আত্মার আগলে পর্ব ৪০

আত্মার আগলে পর্ব ৪০
সানজিদা আক্তার মুন্নী

আপনি কিভাবে জানবেন, আপনার এই অবস্থা আমাকে কতটা পুড়িয়েছে? কী করে জানবেন আপনি তা! কী করে বুঝবেন আপনি তা? না বুঝবেন না আপনি তা!
মেহনূরের এমন কথা শুনে এহসান হালকা হেসে বলে,
— “তুমি আছো আমার আত্মার আগলে, তাই তোমার মনের সব খবর আমার আঁচ করা আছে।”
মেহনূর অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
— “হুম, এত জানেন তো এসব ছাড়েন না কেন? খুনখারাপি, রাজনীতি—এসব ছাড়লেই তো জীবন সুন্দর হয়!”
এহসান মেকি হেসে বলে,
— “তুমি কী করে বুঝবে, প্রিয়তমা! রাজনীতির নেশা কতটা তীব্র থেকে তীব্র হয়!”
মেহনূর শান্ত গলায় এহসানের দিকে তাকিয়ে বলে,
— “হ্যাঁ, আমি তো তা বুঝব না! সব বুঝ তো আপনি বুঝেন, তাই তো আজ এমন অবস্থা।”
এহসান মুচকি হেসে বলে,

— “মরালে মরতেও হয়, প্রিয়তমা! এটা কেনো তুমি বুঝো না?”
এ কথা বলে এহসান মেকি হেসে মেহনূরের দিকে হাত বাড়ায়। কিন্তু শরীর নড়াচড়া করে হাত বাড়িয়ে তার মাথায় ছোঁয়ার চেষ্টা করলেও পারে না! শরীর এখনো অবস।
মেহনূর এটা বুঝতে পেরে নিজে অল্প এগিয়ে আসে এহসানের দিকে। এহসান মেহনূরের কপালে নিজের হাত বুলিয়ে দেয়, অতি আদরে। ঘায়েল চোখে চেয়ে থাকে আপন নারীর পানে! মেহনূরের করুন অবস্থা এহসান বেশ বুঝতে পারছে। কাঁদতে কাঁদতে হয়তো এই অবস্থা, তার জন্যই এমন অবস্থা !
এহসান মেহনূরকে বলে,
— “চিন্তা করিস না, কবুতরের বাচ্চা! তোকে আমি আমার কয়েক জোড়া কবুতরের মা না বানিয়ে মরব না!”
মেহনূর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এহসানের দিকে। এ পুরুষ এমন কেন? সবসময় শুধু ফাজলামি করে! এই মুহূর্তেও তাই করছে!

একটি দিন পেরিয়ে গেছে। সেদিন ভোরেই এহসানের জ্ঞান ফিরেছে! বাড়ির সবাই যেন কিছুটা নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছে। এখন অন্তত তারা নিশ্চিত—এহসান বেঁচে আছে!
এখন রাত আটটা বাজে। পুরো হাসপাতালে শুধু মেহনূর আছে এহসানের পাশে। বাড়ির সবাই মাগরিবের পরই ফিরে গেছেন। এনিসা বেগম থাকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় আর সম্ভব হয়নি।
মেহনূর কতবার যে শুকরিয়া আদায় করে রবের দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়েছে, তার হিসেব নেই! সে জানে, এই ফিরে আসাটা শুধুই ডাক্তারদের চিকিৎসার কারণে হয়নি, বরং আল্লাহর কুদরতে এহসান আবার ফিরে এসেছে।
এহসানের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে মেহরাজ। ক্যাবিনের বাইরে কঠোর পাহারা বসানো হয়েছে। পুরো হাসপাতালজুড়ে হাসিব আর জয়নাল তাদের লোকজন রেখে দিয়েছে। এমনকি নিজেরাও বারবার টহল দিচ্ছে, যাতে কোনোভাবে কেউ আক্রমণের সুযোগ না পায়। হাসপাতালের বাইরে, ভেতরে—সবখানেই পুলিশ পাহারা বসিয়েছে।
এরিক?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সে আর কোথায় যাবে? হাসিব আর জয়নাল ঠিকই বুঝে গেছে—এটা এরিকের কাজ, রাকিবের নয়। তবে তারা পুলিশকে কিছু জানায়নি।
গোপনে এরিককে তুলে এনে একটি গোডাউনে আটকে রাখা হয়েছে। ভয়ানক নির্যাতন চলছে তার ওপর, তবে মারার মতো নয়! কারণ এহসানের সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় আছে সবাই। তার আগে এই প্রতিশোধ সম্পূর্ণ হবে না! একে তো কেবল তাদের ভাইজানই শেষ করবে!
সকাল থেকে যখন এহসানের জ্ঞান ফিরেছে, তখন থেকে হাসপাতাল যেন মিনি রাজনৈতিক সভায় পরিণত হয়েছে! কত নেতা, কত পুলিশ, কত অচেনা মুখ দেখা গেল! একের পর এক সবাই আসছে, কথা বলছে, সান্ত্বনা দিচ্ছে, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
সকাল থেকে এখন পর্যন্ত এক পলক এহসানকে দেখেছিল মেহনূর। তারপর আর দেখা হয়নি। কারণ, হাসপাতালের কেবিন যেন মানুষের ঢলে হারিয়ে গেছে!
এখন রাতের নিস্তব্ধতায় যখন সব থেমে গেছে, যখন আর কেউ আসবে না, এখন অবশেষে মেহনূর বসেছে তার আপন মানুষটার পাশে।

