আত্মার আগলে পর্ব ৬
সানজিদা আক্তার মুন্নী
এহসান থমকে দাঁড়ায় ঘরের সামনে এসে। কিন্তু সাহস করে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকার শক্তি পাচ্ছে না। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে, শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কতটা ভয়ংকর সুন্দর এই অনুভূতি! এমনটা তো কখনো হয়নি তার সঙ্গে! মেহনূরের রূপ আজ হয়তো অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে। তার সৌন্দর্যের গভীরতা শুধু আল্লাহই জানেন!
এই নারী কতটা আবেদনময়ী হতে পারে বিনা সাজে, তা তো জানে এহসান। আর আজ! সবাই মেহনূরকে সাজিয়ে-গুছিয়ে বসিয়ে রেখেছে, কেমন দেখাবে সে? এহসান আর কল্পনা করতে পারছে না।
হাজারো সংকোচ নিয়ে অবশেষে কক্ষে প্রবেশ করে সে। কলিজা ধড়ফড় করছে। এতটা ধড়ফড় তো সাত-আটজন মানুষকে একসঙ্গে খুন করতেও করেনি!
ভেতরে প্রবেশ করতেই এক মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে আঘাত করে— যা ফুলের সুবাস!
সারা কক্ষে অসংখ্য মোমবাতি জ্বলছে, আলোর ছটায় এক অপূর্ব দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহর হুকুমেই যেন এই সৌন্দর্য!এহসান ধীরে ধীরে সামনে এগোয়।
কিন্তু পা যেন ভারী হয়ে এসেছে, সামান্য কাঁপছে! বুকভরা শ্বাস নিয়ে দরজার পর্দা সরিয়ে পা রাখে সেই আসল কক্ষে, যেখানে তার রানী অপেক্ষা করছে!
মেঝেতে পা রাখতেই সামনে তাকায়—বুকের ভেতর ধক করে ওঠে! সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার মায়াবতী। অন্য দিকে তাকিয়ে “!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেহনূর পেছন ফিরে আছে, পরনে খয়েরি রঙের শাড়ি। পাতলা শাড়ির আড়ালে ধবধবে সাদা শরীরের অবয়ব ফুটে উঠছে আবছাভাবে। তার হাঁটুর নিচ পর্যন্ত নেমে আসা এলোমেলো চুল এক অনন্য আকর্ষণ তৈরি করেছে। আহা! এতেই যেন এহসানের হৃদয় গলে যাচ্ছে।
অজান্তেই হাত-পা কাঁপছে তার। ধীরে ধীরে আপন নারীর দিকে এগিয়ে যায় সে।
মেহনূর তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। এহসানের উপস্থিতি টের পেয়ে ধীরে ধীরে ফিরে তাকায়।
সেই দৃষ্টি! এহসান স্তব্ধ হয়ে যায়”! সেই গোলাপি ঠোঁট! সামান্য লিপস্টিকের ছোঁয়ায় আরও মোহময় হয়ে উঠেছে। আর সেই আঁখিজোড়া! সেই মারাত্মক আঁখি, যার গভীরতায় একবার হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসার উপায় থাকে না! তার মধ্যে কাজল টেনে দেওয়া হয়েছে এতে আরও ভয়ংকর সুন্দর হয়ে উঠেছে এই আঁখি! মনে হচ্ছে, এই দুই আঁখিতেই ডুবে যেতে!
শাড়ির পাতলা আঁচল শরীরের অবয়ব স্পষ্ট করে তুললেও তার দৃষ্টি সেখানে টিকেনি। সে আটকে গেছে ঐ ভয়ংকর সুন্দর আঁখিজোড়ায়!
মেহনূরও অনুভব করে এহসানের তীব্র চাহনি। কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকার পর আচমকা হেসে বলে,
— তাকিয়ে আছেন যে? ভোগ করবেন না?
এহসান চমকে ওঠে! কি বলল এই মেয়ে? তার কণ্ঠের ভারী আবরণ মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে।
তার চমকে ওঠার প্রতিক্রিয়া দেখে মেহনূর আরও বিস্মিত হয়। তারপর ক্ষোভে, অভিমানে নিজের শাড়ির আঁচল এক টানে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে,
— নিন! ভোগ করে নিন! এখানেই কিচ্ছা শেষ করুন”! আপনার বাড়ির মহিলারা বলেছেন, যেন আপনাকে খুশি করি! তাই বিলিয়ে দিলাম নিজেকে! নিজের নারীত্ব কে এবার নিশ্চয়ই খুশি, তাই না?
