আপনাতেই আমি পর্ব ১৫

আপনাতেই আমি পর্ব ১৫
ইশিকা ইসলাম ইশা

নূরজাহান মেডিকেল কলেজ।সবার স্বপ্নের কলেজ। ডাক্তার হওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে পারি জমিয়েছে অনেক এই মেডিকেল হসপিটালে।রিদিও তাদের একজন।
আজ রিদির প্রথম দিন। মজনু গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে চলে গেছে তার কাজে ।কাজের প্রথম দিন তাই রিদি জোর করেই পাঠিয়েছে।কাল সব কিছু দেখিয়ে দিয়েছিল রিদ।তাই আজ রিদি জানে কিছুটা। বিশাল এরিয়া পেরিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়ায় রিদি।অনেক মেডিকেল স্টুডেন্ট আছে লিফট এ।রিদি ঢুকে বাটন চাপ দিতে যাবে ওমনি হুরমুর করে ঢুকে দুজন।রিদি প্রথমে হচকচিয়ে যায়। পরক্ষণে নিজেকে সামলে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু লিফট বন্ধ হচ্ছে না দেখে মুখ বাড়িয়ে দেখে দুইটা আঙ্গুল বাটনের ওপর লড়াই করছে।রিদি এবার তাকালো তাদের দিকে।একজন ছেলে একজন মেয়ে রিতিমত বাটন চাপাচাপি নিয়ে নিশ্চুপ লড়াই করছে।এবার বিরক্ত হয়ে মেয়েটি বলে,

এই ইবলিশ শয়তান হাত সরা!!!
ছেলেটিও বিরক্ত হয়ে বলে,
তুই সরা ঘসেটি!!
কি বললি আমি!!আমি ঘসেটি আর তুই কি???মীর জাফর!
একদম মীরজাফর বলবি না কি করেছি আমি??
র্ং,ডং তো কম করিস না!যা সর!
এদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে রিদি বুঝল এরা চেনে একে অপরকে। দুইজনের ঝগরা দেখে রিদি হাত বাড়িয়ে বাটন চাপল ৫ম তলার।গেট বন্ধ হতেই ওরা তর্ক বাদ দিয়ে তাকালো রিদির দিকে । দুইজনেই রিদিকে দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকাচ্ছে যেন রিদি কোন ভূত।রিদি এভাবে তাকানো দেখে ভরকে গেল। ইতস্তত করে মনে মনে ভাবল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?সে তো ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করেই এসেছিল।নাকি মুখে কিছু লেগে আছে?
রিদির ভাবনার মাঝেই লিফট থামে।লিফট থামতেইই রিদি বের হয়ে গেল।পিছু পিছু ওরা দুইজন ও আসছে।মেয়েটি এগিয়ে এসে রিদির সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
নতুন নাকি??
রিদি মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে দেখল। ফর্সা গোলগাল চেহেরার চশমা পড়া মেয়েটিকে। পড়নে জিনস সাথে লং কামিজ গলায় ওরনা ঝুলানো। কাঁধের নিচে থাকা ব্রাউন চুল গুলো খোলা। সুন্দর দেখতে মেয়েটি।রিদি দেখা শেষ জবাব দিল,
জি!!
আমি মেঘলা আহমেদ তুমি??
আমি রিদিতা।নতুন মেডিকেল স্টুডেন্ট!!
মেঘলা:ইউ মিন প্রথম বর্ষ রাইট!
রিদিতা:জি!!
মেঘলা:আমিও।তোমাকে একটা কথা বলি?
রিদি হচকচিয়ে বলল,
কি কথা??

মেঘলা রিদিকে আবারো দেখে বলল,
তুমি ভীঅষণ মায়াবী।ঠিক গল্পের মায়াবী কন্যার মতো তোমার হরিন টানা মায়াবী চোখ দেখে মানুষ প্রেমে পড়ে যাবে।যাবে কি গেছে মনে হয়!!
রিদি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মেঘলার দিকে মেঘলার কথা হয়তো এখনো তার মাথায় ঢুকে নি। তাছাড়া বাইরের কারো কাছে নিজের রুপের তারিফ কখনো শুনে নি রিদিতা। যা শুনেছে তা তো কেবল কালো রং নিয়ে সবার খারাপ মন্তব্য যদিও তাকে কালো বলা যায় না।।তাই মেঘলার এমন হুট করে এমন কথা বলায় হতবাক হওয়া স্বাভাবিক।
জি?????

