আপনাতেই আমি পর্ব ৭৯

আপনাতেই আমি পর্ব ৭৯
ইশিকা ইসলাম ইশা

Tujsa naraz nahi jindagi
haran hu ma…..
Parasan hu ma….
Tere masum sabalosa…..
Parasan hu ma….
Ha Parasan hu ma…..
Jina Ka Liya Socha hi nahi….
Dard samlan na honga…
Muskuraya to …
Muskuranaka karz utar na honga…..
Ab muskurayu to u lagta
Jasa hoto ta karaz rakha….
Ho Tujsa naraz nahi jindagi
haran hu ma…..
Parasan hu ma….
Tere masum sabalosa…..
Parasan hu ma….
Ha Parasan hu ma…..

লন্ডন শহর।বিলাশ বহুল এই শহর ইংল্যান্ডের রাজধানী।শহরে রাস্তা ঘাট অনেক উন্নত তবে মানুষের মধ্যে তাড়া বেশি। শীতবস্ত্র গায়ে সবাই ছুটছে যে যার কাজে।শহর থেকে একটু দূরে একটা ৮তলা ভবন।সেই ভবনের চতুর্থ ফ্লোর থেকে ভেসে আসছে হিন্দি এই পুরানো গানটি। টুকটাক কাজের মাঝে গানটা বেশ ভালোই গাইছে মহিলাটি।হুট করেই কেউ এসে তাকে জরিয়ে ধরে বলল,
মাম্মা!!!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মহিলাটির মুখে ফুটে উঠল বিস্তর হাসি! ছেলের উদ্দেশ্যে সে বলল,
আব্বু এতো দেরি করে ফিরলে যে আজ!তোমার পাপা জানলে কিন্তু আমি কোন হেল্প করব না!
সরি মাম্মা!!আজ একটা জরুরী কাজ ছিল!
তোমার জরুরি কাজ!তোমাদের বাবা ছেলের দুইজনের ই সবসময় জরুরি কাজ ই তো থাকে তাই না!!আমি তো আর জরুরি কিছু না!
অফকোর্স নট!!ইউ আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট পারসন ইন মাই লাইফ।
তখনি কেউ পেছন থেকে বলে,
উহু ভুল বললে বেটাজি!!মাই না আওয়ার লাইফ!
ছেলেটি বিস্তর হেসে বলল,
রাইট পাপা!!!মাম্মা জলদি খেতে দাও!আমার খুব খুদা পেয়েছে।
মহিলাটি দ্রুত পায়ে কিচেন যেতে যেতে বলে,
যাও তোমরা ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার রেডি করছি!বাবা ছেলে মহিলাটির কথা মতো চলল তাদের রুমের দিকে।

শীতের সময় চারদিকে বরফ জমা হয়েছে।এমন হার কাপানো ঠান্ডায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মহিলাটি।তার দৃষ্টি দূর ঐ আকাশের দিকে। চোখে তার ছলছলে পানি।হাজার তারার মাঝে সে খুজে বেরায় একটি তারা।তার আপন তারা। কিন্তু কিছুতেই কাউকে আপন মনে হয় না তার!
দিয়া!!!!
মহিলাটি পেছনে না ঘুরে সামনে দৃষ্টি রেখেই বলে,
এতো খোঁজ করেও সেই চেনা তারাটা আমি খুজে পায় না কেন আরফিন?
আরফিন লোকটা ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে চাদর জরিয়ে দেয় মহিলাটির গায়ে।
এখনো তাকে খুঁজে বেরাচ্ছো!!!
একটিবার ছুঁয়ে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল জানো!
জানি!
দুইজনের মধ্যে পিনপতন নীরবতা চলল কিছুক্ষণ।একটু পর আরফিন বলে,
বাবা কবে ফিরবে??
জানি না! মহিলাটির বিরস মুখে বলল।
আরফিন আর কথা বাড়ালো না। মৃদু হেসে বলল,
রুমে এসো।বাইরে প্রচুর ঠান্ডা দিয়া। ঠান্ডা লেগে গেলে কিন্তু আবার জ্বর আসবে।দিয়া ছোট একটা শ্বাস ফেলে আরফিন এর কথা মতো রুমে ঢুকে পড়ল।ঠান্ডায় থাকলেও মনটা ঠান্ডা হয় না।

