আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৯

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৯
ইশিকা ইসলাম ইশা

রিদি মাহিরার মুখের উপর না বলতে পারল না।মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। কিন্তু মনে মনে চরম বিরক্ত হলো। অদ্ভুত মানুষ!!রিদি মাহির কে আদর করে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।করিডর ধরে এগিয়ে যেতেই দাঁড়িয়ে গেল একটা শব্দ শুনে,
বৌ!!এই বৌ!শুনেন!
রিদি থমকে দাঁড়ালো।হুট করেই বুকের ভেতরটা যেন লাফাতে শুরু করলো।রিদি ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল একজোড়া দম্পতি। লুঙ্গি পরিহিত কালো হ্যাংলা পাতলা একটা ছেলে একটা মেয়ের পিছু ছুটছে। মেয়েটির পেট খানিকটা উঁচু।ছেলেটি মেয়েটিকে
থামাতে চাইছে তাই ডাকছে,
আরে বৌ শুনো গো!
মেয়েটি এমন ডাকে থামল কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
এভাবে জনসম্মুখে বৌ ডাকো ক্যা?মানষে কি কইব?বৌ পাগলা!
ছেলেটি ঝকঝকে সাদা দাঁত বের করে চমৎকার হেসে বলল,
কইলে কইল!তাতে আমার কি!
মেয়েটি ঝামটা মেরে বলল,

এএএ আমার কি??সরো তো!এতো ভালোবাসা শাশুড়ি থাকলে তো আর দেখাও না।তখন চুন থেকে পান খসলেই লাঠি ধরো!সরো সরো!নিহাত আমার বাচ্চার জন্য তোমার সংসার করছি নয়তো আমি জমিলা করতাম না তোমার সংসার!
আরে বৌ রাগ করেনা!আম্মার বয়স হয়েছে তুমি বুঝবা না তো কেডাই বুঝব কও?
হয়ছে হয়ছে সরো! ডাক্তার ম্যাডাম কি কইল হেডা কও?
ডাক্তার ম্যাডাম কইছে মা বাচ্চা দুইজনের আল্লাহর রহমতে ভালা আছে।চলো বৌ আজ তোমারে হাজীর দোকানের ফুচকা খাওয়ামু!!রাগ ছাড়ো বৌ!ও আমার বৌ সোনা রাগ করে না!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেয়েটি এমন ডংকলা দেখে হেসে ফেললো।ছেলেটি মেয়েটির হাতে নিজের হাত দিয়ে ধরতেই মেয়েটি লজ্জায় মাথা নিচু করে পিলপিল করে স্বামীর পেছনে চলল।রিদি দেখল এতক্ষণ ধরে এক দম্পতির ভালবাসা!তবে বৌ ডাকটা কোথাও তো আঘাত করলো। বুকের ভেতর আবারো সেই চিনচিনে ব্যথা জানান দিল চাইলেও সবাই কে আর সব কিছু ভুলা সম্ভব নয়।কিছু কিছু মানুষ শত আঘাতের পরেও মনের কোনে জায়গা পেয়ে গেড়ে বসে।যেমন তীব্র!রিদি কি পেয়েছিল ঐ মানুষটার কাছে?সেই তো শুরু থেকে তীব্রর প্রতি অসীম ভয়!তারপর হুট করেই বৌ বৌ ডাক! রাক্ষুসে মানুষটার হুট করে তার প্রতি সদয় হওয়া কেন যেন মেনে নিতে পারে নি রিদি। তাছাড়া তীব্র সম্পর্কে ঐ বাড়িতে যা শুনেছে তাতে তীব্র আর ভালবাসা যেন দুই মেরুর দুই প্রান্ত।যা কখনো মিশা সম্ভব নয়।তার উপর রুপ আপুর মতো চোখ ঝলসে যাওয়া সুন্দরী সেই পুরুষকে ভালোবাসে সেই মানুষটি কেন ওমন সুন্দরী ছেড়ে তার মতো কাকতাড়ুয়া পছন্দ করবে!! এটা এই জীবনে আদো সম্ভব!! তাছাড়া তীব্র কখনো বলেনি ভালোবাসে! বলেছে শুধু চাই!
কি অদ্ভুত বিষয়!!যে মানুষটা তাকে ভালোবাসে না চাই না সেই মানুষটির প্রতি রিদির এতো মায়া কেন?কেন ঐ বৌ ডাক মনে পড়লে মনে হয় আবারো শুনি। কেন ঐ নিষ্ঠুর মানুষটাকে মনে করে কতো রাত কেঁদে কেঁদে ভাসিয়েছে!তবে কি কবুলের জোরে এতো মায়া!

