আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১
ইশিকা ইসলাম ইশা
“”কার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে জানো তুমি “”
কান্নারত মুখটা তুলে তাকালো রিদি।তাকাতেই কিছুক্ষণ হা হয়ে থাকল।ধবধবে সাদা এক হূরপরি তার সামনে দাড়িয়ে আছে।যাকে এক দেখায় সবার নজরে কারবে।হাইট,ফিগার,বেশভুসা,রুপ দেখে যেকোন মানুষ তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না।
রিদি কান্না ভুলে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
তুমি কি পরি!!
রিদির কথায় মেয়েটি অবাক হয়ে বলল,
তোমার আমাকে পরি মনে হচ্ছে!!!
রিদির সরল উওর,
হ্যাঁ!!কি সুন্দর গো তুমি!!
মেয়েটি ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলে আবারো বললো,
কার সাথে বিয়ে হয়েছে তোমার জানো???
বিয়ের কথা মনে হতেই রিদি আবারো ডুকরে কেঁদে উঠলো।কি ভয়ংকর এক লোক!! কালকের কথা মনে পড়তেই রিদির পুরো শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল।
শহর থেকে কিছু দূরে ফুলতুলি নামের একটা গ্রাম।সেই গ্রামেই বেড়ে উঠা রিদির। শত মায়ের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেই বেড়ে উঠা রিদির।বাবা থেকেও না থাকার মতোই।রিদির উপর বিশেষ কোন গুরুত্ব নেই তার। শত মায়ের কথায় উঠে আর বসে তার বাবা।রিদির ৬বছর বয়সে মা মারা যায়।তখন থেকেই রিদির উপর শুরু হয় অত্যাচার।রিদির মাকে বিয়ে করার ২বছর পরেই সুন্দরী আমেনাকে বিয়ে করে রুপেশ মির্জা।তখনো রিদির জন্ম হয়নি। বিয়ের কয়েকমাস পরেই আমেনা কনসিভ করে।আর সুন্দরী মেয়ের জন্ম হয়।নাম তার আলিশা।আলিশার যখন ৪ বছর তখন রিদির জন্ম হয়।রিদিদের তখন যৌথ পরিবার।দুই চাচা সহ সবাই থাকত মিজা বাড়িতে। কিন্তু রিদির মা দিয়া মারা যাবার পর শুরু হয় অশান্তি।জায়ে জায়ে শুরু হয় ঝরগা বিবাদ। আমেনা আলাদা হতে চাইলে রিদির দাদি বাধা দেয় নি।সবাইকে যার যার ভাগ বুঝিয়ে আলাদা করে দিয়েছে।তবে মিজা বাড়িতে এখন তার বড়ো চাচা থাকে। রিদির বড় চাচা মানুষটা একজন স্কুল শিক্ষক।দুই ছেলে মেয়ে।বড় মেয়ে রিয়া ।মেয়ের বিয়ে হয়েছে সে এখন শশুর বাড়িতে থাকে।আর ছেলে রাদিফ বর্তমান পড়াশুনার সুবাদে শহরে থাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বড় চাচা একজন শিক্ষক।সেই সুবিধার্থে ই রিদি এস এস সি পর্যন্ত দিয়েছে। পড়াশোনায় বেশ ভালো হলেও আমেনা তাকে সব সময় কাজের ওপর রাখে ।তবুও নিজের চেষ্টায় আর চাচার সহযোগিতায় অনেক ভালো পরিক্ষা দিয়েছে। রেজাল্ট ও দিয়েছে। মোটামুটি ভালোই করেছে। কিন্তু আমেনা তাকে আর পড়াবে না বলে দিয়েছে।
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার,
হাতের রান্না শেষ করে বেড-এ বসতেই হুরমুর করে রুমে ঢুকে আলিশা।
এই রিদি শুনেছিস!!!
কি আপু!!!
কাল আমাকে পাএপক্ষ দেখতে আসবে তাও শহর থেকে।শুনেছি বিশাল বিশাল বড়োলোক!!
রিদি ক্লান্তিতে মুচকি হাসল,
তাহলে তো অনেক সুখে থাকবে।
আলিশা তার কালার করা চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বলল,
সে আর বলতে!! আমার মতো সেরা সুন্দরী বৌ পেয়ে সে তো ধন্য হয়ে যাবে।
রিদি বিরবির করে বলল,
ওহহ আচ্ছা!!
কি রে কিছু বললি??
না!!নাতে আপু!!
