আপনাতেই আমি পর্ব ৭৭
ইশিকা ইসলাম ইশা
সেই কখন থেকেই মেয়েকে বুকে জরিয়ে ধরে চুমু দিয়ে যাচ্ছে তীব্র!পুল থেকে উঠে এসে শাওয়ার নিয়েই মেয়েকে বুকে চেপে ধরেছে।ইসসস কল্পনা করলেও তীব্রর বুকে ছুরিঘাত হচ্ছে যে,
তীব্রতা তাকে দেখে কেঁদেছে।তার কাছে আসতে ভয় পেয়েছে। তীব্রতার তাকে দেখে কান্না করে ভয় পাওয়াটা যেন তীব্রর কাছে বিষাক্ত এক অনূভুতি!সে অনূভব করছে এক তিক্ত অভিজ্ঞতা।
রিদি তখন থেকে তীব্র আর তীব্রতার দিকে তাকিয়ে আছে!তীব্রতা বাবাকে পেয়ে এখন যতটা প্রফুল্ল কিছুক্ষণ আগেও তীব্র কে দেখে ভয় পেয়ে কেঁদেছে! রিদি দেখেছে তীব্রতার কান্নায় তীব্রর থমকে যাওয়া। তীব্রতার সামান্য একটু কান্নায় যেন তীব্র চৌধুরীর পুরো স্বত্ত্বা নড়ে উঠছিল। তীব্র চৌধুরী! হৃদয়হীন মানুষ বলে জানা লোকটার ও নিজের সন্তানের প্রতি অগাধ ভালোবাসা!হুট করেই রিদি বলল,
“আমি কি করেছি তীব্র!!!
তীব্র ঘুমন্ত মেয়েকে বুকে আগলে নিয়ে তাকালো রিদির দিকে! এতক্ষণ বাবার সাথে খেলে টায়ার্ড হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তীব্রতা! তীব্র মেয়ের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল,
“জানা কি জরুরী!!
রিদি একটু চুপ থেকে বলল,
রোজ আপনাকে ঐ অবস্থায় দেখে কেঁদেছে! কষ্ট পেয়েছেন তাইনা!!
তীব্র রিদির দিকে তাকিয়ে বুঝল রিদির অব্যাক্ত কথা!তবে রিদি এখন কাঁদছে না বরং চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে আছে!
তীব্র মেয়েকে তার দোলনায় শুইয়ে দিয়ে রিদির কাছে এসে দাড়ালো!রিদির হাত ধরে দাড় করিয়ে বলল,
শুরু থেকে শুরু করতে হবে তাহলে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রিদি তীব্রর কথা না বুঝে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল তীব্রর দিকে।তীব্র রিদির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল আমেনার রুমে।রিদি আর তীব্র কে হুট দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল আমেনা।হাতে থাকা ফোনটা ধপ করে পড়ে গেল। সেখান থেকে ভেসে আসলো কথা গুলো!!
“রোজ কে নিয়ে কোনমতে পালিয়ে এলেই তীব্র বাধ্য হবে সোনা!তুমি আমাকে ভালোবেসে এইটুকু করতে পারবে না”
কথা শেষ হতেই রিদি ফোন তুলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
“পাপা”!!!
ওপাশে থাকা ব্যাক্তি চমকে উঠে!হুট করেই মনে পড়ে যায় গুটি গুটি পায়ে তার সাথে খেলতে থাকা মায়াবী মুখটা।
রিদি ওপাশ থেকে আওয়াজ না পেয়ে বলল,
আশা করছি!খুব তাড়াতাড়ি আপনার সাথে দেখা হচ্ছে!!বলে ফোনটা কেটে এগিয়ে দিল আমেনার দিকে!আমেনা অবাক হয়েছে রিদিকে শান্ত দেখে! এতোক্ষণ তো রিদির কেঁদে কেঁদে একাকার হওয়ার কথা!!তবে রিদি শান্ত কেন??