কেটেছে অনেকটা সময়,
সবেই একটা অপারেশন সেরে রুমে এসেছে রিদি। ক্লান্ত শরীর চেয়ারে এলিয়ে দিতেই রোজ কে নিয়ে রুমে ঢুকে নীর। পরিক্ষা শেষ তাই কালই এসেছে রিদির কাছে। অবশ্য তীব্র ই আসতে বলেছে।৮ মাসের রোজ কে একটা লাল ফ্রগ পায়ে সেম সেম লাল জুতা একদম রেড রোজ করে রেখেছে নীর।ছোট ছোট চুলে লাল ব্যান্ড।ডাগর ডাগর চোখের হলদে মায়াবী মুখটা মাকে দেখে হৈচৈ করে উঠল।রিদি বিস্তর হেসে মেয়ে কে কোলে তুলে নিল।রোজের হাসি মুখ দেখলে তার সব দুঃখ কষ্ট ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।যেন মেয়ে তার ম্যাজিক করা জানে।জানবে না কেন।এমন মিষ্টি হাসি দেখে কে আর মন খারাপ রাখতে পারে।
মাকে পেয়ে আ উ করে এটা সেটা বলছে রোজ।রিদি মিষ্টি হেসে মেয়ের সাথে কথা বলছে।যেন মা মেয়ে ঠিক বুঝে একে অপরের কথা।
আমার মা টাকে তো রেড পরি লাগছে!

রোজ মায়ের কথায় হেসে হাত পা ছোটাছুটি করছে তার ভাষায় খুশি প্রকাশ করছে। ছোটাছুটির ফলে হাতে পায়ে ঝুম ঝুম করে বাজছে সোনার চুরি আর নূপূর।রিদি মেয়ের হাত ধরে হাতে চুমু দিয়ে বলে,
আমার কলিজা!!আমার জান!
রিদির কথায় মাঝেই নীর বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,
তোমার মেয়ে পুতুলের মতো দেখতে কিন্তু পুতুল তো না।সবাই এভাবে চলতে চলতে আদর শুরু করে দেয় কেন??ভ্যাগিস জিজুর বডিবিল্ডার গুলো সাথে থাকে নয়তো!
রিদি মেয়েকে টেবিলে বসিয়ে বলে,

ওকে নিয়ে আপাতত বাইরে বেশি ঘুরিস না নীর!গেলে অবশ্যই গাড নিয়ে যাবি!!
নীর অবাক হয়ে তাকাল রিদির দিকে।রিদি তো কখনো এসব গাড পছন্দ করে না তবে আজ এভাবে বলছে কেন? নীর কিছু বলার আগেই একজন গাড নক করে বলে,
ম্যাম আর্জেন্ট আপনাকে ডেকেছে ডঃ আশিক মাহমুদ।
রিদি রোজ কে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায়।করিডর দিয়ে ডঃ আশিকের রুম থেকে আসতেই হুট করে ধাক্কা লাগায় কিছুটা কাত হয়ে যায় রিদি।সাথে সাথে ভেসে আসৈ গম্ভীর কন্ঠে!
সরি ডঃ!আপনি কি ঠিক আছেন?
ইতিমধ্যে গাড ছুটে এসে বলে,
ম্যাম আর ইউ ওকে?

রিদি রোজের দিকে তাকিয়ে দেখে রোজ চুপচাপ আছে।তার মানে মেয়ে ভয় পায় নি।রিদি ছোট একটা শ্বাস ফেলে বলে,
আমি ঠিক আছি! চলুন!
গাড এবার রিদিকে সাইড করে দিতেই রিদি হাঁটতে শুরু করল।এসব তার কোন কালেই পছন্দ না হলেও বাবার উপর ভরসা নেই তার। যতক্ষণ না তীব্র রুপেশের খোঁজ পাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে সাবধান থাকতে হবে।রিদি ভাবনার মাঝে কয়েককদম এগুতেই কেউ বলে,
রিদিতা মির্জা!!!
রিদি থেমে যায়। অবাক হয়ে ঘুরে তাকায় অপরিচিত লোকটার দিকে। লোকটা মির্জা কেন ডাকল! ডক্টর হিসেবে তো মির্জার ট্যাগ সে নেয়নি।তবে??

