আপনাতেই আমি পর্ব ২৫
ইশিকা ইসলাম ইশা
রিদির ঙ্গান ফিরতেই নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে পায়। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছে না রিদি।কোথাও যেন আলোর পথ নেই। তবুও হাতরে হাতরে দু কদম এগুতেই লাইট জ্বলে উঠলো।রিদি চমকে উঠে পিছিয়ে গেল।সামনে রাদিফ কে দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো।
ভাইয়া!!!
রাদিফ রিদির ভয়ার্ত চেহেরা দেখে বলে,
ভয় পেয়েছিস!!সরি সরি!!
এসব কি ভাইয়া!আমাকে এভাবে নিয়ে আসার মানে কি??(রিদি)
তোর সাথে কথা বলা জরুরি ছিল রিদি। প্লিজ আমার কথা শোন (রাদিফ)
কথা তুমি আমার সাথে বাসায় ও বলতে পারতে।এভাবে আনার মানে কি?(রিদি)
কয়েক মাস ধরে তোর সাথে যোগাযোগের কম চেষ্টা করিনি।রিদি অবাক হল।রাদিফের দিকে তাকিয়ে রইল।
আমার সাথে যোগাযোগ করতে!মানে!!!(রিদি)
মজনু হিসেবে তুই যাকে চিনিস সে আসলে একজন বহুরুপী।(রাদিফ)
রিদি আকাশ থেকে পড়ল,
মজনু সাহেব বহুরুপী !!রিদির চারদিকে ঘুরছে।পড়তে গেলে রাদিফ এসে ধরে ফেলে।রিদি রাদিফ কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল।
না!!!!এমন কিছু না।এটা হতে পারে না। মজনু সাহেব সহজ সরল বলে তোমরা তাকে ফাসাচ্ছো।তুমি আম্মার সাথে হাত মিলিয়েছো তাই না!!আমার সুখ তার সহ্য হচ্ছে না! তাই তোমাকেও তার দলে নিয়েছে!
কি চাও??তোমরা কি চাও??আমার কি দেওয়ার আছে তোমাদের।যা চাও নিয়ে নাও।দয়া করে আমার পিছু ছাড়ো!!
আমি তোকে মিথ্যা বলছি না রিদি। মজনু হিসেবে যাকে চিনিস সে মজনু না।তোর মজনু তো কথা বলতে পারে না তাই না!
সে কথা বলতে পারে রিদি!!আমার সাথে নিজে কথা বলেছে! মজনুর উপর আমার শুরু থেকেই ডাউট ছিল।তাই আমি নজর রাখতাম তার উপর।তোর তাকে অদ্ভুত মনে হয় নি!!বিয়ের আগের কথা বলছি!!
রিদি চমকালো।হ্যা অদ্ভুত মনে হয়েছে। কিন্তু তার কারন ও ছিল তখন।তাই বলে সে মজনু কে সন্দেহ করতে পারে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রিদি ফর গড সেক আমার কথা বিশ্বাস কর।আমি মিথ্যো বলছি না!
তুমি আজ এতো দিন পর কোন স্বার্থে এ কথা বলছ!!আর কেন??
রাদিফ তাকাল রিদির দিকে। তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
স্বার্থ!! আমার স্বাথ কি জানিস রিদি?তুই!!তুই আমার স্বার্থ।
রিদি চমকালো তাকালো রাদিফের দিকে।
আমি!!!!!
হ্যা তুই!সেই ছোট্ট থেকে যাকে ভালোবাসি তাকে ঠকতে দেখতে না পারা আমার স্বার্থ।
কককি!বলছ!
হ্যা হ্যা ভালবাসি তোকে রিদি!! ভীষণ ভালোবাসি!
রিদি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল!!
আমি তোকে ভালবাসি রিদি! বিশ্বাস কর আমাকে!! একবার!!
কি বলছো তুমি এসব!! পাগল হয়ে গেছো?
