আপনাতেই আমি পর্ব ১১
ইশিকা ইসলাম ইশা
রাতের রান্না করছে রিদি ।মজনু অবশ্য হাতে হাতে কাজ করে, তবে ইদানিং কাজ করে কম ,জালাচ্ছে বেশি। এতে বেশ রেগে যাই রিদি।কাজের সময় হুটহাট জরিয়ে ধরলে সে কাজ করবে কি করে।রাগে গজগজ করতে করতে কাজ করে রিদি। লোকটিকে যতটা সহজ সরল ভেবেছিল তার থেকে শতগুণ দুষ্টু এই লোক।রোজ তাকে ভোরে গোসল করা লাগে।আর রোজ রোজ গোসল করে পুচির হাজারো প্রশ্নের উত্তর মানে ভীষন খারাপ।মাঝে মাঝে রেগে বের করে দেয় রিদি ।মজনু তখন সারারাত জানালায় দাঁড়িয়ে বৌ কে দুচোখ ভরে দেখে। কাগজে এটা ওটা লিখে জানালাম দিয়ে ছুড়ে মারে।
আজো রেগেই বের করে দিয়েছে রিদিতা। পরিক্ষা শেষ হয়েছে প্রায় অনেক দিন। মজনু তাকে মেডিকেল ভর্তির জন্য বই,নোট,সাজেশন এনে দিয়েছে।রিদ এতে অবশ্য সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছে মজনু।রান্না শেষ করে চৌকিতে বসে রিদি।ফ্যান ছেড়ে ওরনা গায়ে থেকে আলগা করে রাখে।হুট করেই কাগজ ছুড়ে মারল মজনু।রিদি বিরক্ত হল।কাগজ টা খুলে পড়ল,
“মারাত্বক লাগছে বেগমজান”
রিদি কটমট করে তাকালেন মজনু আরো একটা কাগজ ছুড়ে মারে।
“আপনি আমার ভয়ংকর নেশা বেগমজান।আমি সারাজীবন আপনার নেশায় আসক্ত থাকতে চায়””
রিদি রেগে বলে ,
পুরাতন হলে সব নেশা কেটে যাবে।
মজনু লিখে,
“”আপনি আমার সেই নেশা বেগম সাহেবা।যা আমি চেয়েও ছাড়তে পারি না।আপনি কখনো পুরাতন হবেন না।আমি নতুন রুপে নতুন ভাবে আপনাকে আবারও ভালোবাসবে”””
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মন ছুঁয়ে যাওয়া কথাগুলো শুনে রিদি তাকায় মজনুর চোখে।চোখ নাকি মিথ্যা বলে না।মজনুর চোখে তার জন্য অসীম ভালোবাসা দেখতে পায় সে। কিন্তু ভয় হয়, ভীষন ভয় হয়।জীবনে সুখের মুখ সে কমই দেখেছে।অবহেলা,আনদরে বড় হয়েছে।কিন্তু আল্লাহ তাকে সারাজীবনের সুখ ঢেলে দিয়েছে মজনুর মাধ্যমে।এই মানুষটি কে সে কোন কিছুর বিনিময়ে হারাতে পারবে না। ভয়টা সেখানেই যদি কখনো হারাতে হয়।কিভাবে বাঁচবে সে।ভাবতেই আত্বা কেঁপে উঠল রিদির। ভাবনা থেকে বেরিয়ে জানালার দিকে তাকাল।জানালায় মজনু কে না দেখে হুট করেই ভয়টা বেড়ে গেল রিদির।দরজা খুলে বের হল। বারান্দায় মজনু কে না দেখে।জোরে চিৎকার করে উঠল,
মজনু সাহেবববববববব….
মজনু না আসায় রিদি এবার কেদে দিল। হঠাৎ ঠকঠক কিছুর আওয়াজ শুনে ঘরের পেছনে যাই রিদি।চাঁদের আলোতে দেখতে পায় মজনুকে মাটিতে কিছু একটা করছে।রিদি চিৎকার করে উঠল,
মজনু সাহেব…….
