আপনাতেই আমি পর্ব ৪

আপনাতেই আমি পর্ব ৪
ইশিকা ইসলাম ইশা

পুরো রুম তছনছ করেও রাগ কমছে না তীব্রর।কাটা জায়গা থেকে দরদরিয়ে রক্ত পড়ছে।তার ওপর ভাংচুর এর কারনেও ক্ষত হয়েছে বেশ। নিজেকে রক্তাত করেও থামছে না যেন।যতবার রিদিকে মারার দৃশ্য সামনে ভাসছে ততবার ভাঙা জিনিস গুলাও ভাংচুর করেছে আবার।
ঙ্গানহীন রিদির পাশে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে রুপালি। রিদির গলায় আঙ্গুলের ছাপ পড়ে আছে।পাশেই বসে আছে হাসেনা বেগম।তীব্রর করা কাজে তিনি নিজেও হতবাক।আমেনা বেগম বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে।যেন তিনি চরম বিরক্তকর কোন কাজ দেখছেন।ডাক্তার বলেছে কথা বলতে সমস্যা হতে পারে কিছুদিন।

আমির রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ছোট মেয়েটার বয়স ই বা কতো!অথচ একটার পর একটা কাহিনী হতে আছে।ছেলের রাগ সম্পর্কে অবগত আমির চৌধুরী।ছেলে তার ঠান্ডা মাথায় খুন করলেও এমন ভান ধরে যেন সে কিছুই করেনি।খুনের খ ও জানে না।তার এমন শান্ত ছেলের ভংয়কর রুপ দেখে আমির বাকরুদ্ধ।তবে রাগের কারন কি?এটা যে রিদিতা ওর ক্ষত পরিষ্কার করেছে?নাকি আমেনার মারের জন্য?ছেলেকে নিয়ে তার দুশ্চিন্তার এমনিতেই শেষ নেই।এমন বেপোরোয়া ছেলেকে কিভাবে ভালো করবে তিনি।রাখতে কি পারবে না তিশার কথা।মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই আরো বেশি একরোখা হয়ে গেছে তীব্র। তবে কি শেষ কথা রাখতে পারবে না আমির।ছেলেকে কি সে একটা নরমাল জীবন দিতে অক্ষম।এতো কিছুর মাঝে এই ছোট্ট মেয়েটার কি দোষ।মায়ের অবহেলায় মেয়েটার দিকে তাকানো দায়।বাবা আজ চার বছর নিখোঁজ।বাবা মা দুনিয়ায় সবথেকে নিরাপত্তার জায়গা। সেখানেও মেয়েটা নিরাপত্তা তো দূর, বেঁচে থাকাও দায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভেবেছিল আমেনার সাথে কথা বলে রিদি কে নিজের কাছে রেখে দিবে। কিন্তু পরিস্থিতি যেন হাতের বাইরে। মেয়েটার মায়াবী মূখের দিকে তাকালে মনে পড়ে তার স্ত্রী তিশা কে।সেও ছিল এক শ্যামকন্যা। প্রথম বাবার আদেশ এ বিয়ে করলেও তিশাকে মেনে নিতে পারেনি আমির। কিন্তু ধীরে ধীরে তিশাই তার জীবন হয়ে দাড়ায় ।তিশা মজার ছলে বলত, “আমি না থাকলে কিভাবে বাঁচবেন সুন্দর পুরুষ” আমিরের রুহ কেপে উঠতো তখন। কিন্তু আজ তাকে ছাড়ায় বেঁচে আছে।ছেলেদের জন্য।তিশা যে তাকে ছেলেদের দায়িত্ব দিয়ে গেছে।আগলে রাখতে বলেছে। কিন্তু সে কি পারছে ছেলেদের আগলে রাখতে।তার ছেলে কারণ ছাড়াই আঘাত করল বাচ্চা মেয়েটাকে।তারমানে সে ব্যার্থ “বাবা”হিসেবে।

