আত্মার আগলে পর্ব ১২+১৩

আত্মার আগলে পর্ব ১২+১৩
সানজিদা আক্তার মুন্নী

এহসান এক ঝটকায় মেহনূরের মাথা নিজের বুকে আঁকড়ে ধরে। মেহনূরের গালে আর মুখে নিজের ঠোঁট অজস্রবার ছুঁইয়ে দিতে থাকে। মনে হচ্ছে, কত যুগ পর মেহনূরকে নিজের কাছে পেয়েছে! এহসান অবুঝ পাগলের মতো মেহনূরকে চুম্বন করতে থাকে, যার ফলে মেহনূরের মুখে লেগে থাকা ফেনা এহসানের দাড়িতে ও পাঞ্জাবিতে লেগে যায়। তবে এতে কোনো ক্ষতি নেই এহসানের। সে শুধু মেহনূরকে এক কথাই বারবার জিজ্ঞেস করছে—
— “কি হয়েছে তোর? কী হয়েছে? এমন করছিস কেন? কী হয়েছে? কথা বল জান, কথা বল!”
মেহনূর অচেতন চোখে একপলক তাকায় এহসানের দিকে। এক চিলতে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
— “দেখুন, আল্লাহ বিচার করে নিয়েছেন। গতকাল রাতে কতটা নিষ্ঠুরভাবে আপনি হত্যা করেছেন পরের ছেলেকে, আর আমার আল্লাহ রাত পোহাতে না পোহাতে আপনাকে শাস্তি দিয়ে দিলেন।”
এহসান মেহনূরকে ঝাঁকিয়ে বলে,

— “না! আমার রব্বে কারীম এতটা নিষ্ঠুর নন। তিনি শ্রেষ্ঠর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। তাঁর দয়া অসীম। তিনি কখনোই আমার পাপের শাস্তি তোকে দেবেন না, কখনোই না!”
মেহনূর একইভাবে হেসে বলে,
— “আপনি বলেছিলেন না, আপনি ধ্বংস হয়েছেন আমার প্রেমে! আর এখন দেখুন, আমি ধ্বংস হব আপনার পাপে।”
মেহনূরের এমন কথা শুনে কলিজা ছিঁড়ে যায় এহসানের। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে তার! সারা শরীর কাঁপছে এহসানের!
এহসান চিৎকার করে বলে,
— “এমন কিছু হবে না! আমার পাপে আমি ধ্বংস হব, তুমি না! পাপ আমার, তুমি আমার, তাহলে তুমি ধ্বংস হবে কেন? হলে হব আমি ধ্বংস!”
কিন্তু মেহনূর কোনো উত্তর দেয় না। আর দেবেই বা কী করে? সে যে জ্ঞান হারিয়েছে, অবচেতন হয়ে গেছে। অবচেতন হওয়ার আগে ঠিকই এহসানের বুকের পাঞ্জাবির অংশ খামচে ধরেছে!এখনও ধরে রেখেছে
মেহনূর কথা বলছে না দেখে এহসান মেহনূরের থুতনি ধরে ঝাঁকাতে থাকে, জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলতে থাকে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “জান, কথা বল! কথা বল! তোর মুখ থেকে আমি বাণী শুনতে চাই! কথা বল! বল! আমায় একবার পাপী বলে ডাক, কথা বল! তো বল না কথা!”
কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। মেহনূর কে চোখ বুঁজে থাকতে দেখে এহসানের প্রাণ উড়ে যায়! থমকে যায় তার দুনিয়া! মেহনূরের থুতনি ধরে সারা শরীর ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে এহসান কান্নায় ভেঙে পড়ে চিৎকার করে বলে,
— “এই খারাপের বাচ্চা! কথা বল! এই স্বার্থপরের বাচ্চা! কথা বল! কথা বল! আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে! তুই কথা বল! আমার অন্তর ঝলসে যাচ্ছে! কুত্তার বাচ্চা! কথা বল! কথা বল! আমি শ্বাস নিতে পারছি না! কথা বল তো! কথা বল! একবার বল, শুধু একবার!”এই বেয়াদব কথা বল!
কিন্তু কোনো কথা বের হয় না অজ্ঞান মেহনূরের মুখ থেকে।
এহসানের কান্নার বেগ বেড়ে যায়। একজন পুরুষ মানুষ হয়ে এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছে সে! অথচ এই সেই পুরুষ, যে মানুষের কলিজা পর্যন্ত ছিঁড়ে আনতে কোনো রকম দ্বিধা বোধ করে না। যার হাতে শত মানুষের খুন হয়েছে, কিন্তু তবুও তার হাত কাঁপেনি। অথচ সেই পুরুষ, নিজের নারীর মুখ থেকে সামান্য একটি কথা শোনার জন্য এভাবে কলিজা ফাটিয়ে কাঁদছে…