মেহনূর এহসানের কথায় রাগতে পারে না। যে কথা একদিন না শুনলে তার প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে, আজ যখন তা শুনতে পেয়েছে, তখন কী করে রাগবে?
এহসান মেহনূরের দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে,
— আমার জন্য খুব কষ্ট হয়েছে তোমার? কেঁদেছো বুঝি আমার জন্য? এই পাপিষ্ঠের জন্য?
মেহনূরের বুকে কথাগুলো শেলের মতো বিঁধে যায়। ইশ! যদি এহসান বুঝতে পারত, তাকে হারানোর ভয় তার হৃদয়কে কতটা ক্ষতবিক্ষত করেছে! যদি বলতে পারত, এই এক’দিন সে কীভাবে প্রতিটা মুহূর্ত মৃত্যুর মতো যন্ত্রণায় কাটিয়েছে! কিন্তু আফসোস, সে কিছু বলতে পারে না। শুধু মাথা নিচু করে ফেলে। চোখে পানি এসে গেছে, তাই নিজেকে আড়াল করতেই মাথা নামিয়ে নেয়। একে একে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তার গাল বেয়ে।
এহসান মেহনূরের এই নীরব কান্না দেখে গভীর কণ্ঠে বলে,
— কাঁদছো? আমার জন্য কাঁদছো?
মেহনূর চোখ তুলে, দ্রুত হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে ফেলে। তারপর ব্যথাভরা কণ্ঠে বলে,
— হ্যাঁ, কাঁদছি! আপনার জন্যই কাঁদছি! জানেন, কত কেঁদেছি? আপনি কী করে জানবেন! আর বুঝবেনই কী করে! আপনার কাছে তো আমি বড় না! বড় আপনার রাজনীতি, বড় আপনার ব্যবসা, বড় আপনার রক্তের খেলা!
কিছুক্ষণ থেমে মেহনূর আবার বলে,

— আমি কী দোষ করেছি বলুন তো? কেন আমার সাথে সবসময় এমন হয়? আপনি অন্যায় করবেন, পাপ করবেন, আর তার শাস্তি পাবেন, আর আমি সেই শাস্তির ফল ভোগ করব? কেন আমি মরব? বলুন তো, কেনো?
এহসান নির্বাক হয়ে যায় মেহনূরের কথা শুনে।
মেহনূর চোখের পানি মুছে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
— আপনার এই অবস্থা দেখে আমার মনে হচ্ছে আমি-ই মরে যাচ্ছি! মরতে মরতে বেঁচে আছি! না ঘুমাতে পারছি, না খেতে পারছি! আপনার কথা মনে হলেই বুক ধক করে ওঠে। আপনার দিকে তাকালেই মনে হয় দুনিয়া অন্ধকার! কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার, আপনার জন্য!
এ কথা বলেই সে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। এহসানের ভেতরটা হাহাকার দিয়ে ওঠে। তার ভালোবাসার মানুষটা বুক ফাটিয়ে কাঁদছে, তার জন্য তার নারী কাঁদছে আর সে কিছুই করতে পারছে না!
এহসান অসহায় কণ্ঠে বলে,
— বেগম, আপনি এই পাপিষ্ঠ আমার জন্য কাঁদবেন না! আপনার কান্না দেখলে বুকের ভেতরটা ফেটে যায়!
বলতে বলতে সে নিজের বুকের বাঁ পাশে হাত রাখে।
মেহনূর কাঁদতে কাঁদতে চুপ করে যায়। এহসান অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে তার দিকে এগিয়ে আসে। ডান হাত বাড়িয়ে মেহনূরের গাল ছুঁয়ে অশ্রু মুছে দেয়।
মেহনূর দুই হাতে এহসানের হাত ধরে ফেলে। তারপর তার হাতে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে দিতে টিপে চোখের পানি ফেলে, ফুঁপিয়ে উঠে বলে,
— আপনি পাপিষ্ঠ হলেও আমার, অপবিত্র হলেও তো আমার! আপনার কিছু হলে আমারি তো সব শেষ হবে!
সে আবারও এহসানের হাত নিজের গালে চেপে ধরে। শত বার এহসানের হাতে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
— খুব ভয় পেয়েছিলাম… খুব! মনে হচ্ছিল, সব শেষ হয়ে গেছে! আপনার বুকের পাশে হশয়তো আর কখনও থাকতে পারব না… খুব কষ্ট হচ্ছিল… খুব!