আমিরের ভাবনার মাঝেই রিদি চোখ খুলে। রুপালি বোনকে দেখে উদগ্রীব হয়।
খারাপ লাগছে রিদি।কষ্ট হচ্ছে?রিদি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে।হ্যা তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। সত্যি ভীষণ ই কষ্ট হচ্ছে।তবে সেটা কি শুধু শরীরের নাকি মনেও।রিদির চিৎকার করে কান্না করতে হচ্ছে করছে। কেন ?এতো কিছু তার সাথেই কেন? কিন্তু সে কান্না করছে না।ঐ যে বলেছিলাম না তার কান্নারাও এখন বিশ্রাম করতে চাইছে।তারাও হয়তো ঝরতে ঝরতে ক্লান্ত।রিদি বোনের দিকে তাকিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেই মনে হচ্ছে গলা ছিড়ে যাচ্ছে।তবুও অনেক কষ্টে বলল,
আমি ঠিক আছি আপু!!
রুপালি রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।আমির অপরাধীদের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।রিদিতার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে দেখে বলে,

কথা বলতে হবে না।তুমি বিশ্রাম কর।রিদি তাকালো আমিরের দিকে।একটু হাসার চেষ্টা করে মাথা দুলালো।হাসেনা বেগম উঠে সার্ভেন্ট কে সুপ বানাতে বলল।রিদি চারপাশে চোখ বুলাল। মাকে তার নজরে এলো না।আমির বুঝতে পারল বিষয়টা।এগিয়ে এসে পাশে বসল।হাত বুলাল মাথায়।
চিন্তা করো না জলদি ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া শুনেছি তুমি নাকি ভীষন সাহসী।একবার নাকি তোমাদের বাসায় আসা চোরকে ওড়াধুরা মেরেছিলো।আমার ছেলে চোর না ও হলো ডাকাত।ডাকাত বাহিনীর সর্দার।ওমন ডাকাতকে উচিত শিক্ষা দিতে তোমাকে আগে বড় হতে হবে।
রিদি বুঝল আমিরের এসব কথার মানে।তাই সেও হাসল।মামু তার ভীষণ ভালো।রুপালি সুপ বোনকে খাইয়ে দেয়।আমির রিদিকে খেতে দেখে বেরিয়ে আসে।
সময় তখন দুপুর,
খাওয়া শেষ হলেও সবাই ব্যাস্ত।আমির তদারকি করছে এর মাঝেই দেখা হয় তীব্রর পিএ লাবিব এর সাথে।আমির সব দেখে বলে।ঘরের কিছু আস্ত আছে??

লাবিব কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা! সত্যি বলতে আস্ত কিছুই নাই। এবার রাগ যেন একটু বেশিই ছিল, একটু বেশি না না অনেক বেশিই ছিল।তীব্রর উঠিত রুমের সব কিছু পাথরের তৈরি করা।রাগ হলেও তাহলে সমস্যা নাই।
আসলে স্যার রাতের মধ্যে ঘর ফকফকা চাই তীব্র স্যার।তাই বেশি কর্মচারী লাগবে।ঘরের বেশিরভাগ জিনিসের কাচ ভেঙে গেছে।দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো আমির।লাবিব চলে গেল রুমে।
সন্ধ্যা তখন৬ টা,
রাদিফের বাসা থেকে ফিরে আসে রিদ।আজ তীরের হলুদ অনুষ্ঠান তাই রাদিফ ও এসেছে।পুরো বাড়ি সুন্দর করে সাজানো। মানুষ ভরপুর হয়ে আছে।মেহমান আসতে শুরু করেছে।রিদিকে একটা শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে হালকা সাজিয়ে দেয় রুপালি। হলুদ অনুষ্ঠানের জন্য হলুদ সবুজের মধ্য শাড়ি পড়েছে রিদি।রুপালি সাজিয়ে দিয়ে বলে,
মাশাআল্লাহ তোকে তো ভীষন সুন্দর লাগছে রিদু।

