আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৫
অরাত্রিকা রহমান
আমেরিকা ~
ধূলিমাখা ট্র্যাকে শেষ হল বাইক রেস। দর্শকের করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠল পুরো স্টেডিয়াম। বিজয়ীর ট্রফি হাতে রায়ান যখন মঞ্চে উঠছিল, তার চোখে ধরা পড়ল প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কয়েকজনের ঈর্ষান্বিত দৃষ্টি। বিশেষ করে Meera — সে আগের তিন রেসে জিতেছে — এবার রায়ানের কাছে হেরে গিয়ে হিংসায় জ্বলছে।
রায়ান যখন গ্যারেজে তার বাইকটা পার্ক করে পানির বোতলে চুমুক দিচ্ছিল, তখন হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ধাক্কা দেয়। সে সামলে উঠতেই দেখে চারদিক ঘিরে ফেলেছে Meera আর তার গ্যাং — মুখে ধূর্ত হাসি, হাতে রেঞ্চ, চেইন আর হেলমেট।
Meera:
“You really thought winning the race makes you the king? This is just the beginning, Ryan!”
রায়ান ঠাণ্ডা গলায় বলল:
“Losing with dignity is better than attacking from behind, Meera. And I always answer injustice in my own style.”
কথা শেষ না হতেই এক চেইন swung করে এল রায়ানের দিকে। রায়ান দারুণ ফুর্তিতে সেটাকে এড়িয়ে গিয়ে এক ঘুষিতে meera-এর সঙ্গী luka-কে মাটিতে ফেলে দিল। তখন শুরু হল ধ্বংসযজ্ঞ।
একজন লোহার রড নিয়ে এগিয়ে আসে, রায়ান সেটাকে কুস্তিগিরদের মতো কাঁধে তুলে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে। আরেকজন পেছন থেকে হেলমেট দিয়ে মাথায় মারতে যায় — রায়ান হেলমেটটা কাবু করে উল্টো তার মাথায় পরিয়ে দেয়, তারপর এক চড়!
মারামারির মাঝখানে রায়ান হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে চারদিক দেখে বলে ওঠে:
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“Those who attack after losing… were born defeated.I win races with speed, and battles with strength.”
সবাই অবাক হয়ে যায় তার সাহস আর দক্ষতায়। একে একে সবাই কাহিল হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকে।
শেষে Meera ক্লান্ত আর রক্তাক্ত হয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে:
“You’re… you’re a beast!”
রায়ান এগিয়ে গিয়ে বলে:
“No, Meera. I’m Ryan — the name that never gives up.”
রায়ান ধুলো ঝাড়ে, বাইকে ওঠে, আর ধ্বংসস্তূপের মাঝখান দিয়ে ধীরে ধীরে স্টাইল করে বেরিয়ে যায়। পেছনে পড়ে থাকে হারানো গ্যাং।
সন্ধ্যায় ~
শহরের সবচেয়ে সম্মানজনক কর্পোরেট ইভেন্ট ।আজ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেজে উঠেছে পুরো কনভেনশন সেন্টার, অতিথিদের চেহারায় উচ্ছ্বাস, মিডিয়ার ঝলকানিতে চারপাশ আলোয় ঝলমল।
সবাই অপেক্ষায়, কারণ আজ রাতের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মুখ — রিভান চৌধুরী রায়ান।
সেরা তরুণ উদ্যোক্তার পুরস্কার পেতে চলেছে সে। তবে যতই সন্ধ্যা গড়িয়ে যাচ্ছে, রায়ানের চেয়ার ফাঁকা।
রায়ানের ম্যানেজার তানভীর হোসেন দৌড়াদৌড়ি করছেন।
— “He’s on his way. There was a bit of a street accident, a bike race went wrong — but he’s fine. Just running a little late,” — বললেন তিনি আয়োজকদের উদ্দেশ্যে।
মিডিয়া, স্পনসর, সবার চোখে প্রশ্ন। কেউ কেউ বলছে রায়ান কি ইভেন্টে আসবেই না?
তানভীর এবার মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোন হাতে নিলেন।
— “Ladies and gentlemen, please don’t worry. Ryan Chowdhury is safe, and he is on his way. A sudden trafficking caused by a local street race held him up briefly, but he will be here. We request a little more patience as we proceed with the show.”
