আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪ (২)

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪ (২)
অরাত্রিকা রহমান

বাংলাদেশ ~
বিকেলের রোদে ঝিমিয়ে পড়া হাইওয়ে, বাতাসে ধুলার গন্ধ আর দূরে মেঘনার ঢেউ ভেসে আসছে। সেই নির্জন রাস্তায় একটামাত্র গাড়ি এগিয়ে চলেছে — গাঢ় নীল কালারের SUV, স্টাইলিশ কিন্তু নিচুস্বরে গর্জন করা এক যন্ত্র।
রুদ্র, স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে ডান কনুইটা জানালার বাইরের বাতাসে ছেড়ে দিয়েছে। চোখে সানগ্লাস, গলার কাছে শার্টের বোতাম খোলা — চেহারায় একটা ক্লান্তি, কিন্তু চোখে স্পষ্ট ফোকাস। গাড়ির মধ্যে বাজছে মৃদু লো-ফাই হিপহপ, উইন্ডশিল্ডে পড়া রোদের ছায়ায় গ্লাভবক্সের ওপরে ফেলে রাখা।
চারদিক একেবারে ফাঁকা — ধানক্ষেত পেরিয়ে গাড়িটা কখনও ওভারটেক করছে স্লো ট্রাক, কখনও পিছনে ফেলে দিচ্ছে পুরনো বাস। ডান পাশে চা দোকান, বাঁ পাশে রেললাইনের পাশ দিয়ে হেলে পড়া তালগাছ —
একা গাড়িতে রুদ্রর কিছুটা একঘেয়েমি হতে শুরু করেছিল তাই নিজেকে আবার সতেজ করতে মজার ছলে ছাড়া কাটতে শুরু করে-

“চলো না ঘুরে আসি চট্টগ্রাম,
হাতে সময় আছে, পকেটে কাম!
চা খাইবো দোকানে, বাঁশ খাইবো গরম…
রাস্তায় বাজাই গান, মনটা আমার নরম!” 🎤
তারপর একাই হেসে ফেলে —
“ওই, এই গান তো নিজের বানানো! ভাই আমি… একাই একটা ট্যালেন্ট! Missing my guitar too much.”
রায়ানের যেমন শখ বাইক রাইডিং এর তেমনি রুদ্রর শখের জিনিস হলো তার গিটার। ছোট্ট থেকে গিটার বাজানোতে সে খুবই ভালো। আগে একটা বেন্ড এর সাথে যুক্ত ছিল কিন্তু পরবর্তীতে বাবার সাথে পারিবারিক ব্যবসাতে তাকে মন দিতে হয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

যেহেতু রায়ান বড় ছেলে হয়েও দেশে নেই , তার নিজের ব্যবসা আছে। তাই সে আপত্তি করে নি । এখন ব্যবসা সামলাতে ও রুদ্রর ভীষণ ভালো লাগে। আপন করে নিয়েছে। যার জন্য গিটার বাজানো এখন তার শখে পরিনত হয়েছে, তার শান্তির অংশ।
হঠাৎ গাড়ির ডান পাশে পাহাড় দেখা যায়। রুদ্র জানে, সে চট্টগ্রামের সীমানায় ঢুকে পড়েছে। গাড়ি থামায় না।
শেষগন্তব্য এখনও বেশ কিছু কিলোমিটার দূরে। মা-বাবার সাথে বেশ কয়েকবার রুদ্র চট্টগ্রামে এসেছে তাই গাড়ি চালিয়ে আস্তে তার কোনো অসুবিধা হয় নি।
অন্যদিকে, মিরায়া আর সোরায়া দুজন রেডি হয়ে আছে ঢাকা যাওয়ার জন্য। মিরায়া তার পায়ে রূপার নূপুর পরেছিল যেটা তার চাচা তাকে উপহার দিয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য। মিরায়াকে নূপুর পরতে দেখে রোকেয়া বেগম খুশি মনে বললেন –

