আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩৭ (৩)
অরাত্রিকা রহমান
মিরায়া ফ্রেশ হয়ে ঘরে এসেই ফোনটা হাতে নিয়ে চেক করলো কিন্তু রায়ানের দিক থেকে এখনো তার পাঠানো রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করি হয়নি। মিরায়া একটু মুখ ফোলিয়ে বড়বড় করল-“নেকামি করে চিঠি লিখে গিয়ে মনে হয় উদ্ধার করে ফেলেছে । এখন যোগাযোগ টুকু করার প্রয়োজন বোধ করছে না। ধুর ধুর আমারই দোষ, বেশি আশা করছি।”
মিরায়া ভেজা চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গেলে তার মাথায় নিজেকে দেখে অদ্ভুত প্রশ্নরা জেঁকে বসে-
“কিন্তু তুই কেন আশা করছিস মিরা? তোর এমন কিছু আশা করার ক্ষমতা নেই। তুই অন্য কারো। কেন দুর্বল হচ্ছিস তুই এতো।”
মিরায়া ততক্ষনাৎ নিজের থেকে চোখ সড়িয়ে বুকে হাত চেপে ধরে একটু গভীর নিশ্বাস নিয়ে-“কি হচ্ছে এসব আমার। আমি কেন এমন হয়ে গেছি? মন কোনো বাঁধা কেন মানছে না?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মিরায়া শান্ত হতে মাথাটা হালকা উঁচু করে শ্বাস নিতে থাকে। হঠাৎ তার চোখ দেয়াল ঘড়ির দিকে যেতেই সে খেয়াল করল বিকেল ৪টা বাজছে। তখনি মাথায় এক ভাবনা এলো-বিকেল হলো সোরায়ার বাড়ি ফিরার কথা মিরায়ার আগেই কিন্তু বাড়িতে ফিরে তো একবারও দেখা হয়নি। আর যদি পরেও বাড়িতে আসে এখনো পর্যন্ত একবারও মিরায়াকে জ্বালাতন করতে তার ঘরে আসে নি কেন? এমন তো কখনো হয় না। মিরায়া পরিপাটি হয়ে সোজা সোরায়ার ঘরে গেলো। কিন্তু সেখানে সোরায়াকে না পেয়ে সোজা নিচে গিয়ে রামিলা চৌধুরীকে প্রশ্ন করল-
“মামণি বনু কে দেখছি না কেন? ও তো ওর ঘরেও নেই।”
রামিলা চৌধুরী একটু ভাবুক মনে বললেন -“সোরাকে তো বাড়ি ফিরতে আমি দেখি নি দুপুর থেকে তো নিতেই ছিলাম এখনো ফেরে নি হয় তো।”
মিরায়া একটু ভয়ে পেয়ে যায়। সোরায়া কখনো দেরি করে বাড়ি ফেরে না, কিন্তু আজ এখন পর্যন্ত বাড়িতে আসেনি। মিরায়া নিজের ফোনে সোরায়ার নাম্বারটা বের করে ডায়াল করতে যাবে এমন সময় বাড়ির মূল দরজা দিয়ে সোরায়া অলস ও আনমনা ভঙ্গিতে প্রবেশ করে। ব্যাগটা কোনো রকম অসহায়ের মতো কাঁধে ঝুলছে। মিরায়ার ভয় কাটে সোরায়াকে দেখে কিন্তু বড়ো বোনের দায়িত্ব রক্ষার্থে এমন কাজের জন্য তার সোরায়া কে শাসন করা প্রয়োজন তাই একটু রাগ ভাব করে সোরায়ার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলল-
“ওই কিরে.. সাহস কি বেশি হয়ে গেছে নাকি? এটা বাড়ি ফেরার কোন সময় হলো? তোর কলেজ ছুটি হওয়ার কথা বারোটায়, ( নিজের ফোনের স্ক্রিনটা অন করে সময় দেখিয়ে বলল-) আর এখন বাদে চারটারও বেশি। কোথায় ছিলি হ্যাঁ? বাড়ির সবাই চিন্তা করবে মাথায় ছিল না?”
