আপনাতেই আমি পর্ব ৬৪

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৪
ইশিকা ইসলাম ইশা

নিজের কেবিনে এসে ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে রিদি।নীর কলেজ থেকে এসে বসে থেকে কিছু একটা ভাবছিল।ঠাসসস শব্দে চমকে উঠে তাকাল রিদির দিকে! এদিকে রোজ ঠোঁট ফুলিয়ে কাদছে!রিদির কোলে তো রোজ কখনো কাঁদে না।তাহলে!!
কি হয়েছে আপু রোজ কাঁদছে কেন?
জানি না!একে নিয়ে আমার সামনে থেকে যা!এতো প্যারা আর আমি নিতে পারছি না!!

রোজ কে নীরের কোলে দিয়ে রিদি ওয়াসরুমে চলে যায়।রোজ নীরের কোলে আরো কেঁদে ওঠে।নীর কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রিদির ব্যবহারে। তবে রোজ কে থামাতে বাইরে বের হয়ে আসে।
নীর রোজ কে থামাতে এদিক ওদিক ঘুরছে।হুট করেই কোথা থেকে ছুটে আসে বলিষ্ঠ দেহী একজন সুদর্শন পুরুষ। নীর তীব্র কে দেখে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে!! তীব্র অবশ্য দেখার মতোই সুন্দর!!!তীব্র রোজ কে নীরের কোল থেকে নিয়ে বুকের সাথে আগলে নেয়। কাঁদো কাঁদো মুখ বাবার দিকে চেয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কাদছে রোজ।তীব্র মিষ্টি হেসে এটা ওটা বলতেই থেমে যায়।নীর হতবাক হয়ে চেয়েই আছে তীব্রর দিকে। কিছুক্ষণ পর নীর বিষ্ময় নিয়ে বলে,
আপনি!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তীব্র নীর কে একবার দেখে।আবারো রোজের দিকে তাকাই।মেয়ে তার কেঁদে কেঁদে কি অবস্থা করছে।ইসস।
আ প নি!!তো!!!
আপনিই সেদিন আমার জান বাঁচিয়ে ছিলেন!!
তীব্র ভু কুঁচকে তাকাল নীরের দিকে।নীর কে চিনতে পেরে তীব্র বাঁকা হাসল,
ওহহ তুমি!!আমাকে চিনলে কিভাবে!!!
“সেদিন ঙ্গান হারানোর আগে আপনাকে দেখেছিলাম!
“হুম বুঝলাম !!তুমি এখানে!!
যদিও তীব্র সব জানে তবুও আরকি!!
“আমি রোজ কে থামাতে বাইরে এসেছিলাম।কি আশ্চর্য!!আপনার কোলে থেমে গেল। অপরিচিত কারো কাছে যায় না রোজ।আপু ছাড়া তো কিছু বোঝে না।
তীব্র বিস্তর হেঁসে মেয়ের দিকে তাকল,
তুমি নরমাল কথা বলছ !!এখন ভয় করছে না আমাকে!!
“নীর মুচকি হেসে বলে,

না!!আপনি আমার জীবনে সেদিন ফেরেশতা স্বরুপ এসেছেন।আপনি না আসলে আমি আজ বেঁচে থাকতাম না!আপাকে লক্ষ,কোটি ধন্যবাদ দিলেও কম হবে!
“তবে যে ঙ্গান হারিয়ে ফেলেছিলে!!
“সে তো সব মিলিয়ে! চোখের সামনে ওমন কিছু দেখা আমার মতো সাধারণ মেয়ের ক্ষেত্রে অসম্ভব!!আপনি জানেন আমি ১মাস প্রায় কথা বলতে পারি নি।
তীব্র হাসল,
“আমার উদ্দেশ্য কিন্তু তোমাকে বাঁচানো ছিল না!
“সে আমি বুঝতে পেরেছিলাম!ওই শয়তান গুলো নিশ্চয় আপনার জানের কিছু করেছিলো তাই আপনি!!
তীব্র মেয়ের দিকে তাকিয়েই বলল,