এনিসা বেগম কিছু আঁচ করতে পেরেছেন! কারণ তার ছেলে এহসান তো সবসময় নামাজে এসে তাকে সালাম দেয়, দোয়া নেয়, কিন্তু আজ হঠাৎ কী এমন হলো যে কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের কক্ষে চলে গেলো!
বিষয়টা অদ্ভুত লাগলো তার কাছে, ফের মনে প্রশ্ন উঁকি দেয়—আচ্ছা, মেহনূরের কিছু হলো না তো? আজ নিচে আসছে না। না, আর ভেবে কোলাতে পারছেন না। তাই অস্থির পায়ে এহসানের কক্ষের দিকে পা বাড়ান।
এনিসা বেগম কক্ষের সামনে গিয়ে দেখেন কক্ষের দরজা খোলা! কিছুটা সংকোচে নিয়েই কক্ষের ভেতর প্রবেশ করেন।
প্রবেশ করতেই তার নিজ কানে কান্নার শব্দ আসে। তিনি থমকে দাঁড়ান। কে কাঁদছে? কিছু মুহূর্ত পর বুঝে যান, এটি তার ছোট ছেলে এহসান কাঁদছে! কী ভয়ংকর বিষয়, তার এহসান কাঁদছে, কিন্তু কেন?
তিনি তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে যান গিয়ে দেখেন, মেঝেতে বসে আছে এহসান আর মেহনূরকে বুকে জড়িয়ে রয়েছে। মেহনূরকে অসম্ভব শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে এহসান অন্তর ফাটিয়ে কাঁদছে। এমন দৃশ্য দেখে এনিসা বেগমের হুঁশ আর হুঁশে থাকে না। তিনি নিজের ছেলেকে, বিশ বছর পর, এভাবে কাঁদতে দেখলেন। কিন্তু কেন? কেন, কী হয়েছে? কেন কাঁদছে?

এনিসা বেগম অস্থির হয়ে তাদের কাছে গিয়ে হাঁটুতে ভর করে মাটিতে বসেন, অস্থির গলায় এহসানকে প্রশ্ন করেন—”আব্বা, কী হয়েছে? এভাবে কাঁদছিস কেন?”
এহসান এনিসা বেগমের দিকে চোখ তুলে তাকায়, তারপর নিজের বুকে জড়িয়ে থাকা অবচেতন মেহনূরের দিকে এক পলক তাকিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে
—”আম্মা, আমার মেহনূর কথা বলছে, মা! ওর মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে, আম্মা! কেনো কথা বলছে না? আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে, গো আম্মা! আম্মা…”
এনিসা বেগম বাক্যশূন্য হয়ে যান, তার ছেলের মতো সিংহও যে কলিজা কাতরিয়ে কাঁদতে পারে, তা নিজের অজানা ছিল! নিজের চিন্তা নিজের মধ্যে চেপে, হাত বাড়ান এহসানের বুকের দিকে, কারণ এহসানের বুকেই লেপ্টে রয়েছে মেহনূর। আলতো ছুঁয়ান মেহনূরের কপালে, নিজের হাতখানা এতে কেঁপে উঠেন তিনি, কারণ মেহনূরের শরীর ভীষণ গরম হয়ে আছে।
এনিসা বেগম এহসানকে শান্তনা দিতে দিতে নরম গলায় বলেন

—”আব্বা, শান্ত হ, বাপ! মেহনূরকে বিছানায় নিয়ে শুয়ে।”
এহসান একপলক তাকায় নিজের মায়ের দিকে, পর আলতো করে অতি যত্নে কোলে তুলে নেয় অবচেতন মেহনূরকে! তারপর আস্তে করে শুয়ে দেয় বিছানায়, নিজের প্রাণকে! অতঃপর কম্বল টেনে দিয়ে দেয় এহসান মেহনূরের উপরে!
এনিসা বেগম চিন্তিত গলায় বলেন
—”আব্বা, তুই বস, আমি তোর আব্বা অথবা ভাইজানকে বলি রাজিয়া ডাক্তারকে ডেকে আনতে।”
এহসান মেহনূরের মাথার পাশে আলতো করে বসতে বসে বলে
—”হ্যাঁ, আম্মা, তাড়াতাড়ি যাও।”
এনিসা বেগম দ্রুত পায়ে বেরিয়ে আসেন এহসানের কক্ষ থেকে! তারপর নিচে এসে সোফায় বসে তাকা মনিরুল সাহেব, এমরান, আর এনামকে উদ্দেশ্য করে অস্থির কণ্ঠে বলেন
—”কেউ তাড়াতাড়ি, রাজিয়া ডাক্তারকে ফোন দাও! মেহনূরের ভীষণ জ্বর, মুখ দিয়ে ফেনাও বেরিয়ে এসেছে!”
সবাই কিছুটা থমকে যান। তারপর মনিরুল সাহেব চমকিত গলায় বলেন