এহসান নীরবে সব অভিযোগ, সব বিনয় শুনে যাচ্ছে আপন নারীর! ভালোবাসা এমনি হয়—নিজের প্রিয় মানুষটার কিছু হলে মনে হয়, নিজের সামনে মৃত্যু দাঁড়িয়ে আছে! এতটা ভয়ংকর এই অনুভূতি! আর সে ভালো করেই জানে, মেহনূর সেই যন্ত্রণা অনুভব করেছে, তাই তো এমন করছে।
এহসান মেহনূরের দিকে শুধু অপলকভাবে তাকিয়ে রয়। নাক, মুখ, চোখ লাল বর্ণের মতো হয়ে গেছে, মনে হচ্ছে, টোকা দিলেই রক্ত ঝরবে—গাল থেকে, নাকের ডগা থেকে! এর মধ্যে নামাজের হিজাব মাথায় জড়ানো! মানুষকে কাঁদলেও এত মায়াবী লাগতে পারে, বুঝি!
মেহনূর এহসানের হাত ছেড়ে দেয়। নিজের জ্ঞানে আসে—কি থেকে কি বলেছে, নিজেও জানে না হয়তো ভালো করে!
এহসান মুচকি হেসে বলে,

— হাত ছেড়ে দিলে? এই হাত ধরে রাখতে চাও না?
মেহনূর আবারও এহসানের হাত শক্ত করে ধরে, এহসানের দিকে তাকিয়ে বলে,
— চাই! এই হাত ধরে আমি দুনিয়া, আখিরাত, কিয়ামত, হাশর, মিজান, পুলসিরাত, আল-কান্তারা পাড়ি দিয়ে আপনাকে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে চাই!
এহসান নিজের অন্য হাত মেহনূরের হাতে শক্ত করে রেখে হেসে বলে,
— হ্যাঁ, আমরা জান্নাতে যাব ইনশাআল্লাহ! একসঙ্গে আমরা সব পাড়ি দেব, ইনশাআল্লাহ!
মেহনূর হেসে বলে,
— ইনশাআল্লাহ! আমাদের আল্লাহ যদি আমাদের প্রতি দয়া করেন, তাহলে আমরাও একসঙ্গে জান্নাত দেখব, সাথে দেখব প্রিয় রবকে, প্রিয় রাসুলকে।
এহসান হেসে বলে,
— দেখে নিও, প্রিয়তমা! আমাদের রব আমাদের নিশ্চয়ই দয়া করবেন। তিনি দয়াময়।
মেহনূর বলে,

— হ্যাঁ, আমার রব দয়াময়! তাই তো আপনার জীবন আমায় আবারও ভিক্ষা দিয়েছেন।
এহসান মেহনূরের গালে টোকা মেরে মুচকি হেসে বলে,
— এখন তো আপনি মেয়র সাহেবের বেগম হয়ে গেছেন! তো, আপনার ফিলিংস কেমন, ম্যাডাম?
মেহনূর মুখ বাঁকিয়ে বলে,
— এসবের নামও আমার সামনে নিবেন না! এই ফালতু ব্যাপারগুলোর জন্যই তো আজ আপনার এই অবস্থা! আর আপনি আমায় ‘আপনি’ ‘আপনি’ করছেন কেন? আজব!
এহসান মেহনূরের গাল টেনে বলে,
— আপনাকে ‘আপনি’ বলব না? মেয়র সাহেবের বউ হয়েছেন আপনি! আপনার সম্মান কি আর কম যায় বলুন!
মেহনূর এহসানের হাত ধরে বিরক্তি নিয়ে বলে,
— উমম… বাজ্জাত পুরুষ! কী করছেন? গাল ছিঁড়ে ফেলবেন নাকি?
এহসান নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে মেহনূরের দিকে তাকিয়ে বলে,
— জানো জান? এই যে তুমি আমার সামনে আছো, তাই আমার আর নিজেকে অসুস্থ লাগছে না! একদম সুস্থ লাগছে!
মেহনূর এহসানের দিকে ঝুঁকে এহসানের বুকে আলতো হাত বুলিয়ে দিতে দিতে এহসানের পানে তাকায়! এহসান চোখ বুজে নেয়, আপন নারীর শরীরের ঘ্রাণ নিতে থাকে! এত কাছে পেয়ে তার কলিজা ধকধক করছে! এর চেয়েও কাছে সে তার নারীকে পেয়েছে, আপন করে পেয়েছে! কিন্তু এই নারীর প্রতি প্রতি মুহূর্তে নতুন করে অনুভূতি জন্ম নেয়! তাই তো হৃৎস্পন্দনের এমন বেহাল অবস্থা!
মেহনূর এহসানের পানে তাকিয়ে বলে,

