আদিল মির্জা’স বিলাভড পর্ব ৭

আদিল মির্জা’স বিলাভড পর্ব ৭
নাবিলা ইষ্ক

হৃদি মিষ্টি করে হাসছে। মুখের খাবারটুকু কোনোরকমে গিলে বলে, ‘স্নো-হোয়াইট, গুড মর্নিং টু ইউ।’
রোযা ওলট-পালট অনুভূতি গুলো লুকিয়ে হাসার চেষ্টা করে সামান্য। বিপরীতে ছোটো করে বলে, ‘মর্নিং, প্রিন্সেস।’
হৃদি গাল ফোলাল। বলল, ‘প্রিন্সেস নয়, তুমি যেভাবে বলো ওভাবে বলবে। ড্যাডির মতন। ওটা শুনতে ভালো লাগে।’
আদিল চেয়েছিল রোযা নামক নারীর দিকে। রোযা চোখ নামিয়ে রেখেছে। অথচ ঠিক অনুভব করছে আদিলের অদ্ভুত দৃষ্টি তার ওপর। তার অস্বস্তি গাঢ় হচ্ছে। মেয়ের কথা শুনে আদিল প্রশ্ন করল –

‘কী বলে তবে? শুনি।’
রোযার শ্বাস গলায় আটকে এলো। হৃদি খিলখিল করে হেসে উঠল বাবার বাহুতে থেকে। উজ্জ্বল চোখে রোযার দিকে চেয়ে বলল –
‘সোনা।’
আদিল দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে খাবারের প্লেটে মনোযোগ রাখল। নাইফ আর ফোর্ক দিয়ে চিকেন ব্রেস্টের অংশটুকু থেকে কেটে মেয়েকে খাইয়ে দিতে নিয়ে বলল –
‘বসো, হ্যাভ ব্রেকফাস্ট উইদ আস।’
রোযা আড়চোখে তাকায়। ভাবে—সাচ আ ডমিনেটিং টোন! হৃদির চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। উচ্ছ্বাস নিয়ে বাবার গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। হাত বাড়িয়ে দেয় রোযার দিকে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘স্নো-হোয়াইট, কাম… হ্যাভ ব্রেকফাস্ট উইদ আস।’
রোযা অসহায়। অসহায় হৃদির উজ্জ্বল চোখে চেয়ে। যেখানে আকাশের নক্ষত্র গুলো ভাসছে, হাসছে। ওই মুখে চেয়ে সে নীরবে এসে বসতে চাইল দূরত্ব রেখে। এলেন এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে ধরলে রোযা বসে। মরিয়ম বেগম এসে প্লেট উল্টে দিলেন। খাবার সার্ভ করে দিতে চাইলে রোযা বাঁধা দেয়। নিজেই টুকটুক করে পছন্দ মতন একটু খাবার প্লেটে নিয়ে খাওয়ায় মনোযোগী হয়। আশেপাশে কোথাও তাকাতে না চাইলেও তাকাতে হয় হৃদির জন্য। মেয়েটা একটু পরপর ডাকছে। এটা-ওটা বলছে। খুব করে চাইছে সে যেন কাছে, একেবারে পাশে গিয়ে বসে। বাচ্চা মেয়েটা কী বা বোঝে?

‘মিস রোজ আ…’
রোযা ইতোমধ্যে মেনে নিয়েছে তার নামের নতুন সম্বোধন। রোযা নামটা আদিল মির্জার মুখ দিয়ে বেরোলে হয়ে যায়, রোজ-আ। রোজ আ আবার কী? নেহাৎ লোকটা তার মালিক, সে সামান্য চাকর। নাহলে ফটরফটর করে কিছু কথা রোযা শুনিয়ে দিতো। আপাতত বাধ্য কর্মচারীর মতো বলল –
‘জি, স্যার।’
রোযার দৃষ্টি নুইয়ে রেখেছিল। অপেক্ষা করছিল। কিন্তু কোনো জবাব না পেয়ে অবশেষে তাকাল। আদিল মির্জা তাকিয়ে আছে, তাকিয়ে আছে হৃদিও। একজনের চোখের দৃষ্টি মহাসমুদ্রের মতন গভীর, ভয়ংকর। আরেকজনের আকাশের নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল। রোযা ভেতরে হাঁসফাঁস করল। কিছু একটা ভালো হচ্ছে না মনে হলো! আদিল ধীরগতিতে স্বাভাবিকভাবেই বলল –