শব্দগুলো ছুরির মতো বিঁধতে থাকে এহসানের বুকে। সে কিছু বলে না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাত বাড়িয়ে পড়ে থাকা শাড়ির আঁচল টেনে তোলে। মেহনূরের তীব্র ঝাপটা এতটাই শক্ত ছিল যে আঁচলের সাথে ব্লাউজের কিছু অংশ কাঁধ থেকে সরে গেছে, উন্মুক্ত হয়েছে এতে তার ভেতরের অনাবৃত অংশ।
কিন্তু এহসান…! সে কেবল ধীরে ধীরে মেহনূরের কাঁধের ব্লাউজটা ঠিক করে দেয়। পড়ে থাকা অর্ধেক আঁচল খানা হাতে তুলে নেয়, নরম হাতে গুছিয়ে দিতে দিতে বলে
— নারী ভোগ-বিলাসের জন্য নয়, নারী ভালোবাসার জন্য হয় — নারীকে ভোগ করতে হয় না, ভালোবাসতে হয়।— নারী ফুলের মত একটু অযত্ন হলেই ঝরে যায়। তাই নারীকে যত্নে রাখতে হয়।
মেহনূর থমকে যায়! বাক্যহীন হয়ে যায়! সেই প্রথম সে এই পুরুষকে ভয় পেতে ভুলে গেল— এই পুরুষ তো ভয়ংকর নয়, বরং এক বিস্ময়!মেহনূর হতবাক। এহসানের চোখের দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। যেন বুঝে নিতে চাইছে, এই মানুষটা সত্যিই এমন, নাকি নিছক কিছু ভালো লাগার শব্দ ছুড়ে দিয়ে তাকে একরকম আশ্বস্ত করছে।
তারপর ধীরে ধীরে হাসল মেহনূর, বিষাদ মেশানো এক করুণ হাসি।
— “ভালোবাসেন আপনি? ভালোবাসেন নারীদের?”
এহসান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর শান্ত গলায় বলল,
— “হ্যাঁ, ভালোবাসি। নারীরা আল্লাহর দয়া, ওদের মর্যাদা দিতে হয়, না হলে মানুষ হওয়া বৃথা।”
মেহনূর চোখ নামিয়ে নিল। মনে হলো, দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্লান্তি তার শরীর থেকে ধীরে ধীরে গলে পড়ছে।
এহসান ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দেয়, মেহনূরের অর্ধ উন্মুক্ত কোমরে”! এহসানের হাত নিজের উন্মুক্ত কোমরে স্পর্শ করতেই মেহনূর ভয়ংকরভাবে কেঁপে ওঠে! প্রথম পুরুষালি স্পর্শ পেলো কাঁপারি কথা “!মেহনূর মুহূর্তেই অবশ হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতর শ্বাস আটকে আসছে,তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, হাত-পা কেমন যেন অসাড় হয়ে পড়ছে!
এহসানের হাত শক্ত হয়ে আসে, কোমরের চারপাশে তার উষ্ণতা টের পেয়ে মেহনূর ছটফট করে ওঠে। নিজের দুই হাত দিয়ে এহসানের কব্জি শক্ত করে খামচে ধরে ফেলে!
তারপর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,
— ছ… ছুবেন না! কষ্ট হচ্ছে… দম বন্ধ লাগছে! শরীর… অবস হয়ে আসছে!
এহসান তার চোখের দিকে তাকায়। । তারপর কিছু না বলে, এক ঝটকায় মেহনূরকে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয়!
মেহনূরের হৃৎপিণ্ড মুহূর্তেই কানের কাছে এসে দাঁড়ায়! সে এতটাই ভয় পেয়ে যায় যে, আঁচলে মুখ ঢেকে ফেলে, শ্বাস আটকে আসে!
এহসান মৃদু হেসে ফিসফিস করে বলে,
— প্রথম পুরুষালি স্পর্শে সব নারীরাই এমন অবস হয়ে যায়। তবে চিন্তা করিস না, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অভ্যেস হয়ে যাবে…
মেহনূর ভেবেছিল এহসান হয়তো তাকে বিছানায় নিয়ে যাবে, কিন্তু তার ধারণা ছিল ভুল। এহসান তাকে নিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে, এতে আরও বেশি মেহনূর ভয় পেয়ে যায়। কারণ এ পুরুষ—ভয়ংকর পুরুষ— আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না কখন কি করবে,যা ইচ্ছে হয় তাই করে এই এহসান “!