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি আমি!!আর আমাকে পাগল তুই বানাচ্ছিস!!কেন?কেন?বিশ্বাস করছিস না!
মজনু হিসেবে যে তোর সাথে থাকছে সে মজনু না। মজনু নামের কেউ নেই!!
ঠিক আছে মানছি!মানছি!তুই ঠিক!
ওনি যদি তাই হয় তবে আমাকে বিয়ে করে ওনার কি লাভ হয়েছে!!আমি তো রুপালি আপু না যার সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে এসব করবে।আমার তো বিশাল সম্পত্তি ও নাই যে সম্পত্তির জন্য এসব করবে।তাহলে কেন??কেন করবে সে এমন!!
জানি না!!আমি জানি না!! শুধু এটা জানি ও মজনু নামের ছদ্মবেশী।
রিদি কিছু বলার আগেই দরজা ভাঙার শব্দ হয়। ঠিক মিনিটের মধ্যেই দরজা ভেঙে প্রবেশ করে মজনু মিয়া।রিদিকে দেখেই ছুটে এসে জরিয়ে ধরে।চোখ মুখে অজস্র চুমু দিয়ে বুকের মাঝে আগলে নেয়।
ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকায় রাদিফের দিকে!!রিদি মজনু কে পেয়ে একদম শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
তীব্রর দৃষ্টি উপেক্ষা করে রাদিফ রিদির দিকে তাকালো।কেমন ঝাপটে ধরে আছে সেই মানুষটি কে যে তাকে ঠকাচ্ছে।
পুলিশের আসার শব্দ শুনেই রাদিফ পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পরে।তীব্র চেয়েও রাদিফ কে ধরতে পারল না।রাদিফ তীব্রর থেকে পালিয়ে গেছে অনেক দিন।রাদিফকে খুঁজলেও পায়নি তীব্র।বলতে গেলে সেভাবে খুঁজে দেখে নি।রাদিফের উপর রাগের চেয়ে আফসোস কাজ করে বেশি।তীব্র জানে রাদিফ রিদিকে ভালোবাসে।এটাও জানে এতদিন মায়ের কাছে ওয়াদাবদ্ধ থাকায় বলা হয় নি রিদিকে নিজের মনের কথা। কিন্তু এখন তীব্রর জীবন হয়ে দাঁড়িয়েছে।ভালবাসা ছাড়া বাঁচতে পারলেও নিজের জীবনটা ছাড়া তার কোন অস্তিত্ব থাকবে না।তীব্রর ভাবনার মাঝেই রিদি ঢলে পড়তে নিলেই তীব্র কোলে তুলে নেয় রিদিকে।ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছিল না তার!তীব্রর রাজ্য থেকে তার জানপাখি উঠিয়ে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু ক্ষনিকের জন্য ভয় তো পেয়েছিল তীব্র।মেয়েটা তার সবকিছুই।
তীব্র কোলে নিয়ে বসে আছে রিদিকে।হাত বাড়িয়ে হিজাব পিন খুলে, হিজাবটা খুলে ফেলে।গরমে ভেজা চুল বেঁধে যাওয়াই এখনো ভেজা হয়ে আছে।তীব্র যত্ন সহকারে রিদির চুল গুলো ছেড়ে দেয়। এসির পাওয়ার বায়িয়ে দিয়ে টিসসূ দিয়ে মুখ মুছিয়ে দেয়। গাড়িতে একটু হেলান দিয়ে বসে রিদিকে জরিয়ে ধরে রাখে।রিদির এ টু জেট সব কিছুই জানে তীব্র।স্ট্রেশ বেশি হলে ঙ্গান হারিয়ে ফেলে রিদি ।তীব্র নিজে ডাক্তার এরসাথে কথা বলেছে। ডাক্তার জানিয়েছে ছোট থেকে সমস্যা হয়তো।ছোট থেকেই খুব বেশী মানসিক চাপ নেওয়ার ফলে ব্রেন ইফেক্ট করেছে।তাই সবসময় রিদিকে স্ট্রেসে থেকে দূরে রাখতে বলেছে ডক্টর।