হঠাৎ সোরায়া মিরায়াকে জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কাঁদতে শুরু করে। রামিলা চৌধুরী রান্নাঘর থেকে সোরায়ার কান্না দেখে দৌড়ে আসেন। মিরায়া হতভম্ব হয়ে ভাবছিল হয়তো সে বলেছে বলে এভাবে কান্না করছে সোরায়া। মিরায়ার বড্ড আদরের সোরায়া কখনো ঝগড়া, হিংসা কিছুই দুজনের মাঝে ছিল না। মা বাবার অনুপস্থিতিতে বড় বোন হিসেবে মিরায়া সোরায়াকে অনেক আদরের বড় করেছে, কখনো বকে নি প্রয়োজন ছাড়া।
সোরায়া এই দিকে অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। মিরায়া মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। সে সোরায়ার গায়ে হালকা কাঁপুনি টের পাচ্ছে—সোরায়া দু’হাত দিয়ে শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। যেন প্রাণপণে ধরে রাখছে, ছেড়ে দিলে সবকিছু ভেঙে যাবে।
মিরায়া সোরায়াকে সামাল দিতে কাঁপা গলায় বলল-
“ওই পাগল কান্না করিস কেন? আচ্ছা আপু আর বকবো না। কানে ধরছি সরি।( কানে ধরে)। সত্যি আর কিছু বলবো না এরপর থেকে সময় মতো আসিস কেমন। কাঁদে না লক্ষ্মী মেয়ে।”
শব্দ করে কান্না করছে সোরায়া মুখে আর কোনো শব্দ নেই তার —কখনও চাপা হাহাকার, কখনও ছোট ছোট হাহাকার ভরা শব্দ, কখনও কেবল শ্বাসকষ্টের মত কেঁপে ওঠা শুধু কান্নার আওয়াজ। রামিলা চৌধুরী আর মিরায়া দুইজনেই ঘাবড়ে গেছে কি হলো হঠাৎ। রামিলা চৌধুরী সোরায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলল-
“আচ্ছা হয়েছে আর কাঁদতে হবে না আমি বকে দেবে মিরা কে। চুপ চুপ আর কাঁদে না।”
মিরায়া আরো খারাপ অনুভব করতে শুরু করলো সত্যি কি সোরায়া তার বকার জন্য কাঁদছে! মিরায়া আবার সোরায়ার উদ্দেশ্যে বললো-
“সোনা বনু আমার, কাঁদে না আপু অনেক সরি আর বলবো না তো প্রমিস। চুপ কর এবার কান্না থামা প্লিজ। সোজা হো আমাকে বল তোর কি খারাপ লেগেছে। আমি আর তোকে বকবো না বনু। এমন ভাবে কাঁদে না, আপু কষ্ট পাচ্ছি।”
মিরায়ার চোখেও পানি জলজল করতে লাগলো। নিজের আদরের বোনটা এভাবে কাঁদছে তার মোটেও ভালো লাগছে না। সে এক নাগাড়ে সোরায়ার কাছে ক্ষমা চাইছে। রামিলা চৌধুরী অবাক হয়ে দেখছেন দুই বোনের মাঝে কি বলে সামাল দেবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
সোরায়ার হাতদুটো কাঁপছে, শক্ত করে মিরায়ার শরীর জড়িয়ে আছে। যেন একটা শিশু নিজের শান্তির জন্য আঁকড়ে ধরছে মায়ের আঁচল। মিরায়ার চোখে বিস্ময়, বুকের ভেতর ভারি হয়ে যাচ্ছে। সে নিজের হাত সোরায়ার চুলের উপর রেখে আস্তে আস্তে চাপড়াচ্ছে, কিন্তু বুঝতে পারছে—শুধু বকা দেওয়ার জন্য এভাবে কাঁদার মেয়ে সোরায়া নয়। মিরায়ার মনে অদৃশ্য ভয় ঢুকে পরল। সে সোরায়াকে প্রশ্ন করে-
“বনু সত্যি বল আমাকে কেউ কিছু বলেছে তোকে? কিছু করেছে কেউ? তাই কান্না করছিস? একবার বল কে কি বলেছে বাকিটা আমি দেখে নেব। তুই কান্না থামা প্লিজ।”
সোরায়া মিরায়াকে জড়িয়ে ধরে শান্তি পাচ্ছিল। হঠাৎ সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছে ভাঙা গলায় বলল-
“কি.. কিছু হয় নি আপু। আমি ঠিক আছি।” এই বলে আবার কেঁদে দিল।
মিরায়া আবার সোরায়া কে বুকে জড়িয়ে বলল-“না বনু, কিছু ঠিক নেই। তুই আমাকে বল কি হয়েছে। আমি বকেছি বলে কাঁদছিস?”