রিদিতা বোনের কথায় তাকালো আয়নার দিকে।নিজেকে দেখল কিছুক্ষণ।এরপর তাকালো বোনের দিকে।বুকে ঝর তোলার মতো সুন্দর সে।যেন কল্পনার কোন রাজকন্যা।আল্লাহ যেন সব সৌন্দর্য দিয়ে তাকে বানিয়েছে।
তোমাকে মারাত্বক লাগছে আপু!!
রুপালি হাসল।দুজনে রেডি বের হয়ে ছাদে উঠার সময় দেখা হয় রিদ আর রাদিফের সাথে।ভাইকে দেখেই রিদি কিছুটা ভয় পেল।রিদ অনেকটা রাগী।তাছাড়া সে বোনকে ভীষণ ভালোবাসে।এমন সময় যদি রিদ কিছু জানতে পারে তাহলে তো সর্বনাশ। চারদিক মানুষ জন।রিদি নিজের গলার ফুলের মালাটায় হাত রাখল।
রাদিফ:এই তোরা এতো আটা ময়দা মাখছিস কেন??মানুষকে মেরে ফেলার চিন্তা করছিস নাকি?রাদিফের কথায় রুপালি হাসল।

আমরা তেমন কিছুই করি নি ভাইয়া। আশেপাশে দেখেন সবাই বস্তা বস্তা মেকআপ নিয়ে ঘুরছে। রাদিফ হাসল।তার এতো তাকানোর সময় কোথায়।সেতো এক শ্যামকন্যাতে আটকে আছে।রাদিফ আড়চোখে তাকালো শ্যামকন্যার দিকে। মেয়েটা এতো মায়াবী কেন!শাড়িতে মেয়েটাকে একদম বড় বড় লাগছে। হলুদ, সবুজ শাড়িতে এতো মারাত্মক লাগছে মনে হচ্ছে সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা।
এ দিকে রিদিতা রিদ কে নিয়ে ভয়ে আছে।কেউ যে তাকে দু চোখ ভরে দেখছে এতে তার কোন ধ্যান নাই।রিদ বোনের ভয়ার্ত মুখ দেখে বলে,
কি হয়েছে?

রিদি যেন চমকে উঠে। তাৎক্ষণিকভাবে মাথা দোলায় কিছু হয়নি।রিদ বোনের মাথায় হাত রেখে বলে,চল সবাই উপরে গেছে।ওরা চারজন উপরে চলে আসে।চারদিকে এতো সুন্দর সাজানো দেখে রিদির মন খারাপ চলে যায়।তাই এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে।
সমস্যা কি আপনার বার বার আমার পথ আটকাচ্ছেন কেন?রুপালি কথাটা বলেই তাকালো সামনে থাকা এক যুবক এর দিকে।সে যে রুপালির রুপে মুগ্ধ হয়ে ঘুরছে তা বেশ বুঝতে পেরেছে রুপালি।চরম বিরক্ত সে।এতো সাজ যাকে দেখার জন্য সে নাই আর বাকিদের এতো আদিক্ষেতা সহ্য হচ্ছে না যেন।এরি মধ্য নাকি অনেকে রিদির বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত পাঠানো শেষ করেছে।ভাবা যায়।হ্যা যাই তো।এই যে রুপালির সাথে হচ্ছে।রুপালি ছেলেটাকে ড্যাবড্যাব করে তাকাতে দেখে অন্যদিকে হাটা ধরে।সে বিরক্ত চরম বিরক্ত!

রিদি ঘুরতে ঘুরতে ছাদের এক কোনায় এসে দাড়ায়।এই সাইডে মানুষ তেমন নেই।ফেইরি লাইটের আলোয় রিদিকে আরো একটু সুন্দর লাগছে। হলুদ আলো যেন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে।হাতের কাচের চুরি রিনঝিন শব্দ তুলছে। ঠোঁটের কোনে ঝুলছে হাসি।রিদি এদিক ওদিক তাকাতেই চোখ যায় বেকানো বিল্ডিং এর দিকে।এই সাইড থেকে বিল্ডিং টা বেশ কাছে। কাঁচের তৈরি বিল্ডিং টায় সাদা আলোতে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে সেখানে দাড়িয়ে আছে তীব্র চৌধুরী।তবে তার সাথে এমন কিছু দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় রিদির।তীব্র কাঁচের তৈরি বিল্ডিংয়ের ঘরের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।বেলকনির লাইটার কিছুটা অবঝা হলেও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছে রিদি।একটা মেয়ে একদম ঘনিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তীব্রর সাথে।তীব্রর দুহাতের মাঝে আবদ্ধ হয়ে পা উঁচিয়ে তীব্রর গলায়,বুকে কিস করছে।হাইট হয়তো একটু কম হবে তাই মুখ পর্যন্ত ঠাওর করতে পারছে না।পা উঁচিয়ে গলা অবধি গেছে।রিদি দেখল তীব্র মেয়েটাকে ছুঁয়েও নি।সে একটু ঝুকে কাঁচের বেলকনির দেওয়ালে দু পাশে হাত রেখে আছে।মেয়েটা হাতের মাঝে ঢুকে দাঁড়িয়েছে। শার্টের কলার টেনে তীব্র কে নিচু করতে চাইছে কিন্তু পারছে না।তীব্র যেন স্থির হয়ে আছে।রিদির এবার চোখ গেল তীব্রর মুখের দিকে। কেঁপে উঠলো রিদির পুরো শরীর।তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।বুক কাঁপল।তীব্রর ধারালো দৃষ্টি রিদিকে স্ক্যান করছে।চোখ,মুখ শান্ত তীব্রর। মেয়েটা যে তাকে বারবার টানছে সেদিকে খেয়াল নাই। আর না সে বিরক্ত হচ্ছে।আর না তাকে সরাচ্ছে।

