছি আমার সমস্যা হবে ?”
মিরায়া হালকা বিরক্ত হয়ে ঠোঁট কামড়ালো।
— “না ভাইয়া ।?”
মিরায়া এবার একদম চুপ হয়ে গেল। জবাব দিতে চাইলেও কিছু বলতে পারলো না। বাধ্য হয়ে ধীরে ধীরে সামনের সিটের দিকে এগিয়ে গেল।
রায়ান আবার বউয়ের মুখে ভাইয়া শুনে রাগে তেতে উঠল।

রায়ান দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মিরায়া যখন সামনের সিটে বসে এমন সময় রাগে তার দুই হাত মিরায়ার দুই দিকে দিয়ে পালানোর পথ বন্ধ করে খুব জোরে শব্দ করে বলল,
“ওই কোন জন্মের ভাই লাগি তোর হ্যাঁ? আমার বাবা মা আর তোর বাবা মা কি এক যে ভাই ডাকছিস আমাকে? আর একবার ভাই বললে..।”
রায়ান নিজের কথা শেষ করল না। অপর দিকে মিরায়া সম্পূর্ণ অবাক যে রায়ান ভাইয়া বলাতে তাকে তুই করে সম্বোধন করল। তবে সে তো রায়ানের ছোট রুদ্র ও তো তাকে তুইই বলে তাই ওই দিকে আর মনোযোগ না দিয়ে রায়ানের প্রশ্নের উত্তর দেয় –
“তা সত্য। তবে ভাইয়া আমি তো আপনার ছোট আর রুদ্র ভাইয়াকে ও আমি ভাইয়া বলি আপনি তার বড় ভাই তাই আপনাকে ও ভাইয়া বলেছি।”
রায়ান একটু গলা উঁচিয়ে বলল-

“দুনিয়ার সব তোর ভাই একমাত্র আমি ছাড়া বুঝেছিস? আমাকে আর ভাইয়া ডাকবি না। চাইলে অন্য কিছু ডাকবি।”
মিরায়ার তখন তার অজান্তেই শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি পেল প্রথমবারের মতো কোন পুরুষ এত কাছে এসেছে তাও এত সুদর্শন। মিরায়া দৃঢ় চেতা হয়ে নিজেকে সামলে মৃদু আওয়াজ যে মাথা নিচু করে বলল-
মিরায়া- “ভাইয়া কেন ডাকা যাবে না রায়ান ভাইয়া? আর অন্যকিছুই বা আমি কি ডাকবো আপনাকে?‌”
রায়ান মিরায়ার মুখের দিকে একটু ঝুঁকে ঠোঁটে রহস্যময় হাসি নিয়ে বলল-
“শোন আমার হৃদপাখি, আমার ‘ভাই’ শব্দতে এলার্জি আছে তাই ভাইয়া ডাক নিতে পারছি না। আর খুব অস্বাভাবিক ভাবে আমার এই এলার্জি টা কেবল তোমার ক্ষেত্রেই কাজ করছে।”
রায়ান কিছু সময় নিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে ভেবে আবার বলল-

“আআমম্! এক কাজ করো হৃদপাখি তুমি বরং আমাকে ‘ভাইজান’ বলে ডাকো, যেহেতু তোমার ভাই ডাকার খুব ইচ্ছে। তবে ওই যে বললাম আমার এলার্জি আছে, তাই ভাই বাদে শুধু ‘জান’ ডাকতে পারো।”
মিরায়া এবার যেন আশ্চর্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেল মনে মনে ভাবলো- রায়ান কি তার সাথে মজা করছে না সিরিয়াসলি ফ্লার্ট করছে। সে বড় বড় চোখ করে রায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুই বলতে পারল না। মুখে যে সব শব্দরা চুপ হয়ে গেছে। তার সামান্য লজ্জা ও করছে যার কারণে শুভ্র সাদা গাল দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।
রায়ান মিরায়াকে এমন অস্বস্তিকর ভাবে লজ্জা পেতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। পরক্ষণেই মিরায়ার টোল পড়া ডান গালটা আলতো হাতে টিপে দিল।
মিরায়া রায়ানের স্পর্শে মৃদু কেঁপে উঠল। প্রথম ছোঁয়া যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে দোলা দিয়ে গেল দুজনে মনেই।
রায়ান মিরায়ার পথ ছেড়ে গাড়ির ছাদে নিজের হাত রেখে মিরায়াকে জায়গা করে দেয় গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসার
জন্য ।