সোরায়া মাথা নাড়ায় নাসূচক। মিরায়া আবার একই প্রশ্ন করতে যাবে তখনি রামিলা চৌধুরী মিরায়াকে ইশারা দেন-“এখন আর কিছু বলিস না শান্ত হতে দে ওকে।”
মিরায়া বুঝতে পারলো। সে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। আলতো করে সোরায়ার মাথা তুলে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল-“যা হওয়ার হয়েছে আর ভাবতে হবে না। কাঁদবি না একদম। আমার পুতুলের মতো ছোট্ট পাখিটার চোখ গুলো কতো সুন্দর এগুলোতে পানি মানায় না। ঘরে যাবি চল। ফ্রেশ হয়ে নিবি আয়।”
সোরায়াও একটু শান্ত হয় মিরায়ার কথায়। কান্না থামায় তবে এখন একটু একটু হেঁচকি উঠছে। মিরায়া সোরায়াকে ঘরে নিয়ে যায়। রামিলা চৌধুরী হাঁফ ছেড়ে ভাবলেন-
“এখন কার দিনের বাচ্চারা কখন কি ভেবে কি করবে বলা মুশকিল। কে জানে মেয়েটা এভাবে কাদলো কেন।”
সোরায়াকে রুমে নিয়ে গিয়ে ওকে ফ্রেশ হওয়ার পর মিরায়া ওর রেস্ট নেওয়ার জন্য নিজে কোলে মাথা রেখে ওকে শোয়ায়। সোরায়া একদম চুপ করে শুয়ে আছে। মিরায়া এবার আসলে কি হয়েছে জানতে সোরায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো-
“বনু? এবার অন্তত বল কি হয়েছে। ক্লাসে স্যার বকেছে?”
“স্যার বকেছে” কথাটায় সোরায়ার শরীরে হঠাৎ কাঁপুনি দিলো সে আবার ছুটির পরের কথা গুলো সম্পূর্ণ দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
ফ্ল্যাশব্যাক~
তখন ১২.৩০ বাজে দিনের। সোরায়া মাহিরের কথা মতো কলেজ শেষে কলেজ মাঠে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রায় ৩০ মিনিট কভার হয়ে গেছে ছুটি হয়েছে স্কুল কিন্তু মাহিরের এখনো আসার নাম নেই। হোরায়রা পা দিয়ে মাঠের ঘাস নাড়িয়ে খেলছে। হঠাৎ মাহিরের গলা ভেসে এলো-
“দাঁড়িয়ে আছো অনেক্ষণ হয়েছে তাই না?”
সোরায়া হালকা মুচকি হেঁসে বলল-“সমস্যা নেই স্যার। আপনি কেন দাঁড়াতে বলেছেন তা বলতে পারেন।”
মাহির গম্ভীরভাবে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে বলল-
“তোমার সমস্যা কি আগে সেটা বলো। কলেজে আমার আসার পর থেকে তোমার উগ্রতা দেখে যাচ্ছি এসবের মানে কি?
সোরায়া কপাল কুঁচকে পাল্টা প্রশ্ন করলো-“সরি? কি বললেন? উগ্রতা মানে?”
মাহির আবার তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল-
“এখন মানে বুঝতে পারছো না। সমস্যা নেই আমি বুঝাচ্ছি। শিক্ষক দের কাজই এইটা। আমাকে প্রথম দিন থেকে ক্লাসে আবল-তাবল প্রশ্ন করে জ্বালাতন করা, ক্লাস চলাকালীন সম্পূর্ণটার সময় তাকিয়ে থাকা, ফেসবুক আইডি খুঁজে বার বার রিকোয়েস্ট সেন্ড করা, আবার ফেইসবুকের টা যথেষ্ট ছিল না তোমার জন্য ওতো রাতের বেলা নিজের টিচারকে কেউ মেসেজ দেয়?, যাক বাচ্চা মেয়ে মনে করে সব সয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজকে নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলেছো তুমি, কলেজে তুমি আমার পরিচিত তোমার আমার ব্যক্তিগত কোনো কানেকশন আছে এসব ছড়াতে নিজের বড় ক্লাসের মেয়েদের সাথে তর্কে জড়িয়ছো। নিজের আর কোন উগ্রতা এখনো তোমার বোঝা বাকি আমাকে বলো।”
এই কথাগুলো শুনে সোরায়ার ভেতরটা এক ঝটকায় ভেঙে পড়ল। বুকের ভেতর যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে বারবার আঘাত করছে। আসলে সবকিছুই সে করেছে একটাই কারণে—মাহিরকে ভালোবেসে। অন্ধ ভালোবাসা তাকে এভাবে পাগলামি করিয়েছে। কিন্তু গুজব ছড়ানোর বিষয়টা? সম্পূর্ণ ভুল বোঝাবুঝি! তবুও সে ঠোঁট নাড়াতে পারল না। গলার স্বর আটকে গেল।
মাহির রাগে চোখ রক্তিম করে ঝাঁঝালো কণ্ঠে আবার বলল—
—“কি হলো? চুপ করে আছো কেন? নিজের এসব বেহায়াপনার কোনো ব্যাখ্যা নেই? নাকি নতুন মিথ্যা বানাচ্ছো বলার জন্য? জানো সোরায়া, তোমার মতো মেয়েদের জন্যই শিক্ষকদের সম্মান মাটিতে মিশে যায়।”
সোরায়ার বুকটা কেঁপে উঠল। চোখে পানি টলমল করছে, কিন্তু সে নিজেকে শক্ত থাকলো। একটা ফোঁটাও পড়তে দিল না। শুধু দাঁতে দাঁত চেপে সব কথা সহ্য করছে।
মাহির ওর চোখের ভেতর জমে থাকা অশ্রু দেখেও বিন্দুমাত্র নরম হলো না। উল্টো আরও ধারালো স্বরে বলল—
—“এখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো কেন? নাকি সত্যিই এতটাই নির্লজ্জ যে নিজের অসভ্যতার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছো না?
