আত্মার অন্তরালে পর্ব ৩
প্রীতি আক্তার পিহু
সকালটা অন্য দিনের মতো সাধারণ। আনায়া ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটি জন্য পুরোপুরি তৈরি। কিন্তু নিচে নামার আগেই তার চোখ আটকে ইউভানের রুমের দিকে। এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ায় সে।
এক দৌড়ে রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। একটু সাহস সঞ্চয় করে মাথা ঢুকিয়ে ভেতরে তাকায়।
ইউভানের অনুপস্থিতি নিশ্চিত করে সে এবার পা টিপে টিপে ভেতরে ঢোকে। বিছানার দিকে চোখ যায় তার। ধীরে ধীরে বিছানায় বসে দেখে নরম কতটা। তারপর একটু লাফ দেয়। তার নিজের বিছানার এমন আরামদায়ক অনুভূতি নেই। লাফাতে লাফাতে হঠাৎ নজরে পড়ে ইউভানের গিটারটা।
সে এক দমে বিছানা থেকে নেমে গিটারের কাছে আসে। কৌতূহলী দৃষ্টিতে গিটারটার দিকে তাকায়।সে যখনই গিটারটি হাত বাড়িয়ে ছুতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে পেছন থেকে ভেসে আসে একটা তীক্ষ্ণ ধমকের আওয়াজ—
“ডোন্ট টাচ দ্যাট ? রুমে ঢোকার সাহস হলো কীভাবে, স্টুপিড?”
আনায়া ভয়ে একদম কেঁপে ওঠে। ধীরে ধীরে ঘুরে পেছনে তাকায়।ইউভান পুরো ফরমাল গেটাপে দাঁড়িয়ে আছে।। চোখ মুখে রাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
আনায়ার হৃদয় আবার ছন্দ ফিরে পায়। প্রতিটা ধুকপুক শব্দ ইউভানের দিকে ছুটে যাচ্ছে। কিন্তু তার ধ্যান ভাঙ্গে ইউভানের আরেকটি ধমকে।
ইউভান কাছে এগিয়ে এসে আরও ধমক দেয়—
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এখানে কি তোর ? সাহস তো তোর হয়েছেই অনুমতি ছাড়া রুমে আসার, তার ওপর আমার জিনিস টাচ করারও!”
আনায়া ভয়ে গুটিয়ে গিয়ে একটু পেছনে সরতে থাকে। কিন্তু কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমতা আমতা করে বলে—
“কেন? আপনার এই গিটার আমি ধরলেই কি এটা ভেঙে যাবে?”
ইউভানের চোখ রাগে আগুন হয়ে ওঠে। চোখ বন্ধ করে নিচু স্বরে সে বলে—
“এই মুহূর্তে আমার রুম থেকে বেরিয়ে যা। আর কখনো যেন তোকে এখানে না দেখি।”
আনায়ার বুকটা কেমন ফেটে যায় কথাটা শুনে। তার চোখ ভরে আসে অভিমানে। সামান্য গিটারের জন্য তার সাথে এমন করবে?কই সে তো আয়ানের রুমে গিয়েও এটা সেটা ধরে তখন তো কিছু হয় না।আনায়া আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না দ্রুত পা চালিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে আসে ঠিক তখনই ইউভানের ফোনটা বেজে ওঠে। আনায়া থেমে দাড়ায়। ইউভান ফোনটা রিসিভ করতে যাবে, তার আগেই আনায়া ফোনটা তুলে নেয় আর এক ঝটকায় মেঝেতে আছড়ে ফেলে।
তারপর কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। ইউভান হতভম্ব হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। সবকিছু এত দ্রুত ঘটেছে যে তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
গভীর শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে ইউভান । অন্যদিকে, আনায়া এক দৌড়ে নিচে নেমে বাসা থেকে বের হয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসে।তখন রুহি অবাক হয়ে বলে,
“আজ আবার কী মিশন শেষ করে আসলি, এত হাপাচ্ছিস কেন?”
কোনো জবাব দেয় না আনায়া। চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবে—
“তোর সাহস কত, আনু! তুই তো নোবেল পাওয়ার যোগ্য! সেই বদমাশ বুইরা ফকস্টারকে উচিত শিক্ষা দিতে পেরেছি। মুখে বলতে পারিনি, কিন্তু হাতে ঠিকই দেখিয়ে দিয়েছি!”
নিজেকে বাহবা দিতে দিতে গাড়ি চলতে শুরু করে।রুহি পেছনের সিটে বসে এবার আরও তাড়া দেয়—
“কিরে এত কী ভাবছিস? বল না তুই কী করেছিস?”
আনায়া একসময় মুখ তুলে বলে,
“তোর ওই বদমাশ ভাইকে তার যোগ্য শিক্ষা দিয়েছি আজ। শুধু তার রুমে গিয়েছিলাম, এতটা রাগ দেখালো যেন আমি তার কোনো গুপ্তধন চুরি করতে গিয়েছি হুহু”
রুহি অবাক হয়ে বলে—
“তুই কী করেছিস?”
আনায়া হাসতে হাসতে বলে,
“তোর খচ্চর ফকস্টার ভাইয়ের ফোনটা ভেঙে দিয়েছি!”
আনায়া পেছনের দিকে ফিরে আরও কিছু বলতে যাবে তৎক্ষণিক বলার আগেই তার চোখ গিয়ে পড়ে ড্রাইভিং সিটে বসা ব্যক্তিটির দিকে। মুহূর্তেই হাসিটা মিলিয়ে যায়।কারণ ড্রাইভিং সিটে ইউভান সামনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর ভাবে দক্ষ হতে ড্রাইভ করছে। আনায়া হতভম্ব হয়ে যায়। পিছনে বসা রুহি দু’জনের দিকে বারবার তাকাচ্ছে।
আনায়া পাশের সিটে বসে, একদম নিশ্চুপ। কিছুক্ষণের জন্য সে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইল , কারণ সে বুঝতে পারে, কিছু একটা বেফাঁস বলে ফেলেছে।এরই মধ্যে ইউভানের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসে—
“হুম… তারপর? আর কী কী করেছিস? শুনি।”
আনায়া ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে রইল শুধু। ইউভান এবার সরাসরি অষ্টাদশীর চোখের দিকে তাকায়। গাড়ির জানালা দিয়ে মৃদু রোদ এসে আনায়ার চোখে পড়ছে। সেই সোনালি মণিগুলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ইউভান কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
আনায়া এদিকে হাত মুচরাতে থাকে, মনে হচ্ছে সে পুরোপুরি বাকরুদ্ধ। অন্যদিকে রুহি বহু কষ্টে নিজের হাসি চেপে রাখছে। সে না পারছে উচ্চস্বরে হাসতে, না পারছে কিছু বলতে। তার দুষ্টু চোখ দুটোই বলে দিচ্ছে যে সে পুরো বিষয়টা দারুণ উপভোগ করছে।
গাড়ি এসে থামে ভার্সিটির সামনে। কিন্তু গাড়ি পুরোপুরি থামার আগেই আনায়া এক লাফে বেরিয়ে পড়ে। যেন সে এই মুহূর্তে এখান থেকে পালাতে চায়। ইউভান সে দিকে তাকায়।রুহি ধীরে ধীরে নেমে আসে। আনায়া এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে ভার্সিটি গেটের দিকে এগোয়।রুহি পেছন পেছন এসে আনায়ার হাত খপ করে ধরে।
“কি হয়েছে, বল তো সত্যি করে! তুই ভাইয়ের ঘরে কীসের জন্য গিয়েছিলি?”