মিরায়া হতভম্ব হয়ে বাধ্য হয়ে সামনের সিটে বসতে গেল।
সে ভেতরে ঢুকতেই রায়ান হাত বাড়িয়ে গাড়ির ছাদের দিকে ইশারা করল,
— “সাবধানে, মাথা লাগাবে না। তোমার এই মাথাটা কিন্তু আমার জন্য ভীষণ দামি… মানে, খুব প্রিয়।”
মিরায়া একবার চোখ পাকিয়ে চুপচাপ বসে গেল।
রায়ান হাসিমুখে দরজা বন্ধ করতে করতে ফিসফিস করে বলল,
— “এই তো, ঠিক জায়গায় বসেছো। তোমার আসন কখনোই পেছনে না, সবসময় আমার পাশে, বেইবি।”
মিরায়া গাড়িতে উঠে বসে‌। আর রায়ান ও গাড়ি অপর পাশে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে। স্ত্রীর পাশে বসে রায়ানের খুব সতেজ লাগছিল নিজেকে।
মিরায়া গাড়িতে উঠে চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। কিন্তু সিটবেল্ট পড়ার নামই করল না। রায়ান কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে হালকা মুচকি হাসল।

— “ম্যাডাম, সিট বেল্টটা পড়বেন না? নাকি আমার উপরই ভরসা করে বসে আছেন?”
মিরায়া চমকে তাকাল,
— “ওহ্… আমি খেয়ালই করিনি।”
কথা শেষ হবার আগেই রায়ান হেলান দিয়ে তার দিকে ঝুঁকে এল। একেবারে খুব কাছাকাছি চলে আসতেই মিরায়ার নিঃশ্বাস আটকে গেল। রায়ানের পারফিউমের তীব্র গন্ধে হঠাৎ যেন বুকের ভেতর ঢেউ তুলল।
— “চুপচাপ থাকো… আমি পরিয়ে দিচ্ছি।” রায়ানের গলাটা অদ্ভুত গভীর আর নেশাক্ত শোনাল।
মিরায়ার বুক কেঁপে উঠল।
— “আপনি বসুন, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না… দরকার নেই, আমি নিজেই—”
কথাটা শেষ করার আগেই রায়ানের আঙুল তার গলার কাছে ছুঁয়ে গেল। ধীরে ধীরে সিটবেল্ট টেনে এনে কাঁধের উপর দিয়ে বেঁধে দিল। প্রতিটা নড়াচড়ায় যেন ইচ্ছে করে বেশি সময় নিচ্ছে। সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে মিরায়াকে একটু ছুঁয়ে দেখতে।
রায়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে ফিসফিস করে বলল,

— “শোন হৃদপাখি আমি ছাড়া এই সিট বেল্ট লাগানোর অধিকার কেউ যেন না পায়। আর এইটা কষ্ট না । ইটস মাই প্রিভিলেজ।”
মিরায়া হকচকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল, তার গাল লাল হয়ে উঠছে।
— “আপনি অনেক বেশি কথা বলেন…”
রায়ান মৃদু হেসে আরও কাছে ঝুঁকল, তার চোখে দুষ্টু ঝিলিক,
— “তুমি না চাইলে চুপ থাকব… তবে মনে রেখো, তখন মুখে কথা না হলেও , অন্য ভাবে ঠিকই হবে।”
সিট বেল্ট লক করতে ক্লিকের শব্দ হতেই মুহূর্তটা ভেঙে গেল। কিন্তু দুজনের চোখে চোখ আটকে রইল কয়েক সেকেন্ডের জন্য।
রায়ান আসনে ফিরে বসতে বসতে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
— “হুঁ… এখন নিশ্চিন্তে বসো। তোমার সেফটি আমার হাতে।”
মিরা বিরক্ত গলায় বলল,