— এই বুক না আমার, শুধুই তো আমার! তাহলে এই বুকে গুলি কি করে বিঁধল? আপনি আমার আমানতের খিয়ানত করছেন, মেয়র সাহেব!
এহসান চোখ খুলে মেহনূরের পানে তাকায় আর বলে,
— চিন্তা করো না! যার জন্য তোমার আমানতের খিয়ানত হয়েছে, সেও খিয়ানত হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ!
মেহনূর এহসানের দিকে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে বলে,
— আপনি খুন করবেন? আবারও রক্তের খেলায় মেতে উঠবেন?
এহসান মেহনূরের গালে হাত রেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
— রক্তের নেশা এক ভয়ংকর নেশা, প্রিয়তমা! যখন মনে এ নেশা জাগে তখন রক্তের খেলায় মেতে উঠতে হয়!
মেহনূরের কলিজা ধক করে ওঠে! সে ধপ করে বসে যায় বিছানার পাশে রাখা টুলে।
মেহনূর এহসানের দিকে তাকিয়ে অসহায় গলায় বলে,
— থাকুন না! একটু পবিত্র থাকুন! রক্তের খেলায় আবদ্ধ না হয়ে থাকুন!
এহসান মেহনূরের কথায় মুচকি হেসে বলে,
— রক্তের খেলায় যখন আবদ্ধ হয়েছি, তখন রক্তের নেশা কাটিয়েই উঠব!
এ বলে সাদা বিছানার ওপর রাখা মেহনূরের নরম হাতখানা নিজের হাতে আলতো করে ধরে নেয়। অতঃপর বাচ্চাদের মতো মেহনূরের হাতের পাতায় আঙুল বুলিয়ে দিতে থাকে।
এতে মেহনূরের প্রচণ্ড কাতুকুতু লাগে, তাই সে চমকে ওঠে!

তখনই দরজার খট করে শব্দ হয়!
শব্দ শুনেই মেহনূর বুঝতে পারে— মেহরাজ এসেছে। সে আগেই বলেছিল, রাত নয়টার দিকে এসে একবার চেক করবে।
মেহনূর তাড়াতাড়ি নিজের হাত এহসানের থেকে সরিয়ে নিতে চায়। গায়রতেরও তো একটা ব্যাপার আছে! বড় ভাইয়ের সামনে কেমন করে হাত ধরে রাখবে?
কিন্তু এহসান কি ছাড়বে? সে শক্ত করে মেহনূরের হাত চেপে ধরে বসে থাকে।
মেহরাজ কক্ষে প্রবেশ করেই একনজর তাদের দিকে তাকায়, তারপর চোখ ফিরিয়ে নেয়। সে স্পষ্ট বুঝতে পারে, যেভাবে সে এশার সঙ্গে ইতরামো করে, ঠিক সেভাবেই এহসানও তার বোনের সঙ্গে করছে! তাই তো মেহনূর বারবার ইশারায় এহসানকে হাত ছাড়তে বলছে, চোখ বড় বড় করে কটমট করে তাকাচ্ছে— তবুও এহসান গা ছাড়া ভাব নিয়ে শুয়ে আছে, যেন কিছুই ঘটেনি।
এই দৃশ্য দেখে মেহরাজ মনে মনে খুশি হয়। তার পাগলি বোনটা এত কষ্ট পাচ্ছিল, এখন তো অন্তত তার মনটা শান্ত হলো!
মেহরাজ মুচকি হেসে এহসানের দিকে এগিয়ে যায়। কিছুটা অস্বস্তি লাগছে তার— এহসানের চিকিৎসা করতে হবে! কিন্তু এসব তো মানলে চলবে না। সে একজন ডাক্তার। আর সবচেয়ে বড় কথা— এহসানের চিকিৎসার দায়িত্ব যদি সে নিজেই নেয়, তাহলে অন্য কেউ করবে, আর এতে মেহনূর সবসময় এহসানের পাশে থাকতে পারবে না সবসময় আর মহিলা ডাক্তারের কাছ থেকে এহসান জীবনেও সেবা নিবে না ।
মেহরাজ সামনে এসে বলে,