মেঘলা রিদির হতবাক হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলল।মেয়ে হয়ে মেয়ের তারিফ করছি।তুমি আসলেই মায়াবী গো। এককথায় তুমি অসাধারণ সুন্দর।এমন সুন্দর সবাই হয় না।
রিদি মনে মনে ভাবল দেখা নাই কথা নাই হুট করেই তারিফ করতে কখনো দেখে নি কাউকে।মজনু সাহেব ছাড়া সুন্দর কথাটা কেউ বলেনি তাকে।কেউ বলবেই বা কি করে রিদি তো বাইরের মানুষের সাথে সেভাবে মিশে ও নি। স্কুল,কলেজ পাশ করেছে সেটাও মায়ের ক্ষমতার জোরে শুধু পরিক্ষার সময় পরিক্ষা দিয়ে।তার মায়ের মতো সুন্দর রমনীর এমন কালো মেয়ে লোকে থু থু দিবে না।পুরানো কথা মনে হতেই রিদির বুক ভারি হয়ে আসল। নিজেকে সামলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল,
ধন্যবাদ তুমিও অনেক সুন্দর!!কথাটা বলা মাত্রই পাশ থেকে কারো কথার আওয়াজ শুনে চমকে উঠে রিদি।
কিহহহহহহ!!!এই ঘসেটি বেগম আর সুন্দর!একে তো কাজের মেয়ে জরিনা লাগে। তোমার কি চোখে সমস্যা আছে??

রিদি হচকচিয়ে তাকাল তখনকার সেই ছেলেটির দিকে। লম্বা , ফর্সা,ঠিকঠাক ছেলেটা দেখতে সুন্দর বটে।রিদি কিছু বলার আগেই ধুম করে কিল বসালো মেঘলা।রিদি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ওদের দিকে।ছেলেটি আইইইআইই করে উঠলো।মেঘলা রেগে বলল,
বাদর, অসভ্য ছেলে!!একদম আমার আশেপাশে আসবি না।
মেরে আমাকে ভর্তা করে ফেলল গো ঘসেটি বেগম!! আল্লাহ তুমি বিচার করো!!!
ছেলেটার এমন কথায় মেঘলা বিরক্ত হয়ে বলল,
রিদিতা চলো ওর ফালতু নাটক দেখে লাভ নেই।বলে রিদির হাত ধরে যেতেই ছেলেটি চেঁচিয়ে উঠলো।
ওহোওও তো টানা টানা চোখের মেয়েটার নাম রিদিতা!
মেঘলা আর পাওা দিল না রিদিকে নিয়ে ক্লাসে ঢুকল।দুইজনে বসল ক্লাসে।রিদি আর মেঘলা টুকটাক পরিচিত হয়ে কথা বলছিল।এর মাঝেই আবারো ছেলেটি এসে রিদিতার সাইডে বসল।রিদি হচকচিয়ে তাকাল ছেলেটির দিকে।মেঘলা রেগে বলল,

আয়াননননন…..
বিরক্ত করবি না।যা এখান থেকে।
এভাবে চেঁচামেচি করবি না।আমি ভদ্র ছেলে বলে তোকে কিছু বলছি না। তাছাড়া তোকে আমি চিনি না।আমি তো রিদিতার সাথে কথা বলতে এসেছি।
মেঘলা রেগে বলে,
ভদ্র মাই ফুট।ভদ্রতার মূর্তি আপনাকে বলেদি রিদি ম্যারেড!!আয়ান হতভম্বের মতো তাকালো। কোথাও যেন ভাঙার আওয়াজ শোনা গেল।আয়ান কাঁদো কাঁদো হয়ে প্রথম প্রশ্ন করল,
তোমার বয়স কত??
রিদি আয়ানের কথায় হতবাক হয়ে বলল,
১৮ হতে দু মাস বাকি!!!
আয়ান কষ্টের সহিত আবারো বলল,
বিয়ের বয়স কত বছর?
রিদি ওতো না ভেবেই বলল,
৮মাস।

আয়ান এবার কষ্টের সীমা অতিক্রম করে বলল,
১৮ হওয়া পর্যন্ত সিঙ্গেল থাকতে পারলা না!ছ্য্য্য্যা জীবনটাই বৃথা গেল।সব মায়াবতী যদি ১৮ হওয়ার আগেই বিয়ে করে ফেলে তবে আমার জন্য তো একটাও বাকি থাকবে না।রিদি হতবাক হয়ে তখনো আয়ানের কথা শুনছে।
আয়ান রিদির হতবাক হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
তোমার কোন বোন আছে??
রিদি অবুঝের মতো বলে,
আছে!!
আয়ান প্রফুল্ল হয়ে বলে,
ঠিক তোমার মতো মায়াবতী তো!!!
রিদি অকপটে বলে,
না।আমি কালো, আপু ফর্সা।অসম্ভব সুন্দর।দেখলেই দেখতে মন চাই এমন।
আয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,