“বাহ্! আমার মিরা মা কে তো খুব মানিয়েছে নূপুর গুলো।”
মিরায়া মিষ্টি হেসে বলে-
“Thank you, চাচি। চাচার পছন্দ ভীষণ ভালো তাই সুন্দর লাগছে।”
রোকেয়া বেগম মিরায়াকে আরেকবার উপর নিচ চোখ বুলিয়ে দেখে বলে-
“মিরা তোর গলাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তোর জন্মদিনে তোকে যে সোনার চেইনটা দিয়েছিলাম সেটা পরেনে ভালো লাগবে।”
মিরায়া চাচির কথা শুনে যেন একটু ভয় পেল। সে উপরের দিকে চোখ টা ঘুরিয়ে কিছু একটা ভেবে নিয়ে চাচি কে বলতে যাবে এমন সময় সোরায়া এসে বলতে লাগলো-

“এই যে আপু তোর চেইন। আমি পরিয়ে দিচ্ছি। আসলে চাচি আমি ওর চেইনটা একবার পরেছিলাম আর দেওয়া হয়নি।”
এই বলে সোরায়া মিরায়াকে চেইনটা পরিয়ে দেয়। ওমনি চাচি তার নিজের গলার চেইনটা খুলে সোরায়াকে পরিয়ে দিয়ে বললেন –
“এই নে এখন তোর ও চেইন আছে আর মিরারটা নিতে হবে না।”
সোরায়া চাচির দিকে তাকিয়ে সরলতায় প্রশ্ন করে-
“চাচি তুমি আমাকে নিজের চেইন কেন দিচ্ছ আমার চাই না এইসব। আমি তো এমনেই মিরা আপুর থেকে নিয়ে পরেছিলাম।”

-“এটা আমার না তোরই তোর জিনিস তোকে দিলাম। এটা তোর চাচা তোর জন্যই এনেছিল। স্বর্ণ সামলাতে পারবি কি না চিন্তা করে তখন দেই নি ছোট ছিলিস তখন। এখন অনেক বড় হয়ে গেছে আমার ছোট বুড়ি টা।”
সোরায়া খুশিতে চাচি কে জড়িয়ে ধরে বললো-
“Thank you , চাচি। Love you.”
সাথে সাথে মিরায়া ও জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল-
” এই এই আমাকে ছাড়া কোনো hug হবে না আমাকেও নেও।”
রোকেয়া বেগম দুজনকে জড়িয়ে ধরে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন-
” এখন রেডি হয়ে নিচে চলে আয় তোদের রুদ্র ভাইয়া এলো বলে।”

এই বলে রোকেয়া বেগম নিচে নেমে যায় । বাড়িটা মেয়ে দুটো চলে গেলে ফাঁকা হয়ে যাবে তাই রোকেয়া বেগমের আর শফিক রহমানের মনে একেবারে বিষন্ন। তবে এটাই যে প্রকৃতির নিয়ম- এক কূল গড়তে অন্য কূল ভাঙতে হয়।
রোকেয়া বেগমের প্রস্থানের পর মিরায়া সোরায়াকে জড়িয়ে ধরে বললো-
“বোনু রে, মহা বাঁচান বেঁচেছি আজ । তুমি চেইন টা আনলি কখন।”
-“চট্টগ্রাম ছাড়ছি । এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ দিয়েছ তা কি না করে ঘুম হবে আমার। তাই কাল ই এনেছিলাম । নাহলে কি আর সময় হতো বলো। আবার কবে না কবে আসা হবে এখানে।”
মিরায়া মুখে হাসি নিয়ে আবার জড়িয়ে ধরে বলে-
“Thanks রে বোনু। যা এইবার তোকে যা চাইবি দিবো।”
একটু পিছনে যাওয়া যাক।~

মিরায়া তখন নবম শ্রেণীতে পরতো। বাড়ন্ত বয়সে মিরায়ার খুব শখ তৈরি হয় সে ছেলেদের মতো বাইক চালাবে। তাই সে এলাকার এক ভাইয়ের কাছে স্কুল এর পর বাইক চালানো শিখতো। খুব কম সময়েই মিরায়া বাইক চালানো আয়ত্ত করতে পারে।
দশম শ্রেণীতে উঠার পর সে খুব ভালো বাইক চালানো শিখে গেলে। এসএসসি এর পর তার জন্মদিনে শফিক রহমান আর রোকেয়া বেগম মিরায়াকে ওর ভালো রেজাল্ট আর জন্মদিন উপলক্ষে একটা সোনার চেইন উপহার দেয়।