প্রতিটি শব্দ যেন সোরায়ার বুকের ভেতর বিস্ফোরণ ঘটালো। তার মন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাইরে থেকে সে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে। শরীর কাঁপছে, বুক ফেটে যাচ্ছে, তবুও কোনো আওয়াজ নেই। প্রিয় মানুষটা কষ্ট দিয়ে কথা বললে এতো যন্ত্রণা হয় তা সোরায়ার জানা ছিল না।
মাহির শেষবার তাচ্ছিল্যের চোখে তাকিয়ে, কোনো দরদ না দেখিয়ে মাঠ থেকে চলে গেল। তার পদক্ষেপের শব্দ মিলিয়ে গেল দূরে, কিন্তু সোরায়ার কানে সেটা বজ্রপাতের মতো গর্জে বাজতে থাকল। সোরায়া একাই দাঁড়িয়ে রইল—চোখে অশ্রু ঝিকমিক করছে, বুকের ভেতর হাহাকার চলছে, তবুও বাহ্যিকভাবে সে যেন পাথর হয়ে গেছে। চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে আছে, আর সেই নীরবতায় কেবল তার ভেতরের কান্না তীব্র শব্দে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
বর্তমান~
মিরায়া সোরায়ার থেকে কোন প্রকার উত্তর না পেয়ে চুপ রইলো। বুঝতে পারছে এখন কিছু জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। শুধু চিন্তার জায়গা থেকে জিজ্ঞেস করল-
“কলেজ তো অনেক আগে ছুটি দেয়েছিল বনু। কোথাও গিয়েছিলি বুঝি?”
সোরায়া মিরায়ার কোলে মাথা রেখে বলল-“হুঁ, হাঁটতে হাঁটতে একটু লেকে গেছিলাম।”
মিরায়া এবার চিন্তা মুক্ত হলো সোরায়ার গলা শুনে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। কিন্তু পুরো মুহূর্তে সোরায়া নিজেই প্রশ্ন করলো-
“আচ্ছা আপু, আমি কি অসভ্য, বেহায়া আর নির্লজ্জ?”
মিরায়ার বুকটা হালকা কেঁপে উঠল এমন প্রশ্ন শুনে। সে সোরায়ার মাথায় হাত রেখে বলল-“কি? কেহ বলেছে তোকে এসব? আমার বনু অনেক ভালো। সবার চেয়ে বেস্ট। সবদিক থেকে ভদ্র আর সভ্য। তুই বল শুধু কে বলেছে তোকে এসব, মেরে তক্তা বানিয়ে আসবো তাকে।”
সোরায়া মন খারাপের মাঝেও ফিক করে হেঁসে দিল মিরায়ার মাহির কে মেরে তক্তা বানানোর কথায়। সোরায়াকে হাসতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মিরায়াও হালকা হাসলো। সোরায়া আবার মিরায়াকে প্রশ্ন করল-
“আপু ভালোবাসা কি কষ্ট দেয়?”
মিরায়া অবাক হয় সোরায়ার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে তবে প্রশ্নের উত্তরে বলল-“হয়তো।”
সোরায়া-“হয়তো মানে?”
মিরায়া-“জীবনের ‘হয়তো’ গুলো যদি শূন্য থেকে পূর্ণ হতো তাহলে জীবন অনেক সুন্দর হতো। তাই ‘হয়তো’ এর মানে থাকে না। ঠিক যেমন ভালোবাসার কারণ থাকে না।”
সোরায়া আবার প্রশ্ন করল-“আপু যদি শখের জিনিস কষ্টের কারণ হয় তাহলে কি করা উচিত?”
মিরায়া এক কথায় উত্তর দেয়-” শখের জিনিস পেতে কষ্ট করতে হয় আর কষ্ট করাও উচিত সেটা পেতে। কিন্তু শখের জিনিসটাই যদি কষ্টের কারণ হয় তবে..।”
সোরায়া -“তবে..?”