মজনু ভয় পেল।চমকে তাকালো পিছনে।এমন রুপ দেখে কেপে উঠল সে নিজে।কি হয়েছে তার বেগমের। মজনু ঠাই দাড়িয়ে আছে।রিদি ছুটে আসে।এইটুকুতেই যেন হাপিয়ে উঠছে। মজনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,
গায়ের ওরনা নাই।ঘেমে একাকার হয়ে আছে।লম্বা সিল্কি চুল গুলো খোলা।যা বাতাসে দুলছে।ওরনা না থাকায় পুরো গলা ফাকা হয়ে আছে। মজনু থমকালো। হুট করেই রিদিতা মিশে গেলো তার সাথে। মজনুর নাকে এসে বারি খেল মিষ্টি ঘ্রান।
রিদিকে হুট এমন প্যানিক হতে দেখে কিছুটা ভরকে গেল মজনু।দুহাতে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।পরপর কপালে চুমু খেল পুরো মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে জরিয়ে নিল বুকে। হাজারো কথা বলতে চাইছে মজনু কিন্তু পারছে না । রিদিতার কান্নার কারন তার আজানা।মজনু রিদিকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে আসে। কোলে বসিয়ে ইশারায় বলে কি হয়েছে??
রিদি মজনুর দিকে তাকিয়ে থেকে কোলে বসেই দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে লেপ্টে রইলো বুকে। গলায় মুখ গুঁজেই বিরবির করে বলল,
আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি মজনু সাহেব।ভীষন ভালো। আপনি ছাড়া আমার দ্বিতীয় কোন শান্তির জায়গা নেই।আপনি ছাড়া আমার কোন জায়গায়ই নেই।আমি আমার জীবনে সব খারাপের মাঝে আপনাকেই ভালো পেয়েছি।মা কি জিনিস তা শুধু দেখছি কখনো উপলব্ধি করি নি।বাবা তাও তো নিখোঁজ।ভাই আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তবুও আমি ঐ বাড়িতে ভালো ছিলাম না।আপনার সাথে এই কুড়েঘরে আমি সুখি।খুব খুশিও।এর বেশি কিছুই চায় না আমি।আপনি সারাজীবন শুধু আমার হয়েই থাকেন।আর কিছু চায় না।আমি আপনাকে হারাতে পারব না।
মজনু হতবাক হয়ে আছে রিদির কথা শুনে।রিদি তাকে ভালোবাসে। এতো আবেগময় কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই মজনু।সে যে তার বেগমকে জানের চেয়ে বেশি চায়।বেগম ছাড়া নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।সেও কি পারবে বেগম ছাড়া থাকতে!! পারবে না কখনো পারবে না। দুনিয়া ধ্বংস করেই হলেও তো তার বেগমকে চায়। মজনু উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল রিদিকে।বৌ তো তার সব ।কতো কিছু করেছে বৌয়ের ভালবাসার জন্য।
গভীর রাত।আর গ্রামের রাত মানে তো আরো গভীর।চারদিকে শান্ত পরিবেশ।আশেপাশে থেকে শুধু কুকুরদের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ আসছে।এমন পরিবেশর ঠান্ডা আবহাওয়াই,
রিদিতার খোলা বুকে লেপ্টে শুয়ে আছে মজনু। বিশাল পুরুষদেহ টা বুকে আগলে রেখেছে রিদিতা। গায়ে পাতলা একটা চাদর জরানো।বৌয়ের ভয় দূর করে তাকে কাছে টেনে নিয়েছিল মজনু।
এমন গভীর রাতে গুনে গুনে দুবার ঠকঠক আওয়াজে ভু কুঁচকে তাকায় মজনু,উঠে বসে ।রিদিকে ভালো করে চাদর জরিয়ে ,কপালে চুমু দিয়ে,নিজের গায়ের জামা পড়ে উঠে বাইরে আসে সে।বাইরে এসে দাড়াতেই একটা লোক এসে তার পাশে দাড়াই।
বসস জরুরি খবর না হলে এই সময়ে আসতাম না।
হাতের ইশারায় থামতে বলে মজনু।ঘরের দরজা বন্ধ করে।ধীর পায়ে এগিয়ে যায় কিছুটা দূরে আম গাছের নিচে।
রাত তখন প্রায় শেষ হুট করেই ঘুম ভেঙ্গে যায় রিদিতার হাত বাড়িয়ে মজনু কে খুজে।মজনু কে পাশে না দেখে ঘুম ঘুম চোখে গায়ের চাদর টা ভালো করে জরিয়ে নেয়।খাট থেকে নামতেই রুমে ঢুকে মজনু। রিদি কিছু বলার আগেই মজনু ইশারায় দেখায় সে বাথরুমে গেছিলো।এরপর কোন কথা ছাড়াই এসে আবারো রিদিকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।রিদি কিছুটা অবাক হলেও ওতটা আমলে নিল না। ঘুমিয়ে পড়ল।তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।
সকাল সকাল পুচির চেঁচামেচি শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে রিদি,
আপা শুনছ কি হয়েছে??