— হাতটা একটু এগিয়ে দিন।
মেহনূর লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়।
এহসান বাঁ হাত মেহরাজের দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলে,
— বাবা মেহরাজ, তোর ভাগ্য কতই না খারাপ! যাকে দু’চোখে দেখতে পারিস না, তারই সেবা করতে হচ্ছে আজ!
মেহরাজ মেকি হাসে, এহসানের পালস চেক করতে করতে বলে,
— হ্যাঁ, ইদানীং আমার দিনকাল বেশ খারাপি যাচ্ছে। বাড়িতে তোমার বোনের থাপ্পড়-উষ্ঠা খেতে খেতে, আর হাসপাতালে তোমার সেবা করতে করতে!
মেহনূর চোখ বড় বড় করে তাকায় মেহরাজের দিকে। এশা তার ভাইজানকে মারে? আর ভাইজান এত হাসি-ঠাট্টার সুরে বলছে?
এহসান মুচকি হেসে বলে,
— বাবা মেহরাজ, বউয়ের কাছে এমন থাপ্পড়-লাথি-উষ্ঠা খেতেই হয়! আমিও কম খাইনি, তোর বোনের কাছ থেকে!
লজ্জায় মেহনূর আবার চোখ নামিয়ে নেয়।
মেহরাজ তখনও এহসানের চিকিৎসা করছে। বলল,

— তোমার ভাগ্য ভালো, আমার বোনকে পেয়েছ। আমারও ভাগ্য ভালো, তোমার বোনকে পেয়েছি! কিন্তু আমার মতো প্রতিদিন লাথি-উষ্ঠা খেতে হয় না তোমার,এই আরকি
এহসান মেহনূরের দিকে তাকিয়ে কৌতুকের সুরে বলল,
— তোর বোন লাথি মারুক বা না মারুক, মুখ দিয়ে দিনে কিন্তু শতবার আমায় কবরে পাঠায়!
মেহনূর সাথে সাথে এহসানের হাত চেপে ধরে, শক্ত করে— যেন আর কিছু না বলে!
মেহরাজ বিষয়টা বুঝে দ্রুত কাজ শেষ করে সেখান থেকে চলে যায়।
মেহরাজ বের হতেই মেহনূর দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার দিকে তাকায়, তারপর এহসানের দিকে রাগী চোখে চেয়ে বলে,
— আপনি ভালো হবেন না, জীবনেও! এত অসভ্য কেন আপনি?
এহসান ঠোঁট কামড়ে হাসে, মেহনূরের নরম গাল টেনে আদুরে গলায় বলে,
— তোমার মতো সুন্দরী, রূপবতী বউ থাকলে সভ্য হতে মন চায় না!
মেহনূর দ্রুত এহসানের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
— এত অসভ্য! ছি! ছি! এই অবস্থায়ও এসব বলছেন?
এহসান হাসতে হাসতে বলে,
— এই অবস্থাতেও কত কিছু করার ক্ষমতা রাখি, দেখাবো তোমাকে ডেমো! আসো দেখিয়ে দেই!
মেহনূর টুল ছেড়ে উঠে যেতে যেতে বলল,
— মুখ বন্ধ রাখুন, নয়তো মুখ ভেঙে দেব! অসভ্য পুরুষ!
বলে পাশের টেবিল থেকে ফলের প্লেট হাতে নেয়। উদ্দেশ্য— ফল কেটে এহসানকে খাওয়ানো।