রিদি আমেনা বেগমের অবাক হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
আমি জানতে চায়!কেন আপনারা আমাকে এতো ঘৃনা করেন?কি এমন করেছি আমি??
আমেনা নিসর মুখে বলল,
ভালোই তো আছিস!এতো অতীত ঘেটে কি লাভ!
রিদি তাচ্ছিল্য হাসল!এতোটা ঘৃনা করেন!যে শেষ করেই ফেলতে চাইছেন!! এর পরেও বলছেন অতীত ঘেটে কি লাভ!! সত্যি ই আমি আপনাদের কেউ?? সত্যি ই আপনি আমার মা!নাকি আমি আপনার কোন নাজায়েজ স………..
ঠাসসস……
একদম ফালতু কথা বলবি না।কি জানতে চাস তুই? হ্যাঁ কি জানতে চাস?কেন তোর নিজের বাবা তোকে মারতে চায়?তোর বাবা তোকে মারতে চায় তোর সম্পত্তির জন্য!
রিদি অবাক হয়ে বলে,
সম্পত্তি!!!আমার!!!
আমেনা তেজি সুরে বলে,
হ্যাঁ তোর!বিশাল সম্পদের একমাত্র মালিক তুই!!
রিদি তখনো অবাক হয়েই বলে,
আমি!!
হ্যাঁ তুইই!!!
কোন সম্পত্তি?কিসের সম্পত্তি!!!
তোর নানার বিশাল সম্পদের মালিক তুই!!সাথে তোর দাদারও।
রিদি না বুঝে ড্যাবড্যাব করে তাকালো!
মানে!!
জানতে চাইছিলি না আমি তোর মা কি না??তো সত্যি এটা যে আমি তোকে জন্ম দিয়েছি কিন্তু তোর মা আমি না!তোর বায়োলজিক্যাল মাদার আদিয়া খান!!
রিদি ব্যালেন্স হারাতেই তীব্র চট করে জরিয়ে ধরলো! বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে রিদি আমেনার দিকে!!আমেনা তপ্ত একটা নিঃশ্বাস ফেলে রিদির দিকে তাকালো একবার!এরপর জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।আমেনা দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
তোর মা আদিয়া খাঁন!খান ইন্ডাস্ট্রির এক মাএ ওয়ারিস।আদিল খানের একমাত্র মেয়ে আদিয়া।তুই দেখতে তোর মা আদিয়ার মতোই।
রিদি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
আমার মা আপনি না তবে ওনি!!
আমেনা রিদির অবস্থা দেখে হাসল। আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
আমি রুপেশ কে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম।কারন বাবা আমার আর রুপেশ এর বিয়ের জন্য না করে দেয়।বাবা হয়তো জানতেন রুপেশ সুবিধার না! কিন্তু আমি ছিলাম তার প্রেমে অন্ধ।তাই পালিয়ে বিয়ে করি।এরপর আর বাবা আমাকে মেনে নেয় নি।তাই চোধুরী বাড়ির সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না বিগত বছর ধরে!
রিদি নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আমেনার দিকে,
আমেনা একটু থেমে আবারো বলেন,
আমার বিয়ের ২বছর পর আমার কোল আলো করে জমজ সন্তানের জন্ম হয়।
রুপ আর রায়ানের তখন দু বছর!রূপেশ রাতে বাড়ি ফিরে গোসলে গেছে তখন ওর ফোন বেজে উঠে।আমি রিসিভ করে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে মেয়েলী কন্ঠস্বর!
“রুপেশ আজ ডক্টরের কাছে যেতে হবে ভুলে গেলে।তুমি না বললে তুমি আজ ছুটি নিয়ে আসবে”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ফোনের দিকে!ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করলেও আমি ছিলাম বাকরুদ্ধ!হুট করেই আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে রুপেশ আদুরে গলায় মেয়েটাকে বলল,
আমি আসছি দিয়া!তুমি চিন্তা করো না!পুলিশের চাকরি জানোই তো!!আমি এখুনি আসছি!!
