আপনাতেই আমি পর্ব ২৯
ইশিকা ইসলাম ইশা
আজ দুদিন পর রিদির ঙ্গান ফিরেছে। পিটপিট করে চোখ খুলেই সমনে দেখে সাদা দেওয়াল।মাথার উপর সাদা দেওয়াল।তাতে ঘুরছে সবুজ রঙের ফ্যান।রিদি বুঝল শরীর অসহ্য ব্যাথা বিশেষ করে পেট।পাশে তাকাতেই দেখতে পেল তীব্র কে।বেডের কাছেই বসে আছে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে।রিদি হাত নড়াতেই তীব্র চট করে মাথা উঠালো।হাসি ফুটে উঠল মুখে।এগিয়ে এসে অজস্র চুমু দিল।রিদি তাকালো তীব্রর দিকে চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে।রিদি মজনুর সাথে তীব্র কে মিলালো।না তেমন কোন মিল পেল না চেহারায়।রিদি মনে মনে ভাবল,
মা আর রাদিফ ভাইয়া সঠিক ছিল!! মজনু ছদ্মবেশী!
তীব্রর মুখে খুশির ঝলক।রিদির হাত ধরে পালস চেক করতেই রিদি বলে,
আপনাকে কি বলে ডাকব!! মজনু নাকি তীব্র!!
তীব্র চমকে তাকালো রিদির দিকে,
দুটাই একজন বেগম সাহেবা!আপনি প্লিজ সুস্থ হয়ে যান।
রিদি চোখ বন্ধ করে নিল,তা থেকে গড়িয়ে পড়ল জল
“বেগম সাহেবা”এই ডাকটা মজনুর মুখে শোনার কতোই না ইচ্ছে ছিল। মজনু ডাকবে তাকে বেগম সাহেবা বলে!!কতোই না আশা!আশা তো আজ পূরন হয়েছে তবে আজ মানুষটাই অচেনা।
কেন করলেন এমন??বদলা নিলেন??
তীব্র ব্যাথিত চোখে তাকাল রিদির দিকে,
বদলা কেন নিবো??
রিদি তাচ্ছিল্য হাসল,
কেন নিবেন? শুনেছি তীব্র চৌধুরী রাগ ভয়ংকর!জেদ ভয়ংকর!এখন দেখছি বদলা নেওয়ার পদ্ধতি ও ভয়ংকর!
তীব্র শান্ত স্বরে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তীব্র চোধুরী সম্পর্কে গবেষণা করার সময় অনেক পাবেন! বলে রিদির হাত ধরতেই রিদি হাত সরিয়ে নেয়।
ধরবেন না আমাকে!!আপনি ঠক,প্রতারক!!রাদিফ ভাইয়া আর আম্মা ঠিক ই বলেছে আপনি ছদ্মবেশী।কি পেলেন এসব করে!! পুরো অস্তিত্ব ই বদলে দিলেন আমার!কেরে নিলেন আমার তো ভরসার মানুষটাকে।কেন করলেন?কেন?কি পেলেন এসব করে??বলেন??আমি এমন কি ক্ষতি করেছি আপনার বলেন??