‘কল হার দ্য ওয়ে ইউ ইউজুয়ালি ডু, আই’ড লাইক টু হিয়ের ইট।’
হৃদি বাবার সাথে তাল মেলাল, ‘স্নো-হোয়াইট, ডাকো ওভাবে। ডাকো…ডাকো।’
রোযা বুঝে পেলো না এই লোকের মতিগতি! হুয়াই উড ইউ লাইক টু হিয়ের ইট? আর ইউ ম্যাড? আর ইউ ক্রেজি? কোনো কারণ ব্যতীত, কথা ব্যতীত শুধু তার ইচ্ছেতে এখন রোযাকে পাগলের মতন কথা বলা লাগবে? ডাকতে হবে এমন সম্বোধনে যা সে অগোচরে, লুকিয়ে হৃদিকে বলে? লজ্জার চেয়ে রোযার রাগ লাগছে। মন চাচ্ছে শক্ত দুটো কথা মুখের ওপর শুনিয়ে দিতে। তবে তা সে করল না। নির্বিকার মুখে বলল –
‘হৃদি সোনা, তোমার পেট ভরেছে?’
হৃদি মুগ্ধ হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ। ভরেছে। কী দারুণ শুনতে লাগে! তাই না ড্যাডি?’
আদিল মির্জা চুপ থাকল অনেকটা সময়। রোযা আটকে রাখা শ্বাস ফেলবে ওসময়ই শোনা গেলো –
‘আই লাইক ইট।’

রোযা সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ করল। লজ্জা, সংকোচ,অস্বস্তিতে পুরো নিজেকে আধপাগল মনে হলো। তার সাথে যে কী হচ্ছে আপাতত নিজেই বুঝতে পারছে না। তবে পুরো দিনটা সে দৃষ্টি নুইয়ে থেকেছে। দূরত্ব বজায় রেখেছে। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছে স্বাভাবিক থাকতে। কানে বারবার বাজল জিহাদের কথাগুলো। জিহাদের জবটা ছাড়ার কথা আর হৃদির মুখ মিলেমিশে একাকার। এরমধ্যে আদিল মির্জার হঠাৎ এমন ব্যবহার! এমন দৃষ্টি, কণ্ঠের সুর! রোযা কয়েক বছর ধরেই তো কাজ করছে। অল্প হলেও জেনেছে আদিল মির্জাকে। ভীষণ উদাসীন কাজের লোকদের প্রতি। দৃষ্টি তুলেও তাকায়নি কখনো। ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন মনে করেনি। কিন্তু ওদিন…রোযা ভুল না হয়ে থাকলে, হৃদির ওপর হওয়া হামলার দিন থেকে পরিবর্তন এসেছে। অল্পবয়সী তরুণী নয় সে। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন নারী। সে দৃষ্টি বুঝে, তার ওপর পড়া ওই লোকের আকর্ষণটা ধরতে পেরেই সারাটাদিন তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আতঙ্কে ধড়ফড়িয়ে উঠছিল বুকের ভেতরটা। বেকুব মনে হচ্ছে নিজেকে এমন ভাবনা মাথায় আসতেই। রোযা প্রার্থনা করে যাচ্ছে, তার অনুমান যেন ভুল হয়। ভুল হয়।

জিহাদ ছয়টা কল করে রেখেছে। বাসায় ফিরে কল ব্যাক করল রোযা। ঘড়ির কাটা তখন দশটায়। ছেলেটা এখনো একই কথা বলে চলেছে। জবটা ছেড়ে দিতে। সরে আসতে। এইপর্যায়ে এসে রোযারও মন বলছে, তার উচিত রিজাইন করা। আদিল মির্জা যদি সত্যি তাকে অন্য চোখে দেখে থাকে…তাহলে এটাই যথাযথ সময় সরে আসার। কিন্তু পরমুহূর্তেই হৃদির সুন্দর ফুলের মতন নিষ্পাপ মুখটা চোখের পাতায় ভেসে ওঠে। তার হৃদি! রোযা চোখে অন্ধকার দেখছে। কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না।নিঃস্ব লাগছে, অস্থির লাগছে। ওদিকে জিহাদ বলে যাচ্ছে একনাগাড়ে –

‘বয়স হয়েছে। আমরা ইয়াং নই আর। উই শুড গেট ম্যারিড এজ সুন এজ পসিবল। আব্বু-আম্মু চিন্তা করছেন। তারা ঘরে পুত্রবধূর চাচ্ছেন, নাতি-নাতনি চাচ্ছেন। তুমি কি এখন সিরিয়াস হবে? প্লিজ? কোনো একটা সিদ্ধান্ত নাও। কাজটা ছাড়ো। সময় লাগলে প্রয়োজনে নাও, কিন্তু আগে বিয়েটা করে নিই। হু? কথা বলো!’
রোযা চাপা গলায় বলল, ‘বিয়েটা হলেইতো তুমি প্রেসার দিবে কাজ ছাড়ার জন্য। আমি… আমি…’
জিহাদ নরম হলো। বলল, ‘আমি জানি, তুমি মেয়েটাকে ভীষণ স্নেহ করো। মেয়েটাও তোমায় খুব পছন্দ করে। আমরা প্রয়োজনে আবদার করব মাঝেমধ্যে যেনো তোমার সাথে বাচ্চাটার দেখা করতে দেয় অথবা কথা বলতে। কেমন?’
রোযা চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ক্লান্ত হয়ে ভাবল, তা সম্ভব হওয়ার নয় মনে হচ্ছে। ঝামেলা একটা হয়ে গেছে। জিহাদের বলা ইঙ্গিত অন্যভাবে বুঝি সত্য হতে যাচ্ছে।