রুপেশ ফোন কাটতেই আমি চেঁচামেচি করি আদিয়া কে নিয়ে!সেদিন রুপেশ আমাকে সবটা বলে,
আদিয়া খাঁন হচ্ছে রুপেশ এর প্রথম স্ত্রী!পারিবারিক ভাবে ৬ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়!বিয়ের ৬ বছর!! এখনো তাঁদের কোন সন্তান হয়নি।মূলত সমস্যা ছিল তোর মায়ের। ডক্টর বলেছে সে মা হতে পারবে না।এতে খুব ভেঙে পড়ে আদিয়া!আদিল খানের মেয়েকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা করলেও কোন লাভ হয়নি।
তবে ডক্টর রা জানান যে এখন সেরোগেসির মাধ্যমে বাচ্চা নেওয়া যাচ্ছে!আদিল খাঁন তাই রুপেশ আর আদিয়া কে সেরোগেসি কে ম্যাধম হিসেবে বাচ্চা নিতে বলে।কারন তার বিশাল সম্পদ তিনি অনাগত বাচ্চার নামে উইল করে দিবে নয়তো তার মৃত্যুর পর ৪ ভাগের তিন ভাগ সম্পত্তি ট্রাস্ট এ চলে যাবে!
রুপেশ সম্পত্তির লোভ আর আমাদের ভবিষ্যৎ এর ভাবনা থেকে আমাকে ইমোশনাল ব্যাল্কমেল করে তোর সেরোগেট মাদার করে।আদিয়া তখনো জানত না যে আমি রুপেশ এর দ্বিতীয় স্ত্রী।সেরোগেসির ১ মাস পর থেকে আমি, রায়ান,রুপ সবাই খাঁন বাড়িতেই ছিলাম।আদিয়া রুপ আর রায়ান কে খুব ভালোবাসত!আমাকে ওদের কিছু করতে দিত না!সব নিজে করত!আমার বিশেষ খেয়াল রাখত তাও নিজে!আদিয়া মাঝে মাঝে বলত আমি তোমার এই অনূভুতি কখনো অনূভব করতে পারব না!তুমি খুব লাকি!!তুমি চাইলে আমার সাথে আমার বোন হয়ে থাকতে পারো!কিন্তু আমি তোকে নিজের অস্তিত্বে মেনে নিতে পারতাম না সবটা দাঁত কিটমিট করে সহ্য করতাম।তোর প্রতি বিশেষ কোন দরদও কাজ করত না।
একদিন রুপেশ আর আমার কথা তোর নানা শুনে নেয় আর সবটা জেনে যাই।এতো কিছু তোর নানা মানতে নারাজ ছিল।সে রুপেশ কে জানে মারার হুমকি পর্যন্ত দেয়।তুই হলে তোকে নিয়ে আদিয়া আর তোর বাবার ডিভোর্স করাবে বলে ঠিক করে।
কিন্তু রুপেশ সম্পত্তি কোন মতে হারাতে চায় না।তাই আদিয়া কে বুঝায় ,ইমোশনাল ব্যাল্কমেল করে। রুপেশের কথায় আদিয়া তোর নানুকে অনেক বুঝায়।তোর নানুও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর তোর জন্য সবটা মেনে নেয়।
আপনাতেই আমি পর্ব ৭৬
তুই তখন আমার পেটে ৮ মাসের।আদিয়া তখন জানতে পারে ওর মেয়ে হবে।সে কি খুশি ছিল!পুরো হসপিটালে মিষ্টি বিতরণ করেছিল সেদিন।
এই টুকু বলে থামল আমেনা। আবারো সেই দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
জানিস!!তোর বাবার থেকে ধোঁকা পেয়েও আদিয়া তোর বাবার প্রতি কোন অভিযোগ রাখে নি।সে জন্মদানে অক্ষম বলে মেনে নিয়েছিল সবটা।কারন তোকে পেয়ে সে খুশি ছিল অনেক। কিন্তু হঠাৎ করেই মেনে নেওয়া সবটা বদলে গেল!!