লোকটা এক প্রকার ছুটে তার কাছে আসতে চাইলে গাড সামনে এসে দাঁড়ায়।রিদি নীরের কোলে রোজ কে দিয়ে ইশারা করে রুমে যাওয়ার জন্য।নীর রোজ কে নিয়ে যেতেই রিদি তাকাল লোকটার দিকে!লোক বলতে বয়স্ক একজন লোক! মাথার চুল আর দাড়ি সাদা।দেখতে ভদ্র লোক মনে হলেও রিদি কিছুক্ষণ পর এগিয়ে গেল।রিদি কে আসতে দেখে ভদ্র লোক চশমা ঠিক করে অবাক হয়ে তাকাল।রিদি ভদ্রতা সহিত বলল,
আপনি???

মানে আপনি কি পেসেন্ট এর কেউ?
লোকটি কিছু বলার আগেই কোথাথেকে ছুটে আসে একটি যুবক!
গ্র্যান্ডপা!!তু……বলতে বলতে রিদির দিকে তাকিয়ে সেও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল!
রিদি কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলল,
আপনারা কারা?
লোকটি রিদিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
তুমি কি আমাকে চিনবে?
রিদি সরল হয়ে বলল,
যদি কোন পেসেন্টের কেউ হন তবে……..
আমি আদিল খাঁন!!!
রিদি বড় বড় চোখ করে তাকালো আদিল খানের দিকে।আদিল খাঁন!মানে!মানে ওর মায়ের বাবা!মানে নানু!রিদি নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলো অনিমেষে।ধবধবে সাদা দেখতে মানুষটা তার নানু।

দরজার নব মোচর দিয়ে খুলে রুমে ঢুকে তীব্র! তীব্র কে দেখে চট করেই উঠে দাঁড়াল রিদি।সোজা গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল তীব্রর বুকে! কান্নার ফলে মৃদু কাঁপছে রিদি। এতোক্ষণ সবটা শুনে শক্ত থাকলেও তীব্র কে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। আশেপাশে কিছু না বুঝেই ঝাঁপিয়ে পড়ল।তীব্রর বুকে রিদি ফুঁপিয়ে কাদলেও তীব্র যেন স্বস্তি পেল।তীব্র জানে রিদি যতোই শক্ত দেখাক না কেন।ওর কাছে এসেই বাচ্চাদের মতো কান্না করে সবটা বলে মন হালকা করবে।রিদি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।বিরবির করে বলছে কিছু,

আমার মা বেঁচে আছে তীব্র!ওনি আমাকে বলেছে আমার মা বেঁচে আছে!আমি যাব আম্মুর কাছে!
তীব্রর মনে হলো কোন বাচ্চা তার কাছে অবদার করছে।তীব্র সব ভুলে রিদিকে সময় দিল।কাদুক!!সেভাবেই মিশে দাঁড়িয়ে রইল আশেপাশে যে কয়েক জোড়া চোখ তাকে দেখছে তাতে বিন্দুমাত্র জরতা দেখা গেল না তীব্রর মাঝে। আশেপাশে কেউ নেই এমন একটা ভাব নিয়েই বুকে জায়গা করে দিল। মাথায় কয়েকবার চুমু দিলেও মুখে কিছু বলল না। নিজেই চিন্তায় ছিল আদিল খাঁন সবটা বলার পর রিদি কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে। এমনিতেই তো কম ঝটকা খেল না।তাই সব কাজ ফেলেই ছুটে এসেছে খবর পেয়ে।