—”এতো অভিনয় না করলেই পারতেন।”
রায়ান গম্ভীর ভান করে বলল,
— “অভিনয় না, এটা দায়িত্ব… তবে স্বীকার করছি, এই দায়িত্বটা আমি ভীষণ এঞ্জয় করব ।”
মিরায়া কেবল শুনেই যাচ্ছে তার মুখে কোনো কথা নেই সব যেন গোলার মাঝে এসে জমাট বেঁধেছে।
রায়ান পরবর্তীতে নিজের সিটে বেল্ট লাগিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।

চৌধুরী বাড়িতে –
সোরায়া ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে নিচে নামে নাস্তার জন্য। ঢাকায় এসে সে নতুন নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে । কিছু দিন গিয়ে কলেজকে বেশ আপন করে নিয়েছে সে-ই সাথে তার নতুন কিছু বন্ধুও হয়েছে। নাস্তা শেষ করেই সোরায়া তার কলেজের রাস্তায় রোওনা দেয়।
দুপুরের ব্যস্ত রাস্তাটা তখন ভিড়ভাট্টায় ভরে উঠেছে। চারপাশে মানুষজন চলাফেরা করছে, গাড়ির হর্ণে কান ঝালাপালা, মাঝখানে হঠাৎ করেই তিনজন দুষ্কৃতিকারী এক অসহায় দম্পতিকে নির্দয়ভাবে ধাক্কা দিচ্ছিল।
ঠিক সেই সময়েই মাহির এগিয়ে এলো।

মাহিরের চোখে একরকম দৃঢ়তা—যেন অন্যায়ের সামনে দাঁড়ানো তার জন্মগত স্বভাব। সে হাত বাড়িয়ে বৃদ্ধ মানুষটিকে আড়াল করলো, আর মুহূর্তের মধ্যে তার মুঠিবদ্ধ মুঠি তিনজনকে সামলাতে লাগলো।
যাওয়ার পথে হঠাৎ জ্যামে পরে সোরায়া । সামনে কিসের যেন হট্টগোল চলছে রাস্তায়। সে বিরক্ত হয়ে রিক্সা থেকে নেমে সামনের দিকে যায় কি হয়েছে তা দেখতে।
ভীর ঠেলে সোরায়া একটু সামনে এগোতেই দেখতে পেল একজন ছেলে কিছু বখাটে লোকের সাথে মারামারি করছে।
সোরায়া কৌতুহলে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করে-
“রাস্তার মাঝে এরা এমন মারামারি কেন করছে যানেন আংকেল?
উত্তরে – “আরে আর বোলো না মা। যা দিন কাল পরেছে। ওইযে ঐ ছেলেটাকে দেখছো যে মারছে লোক গুলো কে ওই ছেলেটা ভালো মানবতার খাতিরে এই দম্পতির সাহায্য করতে এগিয়ে গেছে আর এখন নিজেই ঝামেলায় জড়িয়ে পরলো।