তীব্র রিদিকে হায়পার হতে দেখে ঝট করেই জরিয়ে ধরে।রিদি ছোটাছুটি করলে তীব্র শক্ত করে ধরে। চেঁচামেচি করার ফলে রিদির শরীর খারাপ হতে থাকে। তীব্র চিৎকার করে নাস কে ডেকে ইনজেকশন পুস করতে বলে।রিদি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে তীব্রর বুকে মিশে যায়।তীব্র ইশারায় নাস কে যেতে বলে।রিদিকে শক্ত করে ধরে বসে থাকে কিছুক্ষণ।রিদি ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়েছে।ঘুমের মাঝেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে তীব্র কে।রিদির অভ্যাস অনুযায়ী জরিয়ে ধরেছে।তীব্র রিদিকে নিয়ে ধীরে ধীরে শুয়ে পড়ল পায়ের দিকে মাথা দিয়ে।রিদিকেও ভালো করে ঠিক করে নিল। জামার ভেতর দিয়ে হাত রাখল পেটে।পেটে স্পর্শ করতেই ব্যাথায় হয়তো ককিয়ে উঠে শক্ত করে ধরল তীব্র কে।তীব্র পেটে হাত রেখেই চোখ বন্ধ করে নিল। গড়িয়ে পড়ল পানি।
এখানেই তো ছিল ছোট্ট একটা প্রান!তার ছোট্ট রিদি!কয়েক মাস পর হয়তো এই প্রানটারই ছোট্ট ছোট্ট পা হাত হতো!হাসত,খেলত,পাপা বলে ডাকত। আচ্ছা রিদি জানলে কি হবে!আরো কষ্ট পাবে! মজনুর সত্য তাকে এমনিতেই ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু এটা লুকানো সম্ভব!ওর ভেতর ছোট্ট একটা প্রান ছিল।এটা জানার অধিকার তার আছে।
আর ভাবতে পারছে না তীব্র।মাথা ঝিমঝিম করছে। দুদিন ঘুম হয়নি তার।বৌ ছাড়া ঘুম হয়না তার।এতো কিছুর মাঝেও বৌ ছাড়া ঘুম হয়না হাসল তীব্র।বৌ তার ক্ষেপে আছে না জানি কতোদিন ঘুম হবে না।
রিদির ঘুম ভাঙ্গে ৩ঘন্টা পর।লম্বা একটা ঘুম দিয়ে আশেপাশে তাকালো না তীব্র নেই।শরীর নড়াতেই ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো।ঠিক তখনি রুমে ঢুকে মেঘ।মেঘ আরো আগে এসেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে চলে গেছে।তীব্র আর রিদি তখন ঘুমিয়ে ছিল।মেঘ অবাক হলেও পরিস্থিতি বুঝে চলে গেছিল তখন।মেঘ রিদিকে উঠতে দেখে এগিয়ে এলো।
থাম আমি হেল্প করছি!!
রিদি তাকালো মেঘলার দিকে।কিছু না বলে ওর সাহায্য নিয়ে ওয়াস রুমে চলে আসে।বের হতেই দেখে আয়ান মেঘ দুইজনেই রুমে আছে।আয়ান মেঘ রিদির হাত ধরে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
এখন কেমন আছিস (আয়ান)
জানি না (রিদি)
আয়ান ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে রইল রিদির দিকে।রিদি একটু চুপ থেকে বলল,
শোন আমার একটা কাজ করবি??
কি কাজ??
আমি সুস্থ হলে আমাকে একটা জব খুজে দিবি।পাট টাইম জব??
আয়ান অবাক হয়ে বলল,
কেন??
কেন ??এর উত্তর জানিস না!নাকি বুঝতে চাইছিস না।
আমার আপন মানুষ গুলোই আমাকে ধোকা দিয়েছে, কষ্ট দিয়েছে।মা থেকেও নেই ,যাকে সব ভেবেছিলাম সে ও ছদ্মবেশী,ঠক।আমি এদের সবার থেকে দূরে থাকতে চায়। প্লিজ আমার সাহায্য কর।
আয়ান অসহায় চোখে তাকাল রিদির দিকে।রিদি কি জানে তীব্র তাকে কতোটা ভালবাসে।সেও তো তীব্র কে ভালোবাসে।মানুষের রুপ পরিবর্তন হলে কি ভালবাসা পরিবর্তন হয়।
রিদি আবারো বলে,
আমি কলেজ হোস্টেলে উঠব।সব ব্যবস্থা করে দিবি প্লিজ।দেখ করবি না! প্লিজ……
মেঘ এবার বলে,
তীব্র স্যার তোকে হোস্টেলে থাকতে দিবে!!
রিদি তাচ্ছিল্য হাসল,
ওনার হয়তো বদলা নেওয়া শেষ। তাছাড়া আর কত নিবে??একবারে মেরে ফেলতেই তো সব সমাধান হয়ে যায়। তাছাড়া আমি থাকতে পারব না ওনার সাথে।আমার দম…….
