আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৭

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৭
ইশিকা ইসলাম ইশা

দিন গড়িয়ে মাস পার হয়েছে। সময় তার মতোই ছুটে চলছে। ব্যাস্ত সময় পার করছে সবাই। সবার ব্যস্ততা নিজেকে নিয়ে হলেও কিছু কিছু মানুষের ব্যস্ততা হয় অন্যকে নিয়ে।
আজ বিশাল মির্জা বাড়ির প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা বসেছে। আলোচনার বিষয়বস্তু হলো গ্রামে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।ফুলতলি গ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত নয় তাই গ্রামের মানুষরা ছোটাছুটি করে শহরমুখী হওয়া লাগে।যদিও গ্রামে যোগ্য ডাক্তার আছে কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে।তাই নতুন ভাবে হাসপাতালের সংস্কার করা খুব জরুরি। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বিশেষ ভাবে এই ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার।কারন তারা অধিক টাকা ব্যয় করে শহরে চিকিৎসা করতে যেতে পারে না।ফলে অসুখ বাঁধিয়ে রাখে।

রিদির বড়চাচা রওনাফ মির্জার বাল্যকালের বন্ধু ডক্টর মনসুর আলী বর্তমানে ফুলতলি গ্রামের হাসপাতালের পরিচালক বলা যায়।তিনি চান হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করতে।এতো জায়গা লাগবে আরো অধিক। তাইতো তিনি এসেছেন বাল্যকালের বন্ধু রওনাফ মির্জার কাছে।হসপিটালের পাশে অনেকখানি জমি আছে।যার বর্তমান মালিক রুপেস মির্জা।তিনি চান জমিটা কিনতে যাতে হাসপাতালের কাজ জলদি শুরু করতে পারে।
বন্ধুর প্রস্তাব ভালো লাগলেও জমির বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তিত রওনাফ মির্জা।রুপেস জমি দিবে কিনা এই নিয়ে চিন্তা তার।রুপেস এখন ঠিক লাগামহীন ঘোড়ার মতো।যার লাগাম টানা তার সাধ্য না। বড় ভাইকে যার অপমান করতে এখন বিবেকে বাঁধে না। সে তার কথা শুনে জমি বিক্রি করবে এটা সম্ভব না।আর এখানেই তার চিন্তা।
মনসুর আলী রওনাফ মির্জার চিন্তিত মুখ দেখে কিছুটা আঁচ করতে পেয়ে বলল,
রওনাফ আমি তোদের ব্যাপারে অল্পসল্প যা জানি তাতে তোর চিন্তার বিষয়টা আমি বুঝতে পারছি।
রওনাফ মির্জা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমার মনে হয় না ও আমার কথা শুনবে।আমার সাধ্য থাকলে তোকে না কখনো বলতাম না।ঐ জায়গার মালিক আব্বা ছিল।এরপর আব্বা ঐ জমি মৃত্যুর আগে রুপেস কে লিখে দেয়।
মনসুর আলী জানতেন এমন কিছুই শুনতে হবে তাকে তাই একটু গলা পরিষ্কার করে বলল,
না শুনলে অন্য ব্যবস্থা আছে! কিন্তু সেই ব্যবস্থা যদি এই গ্রামে পা দেয় তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হবে।
রওনাফ মির্জা কপাল কুঁচকে তাকাল,
মানে??তুই হয়তো জানিস না রুপেস এখন গ্রামের চেয়ারম্যান। তাছাড়া বেশ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক তার।
সহজে কিন্তু ছাড়বে না।
মনসুর আলী হাসলেন!আর তার হাসির দিকে তাকিয়ে আছে রওনাফ মির্জা। তিনি হাসির অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়ে বলল,
সিরিয়াস সময়ে তোর হাসি পাচ্ছে!
মনসুর আলী বন্ধুর চিন্তিত মুখ দেখে কিছু বলবে তার আগেই ভেসে এলো মেয়েলি চিকন কন্ঠস্বর।
হসপিটালের পাশের জমির মালিক আব্বু না চাচু!!