লোকটা মারামারি করতে থাকা মাহির আর এক দুঃস্থ দম্পতির দিকে নির্দেশ করে কথা গুলো বললেন।
সোরায়া- “এটা কেমন সাহায্য হলো। এমন মারামারি করে কি সাহায্য হয়? উনি ভালো হলো কিভাবে?”
লোক-” আরে মা এই দম্পতি নতুন ঢাকায় এসেছেন চিকিৎসার জন্য। আর এই শয়তান লোক গুলো তাদের ভয় দেখিয়ে তাদের থেকে টাকা নিয়ে চাওয়ায় এই ছেলেটা এসে প্রতিবাদ করে । আর ওই বদমাশ গুলো একসাথে হামলে পরে ওর উপর। তবে দেখো সে নিজেই একসাথে তিন জন কে রায় পেটার পেটাচ্ছে। ”
লোকটার মুখে সম্পূর্ণ ঘটনার বর্ণনা শুনে সোরায়া মুগ্ধ হয়ে একবার তাকায় মাহিরের দিকে। হঠাৎই যেন চোখ গুলো অবোধ হয়ে আসলো সে কোনো ভাবেই সরাতে পারছে না আর না পলক পরছে।
“মাহির আজ সাধারণ একটা কালো ফিট শার্ট পরেছিল, হাতা গুটিয়ে রেখেছিল কনুই পর্যন্ত। শক্তপোক্ত বাহুগুলো যেন আলাদা করে দৃশ্যমান হচ্ছিল।

প্রতিটি ঘুষিতে তার বাহুর পেশিগুলো টানটান হয়ে উঠছিল—দৃশ্যটা যেন সিনেমার হিরোর মতো। কালো পেন্টের সঙ্গে তার লম্বা দেহটা একদম নিখুঁতভাবে ফুটে উঠছিল।
ঘামে ভিজে তার কপালে পড়ে থাকা কিছু চুল চোখে এসে পড়েছিল, আর সেগুলো সরে যেতে দিতে না দিয়ে সে বারবার মাথা ঝাঁকাচ্ছিল।”
সেই মুহূর্তগুলোতে সোরায়ার মনে হচ্ছিল—“এমন অস্বাভাবিক নজর কাড়া কেউ হতে পারে!”
লোকগুলো পালিয়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যে। মাহির নিঃশ্বাস ফেললো গভীরভাবে, তারপর অসহায় দম্পতিকে দাঁড় করিয়ে তার হাতে টাকা তুলে দিলো।

সেই দৃশ্যে সোরায়া বুকের ভেতর যেন কাঁপন ধরলো।
তার চোখে মাহির শুধু একজন সাধারণ ছেলে নয়, বরং যেন এক অবলম্বন—
তার চোখে দারুণ দৃঢ়তা, ঠোঁটে হালকা রাগের রেখা, আর শরীরের প্রতিটি মুভমেন্টে একরকম অদ্ভুত পুরুষালি সৌন্দর্য।
সোরায়ার বুকের ভেতর থেকে নিঃশব্দে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো—
“মানুষটা যেমন সাহসী, তেমনই সুদর্শন…”
নিজের বুকের বাম পাশে হাত রেখে বলল-
“আহ্ হা! হালকা করে ক্রাস খেয়ে গেলাম।”

রায়ান নির্বিকার চিত্তে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে আর পাশে মিরায়া একদম চুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। মিরায়ার নীরবতা রায়ানের মনে ঝড় তুলছিল।
তার মনে হচ্ছিল আর একটু সময় মিরায়ার নীরবতা স্থায়ীত্ব পেলে সে অআর নিজেকে আটকাতে পারবে না স্বামীর অধিকার ফলানো থেকে।
তাই রায়ান উপায়ান্তর খুঁজে না পেয়ে নিজেই বলে উঠলো-
“কি সমস্যা ? কিছু বলছো না কেন?”
রায়ানের হঠাৎ প্রশ্নে মিরায়া চমকিত হয়ে রায়ানের পানে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে-
“জ্বি? কি বলবো?”