আনায়া পুরো শরীর ঘামে ভিজে যায়। সে আমতা আমতা করে বলে—
“ক…কেন বল তো, তোর ভাইয়ের ঘরে কোনো গুপ্তধন লুকানো আছে আমি যেতে পারব না?”
রুহি সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলে—
“তুই কি কিছু লুকাচ্ছিস? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তুই কিছু লুকাচ্ছিস।”
“তোর সব সময় উল্টাপাল্টা মনে হয়। আমি কি লুকাবো?”
রুহি তখনও থামে না। সে আরও খুঁচিয়ে বলে—
“তুই কি আমার ভাইয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে গেলি নাকি?”
আনায়া তৎক্ষণিক শুকনো গলায় কাশতে শুরু করে। কাশতে কাশতে বলে—
“তোরা সব আজগুবি কথা মাথায় কীভাবে আনিস বল তো! আমি কেন তোর বুড়ে খচ্চর ফকস্টারের ভাইয়ের প্রেমে পড়তে যাব? আমার জন্য ২২ বছর বয়সের হ্যান্ডসাম ছেলে আসবে হুহু।এখন চল ক্লাসে আরম্ভ হয়ে যাবে আজ আবার নিউ ইংলিশ প্রফেসর এর ক্লাস ফার্স্টে।”
রুহি আর কোন কথা বাড়ায় না।তারা দুজোন ক্লাস রুমের দিকে এগোয়।ক্লাসরুম জমজমাট সামনের বেঞ্চে বসে আছে আনায়া আর রুহি।আনায়া গভীর চিন্তায় মগ্ন আর রুহি নোটবুকে কিছু একটা দেখছে।আনায়ার মন শুধু দৌড়ায় দৌড়ায় ইউভানের কাছে যাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ক্লাসরুমে প্রবেশ করে নতুন ইংলিশ প্রফেসর। তাকে দেখে মুহূর্তের ক্লাসরুমের সবাই নিস্তব্ধ হয়ে উঠে দাঁড়ায়। শুধুমাত্র আনায়া বাদে।রুহি কয়েকবার আনায়াকে খোঁচা মারলেও আনায়ার একটুও নড়ল না।সে অন্য জগতে ডুবে আছে। তাৎক্ষণ পুরুষলী শীতল কণ্ঠ ভেসে এলো—
— “গুড মর্নিং, ক্লাস। আই অ্যাম ইউভান। ফ্রম টুডে, আই উইল বি টেকিং ইয়োর লিটারেচার লেসনস।”
চেনা পরিচিত কন্ঠের আওয়াজ শুনে আনায়া চোখ তুলে তাকায় সামনে মাস্ক পরিহিতা ব্যক্তিটির দিকে।তার বুকের ভেতর ধপ করে ওঠে।আনায়ার কেমন যেন মনে হল লোকটিকে কিছুক্ষণ আগেও কোথাও একটা দেখেছে।চোখগুলো খুব চেনা চেনা লাগছে তার কাছে।
তার লোকটাকে কেমন ইউভানের মত মনে হলো।আবার নাম ও এক?এতো মিল কিভাবে থাকতে পারে? সে রুহিকে খুঁচিয়ে বলে ওঠে,
“এই রুটি নতুন ইংলিশ প্রফেসর তো সম্পন্ন আমার ইউভান ভাইয়ের কপি।”
রুহি বিরক্ত হয়ে আনায়ার হাতে জোরে চিমটি কাটে। আনায়া আহহ শব্দ করে।
“আরে গাধির ঘরে গাধি ইউভান ভাইয়ের কপি না তোর সামনে ইউভান ভাই দাঁড়িয়ে আছে।”
আনায়ার মাথায় যেন বড়সড়ো একটা বাজ পড়ে। সে এটাই বুঝতে পারছে না ফকস্টার থেকে ইউভান কিভাবে প্রফেসর হল।
সে মুহূর্তে ভাবনার জগতে চলে আসে তারমানে নবীন বরণ উৎসবে যে তার হাত থেকে ফুলটি নেয়ে নি ওইটা ইউভান ভাই ছিল? আনায়ার মাথায় হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। লোডশেডিং এ অন্ধকারের ব্যক্তিকে কোনভাবে কি ইউভান ভাই?না না এগুলো আমি কি চিন্তা করছি।নিজের চিন্তা ভাবনার উপর নিজেই গালি দেয় পরে।
কিন্তু এই বিস্ময়ের মধ্যেও মনে হঠাৎ এক অদ্ভুত অনুভূতি বইল তার। ইউভান ভাই এখন প্রতিদিন তার চোখের সামনে থাকবে। সে প্রতিদিন ক্লাসে আসবে।আনায়ার মন কেমন যেন উড়ু উড়ু করছে, সে এখন প্রতিদিন নিয়মিত ভার্সিটিতে আসবে।আনায়া এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ইউভানের পানে।আনায়ার সম্পূর্ণ ক্লাস কেটে যাবে কলিজা ফুসফুসের ইউভান ভাইকে দেখতে দেখতে।কিন্তু ইউভান বোর্ড টপিক বোঝাতে ব্যস্ত। সেই মুহূর্তে পেছন থেকে ফিসফিসানের আওয়াজ শোনা যায়।
রোহান ও তার ফ্রেন্ডরা মিলে কয়েকটা মেয়েকে উত্তপ্ত করছে। ইউভান এবার বিরক্ত নিয়ে পিছনে ফিরে। কয়েক কদম এগিয়ে এসে ঠান্ডা কন্ঠে বলে ওঠে,
” কি হচ্ছে এখানে?”