ডাইনিং টেবিলে মনিরুল সাহেব, এনাম ও এমরান বসে আছেন, কিন্তু কারও মুখ দিয়েই খাবার যাচ্ছে না। এত কুৎসিত ঘটনা ঘটেছে যে সবাই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত।
নূরি এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। একটু হাওয়া খেতে ছাদে উঠেছিল, কিন্তু দেখল, ছাদের সোফায় বসে তার মেহরুব ভাই বই পড়ছে।
সে একবার তাকিয়ে দেখল, কিন্তু মেহরুব বই থেকে চোখ তুলল না। নূরি জানে, যখন তার ভাই উপন্যাস পড়তে বসে, তখন দুনিয়ার কোনো খোঁজ রাখে না।
সে নিজের মতো ছাদের কিনারে গিয়ে দেয়ালে দুই হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল।
মেহনূরের ভালোবাসার তুলনা সে মিলিয়ে দেখছে। তার আপ্পি কেমন পাগলামি করছিল! হয়তো এহসান ভাইকে এত আপন করে নিয়েছে বলেই সে এমন আচরণ করছিল।
মেহরুব ভাই কি তাকে ভালোবাসবে?
সত্যিই কি কোনোদিন তার সঙ্গে সংসার করবে?
সে কি বুঝিয়ে বলতে পারবে, কতটা ভালোবাসে মেহরুবকে?
নূরি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হয়তো তা সম্ভব নয়। তবে, রব চাইলে সবই সম্ভব!
ঠিক তখনই সে নিজের পিছনে কিছুর অস্তিত্ব টের পেল। শরীরের ঘ্রাণ পেয়েই বুঝতে পারল—এটা তারই আপন পুরুষ!
মেহরুব পাশে এসে দাঁড়াল। এক পলক আকাশের দিকে তাকিয়ে, তারপর নূরির দিকে চেয়ে বলল,

— কী দেখছিস?
নূরি আনমনে উত্তর দিল,
— নিজের অন্ধকার, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
মেহরুব কপাল কুঁচকে বলল,
— অন্ধকার হবে কেন তোর ভবিষ্যৎ?
নূরি দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকাল মেহরুবের দিকে।
— যে নারীর জীবন দুই পুরুষের স্পর্শ পাবে, তার জীবন তো অন্ধকারই, তাই না মেহরুব ভাই?
মেহরুবের কলিজা ধক করে উঠল!
— এসব কী বলছিস তুই?
নূরি শান্ত গলায় বলল,
— আমার বিয়ে নিয়ে সবাই উঠে-পড়ে লেগেছে। সবাই আমাকে বোঝা মনে করছে। তাই তো আপনার অনুমতি না নিয়েই আমাকে আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে দিল। যখন দেখল, আপনি রাজি নন, তখন নতুন কাউকে খুঁজতে শুরু করল, যে এই বোঝা বইবে!

মেহরুবের বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল।
নূরির ছোট্ট মনটা বিষাদে ভরে গেছে, সে বুঝতে পারছে।
সে ধীরে ধীরে নূরির বাহু টেনে নিয়ে জীবনে প্রথমবার আপন নারীকে বুকে জড়িয়ে নিল।
তার হাত কাঁপছিল, কিন্তু আজ আর নিজেকে আটকায়নি।
আজ সে জড়িয়ে ধরল তার প্রিয় ফুলকে, নিজের বুকে।
নূরি অবিশ্বাসে স্থির হয়ে রইল।
সে কি স্বপ্ন দেখছে?
তার মেহরুব ভাই কি সত্যিই তাকে জড়িয়ে ধরেছে?
মেহরুব নূরির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— নূরি ফুল, চিন্তা করিস না। তুই শুধু আমার ফুল থাকবি। আমার একান্ত ব্যক্তিগত ফুল হয়ে… ইনশাআল্লাহ!
মেহরুবের এই ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে নূরি ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।
সে মেহরুবের বুকের মাঝে মুখ গুঁজে বলল,
— আপনি শুধু মুখে বলেন, বাস্তবতা ভিন্ন। আমি শুধু আপনার হয়ে থাকতে চাই… শুধু আপনার!
মেহরুব আবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ইনশাআল্লাহ, তুই শুধু আমার হয়েই থাকবি!
নূরি শক্ত করে আঁকড়ে ধরল মেহরুবকে, যেন আর কখনো ছাড়তে চাইছে না!

ঠিক তখনই ধীর পায়ে ছাদে উঠে এলেন মাজহারুল সাহেব।
সামনে দেখা গেল—তার বাঁদর ছেলেটি অবশেষে বুঝে গেছে, বেগম কত মূল্যবান!
তিনি মুচকি হেসে নিচে নেমে গেলেন। এখানে থাকা টা উওম নয়