—”কি বলছো, বেগম? এখন কি করছে?
এনিসা বেগম ব্যাকুল গলায় বলেন
—”জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। এতে আপনার ছেলে পাগলের মতো কাঁদছে! তাড়াতাড়ি আসুন, একটু বুঝান ওকে!”
এমন কথা শুনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে যান সবাই। সবার মনে এক প্রশ্ন—কি, এহসান কাঁদছে? এহসান? এটাও সম্ভব!
মনিরুল সাহেব, এনামকে উদ্দেশ্য করে বলেন
—”এনাম, যাও বাপ, তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে নিয়ে আসো!”
এ বলে মনিরুল সাহেব এগোতে থাকেন এহসানের কক্ষের দিকে। তাঁর পিছনে এমরানের বেগম আর এনামের বেগমও যান, তবে এমরান আর এনাম যান না, কারণ যতোই হোক, মেহনূর এখন আর তাদের ভাতিজি নয়, ছোট ভাইয়ের বেগম। গায়রত বলেও তো কিছু আছে!
মনিরুল সাহেব এহসানের কক্ষে প্রবেশ করে কিছুটা থমকে যান। তিনি স্পষ্ট দেখতে পান, তাঁর সিংহের মতো ছেলে কিভাবে বিড়ালের মতো ঘাপটি মেরে বসে আছে নিজের স্ত্রীর পাশে!
শুধু বসে নেই, এহসান মেহনূরের হাত ঝাপটে ধরে, নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে বসে আছে আর টিপে চোখের জল ফেলছে!
মনিরুল সাহেব বুঝতে পারেন তার পুএরের অন্তরের অবস্থা, কারণ তিনি নিজেও তো একজন পুরুষ, একজন স্বামী, দুই স্ত্রীর অধিকারী। তিনি জানেন, নিজের বেগমকে অসুস্থ অবস্থায় দেখলে ঠিক কতটা অশান্ত হয়ে উঠে নিজের মন!

উনি ধীর পায়ে এহসানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। বাবা কে দেখে এহসান নিজের মুখ তুলে বাবার দিকে তাকায়। মনিরুল সাহেব এহসান কে বলেন,
—– “আব্বা, শান্ত হও। সামান্য জ্বর উঠেছে, এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।”
এহসান মেহনূরের দিকে তাকায় একপলক “,ফের নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে আহত গলায় বলে, ”
—-আব্বা, সামান্য জ্বর তো, তাহলে কেনো কথা বলছে না? আব্বা, কেনো মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে? আব্বা, কেনো কথা বলছে না?”
তখনই এশা ডাক্তার, রাজিয়া কে নিয়ে, কক্ষে প্রবেশ করে। নিজের প্রিয় বান্ধবীকে এমন অবস্থায় দেখে তার অন্তর বারবারই কেঁদে ওঠছে, কিন্তু তার যে কিছু করার নেই।
ডাক্তার এসে মেহনূরের পাশে বসতে বসে মনিরুল সাহেবকে সালাম দেন।

—–“আসসালামু আলাইকুম।”
“—ওয়ালাইকুম সালাম,” মনিরুল সাহেব উত্তর দেন।
মনিরুল সাহেব ডাক্তারকে বসতে দেখে এহসানের হাতের বাহু আলতো করে ধরে বলেন,
—-“চলো, এখন ডাক্তার এসে গেছেন।”
এহসান ধীর পায়ে উঠে মনিরুল সাহেবের সাথে চলে আসে কক্ষের বাইরে। মনিরুল সাহেব তাকে নিজের কক্ষে নিয়ে আসেন। এহসান ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসে।
এহসান বসতেই মনিরুল সাহেব গভীর গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন
—-, “ফজরের পর যে লাশ পাওয়া গেছে পশ্চিমের নর্দমার খালে, সেটা কি তোমার জন্য ?”
ঐ রায়ানের কথা শুনে আবারও এহসানের মাথা খারাপ হয়ে যায়, কারণ ওর জন্যই আজ এসব হয়েছে। আজ নারীকে এতটা কষ্টে ভুগতে হচ্ছে। রায়ানের জন্যই। যদি ঐ রায়ান না আসতো, তাহলে এহসান ওকে খুনও করত না, আর মেহনূরের গায়ে ওর হারাম রক্ত লাগতো না। আর না, এহসান মেহনূরকে রাতে পুকুরে গোসল করাতো।
এহসানকে চুপ থাকতে দেখে মনিরুল সাহেব বুঝে যান, এটা তার ছেলেরই কাজ। তিনি হতাশ গলায় বলেন,