রাদিফ লোক দিয়ে তখন রিদিকে কিডন্যাপ করেছিল।রিদির আসতে লেট হওয়াই তীব্র লাবিব কে কল করে রিদির কথা জানতে চাইলে লাবিব জানায় রিদি অনেকক্ষণ আগেই চলে গেছে তার কেবিনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ।তীব্র গেট খুলে বের হয়ে রিদিকে না দেখে লাবিব কে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে বলে।সিসিটিভি ক্যামেরা চলছে না জেনেই তীব্রর ভেতর আজানা ভয়ে ভীত হয়।গেটের ক্যামেরাই যাওয়া সকল গাড়ির খোজ নিয়ে রিদির কাছে পৌছায় তীব্র।
গাড়ি বাড়ির সামনে থামতেই রিদি তীব্রর বুক থেকে পিটপিট করে তাকালো। মাথায় অসহ্য যন্ত্রনার মাঝেও মজনুর বুকে পড়ে রইলো সেভাবে।
লাবিব রিদির মুভমেন্ট না জেনেই ,
বসস….
তীব্র ইশারা করতেই লাবিব চুপ হয়ে যায়।রিদির কানে কথাটা এলেও মস্তিষ্ক পর্যন্ত ক্যাচ করল না।সে নিশ্চুপ হয়ে পড়ে রইলো মজনুর বুকে। মাথায় যন্ত্রণায় মজনুর পাঞ্জাবি কলার চেপে ধরে কপাল সহ নাক মুখ চেপে বুকের ভেতর ঢুকতে চেষ্টা করল। মজনু রিদির রিএকশন না দেখে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল।মনে মনে বলল,
খুব কষ্ট হচ্ছে বেগম জান!আমি সরি সরি ফর এভরিথিং।বাট আম হেল্পলেস জান।আমি সত্যি বলে তোকে হারানোর রিস্ক নিতে পারব না।তোকে হারালে তীব্র চৌধুরীর ভয়ংকর রুপ ধারণ করবে।যা কারো জন্য ভালো হবে না।তুই আমার কাছে মানে আমি শান্ত।
মজনু নিজ মনে কথা বলে রিদিকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামল। ইশারায় গাডদের যেতে বলে রিদিকে নিয়ে রুমে আসল।রিদিকে বিছনায় বসিয়ে ওষুধ এনে রিদিকে খাইয়ে দিল।রিদি পিটপিট করে মজনু কে দেখে বাচ্চাদের মতো হাত বাড়ালো।তীব্র রিদির কাছে এসে বসতেই রিদি বাচ্চাদের মতো তীব্রর বুকে মাথা দিয়ে জরিয়ে ধরল।
আমার কষ্ট হচ্ছে!আমি এখানেই থাকব!
আপনাতেই আমি পর্ব ২৪
তীব্র কষ্টের মাঝেও হাসল।সে যদি জানত মজনু হিসেবে সে তীব্রর বুকেই শান্তির জায়গা খুঁজেছে আজ পর্যন্ত তাহলে কি মেনে নিবে।বলবে না,নষ্টা পুরুষ আপনি আপনার গায়ে হাজারো মেয়ের গন্ধ আছে,আপনি একটা বাজে লোক!!
তীব্র বসে থেকেই ধীরে শুয়ে পড়তেই রিদি পুরোপুরি তীব্রর বুকে লেপ্টে গেল।তীব্র হাত বাড়িয়ে এসি পাওয়ার কমিয়ে দিল।এক হাত রিদির পিঠে রেখে অন্য হাত দিয়ে হাত বুলাল মাথায়।
শত কিছু হোক!এই বৌ টা তার থাকলেই আর কিছু চাইবে না তীব্র।