মিরায়া পরবর্তীতে বাইক রাইডিং আর প্রফেশনাল ভাবে বাইক রেস করার সম্পর্কে জানতে পেরে ঠিক করে সে নিজের বাইক কিনবে। তাই তার নিজের স্বর্ণের চেইটা বন্ধক রেখে বাইক কিনে। পরে বাইক রেস এর winning price money দিয়ে চেইটা ছাড়িয়ে নেবে।
বয়স কম হওয়ায় মিরায়া এখনো বড় বাইক রেসে অংশ নেয়নি। তবে সে চট্টগ্রামে আর কাছাকাছি অঞ্চলে অনেক বাইক রেসে অংশগ্রহণ করে জিতেছে। যে টাকা জমিয়ে মিরায়া তার চেইনটা ছাড়াতে সোরায়াকে দায়িত্ব দিয়েছিল।
মিরায়ার পারিবারিক স্বচ্ছলতা আছে তবে মিরায়ার এমন আবদার তারা মানলেও তাকে নিয়ে সব সময়ই দুশ্চিন্তায় থাকতো। তাই মিরায়ার বাইক রাইডিং করার বিষয়টি কেউ জানে না সোরায়া ছাড়া।

বর্তমান ~
দুই বোন হাঁসি মুখে নিচে নেমে আসার কিছু সময় পর রুদ্র ও রহমান বাড়ির সামনে নিজের গাড়ি নিয়ে পৌঁছায়। রুদ্র গাড়ি থেকে নেমেই রোকেয়া বেগম আর শফিক রহমানকে সালাম করে-
-“আসসালামুয়ালাইকুম খালামনি, আসসালামুয়ালাইকুম খালু। কেমন আছো তোমরা?”
রোকেয়া বেগম আর শফিক রহমান একসাথে –
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, বাবা। আমরা ভালো আছি তুমি কেমন আছো?
রুদ্র-“আমি ভালো আছি।”
রোকেয়া- “দুলাভাই আর আপা ভালো আছে তো?”
রুদ্র- “হ্যাঁ, বাবা-মা ও ভালো আছে। এখন ওই দুই মহারানীদের আসতে বলো এখন রওনা না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।”
রুদ্রর কথা শেষ হতে না হতেই মিরায়া আর সোরায়া চেঁচিয়ে রুদ্র কে ডেকে উঠে- “রুদ্র ভাইয়া! এই যে আমরা চলে এসেছি।
বাড়ির দরজা পার করে রুদ্রর সামনাসামনি হয়-

” কেমন আছো ভাইয়?”
রুদ্- “ভালো আছি বোনুরা । তোরাও যে ভালো আছিস বুঝাই যাচ্ছে।”
রুদ্রর কথায় দুইবোন মুচকি হেঁসে। চাচা-চাচির থেকে বিদায় নিয়ে তারা রওনা দেয় ঢাকার উদ্দেশ্যে।
এরপর পথে পর পর আর সময়ের পর সময় যেতে থাকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ মিরায়া জানালার বাইরে নজর রেখে উপভোগ করছে সময় টুকু। এমন সময়-
রুদ্র – “মিরা? হঠাৎই চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় যাওয়ার কারণটা কি ?”
মিরায়া- “আমার স্বপ্নের জন্য রুদ্র ভাইয়া । আমার মনে হয় ঢাকাতেই আমার ভবিষ্যৎ অবধারিত।”
কথাটা রুদ্রকে এক প্রকার চিন্তায় ফেলে দেয়। সে মনে মনে ভাবতে থাকে মিরায়ার কথাতে তো কোনো ভুল নেই সত্যিই তো মিরায়ায ভবিষ্যৎ তো তার বড় ভাইয়ের সাথেই বাঁধা পরে আছে আর ঢাকাই তো ওর আসল বাড়ী।
তবে সে এসব কথা না মাথায় এনে সোরায়াকে উদ্দেশ্য করে জিগ্যেস করে-