—“কেনো মারলে?”
এহসান মেঝের দিকে কটমট করে তাকিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে উত্তর দেয়, ”
—-ঐ কুত্তার বাচ্চা আমার নারীকে দেখে ফেলেছিল, ওকে নিয়ে যেতে এসেছিল।”
মনিরুল সাহেব ঠান্ডা গলায় বলেন,
——“তাই বলে এতটা ভয়ংকরভাবে মারবে? দেখো, মেহনূর ঐ ছেলেটাকে নিয়ে যেতে আসতেই পারে, কারণ মেহনূর ওর হবু স্ত্রী ছিল।”
বাবার এই কথা শুনে এহসানের মগজ টগবগ করে জ্বলে উঠে, “কি? তার নারীর নাম অন্য কারোর সাথে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে? না, এমনটা হতে পারে না। মেহনূরের নাম শুধু সে, শুধু এহসান তালুকদারের সাথে। শুধুই এহসান তালুকদারের সাথে!”
এহসান রেগে সাপের মতো ফুসে উঠে দাঁড়িয়ে যায় এবং গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলে,
—– “না, আব্বা, এমন কথা বলবেন না! মেহনূর শুধু আমার, শুধু আমার বেগম, শুধু আমার! অন্য কারো সাথে ওরে কেনো জুড়ছেন? মেহনূর শুধু এই পাপিষ্ঠ পুরুষ এহসানের, শুধু এহসানের।”
মনিরুল সাহেব এহসানের কাঁধে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,

—– “শান্ত হও, শান্ত হও।”
এহসানের বোধগম্য হয়, রাগের চটে নিজের বাবার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে ফেলেছে। সে ভীষণ লজ্জায় পড়ে যায়।
সাথে সাথে এহসান হাঁটু ঘিরে বসে যায় নিজের বাবার সামনে। তারপর উনার দুই হাত নিজের দুই হাতের মধ্যে নিয়ে, উনার মুখের দিকে আহত চোখে তাকিয়ে অনুশোচনার গলায় বলে,
—– “আমাকে মাফ করে দিন, আব্বা। আমি নিজের মধ্যে নেই, আমি বেয়াদবি করে ফেলেছি আপনার সাথে। আব্বা, আমার উচিত হয়নি এতটা বড় গলায় আপনার সাথে কথা বলা, মাফ করে দিন আমায়।”
এ বলেলে এহসান মনিরুল সাহেবের হাতে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ায় আর আবারও নিম্ন গলায় বলে, ”
—মাফ করে দিন আমায়, আব্বা, আমি ভুল করে ফেলেছি। আমি লজ্জিত, ভীষণ লজ্জিত।”
মনিরুল সাহেব এহসানের এমন কান্ডে হেসে দেন। তার ছোট ছেলেটা ভীষণ বুঝদার, সে যদি কোনোদিন কোনো ভুল ঠিক এভাবে সাথে সাথেই মন জিতে নেয়, কোনো অভিযোগ রাখতে দেয় না নিজের প্রতি।
মনিরুল সাহেব মৃদু হেসে এহসানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
—– “উঠো, আব্বা, আমি তোমার পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। আমার এমন বলা ঠিক হয়নি। উঠো, তুমি নিজ কক্ষে যাও, দেখো তোমার নিজ বেগমের কি জ্ঞান ফিরেছে, কি না।”
এদিকে মেহনূর চোখ খুলে চারপাশে তাকায়। “এ, কিন্তু এ কি? সবাই এখানে কেনো?” এশা, এনিসা বেগম, এনামের বেগম আয়শা বেগম, এমরানের বেগম আমেনা বেগম (এনামের ছেলে ইনাম আর মেয়ে ইরা, যাদের বয়স ৬; এমরানের মেয়ে এরিশা, যার বয়স ১০, আর ছোট ছেলে ইমরান, যার বয়স ৮) সবাই এখানে কি করছে?
মেহনূর উঠতে যায়, তখনই এশা দৌড়ে এসে তাকে বলে, —“ধীরে ধীরে।” এশা আলতো করে মেহনূরকে বিছানার ধারে আধশোয়া অবস্থায় বসায়।
মেহনূর সবার দিকে একপলক তাকিয়ে আলতো সুরে বলে,