সাদা চামড়ার মেয়ে আমার পছন্দ না।আমি নিজেই তো কোরিয়ান নায়কের মতো!!কি বল!!সাদা ফকফকা!!
রিদি কিছু বলার আগেই মেঘলা ব্যাঙ্গ করে বলে,
আসছে আমার কোরিয়ার নায়ক রে! ফকফকা!!!তোর কপালে শ্যামকন্যা নাই, দলা কন্যাই আছে বুচছ!
আয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,
তোর দোয়াই আজ আমার মন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে।আজ তোর জন্য,তোর বদদোয়ার জন্য শ্যামাবতী আমার হল না!এই আফসোস নিয়ে আর বেঁচে থাকতে পারব না।বিদায় পৃথিবী বিদায়…..
আয়ান এর কথার মাঝেই স্যার রুমে প্রবেশ করে।রিদি এবার সেদিকে মনোযোগী হয়।রিদি মনোযোগ দিয়ে সাদা এপ্রোন টা দেখল।স্যার প্রথম ক্লাসে তেমন কিছু বলল না। কিছুক্ষণ লেকচার দিয়ে বলল,
কাল নবীন বরণ অনুষ্ঠান সবাইকে অনুষ্ঠানে আসার নিয়ন্ত্রণ করে গেছে।সবার আইডি কার্ড বিতরণ করা হবে কালকে।তাই কাল আসাটা জরুরি।বলে চলে গেল।

ক্লাসের সবাইকে একে অপরের সাথে আলাপ করছে।হয়তো পরিচিত হচ্ছে।মেঘলা কথা বলছে রিদি সাথে। মেঘলা আয়ান কে নিয়ে এটা সেটা বলেই যাচ্ছে,রিদি তাকিয়ে দেখছে মেঘলাকে মেয়েটা অনেক কথা বলতে পারে তবে সব কথাই আয়ান যুক্ত।
আয়ান কি তোমার বন্ধু??
মেঘলা বিরক্ত হয়ে বলে,
বালের বন্ধু জীবন ডা তেজপাতা করে দিল।ধুর।ও আমার ছোটবেলার বন্ধু। একসাথে স্কুল,কলেজ পেরিয়ে আজ এখানেও আমার পিছু ছাড়ছে না।সালা লুচু কোথাকার!বেদদপ,অসভ্য!!
রিদি মুচকি হাসল,বুঝল এদের বন্ধুত্ব এমনি।রিদিকে হাসতে দেখে মেঘলা বলল,
তুমি হাসছ!!
রিদি হাসি থামিয়ে বলল,
লুচু ছেলে তাই না!এমন বন্ধু আমার চায় না।
মেঘলা থতমত খেয়ে বলে,
আরে তুমি কি ওকে খারাপ ভাবছ??ও কিন্তু খারাপ না।আসলে ও ছোট থেকে এমন ই একটু দুষ্টু স্বভাবের।তবে তোমার ওপর ভীষণ ভাবে ক্রাশ খেয়েছে।সাথে বাঁশ ও।
রিদি অবাক হয়ে বলল,
ক্রাশ!!পাগল তুমি!!
মেঘলা হেসে বলে,

সত্যি বলছি! ওর আবার শ্যামাবতী মেয়ে পছন্দ!তুমি একদম ওর মনের মতো।লিফটে প্রথম দেখেই তোমার প্রেমে পড়েছে।তোমাকে দেখেছে লিফটে আরচোখে বার বার।
রিদি তাকালো মেঘলার দিকে মেয়েটার কথায় কোথাও যেন উদাসির সুর পেল রিদি।তবে কিছু বলল না।ওদের দুইজনের কথার মাঝেই আবারো টপকালো আয়ান,
এই রিদিতা তোমার ডিভোর্স কবে হবে গো??
রিদিতা এবার আর অবাক হল না।মেঘলার কাছে যতটুকু শুনল তাতে আয়ানকে খারাপ ভাবতে পারে নি রিদি।ছেলেটা দুষ্টু হলেও ভালো লাগলো তাই হেসে বলল,
কোনদিন ও হবে না।আমি আমার মজনু সাহেবকে ভীষণ ভালোবাসি আয়ান।
আয়ান তাকালো রিদির মায়াবী চোখের দিকে,কোথাও যেন ছ্যাত করে উঠলো আয়ানের রিদির মুখে কথাটা শোনে।আয়ান অবাক হল।সে তো কতো শত মেয়ের সাথে ফ্ল্যাট করে।কই এমন তো কখনো হয় না।আজ তাহলে এমন লাগছে কেন?ঝট করে নিজের করা প্রশ্নের উত্তর পেল না আয়ান। তবে মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো,
তুমি ভীষণ মায়াবী রিদিতা।
রিদিতা হাসল,