রিদি শান্ত স্বরেই বলে,
বল কার বাড়ির কয়টা গরু,মুরগীর বাচ্চা হয়েছে??(পুচি প্রতিদিনই এর ওর বাড়ির খবর বলে রিদিকে )
পুচি ঘাবরানোর সুরে বলে,
না!না!অনেক বড় কথা।
রিদি ভু কুঁচকে তাকায় রিদির দিকে মেয়েটা ঘাবরে আছে,
কি হয়েছে??বল??
পুচি থেমে থেমে বলে,
মরা লাশ পাওয়া গেছে!!
রিদি অবাক হয়ে বলে,
কার??
পুচি থেমে বলে,
স্কুলে পড়ায় না!!তালুক স্যার ওর।খুন করা হয়েছে।একদম বিধস্ত করে।চেনার উপায় নেই।
রিদি চমকে উঠে,
তালুক স্যার!!ছি!! স্যার! বলতেও ঘৃনা হয় রিদির।সেদিন পরিক্ষা কেন্দ্রে রিদির সাথে খারাপ আচরণ করেছিল লোকটা। এক্সট্রা লুজ পেপার নিতে গিয়েছিল রিদি তখন লুজ পেপার দেওয়ার বাহানায় রিদির হাত অশীল্ল ভাবে চেপে ধরে শয়তানি হেসেছিল।রিদি কোন মতে হাত ছাড়িয়ে চলে আসে।ওয়াসরুমে গিয়ে কেঁদে কেটে বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ছিল।পরিক্ষাটাও তেমন মন মতো দিতে পারেনি রিদি।মজনুকেও বলেনি রিদি।শুনে যদি তাকে খারাপ ভাবে।
আপাপপপপা…..
কোথায় হারায় গেলা!!!!
হু…..না কোথাও না!!
পুচি খুশি মনে বলে,
তয় আপা ভালা হয়ছে!!লোকটা সুবিধার ছিল না।
রিদি বেশ বিরক্ত হয়ে বলে,
তুই ও আম্মার মতো ভাষাকে খিচুরি করে ফেলবি??
পুচি অকপটে হেসে বলে,
বড় ম্যাডাম শোক পালনে গেছে হের মরার!!
রিদি চিন্তিত মুখে বলল,
কিভাবে মারা গেল।জানিস কিছু??
পুচি পেয়ারা চাবাতে চাবাতে বলল,
হেই তো জানি না।তয় গ্রারামের হক্কলে কইতাছে খুন করছে তাও ভয়ংকর ভাবে।ওমন ভয়ংকর খুন নাকি সাত গ্রারামে হয় নাই।।
আপা একখান কতা কই!!
রিদি পুচির দিকে তাকিয়ে বলে,
কি??
হেই ব্যাডারে যে মারছে ভালো করছে।আমাগো পাশের এক বাসায় মাইয্যার লগে ঐ হারামজাদা…..
আর বলতে পারল না পুচি টলমল করল চোখের পানি।
রিদি চমকে উঠল,
কি??
জানি না কি করছে।তই আপা আর ইস্কুলে যাইত না।হেই নিয়া আপনার আম্মার কাছে বিচার চাইতেও গেছিলো তই আপনার মায়ে হাতে টাকা ধরায় দিছিল। এর কয়দিন পর আপা গলায় দরি দেয়।আমার মনে হয় আপা ভুত হইয়া তালুক ব্যাডারে মারছে!
ছ্যাত করে উঠলো রিদির ভেতরে,মেয়েটার ধারনা মনে হতেই টলমল করল চোখে জল।
আপা এগুলান আপনার আম্মারে কইয়েন না। আমি চুপি চুপি হকল কথা হুনছিলাম।
মায়ের করা অপরাধে আরো ঘৃনা সৃষ্টি হল মনে ছি!!হুট করে ঠান্ডা স্পর্শে শিহরিত হল রিদি।মজনুকে দেখে ঝট করেই জরিয়ে ধরলো।মজনু কিছু না বলে আগলে নিল বুকে।
পুচি গোল গোল চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,
ভাইজান আপায় মনে হয় ভয় পাইছে!