এহসান মেহনূরের কোমর আরও শক্ত করে ধরে, ধীরে ধীরে। সদর দরজাটা পার হয়ে বাড়ির পেছনের পুকুর পাড়ের দিকে চলে আসে”! যেখানে এক অন্ধকার ছায়ার মত পরিবেশ। চারপাশটা নিস্তব্ধ। তবে থম থমে নয়, কারণ আজ চাঁদ পুরোপুরি উঁকি দিয়েছে। চাঁদের আলো যেন পুরো পৃথিবীকে এক রহস্যময় আলোয় ঢেকে দিয়েছে। চারপাশে শুধু ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যায়।
মেহনূর আঁতকে ওঠে, অবাক চোখে দেখে, এহসান তাকে নিয়ে পুকুর পাড়ে এসেছে! তার মনে হয়, এহসান হয়তো আবারও তাকে ডুবিয়ে দেবে, ঠিক যেমন সকাল বেলার মতো
এতে মেহনূর ভয়ে এহসানকে আরও কাছে টেনে নিয়ে, ভয়ভীতিত এহসানের বুকের দিকের পাঞ্জাবির অংশ শক্ত করে খামচে ধরে, আর ভয়ে চোখ মুছতে মুছতে চিৎকার করে বলে,
— না! না, এহসান চাচা! এমন করবেন না! আমি মরে যাব! এখন আমাকে ফেলবেন না পুকুরে!
এহসান একটু মুচকি হেসে তার দিকে তাকায়। তার চোখে কোনও নিষ্ঠুরতা নেই, বরং একটা রহস্যময় দৃষ্টি। সে মেহনূরকে সিঁড়ি বেয়ে নামাতে থাকে।
মেহনূর কাঁপতে কাঁপতে, নিজের দুই হাত শক্ত করে এহসানের গলা জড়িয়ে ধরে । কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
— আম… আমি… যদি আমাকে ফেলেন, আপনাকেও পড়তে হবে। ফেলবেন না!
এহসান কিছু বলল না, শুধু সে মুচকি হাসে। তারপর এহসান মেহনূর কে পুকুরের সিঁড়ি তে অতি যত্নে বসিয়ে দেয় “!
মেহনূর অবাক হয়ে যায় কারণ চারপাশটা অসাধারণ সুন্দর হয়ে উঠেছে। জোনাকি পোকার আলোর ঝিলিক আর এক অদ্ভুত মিষ্টি ঘ্রাণ,নাকে বারি খাচ্ছে।মেহনূর জানে, এই ঘ্রাণ সোজা এহসানের শরীর থেকে আসছে, কারণ এর আগে সে এই ঘ্রান অনুভব করেছে। এহসান ওর পাশে বসে, এটা দেখে মেহনূর কিছুটা দূরে সরে যায়। এহসান মুচকি হেসে সামনে তাকিয়ে বললো,
“—দূরে আর কোথায় যাবি, বল তো আমায়?
থাকতে তো হবে সারা জীবন আমারই বক্ষস্থলে।”
মেহনূর মলিন কন্ঠে বলে,
—“আপনার বক্ষস্থলে থাকার চেয়ে জাহান্নামে থাকাটাই বেশি উত্তম!”
এহসান মেহনূরের দিকে তাকায়, নিজ চোখে এক অদ্ভুত অনুভূতি। কেন জানি আজ তার প্রানপ্রিয়সী কে অন্যরকম লাগছে। খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে, আপন নারীর আঁখিতে ডুবে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু আফসোস, তার সময় এখনও হয়ে ওঠেনি।
এহসান মুচকি হেসে, ঘায়েল কন্ঠে বলে,
—“তোর এই আখি জোড়া ঘায়েল করে দেয় আমায়,
শেষ হয়ে যাই আমি, হারিয়ে ফেলি নিজেকে!
মনে চায় শুধু তাকিয়ে তাকি, একধারে তাকিয়ে তাকি,
তোর আঁখি পানে,দুনিয়া থমকে যায়,
হারিয়ে যাই আমি তোর দৃষ্টিতে!”