নিচে এসেই দেখলেন, মেহরাজ চলে এসেছে।
মেহরাজ হাসিমুখে সালাম দিল,
— আসসালামু আলাইকুম, আব্বা! কেমন আছেন?
মাজহারুল সাহেবও হেসে উত্তর দিলেন,
— ওয়ালাইকুম সালাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। বাপ, আমার মেয়ে কেমন আছে?
মেহরাজ মুচকি হেসে বলল,
— আপনার মেয়ে খুব ভালো আছে, তার পাপিষ্ঠ পুরুষ এখন সুস্থ বলে কথা!
মাজহারুল সাহেব মেকি হেসে বললেন,
— স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার কাছে সব কলঙ্কই তুচ্ছ, যা আমি আমার ফুলকেই দেখে বুঝলাম।
মেহরাজ হাসতে হাসতে বলল,
— হ্যাঁ, আব্বা!
মাজহারুল সাহেব মেহরাজের কাঁধে হাত রেখে বললেন,
— মনে রেখো, তোমার বোনকে সে আদরে রেখেছে, তাই তুমিও তোমার বেগমকে আদরে রেখো!
মেহরাজ মনে মনে বলল,
“কি আর আদরে রাখব? ভালোবাসতে গেলেই তো উষ্টা খেতে হয়!”
কিন্তু মুখে মেকি হাসি দিয়ে বলল,
— ইনশাআল্লাহ, আব্বা! আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব নিজের স্ত্রীর মর্যাদা ও হক আদায় করতে।
মাজহারুল সাহেব হেসে বললেন,
— আমি জানি, তুই আমাকে হতাশ করবি না। আচ্ছা, যা, গিয়ে গোসল করে নে।
মেহরাজ মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে গেল…

মেহরাজের খাবার এশা ঘরে নিয়ে এসেছে। মেহরাজের উপর বেশ ধকল গেছে, তা সে ভালো করেই বুঝে গেছে, তাই আর কথা বাড়ায়নি। মেহরাজ বাথরুমে প্রবেশ করেছে গোসল দিতে।
এশা খাবার নিয়ে আসতেই মেহরাজ বেরিয়ে আসে বাথরুম থেকে! এশা খাবারটা টি-টেবিলে রেখে মাথা নিচু করে এসে বিছানায় বসে যায়, কারণ মেহরাজ তো বেহায়া! আর সে এখন সারারাত শুধু তোয়াল পরে এদিক-ওদিক চক্কর দেবে এশার সামনে! এতে এশার বেশ লজ্জা লাগে।
মেহরাজ নিজের চুল মুছতে মুছতে খাবারের দিকে এগিয়ে যেতে বলে—
— নাটক না করে দেখে নাও বউ।আমায়, পরে আর দেখার সুযোগ পাবে না। এটাই মোক্ষম সুযোগ!
এশা মেহরাজের কথা শুনে কলিজা ধক করে ওঠে। আর দেখতে পাবে না মানে? এশা ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বলে—
— কেন? তুমি আবার নিজের দেশে চলে যাবে নাকি, যে তোমায় দেখতে পাব না?
মেহরাজ সোফায় বসতে বসতে বলে—

— হ্যাঁ, চলে যাব। তবে সাথে তুমি যাবে, আর সাথে যাবে আমাদের চার-পাঁচটা বাচ্চা!
মেহরাজের কথা শুনে এশা দাঁত চেপে আশপাশে তাকায়। একটা বালিশ নিয়ে মেহরাজের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে—
— তোকে শুধু উষ্টা দিতে মন চায়! শুধু উষ্টা!
মেহরাজ এশার দিকে তাকিয়ে খাবার মুখে নিতে নিতে বলে—
— ওগো আমার উষ্টাবতী, তোমার পায়ের উষ্টাই যে আমার কাম্য!
এশা রাগি গলায় বলে—
— গিলতে বসেছিস, চুপচাপ গিলে নে। নয়তো থাপ্পড়িয়ে বেয়াদবি উড়িয়ে দেব!
মেহরাজ হেসে বলে—
— হ্যাঁ, খাবার গেলা শেষ হলে তোমাকেও গিলব!
এশা নিজে নিজে কয়েকটি গালি দিয়ে বিছানায় শুয়ে যায়। সে জানে, একটু পরই মেহরাজ দামড়া শরীর নিয়ে এসে শুয়ে পড়বে!
মেহরাজ খাওয়া শেষ করে একখানা লুঙ্গি পড়ে ওজু করে বিছানার দিকে এগিয়ে আসে, বাতি নিভিয়ে।
এসেই যেই না এশার বুকে মাথা রাখতে যাবে, তখনই এশা ওকে আটকে ওর শরীরে হাত বুলিয়ে দাঁত চেপে বলে—
— গেঞ্জি কই?
মেহরাজ এশার বুকে মাথা রাখতে রাখতে বলে—