তীব্র সব কথায় শুনেছে আড়ালে গেট দিয়ে ঢুকতে।
দম বন্ধ হলেও আপনাকে আমার সাথেই থাকতে হবে বেগমজান।
আয়ান,মে চমকে পিছনে তাকাল।তীব্র কে দেখে দুইজনেই একে অপরের দিকে তাকাল।তখনি রুমে ঢুকলো রুপালি,তীর,আমির।রুপালি এসে রিদিকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।রিদি চুপচাপ থাকল।রিদিকে কি বলে শান্তনা দিবে জানে না রুপালি।বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলল,
এখন কেমন আছিস??
বেঁচে আছি আপু!! ভাইয়া কোথায় আসে নি!!
রিদ বাংলাদেশ এ নেই রিদি।কাল আসবে।
ওহহ!!!
রুপালির রিদিকে দেখে কান্না পাচ্ছে।মা হয়ে এতোটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে।পেটের বাচ্চাটাও নেই রিদির।জানতে পারলে কি হবে!!এখন ওর মনে কি চলছে?মেনে নিবে সব!তীব্রর ভালবাসা নাকি ধোঁকা কোনটা বেছে নিবে।তীব্র কি আদো বেছে নিতে দিবে!!
আমির চুপচাপ থেকে এসে রিদির পাশে বসল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই রিদি তাকালো তার দিকে।আমির কি বলবেন কি করবেন ভেবে পেলনা।ছেলের দিকটা বুঝলেও রিদির দিক দিয়ে রিদির কাছে ধোকা মনে হওয়াটা স্বাভাবিক।তীব্র কি করবে!!
সবার মনে প্রশ্ন কিন্তু উওর নেই।সবাই টুকটাক কথা বলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। ডঃআশিক রিদিকে চেক আপ করছেন।রিদি কিছুটা সুস্থ শুনে সবার মনে প্রশান্তি বয়ে যায়।
চৌধুরী বাড়িতে এসেছে রিদি।আসে নি তীব্র জোর করেই নিয়ে এসেছে ঘুমের মাঝে। আপাতত সে রিদি কে উওজিত করতে চায় না।তাই ঘুমের মাঝেই নিয়ে এসেছে।গাড়িতে নিজের কোলে করেই নিয়ে এসেছে তীব্র।ঘুমের মাঝেই অভ্যাস অনুযায়ী তীব্রর বুকে মাথা দিয়ে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছে রিদি।রিদির ঘুম গভীর আর ওষুধের কারনে ঘুম আরো গভীর হয়েছে এতে কিছু বুঝতে পারে নি রিদি।
সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গেছে রিদির।উঠতে চেয়ে বুঝল উঠতে পারছে না। অভ্যাস অনুযায়ী জানে এটা মজনু।রিদি পিটপিট করে চোখ খুলে পাশে তাকালো। মজনু উরফে তীব্র কে দেখে রাগ হলো।মনে পড়ল সব। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল এটা হসপিটাল না।আর না এটা তাদের রুম।তাহলে!!রিদি তীব্র কে ছাড়তে চাইলে তীব্র আরো শক্ত করে ধরে।রাগ হলো রিদির।কেন যেন সহ্য হচ্ছে না তীব্র কে।
ছাড়ুন!!!!
তীব্র আরো একটু গভীর ভাবে জরিয়ে গলায় মুখ গুঁজে বলল।
ছাড়ব না!!