মজনু কিছু না বলে রিদির মাথায় হাত বুলাল।আর ভাবতে লাগল কাল রাতের কথা।আমগাছের নিচে দাঁড়িয়ে লাবিব ভিডিও দেখাচ্ছিল কাউকে মারার দৃশ্য।ভিডিও লাইভ চলছে।হালকা ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে ধীর আওয়াজে বলল মজনু,
আমি নিজে হাতে শেষ করব ওকে।মেইন পাট কাটবি না।জখম করে মরিচ গুঁড়া লাগিয়ে ছেড়ে দে।আর হাত পাথর দিয়ে থেতলে দে। তবে ডান হাত টা।লাবিব সেই অনুযায়ী কাজ দেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। কি অর্তনাদ !!
লাবিব: বস আর কতোদিন থাকবেন এখানে??
মজনু স্থির চোখে তাকায় লাবিবের দিকে,
যেখানে কাজ করছি সেই ম্যানেজার টাকা পুরাপুরি দিচ্ছে না।এতে গরিবদের টাকা মার যাচ্ছে।আউট কর ওকে।
লাবিব মজনুর স্থির দৃষ্টি দেখে ভরকে যায়,
ওকে বস! লাবিব বসের এই শান্ত দৃষ্টির সাথে খুব বেশি পরিচিত না। আজ বসের চোখে নাই কোন হিংস্রতা,নাই কোন রাগ খুব শান্ত,নরম চাহনি দেখে প্রশ্নটা করেই ছাড়ল।
বস আপনি এসব মাটিকাটার কাজ করছেন কেন??যেখানে আপনার কথায় পুরো গ্রাম ই আপনার হয়ে যাবে।
কাউকে ভালোবাসিস??
মজনুর প্রশ্নে থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে লাবিব,বস তার বার বার প্রশ্ন করাই অন্য উওর কেন দিচ্ছে।
না বস।
তাহলে কাউকে ভালবাস পরে এর উত্তর দিবো।যেতে কত সময় লাগবে?
২০মিনিট বস।
বাড়ির আশেপাশে মহিলা গার্ডদের সতর্ক থাকতে বল।
ওকে বস।
মজনু দু কদম গিয়েও আবার পিছু ফিরে ঘরে আসে,রিদিকে দুচোখ ভরে দেখে দুহাতে মুখটা ধরে ঠোঁটে চুমু দেয়।পুরো মুখে চুমুতে ভরিয়ে দেয়।রিদি ঘুমের মাঝেই চোখমুখ বিরক্ত করে, বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে রাখে।ঘুমের ওষুধের কারনে ঘুম ভাঙ্গে না রিদির। মজনু আবারো কয়েকটা চুমু খেয়ে বের হয়ে আসে।
লাবিব মশার কামড় খেয়েই যাচ্ছে সে কখন থেকে।বসকে আসতে দেখে সাইকেল নিয়ে ঘুরে দাড়ায়। মজনু এসে বসতেই লাবিব চালাতে শুরু করে।বস তো গাড়ি ছাড়া এক কদম ফেলে না।সেখানে সাইকেল।এটা প্রথম দিন ভেবে অঙ্গান হয়ে গেছিলো লাবিব।
ঠিক ২০মিনিট পর তারা এসে পোছায় জঙ্গলের মতো একটা জায়াগায়।টিন সেট করে বেশ বড় একটা রুম।সেই রুমের মাটিতে মুরগি কাটার মতো ছটফট করছে তালুক। মজনু রুমে ঢুকার সাথে সাথে একজন গার্ড এসে মজনুর কলার ধরে বলে,
এই কে তুই??এখানে কিভাবে এলি??জানের ময়া নাই নাকি?ভুল করে ভুল জায়গায় চলে এসেছিস!এবার ফিরে যাস জান নিয়ে!!এই মারুফ এটাকে ধরে রাখ বস এখনি চলে আসবে।
মারুফ নামক বিশালদেহী মানুষ টা এসে মজনু কে ধরার আগেই হুরমুর করে ঢুকে লাবিব।বসের সাথে এসব ভেবেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।ছুটে এসে ছাড়িয়ে নেয়। লাবিব মজনুর দিকে তাকিয়ে দেখে সে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গাডটির দিকে। লাবিব কে দেখে গাডটি মজনু কে ছেড়ে লাবিবের কাছে যায়।লাবিবের আশেপাশে দেখে বলে,
বস কোথায়??