মনসুর আলী দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকালেন রিদির দিকে।কালো একটা থ্রি পিচ পরিহিত মাথায় কাপড় দেওয়া রিদির মায়াবী মুখখানা দেখে তিনি মিষ্টি হাসলেন! রিদিকে চিনেন তিনি। হসপিটালের পাশের কলেজেই পড়ে মেয়েটি। সম্ভবত ইন্টার এ পড়ে।এই তো কয়েকদিন আগে একটা বাচ্চা ছেলেকে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে তার জীবন বাঁচিয়েছে। শুধু কি বাচ্চার জীবন বাঁচিয়েছে! উহু!! বাঁচিয়েছে পুরো একটা পরিবারের জীবন।সে বাচ্চা ছেলেটা আর কেউ না তার মেয়ে মাহিরার ছেলে মাহির।
রওনাফ মির্জা রিদির কথায় অবাক হয়ে বললেন,

কি বলছিস রিদু??
রিদি হচকচিয়ে মাথা নিচু করে বলল,
ঐ জমি সম্ভবত আমার নামে দেওয়া!!
রওনাফ মির্জা অবাক হয়ে বলল,
তোর নামে??তুই কিভাবে জানিস??
রিদি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
আব্বা আর ছোট আম্মার কথা শুনেছিলাম আমি অনেক আগে।ওনারা হসপিটালের পাশের জমি সম্পর্কে কিছু বলছিলেন। আব্বা বলেছিল ঐ জমির লিগ্যাল মালিক তিনি না আমি!
রওনাফ মির্জা কিছু বলার আগেই রায়ান বড়দের কথা এতক্ষণ শুনে রিদির কথার বিপরীত এ বলে,
ঠিক এই কারনেই রিদুকে আমরা যতবার নিয়ে আসতে চেয়েছি ওরা রিদুকে আসতে দেয়নি।জমির জন্য! ছিইঈইই!! মেজ চাচু এতো নিচে নামতে পারে!হাহ!!

তবে এখুনি জানা যাবে এই জমির মালিক কে??
রওনাফ রায়ানের কথায় অবাক হয়ে বলল,
মানে?
রায়ান পকেট থেকে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করে চাচুর দিকে তাকিয়ে বলল,
চাচু ঐ মাটির দাগ নাম্বার মনে আছে কত??
রওনাফ মির্জা মনে করার চেষ্টা করে বললেন,
সম্ভবত ১০১!
কয়েক মিনিটের মধ্যে ‌রায়ান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
এই জমির মালিক রেওজা মির্জা!মানে দাদু!রিদি তুই কি সিউর তোর বাপ এমন কিছুই বলেছিল।
রিদিতা হচকচিয়ে বলল,
আমি এমনটাই শুনেছি! সত্যি বলছি!

মনসুর আলী রিদির হচকচিয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
এই যে মিষ্টি মেয়ে!
রিদিতা‌ এমন মিষ্টি মেয়ে সমন্ধনের ডাকে তাকাল মনসুর আলীর দিকে। মনসুর আলী রিদির তাকানো দেখে বলে,
তুমি ঠিকটায় শুনেছো মিষ্টি মেয়ে!!
এবার সবাই অবাক হয়ে বলল,
মানে??
মনসুর আলী আবারো গলা পরিস্কার করে বলল,
তোমার বয়স কত??
রিদি মৃদু গলায় বলল,
১৭ চলছে।
মনসুর আলী মিষ্টি হেসে বলল,
১৮ এখনো হয়নি।তোমার ভোটার কার্ডও হয়নি।১৮ বছর বয়সে ঐ জমি তোমার নামে রেজিষ্ট্রেশন হয়ে যাবে!
রিদি সহ সবাই অবাক হয়ে তাকালো মনসুর আলীর দিকে। রওনাফ মির্জা অবাক গলায় বলল,
তুই জানলি কিভাবে??
মনসুর আলী হাসল,

তুই হয়তো ভুলে গেছিস!আমার বংশে ডক্টর সবাই হলেও ছোট ছেলে টা হয়েছে একটা উকিল।এইসব কাজ তার কাছে কিছু না।আগেই আমার ঐ জমির খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ধারনা আছে।
যদি রিদিতার ১৮ হওয়ার অপেক্ষা করি তাহলে
অনেকটা দেরি হয়ে যাবে।তাছাড়া এখন ওর লিগ্যাল গার্ডিয়ান ই ঐ জমির দেখভাল করে।যা রুপেস মির্জা।তাই ঘুরেফিরে মালিক রুপেস মির্জাই হচ্ছে।
রওনাফ মির্জা হতাশ হয়ে বলল,
তাহলে এখন!
মনসুর আলী রওনাফ মির্জার দিকে তাকালো।রওনাফ বরাবরই সাদাসিধে একজন মানুষ। কলেজে কতো কতো মেয়ে তাকে প্রেম নিবেদন করত আর সে!সে মেয়েদের দেখলে এড়িয়ে চলত। সুদর্শন আর মেধাবী ছাত্র হিসেবে ছিল তার চর্চা।সেসব ভেবে মনসুর আলী মুচকি হাসল।
তোর তাড়াতাড়ি ঘাবড়ানোর স্বভাব গেল না আর!
রওনাফ মির্জা হচকচিয়ে গলা খাঁকারি দিলেন।আমতা আমতা করে বলল,