” কিছু করেনি!করতে চেয়েছিল!
মেয়েটা কতো লাকি মনে মনে ভেবে বলল,
“নিশ্চয় আপনার ওয়াইফ!
তীব্র মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে মুচকি হাসল,
ইয়েস!!মাই ওয়াইফ!!
নীর মিষ্টি হেসে বলল,
আপনার ওয়াইফ খুব লাকি ভাইয়া!
তীব্র এবার নীরের দিকে তাকিয়ে বলল,
উঁহু!! আই আম লাকি পারসন ইন দি ওয়ার্ল্ড!!বিকজ সি ইজ মাইন।
নীর মুচকি হাসল।মনে মনে ভাবল ভালবাসা কতো সুন্দর!যদি জীবনে সঠিক মানুষ আসে!!
তা আপনি এখানে!! নিশ্চয় ভাবি এখানে আছে তাই না!!
তীব্র বিস্তর হাসল,

হ্যাঁ!!
“কিছু মনে না করলে কে সেই লাকি মেয়ে তা কি জানতে পারি!!
তীব্র রিদির কেবিনের দিকে ইশারা করে বললো,
“ডক্টর রিদিতা তীব্র চৌধুরী!!!
নীর চমকে উঠে তাকাল রিদির কেবিনের দিকে। বিষ্ময়কর চাহনি নিয়ে তীব্র কে দেখল।মাথা ঘুরে উঠল নীরের!!
তীব্র চৌধুরী! আবার কি!!ডক্টর রিদিতা তীব্র চৌধুরী!! তার মানে আপুর বর তীব্র চৌধুরী! মানে আপুর বর!!লাকি মেয়েটা আপু!!!
নীর চট করে বসে পড়ল চেয়ারে!আবার চট করে উঠেই জিঙ্গেস করল!
“আপনাদের ডিভোর্স…..
তীব্রর তাৎক্ষণিক জবাব,
হয় নি! হবেও না!
নীর আবারো ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল!তীব্র নীরের দিকে তাকিয়ে সরাসরিই বলল,

তোমাকে আমার সাহায্য করতে হবে!!
“”আ আ আমি!!
“ইয়েস তুমি!!
কিন্তু আপনি কি করেছেন যে আপু তিলে তিলে এতো কষ্ট পাচ্ছে!
সব বলব! আপাতত তুমি আমার একটা কাজ করো!!
কি কাজ!!
“তীব্র বাকা হাসল শুধু”

রিদি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে রোজ আর নীর কে না দেখে ভু কুঁচকে তাকাল!তীব্রর রাগ রোজের ওপর ঝারা ঠিক হয়নি। নিশ্চয় এখনো মেয়েটা তার কাঁদছে।রিদি বাইরে বের হয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখল নীরের কোলে ঘুমিয়ে আছে রোজ!!
রিদি কিছুটা অবাক হল!রোজ তো কারো কোলে ঘুমায় না তাহলে!!
রোজ কি ঘুমিয়ে পড়েছে!!
নীর মিষ্টি করে হেসে বলল,
হ্যা আপু!!!
রিদি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল রোজ ঘুমাচ্ছে।রিদি নীরের কোল থেকে রোজ কে নিয়ে কপালে আলতো করে চুমু দেয়।
সরি মামনি!!!রোজ মায়ের বুকের উষ্ণতায় যেন আরাম পেল।
আব আপু!!কি হয়েছে তুমি এতো টেনশনে ছিল কেন??
রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
পরে বলব!!
নীর আর প্রশ্ন করল না রিদির পিছু পিছু গেল।