রিদি দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।কেমন ভংয়কর দৃষ্টি তার।তাকালেই পুরো শরীর কেঁপে উঠে।রিদি আবারো তাকালো তখনো তীব্রর দৃষ্টি তার দিকেই। এভাবে দেখে কেন?বুঝে না রিদি।রিদি চোখ সরিয়ে আসতে গেলেই চোখ যায় সকালের সেই ক্ষতের দিকে।সাদা শার্টের হাতা লাল রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে সেদিকে বিন্দুমাত্র নজর নেই।রিদির দৃষ্টির পরিবর্তন ঘটল।সে রেগে তাকালো তীব্রর দিকে।মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসল শব্দ “নষ্টা পুরুষ”ছিই চাহিদা মেটাতে নিজের ক্ষতের ও খেয়াল করে নি।রিদির দৃষ্টির পরিবর্তন দেখে ভু কুঁচকে রিদির দৃষ্টি অনুসরণ করে তীব্র তাকালো তার হাতের দিকে,রক্ত পড়ছে দেখেও তার তেমন কোন ভাবাবেগ নাই।সে আবারো একই দৃষ্টিতে তাকালো রিদির দিকে।মেয়েটা এখনো তাকে টানছে আর হয়তো কিছু বলছে।রেগে গেছে হয়তো।রেগে মেয়েটা রিদের ক্ষতের জায়গায় ঘামচে ধরে।রিদি চোখ খিচে বন্ধ করে নেই। আল্লাহ না জানি কতো ব্যাথা করছে।রিদি চোখ খুলে দেখে তীব্র সেভাবেই আছে।হাত দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছে।রিদি এবার সহ্য করতে না পেরে জোরে বলে,

“শুনেন আপু ওনার হাত থেকে রক্ত পড়ছে”_কথা শেষ করেই রিদি চলে আসে সেখান থেকে।জোরে বলায় মেয়েটা শুনতে পেয়েছে হয়তো।না পায় নি। রিদির আর এসব ভাবতে ইচ্ছে করছে না।সকালের গুলি টা যদি তার উদ্দেশ্যেই মারা হয় তাহলে তীব্র তার জীবন বাঁচিয়েছে।আর ক্ষত টাও তার জন্যে ই হয়েছে।
রিদির চোখ টলমল করল।কেন কেউ তাকে মারতে চাইবে।তাও অচেনা জায়গায়। আচ্ছা তীব্র ভাইয়াই লোক দিয়ে তাকে মারতে পাঠায় নিতো। কিন্তু সে মারতে পাঠালে বাচাবে কেন?জীবনের হিসাব কখনোই মিলাতে পারে নি রিদি।মা নামক ব্যাক্তির অত্যাচার।তার ওপর তীব্রর ব্যবহার।তার দোষ কোথায়।কেন করল তীব্র এমন।সব ভেবে রিদির দম আটকে আসছে।উপরে অনেক মানুষ তাই নিচে নেমে আসে।ঘাসের উপর বেঞ্চ এর মতো জায়গায় বসে পড়ে রিদি।ঢুকরে কেঁদে উঠে। বার বার শুধু একটাই প্রশ্ন এতোকিছু তার সাথেই কেন?আল্লাহ কেন এতো কষ্ট লিখে রেখেছে।আর কতো কষ্ট পাওয়া বাকি তার??

