আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৫
ইশিকা ইসলাম ইশা
আমি ভালোবাসি তোমায়!!কি পেয়েছো ওর মাঝে যা আমার নেই!
রুপের কথায় তীব্র তোয়াক্কা বিহীন বসল চেয়ারে। বিরক্ত হয়ে বলল,
আস্তে কথা বল রুপালি!
বলব না আস্তে!!আজ বলবে তুমি! কেন আমাকে ভালোবাসলে না!কি কমতি আছে আমার?ওর চেয়ে অধিক সুন্দরী আমি। ওর কোন যোগ্যতাই নেই আমাকে টেক্কা দেওয়ার!তবে কেন তুমি ঐ কালো মেয়েটাকে এতো পছন্দ তোমার।আজ বলতেই হবে।
কি পেয়েছো তুমি ওর মাঝে?যাকে সহ্য করতে পারতে না এখন তাকে ছাড়া তোমার চলছে না।যাকে নিজের নামের থেকে দূরে করতে বিয়ের পরদিন ই ডিভোর্স দিতে প্রস্তুত!তাকে এখন তোমার লাগবে বলে দাবি করছ!কি চাইছ!!
সত্যি করে বলো তো ভালোবাসো ওকে তাই না??
নোপ!!
তাহলে কি চাইছ তুমি!!
আরাম!!আরাম চাইছি!!শান্তি চাইছি!!যা ওর মাঝে পাচ্ছি তাই ওকে চাচ্ছি! তুলতুলে শরীরটা বুকে চেপে ধরলে আরাম লাগে। ক্লান্তি দূর হয়!ওর শরীরের ঘ্রাণ শুঁকতে ভালো লাগে।শরীর শীতল হয়!! উহু শরীর আর কলিজা দুটাই ঠান্ডা হয়!!শুনেছিস!!
রুপ হাসল! সুন্দরীর হাসিটা আজ মলিন দেখাল।
বেডে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। নিস্তেজ আর ধীর কন্ঠে বলল,
এটা ভালবাসা নয়??
উহু !!ভালোবাসতে মন লাগে ওটা আমার সিস্টেম এ নাই!
ইউ নো তীব্র চৌধুরী কতোটা স্বার্থপর!নিজের স্বার্থে সে সব কিছুই পারে।আজ আমার স্বাথ হচ্ছে আমাকে ভালো রাখা।আর আমাকে ভালো রাখতে এই মেয়েটাকে আমার প্রয়োজন।
রুপ আবারো হাসল! মৃদু স্বরে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রয়োজন কখন প্রিয়জন হয়ে উঠে বলা তো যায় না!!
আমি যে তোমাকে ভীষণ ভালবাসি তার কি হবে?
তীব্র বিরক্ত হয়ে বলল,
কেন ভালোবাসিস?আমি কি বলেছি আমাকে ভালোবাস!বালের ভালবাসা!ছ্যা!!
না! তাইতো মরতে চেয়েছিলাম! বাঁচালে কেন??
ইচ্ছে ছিলো না।যে বাঁচতে চাই না তাকে বাঁচাতেও চাই না আমি!
তবে যে??
দায়িত্ব!!তোকে বাঁচানো আমার দায়িত্ব বলতে পারিস!
কখনো কি আমাকে ভালোবাসা যায় না!!আমি অনেক সুন্দর!সবাই বলে আমি ভীষণ সুন্দর! আমার এই সৌন্দর্য কি তোমার নজরে আসে না!!
এক কথা বার বার বলতে ভালো লাগে না!
কিন্তু আমার যে খুব জানতে ইচ্ছে করছে! আচ্ছা !!রিদি কোন পারফিউম ব্যবহার করে?আমি সেটাই ব্যবহার করব তাহলে তো আমার ঘ্রাণ তোমার পছন্দ হবে!! তোমার হৃদয় ছুতে পারবে তাই না!!
তোর ৫ মিনিট শেষ!
৫ মিনিট চেয়েছিলি দিয়েছি।ইউর টাইম ইজ ওভার!
রুপ হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে।এই মানুষটিকে সে সবটা দিয়ে ভালোবাসে!অথচ তার এতো কষ্ট দেখেও মানুষটা কি সুন্দর নির্বিকার আছে।চাচাতো বোন হিসেবে সামান্য সহানুভূতি ছাড়া অন্য কোন সামান্য টুকু অনূভুতিও নেই।রুপ মুচকি হাসল! এই হাসিতে রয়েছে এক বুক ব্যাথা! অসহ্য ব্যাথা! ভালোবাসা কি সেটা বুঝতেই যাকে মন দিয়েছে সে আজ কতো সুন্দর করে মন ভেঙ্গে দিল।কলিজা ছিঁড়ে যাওয়া কষ্ট কি নিষ্ঠুর মানুষটা বুঝতে পারছে!!পারছে না।পারলে কি আর এতো কষ্ট দিত!!