— নেই!
এশা বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। এতদিন এটারি বাকি রেখেছিল! গালি গায়ে কিভাবে ওকে জড়িয়ে আছে
এই মেহরাজ এত বেহায়া! লজ্জা লাগে না? গন্ডারের চামড়া নিয়ে চলে!
মেহরাজ মুখ তুলে এশার গলা থেকে ওড়নাটা নিয়ে ওর গলায় নিজের মুখ বুঁজে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। এশার কাছে এগুলো সাধারণ হয়ে গেছে, কারণ এমন যন্ত্রণা তাকে মেহরাজ সবসময়ই দিয়ে থাকে!
এশা মেহরাজের আধ ভেজা চুলে নিজের আঙুল ডুবিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেহরাজকে। তারপর জিজ্ঞেস করে—
— ভাইজান আর মেহনূর কেমন আছে? কী করছে?
মেহরাজ ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয়—
— ভালো। এখন দুজনেই আলহামদুলিল্লাহ!
মেহরাজের কথা শুনে এশা বেশ খুশি হয়। তবে আবার চিন্তার ভাঁজ পড়ে ওর কপালে।
এশা মেহরাজকে জিজ্ঞেস করে—
— আচ্ছা, রুমে তো দেখলাম না অন্য কোনো বিছানা। তাহলে মেহনূর ঘুমাবে কোথায়? কাল রাতেও ঘুমোয়নি পাগলটা!
মেহরাজ বলে—
— তোমার ভাইজানের বুকেই ঘুমাবে, আর কোথায়?

এশা চমকে গিয়ে বলে—
— ভাইজানের বিছানা তো বেশ ছোটখাটো! দুজন মানুষ থাকবে কীভাবে?
মেহরাজ বলে—
— তোমার ভাই সিট চেঞ্জ করে বড় সিট এনেছেন।
এশা বলে—
— ও আচ্ছা!
মেহরাজ এশাকে চোখ লাগাতে দিচ্ছে না। শুধু নড়াচড়া করছে, আর ওর গলায় দাঁত বসিয়ে দিচ্ছে বারবারই!
এশা মেহরাজের পিঠে কিল দিয়ে বলে—
— ইতরের ইতর! তোর ইতরামি আমি ছাড়িয়ে দেব এখন!
মেহরাজ ফিসফিসিয়ে বলে—
— জান, মন চাচ্ছে তোমাতে ডুবে যাই!
এশা হুমকি দিয়ে বলে—
— খালি ডুবে দেখ! তোকে পুকুরে চোবাতে আমার সময় লাগবে না!
মেহরাজ ফিসফিসিয়ে বলে—
— একটা ছোট্ট বাচ্চার বাপ হওয়ার জন্য যদি পুকুরে চোবানি খেতে হয়, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই!
এশা দাঁত চেপে বলে—

— আর একটা কামড় যদি আমার গলায় বসাস, তো তোর দাঁত সব খুলে নেব!
মেহরাজ আবারও দাঁত বসিয়ে বলে—
— বসিয়েছি! কী করবে?
এশা মেহরাজকে সরিয়ে নিতে নিতে বলে—
— আরে! এই গরমের মধ্যেও তোর জন্য আমার নামাজের হিজাব পড়ে সারাদিন থাকতে হয়! নাহলে এই গলার দাগগুলো ভাসে! প্রতিদিন এমন না করলেই হয় না?
মেহরাজ হেসে বলে—
— না করলেই হয় না! বউকে ভালো না বাসলে ঘুম আসে না!
এশা কর্কশ গলায় বলে—
— দাঁত দিয়ে চামড়া তুলে ফেলা কে ভালোবাসা বলে?
মেহরাজ শব্দ করে হেসে বলে—
— এগুলোকে লাভ বাইট বলে, বেগম! লাভ বাইট!
এশা কিছু বলে না। কী বলবে? কে পারবে এর সাথে কথায়?
মেহরাজ এশাকে জিজ্ঞেস করে—
— মিসওয়াক দিয়ে ওজু করেছো?
এশা উত্তর দেয়—

আত্মার আগলে পর্ব ৩৯ (২)

— হ্যাঁ, করেছি। কিন্তু তোমায় গালি দিয়ে ওজু হয়তো আর নেই!
মেহরাজ মুখ তুলে এশার কপালে, ঠোঁটে, গালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে—
— তাহলে আগামীকাল তোমার লজ্জার মাগফিরাত হবে, ইনশাআল্লাহ!
এশা মেহরাজের মাথায় আলতো থাপ্পড় মেরে বলে—
— চুপচাপ ঘুমিয়ে যা! নয়তো তোর আত্মার মাগফিরাতের ব্যবস্থা হয়ে যাবে!

আত্মার আগলে পর্ব ৪১