তানভীর মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
ভিআইপি লাউঞ্জে তখন সাইফুর রহমান, ইসমত জাহান আর নাফিস সিদ্দিক আলোচনায় ব্যস্ত।
সাইফুর বললেন—
— “This kid’s got fire. I heard he actually joined a street race today just for fun. With local bikers!”
ইসমত হেসে বললেন—
— “He’s got guts, sure. But this kind of wild image… is that really the brand you want as a CEO?”
নাফিস ধীরে কফি চুমুক দিয়ে বললেন—
— “His brand is unpredictable. He doesn’t show up now, the buzz gets louder. But when he does walk in… boom. That’s star power.”
উপস্থাপক মঞ্চে এসে ঘোষণা করলেন—
— “And now, the award for Young successful Entrepreneur of the Year 2025 goes to… a visionary who has built a bridge between dreams and daring — Mr. Ryan Chowdhury!”
কিন্তু কেউ উঠে এল না।
সামনের সারিতে ফাঁকা চেয়ার। দর্শকদের ফিসফাস—
— “Is he seriously not coming?”
— “So unprofessional.”
— “Or maybe this is all planned — a grand late entrance?”
উপস্থাপক কিছুটা অস্বস্তিতে বললেন—
— “Let’s move forward with the next segment while we await Mr. Chowdhury.”
হঠাৎ বাইরের স্ক্রিনে লাইভ ভিডিও চালু হয়। দেখা যায় এক কালো হায়াবুসা বাইক গর্জে উঠে থামে গেটের সামনে।
রাইডার হেলমেট খুলে, ধুলো মাখা মুখে, ক্লান্ত হাসি নিয়ে নেমে আসে।
— রায়ান।
সবার মুখে বিস্ময়।
মঞ্চে তখন লাইট নিভে যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে ড্রাম রোল। স্পটলাইট তার আগমনপথে।
উপস্থাপক উল্লসিত গলায় বলেন—
— “And here he is, the man of the hour — Ryan Chowdhury!”
রায়ান মঞ্চে উঠে বললেন—
— “I apologize for being late. On my way here, I came across a street accident. This award — it’s not just for me. It’s for every dreamer who dares to fall and rise again. Everyone one thank you for your appreciations.Thanks for inviting me. Have a good day you all.”
চারদিক তখন করতালির ঝড়।
সবাই রায়ানের সাথে কথা বলতে থাকে এক এক করে সকলেই রায়ানকে তার সফলতার জন্য congratulate করছিল।
সন্ধ্যার আয়োজন থেকে ফিরে ক্লান্ত রায়ান ফ্রেশ হয়ে গা এলিয়ে দেয় তার বিলাসবহুল বিছানায়। তার পাড়ি দেয় গভীর ঘুমের রাজ্যে।
বাংলাদেশ~
ঘুমটা ভাঙল হঠাৎ এক অচেনা শব্দে।
মিরায়া চোখ মেলে তাকিয়ে বুঝতে পারল, সে আর তার চেনা শহরে নেই। জানালার পর্দা ফাঁক দিয়ে সূর্যের হালকা আলো বিছানায় এসে পড়েছে। কোথাও একটা রিকশার ঘন্টার শব্দ, পাশের রাস্তায় অল্প অল্প গাড়ির হর্ন, আর দূরে কে যেন হাঁক দিচ্ছে—কোনো সবজিওয়ালা বা দুধওয়ালা।
তার বিছানার পাশেই কাঠের ছোট্ট একটা সাইড টেবিল, যেখানে আগের রাতের জল ভর্তি বোতলটা পড়ে আছে। এসি এর ঠান্ডা হাওয়ায় শান্ত একটা মুহূর্ত।
কিছুটা সময় লাগল তার বুঝে নিতে—সে এখন ঢাকায়। নতুন জীবন শুরু করতে এসেছে—এই শহরে, যে শহরের গল্প সে শুনেছে ছোটবেলা থেকে। এই শহরের ভেতরে প্রথম নিঃশ্বাস নিচ্ছে। জানালার ধারে রাখা গাছটা একটু বেঁকে আছে, তবু তার পাতাগুলো ঝকমক করছে আলোয়।
একটু উঠে বসে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল সে। প্রশান্তিময় একটা ভালো লাগা যেন মনের মধ্যে কাজ করছে । যেন এই জীবনটা তার একান্ত প্রাপ্য।
সব কিছুই নতুন, তবু যেন কোথাও একটা চেনা অনুভব হচ্ছে। একটা ঘরোয়া গন্ধ—এই শহরের নিজস্ব ঘ্রাণ।
মিরায়ার মনে হলো-
“Maybe, just maybe… this city will feel like home too.”