আমি জানিনা আমি কেমন?তবে তার চোখে আমিই তার সব।আর সে আমার দুনিয়া। আর আমার দুনিয়ায় দ্বিতীয় কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ।
আয়ান অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,
এতো ভালোবাসো!!
রিদি সোজাসুজি বলে,
ভীষণ ভালোবাসি।আমার দুনিয়া সে।আমার জীবন সে।আমার জীবনের আলো সে।আমার কাছে আল্লাহর পাঠানো রহমত সে।
আয়ান রিদির কথায় অবাক হল।সে বুঝতে পেরেছে দুটো জিনিস প্রথমত রিদি ওর কাছে ক্ষনিকের ভালোলাগা না।হয়তো গভীর ভালবাসা না কিন্তু আবেগ ও না।কি যে একটা মায়া তৈরি হল মেয়েটার জন্য।নিজেও জানে না আয়ান। দ্বিতীয়ত রিদি তার কখনো হবে না।এতে তার আফসোস হল না।কেন পেলাম না এমন ভাবনাও আসল না। শুধু মন বলল মেয়েটা ভালো থাকুক।
আয়ান নিজের ভাবনায় অবাক হল।সে এই দু মিনিট পরিচিত হওয়া মেয়েটার জন্য কতো কিছুই না ফিল করল।ঐ যে তেমন বিষয়টা ক্রাশ সাথে বাঁশ। আয়ান হেসে বলল,
আমরা কি বন্ধু হতে পারি?

রিদি খানিকটা ইতস্তত করল।জীবনে তার মেয়ে বন্ধু নাই বললেই চলে সেখানে ছেলে বন্ধু বিষয়টা রিদির কাছে নতুন। আয়ান বুঝল হয়তো রিদির পরিস্থিতি অকপটে বলল,
তুমি চিন্তা করো না।তোমাকে পছন্দ বা ভালোবাসার কথা কোনটাই আর কখনো বলব না।আমি শুধু তোমার বন্ধু হতে চাই।
রিদি একটু চুপ থেকে বলল,
ঠিক আছে।
আয়ান হেসে বলল,
আজ প্রথম কেউ এতো সময় নিয়ে আমার সাথে বন্ধুত্ব করছে।এই মেঘু এই খুশিতে তোকে আইসক্রিম খাওয়াবো চল।
রিদি আয়ানের বলার ভঙ্গিমায় হেসে ফেললো। আয়ান রিদির দিকে তাকিয়ে দেখল সেই হাসি।নিজেকে সামলে বলল,
আমি আবার বন্ধুত্বে তুমি বলতে পারি না।তুই চলবে।
রিদি সম্মতি জানায়।
চলবে।

আয়ান মহূতেই পাল্টে যেন অন্য রূপ ধারন করল,
এই রিদি তোদের লাভ স্টোরি তো শোনা হল না।
রিদি হাসল,
একদিন সময় করে তোমাদের শোনাব আমার গল্প।
মেঘলা এবার বলল,
আমি কি বন্ধু না!!
আয়ান বলল,
না আমরা ঘসেটিকে বন্ধু বানায় না।
মেঘলা রেগে গিয়ে বলল,
আয়ানের বাচ্চা যা দূর হ।
আয়ান কানে হাত দিয়ে চমকে উঠার ভঙ্গিতে বলল,
আমি পিউর সিঙ্গেল।আমার বাচা আসবে কোথা থেকে।ছি ছি এসব বলে আমাকে লজ্জা দিবি না। শাশুড়ি তখন মেয়ে বিয়ে দিবে না।