—- “তোমরা সবাই এখানে কেনো?”
এনিসা বেগম মেহনূরের দিকে এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত রেখে বলেন,
—–“আল্লাহ, জ্বর তো কমছে একটু হলেও! জ্ঞান তো ফিরলো তোর! আমার ছেলেটা পাগল হয়ে যাচ্ছিল!”
ইয়া আল্লাহ, তুমি সব ঠিকঠাক রাখো (উপরে দিকে তাকিয়ে এসব বলেন)।
এনিসা বেগমের কথায় মেহনূরের নিজের জ্ঞান হারানোর আগের কথা গুলো মনে আসে। “–আল্লাহ, কি অস্থির হয়ে উঠেছিল এহসান! মেহনূরের কাছে তখন মনে হচ্ছিল, হয়তো এহসান হার্ট অ্যাটাক করবে!”
তখনই আয়শা বেগম বলেন,
—– “আল্লাহর হুকুম, তোমার কিছু হয়নি!” এ বলে এনিসা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলেন, —“আচ্ছা আম্মা, চলুন, সবাইকে নাস্তা দিতে হবে তো।”

ধীরে ধীরে সবাই কক্ষ থেকে বেরিয়ে চলে যান। এশাও চলে আসে, কারণ মেহনূরের জন্য খাবার নিয়ে আসতে হবে, ডাক্তার ঔষধ দিয়ে গেছেন, খাওয়াতে হবে।
সবাই চলে গেলেও পিচ্চিরা যায় না, সবাই যেতেই তারা একে একে বিছানায় উঠে যায়। মেহনূর এটা দেখে মুচকি হেসে উঠে, বাচ্চাগুলো তার ভীষণ প্রিয়।
ইরা মেহনূরের কাছে এসে নিজের ছোট্ট হাত মেহনূরের গাল ছুয়ে বলে,
—-“ইয়া আল্লাহ, ক্বারিয়া, আপনার এত জ্বর?” (যদিও সে কিছুটা অস্পষ্টভাবে কথা বলে, তবে আমি এখানে সব কথোপকথন স্পষ্টভাবে লিখে দিয়েছি আপনাদের সুবিধায়।)
তখনই ইনাম ধমকের গলায় বলে,
—-“আরে বোকা, ছোট আব্বা বলেছেন তো আমাদের কে ক্বারিয়া নয়, ছোট আম্মা ডাকতে।”
এরিশা বলে,
—-“হ্যা, হ্যা, ছোট আম্মা!”
মেহনূর বিরক্ত হয়ে ভাবে, “কেনো, এই এহসান সব জায়গায় তার পরিচয় উল্টো করে দিচ্ছে কেনো? তবে সে কিছু বলে না, বাচ্চাদের আর কি বলবে? তাদের যা শিখানো হবে, তারা তাই শিখবে।”
তখনই ইমরান বলে উঠে,

—-“জানেন, ছোট আম্মা, আমি না এক সাপ্তাহে পুরো ২৩টি ছোট্ট ছোট্ট হাদিস মুখস্থ করেছি, কিন্তু বড় ভাইজান মাএ ১০টি মুখস্থ করেছে!”
এ বলেই ইমরান খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।
মেহনূর ছোট ছোট চোখ দিয়ে ইনামের দিকে তাকিয়ে বলে, ”
——এটা তো লজ্জার বিষয় হয়ে গেলো!”
ইনাম নিজের দুই হাত মাথার উপর দিয়ে অবাক গলায় বলে,
——-“ইয়া রাসুলুল্লাহ, জানেন, ছোট আম্মা, গত সপ্তাহে আমি পুরো ২৭টি হাদিস মুখস্থ করেছি, আর ইমরান মাএ ১৫টি!
আর এখন সে আমায় অপমান করছে!” তখনই এরিশা বলে উঠে,
—–“আরে দূর! তোদের কথা ছাড়! জানেন, ছোট আম্মা, আমায় দাদাজান এ সাপ্তাহে ৩১টি হাদিস মুখস্থ করার কথা বলেছেন, আমি করে ফেলেছি! আর ওরা তো প্রতি সপ্তাহেই হাদিস বলতে গিয়ে সাত-আটটা ছেড়ে দেয়!”
মেহনূর বলে উঠে,—- “মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ! তা তোমরা কেনো এগুলো করছো, শুনতে পারি?”
এরিশা উত্তর দেয়, ”
—-কেনো আবার? আল্লাহকে খুশি করার জন্য।”
মেহনূর ওদের বাজিয়ে দেখার জন্য বলে,
——“ওহ, তাই নাকি? আল্লাহকে খুশি করে কি হবে, শুনি?”
ইমরান বলে উঠে, ”
——আরে, ছোট আম্মা, আপনি জানেন না? আল্লাহকে খুশি করলে তো এ জাহান ও জাহান, উভয় জাহানে শান্তি!”
মেহনূর মৃদু হেসে বলে,