মিরায়া বাঁকা হেসে উত্তর দেয়-” তবে। শখকে ডিলিট মেরে, ইনস্টাগ্রামে রিলস দেখবি, বুঝেছিস?”
সোরায়া অবার হেঁসে ফেললো মিরায়ার কথায়। মিরায়া হেঁসে সোরায়ার দুই গাল টেনে বলল-“এইতো আমার বোনটাকে হাসলে কত সুন্দর লাগে। বেশি বেশি হাসবি। এখন উঠে টেবিলে গিয়ে পড়তে বস। অনেক ফাঁকি দিয়েছিস।”
সোরায়া মিরায়ার কোল থেকে মাথা তুলে উঠে বসলো। মিরায়াকে একটা চুমু দিয়ে হাত ধরে টেনে ঘরথেকে বের করতে করতে বলল-
“ঠিক আছে পড়তে বসছি। এবার তুমি যাও এত ভালো আইডিয়া দেওয়ার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ।”
মিরায়া হঠাৎ দাঁড়িয়ে পরল-“কিসের আইডিয়া?”
সোরায়া মিরায়াকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগানোর আগে দরজার ফাঁকা দিয়চ মাথা একটু বের করে বলল- “শখ ডিলিট করার।”
তারপর গেট লাগিয়ে দিল। মিরায়া দাঁড়িয়ে রইল আর মনে মনে বলল-“এই মেয়েটার মাথায় কি চলে কিভাবে যে বুঝবো। ধুর যাকগে ওর মন ভালো হয়ে গেছে এতেই আলহামদুলিল্লাহ।”
মিরায়া পরে আবার নিচে গিয়ে রামিলা চৌধুরীকে সোরায়া ঠিক আছে সেটা বলে নিজের ঘরে চলে যায়।
এইদিকে মিরায়াকে বের করে দিয়ে সোরায়া নিজের ফোনটা হাতে নিয়েই ফেসবুকে ঢুকে প্রথমে মাহিরের আইডি বের করে তাকে আনফ্রেন্ড করে। তারপর ইনস্টাগ্রামে আনফলো করে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে হাসি মুখে টেবিলে চলে যায় পড়াশোনা করতে।
সন্ধ্যার~৭টা
রিমি নিজের কাজের জায়গায় পৌঁছে নিজের কস্টিউম চেঞ্জ করে নিয়ে গিটারের সব কর্ড গুলো চেক করে নিয়েছে। তার পারফরমেন্সের আর দেরি নেই। বিকেলের প্রাক্টিস টাইম ওভার এবার সন্ধ্যায় লাইভ পারফরমেন্স শুরু হবে। রিমি নিজের গিটার নিয়ে একদম তৈরি আজকের সন্ধ্যার জন্য।
সময় হওয়ার সাথে সাথে রিমি লাইভ স্টেজে উঠলো। সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে। মাইক আর গিটার টা ঠিক করে নিজের চেয়ারে বসে সন্ধ্যা বেলার একটা সুন্দর সূচনা করলো তার গলার গান দিয়ে। এমন সময়ই হঠাৎ রুদ্র সেই ক্যাফেতে প্রবেশ করল।
অফিসের মিটিং শেষে ক্লাইন্ট কে এক কাপ কফির ইনভিটেশন দিতেই ক্লায়েন্ট রাজি হওয়ায় বাড়ির কাছের ক্যাফেতেই ক্লাইন্ট কে নিয়ে এসেছে কফি খাওয়াতে। শনিবার রিমিকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পর রুদ্রর আর তার সাথে কথা হয়নি। এভাবে হঠাৎ করে কাকতালীয়ভাবে দেখা হবে সেটা আর কার জানা ছিল। রুদ্র ক্যাফেতে ঢুকার পরই স্টেজে মধ্যমণি হয়ে বসে গিটার বাজিয়ে গান করতে থাকা রিমির দিকে তার নজর পড়ে। রিমি তার মিষ্টি কন্ঠে গান গাইছে-
“আজ না হয় কথা থাক,
লুকনো অনুতাপে ঢাকি, চেরাকাটা আগুন।
আজ শুধুই বলে যাক,
চোখের পাতা খুলে রাখি, নিদার নিঝুম…
মন বলে তোমাকে একবার আগলে ছুঁয়ে যাই,
মন গলানো সন্ধ্যে বারবার, থাকছি ছুঁয়ে তাই…
যেন তোমারি কাছে জমে অভিমান আছে,
যেন তোমারি কাছে… জমে অভিমান আছে…!
