আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২২
ইশিকা ইসলাম ইশা
রিদি বাড়ি পৌঁছাল তখন সকাল গড়িয়ে দুপুর।অটো থেকে নেমে মিজা বাড়ির গেট দিয়ে প্রবেশ করল রিদি। নিস্তেজ শরীর টাকে কোন মতে টেনে নিয়ে এলো সে। প্রিয়ার মৃত দেহটা এখনো চোখের সামনে ভাসছে। কিছু করতে না পারার অসহায়ত্ব ঘিরে ধরেছে।
এদিকে মজনু উরফে তীব্র অটোর সাথে হেলান দিয়ে চুপচাপ রিদির যাওয়া দেখল। পুরো রাস্তায় চুপচাপ নিশ্চুপ এক মরার মতোই বসে ছিল রিদি,
তীব্রর ইচ্ছে তো করছিল ঠাঁটিয়ে দুটা লাগাতে।বেয়াদব বৌ!যার মরার সে মরেছে!তাই বলে নিজে এমন দেবদাসী সেজে ঘুরার মানে কি?মনে হচ্ছে স্বামী মারা গেছে!!হাহ!! স্বামী মারা গেলেও এই বেয়াদব বৌয়ের কি?এই বেয়াদব নারীর কিছুই যায় আসে না!!
বস!!!
তীব্রর ভাবনার মাঝেই লাবিবের ডাক বিরক্ত করল তীব্র কে।সে উওর করল না।সে শুধু দেখল রিদির যাওয়া।লাবিব লুঙ্গি কোনমতে সামলে বাইরে এসে বলল,
বস!কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম!
তীব্র দুহাত ভাজ করে একনজর চোখ বুলাল লুঙ্গি আর শার্ট পরিহিত মুখে মাস্ক পড়া লাবিবের দিকে! বেচারার লুঙ্গি নামক জিনিসটা সামলাতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারল তীব্র।
লাবিব তীব্র কে এভাবে তাকাতে দেখে বলল,
বস!! মানে বলছিলাম এই লুঙ্গি! আমার ইজ্জত হরন করবে বস!!গ্রামের মানুষ এখন উন্নত বস।আমি কি প্যান্ট পড়তে পারি?
তীব্র দেখল কেমন করে লুঙ্গির গিট্টু ধরে আছে লাবিব! তীব্র সেদিকে তোয়াক্কা না করে বলল,
নিচে আন্ডারওয়্যার পরিস কিন্তু!তোর ইজ্জত হরন হলেও আমার কিছু করার নাই!
লাবিব আহাম্মক এর মতো তাকালো তীব্রর দিকে। পরক্ষনেই মনে হলো এটা তীব্র!এতো সময় তার নাই অন্যের কথা ভাবার। আপাতত নিজের জন্য একটা ব্যবস্থা করা লাগবে!নিচে একটা হাফ প্যান্ট পরা লাগবে যদিও আন্ডারওয়্যার পড়াই আছে তবুও!!লাবিবের ধারনা মতো যারা লুঙ্গি পড়ে তারা এক একটা জিনিয়াস!বাপরে কেমনে সামলায় এই থান!লাবিব ভাবনা শেষে তীব্রর দিকে তাকাল।
তীব্রর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আবারো তাকালো মিজা বাড়ির দিকে। পরক্ষণেই অটোতে বসতে বসতে বলল,
ছ্যা….
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“বালের একটা বৌ!!
লাবিব হচকচিয়ে তাকাল। মনে মনে ভাবল বালের বৌ?হাহ!!এই বালের বৌ থুক্কু বৌ এর জন্যই তো এমন ছদ্মবেশে আসা।এই বৌ এর জন্যই নাকি তীব্র চৌধুরীও কখনো এমন ছদ্মবেশে আসবে।এটা তো কল্পনার বাইরে!
লাবিবও অটোতে উঠে বসে তাকালো তীব্রর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির দিকে।দাড়ি মুচে ঘেরা মুখখানা। কিন্তু চোখের চাউনি ভয়ংকর শান্ত!লাবিব তীব্রর শক্ত চোখমুখ দেখে বলল,
বস! আজিজ উদ্দিন এর হাবভাব দেখে মনে হচ্ছি…….
মনে হচ্ছিল তোর ভাবিকে ওর মনে ধরেছে!তাই তো!!
তীব্রর এমন জবাব শুনে গলা শুকিয়ে এলো লাবিবের। তীব্রর শান্ত কন্ঠ কতটা ভয়ংকর তা সে জানে।রিদি চলে আসার পর থেকেই তীব্রর রাগ ভয়ংকর রুপ ধারন করেছে। সেদিন রিদিকে রেখে ফিরে গিয়ে দেখেছিল এক বিধ্বস্ত অবস্থা! রক্তাক্ত তীব্র পুরো বাসা তছনছ করে নিজের ক্ষতি করতেও থেমে থাকে নি। পুরো হাত কেটে রক্তের বন্যা বয়ে গেছিল। তাকে আটকাতে দুইজন গাড গেছিল তাদের অবস্থাও ভয়াবহ খারাপ।তীব্রর রাগ,জেদ ভয়ংকর ভাবে প্রদর্শন হয়েছিল সেদিন।বাড়ির কেউ ই সাহস করে এগিয়ে আসে নি।লাবিব যখন পৌঁছাল তখনও চলছিল তীব্রর ধ্বংস লিলা।বার বার আওরাচ্ছিল একটা কথা ভোগ,ভোগ মাই ফুট!!