লাবিবের এখন কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে।লাবিব গাডটির দিকে তাকিয়ে বলে,
এখনি যার কলার ধরার সাহস করছেন না ভাই সেই ই তো বস!!
লাবিবের কথায় গাডটির মুখ হা হয়ে গেল।ভুলের আর নড়চর করল না কিছুক্ষণ। এরপর তুফানের বেগে এসে পা জরিয়ে ধরল মজনুর। মজনু বিরক্ত হল।পা ছাড়িয়ে চেয়ার টেনে বসল।একধ্যানে তাকিয়ে রইল আধমরা হয়ে পড়ে থাকা তালুক এর দিকে।হুট করেই একজন গাডের হাত থেকে চাকু নিয়ে চোখের ভেতর ঢুকিয়ে দিল।হুট করে এমন হওয়াতে রক্ত ছিটকে এসে পড়ল মজনুর মুখে,হিংস্র হয়ে চিৎকার করে বলল,
“যার দিকে তাকাতেও আমি দুবার ভাবি সেখানে তুই তার দিকেই নোংরা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল! কোন সাহসে!!(জোরে)”
তালুক ছটফট করে উঠলো।তার আর্তনাদে যেন পশুপাখিরাও ভয় পেল।বসের এমন হিংস্র রুপ দেখে সবার আর কোন ডাউট হল না এটা তাদের বসস।
মজনু এবার থেতলে যাওয়া হাতের দিকে তাকালো,এই হাত দিয়েই তো তার বেগমকে ধরেছিল নোংরা ভাবে।মছনু হাত বরাবর ছুরি ডুকিয়ে বলে আবারো বলে,
” যার তুলতুলে নরম হাত ধরতেও আমি দুবার ভাবি যেন ব্যাথা না পায় আর তুই সেই হাতেই ব্যাথা দিয়েছিস।”
“যার চোখের পানি হৃদয়ে ছুরিঘাত করে,তাকেই তোর নোংরা ছোঁয়া কাঁদিয়েছে”
তালুকের জান বেরিয়েছে অনেক আগেই তবুও মজনু ছুরিঘাত করেই যাচ্ছে।লাবিব ভয়ে এগুচ্ছে না।বাপরে কি বিধ্বস্ত অবস্থা। কিন্তু বসকে তো থামাতে হবে।লাবিব ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বলল,
বস ছেড়ে দিন মারা গেছে। মজনু তবুও থামছে না।লাবিব আবারো বলল,
বস ম্যাডাম বাসায় একা আছে।লাবিব বসের হাতের দিকে তাকালো হাত থেমে গেছে।লাবিব ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলতেও পারে নি মজনুর চোখের দিকে তাকিয়ে দম আটকে আসল।লাল টকটকে হয়ে আছে চোখ।
মজনু লাবিবের দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালো।একজন পানি এগিয়ে দিলে মজনু হাত ধুলো।এরপর সামনে থাকা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নিজেকে আয়নায় দেখে বলল,
পানি,সাবান,শ্যামপু রেডি কর।বলা মাএই ছুটল দুজন লোক। মজনু হাত বাড়িয়ে আইনায় হাত ঘসল।স্পষ্ট হয়ে উঠল আয়না। গালের সাইড থেকে খোলস এর মতো চামড়া টান দিল।ধীরে ধীরে খোলস মুখ থেকে খুলে ফেলল মজনু।মানুষের স্কিন এর মতো খোলস টা সাইডে রেখে তাকালো আবারো নিজের দিকে।ভেসে উঠলো আয়নায় আসল চেহারা।আয়নায় ভাসা চেহারিটি হাসল। বাঁকা হাসি।
মজনুর থেকে তার চেহেরা তো শতগুণ বেশি সুন্দর।তবুও কেন প্রিয়তমা এই অনাথ,অশিক্ষিত,গরিব,বোবা,কাজের লোককে এতোটা ভালবাসে।মানতে হবে মজনু ভীষণ লাকি।তার প্রিয়তমা যে এই মজনু কে ভালোবাসে।ভেবেই হাসল চেহেরাটি।
বস সব রেডি।
মজনু একবার তালুকের বিধ্বস্ত শরির এর দিকে তাকিয়ে বলল,
নর্দমায় ফেলে দে।
জরুরী মিটিং এর কাগজ দেখছ লাবিব।বস আসলেই কনফারেন্স শুরু করবে।লাবিব এদিক ওদিক দেখে চোখ যায় দরজায় দাড়ানো তীব্রর দিকে। একদম সুট বুট পড়ে রেডি।এসে স্টাইল করে চেয়ারে বসল পায়ের ওপর পা তুলে। লাবিব মিটিং শুরু করল।তীব্র যেন বিরক্ত হল কথা বলতে।তবুও নিজের টুকু শেষ করেই উঠে দাঁড়াল।মনটা বৌ বৌ করছে তার।লাবিব হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তীব্র কে দেখল।এতো ধরপর করে বেচ্যান হতে কখনো দেখে নি সে, পরক্ষনেই ভাবল অনেক কিছুই করতে দেখেছে তীব্র কে মজনু সেজে।যা লাবিবের কল্পনারো বাইরে তীব্রর করা। হ্যা মজনুই তীব্র।সেতো দেখেছে রিদিতা নামক মায়াবতীর জন্য তার বসের অস্থিরতা।সে দেখেছে বসের ছটছটানি। সারাক্ষণ নজরে নজরে রেখেছে তাকে।নিজেও মজনু সেজে আগলে রেখেছে তার মায়াবতীকে।ইসসস….