রুদ্র তাকিয়েই আছে রিমির দিকে ঠিক তখনই রিমিরও চোখ রুদ্রর চোখে পড়ে। দুইজনই একে অপরকে একদিন পর হঠাৎ দেখে বিস্মিত। রুদ্রর সাথে আসা লোকটা রুদ্রকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল-
“মিস্টার রুদ্র, লেট’স সিট।” (বসার জন্য চেহারার দিকে হাত বাড়িয়ে)
রুদ্র বাস্তবে ফিরে হকচকিয়ে বলল-“হুঁ? হ্যাঁ হ্যাঁ, প্লিজ সিট।”
রুদ্র নিজের দিকের চেয়ারটা টেনে বসলো। রিমি নিজের পারফরমেন্সের দিকে মন ফিরালো। রুদ্র রিমিকে দেখছে পালকবিহীন। রিমি বুঝতে পেরেও সেদিকে মন দিল না। সন্ধ্যার সময়টা এই সুন্দর মুহূর্তে কেটে গেলে রুদ্রর ক্লায়েন্ট নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রুদ্রকে বলে উঠলো-
“সো থ্যাংক ইউ সো মাচ মিস্টার রুদ্র। ইট ওয়াজ গ্রেট টু মিট ইউ। সি ইউ সুন।”
রুদ্র আর লোকটা দাঁড়িয়ে হেন্ড সেক করার পর লোকটি বিদায় নিল। কিন্তু রুদ্র ক্যাফে থেকে বের না হয়ে ক্যাফের ভিতরেই বসে রিমির গান উপভোগ করতে লাগলো। বাড়ি ফেরার ইচ্ছে হয়নি তার। রিমি নিজের মত গান গেয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ সময় পর, লাইভ পারফর্মেন্স এর সময় সীমা শেষ হতেই রিমি ব্যাক স্টেজে চলে গেল। রুদ্র এবার ক্যাফে থেকে বেরিয়ে এলো নিজের গাড়ির দিকে। কিছুক্ষণ সময় পর রিমি নিজের কস্টিউম চেঞ্জ করে তার পরিহিত পোশাক পড়ে বের হয় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য। তখনই হঠাৎ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা রুদ্রর চোখের সাথে চোখাচোখি হয়ে তার। রিমি হালকা হাসি দিয়ে রুদ্রর সামনে এসে দাঁড়ায় – সে ভালোই বুঝতে পারছিল রুদ্র এবার তাকে এই কাজের বিষয়ে প্রশ্ন করবে তাই রুদ্র কিছু বলার আগেই আগ বাড়িয়ে বলতে শুরু করল-
“ওয়েট ওয়েট আপনি কিছু বলার আগে আমিই বলছি। আই এম সরি এই ব্যাপারে আগে না জানানোর জন্য। আসলে এটা তেমন কিছু না শুধু পার্ট টাইম জব। আর..!”
রিমিকে তার সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়েই রৌদ্রতাকে থামিয়ে দিয়ে তার সামনে কয়েকবার হাততালি দিয়ে বলে-
“গ্রেট পারফরমেন্স।”
রিমি অবাক চোখে দ্রুত দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। রুদ্র তাই করল। পরবর্তীতে রোদের মুখে বলল-
“আমার কিছু বলার ছিল না এই ব্যাপারে আপনাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করা ছাড়া। তবুও যখন আগবাড়িয়ে সরি বললেন- সরি গ্রহণ করলাম। নিজের প্রতিভা কাজে লাগানো খারাপ কিছু না আর ছোট কাজ বড় কাজ বলতে কিছু নেই কাজ কাজই।”
রিমি আবারো একটু মুচকি হাসলো। তার ধারণার বাইরে ছিল পুরুষ মানুষের এমন রুপ। নিজের বাবা ভাই আর কিছু নোংরা মন মানসিকতার মানুষের জন্য পুরো পুরুষ জাতিকে খারাপ ভাবা মেয়েটা শুধু একটা ছেলের জন্য এখন একটু একটু পুরুষ জাতিকে ভালো ভাবা শুরু করেছে। রিমিকে রুদ্র প্রশ্ন করলো-
“এবার কি? বাড়ি যাবেন তো ?”