“আর এই যে ছোট বোনু আপনার কি খবর? আপনি কেন ঢাকা যাচ্ছেন?”
সোরায়া রুদ্রের কথায় বিরক্ত হলো তবে বিরক্তি প্রকাশ না করে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল –
-” আরে রুদ্র ভাইয়া আমি তো যাচ্ছি আপুকে রক্ষা করতে, ও অনেক ভীতু তো তাই।
ওহ্! না , আমি যাচ্ছি তোমার অন্ন ধ্বংস করতে।
ওহ্! Sorry , আসলে আমি যাচ্ছি ঢাকার একটা বড়ো লোক , আর সুদর্শন পুরুষকে বিয়ে করতে।
আল্লাহ! আসলে এটাও না। আমি তো যাচ্ছি মজা করতে।”
সোরায়ার কথায় মিরায়া আর রুদ্র দুজনই শব্দ করে হেঁসে দেয়। রুদ্র হাসতে হাসতে আবার বলল-
“তোরা মেয়েরা আসলে যে কি চাস!”
রুদ্রর কথায় মিরায়া আর সোরায়া চোখাচোখি করে রুদ্রর কথার উত্তরে একসাথে গেয়ে উঠলো-
-“Shilpa sa figure, bebo se ada…
Bebo se adaaa….”

তিন জন এবার একসাথে হেসে উঠলো। আর গাড়ি যেতে থাকল চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশ্যে।
চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছেই থামলো । বাড়ির বড় বউ কে ঘরে তুলতে রামিলা চৌধুরী মূল দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। মিরায়া রামিলা চৌধুরী কে দেখেই লাফিয়ে নামতে গাড়ি থেকে –
-“আসসালামুয়ালাইকুম মামনি । কেমন আছো? কত দিন পর দেখলাম তোমাকে আগের মতোই সুন্দরী আছো। কি মাখো গো?”
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম মা। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোকে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি তাই তো বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। তুই আমার সৌন্দর্যের কারণ।”
কথা গুলো রামিলা চৌধুরী মিরায়া কে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন। আর পিছন থেকে শোনা গেল সোরায়ার অভিমানী আওয়াজ –

-“বাহ্! বড় মেয়ে কে পেয়ে সবাই দেখি ছোট মেয়ে কে ভুলে যায়। বলি, আমাকে কি একটু আদর দেওয়া যাবে?”
রামিলা চৌধুরী সে দিকে তাকিয়ে সোরায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে ওকেও ডেকে নেয়। পরে এক সাথে তারা চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করে।
আর মিরায়া প্রথম বারের জন্য তার অজ্ঞাত শশুর বাড়ি দেখতে পেল। মিরায়া রীতিমতো অবাক চৌধুরী বাড়ি দেখে। বাড়ির প্রতিটি কণা যেন শৌখিনতার প্রতিচ্ছবি।

সবুজঘেরা এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে একটি মনোরম ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার প্রতিটি ইট যেন রুচির ছোঁয়ায় গড়া। বাড়িটির বাইরের দেওয়াল গাঢ় কালো আর সাদা রঙের সংমিশ্রণে আধুনিক নকশায় আঁকা, যা এক নজরে চোখে পড়ে। সামনে ছোট একটি লন—ঘাসে ঢাকা, ফুলে ফুলে ভরা। পাথরের পথ বেয়ে মূল দরজায় পৌঁছানো যায়, যেখানে ঝকঝকে কাঠের দরজা আর পাশে দুটি মার্বেলের ফলক আলাদা মাত্রা এনে দেয়।
বাড়ির ভেতরে পা রাখলেই চোখে পড়ে উন্মুক্ত একটি ড্রয়িংরুম, উঁচু ছাদে ঝুলছে একটি স্ফটিকের ঝাড়বাতি। মার্বেল পাথরের মেঝে, নান্দনিক কাঠের আসবাবপত্র, এবং মৃদু রঙের ওয়ালপেইন্ট পুরো ঘরে এক ধরনের শান্ত সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিয়েছে। দেয়ালে ঝুলছে নির্বাচিত শিল্পীর আঁকা ছবি, আর বুকশেলফে সারি সারি বই—যেন প্রতিটি কোণেই মালিকের রুচি ও জ্ঞানের ছাপ।