ও উঠে বসতেই দরজার ওপাশে ঠক ঠক করে শব্দ—
— “মিরা মা, উঠেছিস? চা-টা ঠান্ডা হয়ে যাবে কিন্তু!”
গলা রামিলা চৌধুরীর। একরাশ আদরে মোড়া, আবার ভেতরে কোথাও হালকা হুঁশিয়ারি।
মিরায়া তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে নামল একটা হলদে কুর্তি পরে। ডাইনিং টেবিল ইতিমধ্যেই পরিপাটি করে সাজানো—পরোটা, ডিম ভাজা, কাঁচা মরিচের টুকরো, এক বাটি দই, আর একপাশে ধোঁয়া ওঠা চা।
রামিলা চৌধুরী হাসিমুখে মিরায়ার উপস্থিতিতে,
— “এই যে রাজকন্যা অবশেষে উঠেছে! ঢাকার রোদ কি একটু বেশি চড়েছে তোর চট্টগ্রামের তুলনায়?”
— “না মামণি, ঢাকার রোদ না, ঢাকার হর্নেই ঘুম ভাঙে!” — বলে মিরায়া হেসে বসল ডাইনিং এর একটা চেয়ার টেনে।
রামিলা চৌধুরী চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে,
— “বাহ্! কথায় তো ব্যঙ্গের সুবাস! পছন্দ হলো!”
— “তবে খেয়াল রেখো, এখানে ব্যঙ্গ বেশি করলে
ওরা তোকে সিটি কর্পোরেশনে ভর্তির ফর্ম ধরিয়ে দেবে!”
এতক্ষণে সিঁড়ি দিয়ে গোঁ গোঁ করে নিচে নামার শব্দ।
সোরায়া ঘুমঘুম চেহারায় নিচে নেমেই,
— “আপু! তুমি আমায় রেখে একা নাস্তা শুরু করছো? বিশ্বাসঘাতকতা!”
— “তোর ঘুম দেখে ভাবলাম তোকে না জাগানোই মানবতা।” — হেসে বলল মিরায়া।
রামিলা চৌধুরী সোরায়াকে দেখে বললেন –
— “এই মেয়েটা তো ঘুমিয়েই বড় হচ্ছে। নাস্তা খেতে এসে যদি আবার ঘুমায়, আমি বালিশ এনে দেব!”
সোরায়া চোখ ডলতে ডলতে বলল-
— “মামণি, আমি এখনো REM stage-এ ছিলাম। চামচ না দিলে চোখ বন্ধ করেই খাব।”
তারা তিনজন টেবিলে বসে গল্পে মেতে উঠতেই, হঠাৎ পেছন থেকে এক গম্ভীর গলা:
“ঘুম থেকে উঠে সবার আগে যা প্রয়োজন — সেটা হলো: সাউন্ড এন্ট্রি।”
সবার মাথা ঘুরে গেল রুদ্রের দিকে। হাতে একটা সানগ্লাস, চুল এলোমেলো, আর পরনে স্রেফ একটা ঝুলন্ত টি-শার্ট — যেন ফ্যাশন আর অবহেলার নিখুঁত মিশেল।
রুদ্র হাসিমুখে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে,
— “সো, কেমন লাগছে ঢাকায় first morning, Miss চট্টগ্রাম & Miss Snooze Button?”
মিরায়া:
— “একদম প্রাণবন্ত! কিন্তু ঢাকায় তুমি ছাড়া কেউ কি সকাল ৮টায় সানগ্লাস পরে ঘোরে?”
রুদ্র চা হাতে নিয়ে দাঁড়াল,
— “আমি ঘুম থেকে উঠে নিজের সৌন্দর্য সহ্য করতে পারি না, আমি নিজেকেই সানগ্লাসে ঢাকি।”
সোরায়া হেসে শব্দ করে হেঁসে উঠল রুদ্রর কথায়,
— “ভাইয়া, তুমি কি mirror-এ তাকালে তোমারছায়াও লজ্জা পায়?”