হঠাৎ ই মনে হচ্ছে কেউ পাশে বসে আছে। আশেপাশে তেমন কেউ নেই।পাশে কে বসছে! ভেবে তাকাতেই চমকে উঠে।ভয়ে কেঁপে উঠছে শরীর।দুরু দুরু করছে বুক।তখনকার গলা চেপে ধরা সময়টা মনে হতেই ভয় বাড়ছে রিদির।সে শুকনো একটা ঢোক গিলে তাকালো আশেপাশে।না কেউ নেই। কিন্তু তীব্র হুট করে এখানে কি করছে?আর মেয়েটা কোথায়?আবারো কি তীব্র তাকে মারবে! জোরে চেঁচিয়ে কথা বলেছে তাইকি এখন আবারো মারবে।সে তো ভালোর জন্যই বলেছে।সকালেও সে শুধু ক্ষত পরিষ্কার করছিল যার কারনে না চাইতেও হাত ধরতে হয়েছে। তার হাত কালো বলে কি তীব্র কে ধরা উচিত হয়নি! সেই জন্যই কি তখন ওভাবে গলা চেপে ধরেছে। কিন্তু সেতো রক্ত বন্ধের চেষ্টা করছিলো।

এখন হয়তো তাদের পারসোনাল সময়ে বাধা দিয়েছে তাই মারতে এসেছে। কিন্তু এবারো তো সে রক্ত দেখেই বলেছে।রিদির বুক কাঁপছে।না চাইতেও ডুকরে কেঁদে ওঠে।তবে আওয়াজ হচ্ছে না।
এতক্ষণ রিদি ওর মতো ভাবলো।বেশ কিছুক্ষণ পরও তীব্র কিছু বলছে না দেখে চোখ তুলে দেখে তীব্র আগের মতো বসে আছে।না এবার তার দিকে তাকিয়ে নেই।দৃষ্টি তার সামনে। স্ট্যাচুর মতো বসেই আছে।বেঞ্চ এ বসে উড়ুতে দুই হাত ভর করে আছে। শার্টের বোতাম ২_৩টা খোলা তার ফলে বুক দেখা যাচ্ছে।রিদি এবার হাতের দিকে তাকালো।এপাশে থাকায় ওপাশের হাত দেখতে পাচ্ছে না রিদি।চিন্তা হলো রিদির ক্ষতের জন্য।তবে চিন্তা সাইডে রেখে মস্তিস্ক বলছে এখান থেকে পালা রিদি এই লোকের ভরসা নেই।হুট করেই গলা চেপে ধরতে পারে।
রিদির ভাবনার মাঝেই তীব্র ঘুরতেই।রিদি ভয়ে এবার চোখ খিচে বন্ধ করে বলে,

মারবেন না প্লিজ।গলা এখনো অনেক ব্যাথা করছে।আমি জেনে শুনে আপনাদের ব্যাক্তিগত সময়ে বাধা দেয়নি।রক্ত দেখে শুধু বলেছিলাম।সত্যী বলছি।আমি আজকে থাকতাম না শুধু রিদ ভাইয়া ছিল না তাই।আর মামু আমাকে যেতে দেয়নি।আমি চলে যাব এখুনি চলে যাব। আর কোনদিন আপনার সামনে আসবো না।তবুও মারবেন না প্লিজ।
কথাগুলো বলে রিদি থামে।থামার ৫ মিনিট পরও কোন সাড়া না পেয়ে চোখ খুলে দেখে তীব্র ঘুরে তাকিয়ে আছে তার দিকে।রিদি ভয় পেয়ে শুকনা ঢোক গিলল।তীব্র ওপাশ থেকে একটা বক্স এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ব্যান্ডেজ করে দাও”
রিদি তাৎক্ষণিক ভাবে জবাব দেয়।না না আমি করব না।কালো হাতে ছুবো না আপনাকে।
“সকালের কথা ভুলো নি নিশ্চয়!”তীব্রর কথায় কান্না পেলেও কাদলো না রিদি।আসলেও সে ভয় পেয়েছে।একটুর জন্য তখন মনে হচ্ছিল সে শেষ।