রিদি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো সেদিনের পর ঐ বাড়ি থেকে কেউ তার সাথে আর যোগাযোগ করেনি।রিদিও করেনি।ঐ বাড়ির কেউ না সে।তবে কেনই বা যোগাযোগ রাখবে। তাছাড়া তার এখন উদ্দেশ্য একটাই মায়ের স্বপ্ন পূরন করা।খুব পড়াশোনা করে নিজেকে স্বাবলম্বী করা! কতোদিন আর বাবা নামক ঘরে, স্বামী নামক ঘরে,এখন চাচার বাসায় আশ্রিতা হয়ে থাকবে!
আম্মুটা থাকলে তো তারা মা মেয়ে খুব ভালো থাকত!এই আম্মুটা তাকে একা করে চলে গেল!!
এই যে হ্যালো!!মিস??
রিদি চমকে উঠে তাকালো মিরের দিকে
কি ম্যাম ওদিক এ কি দেখছেন??
আব না মানে কিছু না!
আর ইউ সিউর??
জি! চলুন লেট হচ্ছে!
রিদি আর কথা না বাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করল!মির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেও পিছু পিছু গেল।

ফুলতলি গ্রামের বাজার পেরিয়ে তখন গাড়ি চলছে পিচঢালা পথে।বাজার পেরিয়ে কিছুটা দূরেই মির্জা বাড়ি। চারদিকে তখন মাগরিবের আজান দিচ্ছে।রিদি চিন্তিত মুখে বসে আছে?না জানি কি হচ্ছে বাড়িতে? কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।
এই মেয়ে!এভাবে মাথা বের করে উঁকি দিচ্ছ কেন?
রিদি টেনশনে বিরক্ত হয়ে বলল,
আমার নাম রিদিতা! আর উঁকি দিচ্ছি কারন সামনেই মির্জা ম্যানসন!
মির ভু কুঁচকে তাকাল,
তুমিনা বললে মির্জা বাড়ি!এখন আবার ম্যানশন হয়ে গেল!ভালোই তো ইংলিশ জানো!
রিদি বিরক্ত হয়ে বলল,
মির্জা ম্যানসন আলাদা আর বাড়ি আলাদা!
মির ব্যঙ্গ করে বলল,
ওহহ বড়োলোক্স!!

রিদি হতাশ হয়ে আর কথা বাড়ালো না।কিছু দূর যেতেই বাড়ি থেকে হট্টগোল এর শব্দ শুনে রিদির আত্মা শুকিয়ে এলো।রুপেস মির্জার চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে!রিদি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল!গাড়ি এসে মিজা বাড়ির সামনে থামতেই বিশাল হট্টগোল দেখা গেল।সাথে পুলিশ ও আছে! এবার রিদির ভয় দ্বিগুণ হলো!
এদিকে গাড়ির শব্দে সবাই তাকালো গেটের দিকে!রিদি দূবল পায়ে গাড়ি থেকে নেমে বেরিয়ে এলো!সাথে নামল মির আলী!মির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সবাইকে দেখে ঘুরে এসে দাড়ালো রিদির পাশে।রিদির পাশে এমন সুট বুট পড়া সুদর্শন মির কে দেখে আমেনা চেঁচিয়ে উঠে বলল,
দেখছো রুপেস তোমার মেয়ের কাহিনী!আমরা তো ওর টেনশনে মরছিলাম আর তোমার মেয়ে ভালোই ফূর্তি করতে গেছিল!

রিদি আমেনার কথা তোয়াক্কা না করে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো।লতিফা নাতনীকে দেখে ঝটপট বুকে জরিয়ে ধরলো!
কই আছিলি রিদু??দেখ তোর বাপে কি করতাছে?
রিদি কিছু বলার আগেই রুপেস বলল,
কোথায় ছিলি?তোর চাচা তোরে কোথায় পাঠাইছিলো?
রিদি শক্ত কন্ঠে বলল,
আজ এতো খোঁজ নিচ্ছেন যে আব্বা?
রুপেস রিদির কথায় অবাক হলো।রিদি কখনো তার মুখের উপর কোন কথা দূর টু শব্দ পর্যন্ত করেনি।আজ মেয়ের সাহস দেখে অবাক হয়ে বলল,
তুই আমার মেয়ে তোর খোঁজ নিবো না??
রিদি তাচ্ছিল্য করে বলল,
আমি আপনার মেয়ে বুঝি?
রুপেস কিছু বলার আগেই আমেনা বলল,