এখন কি করবি!
মনসুর আলী একটু ভেবে বলল,
রিদি মা তোমার কি জমিটা বিক্রি করতে সমস্যা আছে কোন?
রিদি একটু চুপ থেকে বলল,
আমার সাধ্য থাকলে জমিটা হসপিটালের তৈরি করার জন্য দিয়ে দিতাম আঙ্কেল! কিন্তু আব্বু!!
মনসুর আলী বলল,
মানে তোমার মত চাইলে তুমি মত দিবে?
রিদি মনসুর আলীর দিকে তাকিয়ে বলল,
হ্যাঁ অবশ্যই দিব!
মনসুর আলী হাসলেন।লোকটা কথায় কথায় মুচকি হাসে।লোকটা হাসি মুখেই বলল,
তুমি কি আমাকে চিনতে পেরেছো??
রিদি মনসুর আলীর দিকে চেয়ে বলল,
না!
মনসুর আলী মনে করিয়ে দেওয়ার মতো করে বলল,

ঐ যে তুমি মাহির নামক একজন ছেলের জীবন বাচালে!
রিদির মনে পড়ল ১৫-২০ দিন আগের ঘটনা। সেদিন কলেজ এ লাস্ট ক্লাস হলো না।তাই কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাড়াতেই ৫-৭ বছরের একটা বাচ্চা দৌড়ে এলো তার কাছে টাকা চাইতে।রিদি তখন ব্যাগে টাকা খুঁজছিল। হঠাৎ কিছুর শব্দে সামনে তাকাতেই দেখে ৪-৫ বছরের একটা বাচ্চার নিথর দেহ পড়ে আছে রাস্তায়।রিদি হতবাক, হতভম্ব হয়ে ছুটল সেদিকে। বাচ্চার মাথা থেকে তখন রক্ত চুঁইয়ে পরছে।রিদি মাথায় পেঁচানো হিজাব খুলে ঝটপট চেপে ধরল মাথা।কারো অপেক্ষা না করে একটা রিক্সায় বাচ্চাটাকে নিয়ে উঠে বসল।এই তো বড় রাস্তা পেরুলেই হসপিটাল।রিদির লম্বা চুল গুলো তখন খোপা খুলে পিঠটা ঢেকে গেছে।আর সামনের চুলে তখন আঠালো রক্ত লেগে আছে।রিদি বাচ্চাটাকে হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেয় একটু পর একটা নাস এসে বলে রক্ত লাগবে ও পজিটিভ।তিনি তাৎক্ষণিক বলে আমার থেকে নিন।

একটা রোগীর অপারেশন শেষ করে বের হতেই নজরে আসে দূরে বসা একটা মেয়ের উপর।দূবল শরীর দেওয়ালে ঠেসে বসে আছে। মনসুর আলী মেয়েটার দিকে এগিয়ে যেতেই ছুটে আসে তার পিএ হাসিব। উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
স্যার খুব খারাপ খবর!
মনসুর আলীর ভু কুঁচকে গেল।
কি খবর?
স্যার মাহিরা ম্যাম ফোন করে কান্না করছিল।মাহির কে নাকি পাওয়া যাচ্ছে না।
হোয়াট??

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৬

জি স্যার!মাহিরা ম্যামের সাথেই ছিল কিন্তু গত ৪৫ মিনিট যাবৎ আর খুঁজে পাচ্ছেন না।সবাই খোঁজ করছে। বড় ম্যাম খবর শুনে ঙ্গান হারিয়ে ফেলেছে।
মনসুর আলীর দুনিয়া ঘুরে উঠল। তিনি হতদন্ত পায়ে সামনে এগুতেই সামনে বসা মেয়েটি বসা থেকে লুটিয়ে পড়ল তার সামনে।

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৮