ছেলেগুলা কিছুটা ভয় পায়। কিন্তু তার মধ্যে রোহান বুকে সাহস নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
“তেমন কিছু না স্যার শুধু মজা আরকি।”
ইউভানের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়।তার চোখ রাগে লাল হয়ে ওঠে। মুখের মাস্কের নিচে চোয়াল শক্ত হয়ে আছে।সে এবার পাশে বসে থাকা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
“আপনার আপনাদের জুতগুলো খুলে সামনে রাখুন।”
মেয়েরা প্রথমে একটু ঘাবড়ে যায়। তারা একে অপরের দিকে তাকায়। কেউ সাহস করে কিছু বলে না।আনায়া অবাক হয়ে সব কিছু দেখছে। তারপরই ইউভান রাগী কণ্ঠে পুনরাই বলে,
“হারি আপ! আই ডোন্ট লাইক রিপিটিং মাইসেল্ফ।”
মেয়েগুলো আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি তাদের জুতা খুলে সামনে রাখে।তখন ইউভান ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে এসে নিচু স্বরে বলে,
“জুতাগুলো তোমরা মাথায় নিয়ে পুরো ক্লাস দাঁড়িয়ে থাকবে। এন্ড ডোন্ট টেস্ট মাই পেইশেন্স আন্ডারস্ট্যান্ড? ”
পুরো ক্লাসরুম ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায়। ছেলেরা ভয়ে মাথা নিচু করে নেয়।কিন্তু রোহান কথাটা তার সম্মানে লাগে। সে এবার কিছুটা উচ্চস্বরে বলে ওঠে,
“এটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না স্যার?”
ইউভান কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে হুংকার ছাড়ে,
“লাস্ট ওয়ার্নিং, ডোন্ট মেইক মি রিপিট।ইউ হ্যাভ থ্রি সেকেন্ডস,ডোন্ট ওয়েস্ট দেম।হারি আপ!”
ছেলেগুলো দমে যায়। কোন উপায় না পেয়ে এক এক করে জুতা হাতে তুলে নেয়।পুরো ক্লাস রুমে চাপা উত্তেজনা কেউ পারছে না জোরে হাসতে। ছেলেগুলো এক এক করে মাথার উপর জুতা তুলে নেয়।তা দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছে।কিন্তু আনায়া ফিক করে হেসে বলে উঠে,
” আরেহ যা রোহানের সুন্দর সিল্কি চুল গুলো এখন জুতার ধুলার নিচে হিহি।”
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কথাগুলো ইউভানের কর্ণে পৌঁছায়। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে আনায়ার উপর। সঙ্গে সঙ্গে আনায়া ভয়ে গুটিয়ে যাই। ইউভান কয়েক কদম এগিয়ে আসে তার দিকে।দুহাত পকেটে বসে ঠান্ডা কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
“হোয়াট ইজ ইওর নেম মিস?”
আনায়া হা হয়ে তাকিয়ে রইল।ইউভান ভাই তাকে চিনে না? আনায়ার মনে মনে ভীষণ রাগ হয় তবে সেটা মুখে প্রকাশ করে না। মিনমিন করে উত্তর দেয়,
” আনায়া!”
” এটা কি অন্যকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার জায়গা? এখানে আপনি পড়ালেখা করতে আসেন নাকি অন্যকে নিয়ে ব্যঙ্গ মশকরা করতে আসেন? আনসার মি মিস আনায়া!”
ইউভানের মুখে নিজের পুরো নাম শুনে বুকের ভেতর ধপ করে ওঠে আনায়ার। ক্লাসরুমের সকলের নজর এখন তার দিকে। তবে আনায়া হার মেনে যাওয়ার পাত্রী নয়। সে দমে না গিয়ে বলে ওঠে,
“শুনুন ক্লাসে সবাই শুধু পড়ালেখা করতে আসে না।ক্লাসরুমে এক একজন এক এক প্রকার কাজ করতে আসে তাদেরকে সাত ভাগে ভাগ করা হয়:
প্রথম, এক দল যারা মানব সমাজ থেকে একশ হাত দূরে অন্য গ্রহে বসবাস করে।
দ্বিতীয়, একদল যারা শুধু ভন্ডামি করতে আসে।
তৃতীয়, একদল কারণ অকারণ ছাড়াই ডিপ্রেশনে কান্নাকাটি করতে থাকে সারাক্ষণ এসে।
চতুর্থ, একদল যারা দুনিয়াদারির খবর নাই নিজের মতো চিল মুডে থাকে।
পঞ্চম, একদল যারা কারণ অকারণ ছাড়া ঝগড়াঝাটি করতে আসে।
ষষ্ঠ, দল যারা হাসাহাসি করতে আসে তাদের হাসি শুনলে কিডনি পর্যন্ত লক হয়ে যাবে।
সপ্তম, দল যারা দর্শক অবুঝের ন্যয় শুধু সবটা দেখতে আসে।
আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন স্যারররর।”
ইউভান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। রুহিসহ পুরো ক্লাস হা হয়ে আছে।ইউভানের চোখ রক্তের মত লাল হয়ে উঠে তৎখান।সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
“গেট আউট অফ মাই ক্লাসরুম রাইট নাও।”
আনায়া চোখ বড় বড় করে তাকায়। এতক্ষণ এসে বুঝতে পেরেছে এবারও সত্য কথা বলতে গিয়ে ফেঁসে গেছে।একহাতে মাথা চুলকায়। ভয়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।ভালোমতোই বুঝতে পারছে বেফাস আজাইরা কথা বলেছে।তবুও মনে সাহস নিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
“ওই আসলে স্যার……
কোন কথা বলতে দেয় না ইউভান। পুনরায় হুংকার ছেড়ে বলে,
“ইউ হ্যাভ এক্সাক্টলি ফাইভ সেকেন্ডস বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। আউট নাও।”
কেঁপে ওঠে আনায়া।চোখ ছল ছল করছে তার। ইউভান কিভাবে করলে তাকে সবার সামনে অপমান করতে? আনায়ার মনে মনে ভীষণ রাগ হয়।সে একটা কথা না বলে চুপচাপ বেরিয়ে আসে ক্লাস রুম থেকে।মনে মনে ইউভানকে গালি দিতে মোটেও ভুলিনি সে। মনে মনে আওরাতে থাকে “অসভ বদমাইশ বুইড়া খাটাশ ফকস্টার। তোর কপালে কোন মেয়ে জুটবে না অভিশাপ দিলাম।আমাকে না জেনে ভান করছে কত বড় বজ্জাত হুহু।দেখে নেব আমি তোকে ।” রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার।
পুরো ক্লাস রুম শান্ত। ইউভান একবার জুতা মাথায় নিয়ে ধরে রাখা ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে মস্কের আড়ালে। এরপর পুনরায় ক্লাসে মনোযোগ হয়।
ক্যান্টিনের এক কোণে গাল ফুলিয়ে বসে আছে আনায়া। তার সামনে রাখা এক কাপ চা ঠান্ডা হয়ে গেছে। পাশে বসে থাকা রুহি কোনো চিন্তা ছাড়াই স্যান্ডউইচ, সমুচা, রোল সব গপগপ করে গিলছে।
আনায়া বিরক্ত মুখে বললো,
“শুধু শুধু তোকে রাক্ষস বলি না। সারাদিন খেতে থাকিস!”