রিমি মাথা নাড়ালো-“হুম, আজকের জন্য আমার ছুটি। এবার সোজা বাড়ি যাবো।
রুদ্র গাড়ির সামনের দরজাটা খুলে দিয়ে বলল-“বসুন, আমি ড্রপ করে দেই।”
রিমি ভদ্রতার খাতিরে বলল-“এখন এই কষ্টটুকু করতে হবে না। আপনার বাড়ি খুব সামনে বাড়ি চলে যান। আমি একা যেতে পারবো।”
রুদ্র রিমির হাতের ব্যাগটা সাবধানে নিল নিজের হাতে যেন রিমির হাতে স্পর্শ না হয়। তার পর সেটা গাড়ির ভিতরে রেখে বলল-
“আপনি একা যেতে পারবেন না তার জন্য ড্রপ করতে চাইনি। আপনি একা পারবেন সেটাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। আমি বলেছি আমার নিজের শান্তির জন্য। আমি আপনাকে পৌঁছে দিতে চাই। এবার উঠুন।”
রিমি অবাক হয়ে কথা গুলো শুনলো। এতো ভদ্রলোকও এই সমাজে আছে? তার বিশ্বাস হয় না। সত্যি বলতে সমাজে অন্য সবকিছুর ভেরিয়েশনে সংকট দেখা দিতে পারে কিন্তু মানুষের ভেরিয়েশনে কখনো না। রিমি আর কিছু না বলে চুপচাপ বাড়িতে উঠে বসলো। রুদ্র ও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির স্টার্ট দিল রিমির বাড়ি উদ্দেশ্যে।
আমেরিকা~
বেলা ১২টা। রায়ান ভোরে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়েছিল আর এইমাত্র ঘুম থেকে উঠলো। কাজের চাপ এত বেশি ছিল যে শোয়ার আগে ফোনটা সুইচ অফ করে ঘুমিয়ে ছিল। দেন এখনো বিছানার উপরে শুয়ে আছে। ঘুম ঘুম আধ খোলা চোখ, হাত দিয়ে বিছানার বিভিন্ন জায়গা হাত দিয়ে বেড়াচ্ছে নিজের ফোনটা পেতে। অতঃপর বালিশের পাশে কোনটা পেয়েই অন করলো। ফোন অন করার সাথে সাথে একগাদা নোটিফিকেশনের ঝড় উঠলো ফোনের স্ক্রিনে। রায়ান হালকা বিরক্ত হয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল-
“ধুর শালা! ফোনটা অন করার সাথে সাথে যেন দামামা বাজিয়ে জানান দিচ্ছে হাজারো কাজ আছে তোর রায়ান। জীবনে কি কুক্ষণে যে টাকা টাকা করে এতো কাম বাড়াইছিস নিজের।”
রায়ান ফোনের সব নোটিফিকেশন ক্লিয়ার করতে থাকে। সব অফিসিয়াল কাজের নোটিফিকেশন। রায়ান মুখ বেজার করে বলে উঠলো-
“অসহ্য! এত কাজের নোটিফিকেশন না এসে আমার পিচ্চি বউটার থেকে একটা নোটিফিকেশনও তো আসতে পারে!”
সব নোটিফিকেশন ক্লিয়ার করার সময় হঠাৎই রায়ান আবছা চোখে একটা নোটিফিকেশন দেখলো-
“A friend request from Meherin Rahman Miraya.”
রায়ানের চোখ থেকে হঠাৎ সব ঘুম চলে গেল। তৎক্ষণাৎ রায়ান লাফ দিয়ে শোয়া অবস্থা থেকে বসে পড়লো। হালকা চোখ কচলে আবার ফোনের স্ক্রিনে ভালো করে দেখলো যা দেখছে তা সত্যি কিনা। সত্যিই তার বউ তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে! রায়ানের ওই মুহূর্তে খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছিল। সে বুকে হাত দিয়ে বিছানায় ঠাস করে পড়ে গিয়ে খুশিতে হেসে হাত পা ছুড়তে লাগলো বাতাসে। আর নিজে নিজেকে বললো-
“তোর বউ তোকে মিস করছে রে রায়ান। এই খুশি তুই কই রাখবি। আল্লাহ শুকরিয়া অনেক অনেক শুকরিয়া।”
-“মাথা মোটা! বউটা চিন্তা করছে আর তুই ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছিলি এটা কোনো কাজ করলি তুই?” এই বলে নিজের মাথায় একটা চাটি মারলো।
রায়ান মিরায়ার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করতে যাবে তার আগেই তার মাথায় তার বউকে হালকা জ্বালানোর জন্য দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় এলো। রায়ান নিজের আমেরিকান নাম্বার দিয়ে মিরায়াকে একবার কল করবে ভাবলো । যাই ভাবা সেই কাজ।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে মিরায়া নিজের ঘরে চুল আঁচলে বেশি গাথছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। মুখটা বেজার রায়ানকে পাঠানো ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এখনো একসেপ্ট হয়নি, সম্পূর্ণ সময়টাতে কতবার যে চেক করেছে তা বলা মুশকিল। মিরায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রাগের সুরেই বলল-
“সমস্যা নেই। যত ভাব নেওয়ার নিন। বাংলাদেশে ফিরুন একবার তারপর বুঝাবো ভাব কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি।”
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো মিরায়ার। মিরায়া চুলের আগাতে ঝুঁটি বেঁধে ফোনটা বিছানা থেকে তুলে সামনে নিতেই দেখলো একটা অদ্ভুত নাম্বার। এমন কোনো নাম্বার তার জানা নেই অফিসিয়াল লেন লাইন এর নাম্বার এর মতো মনে হলো তার। মিরায়া রেস বা চট্টগ্রাম এর রাইডিং কমিউনিটির মেইন অফিস থেকে ফোন আসতে পারে ভেবে কল রিসিভ করে বলল-
“হ্যালো, কে বলছেন?