তার বস নামক এই মানুষটা যদি কাউকে এমন ভয়ংকর ভাবে ভালোবাসতে পারে তবে সে একশত ভাগ সিউর ভালবাসা সব পারে।সব।
আগুনকেও পানি করতে পারে এই ভালবাসা। লাবিবের ভাবনার মাঝেই তীব্র কাপড় বদলে আসে। মুখোশের মতো চামড়াটা পড়ে একটা স্পে মারে মুখে।অবারো রুপান্তরিত হয় মজনু বেশে। নিজেকে ভালো করে দেখে নেয় তীব্র।পিঠে আচরের জন্য জ্বলেছে অনেক গোসলের সময় এখনো জ্বলছে।তার বেগমের দেওয়া চিন্হ শত কষ্ট হলেও রাখবে সে।তাছাড়া যে ক্ষত করেছে মলম ও তো সেই করবে।ভেবেই হাসল তীব্র।লাবিব মজনুর বেশে তার বসের হাসি দেখে অবাক হল। ইদানিং বস তার বেশিই হাসে।তবে সে আর অবাক হল না।কতোই বা অবাক হওয়া যায়।সে তো অবাক হতে হতে অঙ্গান ও হয়ে গেছিল।
তোর ভাবনা শেষ হলে এখন চল ভোর হতে সময় নেই।লাবিব চমকে উঠে দ্রুত সাইকেল বের করল।বস তার কতো ভালো হয়ে গেছে।অন্য সময় যদি এমন অন্যমনস্ক থাকত হয়তো তুলেই আছার মারতো।
বাড়িতে পৌঁছে মজনু সোজা রুমে চলে আসে এসে দেখে রিদি উঠছে।তীব্র দ্রুত এগিয়ে এসে রিদিকে সামলে নিল।বলল সে ওয়াসরুমে গেছিল।রিদিও অধিক ঘুম থাকায় ঘুমিয়ে পড়ল।
রিদির ডাকে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসল তীব্র।
রিদি কখন থেকে বলছে ছাড়ুন কাজ আছে!
আপনাতেই আমি পর্ব ১০
তীব্র রিদির কথায় ছাড়ল না।রিদির দিকে তাকিয়ে দেখল তার বেসামাল ভালবাসার চিহ্ন গলায় অনেক গুলো।তীব্র নিজেকে সুখী মানল।তার এইটুকু একটা বৌ অথচ এতোকিছুর পরেও কোন অভিযোগ নেই।তীব্র ঠোঁট ছোয়াল কপালে।আরো একটু জরিয়ে ধরে সেভাবে থাকল থাকল।
“আপনাকে ধোকায় রাখার জন্য সরি বেগমজান, কিন্তু এছাড়া আমার কাছে কোন অপশন নেই।আপনাকে আমি আমার সবটা দিয়ে আগলে রাখব।কারন আপনিই আমার সবকিছু,আমার নিঃশ্বাস,আমার পুরোটাই আপনি।তাইতো #আপনাতেই আমি।আপনি আছেন তো আমি আছি।আমার প্রিয়র থেকেও প্রিয়তমা আপনি।পাথর হৃদয়ের ফুটন্ত ফুল আপনি। আপনি ই সব ।