নাও শুরু করো জলদি,আমার এতো সময় নাই।বলে রিদির দিকে এগিয়ে আসলো তীব্র।আগানো দেখে ভয় পেল রিদি।তবুও কাপা কাপা হাতে ব্যান্ডেজ করতে লাগল। শার্টের হাতা তুলতে হবে কিন্তু কিভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছেনা রিদি।তীব্র নিজেই শার্টের বোতাম খুলে ক্ষত হাতটা এগিয়ে দিল।
রিদি তীব্রর হাতটা ধরতে গিয়েও ধরল না। শুধু তুলোতে ওষুধ নিয়ে লাগাতে থাকলো।ব্যান্ডেজ করার সময় ও যতসম্ভব চেষ্টা করল যেন ছোয়া না লাগে। তবুও লাগবে তো অবশ্যই।ব্যান্ডেজ শেষ হতেই বলল তীব্র,
একটা রাতের জন্য কতো চাও??
রিদি বুঝলো না কিছু।তাকালো তীব্রর দিকে।
তোমাকে ফিগার বেশ ভালো।
রিদি এতক্ষণে কথাটা বুঝল।তাই কি তার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে।ছিইইই….রিদির রাগ হলো।
হয়ে গেছে।এখন আমি আসছি।
রেট কতো নিবে?কতো চাও?
রিদি এবার রেগে বলল,

আপনি একটা নষ্টা পুরুষ।ছিইইই।এসব বলতে লজ্জা করছে না।এতো যদি চাহিদা থাকে তাহলে পতিতালয় তো আছে আপনাদের মতো হায়েনাদের জন্য।আমার খারাপ লাগছে আপুর জন্য। ভালোবেসেছে আপনাকে।কথা চলছে আপনাদের বিয়ের অথচ আজ আপনি একটা মেয়ের সাথে আর এখন আমাকে এসব বলতে লজ্জা করছে না।আপুর মতো ভুবন ভোলানো সুন্দর যদি আপনাকে আটকাতে না পারে তাহলে আপনার অবস্থান পতিতালয়ে ই হওয়া উচিত।এসব কথা শোনার চেয়ে সকালের মৃত্যু টা আমার কাছে ভালো ছিল। বাঁচিয়ে দিয়ে নিজের হাতেই মেরে ফেলতেন।কেউ কিছু বলত না আপনাকে।কথাটা বলেই রিদি দৌড়ে চলে গেল।
তীব্র রিদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,

“বালের জীবন বালের সব প্যারা”ফাসিয়েই ছাড়ল এই মেয়ে টা।বয়স তো গুনে গুনে ষোল।অথচ রেট বুঝে।না বুঝলে কি হতো!!ছ্যা.. ইচ্ছে করছে সবগুলো কে একসাথে মেরে শান্তি পেতে।কেউ শান্তিতে থাকতে দিবে না।বলে আবারো রিদির যাওয়ার দিকে তাকালো।ঠিক তখনই লাবিব এসে বলল,
স্যার মেয়েটার ঙ্গান এখনো ফিরে নি।কি করব??
তীব্র কটমট করে বলল,
ভোগ কর।বাল এক থাপ্পরেই বেহুঁশ।
আমি নারীর প্রতি আসক্ত না নারী আমার প্রতি আসক্ত।খুব তো বলে গেল,পতিতালয়ে যেতে।নারীর জন্য ও পতিতালয় খোলা উচিত তাহলে।

আপনাতেই আমি পর্ব ৩

লাবিব কিছু বুঝল না। কিন্তু প্রশ্ন করার সাহস ও পেল না।স্যার রেগে আগুন।কিছু বললেই বিপদ।তবে পতিতালয় এ যাওয়ার কথা বলার মতো সাহস করল কে??সেকি এখনো বেঁচে আছ?নিজের ভাবনা শেষ করে হাতের দিকে তাকা লাবিব।স্যার নিজে ব্যান্ডেজ করেছে।যাক তাও তো করেছে।ভেবেই সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে লাবিব।

আপনাতেই আমি পর্ব ৫