হায় হায়!!দেখছো রুপেস!এই বাড়িতে আইসা মুখে কেমন খই ফুটতাছে!!
রিদি বিরক্ত হল।আজকাল তার বিরক্ত ভাবটা জলদি হানা দেয় মস্তিষ্কে। লতিফা বেগম চেঁচিয়ে বলল,
শয়তান পোলা একখান জন্মাইছে আমার পেটে নিজের ভাইকে পুলিশে দেবার চাই!তুই নিখোঁজ ছিলি তাই তোর বাপ পুলিশ নিয়া আইছে!
রিদি রওনাফ মির্জার দিকে এগিয়ে গেল,
সরি চাচু!!আসলে আমি…..…বলে চাচুর হাতের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল।হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো চাচার দিকে তাকিয়ে চোখ ছলছল করে উঠল! চেঁচিয়ে বলল,
ইন্সপেক্টর আমার চাচুর হাতের বাধন খুলে দিন!
এটা সম্ভব নয়।ওনাকে আগে থানায় নিয়ে যেতে হবে।তারপর আপনার বয়ান দিয়ে ওনাকে ছাড়া হবে!
কেন??
আপনার বাবা ওনার নামে এফআইআর দায়ের করেছে। আপনার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে ওনি দায়ী!
আর আপনারা যাচাই-বাছাই না করে চাচুকে ধরে রেখেছেন! পুলিশের কাজ এখন কি যাচাই-বাছাই না করেই গ্রেফতার করা!

আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না!
আপনাদের আইন!এই দেশের আইন তো টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়।কতো টাকা দিয়েছে রুপেস মির্জা আমার চাচুর সন্মান নষ্ট করার জন্য!
রুপেস আজকে রিদির ব্যবহারে ক্ষণে ক্ষণে অবাক হচ্ছে!রিদি এবার সোজা রুপেস এর দিকে আঙ্গুল তুলে বলল,
সোজাসুজি ওনাকে বলুন চাচুকে ছেড়ে দিতে!
রুপেস মির্জা মেয়ের ব্যবহারে অবাক হয়ে রেগে গিয়ে বলল,
তুই আমাকে হুমুক দিচ্ছিস??
রিদিও রেগে বলল,
যেটা ইচ্ছে ভাবুন!আগে চাচুকে ছাড়তে বলুন!নয়তো!!!
নয়তো?
নয়তো আমিও এফআইআর দায়ের করব।আমার নিখোঁজের পেছনে দায়ী রুপেস মির্জা।
রুপেস কটমট করে বলল,
তোর এখনো আঠারো হয়নি!এই কেস ফাইল হবে না। তাছাড়া তোর গাজিয়ান আমি!
রিদি রেগে বলল,

আমার গাজিয়ান বর্তমানে আর আপনি না।আমার গাজিয়ান ত.………
আমাকে আইনের আওতায় আসতে বাধ্য করবেন না।ফল কিন্তু ভালো হবে না।ছেড়ে দিতে বলুন আপনার কেনা গোলামদের আমার চাচুকে!
রুপেস রেগে গিয়ে বলল,
খুব সাহস বেড়েছে তাই না!তোকে আজ আমি
বলে থাপ্পর মারতে হাত উঠাতেই একটা হাত তার হাত ধরে ফেলে।
মেয়েদের গায়ে হাত তোলাটা আমার পছন্দ না। বাধ্য হয়ে হাতটা ধরেছি!
মিরের কথায় এবার সবাই তাকালো মিরের দিকে।মির হাত ছেড়ে সোজা ইন্সপেক্টর এর সামনে গিয়ে দাড়ালো,
হাতের পকেট থেকে একটা কাড বের করে সেটা দেখাতেই ইন্সপেক্টর মাহফুজুর শুকনো ঢোক গিলল।
ওনার হাতের বাঁধন খুলে দিন!

সাথে সাথেই ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রওনাফ এর হাতের বাঁধন খুলে দিল।
সবাই বেশ অবাক হয়ে তাকালো!কি এমন দেখালো মির!!মির এবার রুপেস মির্জার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
মেয়ে আল্লাহর রহমত!আর আজ আপনার মেয়ে আমাদের জন্য বিশেষ রহমত।

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১৮

রিদি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিরের দিকে।মির রুপেস মির্জার থেকে সরে অবলিলায় রিদির হাতটা ধরে রওনাফ মির্জার দিকে বাড়িয়ে দিল। রওনাফ অবাক হয়েই দেখলো সবটা।মির রওনাফ মির্জার দিকে রিদিকে এগিয়ে সবটা খুলে বললো!
খুব সাহসী আপনাদের মেয়ে আঙ্কেল!আজ ওর জন্য আমার বোন গেল।নয়তো মাহিরের কিছু হলে আপুকে বাঁচানো সম্ভব হতো না।আর আমাদের বাড়িতে মেয়ে মানেই রহমত!অধিক ভালোবাসি বোনকে আমরা!আপনাদের এই উপকার আমরা সবসময় মনে রাখব!আজ আসি তাহলে!এটা আমার কার্ড!যে কোন প্রয়োজনে কল করবেন!বলে রিদির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বেরিয়ে গেল। মিরের পিছনে পিছনে পুলিশ ও চলে গেল।

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২০