নিষ্ঠুর মানুষ আপনি তীব্র ভাই!!
তীব্র হাসল!তবে উওর করল না।বেরিয়ে গেল।মেয়েটার এতো কষ্ট দেখেও তার মাঝে কোন ভাবাবেগ নেই। অথচ রুপের মতো এমন আগুন সুন্দরী পেতে কপাল লাগে! কপাল!!
এইতো কয়েক ঘন্টা আগেই রুপ কে অপারেশন রুম থেকে বের এনেছে।দক্ষ হাতে রুপের চিকিৎসা করলেও সামান্য সহানুভূতি ও হয়নি।রুপের হাত কাটার বেশি সময় হয়নি দ্রুত চিকিৎসার ফলে তেমন কোন ক্ষতিও হয়নি।তীব্র রুপের রুমেই সব ব্যবস্থা করে স্যালাইন পুশ করে দিয়েছে।
তীব্র যখন রুপের চিকিৎসা করে বের হয় তখন রিদি ঙ্গানহীন পড়ে ছিল চিলেকোঠার বিছানায়।রিদির মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে তীব্র ভু কুঁচকে তাকাল পাশে বসা নাজমা চৌধুরীর দিকে!খুব ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
আমার বৌ ঘন্টা খানেক এর মধ্যেই আঘাত পেয়ে বিছানায় শায়িত হলো কিভাবে দাদি??
নাজমা চৌধুরী একবার রিদি তো একবার তীব্রর দিকে তাকালো।নাজমা চৌধুরীকে নিশ্চুপ দেখে তীব্র বিরক্ত হয়ে বলল,
আমার বৌ আঘাত পেল কিভাবে দাদি??
নাজমা চৌধুরী আড়চোখে রাইফার দিকে তাকালো।রাইফা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নাজমা চৌধুরী ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমতা আমতা করে বলল,
ঐ তো পড়ে………
সাথে সাথে বিকট আওয়াজ এ থেমে গেল নাজমা চৌধুরী।কাচের টুকরো এসে থামল পায়ের কাছে!সবাই আতকে উঠল।তীব্রর মনোভাব দেখে বোঝা যায়নি তীব্র এখন রেগে যাবে।তীব্র হুট করেই রুপ কে বের করে নিয়ে এলো ট্রলি তে করে।সদ্য করে দেওয়া ব্যান্ডেজ এর দিকে তাকিয়ে কেচি খাড়া করে ধরল। উপস্থিত সবাই বিষ্ময়ে কিংকতব্যবিমুঢ হয়ে গেছে।তীব্র ঙ্গানহীন রুপের সদ্য করা ব্যান্ডেজ এ কেচি দিয়ে আঘাত করতে যেতেই রাইফা চেঁচিয়ে উঠলো!!
নাহ!!আমার মেয়ের কোন ক্ষতি করো না তীব্র!!আমি তোমার বৌ কে ধাক্কা দিয়েছি!আমাকে মাফ করে দাও!!
তীব্রর হাত থেমে গেল। বাঁকা হেসে তাকাল রাইফার দিকে।প্রথম আর শেষ বার মাফ করলাম চাচি!এভাবে আমার আপন বৌ কে আঘাত করা আমার পছন্দ না।আমার এখনো বাসর বাকি!আপনাদের দেওয়া এতো আঘাত সহ্য করলে আমার দেওয়া আঘাত সহ্য করবে কিভাবে? এইটুকুই তো বৌ আমার।
সবাই তীব্রর এমন শীতল কথায় আরো একদফা আবাক হয়ে চেয়ে রইলো।মাঝে মাঝে তীব্র কে সাইকো মনে হয়।হুট করেই রাগ করে আবার…..
তীব্র রিদির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৪
এরপর ওর শরীর থেকে একটা আচরের দাগো যদি পাই তাহলে !!তাহলে তখনি যা করার করে দেখাব।এই লাবিব!! তুই কি আমার বৌ কে কোলে তুলে…..
বাকি কথা শেষ করার পূর্বেই লাবিব হচকচিয়ে বলল,
না বস!আমি ভাবিকে নিয়ে আসি নি!দাদি আর জোৎস্না আপা নিয়ে এসেছে।
তীব্র ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে রিদিকে কোলে তুলে নিল!এদিক ওদিক কোন দিকে না চেয়ে সোজা বেরিয়ে গেল।যেতে যেতে বলে গেল রুপালির ঙ্গান ফিরলে আমাকে বলিস।৫ মিনিট চেয়েছে ৫ মিনিট দিতে হবে!
লাবিব দীর্ঘশ্বাস ফেলল কথাটা এমন ভাবে বলল যেন ৫ টাকা ধার নিয়েছিল ৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
রুপালি ঙ্গান হারানোর আগে তীব্রর কাছে ৫মিনিট চেয়েছিল।আর রুপের ঙ্গান ফিরার পর সেই ৫ মিনিট দিয়েছে তীব্র!