—-“হ্যা, হ্যা, জানি তো। আচ্ছা, এটা তোমায় কে বলল?”
তখন ইরা বলে,
—- “ছোট আব্বা বলেছেন। আর জানো, ছোট আম্মা?”
মেহনূর বলে, “—কি?”
ইরা বলে, ”
——আজকে সকালে তোমার মুখ থেকে কথা শুনার জন্য ছোট আব্বা, আমি যেভাবে আউআউ করে কাঁদি, ওমনি ছোট আব্বাও কেঁদেছেন!
” এমন কথা শুনেই নিমিষেই মেহনূরের মুখ থেকে হাসি উড়ে যায়। এহসান কেঁদেছে? এই নরপশু কাঁদতে জানে কিন্তু কেনো? নাহ এসব ভাবা উচিত নয় ‘!
তাই আবারও মেহনূর নিজের মুখে হাসি টেনে বলে,
—- “আচ্ছা, দেখি তো, ইলম নিয়ে একটি হাদিস বলো।”
এরিশা বলে, ”
—-আমি বলি!”
মেহনূর মুচকি হেসে বলে,

—–“হুম, বলো।”
এরিশা বলে
طَلَبُ العِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَىٰ كُلِّ مُسْلِمٍ وَمُسْلِمَةٍ
তারপর বলে
— হাদিস শরীফের অর্থ ইলম তলব করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ
মেহনূর হাদিস শুনে এরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে।
—- মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ, বলতো এটা কোনো হাদিসে এসেছে
এরিশা একটু দম নিয়ে ফের উওর দেয়
—-সুনানে ইবনে মাজাহতে”!
—- মাশাল্লাহ
মেহনূর আবার বলে,
+—-“এখন, এরিশা বাদে কেউ জান্নাত নিয়ে একটা হাদিস বলো তো?” ইনাম বলে, ”
—-আমি বলছি, আমি বলছি!”
মেহনূর বলে
—- হুম বলো
ইনাম কয়েক বার মাথা উপর নিচ করে নিজের হাত রাকাআত বাঁধা মতো বেঁধে বলে
—–مَن لَمْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ شَيْئًا وَعَمِلَ صَالِحًا دَخَلَ الْجَنَّةَ.”
ফের বলে

—- হাদিস শরীফের অর্থ “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক না করে সৎ কাজ করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” আর এটা সহীহ মুসলিমে এসেছে এই হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
মেহনূর তাদের এভাবে হাদিস শুনছে, হাসছে। আর এই সমস্ত কিছু এহসান দুই কক্ষের মধ্যে যেই দরজা আছে সেখানে মাথা টেঁকিয়ে, দুই হাত বুকের সাথে বাঁজ করে অপলকভাবে দৃষ্টিতে তাকিয়ে তা দেখছে আর শুনছে।
সে তৃপ্তি নিয়ে নিয়ে দেখছে মেহনূরকে। হাসলে মেহনূরের গালে টুল পরতে থাকে, ভয়ংকর সুন্দর এই হাসি! এহসানের বুক ধরধর করছে এই হাসি দেখে। হাসলে শুধু কি টুল পরছে না, মেহনূরের এক সুন্দর গজ দাঁত রয়েছে, আর হাসলে সেই গজ দাঁত দেখা যায়, অসম্ভব সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে এই হাসি!
এই যে, ওদের হাদিস শেখানো হচ্ছে, এটাও এই বংশের নিয়ম, যেখানে এই যুগে বাচ্চাদের ফোন দিয়ে তাদের জীবন নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। তবে এই যুগে থেকেও তালুকদার বাড়ি, শুধু বড় তালুকদার বাড়ি নয়, ছোট তালুকদার বাড়ি, একই নিয়ম! প্রতি শুক্রবারে বাচ্চাদের বাড়ির প্রধান মুরব্বি সবাইকে নিয়ে আরবি পড়তে বসেন, তাদেরকে, যার যার বয়স অনুযায়ী হাদিস, কোরআনের সুন্দর সুন্দর আয়াত মুখস্থ করার জন্য দেন, এবং আগের সপ্তাহে যেগুলো দিয়েছেন, সেগুলো সবক নেন। যে সবচেয়ে বেশি পারবে, তাকে ইসলামিক বিভিন্ন জ্ঞানমূলক বই পরিস্কার দেন, নিজের দ্বীন সম্পর্কে ধারণা দেন ‘!