এহসানের এমন কথা শুনে মেহনূর এক পলক তাকায় এহসানের পানে “! এহসান তার দিকে তাকিয়ে আছে তবে সে দৃষ্টিতে কোনো পাপ নেই অপবিত্রা নেই আছে শুধু কোমলতা। এহসানের এমন নিষ্পাপ চাহনি মেহনূরকে স্থির করে দেয়। তার মনে এক অদ্ভুত প্রশ্ন ওঠে, “কি হয়েছে? কেন এই পুরুষ এমনভাবে তাকাচ্ছে আমার দিকে?” কিছু অদ্ভুত ভাবনা মাথায় ঘুরতে থাকে, “কিছু উল্টো-পাল্টা করবে না তো?” এহসান কেন তাকে এমন কথা বলল? তার চোখগুলো… সত্যিই কি এতটা সুন্দর? মেহনূর কিছুটা বিভ্রান্ত, কিছুটা অস্থিরতার মুখে পড়ে যায় “!
তখনই হঠাৎ, এহসান এক পলকেই তার পাশে এসে ঘা ঘেঁষে বসে। মেহনূর এতে এক ঝটকায় কেঁপে ওঠে। এহসান আস্তে করে তার বা হাত মেহনূরের মাথা পিছনের দিকে নিয়ে, মেহনূরের মাথাটা নিজের কাঁধে রাখে।
মেহনূর মাথা তুলতে চায়, কিন্তু এহসান নিজের বাম হাত মেহনূরের উন্মুক্ত কোমরে রাখে। মেহনূর ভয়ংকরভাবে আঁতকে ওঠে, এই নিয়ে এটি তার জীবনে দ্বিতীয়বার পুরুষালি স্পর্শ যা এহসান তার শরীরের স্পর্শ করছে। মেহনূরের কলিজা ধকধক করতে থাকে, শরীরের তাপ বাড়তে থাকে, আর সে নিজেকে সামলাতে পারছে না। তাই নিজের হাত দিয়ে এহসানের উরুর পায়জামা আর পাঞ্জাবির কিছু অংশ খামচে ধরে, যেন কিছুটা স্থির থাকতে পারে।
এহসান শান্ত সুরে বলে,
-“যদি আর নড়াচড়া করিস, তবে এই হাত ব্লাউজের ভিতরও যাবে।”
মেহনূর কিছু বলতে পারে না, তার শরীর অবশ হয়ে গেছে এহসানের এই স্পর্শে, তার দৃষ্টি এহসানের দিকে স্থির হয়ে থাকে, যদিও তার মনে অনেক প্রশ্ন, অনেক অনুভূতি উথাল-পাথাল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চুপচাপ বসে তাকে এহসানের কাঁধে মাথা রেখে “!!
এহসান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দিকে, এবং মেহনূর কো অনুভব করতে থাকে। মেহনূর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
—“তাকাবেন না আমার দিকে।”
এহসান হালকা মুচকি হেসে বলে,
—“তাকাতে তো চাই না, কিন্তু এই বেহায়া চোখ যে বারবারই চলে যায় তোর পানে।”
মেহনূর কিছু বলে না, চোখ বন্ধ করে নেয়, যেন আর কিছু না দেখতে হয়, কারণ এই পুরুষের মুখ দেখলে তার হৃদয়ের ঘৃণা আরও তীব্র থেকে তীব্র হবে “!
এহসান তাউজ তাসিময়া পড়ে সূরা মুলক তেলাওয়াত করতে থাকে। মেহনূর তার এত সুন্দর কণ্ঠে তেলাওয়াত শুনে অবাক হয়ে যায়, কিন্তু কিছু বলে না। প্রিয় সূরা, অথচ অপ্রিয় একজনের মুখ থেকে তেলাওয়াত শুনতে হচ্ছে, মেহনূরের মনে এক অদ্ভুত দ্বিধা জাগে। তার মনে প্রশ্ন জাগে, এহসান কী এত ভালোবাসা বা মায়ায় শোনাচ্ছে, নাকি তার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে? সে বুঝতে পারে না।
এসব ভাবতে ভাবতে আর তেলাওয়াত শুনতে শুনতে মেহনূর ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে যায়, তার চোখের পাতায় ক্লান্তি আর মনের মধ্যে শীতলতা ছড়িয়ে পড়ে। সারাদিনের অতিরিক্ত চিন্তা আর দুশ্চিন্তা তার শরীরকে অবসন্ন করে দেয়। এহসান সূরা সম্পূর্ণ শেষ করে, মেহনূরকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে, আলগোছে উঠে মেহনূরকে পাজাকোলে তুলে নেয়”!