রিদি হেসে উঠলো। খিলখিল আওয়াজে আয়ান আর মেঘলাও হাসল।তবে আয়ানের হাসিতে কোথায় বেদনার ছাপ।মেঘলা বুঝল সেই বেদনা। মানুষ সবসময় যা চাই তাই কি ভাগ্য থাকে।
রিদি আরো কিছুক্ষণ কথা বলে দুইজনের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয়।
রিদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আয়ান।হিংসে হলো রিদির প্রিয় মানুষটার প্রতি।এতো ভালোবাসা সে পেয়ে গেল। ভীষণ লাকি মানুষটা।
মেঘলা তাকালো আয়ানের দিকে,
আজ তাকে লুচু বলল না মেঘলা।রিদির প্রতি ওর অনূভুতি সত্যি।তা জানে মেঘলা।ছোট থেকে চিনে।কোনটা ফ্ল্যাট আর কোনটা সত্যি তা জানে।তবে কোথাও যেন খুশি হল মেঘলা।
আয়ান হাসিখুশি থাকলেও ওর ভিতরের মানুষটা হয়তো কষ্ট পাচ্ছে এইসময়। ভেবেই ছোট একটা শ্বাস ফেলল মেঘলা। অনূভুতি অদ্ভুত এক জিনিস।হুট করেই কারো প্রতি গভীর অনূভুতি জন্মায় আবার অনেক সময় নিতেও ধীরেধীরে জন্ম নেয় ভালবাসার অনুভূতি।অদ্ভুদ এই পৃথিবীর নিয়ম !নাকি আল্লাহর পরিক্ষা। সবটাই কেমন ধোয়াশা।
মাগরিবের নামাজ পড়ে বাড়িতে আসল মজনু।রিদি ততক্ষণে নামাজ সেরে চা বসিয়েছে।রিদিকে রান্না ঘরে দেখে এগিয়ে গেল সেখানে।পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো রিদিকে।রিদি বিরক্ত হল না। শান্ত থাকল।এই শাস্তি টুকু সারাদিনে ভীষণ মিস করেছে সে।ঘুরে জরিয়ে ধরে বুকে মুখ গুজল। মজনু হেসে মাথায় ঠোঁট ছোয়াল।চা তখন বলক ওঠে গেছে। মজনু হাত বাড়িয়ে চুলা অফ করে দিল।দৃঢ করল হাতের বাঁধন।
কিছুসময় পর রিদি বলল,

আপনাকে অনেক মিস করেছি।বলে মজনুর দিকে তাকালো। মজনু রিদির সারা মুখে ঠোঁট ছোয়াল।সে যদিও মিস করেনি।কারন রিদির প্রতি সেকেন্ডের আপডেট তার কাছে আছে।তবে বৌয়ের এই মিষ্টি আদরটুকু মিস করেছে।
বিশাল বড়ো ছাদ।তাতেও যেন বিলাসিতা।ইয়া বড় একটা দোলনা রাখা।আর চারদিকে জ্বলছে মিটমিট আলো।রিদি মজনু বসে সময়টা উপভোগ করছে।রিদি আজকের দিন সম্পর্কে সবটা বলছে মজনু কে। আয়ান আর মেঘলার কথাও বাদ যায় নি।সব শুনেও মজনু কে নিশ্চুপ দেখে রিদি বলে,
আপনি কি রাগ করেছেন??আয়ানের সাথে বন্ধুত্ব করেছি বলে??আপনি বললে আমি আর কথা বলব না ওর সাথে।
মজনু তাকিয়েই ছিল রিদির দিকে।তবে রিদির কথায় হাসল।মনে মনে ভাবল,আপনি বলার আগেই আপনার বন্ধুদের ডিটেইলসহ ফুল হিস্ট্রি আমার কাছে এসেছে।আয়ানকে তার খারাপ মনে হয়নি।তবে বৌয়ের ওপর ক্রাশ খেয়েছে এতে সে রেগে গেলেও রিদির জবাবে সে মুগ্ধ হয়েছে।
মজনু খাতা কলম নিয়ে তাতে লিখল কিছু,

আপনাতেই আমি পর্ব ১৪

আমি আপনাকে বিশ্বাস করি বেগমজান।তাই আপনাকে কারো সাথে কথা বলা বন্ধ করতে হবে না। আপনি আমার মানে আমারি।
রিদি মজনুর দিকে তাকিয়ে রইল। হুট করেই কোলে উঠে জরিয়ে ধরলো। মজনু প্রথমে হতবাক হলেও জরিয়ে ধরলো।
আপনি ভীষণ ভালো মজনু সাহেব ভীষণ।
মজনু ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল,
শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ছোট,নরম দেহটাকে।এটাই তার সুখ।তার সুখপাখি।

আপনাতেই আমি পর্ব ১৬