রায়ান-“যা ইচ্ছা করে তোমার বলতে। তুমি বললে আমি সব শুনতে রাজি। Just like an obedient boy.”
মিরায়া রায়ানের আগা মাথা না বুঝে শুধু কথা এড়ানোর প্রশ্ন করলো-
-“গাড়ি টা কি আপনার ? ”
রায়ান-“তুমি কি গাড়ির মালিকানা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে?”
মিরায়া-“জ্বি।”
রায়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,
— “হ্যাঁ, এটা আমার জীবনের প্রথম কার যা আমি বাংলাদেশে কিনেছি আর এই একই রকম একটা আমেরিকায় আছে। গাড়ির মালিকানা বাদে গাড়ির মালিকের বউয়ের ও মালিক।”
চোখ টিপ দিয়ে বিরবির করে যোগ করল-
“মানে, তোমার মালিক।”
মিরায়া হকচকিয়ে গেল, চোখ বড় বড় করে তাকাল।

— “কি ? ভাইয়া আপনি কি বিবাহিত নাকি?”
কথা শেষ হওয়ার আগেই রায়ান ঠোঁট কামড়ে বিরক্ত মুখে বলল,
— “আহা! আবার ভাইয়া? ভাইয়া ডাকলে মনে হয় বয়স ত্রিশ বছর বেড়ে গেলো। তোমাকে না বললাম হৃদপাখি আমাকে ‘ভাইজান’ এর ভাই বাদে শুধু জানি ডাকতে? ডাকটা কত ছোট যেন কানে মধু ঝরে। উফ্।”
মিরা বিরক্ত হয়ে গজগজ করল,
— “আমি এসব অদ্ভুত নামে ডাকব না।”
রায়ান মজার ভঙ্গিতে ঝুঁকে মাথা একটু নিচু করে সিটের গায়ে হাত রেখে বলল,
— “আচ্ছা তোমার যেটা ভালো লাগে ডেকো, তবে শর্ত আছে—শুধু সামনের সিটে বসে ডাকতে হবে। পিছনের সিটে বসে তুমি ডাকলে হয়তো সেই ডাকের সাড়া স্বাভাবিক হবে না?”
মিরা হতভম্ব হয়ে গেল, উত্তর দিতে পারল না। কিন্তু আবার , নিজের গলায় শক্তি নিয়ে বলল-
“মজা বাদ দিয়ে উত্তর দিন না। আপনি কি বিবাহিত?”
রায়ান আবেশে হেঁসে মিরায়ারদিকে তাকিয়ে জবাব দিল-

“হ্যাঁ। তবে কাউকে বলো না। এইটা টপ সিক্রেট।”
মিরায়া রায়ানের সরল জবাবে অবাক হয়ে তাকালো।
তার মনে আর চোখে অনেক প্রশ্নেরা ঘোরাফেরা করতে লাগলো- “কে সেই মেয়ে? কিভাবে বিয়ে হলো? কোথায় হলো? কবে হলো? আর কেন হলো? আর কি কেউ জানে?”
কিন্তু মিরায়া কোনো প্রশ্ন না করে কেবল চুপ করে গভীর দৃষ্টিতে রায়ানের দিকে তাকিয়ে রইল। তার মনে হলো এমন ভাবে হঠাৎ করে কারো প্রতি দুর্বল হওয়া তার নিজের বোকামি অন্যের নয় । উপর দিয়ে এই ধরনের প্রশ্ন তাকে রায়ানের প্রতি ডেস্পারেট ছাড়া আর কিছু দেখাবে না। যা মিরায়া কখনোই চায় না।

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৮

তাই সে কিছু না শোনার মতোই আচরণ করে চোখ সরিয়ে নিল রায়ানের থেকে।
মিরায়া চোখ সরিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক আচরণ রায়ানের ভিতরে যেন আগুন লাগিয়ে দিল। সে আশা করেছিল মিরায়া বিয়ের কথা শুনে রিয়েক্ট করবে কিন্তু তার কিছুই হলো না ।
রায়ানের মনে প্রশ্ন জাগে-” তাহলে কি তার বউ তাকে নিজের করে ভাবে না ? তার বউয়ের কি কিছু যায় আসে না তার অন্য নারীর হওয়াতে?”

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৯ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here