সকাল বাজে ৫.৩০ রোজ ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করেছে।রিদি রোজকার মতো রোজকে ঘুম দেওয়ার জন্য বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।তখন কেবল ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।রিদি ঘুম ঘুম চোখে রোজ কে কাঁধে নিয়ে বেলকনিতে হাঁটছে।হুট করে কাউকে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে আবাক হয়ে তাকালো।এতো সকালে কে আসল!
রিদি একটু সামনে আসতেই লোকটা মাথার হুডিটা খুলে পাশের টেবিল থেকে পানি নিয়ে গটগট করে পানি খেল।রিদি ভালোমতো দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।তীব্র!!!এখানে!!চট করেই রিদির ভীষন রাগ হল।এই মানুষ এখানেও চলে এসেছে।আজ এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে। হসপিটালে তাকে টর্চার করে মন ভরছে না!!রিদি রেগে রোজ কে কোলে নিয়েই নিচে নেমে আসে।নিচে আসতেই চারদিকে গাড দেখে রাগ আরো বাড়ল!!সোজা তীব্রর সামনে এসে দাড়াতেই তীব্র মুচকি হেসে বলল,
কেমন আছেন জান! রোজ উঠে গেছে বুঝি দিন আমাকে দিন!!!

আপনি এখানে কেন??
তীব্র অবাক হয়ে বলল,
তো কোথায় থাকব?
রিদি রেগে কটমট করে বলল,
জাহান্নামে থাকেন।আমার পিছু ছাড়েন!কি চাইছেন আপনি!!আমাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিক!
তীব্র অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
তা কেন চাইব!!!
“তাহলে আপনি এখানে কি করছেন?কেন এসেছেন?এটা আপনার সো কলড শহর না এটা গ্রাম!এভাবে একটা মেয়েকে ডিস্টার্ব করা মানুষ আমাকেই খারাপ ভাববে!
“তাতে কি হয়েছে!!আমার বাসায় আমি থাকব না!!আর আমি আবার কোন মেয়েকে ডিস্টার্ব করলাম!!
“আপনার বাসা মানে!!

“হ্যাঁ পুরো বাসাটা কাল আমি কিনে নিয়েছি!!নিচ তলায় থাকছি জান!!
“কিহহহহ??আপনি??এখানে তো নীরের বাবা মা থাকত!!
কে থাকত জানা নাই !!!তবে আমি থাকছি এখন!!
রিদি কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলল,
“কি করেছেন ওদের সাথে!নীরের বাবা মা কোথায়??
তীব্র রিদির কোল থেকে রোজ কে নিজের কোলে নিয়ে বলল,
আপনি আমার কথা মতো চললে তাঁদের কিছুই করব না!!
রিদি অবাক হয়ে বলল,
মানে!!
তীব্র মেয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে আদুরে গলায় ধীরে বলল, আমার জান বাচ্চা!!এরপর রিদির দিকে তাকিয়ে বলল,

মানে খুব সোজা!!কে আমি?? তীব্র চৌধুরী!! তীব্র চৌধুরী নিজের কাজ করতে সব করতে পারে ।ওদের বাঁচাতে হলে আপনাকে আমার কথামতো চলতে হবে!ব্যাস!আর কিছু না!! তা না হলে!!!
কিহহহহহহহহহহহহহহহ্?????
রিদি চমকে উঠে গেটের দিকে তাকালো!!নীরের চিৎকারে রোজ নড়েচড়ে উঠলেও তীব্রর কোলে ঘুমিয়ে থাকে।নীর দৌড়ে এসে বলে,
ওনি কি বলছে আপু!! আমার বাবা, মা,ভাই কোথায়??
রিদি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো নীলের দিকে! এখানে আসার পর নীর আর ওর পরিবার তাকে একদম নিজের মেয়ের মতোই আগলে রেখেছে।আর আজ ওর জন্য তাঁদের জীবন ঝুঁকিতে!!নীর কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
আপু ওনি কে??আমার বাবা মা ভাই কোথায়???
রিদি ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,