বাড়ির পেছনে রয়েছে একটি ছোট উঠোন ও একটি ছিমছাম বাগান, যেখানে বসার জায়গা করা হয়েছে কাঠের টেবিল-চেয়ারে। দোতলায় উঠলেই চোখে পড়ে খোলা ব্যালকনি, যেখানে সকালের কফি কিংবা সন্ধ্যার গল্পের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। শোবার ঘরগুলো সাজানো হয়েছে পরিমিত আলোর ব্যবহারে—নরম আলো, পর্দার রঙ, বিছানার চাদর—সব কিছুতেই একধরনের প্রশান্তি মিশে আছে।
এই বাড়ি শুধু বসবাসের জন্য নয়, এটি একধরনের জীবনদর্শন—যেখানে বিলাসিতা নয়, বরং রুচি, নান্দনিকতা ও স্বাচ্ছন্দ্যের মেলবন্ধন ঘটেছে নিখুঁতভাবে।
মিরায়া চারপাশটা খুব ভালো করে দেখে নেয়-

“মামনি কি সুন্দর বাড়ি তোমাদের। একনজরে চোখে আটকে যাওয়ার মত সুন্দর।”
রামিলা চৌধুরী যেন মিরায়ার কথায় স্বস্তি পেলেন। মুখে প্রশান্তির হাসি নিয়ে তিনি বললেন-
“তোর পছন্দ হয়েছে মা?”
-“খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এভাবে জিগ্যেস করছো কেন মামনি? মনে হচ্ছে মনে হচ্ছে আমার থেকে কনফার্মেশন নিচ্ছো আমার বাড়ি ভালো লাগেছে কি না।”
মিরায়ার কথায় রামিলা কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ থাকেন। তারপর মিরায়া আর সোরায়া কে তাদের রুম গুলো দেখিয়ে দেন। মিরায়া তার রুমের ভিতরে যাওয়ার সময় তার রুমের পাশের একটা রুমের দরজায় তালা দেখে জিজ্ঞেস করে-

“মামনি এই রুমটা কার? এখানে তারা কেন?”
মিরায়ার প্রশ্নে রামিলা চৌধুরী রায়ানের তালা ঝুলতে থাকা রুমের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন-
“এটা আমার বড়ো ছেলে রায়ানের রুম। ও আমেরিকায় থাকে তাই ওর রুমটা এখন বন্ধ।”
মিরায়া স্বাভাবিক ভাবেই নেয় উত্তরটা। তার পরই মিরায়ার চোখ যায় দেয়ালে থাকা রায়ানের ১৭বছরের একটা ছবিতে- যেমন সুন্দর হাস্যোজ্জ্বল, তেমন মায়া ভরা মুখ ছবিতে
-“মামনি এটাই বুঝি রায়ান ভাইয়া? ভাইয়া সেই দেখতে তো। এখন মনে হয় আরো সুন্দর দেখতে তাই না।”
মিরায়ার মুখে রায়ানকে ভাইয়া সম্বোধন করা দেখে মুচকি হেঁসে তিনি মনে মনে বলেন-

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪

“বোকা মেয়ে, স্বামীকে ভাইয়া বলে না রে।”
-“ও মামনি কি চিন্তা করো?”
চিন্তার অবসান ঘটিয়ে রামিলা চৌধুরী মজার ছলে বলেন-
-“কিছু না। হ্যাঁ, অনেক handsome আমার ছেলে। দেশে ফিরলে দেখতে পাবি। তোকে দিয়ে দেব ও এলে। এবার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।”
মিরায়া রামিলা চৌধুরীর কথা মজা ভেবেই উড়িয়ে দিয়ে রুমে ঢুকে গেল আর কথা বাড়ালো না।
আমেরিকা~

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here