এই বংশের সব মানে, যত বংশধর এসেছে এই তিন-চার যুগ ধরে, সবাই কোরআনে হাফেজ। এই বংশের বাচ্চাদের নয় বছর বয়স হলেই হাফেজিতে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়, এতে বাচ্চারা তেরো বছরের আগেই কোরআনে হাফেজ হয়ে যায়। এবার হাফেজ হওয়ার পর, যার যেখানে ইচ্ছে সেখানে পড়তে পারে। তবে প্রতি শুক্রবারে সব পুরুষরা মিলে তিন খানা খতম দেন, আর মহিলারা দুই খানা। এটা তারা নিয়মের জন্য করেন না, এটা নিজের রবের জন্য করেন যাতে পরকালে শান্তিতে থাকতে পারেন।

তাই এই জন্য বর্তমানে সবাই, মানে তালুকদার বংশের সব বংশধরই কোরআনে হাফেজ। তবে এত ধার্মিক হওয়ার পরও এদের মধ্যে রক্তাক্ত থেমে নেই। যুগ যুগ ধরে এটা এসেছে, তবে নিজ বংশধরের সাথে নয়, অন্যদের সাথে।
খানিকক্ষণ পর, এহসানের পানে মেহনূর নজর যায়, যে কি না তার দিকেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মেহনূর এহসানের নির্লজ্জ দৃষ্টি দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। মনে মনে আওরাতে তাকে বলে, “কি এক চোখ সারাক্ষণ আমার দিকেই থাকে, আল্লাহ! এই চোখ তুমি অন্য দিকেও তো ঘুরিয়ে নিতেই পারো, মাবুদ!”
এহসান ধীর পায়ে বিছানার সামনে এসে, আলতো সুরে বলে, ”
—-আব্বাজান-আম্মাজানরা, আপনাদের গল্প করা শেষ হলে, দয়া করে নিচে যান। নাস্তা করতে হবে তো মাদ্রাসায় যাবেন না আজ। মসজিদেও তো কেউ গেলেন না।”
এহসানের কথা শুনে, একে একে সবাই মেহনূরের গালে চুমু খেয়ে বলে,
—– “আসসালামু আলাইকুম ছোট আম্মা, আসছি, আর বিকেলে দেখা হবে। দোয়া করি, আপনি সুস্থ হন তাড়াতাড়ি।”
এটা বলে সবাই একে একে বিছানা থেকে গুটিগুটি পায়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। মেহনূরও তাদের সালামের উত্তর দিয়ে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে তাদের যাওয়ার পানে। আজ একটু শান্তি লাগছে, ওর বাচ্চাদের সাথে কথা বলে সবাইকে আল্লাহ সুন্দর বুঝার মস্তিষ্ক দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
এহসান, দেখে মেহনূর ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে তাই, নিজে একটু ঝুঁকে টুপ করে মেহনূরের গালে একটি চুমু খেয়ে নেয়। মেহনূরের নিজের দুনিয়ায় আসে এমন ঘটনায় তারপর চোখ গোল করে রাগি চোখে তাকায় এহসানের পানে, আর দাঁত চেপে বলে, ”

—-এটা কি করলেন?”
এহসান মেহনূরের সামনে বসতে বসতে বলে
—, “আবার দিয়ে বুঝিয়ে দেই, কি করলাম?”
মেহনূর নিজের গালে হাত দিয়ে স্পর্শ করে বলে,
—-“কেনো অপবিত্র করে দিলেন আমায়, আবার নিজের অপবিত্র স্পর্শ দিয়ে?”
এহসান নির্বিকার মৃদু হেসে উত্তর দেয়, ”
—-বলেছো তো একবার, আমার অপবিত্রা আলিঙ্গন করবে, তোমার পবিত্রতা কে হাজারোবার।”
মেহনূর এসব ছেড়ে অন্য প্রশ্ন করে, ”
—-আচ্ছা, শুনুন, এভাবে উম্মাদের মতো ওমন করছিলেন কেন? এখন বাড়ির সবাই এই কথাই মুখে মুখে ঘুরছে।”
এহসান হতাশ চোখে এক পলক তাকায় মেহনূরের দিকে, পরে বলে,
—-“তুই যদি বুঝতি, নিজের প্রাণকে কষ্টে কাতরাতে দেখে, কতটা কষ্ট হয়, তাহলে এই প্রশ্ন করতি না।”
মেহনূর অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, ”