এলেন বিরক্ত হচ্ছে। হবে না? শান্ত কিছুক্ষণ ধরেই এমন হাঁসফাঁস করছে। হয়তোবা আবার কোনো একটা কিছু বসকে জানাতে চাচ্ছে। নিশ্চয়ই মিস রোযাকে নিয়ে? ও উঠেপড়ে লেগেছে এই বিষয়টা ধরে। কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। এলেনের গম্ভীরমুখের দিকে চেয়ে শান্ত ফাঁকা হাসল। বুক ফুলিয়ে হঠাৎ মুগ্ধ গলায় নিজের ফোন স্ক্রিনের দিকে চেয়ে আওড়াল –
‘ওয়াও! বিউটিফুল।’
আদিলের ডেস্কে পাহাড় সমান ফাইল। মনোযোগ দিয়ে দেখছিল। নিস্তব্ধতা ভাঙায় বিরক্ত হলো। তাকাল এমনভাবে যেন এখুনি শান্ত পরিষ্কার, যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে! শান্ত ভয় পেলেও সাহস রাখল। তার মন বলছে, বস রাগবে না। শান্তর অনুমান ভুল হতে পারে না। সম্ভব না! সে বরাবরই বসকে অনুমান করায় সেরা।

‘ব– বস, আপনি দেখবেন? দেখুন কী দারুণ লাগছে দেখতে প্রিন্সেসকে।’
বলতে বলতে শান্ত ফোনটা নিয়ে গেল আদিল মির্জার সামনে। স্ক্রিনটার তার চোখের সামনে ধরল। ফেইসবুকের একটি পোস্ট। একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। আইডির নাম, আয়াত তালুকদার রোযা। ক্যামশন, উইদ মাই প্রিন্সেস। ছবিটা সম্ভবত মির্জা বাড়ির গার্ডেনে তোলা। রোযা হাঁটু ভেঙে বসেছে। তার ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে আছে হৃদি। ক্যামেরায় তাকিয়ে রোযা হাসছিল। আদিল কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে এবারে তাকাল শান্তর দিকে। শান্ত ঢোক গিলল। বলল –
‘বস, প্রিন্সেসের মুখ দেখা যাচ্ছে না কিন্তু আমার মন বলছিল, আপনি দেখলে খুশি হবেন।’
আদিল দাঁড়িয়ে গেলো, ‘ওহ, আর কী কী মনে হয় তোর? লেট মি হিয়ের ইট।’

শান্ত আতঙ্কে দ্রুতো পিছিয়ে যেতে যেতে বলল, ‘এরপর থেকে আর কিছু আমার মনে হবে না। সত্য! এই এলেন, রাদিন, স্বপন তোরা বল বসকে…আর কিছু আমার মন ভাববে না। আই প্রমিজ। বস..বস…কাম ডাউন।’
আদিল নির্বিকার ভাবে শান্তর হাতের ফোনটা নিয়ে নিলো। ফোন নিয়ে গিয়ে বসল চেয়ারে। আইডিটায় ঢুকল। প্রোফাইলে স্নোফলের ছবি। ঘনঘন পোস্ট নেই। তবে সুন্দর সুন্দর ছবি শেয়ার করে মাঝেমধ্যেই। শান্ত মনে মনে তার বসকে ইচ্ছেরকম বকল। টু-ফেসড কোথাকার! তাকে ভয় দেখিয়ে কী সুন্দর আবার দেখছে! পরমুহূর্তেই আনন্দে বাকহারা। ছুটে এসে বলল –

‘বস, আপনি একটা প্রাইভেট একাউন্ট কেনো করছেন না?’
আদিল কিছু বলল না। তবে ফিরিয়ে দিল শান্তর ফোন। নিজের ফোন হাতে তুলে নিল। মুহূর্তেই একটা একাউন্ট খুলে ফেলল। নাম – Adil Mirja.
এতটুকুই। কোনো প্রোফাইল নেই, কভার নেই, পোস্ট নেই। ওভাবেই গিয়ে রোযার একাউন্ট সার্চ করে ফলো করল। নিজের ফোন দিয়ে ছবিগুলো দেখতে থাকল।

আদিল মির্জা’স বিলাভড পর্ব ৬

এলেন নির্বিকার চোখে দেখল শান্তর আনন্দিত মুখ। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে ভুল না হয়ে থাকলে, মিস রোযা সম্ভবত বিয়ের প্ল্যানিং করছে। ছেলে তার চাইল্ডহুড ফ্রেন্ড। আর এই বলদ ছেলে ইতোমধ্যে উস্কানো বসকে উস্কে যাচ্ছে, সমানতালে! তার ইচ্ছে করছে শান্তকে পেটাতে।

আদিল মির্জা’স বিলাভড পর্ব ৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here