শোন মা বলল তোর এই কালোকুটি মুখ নিয়ে কাল মেহমানদের সামনে না আসতে।
রিদি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
আচ্ছা!!এসব শুনে শুনে সে অভ্যস্ত!!
পরের দিন বেশ আয়োজন চলছে আমেনার।তবে ভালো রিদিকে এসব করতে হয়নি। উঁচু মেহমান তাই উঁচু শেফ আনিয়েছে আমেনা।কি সব ডিশ ফিস করছে আল্লাহ মালুম। শুনেছে ছেলের বাবা মা আর ছেলে আসবে।এদিকে রিদি যখন আজ সুযোগ পেয়েছে তখন আজ সে লম্বা একটা ঘুম দিবে।তাই যেই ভাবা সেই কাজ। তাছাড়া আজ রিদিকে ভুলেও ডাকবে না আমেনা। কালো ছায়া পড়ে যাবে এই ভয়ে।রিদি ভাবনা বাদ দিয়ে ঘুম দিল!! গভীর এক ঘুম।আজ তার এতো ঘুম পাচ্ছে কেন?রিদি বিছনায় শুতেই যেন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
রিদির ঘুম ভাঙ্গল ভয়ংকর কোন আওয়াজ শুনে।চারদিকে তখন সন্ধ্যা প্রায়।রিদি ঘুম ঘুম চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝল আমেনা তাকে ডাকছে।তবে আমেনার ডাকার আওয়াজ এর চাইতেও বেশি ভয়ংকর শোনাল কোন কিছু ভাঙ্গার আওয়াজ।সেই আওয়াজ এ যেন প্রতিটি দেওয়াল কেঁপে কেঁপে উঠছে।রিদির ঘুম তখনো ছাড়ছে না মনে হচ্ছে কেউ চোখের পাতা চেপে ধরে রাখছে।রিদি ধরফর করে উঠে দরজা খুলতেই থ হয়ে যায়।আমেনার ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বিদ্যামান।রিদি কি হয়েছে কিছু বুঝার আগেই আমেনা রিদির হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো বাইরে।চারদিকে তখন সন্ধ্যা নেমেছে খোলা উঠানে তখন অবছা আলো। কিন্তু রিদি দাঁড়িয়ে আছে একদম আলোর কাছে।তাই আলোর ছটা চোখে লাগতেই রিদি ঘুমন্ত চোখ জোড়া বন্ধ করে নিতেই শোনা গেল আমেনার ভয়ার্ত কন্ঠে বলা কথা,
এ !!এই যে !রিদিতা!দিয়া র মে য়ে!!
কথাটা শুনেই যেন ভাঙচুর এর আওয়াজ থেমে গেল।রিদি কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছু না বুঝে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।চোখ তার এখনো বন্ধ।বন্ধ বলতে লাইটের প্রখর আলো রিদির চোখে লাগছে। তাছাড়া আজ তার ঘুম যেন এতো কিছুর পরেও পিছু সরছে না। মাথা হ্যাং হয়ে আছে।তবুও রিদি বহু কষ্টে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই নজরে এলো রুপেশ এর রক্তাক্ত দেহ।চোখ মুখ দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে।রিদি হতবাক হয়ে দৌড়ে বাবার কাছে যেতেই কোথাথেকে ছুটে এলো এক শক্ত পোক্ত হাত!রিদির হাত ধরে টেনে দাড় করিয়ে ঠাসসস করে দুগালে দুইটা চর বসালো। হঠাৎ পুরুষালী হাতের থাপ্পর এ রিদির মাথা ভো ভো করে উঠল।কি হচ্ছে কিছু বুঝার আগেই ভেসে এলো পুরুষালী গম্ভীর ভয়ংকর কন্ঠস্বর,
“তোকে কবুল বলে বিয়ে করছি।তার মানে এটা ভাবিস না তোকে বৌ হিসেবে আমি মানছি।তোর মতো মেয়ে আমার জুতা পরিস্কার করার ও যোগ্যতা রাখে না।”
হুট করেই এতো কিছু হচ্ছে তার সাথে এতে রিদির সব কথা কানে আসলেও মস্তিষ্ক ধরল না।তার তো এখনো মাথা ভো ভো করছে!
এরপর কি হলো রিদি কিছুই বুঝল না।রিদিকে একটি চেয়ারে বসিয়ে মিনিটের মধ্যে কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করল।রিদিকে কবুল বলতে বললেও রিদির থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে হুট করে আবারো গালে ঠাস করে একটা চড় পড়তেই রিদি মাথা তুলতে চাইলে কেউ ভয়ংকর আওয়াজ এ বলল,
কবুল বল!!!!!!!!!!!!!!