রুহি এক কামড়ে চিকেন প্যাটিস শেষ করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“তো কি করবো? খিদা লাগলে খাব!”
আনায়া এবার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে উঠলো,
“তোর ভাই আমাকে ক্লাসরুম থেকে বের করে দিয়েছে! এটা কি সহ্য করার মতো?তুই এখানে নিশ্চিন্ত হয়ে খাচ্ছিস?”
“তাহলে তুই ক্লাসের মধ্যে উল্টাপাল্টা কথা বললি কেন? তোকে যে আমার ভাই সবার সঙ্গে থাপ্পড় মারেনি এটা তোর সৌভাগ্য হুহু।”
আনায়া তেতে ওঠে।তাই ইচ্ছা করছে সব কিছু পুড়িয়ে ফেলতে।
“তোর বুইরা ফকস্টার ভাইয়ের বিয়ে হবে না বলে দিলাম। কি মনে করে সে নিজেকে?তার মুখে শুধু একটাই কথা গেট আউট। এতে কোন মেয়ে আসার আগেই পলাবে হুহু।”
রুহি উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে বলে,
“আমার ভাইয়ের জন্য মেয়েদের লাইন লেগে আছে বুঝলি?”
আনায়া মুখ বাকায় সে কিছু বলতেই যাবে তার আগে পাশের টেবিল থেকে কয়েকটা মেয়ের কথা তার কানে ভেসে আসে। কয়েকটা মেয়ে বলতে থাকে,
” ইউভান স্যারের হেয়ারস্টাইলটা কেমন লাজবাব, না? এলোমেলো অথচ কিলিং লুক উপস।”
“তার ভয়েস শুনেছো? উফ কী ডিপ যেন মুভির কোনো ডার্ক হিরো।আমি চাই স্যার আমাকে আলাদা করে পড়াক।”
আনায়া মুখ শক্ত হয়ে আসে। ইউভানকে নিয়ে মেয়েদের এত লাফালাফি ভালো লাগছে না একদম।সে তারপরও চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে আনিকা নামক একটি মেয়ে বলে ওঠে,
“ইউভান স্যার কি হট দেখেছিস? বেড পারফরমেন্স ও সেই হবে স্যারের।আমি একদিন হলেও বেড শেয়ার করতে চাই তার সাথে ইশশশশ।”
আনায়া আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না।আনিকার আগুনে ঘি ঢালার মতো কথা আনায়া মেনে নিতে পারল না। এক মুহূর্তও দেরি না করে আনায়া চেয়ার সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। গরম শ্বাস ফেলতে ফেলতে আনিকার টেবিলের দিকে এগিয়ে এল।আনায়া কোনো সতর্কতা না দিয়েই আনিকার চুলের মুঠি চেপে ধরে গর্জে ওঠে,
“তোর সাহস কীভাবে হয় এসব কথা বলার?তোকে জানি মেরে ফেলবো আজকে আমি।তোর বেড শেয়ার করার শখ মিটিয়েই ছাড়বো আজকে শাকচুন্নি একটা।”
আনিকা ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো, কিন্তু আনায়া তখনো ছাড়েনি।
“এই মেয়ে কি করছো ছাড়ো বলছি।”
রুহি দৌড়ে এসে আনায়ার হাত টেনে ধরলো, “আনায়া, থাম! সবাই দেখছে!”
কিন্তু আনায়া কোনো কিছু শোনার অবস্থায় নেয়।ক্যান্টিনের চারপাশে তখন রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গেছে। আনিকাও এবার দুই হাত দিয়ে আনায়ার চুলের মুঠি চেপে ধরে।আনায়া আরো রেগে কয়েকটা থাপ্পর মারে আনিকার গালে ঠাসসস ঠাসসস করে। সঙ্গে সঙ্গে আনিকা ছিটকে ফ্লোরে পড়ে।সবাই হা হয়ে সিনেমা দেখছে।
ঠিক তখনই এক তীব্র গর্জন শুনল পেছন দিক থেকে।
“স্টপ।”
কণ্ঠটা এতটাই শক্তিশালী যে মুহূর্তের মধ্যে ক্যান্টিন নিস্তব্ধ হয়। সবাই তাকালো পেছনের দিকে। ইউভানের রাগ আগুনের মতো জ্বলছে,অগ্নিকাণ্ডের মতো জ্বলছে চোখ।সে এবার সামনে এগিয়ে এলো।আনায়া ইউভানের দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।ইউভান আনায়ার আর আনিকার দিকে তাকিয়ে গর্জে ওঠে,
“কি হচ্ছে এখানে? এটা কি আপনাদের মারামারি করার জায়গা?অ্যানসার মি?আপনারা কি বাচ্চা যে ভার্সিটিতে এসে মারামারি করছেন?”
সেই মুহূর্তে আনিকা উঠে নালিশ করতে থাকে,
” স্যার আমার কোন দোষ নেই যা করার এই মেয়েটি করেছে।”
আনিকার সাথে তার বাকি ফ্রেন্ডরাও তাল মিলায়। ইউভান চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এরপর ঠান্ডা কন্ঠে সবার দিকে তাকিয়ে শুধালো,
“সবাই অফিস রুমে আসেন রাইট নাও।” বলে হনহন করে সেখান থেকে প্রস্থান করে সে।
” সো মিস আনায়া আপনি কোন সাহসে এমন কাজ করলেন? কাউকে মারা কোন ধরনের ভদ্রতা? এটা কি মারামারি করার জায়গা?কেন করলেন আপনি এটা?উত্তর দিন আমাকে।” ঠান্ডা কন্ঠে কথাগুলো বলল ইউভান।
আনায়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।তার মনে বিন্দু পরিমাণ ভয় নেই। তার তো আনিকা শাকচুন্নিকে আরো কয়েকটা থাপ্পর মারতে ইচ্ছা করছে।আনিকা সহ তার বান্ধবীরা ও দাঁড়িয়ে আছে। তারা একে একে আনায়ার বিরুদ্ধে সব নালিশ অভিযোগ করে ইউভানের কাছে। আনায়া নিজেকে সামলিয়ে বলে,
“আমি কোন কারন ছাড়া করিনি স্যার।”
ইউভান জিজ্ঞাসা করল,
“বলুন কি কারণ?”