—-আপনি বুঝেন?”
এহসান আহত গলায় বলে,
—– “হ্যাঁ, বুঝি। ভীষণ ভাবে বুঝি। এই তো, একটু আগে, যখন তোর কথা শুনতে পারিনি, তোর আখি জোড়া খোলা দেখতে পাইনি, তখন বুঝেছি।”
মেহনূর বোকার মতো চেয়ে প্রশ্ন করে,
—-“কি বুঝেছেন?”
এহসান এক পলক মেহনূরের দিকে তাকায়, তারপর মাথা নিচু করে নিজের বুকের দিকে তাকায়, আর নিজের শাহাদাত আঙুল নিজের বুকের বা পাশে ঠেকিয়ে, মেহনূরের দিকে আবার তাকিয়ে বলে, ”
—-এই এখানে, এই ঠিক এখানে বুঝেছি। ব্যথা মনে”! হচ্ছিল, কেউ কলিজা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছিল, হৃদপিণ্ড বরাবর কুপ দিচ্ছিল।”
মেহনূর হতবাক হয়ে যায়। “কি এই পুরুষ, তার জন্য এমনটা অনুভব করে? কিন্তু কেনো, কি জন্য, কেনো?”
এহসান কে বলতে যাবে, তখনই এশা কক্ষে প্রবেশ করে, খাবার নিয়ে। এশা ধীর পায়ে বিছানায় খাবারের প্লেট রাখে, তারপর কিছু না বলে ওদের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায়।
এহসান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, খাবারের ট্রে নিয়ে হাত ধুয়ে, বাটি থেকে সুপ নিয়ে খাইয়ে দেয় মেহনূরকে। মেহনূরও একটা টুঁশব্দ না করে চুপচাপ খেয়ে নেয়।
এহসান মেহনূরকে খাইয়ে, ঔষধ খাইয়ে, ওকে একটু বিশ্রাম নিতে বলে। নিজে বাকি খাবার টুকু খেয়ে, নিচে প্লেট রেখে আসে।

এদিকে, ছোট তালুকদার বাড়িতে আট মাথা একসাথে হয়েছে, মানে মেহনূরের ছয় চাচা, ছোট ভাইজান এবং দাদা কিছু একটা পরিকল্পনা খুঁজছেন, যেন মেহনূরকে নিজদের কাছে রাখতে পারেন, আর ঐ জমি খানাও।
রাত, এশার পর—🌸🌸🌸🌸
এহসান সারাদিনই মেহনূরের পাশে ছিল, তবে আসরের নামাজ পড়ে একটা সভায় চলে যায়। মেহনূর ক্লান্তিতে সারাদিনই বেঘোরে ঘুমিয়েছে, ঔষধ খেয়ে। আর সারাদিনই, এহসান মেহনূরের পাশে বসে, তৃপ্তি নিয়ে ঘুমন্ত মেহনূরের মুখ খানা দেখে, নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটিয়েছে। তবে কি আর তৃষ্ণা মেটে? না, তা, এই জীবনে সম্ভব নয়। বারবার শুধু দেখতে মন চায়, বারবারই নিজ নারীর পানে তাকিয়ে থাকতে মন চায়, বারবার, হাজারো বার।
এহসান সভা শেষে করে, এশার নামাজ পড়ে, বাড়ি ফিরে। বাড়ি ফিরে জানতে পারে, মেহনূর ঘুম থেকে উঠে গেছে, এখন সুস্থই আছে, কিছুটা।

এহসান ধীর পায়ে কক্ষে প্রবেশ করে, কাউকে দেখতে পায় না, তবে ওর কানে একটা শব্দ ঠিকই আসে। তাই ধীর পায়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে যায়। যতই পা সামনের দিকে নিচ্ছে, ততই কান্না ভাঙা গলায় তেলাওয়াত কানে ভেসে উঠছে:
وَلَوْ شِئْنَا لَاٰتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدٰىهَا وَلٰكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّيْ لَاَمْلَاَنَّ جَهَنّ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ
(“আমি চাইলে অবশ্যই প্রত্যেক প্রাণীকে তার সঠিক পথ দেখিয়ে দিতাম। কিন্তু আমার কথা সত্য হয়েছে যে, আমি জিন ও মানুষদের সবাইকে জাহান্নাম দিয়ে পূর্ণ করব”)
فَذُوْقُوْا بِمَا نَسِيْتُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَآ اِنَّا نَسِيْنٰكُمْ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ

আত্মার আগলে পর্ব ১১

(“তোমরা তো এই দিনের সাক্ষাৎ ভুলে গিয়েছিলে, তাই এখন (শাস্তির স্বাদ) গ্রহণ করো। আমিও তোমাদের ভুলে গেলাম। আর তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য স্থায়ী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করো।”)
[সূরা আস-সাজদাহ (৩২:১৩-১৪)]
এহসান মেহনূরের কান্না জড়িয়ে থাকা তেলাওয়াত শুনছে, তার বুকটাও ধরধর করে উঠে। এই আয়াত খান অসাধারণ ভয়ংকর, কলিজা ছিঁড়ে যায়, এই আয়াতের কথা মনে হলে।

আত্মার আগলে পর্ব ১৪