কিছু হয় নি আন্টিদের!তুই চিন্তা করিস না!
নীর কেঁদে ওঠে,
আমার বাবা মাকে এই লোক কিডন্যাপ করেছে!! কিন্তু কেন??কে ওনি?বলো আপু কে ওনি??কি চাই তোমার থেকে? আমার বাবা মা ভাই ঠিক আছে তো!!আল্লাহ!!!বলো ওনি কে??বলো??
রিদি কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,
আমার হাজবেন্ড!!!মানে এক্স হাজবেন্ড!!!
সাথে সাথে তীব্র বলে,
ভুল!ভুল! আমার হাজবেন্ড!পর্যন্ত ঠিক আছে।আমাদের ডিভোর্স হয়ে নি।
রিদি চমকে উঠে তাকাল তীব্রর দিকে! তীব্র রিদির অবাক চাহনি লক্ষ্য করে মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁবুঝাল।
নীর অবাক হয়ে বলল,
তোমার হাজবেন্ড!!তাহলে আমার বাবা মাকে নিয়ে গেল কেন??
রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

তোকে পরে সব বলছি।এরপর তীব্রর কোল থেকে রোজ কে নিয়ে কটমট করে বলে,
“বলুন কি করতে হবে!!!
তীব্র পকেটে দু হাত গুজে বাঁকা হাসল।নীর তীব্র কে স্টাইল নিয়ে দাঁড়াতে দেখে না চাইতেই ড্যাবড্যাব করে তাকায়। মনে মনে ভাবল বলতে হয় ভাইয়ার মাঝে ব্যাপার ই আলাদা। সুন্দর তো সুন্দর আবার এক্সট্রা কিলার এটিটিউড।বাপরে!!!
প্রথম শর্ত:
রোজ কে আমি যখন ইচ্ছে কোলে নিবো,আদর করব, ইভেন আমার কাছেই রাখব। আপনি কিছু বলতে পারবেন না!রাজি!!!
রিদি রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
রোজ আমার মেয়ে আপনার না!!

তীব্র ভু কুঁচকে তাকাল রিদির দিকে,
মেয়ে আপনার একা না আমারও।আমি ছাড়া কি আকাশ থেকে টপকে আপনার পেটে পড়েছে!আপনি না ডক্টর!!!
নীর তীব্রর এমন বেফাস কথায় হা হয়ে তাকিয়ে আছে!!
রিদি বিরবির করে বলে,
অসভ্য!!!আমি বলতে চাইছি রিদির বায়োলজিক্যাল মা আমি না। কিন্তু ও আমার মেয়ে!!
তীব্র কথা বাড়াতে চাইল না!
রাজি না হলে কিন্তু!!
নীর ঝট করে বলল,
রাজি!আপু রাজি!!এই আপু তুমি রাজি না!!
রিদি নীরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
তারপর!!!
প্রিতিদিন আমার জন্য আপনি রান্না করে নিজে হাতে আমাকে দিয়ে যাবেন!আর সকাল সকাল আমার ঘুম ভাঙ্গাবেন!!
রিদি কিছু বলার আগেই নীর বলল,
হ্যাঁ! হ্যাঁ রাজি!!রাজি না আপু!!
রিদি আবারো দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।এই লোক ভীষণ ত্যারা! কিন্তু এই লোক চাই কি তার কাছে। ডিভোর্স হয়নি!!নাকি অন্য কিছু!!রোজের প্রতি এতো পসেসিভ ই বা কেন??
রাজি!!

তীব্র বাঁকা হেসে বলল,
গুড!৬.৩০ বাজে এখন আমি আর রোজ এখন ঘুমাবো! আপনার রুমে!!সঠিক সময়ে আমাদের ডেকে দিবেন।
রিদি বিরক্ত হয়ে বলল,
রোজ তো আপনার মেয়ে না!তবে এতো কেয়ার কেন করছেন??
তীব্র বাঁকা হাসল,

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৩

সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া জরুরি মনে করছি না!বলে রোজ কে কোলে নিতেই ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দিল রোজ। একবার বাবার কোল, একবার মায়ের কোল! বেচারি ঘুমাতে পারছে না। তীব্র আদুরে গলায় মেয়ে কি সব বলতে বলতে চলে গেল সিড়ি বেয়ে উপরে।রিদি তীব্রর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।এরপর নীর আর রিদি ও উপরে চলে গেল।

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৫