সঙ্গে সঙ্গে আনায়া স্তব্ধ হয়ে যায়। কি বলবে সে এখন?ইউভানকে নিয়ে বেড শেয়ার করার কথা? ছি নাহ সেই সব মরে গেলেও বলতে পারবে না।আনিকা মিটিমিটি হাসছে সে ভীষণ মজাই পাচ্ছে এখন।আনায়া হফসাফ করতে থাকে। ঠিক তখনই আনিকা বলে ওঠে,
“স্যার না হয় ও আমাকে পুরো ভার্সিটির সামনে সরি বলবে আর না হয় আপনি ওকে শাস্তি স্বরূপ বেত দিয়ে মারবেন।যেহেতু সব প্রমাণ আনায়ার বিরুদ্ধে।। ”
আনায়া রাগি চোখে তাকায় আনিকার দিকে। ইচ্ছা করছে শাকচুন্নির এক একটা চুল টেনে টেনে ছিঁড়তে। কিন্তু তবুও নিজের রাগ সংবরণ করে।ইউভান পুনরায় বলে ওঠে,
“মিস আনায়া আপনি প্রথম নাকি দ্বিতীয় অপশন চুজ করলেন?”
আনায়া অবাক হয়ে তাকায় ইউভানের পানে।অভিমানের চোখ ভরে ওঠে।শ্বাস দ্রুত উঠানামা করে তার। তাও নিজের জেদ বজায় রাখার জন্য ডান হাত এগিয়ে দিলো সামনে। আর যাই হোক ওই শাকচুন্নি কে সে সরি বলতে পারবে না।
মুহূর্তে ইউভান অপেক্ষা না করে দুইটা বারি মারল হাতের উপর। আঘাত এতটাই তীব্র ছিল যে হাতের চামড়া ভেদ করে ফিনকি রক্ত বের হয়।ব্যথায় চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। তার অভিমানে বুক ফেটে কান্না আসছে।ইউভান ভাই তাকে মারল?মারবে না কেন? সে কিবা হয় তার? এই একদিনে আনায়া একটু বেশি ভেবেচিন্তে ফেলেছে ইউভানকে নিয়ে। ইউভান তাকে নিয়ে বিন্দু পরিমাণ ভাবে না। তাচ্ছিল্য হাসে সে সবার আড়ালে এক ফোটা চোখের পানি নিচে গড়িয়ে পড়ে। ইউভান সবার দিকে তাকিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
” এই টপিক এখানেই ক্লোজ। এমন কাজ যেন দ্বিতীয়বার রিপিট না হয়। আপনারা আসতেন পারেন।”
আনায়া এক মুহূর্ত এখানে না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে আসে। বাইরে রুহি তার জন্য অপেক্ষা করছিল আনায়াকে দেখে দৌড়ে এসে জিজ্ঞাসা করে,
“কি হয়েছে তোর? ইউভান ভাই তোকে কি বলেছে?”
কিন্তু আনায়া নিরুত্তর।তার বুকের ভেতর অজানা ঝড় বয়ছে।সবকিছু উলটপালট লাগছে তার কাছে।রুহি পুনরায় জিজ্ঞাসা করে,
” কিছু বল?”
এবার আনায়া চোখ তুলে তাকাই সঙ্গে সঙ্গে রুহি আতকে ওঠে। আনায়ার চোখ রক্তের মত লাল। রুহি আর কোন প্রশ্ন করার মত সাহস পেল না।বুঝতে পারছে খারাপ কিছু হয়েছে। আনায়া আর ওখানে না দাঁড়িয়ে সামনে হাঁটতে থাকে।রুহি ও পিছন পিছন আসে।
অপরদিকে,
ইউভান তপ্ত শ্বাস ফেলে মুখের মাস্কটা এক ঝটকায় খুলে ফেলে। তার মুখজুড়ে লালচে আভা, ঘাড়ের রগগুলো ফুলে উঠেছে।এপাশে রাখা পানির গ্লাসটা তুলে নিয়ে ঢক ঢক করে খায়। কিন্তু ইউভান গ্লাসটা এতটাই শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে যে মুহূর্তের মধ্যেই কাঁচের ফাটল ধরা পড়ে, তারপরেই বিকট শব্দে গ্লাসটা ভেঙে টুকরো হয়ে যায় তার হাতে।রক্ত গলগলিয়ে পরে হাত থেকে।তবে ইউভানের মুখের অভিব্যক্তিতে এতটুকু পরিবর্তন নেই।সে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিজের হাতে জমে থাকা রক্তের দিকে।তার চোখে বিন্দু পরিমাণ বেদনা নাই।
রুমের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে আছে আনায়া। কেঁদে কেটে নাক মুখ লাল করে ফেলেছে সে। অষ্টাদশীর কোমল হৃদয়ে মারাত্মক যখম সৃষ্টি হয়েছে আজ।
আজকে শুধুমাত্র ইউভানের জন্য তার চোখে পানি পড়ছে। আনায়া যে মেয়ে নিজের চোখের পানি আজ অব্দি কারো সামনে ফেলেনি সে ইউভানের জন্য কাঁদছে। আনায়া নিজের উপর নিজেই একরাশ বিরক্ত। নিজেকে নিজে থাপড়াতে ইচ্ছা করছে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সায়মা বেগম আর রুহি।তাদের চোখ দরজায় লাগানো কাগজটির উপর। যেখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে “ভেতরে প্রবেশ করা এবং দরজায় নক করা নিষেধ। ”
সন্ধ্যা থেকে হাজারবার আনায়াকে ডাকা হয়েছে কিন্তু ভেতর থেকে কোন সারা শব্দ পাওয়া যায়নি। রুহি সবটা জানলেও মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলেনি।সায়মা বেগম এবার চিন্তিত হয়ে আরেকবার ডেকে ওঠে,
“মা এবার তো দরজাটা খোল। কি হয়েছে আমাদেরকে বল? সবাই ডাইনিং টেবিলে তোর জন্য অপেক্ষা করছে।একটু খেয়ে নিবি সারাদিন কিছু খাস নাই তুই।”
কিন্তু আনায়া তার কানে কোন কথাই পৌঁছায় না। সে আজকে শপথ করেছে যে রুম থেকে বের হবে না।সায়মা বেগম পুনরায় হতাশ। ঠিক সেই মুহূর্তে বাসায় প্রবেশ করে ইউভান। নিজের রুমে যেতে গিয়ে চোখ আটকায় আনায়ার রুমের সামনে দাঁড়ানো রুহি ও সায়মা বেগমের উপর। ইউভান কপালে ভাজ ফেলে দু কদম তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“কি হয়েছে মামনি? এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন তোমরা?”