রিদি আর চোখ তুলে দেখল না ভয়ের কারনে কবুল বলতেই লোকটি তাকে টেনে বাইরে নিয়ে যেতে লাগল।রিদির এতোক্ষণে যেন হুস হলো।গরুর মতো রিদিকে টেনে নিতেই রিদি ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো।যেন সে মানুষ না কোন পশু।
রিদির ভেতর পুরো কাঁপছে।মুখ দিয়ে টু শব্দও বের হলো না। শুধু যেতে যেতে দেখল বাড়ির ভয়ংকর অবস্থা। সবকিছু ভেঙে চুরে তছনছ হয়ে এদিক ওদিক পড়ে আছে। আর ঠিক উঠোন বরাবর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রুপেশ। রুপেসের দিকে তাকিয়ে রিদির হুস আসতেই ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছে কিন্তু তাতে একচুলও প্রভাব পড়ছে টেনে নেওয়া ব্যাক্তির উপর।রিদি এবার উপায় না পেয়ে জোরে কামড়ে ধরলো লোকটার হাত।কামড়টা জোরে না হলেও থেমে গেল লোকটি।
থামার সাথে সাথে অবারো রিদির গালে থাপ্পড় পড়তেই এবার রিদি ঙ্গান হারালো।পরপর কয়েকটা থাপ্পর খেয়ে ঢলে পড়ল কারো প্রসস্থ বুকে। কিন্তু অপর ব্যাক্তি টি রিদিকে ধরল না।ওকে সেভাবে বুকে থেকে কোলে তুলে ছুড়ে ফেলল গাড়িতে। যেন রিদি কোন দূর গন্ধ জাতীয় কিছু। পেছনের সিটে রিদিকে রেখে সামনে বসতেই গাড়ি স্টাট দিল লাবিব।ভয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলে আড়চোখে তাকালো তীব্র নামক ব্যাক্তির দিকে!নামের মতোই তীব্র তেজ তার চোখমুখে।গা ছাড়া ভাব নিয়ে শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলল,
এই উটকো ঝামেলা চৌধুরী বাড়িতে ফেলে আসবি!!আর মিসেস চৌধুরী কে বলবি আমি আমার মায়ের কথা রেখেছি।বিয়ে করেছি আমি। দরকার পড়লে বৌ সহ সার্টিফিকেট দেখাবি।
লাবিব শুকনো ঢোক গিলে বলল,
বস!ভাবির তো বয়স কম!মানে ১৬ বছর। রেজিস্ট্রেশন তো…….
কবুল তো বলেছে।ইটস ইনাফ!!!
জি!!বস!
লাবিব আবারো শুকনো ঢোক গিলে পেছনে ফেলা রাখা মেয়েটার দিকে তাকালো।একদম ছুড়ে ফেলার মতো ছুরে রেখেছে তাকে।চুলে পুরো মুখ ঢাকা।পেছনের সিটে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে।পায়ের গোড়ালি বেয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে।মৃত মানুষের মতো ঙ্গানহীন হয়ে পড়ে আছে।ইসস বাচ্চা একটা মেয়ে!!এমন নির্দয় হৃদয়হীন মানুষের সাথে কিভাবে বেঁধে গেল!!!
রিদির অবস্থা দেখে লাবিবের খারাপ লাগল।লাবিব গোপনে একটা নিঃশ্বাস ফেলে আড়চোখে তাকালো তীব্রর দিকে।তীব্র কানে ইয়ারফোন গুজে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে।যেন সে কিছুই করেনি। এতোক্ষণ যে তান্ডব চালালো তাতে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই।বরং ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে কিছুই করে নি।
সামনে দেখে গাড়ি চালা!!আমি জানি আমি হ্যান্ডসাম!!ছেলে হয়ে আমাকে এভাবে দেখে লাভ নেই!!
লাবিব হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে।চোখ বন্ধ করেও কিভাবে সব বুঝে যাই। অবশ্য নতুন কি!!নামের মতোই তীব্র বুদ্ধিমত্তা তার!!লাবিব শুকনো ঢোক গিলে চুপচাপ গাড়ি চালাতে মন দিল।তবে পেছনে ফেলা বাচ্চা মেয়েটার প্রতি ভীষণ মায়া কাজ করল।দোয়া করল যেন চৌধুরী বাড়িতে যেতে যেতে মেয়েটা বেঁচে থাকে।নিমম হৃদয়হীন মানুষ তীব্র।মরে গেলে মিনিমাম দুঃখ টুকু হবে বলে মনে হয় না।