রুদ্র:
— “না, আমার ছায়া তো cool. আর আমি তো hot.”
রামিলা চৌধুরী –
_”নিজের ছেলের সব কোয়ালিটি আছে জানলে ফ্রিজ আর মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিনতাম না। আগে বলতে পারলি না। তোকে দিয়েই সব hot আর cool করা যেত।”
রুদ্র:
— “অপমান পেলাম। কিন্তু যেহেতু দই খেতে দিচ্ছো, মাফ করে দিলাম তোমাদের।”
তিনজনের হাসিতে গড়িয়ে পড়ে ।টেবিলে যেন প্রাণ ঢুকে গেল।
রুদ্র:
— “ঠিক আছে, আজ বিকেলে আমি তোমাদের ঢাকার সবচেয়ে কম জনপ্রিয় কিন্তু সবচেয়ে বিখ্যাত চা দোকানে নিয়ে যাবো। গুগল-এ পাওয়া যাবে না, ইনস্টাগ্রামে ট্রেন্ডিং না, কিন্তু চায়ের গ্লাসে প্রেম পাওয়া যাবে।”
মিরায়া:
— “প্রেম দরকার নেই ভাইয়া, একটা ভালো সিঙ্গারা হলে চলবে।”
সোরায়া:
— “আর আমার জন্য একটা ‘শান্তিময় দোকান’ খুঁজে দিয়ো, যেখানে তুমি থাকবে না।”
রুদ্র বাকা হাসলো সোরায়ার কথায়,
— “হাহা, এই ডায়লগ আমি টিশার্ট বানিয়ে বিক্রি করবো। এক নম্বর কনটেন্ট।
সকালের এমন মজায় মুখরিত পরিবেশে সবাই সকালের নাস্তা করে নেয়। নাস্তা শেষে রুদ্র গাড়ি করে চলে যায় তাদের নিজস্ব company তে।
বিকাল ~
বিকেলটা নামে হালকা গরম আর হেঁয়ালিপনা নিয়ে।রুদ্র অফিস থেকে ফিরে গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে মিরায়া আর সোরায়াকে নিচে নামতে বলে তাদের কে একটু ঢাকার শহড় টা দেখাবে বলে ।
মিরায়া আর সোরায়া রুদ্রর ডাক শুনে দৌড়ে বাইরে এলো।
রুদ্র:
— “মিরা, সোরা, প্রস্তুত তো? আজ তোদের এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবো, যেখানে নেটওয়ার্ক আসে না, কিন্তু কানেকশন হয় খুব জোরালো।”
সোরায়া চোখ ছোট করে বলল:
— “ভাইয়া, তুমি কি এইসব সংলাপ আয়নায় দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস করো?”
রুদ্র হাসতে হাসতে জবাব দেয় –
— “নাহ, গুগল থেকে Inspiration নেই, Delivery আমার নিজস্ব।”
মিরায়া:
— “শুধু কথা কম, AC গাড়ি থাকলে চলি। তোমার poetic হাওয়ায় আমরা গলে যাচ্ছি।”
তিনজন মিলে গাড়িতে উঠে বসে। ঢাকার রাস্তা তখন অফিস শেষে মানুষের ঢল, ভ্যাপসা গরম, আর মাঝে মাঝে হঠাৎ একটা বিয়ের গেট, লাউড স্পিকারে গান — “দুষ্টু কোকিল ডাকে রে, কু কু কু কু কু কু…” বাজছে।
র্গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে রুদ্র দাঁত কেলিয়ে বলে—
“এই গানটাই আমি future wife-কে dedicate করবো। শুধু শর্ত হলো, ওকে কোকিল হতে হবে, মানুষ না।”
সোরায়া:
— “তা হলে তো ও পালিয়ে যাবে।”
মিরায়া:
— “তুই আগে পাখি না বানিয়ে, নিজে মানুষ হো। জীবন সঙ্গী যেমনি হক পালিয়ে যাবে কোথায়।”
মিরায়ার কথায় রুদ্রর হাঁসি থেমে যায় । সে মনে মনে ভেবে বিরতির করল-
-“যায় যায় মিরু। তোর জীবন সঙ্গী গেছে। উফ্! ভাইয়া কেন যে এমন করল। এখন ভাবীরে ভাবী ও ডাকতে পারি না। আর না ডাকলে আম্মু চেঁচাতে থাকে। ধুর ধুর! এইটা কিছু হইল।”
অবশেষে একটা পুরনো মোড়ের মাথায় এসে দাঁড়াল গাড়ি টা । দোকানের সাইনবোর্ডে পুরনো বাংলা হরফে লেখা —
“ফিরে দেখা চা”
নিচে ছোট করে — “কথায়, কাপে, কণ্ঠে চিরায়ত নস্টালজিয়া”
দোকানটা আসলে ছোট, ছিমছাম, কাঠের বেঞ্চ, একটা পুরনো ক্যাসেট প্লেয়ার যা অবিরাম সত্তরের গান বাজায়। চারপাশে ল্যাম্পশেডের মৃদু আলো, টেবিলে পুরনো সিনেমার ডায়লগ লেখা কাগজ ছড়ানো।
মিরায়া চোখ বড় করে আশ্চর্য হয়,
— “ওয়াও! এটা তো সত্যিই cinematic!”