ধীরে ধীরে এহসান মেহনূরের দিকে এগোতে থাকে। তার চোখে মেহনূরের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করে। “কী করে এত আবেদনময়ী এই নারী? যদি একটু কম সুন্দর হত তাহলে কী হতো? কিন্তু আল্লাহ তাকে এমন এক সৌন্দর্য দিয়েছেন, যেন কোনো কিছুর কমতি নেই,” মনে মনে ভাবতে থাকে সে।
মেহনূরকে যত্ন সহকারে কক্ষে নিয়ে এসে, এহসান তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর কাঁথা জড়িয়ে দেয় তার শরীরের ওপর। কিন্তু ঐ যে এহসান মেহনূর কে যতই প্রাণ ভরে দেখুক, তাও তার মনের তৃষ্ণা মেটানো অসম্ভব। মেহনূরের দিকে এক নজরে তাকিয়ে, এহসান মনে মনে বলে,
—“যদি হাজার বছর তাকিয়ে থাকি তোমার দিকে, তাও আমার চোখ বারবারই যাবে তোমার পানে।”কেন তুমি এত স্নিগ্ধ কেন এত মায়াবী তুমি এতোটাই এতোটাই মায়াবী যে আমি তোমার সামনে এলে নিজ দুনিয়া ভুলে যাই কেনো কেনো?
তার শ্বাস তীব্র হয়ে ওঠে, মনে হচ্ছে এই এক মুহূর্তই তার সব কিছু। অতঃপর
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সোফায় বসে কাঁথা আর বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ে, কিন্তু তার মনে অস্থিরতা, এক অমিত আকর্ষণ যা তাকে মিথ্যে শান্তির খোঁজে পাঠায়।
রাত তিনটার দিকে মেহনূরের ঘুম ভেঙে যায়। ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে তার মনে আসে, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে হবে। তাই কাঁথা সরিয়ে উঠে বসে, কিন্তু এক মুহূর্ত পর তার মনে আসে, “আচ্ছা, আমি তো পুকুর পাড়ে ছিলাম, এখানে কীভাবে এলাম?” তবে খুব তাড়াতাড়ি তার চিন্তা পালটে যায়। “নিশ্চয়ই এহসান আমাকে এখানে এনেছেন,” সে মনে মনে ভাবতে থাকে। তারপর আর কিছু ভাবার সময় পায় না, কারণ তার মন থেকে একটাই কথা বের হয়—রবকে খুশি করতে হবে, তার সন্তুষ্টি লাভ করতে হবে।
বিছানা থেকে নামতে গিয়ে, মেহনূর পড়ে বিপাকে কারন ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করায় শাড়ী খুলে গেছে “! তাই তার শাড়ী খসে গিয়ে একদিকে খুলে যায়। তবে কোনোরকমে শাড়ী ধরে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু তার পা শাড়ীর সঙ্গে জড়িয়ে যায় তাই টাশ করে মেঝেতে পড়ে যায়। এহসান তার পড়ার শব্দ শুনে চোখ খুলে ফেলে। আশেপাশে তাকায় “! উদ্দেশ্য কিসের শব্দ হলো তা দেখতে ,তখনি মেঝের দিকে চোখ পড়ে, তার গা শিউরে ওঠে।হুশ উড়ে যায় এহসানের”! মেহনূরের অর্ধ শাড়ী পড়া অবস্থায় আর উন্মুক্ত শরীরে দেখে এহসান কিছু বুঝে উঠতে পারে না তবে পরক্ষণেই দ্রুত গিয়ে মেহনূরকে কোলে তুলে নেয়,উদ্দেশ্য মেহনূর কে কাপড় রাখার কক্ষে নিয়ে যাওয়া।
আত্মার আগলে পর্ব ৫
মেহনূরের ভেতরে এক অদ্ভুত লজ্জা কাজ করে। মনে মনে সে চিৎকার করতে চায়, “এই কী হলো! শাড়ী এমন ভাবে খুলে গেলো!” কিন্তু মুখে কিছু বলে না, তার মুখ লাল হয়ে ওঠে। মাটির নিচে চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে ছিঃ কি লজ্জার বিষয় তার সব এই পাপিষ্ঠ পুরুষ দেখে নিয়েছে ছিঃ ছিঃ “!