সময় গড়াল ১০মিনিট।তীব্রর রিদিকে ছাড়ানোর কোন তাড়া নেই।এর মাঝেই খেলা রেখে এবার হামাগুড়ি দিয়ে তার খেলার জায়গা ছেড়ে পদা সরিয়ে বেরিয়ে এলো রোজ।চট করে বাবাকে দেখেই শব্দ করেই ডাকল। হামাগুড়ি দিয়ে ছুটে আসল।রিদি তীব্রর থেকে আলগা হতেই ব্যস্ত হাতে তুলে নিল তীব্র মেয়েকে। চঞ্চল রোজ বাবার কোলে দুলিয়ে দুলিয়ে হাসল।রিদি সাথে সাথে সাথে ঘুরে গেল অন্য দিকে। রোজ তাকে কাঁদতে দেখলে সেও কেঁদে দিবে। তীব্র মেয়েকে কোলে অন্য হাতে রিদির হাত ধরে নিয়েই বসল আদিল খানের বরাবর। আদিল খান তীব্রর কোলে থাকা রেড রোজ এর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ রোজ রেস্ট রুমে ছিলো তাই দেখা হয়নি ওদের।
মেয়েটা অতি মাত্রায় সুন্দর। উহু তেমন রূপ ঝলসানো সুন্দর না।মায়াবি সুন্দর।মুখের গড়ন কিছুটা মায়ের মতো সাথে বাবার থেকে পাওয়া নিলাভ চোখ।হলদে গায়ে লেপ্টে আছে একটা লাল সাদা ফ্রগ। এক কথায় মাশাআল্লাহ।রোজ বাবার সাথে হাস্যোজ্জ্বল মুখে তার ভাষায় কি সব বলছে আর পাপাপাপা করছে একটু পরপর।যেন পাপা কে দেখে সে ভীষণ খুশি।তীব্র মেয়েকে বুকে আগলে নিয়ে তার কথার ভঙ্গিতে কথা বলতে লাগল।

আদিল খান এতোক্ষণ সবটা নির্বাক চোখে দেখছিলেন । শুনেছে তীব্র! তীব্র চৌধুরী নাকি জলন্ত আগুন।হাত বাড়ালেই ঝলসে যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০ তে ১০০। ভয়ংকর তার দৃষ্টিশক্তি যেন চোখ দিয়ে ঝলসে দিতে পারে অপর মানুষ কে।ঠান্ডা মাথার ভয়ংকর এক মানব।খুন করেও যার মনোভাব ধরা যায় না।

তবে বর্তমানে তীব্রকে দেখে তার সব জানা শোনা কথা ভুল বলে প্রমাণিত হল।সে তো জীবনে কম মানুষ দেখেনি।এক্সপিরিয়েন্স বেশি। নারী একটা পুরুষের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা।আর যদি হয় সেটা ভালবাসা তবে তো কথায় নেই।পাথরের বুকেও ফুল ফুটে‌ তখন।আর তীব্রর তো একটা নয় দুটো ফুল।দুই নারীর উপর যে তীব্রর প্রানটা বিরাজ করছে তা বুঝেছে আদিল খান। এই যে তীব্র চাইছে তাদের সাথে কথা বলতে কিন্তু চঞ্চল রোজ বাবার সাথে এখন খেলবে।বাবাকে পেয়ে আর কিছু লাগে না তার।তীব্র মেয়েকে একদম নারাজ করতে চায় না।তাই তো মাকে সামলে এখন মেয়ে কে সামলাচ্ছে।এই মূহুর্ত দেখার পর তার মনের সকল যন্ত্রনা দূর হয়ে গেল।রিদি কে পিতা নামক পশুর থেকে নিয়ে যেতে না পারার যে বিশাল বড় পাহাড় সমান কষ্ট বুকে চেপে রেখেছিল এতোটা বছর ধরে তা সরে গেল।আদিলের মনে হল যা হয় ভালোর জন্যই হয়।তার নাতনি সুখে আছে।এমন পুরুষ যার জীবনে আছে সে সুখি।আদিল খান মনে মনে বলল,

আপনাতেই আমি পর্ব ৭৮

আমার নাতনির জীবনেও ঠিক সময়েই এসেছো। আল্লাহ ফেরেশতা রুপেই তোমাকে পাঠিয়েছে।যে কাজ আমি এতো বছর ধরে চেষ্টা করেও করতে পারি নি।সেটা খুব সহজেই করেছো।

আপনাতেই আমি পর্ব ৮০