রায়ান দুইদিন পর মিরায়ার আওয়াজ শুনে বিছানায় শান্তিতে গা এলিয়ে দিয়ে আবেশে তার আসল পরিচয় বলল-
“তোমার বি লাভ’ড হাজবেন্ড।”
মিরায়া অবাক হয়ে বললো-“মানে!”
রায়ান মিরায়ার বয়সে ছোট হওয়ার মজা নিতে হেঁয়ালি করে বলল-
“বাচ্চা মানুষ এতো মানে জানতে হবে না।”
মিরায়া এবার রেগে গেল। সেও একই হেঁয়ালির সুরে বলল-
“হ্যাঁ ঠিক বলেছেন, এমনিতেও আমার বুড়ো মানুষে ইন্টারেস্ট নেই।”
এই বলে ফোনটা কেটে দেয় মিরায়া। রায়ান ধপ করে বিছানায় সোজা হয়ে বসে একাই বলল-
“কিহ্! ওই ছেমড়ি বুড়ো তে ইন্টারেস্ট নেই মানে? আমি কি বুড়ো নাকি।”
মিরায়ার মাথায় চিন্তা ঘুরছে কে হতে পারে। এমন মজা কে করবে তার সাথে। কিন্তু পরিচিত কেউ করছে সেটা নিশ্চিত কারণ মিরায়াকে কেউ প্রেমের প্রস্তাব দিলে বা মেসেজ দিলে মিরায়া সোজাসুজি বলতো-“আমি বিবাহিত।” কথা সত্য হলেও এটার জন্য সবাই তার মজা উড়াতো। মিরায়া মনে মনে ভাবলো কেউ ইচ্ছে করে তার সাথে মজা করছে। মিরায়াও কম যায় না, বয়স কমের মজা উড়ানোর শোধ বয়স বেশি হওয়ার জন্য নিলো। মিরায়ার এমন উত্তর দিতে পেরে বেশ খুশি।
হঠাৎ ফোনটা আবার বাজলো একই নাম্বার থেকে কল এসেছে। মিরায়া এবার একটু মজার কুটিল হাসি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো। অপর পাশ থেকে রায়ান বলল-
“হেই, মিস! দুঃখিত মজা করার জন্য। আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই আমার এই কল ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট টা কি একসেপ্ট করা যাবে?”
মিরায়া নিজের এক ডাইলগ রিপিট করল হালকা মিটিমিটি হেঁসে –
“জ্বি না। করা যাবে না, আমি বিবাহিত।”
রায়ান মিরায়ার বিবাহিত হওয়ার কথাটা ওকে বলতে শুনে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল-
“কোনো সমস্যা নেই, আমিও বিবাহিত।”
মিরায়ার হাসি এবার উড়ে গেলে। মিরায়া বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে বিড়বিড় করলো-
“এই হারামজাদা আবার কোন মেয়ের বর? পর নারীর সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়।”
রায়ান মিরায়ার বিড়বিড় করা কথা শুনতে পেয়ে হা হয়ে রইল। রায়ান মনে মনে- “শালার জীবনে এক বিয়া করে এখনো বউয়ের সাথে কিছুই করতে পারলাম না এর আগেই গালি শুনা লাগলো আমার। বালের জীবন!”
মিরায়া এবার সিরিয়াসলি বলল- “আরে কে মজা করছেন এতো রাতে ফোন দিয়ে? এসব মজা আমার একদম পছন্দ না শালা-420। ফোন রাখেন।”
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩৭ (২)
বউয়ের মুখে এসব শুনে রায়ান সাথে সাথে ফোন রেখে দেয়। হতাশায় শ্বাস ফেলে রায়ান বলল-
“নিজের বউরেই পরকীয়ার প্রস্তাব দিলাম তাতেই আমি 420 হয়ে গেছি। আর কি শুনা বাকি আছে। ভাব তো এমন নিলো মনে হয় বিবাহিত হয়ে বরকে খুব মনে রাখছে! হাফ নাম মনে রেখে ‘আমি বিবাহিত, আমি বিবাহিত ‘ ভোজন শুনায় তাও আবার নিজের বরকেই। কি কপাল আমার।”