সাইমা বেগম এবার ইউভানের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বলে ওঠে,
“আর বলিস না বাবা মেয়েটা ভার্সিটি থেকে এসে দরজা লাগিয়েছে এখন অব্দি খোলা নাই ।না সারাদিন কিছু খেয়েছে। আর না ভেতর থেকে সারা শব্দ আসছে কোনো।”
ইউভান এবার চোখ তুলে তাকায় দরজার দিকে। এরপর ঠান্ডা কন্ঠে উত্তর দেয়,
“তোমরা যাও আমি ওকে নিয়ে আসছি।”
সবাই নিশ্চিন্তে হয়, কেউ আর কোন কথা বাড়ায় না। রুহি আর সাইমা বেগম চুপচাপ চলে যায় সেখান থেকে। ইউভান এবার স্টিল হয়ে দাঁড়ায় দরজার সামনে লেখাটার উপর চোখ যেতেই তার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। এরপর ঠান্ডা কন্ঠে শুধালো,
“আনু, ওপেন দা ডোর রাইট নাউ।”
খাটের ওপর গুটিসুটি মেরে বসে আছে আনায়া। চেনা কণ্ঠ শুনে চমকে ওঠে সে। তার বিশ্বাসই হতে চায় না—ইউভান এখানে? সত্যি? তার চোখ বড় হয়ে যায়, কিন্তু পরমুহূর্তেই ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনের আসতেই মুখ কালো হয়ে ওঠে। সে দরজা খুলবে না কখনোই না। এত সহজে কি সবকিছু ভুলে যাওয়া যায়?
অন্যদিকে ইউভানের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। এবার আর স্বাভাবিক স্বরে নয়, রাগে কাঁপতে কাঁপতে হুংকার দিয়ে বলে,
“লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আমি! দরজা খুল, তা না হলে কিন্তু জানে মেরে ফেলবো।”
আনায়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।কি?ভেবেছিল ইউভান তাকে বোঝাবে, ভালো-মন্দ দুটো কথা বলবে, কিন্তু এখানে এসে সে হুমকি দিচ্ছে মেরে ফেলার? লোকটা নিজেকে কি ভাবে? তার বুকের ভেতর অভিমানে গরম হয়ে ওঠে।মরে গেলেও সে এখন দরজা খুলবে না যা করার করুক।
অপরপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইউভানের নিঃশ্বাস গভীর হয়ে আসছে, চোখ রক্তবর্ণ হয়ে গেছে। দাঁত চেপে সে আবার বলে,
“৩ পর্যন্ত গুনবো। তার মধ্যে দরজা না খুললে এর ফল খুবই খারাপ হবে।”
“ওয়ান…
টু…
থ্রি…”
ধড়াম তীব্র শব্দে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ইউভান।আনায়া মুহূর্তেই বসা থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়, কিন্তু পা যেন জমে গেছে। বুক ধড়ফড় করছে।ভাবতেও পারিনি ইউভান এভাবে দরজা ভেঙে ফেলবে। আনায়া চোখ তুলে তাকাই ইউভানের ভয়ংকর চেহারার দিকে। ইউভানে গায়ের শার্টের বোতাম দু-একটা খুলে গেছে, এলোমেলো চুল কপালে লেগে আছে, ঘাড়ের রগ ফুলে আছে, চোখ জ্বলছে দপদপ করে।মুহূর্তেই ইউভান গর্জে ওঠে,
“জানের ভয় নেই হ্যাঁ? দরজা খুলতে বলেছিলাম? খুলিস নি কেন? অনেক বড় কলিজা হয়ে গিয়েছে না তোর? চল আজকে ওটা মেপে দেখব।”
আনায়ার গলা থেকে একটা আওয়াজে বের হয় না। সে ভয়তে এক পা করে পিছনে সরতে থাকে। ইউভান তার দিকেই এগিয়ে আসছে।আনায়া পিছনে সরতে সরতে একেবারে দেয়ালে পিঠ ঠেকে। ইউভান একেবারে সামনাসামনি এসে দাঁড়ায়। দুই হাতে সে দেয়ালের দুপাশ আটকে ফেলে, আনায়াকে একেবারে বন্দি করে ফেলে তার মধ্যে।আনায়ার গলা শুকিয়ে আসে, বুকের ভেতর ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে,তারপরও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,
“বাইরে লিখে দিয়েছিলাম না ভেতরে আসা নিষেধ? তাহলে কেন এসেছেন?”
ইউভান বাঁকা হাসে। তারপর কণ্ঠ আরও নিচু করে ফিসফিসিয়ে বলে—
“সরি আমি অন্ধ দেখতে পাইনি।”
এত কাছে চলে আসে যে তার গরম নিঃশ্বাস আনায়ার মুখ ছুঁয়ে যায়।আনায়ার শরীরে শিহরণ বয়ে যায়। ইউভান তার এতটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে ভাবতেই কলিজা কেঁপে ওঠে আনায়ার।ইউভান সামনের দিকে ঝুঁকে এসে কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
“কি হলো? ভয় পাচ্ছিস কেন?খেয়ে ফেলবো নাকি তোকে?”
আনায়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায়, গলা শুকিয়ে আসে, বুকের মধ্যে একটা ধাক্কা লাগে।ইউভান তাতে আরও মজা পায়। সে পুনরায় বলে ওঠে,
“কিভাবে খাওয়া যায় তোকে বল? ঠিক যেমন চিতাবাঘ শিকার ধরার পর প্রথমে তার গলায় দাঁত বসায় তারপর ধীরে ধীরে মাংসে কামড় দেয়। যেন শিকারের প্রতিটি অংশ অনুভব করতে পারে আর শেষে একেবারে গিলে ফেলে সেভাবে?”