রুদ্র অহংকারের সাথে:
— “বলেছিলাম না? এখানে কেউ আসে না টিকটকের জন্য, সবাই আসে মন রেখে যেতে।”
সোরায়া সিরিয়াস মুখে :
— “ভাইয়া, তুমি এত কিছু জানলে কবে? এক্সট্রা কোচিং করতে নাকি?”
ওরা তিনজন এক কোণার বেঞ্চে বসল।
চা এলো — মাটির ভাঁড়ে, কড়া দুধ-চিনি মেশানো, পাশে এক প্লেট মুড়ি আর নারিকেলের পিঠা।
সোরায়া:
— “মিরু আপু, বুঝলি তো, এই পিঠাটা খেলেই আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।”
মিরায়া:
— “তোর ভবিষ্যৎ আমি বলে দেই — বিয়েতে তুই বরের বদলে মেনু চাইবি!
রুদ্র:
— “আর দুলাভাইকে বলবি, “তোমার চেয়েও এই পিঠার টেক্সচার ভালো!”
চায়ের চুমুকে চুমুকে গল্প এগোয়, রুদ্র মাঝেমাঝে এমন কিছু কথা বলে, যেগুলো হালকা দার্শনিক, আবার মজার।
রুদ্র:
— “জানিস, মিরায়া, এই দোকানটা আমি বানাইনি, কিন্তু খুঁজে পেয়েছিলাম এমন এক সন্ধ্যায়, যখন ভাইয়া আর আমি ছোট। ভাইয়া দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমি আমার ভাইয়া কে যখন মিস করতাম তখনি আসতাম।”
মিরায়া মৃদু হাসি দিয়ে:
—” আচ্ছা রুদ্র ভাইয়া রায়ান ভাইয়া কি দেশে ফিরবেন না? আমি উনাকে কখনো দেখিনি। কিন্তু তোমরা সবাই উনার কথা বলো। উনি দেশে আসলে ভালো হবে তাই না মামণি অনেক খুশি হবে।”
রুদ্র হালকা হেঁসে মনে মনে বলে-
“ভালো হবে না ছাই। তুই ঢাকায় আমাদের বাড়িতে আছিস শুনলে আমেরিকায় বসেই গিলে ফেলবে আমাকে। কি একটা মানুষ বউকে না দেখলো না জানলো। তার আগেই অস্বীকার।”
মনের কথা মনে রেখেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুদ্র মিরায়ার কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
চা খাওয়া শেষে ওরা দোকান থেকে বেরিয়ে হেঁটে গাড়ির দিকে যাচ্ছে। রুদ্র মাঝপথে বলল—
“জানিস মিরু, তোদের আসায় বাড়িটাও একটু বেশি শব্দ করে বাঁচছে মনে হয়। আম্মু বলে, কেউ কেউ আসে না থাকার জন্য, আসে ঘরকে জাগিয়ে তোলার জন্য।”
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪ (২)
মিরায়া চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। সোরায়া কাঁধে মাথা রাখে।
তারা বুঝতে পারে, এই শহরটা শুধু ইট-পাথরের নয়—এখানে মানুষের মধ্যে গল্প লুকিয়ে থাকে। তারপরই গাড়িতে চড়ে বাড়িতে চলে যায়। আর দিন পার করতে থাকে।
আর আমেরিকায় রায়ান তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্লেন বানাতে ব্যস্ত থাকলো।