রিদির অসহ্য লাগছে।অন্য সময় হলে মুচকি হেসে মজনুর মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু খেত কপালে।
তো মেরে ফেলুন। আমাকে মারা তো আপনার পছন্দের কাজ তাই না!মারেন!! অসহ্য লাগছে আপনাকে!! মুক্তি দিন প্লিজ।
খানেক বাদেই রিদির চিৎকার শুনতে পেল তীব্র। মুচকি হেসে গলায় কামড়ের জায়গায় চুমু দিল।রিদি তীব্র কে সরাতে চেয়েও পারল না।গলার নিচে ব্যাথা করছে।রিদি তীব্র কে সরাতে চাইলেও যখন পারল না তখন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।
বিশ্বাস করুন আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না। ছাড়ুন।
আপনার আমাকেই সহ্য করতে হবে বেগমজান।
একদম আমাকে বেগম বলে ডাকবেন না। সেখানে মানুষ টাই মিথ্যা।সেখানে বিয়ে কিভাবে সত্যি হতে পারে।মজনু নামে কেউ কখনো ছিলোই না।বিয়ের ও কোন মূল্য নেই।
আপনার বিয়ে মজনুর সাথে হয়নি। বিয়ের রেজিস্ট্রেশন পেপার এ আপনার বিয়ে তীব্র চৌধুরীর সাথেই হয়েছে।কবুল বলার সময় তীব্র ই বলা হয়েছে।আপনি শুনেন নি।আপনি তো স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলেন। তাছাড়া আপনার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে এই বিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা ছিল না। কেউ খেয়াল ই করে নি। অবশ্য আমি খেয়াল করাই নি।আপনাকে বিয়ে করা সব আমার প্ল্যান মোতাবেক হয়েছে।
আপনি একজন ঠক, প্রতারক, ধোঁকাবাজ!!
যাই বলেন সবটাই আপনার!!
মিনিমাম লজ্জা থাকা উচিত এসব বলতে। এতটুকু ও অপরাধ বোধ আছে আপনার??
না নেই!যা করছি সব নিজে ভালো থাকতে করেছি ।আপনি আমার ভালো থাকার কারন হয়ে দাঁড়ালে এতে আমার কী দোষ। আমি ভীষণ স্বার্থপর।আমি যাতে ভালো থাকবো তাই চুজ করেছি।সেই ভালোথাকা টা আপনাতে হলে আমার কি দোষ বলুন!!
আমাতে আপনার ভালোথাকা!এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছেন! ছেড়ে দিন প্লিজ। মুক্তি দিন আমাকে।আমাকে তো আপনার ভোগ কর…….
উমমমমমম………
রিদির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল যন্ত্রনায়।তীব্র রেগে গেলে যে তাকে এভাবেই শাস্তি দেয় তা জানে রিদি। ঠোঁট ছেড়ে গলায় দাঁত বসিয়ে দিল। একটু নিচে দাঁত বসিয়ে সেভাবেই রিদির উপর পড়ে থাকল।জোরে শ্বাস নেওয়ার ফলে বুকের কাছে বারি খেল গরম নিঃশ্বাস।রিদি তীব্র কে আবারো সরাতে চেয়েও পারল না। শরীর এ আর শক্তি নেই।রিদি শুয়ে থেকেই চোখের পানি ফেলল।
একটু থেমে তীব্র বলল,
আপনাকে আপনি বলে ডাকি কেন জানেন বেগমজান?রিদি চুপ থাকল।
৩০ বছরের একজন পুরুষ তার থেকে ১২ বছরের ছোট এক যুবতী নারীকে আপনি বলে তখনি সম্বধোন করে ,যখন সেই নারিটির প্রতি পুরুষের মনে সন্মান,বিশ্বাস ,ভালোবাসা,শ্রদ্ধা থাকে। যেমনটা আমার মনে আপনার প্রতি সৃষ্টি হয়েছে।আমি বাধ্য হয়েছি আপনাকে আপনি সম্বোধন করতে। পুরুষ শুধু নারীর দেহ ভোগে সন্তুষ্ট হয় না, পুরুষ নারীর মোহময় রুপেই সন্তুষ্ট হয় না,
পুরুষ সন্তুষ্ট হয় নারীর ব্যাক্তিত্বে,তার নিঃস্বার্থ ভালবাসায়।
রিদির চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জল।
আপনাতেই আমি পর্ব ২৮
আপনি তীব্র কে কখনো ভালোবাসতেন না বেগমজান।তীব্র কে কেউ নিঃস্বার্থ ভালোবাসতো না। সবার চাওয়া তার টাকা, গাড়ি,বাড়ি বাহিয্য সৌন্দর্য, পাওয়ার।আমি তো ছিলাম ও তাই” হাটলেস”আপনি কেন আসলেন আমার জীবনে!! আমি একজন কে হারিয়ে এখন আর আপনাকে হারাতে পারব না।
রিদির মাথায় হারানোর কথা ঢুকলেও বুঝল না বিষয়টা।