এরপর যখন নিস্তেজ হয়ে এলো শরীর তখন রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে বসে পড়লো!চোখ মুখ তখনো ভয়ংকর! চোখে যেন রক্ত এসে জমাট বেঁধেছে।পুরো মুখ টকটকে লাল , হাত থেকে চুইয়ে পড়া রক্তে ফ্লোর ভিজে উঠছে।লাবিব সেদিন দেখেছিল তীব্রর ভয়ংকর রাগ!বাপরে!!দুদিন হসপিটালে বেহুঁশ হয়ে ছিল।তবে হুস ফিরতেই তাকে হসপিটালে রাখা আর সম্ভব হয় নি।এরপর না আর বাড়ি ফিরেছে না কারো সাথে যোগাযোগ করেছে।দাদির ফোন পর্যন্ত ধরেনি।এরপর থেকেই বাড়ল তীব্রর নিষ্ঠুরতা!এমনিতেই নিষ্ঠুর মানুষটা আরো নিষ্ঠুর হয়ে উঠল।
শোন!!
তীব্রর ডাকে ভাবনা থেকে বের হয়ে এলো লাবিব। কিছু বলার আগেই তীব্র বলল,
“তোর ভাবিব জন্য কালো বোরকার ব্যবস্থা কর তো লাবিব! যেন চোখ টাও দেখা না যায়!ঐ চোখ ই সব কিছুর সর্বনাশের মূল!কালো বৌ নিয়েও দেখি শাস্তি নাই!সবার নজর আমার কালো বৌয়ে আটকায় কেন??
লাবিব হচকচিয়ে কিছু না ভেবেই বলল,
বস ভাবি তো কালো না!শ্যামল্যা!শ্যামলা মেয়েরা কিন্তু ভয়ংকর সুন্দর হয়!ঠিক ভাবির মতো!
লাবিবের কথায় তীব্র তিরিক্ষি দৃষ্টিতে তাকালো লাবিবের দিকে,
মা যোগ কর!!
লাবিব হতবাক হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকালো তীব্রর দিকে।না বুঝেই বলল,
কার সাথে বস!!
তীব্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
ভাবির সাথে মা যোগ কর। আজ থেকে তোর ভাবির দিকে মা মা নজরে তাকাবি!আর ডাকবি ভাবি আম্মু!
কি ডাকবি??
লাবিব হা হয়ে তাকিয়ে বলল,
ভাবি আ ম্ মু……..
গুড!!
বিষ্ময়ে লাবিরের চোয়াল ঝুলে এলো,
মানে বস কি এখন তাকে নিয়েও ইনসিকিউর ফিল করছে!!মানে বস কি জেলাস! কিন্তু বস আর জেলাস!! সম্ভব???
তীব্র লাবিবের হা হয়ে যাওয়া মুখ দেখে তিরিক্ষি মেজাজে বলল,
বালের মতো তাকিয়ে আছিস কেন? আমার রুপ বেড়েছে!যা আজিজ উদ্দিন এর সাথে মিটিং এর ব্যবস্থা কর!হিসাব নিকাশ করা লাগবে অনেক।বালের একটা বৌ!হাহ!কোই থেকে কোই নিয়ে এলো।এখন এখন এসব চুনোপুঁটি মেরে হাত গন্ধ করতে হবে!!
লাবিব তখনও আহাম্মক এর মতোই তাকিয়ে আছে।তীব্রর মেজাজ এমনিতেই খারাপ তার উপর লাবিবের এমন আহাম্মক ভাবটা মেজাজ খিঁচুনি দিয়ে বলল,
এখুনি দু একটা গুলি মেরে বৌ সহ সবগুলোকেই দুনিয়া ছাড়া করতে! কিন্তু!ঐ যে বালের একটা বৌ মারতেও পারা যায় না! ওমন আদুরে টাইপ বৌ কে আদর না করে মারা যায়!!তীব্র বিরক্ত নিজের প্রতি সে চাই না এই বৌ!এই বৌ তাকে প্রথম দিন থেকেই জালাচ্ছে।প্রথম দিনের সেই ঘুমে ঢুলুঢুলু ফোলা ফোলা মুখখানা আজও ভুলতে পারে না সে। সেদিন ঐ ঘুমঘুম মুখটার জন্যই তার হাত থেমে গেছিল।টিপটিপ হৃদয় যন্ত্র অচল হয়ে থমকে গেছিল। সেদিন দেখেছিল এলোমেলো চুলে এলোকেশি কন্যা।নয়তো সেদিন সে সব উচ্ছেদ করেই যেত!
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২১
তীব্র ভাবনা শেষে কিছু না বলে অটোরিকশা থেকে লাবিব কে টেনে বের করে বলল,
দাঁড়িয়ে থাক এমন ভাবেই!!
লাবিব হচকচিয়ে ঝটপট পেছনে বসল।আজকাল বসের সাথে থেকে কি যে হয়!না চাইতেও তার আহাম্মক ভাবটা চলে আসে।বসকে আজকাল তার নতুন নতুন লাগে।প্রেমে পড়লে বুঝি এমন হয়!