ইউভানের কথার প্রতিটা শব্দ আনায়ার মেরুদণ্ড বরাবর শীতল স্রোতের মতো নেমে আসে।আনায়া ফ্যল ফ্যল করে তাকায়।এই লোকটা কি সত্যিই তাকে খাওয়ার প্ল্যান করছে?বুকের মধ্যে হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম। ভয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে তার কপালের কোণে।ইউভান এবার আনায়ার চিবুক ধরে, আলতো করে তুলে হুইস্কির কন্ঠে বলে,
“ভয় পাচ্ছিস? চিন্তা করিস না আমি কিন্তু খুব ধৈর্যশীল। একটু একটু করে স্বাদ নিতে পছন্দ করি।ঠিক যেমন আগুন প্রথম স্পর্শে উষ্ণতা দেয় তারপর সম্পূর্ণ পুড়িয়ে ভৎস্য করে ফেলে।জাস্ট লাইক দ্যাট আই উইল বাইট ফার্স্ট
অ্যান্ড দ্যন…..”
ঠোঁট কামড়ে হাসে ইউভান। এরপর একটু আানায়ার গলার কাছে মুখ নামিয়ে আনে।ধীর কণ্ঠে পুনরায় ফিসফিসিয়ে আওরায়,
” ইউ নো হোয়াটস গোনা হ্যাপেন নেক্সট সুইটি।”
চমকে উঠলো আনায়া। চিবুক নেমে এলো তার। ইউভানের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি ইঙ্গিত তার মনে ঝড় তুলছে। বুকের ভেতর ধকধক শব্দ হচ্ছে।ইউভানের এহে রুপ তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন।আনায়া অবুঝ নয় সে খুব ভালোমতো বুঝতে পারছে ইউভানের কথার অর্থ। তবে ইউভান তাকে এই কথাগুলো কেন বলছে? কিন্তু কোনো কিছুর উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে তার এখন।
ঠিক তখনই ইউভান ধীরে ধীরে দূরে সরে দাঁড়াল। মুখে আর সেই বাঁকা হাসি নেই।
এবার গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“৫ মিনিটের মধ্যে যদি তুই খাবার খেতে না আসিস, তাহলে আজ তুই অন্য কারোর খাবার হবি মাইন্ড ইট।”
আনায়ার ঠোঁট কেঁপে উঠল। তার পুরো শরীর এক মুহূর্তে জমে গেল। কী অন্য কারোর খাবার?ইউভান আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে আনায়া ঢপ করে নিচে বসে পড়ে। দুই হাত মাথায় তার। লজ্জায় মুখ টমেটোর মতো লাল হচ্ছে ছি!অসভ্য নির্লজ্জ ফকস্টার মুখে কিছু আটকায় না। আনায়ার ইচ্ছে করছে মাটি খুঁড়ে নিচে ঢুকে পড়তে। এতটা লজ্জা সে জীবনেও পড়েনি। ইউভান তাকে কীসব নামে ডেকে গেল ভাবতেই হার্টবিট দ্রুত চলছে।
কিছুক্ষণ বাদে ক্ষুধায় অস্থির হয়ে আনায়া অবশেষে বাধ্য হয়ে নিচে নামে। সিঁড়িতে ধীরে ধীরে পা ফেলে। নিচে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে। আহসান এবং ইব্রাহিম চৌধুরীর অনেক আগেই খাবারের পালা সেরে রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। ইউভান এখনো খাবারের টেবিলে আসেনি। আনায়া নিশ্চিন্ত হয় সে ইউভানের সামনাসামনি আসতেও চায়না।
সাইমা বেগম আনায়ার প্লেটে খাবার বেড়ে দেন। কিন্তু আনায়া প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকে। হাত বাড়ায় না। ডান হাতের ব্যথা এতটাই যেন সে আর নিজে কিছু খেতে পারছে না। চোখ টলমল করছে তার।পুনরায় ইউভানের উপর বড্ড রাগ হয় তার।
ততক্ষণে ইউভান টেবিলে এসে বসে। আনায়া একবার তার দিকে তাকায়, তারপর চোখ নামিয়ে নেয়। তখনই সায়মা বেগম বলে ওঠেন,
“কি হয়েছে মা তোর? খাচ্ছিস না কেন? ”
আনায়া কোন কথার উত্তর দেয় না চোখ নামিয়ে রাখে।
ইউভান হঠাৎ আনায়ার সামনে থেকে প্লেটটা নিয়ে নিজের সামনে রাখে। সায়মা বেগম অবাক হয়ে বলেন,
“বাবা, আমি তো তোকে প্লেট দিচ্ছি। এটা কেন নিচ্ছিস?”
ইউভান গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে
“লাগবে না ছোট মামনি।”
এবার সবার চোখ ইউভানের দিকে। আয়ানের মতো ছোটরা, রুহি, তানহারা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ইউভান আনায়ার সামনে চেয়ার টেনে বসে, প্লেট থেকে এক লোকমা ভাত তুলে আনায়ার মুখের সামনে ধরে।
“চড় খাবি নাকি ভাত খাবি কোনটা আনু?”
আনায়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইল ।অষ্টাদশীর হৃদয়ে যেনো প্রথম বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করলো। অবশেষে সে এক লোকমা মুখে নিয়ে চোখ বন্ধ করে।এখন কান্নার বদলে তার মনে উড়ছে হাজারো রঙিন প্রজাপতি। মনে মনে সে ভাবে,
“এটাই কি স্বপ্ন? সত্যি ইউভান ভাই আমাকে খাওয়াচ্ছে?ইউভান ভাই আমাকে স্পর্শ করেছে?”
ইউভান ধীরস্থিরভাবে আরেক লোকমা ভাত নিজে খেয়ে সবাইকে দেখে। তার গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,
“সবাই এভাবে কি দেখছো?”
কেউ কোন কথা বলল না। সবাই খাওয়াই মনোযোগী হয়। কিন্তু আয়ানের মুখের রং পরিবর্তন হয়ে উঠে। তারপরও কোন কথা বলেনা। এদিকে এসব দেখে তানহা রাগে ফুঁসে ওঠে। ঠিক সেই মুহূর্তে আনায়ার চোখ আটকে ইউভানের বাম হাতের ব্যান্ডেজ এর উপর। তার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে।ব্যান্ডেজ এর উপর রক্ত ভেসে আছে। হৃদস্পন্দন কেমন ঝাকুনি দিয়ে ওঠে রক্ত দেখে।
চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনা আনায়া। হু হু করে কান্না করে দেয়। ইউভান সহ সকলের চমকে আনায়ার দিকে তাকায়। সাইমা বেগম জিজ্ঞাসা করে,
“কি হয়েছে মা কাঁদছিস কেন?”
আনায়া কোন উত্তর না দিয়ে আঙুল তাক করে ইউভানের ব্যান্ডেজে মোড়ানো হাতের দিকে দেখায়। সবার চোখ সঙ্গে সঙ্গে সেদিকে আটকায়।আয়ান কিছুটা ভয় পেয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“কি হয়েছে ভাই? তোর হাত কাটল কিভাবে?”
ইউভান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে একবার অষ্টাদশীর কান্নাময় মুখশ্রীর দিকে তাকায়।এরপর ঠান্ডা কন্ঠে উত্তর দিলো,
“তেমন কিছু না ছোটখাটো একটা অ্যাক্সিডেন্ট
হয়েছে।”
আয়ান সহ সকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
“পরেরবার থেকে একটু সাবধানে থাকিস ভাই।”
ইউভান মাথা নারায়। সে এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে আনায়ার উপর। আনায়ার তখনও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।ইউভান মনে মনে হাসে।সে আরেক লোকমা ভাত সামনে নিয়ে বলে,
“ফ্যচ ফ্যচ করে কান্না করা বন্ধ কর। তোকে খাওয়ানোর চাকরি নিয়ে বসে নেই আমি। আরো অনেক কাজ আছে আমার। তাড়াতাড়ি খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর।”
মুহূর্তেই আনায়ার কান্না থেমে যায়। অবাক চোখে তাকায় ইউভানের পানে।এখন বড্ড আফসোস হচ্ছে তার এই অসভ্য বদমাইশ লোকের জন্য সে কান্না করছিল?যার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ কোন ইমোশন নাই।আনায়া রাগে ঘপ ঘপ করে সম্পূর্ণ খেয়ে নেয়। খাবারের মাঝে কয়েকটা কামড় দিতে ও ভুলিনি সে। ইউভান সবটা বুঝেও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গিয়েছে। মনে মনে তো গালি ফ্রি ইউভানের জন্য।
ইউভান ও একই প্লেটে খাবার খেয়ে উঠে পড়ে। আনায়া তো আজ শুধু পদে পদে অবাক হচ্ছে এটা ভেবে যে ইউভান ভাই তার এ্যঁটো খাবার খেয়েছে। পুনরায় লজ্জায় মুখ টমেটোর মতো লাল হয়ে যায় তার। তার যে সেকেন্ড সেকেন্ড মুড সুইং হচ্ছে সেটা সে ভালোমতোই বুঝতে পারছে। নতুন নতুন প্রেমের রং লাগলে যা হয় আর কি 🤭।
মধ্যরাতে,
“এটা কখনো সম্ভব না ভাই। কেউ মেনে নেবে না। ও বাঁচতে পারবে না, মরে যাবে।শেষ পরিণতি আমাদের ফুপির মত হবে।আমাদের ফুপিকে এরা বাঁচতে দেয়নি।”
ইউভান রক্ত লাল চোখে তাকায় আয়ানের দিকে।আয়ান সঙ্গে সঙ্গে চুপ হয়ে যায়। ইউভান ঠান্ডা শীতল কন্ঠে শুধালো,
“আমি একা থাকতে চাই। এখন বেরিয়ে যা!”
আয়ান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তার ভাইয়ের দিকে তাকায়। সে বুঝতে পারছে পরিস্থিতি তাই আর কোন কথা ব্যয় না করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ইউভান বেলকনি কাউচে ধপ করে বসে পড়ে।তার চোখে অন্যরকম বিষন্নতা।তখনই তার চোখ আটকায় পাশে রাখা গিটারটির উপর।গিটারের উপর খোদাই করা নামটি জল জল করছে। মুহূর্তে দেরি না করে গিটারটি হাতে তুলে নেয় ইউভান।আকাশের পানে তাকিয়ে ভারী কন্ঠে আওড়ায়,
“তোকে ছাড়া আর বেঁচে কি লাভ মাই সেলবিট?”
তাচ্ছিল্য হেসে গিটারের টুংটাং আওয়াজ তুলে।
বিছানায় শুয়ে থাকা আনায়ার কানে আবার সেই গিটারের টুংটাং আওয়াজ বেজে ওঠে। সে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সে তো ঘুমায়নি, সে জেগে আছে, যেন অপেক্ষায় ছিল ইউভানের গানের।
আনায়া একটি প্লাজাও শর্ট টপস পড়ে আছে। চুলগুলো হাটু অবধি লম্বা।সে পা টিপে টিপে বেলকনির পর্দার আড়ালে এসে দাঁড়ায়, যেন ইউভান তাকে দেখতে না পায়।বুকের ভেতর ধক ধক করছে। চোখ বন্ধ করে নেয় বাতাসের সঙ্গে মিশে আবারও সেই গাঢ় পুরুষলী আওয়াজ ভেসে আসে।
কেনো হয় এমন?🎶
মনে নেই তো মন, হাওয়া বড়ই বেরঙিন🎶
না রে নয় সহজ,🎶
পাওয়া তোর মতন আর কাউকে ও কোনোদিন🎶
হারিয়ে গেলাম ফুরিয়ে এলাম চোখে শুকিয়ে গেলো জল🎶
বেচে থেকে লাভ কি বল?🎶
তোকে ছাড়া আর!🎶
খুজেছে জবাব অচল মন কোথাকার?🎶
হঠাৎ আনায়ার হৃদয় থমকে যায়, যেন তার বুকে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটালো তার। এই গান ইউভান ভাই কাকে নিয়ে গাইছে? ইউভানের কন্ঠ আজ কেন এত ভারি? আনায়া চোখ খোলে, এবং বেলকনির সোজাসুজি ইউভানের দিকে নজর আটকায়।ইউভানের বিষন্ন চেহারা দেখে আনায়ার রক্ত উল্টো গতিতে চলা শুরু করে।তার চোখ টলমল হয়ে ওঠে।
আত্মার অন্তরালে পর্ব ২
গিটারের টুংটাং আওয়াজ আর আগের মতো মধুর শোনাচ্ছিল না, বরং এখন সুরে বিরহের শব্দ ধ্বনিত হচ্ছিল।
ইউভানের হাত থেকে এবার রক্ত ঝরতে শুরু করে। তবুও সে গিটার বাজানো থামায় না। আনায়া ঘাবড়ে যায় সেই রক্ত দেখে। যেন তার বুকের ভিতর কিছু হারিয়ে যাচ্ছে।সে এক সেকেন্ডও দেরি না করে, তড়িঘড়ি রুম থেকে বেরিয়ে আসে। ইউভানের দরজার সামনে এসে দাঁড়াই আনায়া। হাত কাঁপছে তার সাহস পাচ্ছে না ভিতরে ঢোকার।